অসমাপ্ত ভালোবাসা

অসমাপ্ত ভালোবাসা – হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার গল্প | Sad Love

অসমাপ্ত ভালোবাসা – হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার গল্প: ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত অপূর্ণ থেকে যায়, থেকে যায় আড়ালে। অবহেলা আর অপমানে কাটানো সময়টা একসময় প্রিয়জনের কাছে অনেক মূল্যবান হয়ে দাড়ায়। চলুন তবে এরকম কষ্টের একটি ভালোবাসা সম্পর্কে জানি।

প্রথম দেখা: পর্ব ১

এই ছেলে! তোমার মত বখাটে ছেলের এখানে কি? তোমাকে ঢুকতে দিলো কে? চাচা, এই চাচা। তুমি এমন গুন্ডা বখাটেদের বাড়িতে ঢুকতে দেও কেনো? তোমায় না বলেছি এদের বাড়িতে ঢুকতে দেখলেই একদম ঘাড় ধরে বের করে দেবে। তাহলে এই কুকুরটা বাসায় এলো কিভাবে, হুম? যাও, ওকে এখুনি আমাদের বাসা থেকে বের করে দেও। পুরা পার্টিটাই নষ্ট করে দিল জানোয়ারটা। এখুনি বিদেয় করো এটাকে।

উপরের কথা গুলি যে বললো ওর নাম হলো দিশা। ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্রী সে। বাবা মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান। সে যাকে কথা গুলো শুনালো ওই ছেলেটাকে সে একদম দেখতেই পারে না। ওর মতে ছেলেটা একটা গুন্ডা’বখাটে ছেলে। যার কাজই হলো শুধু মারপিট করা। কেনোনা ও যখনি ছেলেটাকে দেখেছে ‘তখনি ছেলেটা কথাও কারো না কারো সাথে মারপিট শুরু করেছে। তাই দিশা ওকে দুই চক্ষে একদম দেখতেই পারে না।

এদিকে এতোক্ষণ ধরে যে ছেলেটা দিশার অপমান জনক কথা গুলি শুনলো ‘সেই ছেলেটার নাম রক্তিম। সে একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের এতিম অনাথ ছেলে। ছোটো বেলায় ওর মা-বাবাকে একটা এক্সিডেন্টে চিরো দিনের জন্য হারিয়ে ফেলে। তারপর অনেক কষ্ট ওর একটা দুর সম্পর্কের মামির কাছে বড় হয়। সেও দিশার মতো ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্র। (রিয়াল লাইফে অনেক ছোট আমি) আর ও যে এতোক্ষণ চুপচাপ দিশার অপমান জনক কথা গুলি শুনলো তার একটি কারণ আছে। কারণটা রক্তিম দিশাকে ভালোবাসে”শুধু ভালোবাসে না অনেক বেশীই ভালোবাসে সে দিশাকে। আর তাই আজ সে এসেছিলো দিশাকে ওর জন্মদিনের শুভেচ্ছা যানাতে। সাথে করে একটা উপহারও নিয়ে এসেছিলো দিশাকে দেয়ার জন্য কিন্তু সেটা আর হলো কই। সে যখন দিশাকে উপহারটা দিতে যায় ‘তখন দিশা ওর বান্ধবীদের সাথে কথা বলছিলো। রক্তিম যখন উপহারটা নিয়ে দিশার সামনে যায়। তখন দিশা রক্তিমকে দেখে সাথে সাথে অনেক রেগে যায়। রেগে গিয়ে তখন উপরের কথা গুলি রক্তিমকে বলে ফেলে। পরিচয় পর্ব শেষ এখোন বাস্তবে ফেরা যাক।

কি হলো চাচা আপনাকে আমি কি বললাম? বললাম না, একে বাড়ি থেকে ঘাড় ধরে বের করে দিতে। সেটা না করে আপনি এখনো দারিয়ে আছেন কেনো। এই গুন্ডাটাকে তাড়াতাড়ি এখান থেকে বের করেন।

আমি পারবো না দিশা ম্যাডাম। আমি এই ছেলেকে বের করে দিতে পারবো না।

দেখো চাচা তুমি যদি এখন এই গুন্ডাটাকে বাসা থেকে বের না করে দেও তাহলে আমি কিন্তু তোমার চাকরিটা আর রাখবো না বলে দিলাম। তাছাড়া এই বখাটেটার জন্য আপনার এতো কিসের মায়া শুনি। যার জন্য আপনি আমার কথা মানছেন না।

দেখেন ম্যাডাম ‘আমি আবারো বলছি আমি রক্তিমকে ঘাড় ধরে বের করে দিতে পারবো না। আপনি চাইলেই আমার চাকরীটা শেষ করে দিতে পারেন। এতে আমার কোনো আপত্তি নে। কিন্তু তাও আমি আপনার কথা এখন মানতে পারবো না।

কি এমন সম্পর্ক এই বখাটেটার সাথে তোমার যে নিজের চাকরীর যাওয়ার চিন্তাও করছো না। কি এমন মহত কাজ করেছে এই গুন্ডাটা শুনি।

করেছে ম্যাডাম ‘অনেক বড় মহত কাজ করেছে। এই ছেলেটা আপনি চাইলে আপনার আম্মু অথবা আব্বুর কাছ থেকে জেনে নিয়েন। যানেন এই বখাটে ছেলেটা আপনার জন্য কি করেছে। জানেন কি করেছে সে আপনার জন্য। (বকুলকে ওর কথা শেষ না করতে দিয়েই রক্তিম বলে উঠে)

বকুল চাচা থামুন আপনি। আপনাকে কিছু বলতে হবে না। স্যরি দিশা। আসলে আমি দুঃখিত। আমার জন্য তোমার এতো সুন্দর পার্টিটাই নষ্ট হয়ে গেলো। আমরা গরীব ‘গুন্ডা বখাটে দের একটাই দোষ জানেন তো। আমরা না বিনা দাওয়াতেই সবার বাসায় ঢুকে পড়ি। তবে আপনি চিন্তা করবেন না আমি এখুনি চলে যাচ্ছি। আর আপনার কাছে আমার একটাই অনুরোধ এই গরীব বকুল চাচার চাকরীটা দয়া করে শেষ করে দিয়েন না। এই অবুঝ লোকটার না আসলে তেমন কোনো দোশ নেই। বকুল চাচা খুব নরম মনের মানুষ তাই আমাকে তোমাদের বাসায় এই পার্টিতে ঢুকতে দিয়েছে। আমি এখুনি চলে যাচ্ছি তোবে যাওয়ার আগে শেষ বারের মতো এই বখাটেটার পক্ষ থেকে আনা আমার এই ছোট্ট উপহারটা যদি গ্রহণ করতেন তাহলে আমি অনেক খুশী হতাম। আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি আমি আর আমার এই মুখ কখনো কোনোদিন আর আপনার সামনে নিয়ে আসবো না। তাই প্লিজ না করবেন না।

(এই বলে রক্তিম একটা ছোট্ট গিফট বক্স দিশার দিকে বারিয়ে দেয়। আর দিশা সাথে সাথে সেটা হাতে নিয়ে দুরে কোথায় ছুড়ে ফেলে দেয়) তারপর…

শোন তুই ভাবলি কি করে তোর মতো গুন্ডার কাছথেকে আমি আমার জন্মদিনে কোনো উপহার নেবো। আর অনেক বলেছিস এখন যদি তুই এই মুহুর্তে এখান থেকে বের হয়ে না যাস তাহলে এবার সত্যি ‘সত্যি আমি নিজেই তোকে ঘাড় ধরে বের করে দেবো বলেদিলাম। সো তোর যদি চক্ষু লজ্জা বলতে কিছু থাকে তাহলে এখনু চলে যা আমার সামনে থেকে।

(রক্তিম দিশার কথা গুলো শুনে শুধু একটু হাসলো) তারপর…

ঠিক, আছে দিশা আমি চলে যাচ্ছি। তবে একটা ব্যাপার ভাবতেই অবাক লাগে।

তুমি আমাকে না বুঝেই গুন্ডা ‘বখার্টে নাম দিয়ে দিলে। আচ্ছা ওসব কথা থাক ‘আমার জন্য আপনাদের সবার আজকের এই সুন্দর পার্টিটা নষ্ট হয়ে গেলো তার জন্য আমি আপনাদের সবার কাছে থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। পারলে আপনারা সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। ও আরেকটা কথা শুভ জন্মদিন দিশা। আচ্ছা আমি এখন চলি।

এই বলে রক্তিম শুধু সেখান থেকে চলে আসতে যাবে ঠিক সেই সময় সামনে সে দিশার ‘আব্বু-আম্মুকে আসতে দেখে। তাই সে সাথে সাথেই নিজের হাত দিয়ে চক্ষের পানি গুলি মুছে ফেলে। তারপর তাদের সামনে যায়।

আরে বাবা রক্তিম’। তুমি কখন এলে! আর কোথায় যাচ্ছ তুমি এখন। আরে একি তোমার চক্ষে পানি কেনো। কি হয়েছে বাবা! কেউ কি তোমাকে কিছু বলেছে! কি হলো বাবা জবাব দেও। (দিশার আম্মু)

আরে নাহ, আন্টি তেমন কোনো ব্যাপার না। আসলে আমার একটু জরুরী কাজ পরে গেছে তো তাই ‘তাড়াহুড়ার মধ্য দিয়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ চক্ষে একটা পোকা পড়ে যায়। আর তার জন্যই চক্ষু দিয়ে হালকা পানি পরছে। ওসব কোনো ব্যাপার না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। আচ্ছা আন্টি আমি এখন চলি আমার একটু তারাআছে।

সে কি কথা রক্তিম। তুমি আমাদের এতো বড় উপকার করলে। আমাদের জীবনকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিলে। এখন তুমি আমার বাসায় আমার মেয়ের জন্মদিনে এসে কিছু না খেয়েই চলে যাচ্ছ। সেটা কি করে হয় বাবা। (দিশার বাবা)

নাহ্ আঙ্কেল ‘অন্য কোনো আরেক দিন হবে। আজকে আমার একটু তারা আছে আঙ্কেল। আমাকে এখুনি যেতে হবে। আমাকে ক্ষমা করবেন আঙ্কেল আমি এখন আপনার কথা রাখতে পারলাম না। চলি আঙ্কেল ‘আসি আন্টি।

এই বলে রক্তিম সেখান থেকে সাথে সাথে বাইরে চলে আসে। আর এসেই পেটের কাছে শার্টটা সরিয়ে দেখে যে সেখান থেকে সমানে অনেক রক্ত গরিয়ে পরছে। তাই সাথে সাথে সে সেই জায়গাটা হাত দিয়ে চেপে ধরে আর মনে মনে শুধু হাসে বলে হায়রে মানুষ ‘আমার ভালোবাসাটাকে বুঝলো না। তারপর হঠাৎ মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে।

এদিকে রক্তিম চলে গেলে। আর দিশার বাবা-মা দিশার কাছে যায়। গিয়ে বলে….

চলবে

পরিবারের অপমান: পর্ব – ২

এই বলে রক্তিম সেখান থেকে সাথে সাথে বাইরে চলে আসে। আর এসেই পেটের কাছে শার্টটা সরিয়ে দেখে যে সেখান থেকে সমানে অনেক রক্ত গরিয়ে পরছে। তাই সাথে সাথে সে সেই জায়গাটা হাত দিয়ে চেপে ধরে আর মনে মনে শুধু হাসে বলে হায়রে মানুষ ‘আমার ভালোবাসাটাকে বুঝলো না। তারপর হঠাৎ মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে।

এদিকে রক্তিম চলে গেলে দিশার বাবা-মা দিশার কাছে যায়। গিয়ে বলে ….

জানিস তো মা ‘এই ছেলেটার মতো ছেলে হয়না। লাখে রক্তিমের মতো কোনো একটা ছেলে পাওয়া যায়। (দিশার আম্মু)

কি সব ‘পাগলের মতো কথা বলছো তুমি আম্মু!” ওর মতো গুন্ডা ‘বখার্টে ছেলেকে তুমি ভালো ছেলে বলছো। ওর কি কোনো লাজ ‘লজ্জা আছে নাকি। এদের কাজ শুধু মারপিট করা। বিনা নটির্সে যে কারো বাসায় প্রবেশ করা। দেখছো না একটু আগেই আমাদের বাসায় এসে পুরো পার্টিটাই নষ্ট করে দিলো। তাই তো আমি ওকে এখান থেকে ঘাড় ধরে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে চাইলাম। তখন তো সে এখান থেকে চলে গেলো। কি ব্যাহায়া’নীর্লয্য’ছেলে একটা ওর মা-বাবা হয়তো ওকে ভালোভাবে শিক্ষা দিতে পারে।

ঠাসসস…

ঠাসসসস।

(দিশা ওর কথা শেষ করার আগেই ওর আম্মু ওর গালে ঠাসস” ঠাসসস” করে দুটো থাপ্পড় মারে। তারপর….

যা ‘বলেছিস এখানেই চুপ যা। আমার তো এখন নিজেরী ঘেন্না হচ্ছে তোকে নিজের সন্তান বলে দাবি করতে। কি জানিস তুই রক্তিমের ব্যাপারে। কি জানিস শুনি। আরে শোন যাকে তুই আজকে ঘাড় ধরে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে চাইছিস যানিস সে কি করেছে!! জানিস!! না তুই তা জানিস না ‘আর জানলে এমন ভাবে বলতে পারতি না। আরে ওই ছেলেটা তোর জন্য যা করেছে ‘সেটা পৃথিবীরকেউ তোর জন্য করবে না। আর তুই সেই ছেলেটাকেই আজকে সবার সামনে অপমান করলি। ছিঃ দিশা ছিঃ।

(নিশ্চুপ)

ওই ছেলেটা যদি আজকে না থাকতো তাহলে তোর এই আজকে সবাইকে নিয়ে জন্মদিনের পার্টি করতে পারতি না। তোর কি মনে আছে একমাস আগে তোকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিলো। আর ডাক্তার কি বলেছিলো।

হুম’মনে আছে একমাস আগে আমি কলেজ থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে হঠাৎ রাস্তায় মাথা ঘুরে পরে যাই। তারপর যখন আমার জ্ঞান ফেরে তখন নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করি। কিন্তুকেনো।

হুম্ আচ্ছা বলতো তোকে সেদিন হাসপাতালেকে নিয়ে গেছিল। আর ডাক্তার তোকে কি রোগের কথা বলছিলো।

আমার জ্ঞান ফেরার পর তখন আমার পাশেকেউ ছিলো না। তাই আমাকে হাসপাতালেকে নিয়ে এসেছিলো তা আমি সঠিকভাবে জানিনা। তবে একটা নার্সকে জিজ্ঞাসা করে দেখেছিলাম ‘আর সে বলছিলো যে আমাকে হাসপাতালে নাকি একটা ছেলে নিয়ে এসেছিলো। তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে যে সেদিন নাকি আমাকে যে ছেলেটা হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলো তখন নাকি ছেলেটার অবস্থা কেদে কেদে অনেক খারাপ হয়ে গেছিলো। আমাকে নিয়ে নাকী ছেলেটা প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেছিলো। তাই নার্স তো ভেবে নিয়েছিলো যে ছেলেটা মনে হয় আমার স্বামী অথবা বয়ফ্রেন্ড। যখন আমি তাকে বললাম যে আমি ছেলেটাকে ঠিক মতো চিনি নাহ “তখন নার্সটা অনেক অবাক হয়ে যায়। কিন্তু কেনো সেটা তো বলো!

আচ্ছা বলছি ‘তার আগে আমাকে এটা বলযে আমরা যাওয়ার পর ডাক্তার তোর টেষ্ট রিপোর্ট গুলো দেখে কি বলছিলো!

তোমরা যাবার পর ডাক্তার আমার টেষ্ট রিপোর্টগুলো দেখে বলেছিলো যে আমি নাকী একদম ঠিক আছি। আমার নাকী সামান্য একটু ছোট্ট প্রোবলেম দেখা দিয়েছে আর সেটা অপারেশন করালেই ঠিক হয়ে যাবে। তাই তো প্রায় ৩ দিন পর আমার অপারেশন করানো হয় আর আমি সুস্থ হয়ে যাই। কিন্তু তুমি একি প্রশ্ন বার বারকেনো করছো।

একি প্রশ্ন বার বার করছি তার কারণ আছে। আচ্ছা তুই কি আর সেদিনের পর সেই ছেলেটার আর কোনো খরব পেয়েছেস।

নাহ্ সেদিনের পর সেই ছেলেটাকে আমি অনেক খুজেছি কিন্তু কোথাও সেই ছেলেটার খরব পাইনি। কিন্তু তুমি জানলে কি করে।

তাহলে শোন আমি কিভাবে জানি..তুই যেই ছেলেটাকে সেদিনের পড় থেকে পাগলের মতো করে খুজে বেড়িয়েছিস সেটা আরকেউ না সে হলো যাকে তুই একটু আগে অপমান করে তারিয়ে দিয়েছিস সেই গুন্ডা ‘বখাটে রক্তিম”। সাথে আরও শোন ডাক্তার সেদিন তোর টেষ্ট রিপোর্ট গুলো দেখে যে বলছিলো তোর তেমন কোনো সমস্যা হয়নি সামান্য একটু সমস্যা হয়েছে আসলে কথাটা সত্যি না। ডাক্তার সেদিন তোকে মিথ্যা কথা বলছিলো। তোর তখন অনেক বড় ধরণের সমস্যা হয়েছিলো। তুই জানিস ডাক্তার সেদিন তোর টেষ্ট রিপোর্টে কি পেয়েছেলো! জানিস না। সেদিন ডাক্তার তোর রিপোর্ট গুলো দেখে আমাদের সাইটে নিয়ে গিয়ে কি বলছিলো তা জানিস তুই না সেটাও হয়তো বা তুই জানিস না। সেদিন ডাক্তার আমাদের তারকেবিনে নিয়ে গিয়ে যা বলেছিলো তা শুনে আমি ও তোর আব্বু প্রায় দুই জনি অনেক ভয়পেয়ে গেছিলাম। সেদিন ডাক্তার আমাদের তারকেবিনে নিয়ে গিয়ে বলে যে তোর নাকী দুটো কিডনী নষ্ট হয়ে গেছে। তবে একটা এখনো পুরো পুরি নষ্ট হয়নি।

তাই যত তারা-তারি সম্ভব তোর দুটো কিডনী বদলাতে হবে”নইলে তোকে আর বাঁচানো যাবে না। যানিস এই খবরটা শুনে তখন আমাদের পা থেকে জেনো মাটি সরে গিয়েছিলো। প্রায় পাগলের মতো তোর আব্বু ও আমি হাসপাতালে ‘হাসপাতালে তোর জন্য কিডনী খুজে বেরিয়েছি। কিন্তু কোথাও পাইনি তোর ম্যাচিং কিডনী। শেষে আমাদের কিডনী দিতে চাইলেও ডাক্তার বলে যে আমাদের কিডনী নাকি ম্যাচিং হচ্ছিল না। আমরা তো প্রায় সেই সময় ভেঙেই পরেছিলাম যদি রক্তিম না থাকতো। আজকে যে তুই বেঁচে আছিস সেটা কার জন্য জানিস! সেটাও শুধুমাত্র এই রক্তিমেরি জন্য। যানিস সেদিন যদি রক্তিম না থাকতো তাহলে হয়তো আজকে আর তুই এখানে সবার সাথে তোর জন্মদিনের পার্টি করতে পারতি না। সেদিন তোর যখন অবস্থা অনেক সিরিয়াস হয়ে গেছিলো। কোনো মতেই তকে যখন আর বাঁচানোর রাস্তা আমাদের হাতে ছিলো না সেদিন এই রক্তিমই নিজের জীবন ঝুকিতে রেখে ওর দুটো কিডনী দিয়ে তোর জীবন রক্ষা করে।

আর একটা কথা কি জানিস ছেলেটা হয়তো আর কয়েক দিন আছে এই পৃথিবীতে। কারণ সে ওর দুটো ভালো কিডনী যখন তকে দিতে যায় ‘তখন ডাক্তার বলে আপাতত তোকে রক্তিমের একটা কীডনি দিলেই তুই বেচে যাবি। কারণ তোর তখন একটা কীডনি পুরো পুরি নষ্ট হলেও আরেকটা কিডনি কিন্তু একটু ভালোছিলো। সেটা দিয়েই চলতে পারতি। কিন্তু রক্তিম সেটা হতে দেয়নি। ও সেদিন বলেছিলো যে ‘ওর আগে পিছে কথা বলার মতোকেউ নেই। সেই ছোট্ট বেলায় নিজের মা-বাবাকে হারায়। তারপর বড় হয় তার মামির কাছে কিন্তু ৬ মাস আগে তার সেই মামিও ওকে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। তাই সে ওর দুটো কিডনী তোকে দিয়ে দিতে চায় এবং তোর যে কিডনীটা একটু ভালো আছে সেটা ও নিজে নিতে চায়। জানিস, সেদিন আমরা রক্তিমের কথা শুনে অনেক অবাক হয়ে যাই পরে এর কারণ জানতে চাইলে সে বলে যে”যাকে এতো ভালোবাসি ‘তাকে কি করে চলে জেতে দেই বলেন।

সাথে সে এটার বলেছিলো যে ‘আপনাদের মেয়ে দিশা যদি বেঁচে থাকে তাহলে আমার বেঁচে থেকে কি লাভ, তারচেয়ে যদি দিশা বেচে থাকে তাহলে মরে গিয়েও আমি শান্তিতে থাকতে পারবো। এটা ভেবে যে আমি বেঁচে নেই তো কি হয়েছে আমার ভালোবাসার মানুষটা বেঁচে আছে। জানিস সেদিন ওর কথা শুনে আমি ও তোর আব্বু বুঝেছিলাম যে ছেলেটা তোকে কোতোখানী ভালোবাসে। আর তুই কিনা আজকে সেই ছেলেটাকেই……

তুই আজকে জীবনের অনেক বড় ধরণের অন্যায় করে ফেলেছিস। আজকে তুই সত্যিকারের ভালোবাসাটাকে হারিয়ে ফেললি।

দিশা ওর মায়ের কাছে এসব কথা শুনে সাথে সাথে ধুপ করে নিচে ফ্লোরে বসে পরে। তারপর চিত্কার করে কান্না শুরু করে দেয়। ওর আম্মুকে কান্না করতে করতে বলে….

আম্মু তুমি আমাকে এসব কিছু এতোদিনকেনো বলোনি। এতোদিনকেনো আমার কাছে সব কিছু গোপন রেখেছো। কেনো বলোনি আমি যাকে এতোদিন পাগলের মতো করে খুজে বেরিয়েছি সেই ছেলেটা আরকেউ না সেটা রক্তিম ছিলো। কেনো বলোনি আম্মুকেনো।

মারে’আমি সেদিন তোকে সব কিছু বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু রক্তিম তখন আমায় নিশেধ করে দেয় তোকে না বলার জন্য। আমি কারণ জানতে চাইলে চলে যে তুই নাকি রক্তিমকে একদম দুই চক্ষে সজ্য করতেই পারিস না। আর তুই এসব কিছু জানলে নাকি আর অপারেশনটাই করাতি না। তাই আমরা বাদ্ধ হয়েই তোকে সব কিছু জানাই নি। তোবে আজকে তোর রক্তিমকে এমন কথা বলার জন্যই সব কিছু তকে জানাতে বাধ্য হয়েছি।

দিশা ওর মায়ের কথা শুনে আরো জড়ে চিত্কার করে কান্না সুরু করে দেয় আর বলে রক্তিম তুমি আমাকেকেনো সব কিছু আগে খুলে বলোনি। কেনো বলোনি যে আমি যাকে এতোদিন ধরে খুজে বেরিয়েছি সেটা আরকেউ না সেটা তুমি ছিলে। কেনো বলোনি রক্তিম কেনো? এসব কিছু বলছে আর পাগলের মতো চিত্কার করে কান্না করছে দিশা।

দিশার এমন পাগলামী দেখে ওর এক বান্ধবী দিশার কাছে যায়। তারপর দিশাকে বলে….

তকে আজকে কিছু কথা না বললেই না। তুই যে রক্তিমকে গুন্ডা ‘বখার্টে বলে দাবি করছিলি ‘তুই কি একটি বারের জন্য আসল ঘটনাটা ভেবে দেখেছিস যে আসলে সেদিন কি ঘটেছিলো।

চলবে

অবহেলার ভালোবাসা: পর্ব-৩

দিশা ওর মায়ের কথা শুনে আরো জড়ে চিৎকার করে কান্না সুরু করে দেয় আর বলে রক্তিম তুমি আমাকেকেনো সব কিছু আগে খুলে বলোনি। কেনো বলোনি যে আমি যাকে এতোদিন ধরে খুজে বেরিয়েছি সেটা আরকেউ না সেটা তুমি ছিলে। কেনো বলোনি রক্তিমকেনো। এসব কিছু বলছে আর পাগলের মতো চিত্কার করে কান্না করছে দিশা।

দিশার এমন পাগলামী দেখে ওর এক বান্ধবী দিশার কাছে যায়। তারপর দিশাকে বলে….

তকে আজকে কিছু কথা না বললেই না। তুই যে রক্তিমকে গুন্ডা ‘বখার্টে বলে দাবি করছিলি ‘তুই কি একটি বারের জন্য আসল ঘটনাটা ভেবে দেখেছিস যে আসলে দেদিন কি ঘটেছিলো।

দিশা ওর বান্ধবীর কথা শুনে রক্তিমের সাথে ওর ঘটে যাওয়া সব ঘটনা গুলো খেয়াল করতে থাকে। আজ থেকে একবছর আগে ঘটনা…..

দিশা বান্ধবীদের সাথে বাসে করে সবাই একসাথে পিক নিকে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বাসটা থেকে যায়। ফলে সবাই অনেকটা ধাক্কা খাবার মতো অবস্থা হয়ে যায়। বাসটাকেনো থেমে গেলো তা দেখার জন্য দিশা যখন বাস থেকে নামতে যাবে ঠিক সেই সময় বাসের ড্রাইভার ওকে নামতে মানা করে কিন্তু দিশা তারপরেরও ড্রাইভারের কথা অমান্য করে বাস থেকে নেমে পরে। আর বাস থেকে নামার সাথে সাথে “ঠাসসসস”। সাথে সাথে দিশার মাথাটা গিয়ে বাসের সাথে ধাক্কা লাগে ফলে সেখানে সাথে সাথেই ওর মাথা ফেটে রক্ত ফের হতে থাকে। এবং সেখানে কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তবে জ্ঞান হারানোর কিছুক্ষণ আগে সে আবছা চক্ষে তাকিয়ে দেখে যে একটা ছেলে হাতে বড় হকি স্টিক নিয়ে ওর দিকে দৌড়ে আসছে। তবে ছেলেটা আর কেউ না সেটা হলো রক্তিম। সে দৌড়ে দিশার কাছে যায় এবং ওকে তারা-তারি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে যখন দিশার জ্ঞান ফেরে তখন সে ওর কাছে স্যরি বলতে গেলে দিশা রক্তিমকে নানান কথা শুনিয়ে অনেক অপমান করে। ফলে রক্তিম সেদিন আর ওকে স্যরি বলতে পারেনা।

এদিকে দিশা মনে মনে ভাবে যে ছেলেটা হয়তো কোনো বখার্টে গুন্ডা হবে। ওর কাজি হলো শুধু মারপিট করা। কি সে সেদিন আসল ঘটনাটা জানতোই না। আসলে সেদিন কয়েকটা ছেলে মিলে একটা মেয়ের সাথে অসোভ্য তামি করছিলো। আর রক্তিম তখন সে রাস্তা দিয়ে কোথাও কাজে যাচ্ছিল। সে যখন দেখে যে সব ছেলেরা একটা মেয়ের সাথে অসভ্যতামি করছে তখন সে তাদের কাছে যায়। তারপর…

এই যে ‘ভাইয়ারা আপুটাকে ছেরে দিন। আপুটা বাসায় চলে যায়। অযথা একটা মেয়ের সাথে অশোভ্যতামি করে লাভ কি বলুন! তার চেয়ে বলি কি দেখুন এই মেয়েটাকে ছেড়ে দিন কারণ সেও কারো না কারো মা’বোন ‘হয়।

রক্তিমের কথা শুনে সব ছেলে গুলো মেয়েটাকে ছেড়ে দেয়। আর মেয়েটা গিয়ে সোজা রক্তিমের পিছনে লুকিয়ে পরে। তারপর……

যা’ছেড়ে দিলাম। এখন তুই আমাকে আগে এটা বল দেখী যে ‘তুই যে আমাদের মেয়েটাকে ছেড়ে দিতে বললি তো’এখন এটা বল যে মেয়েটা তোর আসলেকে হয়। তোর বউ gf নাকি বোন কোনটা বল। তারপর না হয় আবার ভেবে দেখবো। কি বলিস তোরা সবাই। (এই বলে সবাই একসাথে হাসা-হাসী শুরু করে দিলো)

এদিকে রক্তিমের ওদের কথা শুনে একদম মাথায় আগুন উঠে গেছে। তারপরেরও নিজেকে যতেষ্ট শান্ত রেখে বলে…..

জি’ এই মেয়েটা আমার বোন হয়। তাই আমি ওকে নিয়ে গেলাম। ঠিক আছে ভাই। এই বলে রক্তিম মেয়েটার হাত ধরে চলে যেতে থাকে। ঠিক সেই সময় ওদের মধ্য থেকেকেউ একজন রক্তিমের পিঠে একটা লাথি মারে। আর রক্তিম মাটিতে পরে যায়। পরে আরেক জন হাতে হকী স্টিক নিয়ে ওকে মারতে আসলে রক্তিম সেটাকেড়ে নিয়ে এলো পাতারি ওদের মারা শুরু করে দেয়। এবং মারতে মারতে একদম রাস্তার মাঝখানে নিয়ে চলে আসে। এসময় যখন তাদের মধ্যকেউ একজন দৌড়ে পালাতে যায় ঠিক সেই সময় রক্তিম ওর হাতে থাকা হকি স্টিকটার একটা কোণ ভেঙে ওই ছেলেটার দিকে ছুরে মারে। আর ভাগ্য বশতো সেটা ছেলেটাকে না লেগে দিশার মাথায় গিয়ে লাগে। আর এর পরের বাকী টুকুতো আপনারা জানেনোই।

রক্তিম বাসায় এসে ভাবে যে করেই হোক ওর দিশার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ ওর জন্যই দিশা আজকে হাসপাতালে। তাই দিশা যখন সুস্থ হয়ে যায় এবং আবার কলেজ যাওয়া শুরু করে তখন সেও নিজের কলেজ থেকে টি.সি নিয়ে দিশা যে কলেজে পড়ে সেই কলেজে ভর্তি হয়। এবং দিশাকে ফলো করতে থাকে।

আর সেটা দিশা কিছুদিন যাবার পর বুঝতে পারে। এদিকে রক্তিম আবার দিশাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ফলো করতে করতে ওর উপর দূর্বল হয়ে পরে। এক সময় দিশাকে ভালোবেসে ফেলে। তো একদিন মনে অনেক সাহস নিয়ে যখন দিশার সাথে কিছু কথা বলতে যাবে তখনি ঘটে আরেক বিপক্তি। কে জেনো কার হ্যান্ডব্যাগ চুরি করে পালাচ্ছিলো। তাও আবার রক্তিমের সামনে দিয়ে। তাই রক্তিম সবার চিত্কার শুনে সাথে সাথে যে ব্যাগটা চুরি করেছে ওকে ধরার জন্য ওর পিছন পিছন দৌড় দেয়ে। এবং একসময় সে দৌড়ে চোরটাকে ধরেও ফেলে।

চোরটাকে ধরার সাথে সাথে ব্যাগটাকেড়ে নিয়ে ঠাসসস” ঠাসসস করে দুটো চড় মেরে দেয়। তারপর যেই চোরটাকে নিয়ে উঠতে যাবে ঠিক সেই সময়কেউ রক্তিমকে ঘুরিয়েই ঠাসসস ” ঠাসসস করে দুটো চড় বসিয়ে দেয়। রক্তিম মাথাটা ঘুরিয়ে দেখতেই অবাক হয়ে যায়। কারণ ওকে আরকেউ থাপ্পড় মারেনি। ওকে থাপ্পড় মেরেছে দিশা নিজেই।

লজ্জা করেনা এভাবে রাস্তা -ঘাটে একটা নিরীহ ছেলেকে মারতে। যতোসব গুন্ডা ‘বখার্টে ছেলে কথাকার। আর শুন আমি কিছুদিন ধরেই লক্ষ করছি তুই আমার পিছন পিছন লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুরছিস। তোর মতলবটা কি সুনি। তকে আমি আজকে শেষ বারের মতো গুশিয়ার করে দিয়ে গেলাম এর পর থেকে যেনো তোকে আর আমার আশে-পাশে না দেখী। এই যে ভাই আপনি যান। এই বলে দিশা ছেলেটাকে ছেরে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।

এদিকে রক্তিম তো তখনও নির্বাক দর্শকদের মতো দারিয়ে গালে হাত দিয়ে দারিয়ে আছে। সে ভাবতেই পারছে না যে আসলে ওর সাথে কিছুক্ষণ আগে ঠিক কি ঘটলো।

তাই সে আর সেখানে দারিয়ে না থেকে সোজা বাসায় চলে যায়। তারপর আবারও কিছুদিন দিশাকে রক্তিম লুকিয়ে লুকিয়ে ফলো করতো। তবে এবার সেটা দিশা বুঝতে পারেনি। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয়। সে যখনি দিশার সামনে পড়েছে ‘তখনি সে কোনো না কোনো ঝামেলায় জরিয়ে পরেছে। হয় কাউকে বাচাতে গিয়ে কাউকে মারছে অথবা কারো সাহায্য করতে গিয়ে কোনো ঝামেলায় পরে গেছে। কিন্তু দিশা সেটা জানতো না। সে রক্তিমকে এভাবে মারপিট করতে দেখে মনে মনে আরও বেশী করে ঘৃণা করতে থাকে। তবে সেটা দিশা না জানলেও শুরু থেকে সবটাই জানতো দিশার সেই বান্ধবীটা।

কিরে দিশা কোথায় হারিয়ে গেলি।

বান্ধবীর কথায় আবার দিশা অতীতের কথা গুলো থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। তারপর….

হুম ‘বল আমি সুনছি।

শোন তুই যে রক্তিমকে এতোদিন নানান কথায় অপমান করে এসেছিস! তুই কি কখনো এটা ভেবে দেখেছিস যে সে যদি আসলেই খারাপ হতো তাহলে তোর ওকে এতো অপমান করার সত্ত্বেও ছেড়ে দিতো বল। এটা কি একটি বারের জন্যও ভেবে দেখেছিস। সাথে আরো শোন সেদিন আসলে তোর সাথে ঠিক কি হয়েছিলো। (তারপর দিশার বান্ধবী দিশাকে রক্তিমের সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছু খুলে বললো) এবার বুঝলি তো! আসলে ছেলেটার কোনো অপরাধ নেই ‘সে যখনি কারো উপকার করতে গেছে ঠিক তখনি তুই কোনো না কোনো ভাবে ওর সামনে চলে আসিস। আর যার ফলে তুই এতোদিন ওকে ভুল বুঝে আসছিলি। তোবে তকে আজকে আরেরটা না বললেই নয়”তুই যদি এবার এই ছেলেটাকে হারিয়ে ফেলিস না তাহলে আমি বলবো তুই তোর জীবনের সবচেয়ে মহা মূল্যবান জিনিসটাই হারিয়ে ফেলবি। তাই এখনো সময় আছে ওকে হারাতে দিস না। মনে রাখীস জীবনে একবার কোনো দামী জিনিস যদি হারিয়ে ফেলিস তা পরে হাজার চেষ্টা করেও আর ফেরত আনতে পারবি না। এখোন সব কিছু তোর উপরে। তোর যা ভালোমনে হয় এখন তুই তাই করতে পারিস।” আমার মনে হলো কথা গুলো তকে জানানো উচিত তাই জানালাম।

দিশা ওর বান্ধবীর কাছে সব কিছু শুনে আরো চিত্কার করে কান্না সুরু করে দিয়ে বলে……

আম্মু আমি রক্তিমের সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। সে কি আমাকে ক্ষমা করে দেবে। ও কি আমায় ওর জীবনে আপন করে নেবে। আমি যে ওকে না দেখেই অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলাম আম্মু। প্লিজ বলো না আম্মু সে কি আমার মেনে নেবে আম্মু বলোনা আম্মু বলোনা। এই বলে দিশা ওর আম্মুকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। তারপর হঠাৎ করে চক্ষ চলে যায়। ফ্লোরে পরে থাকা রক্তিমের দেয়া গিফটের বক্সটার দিকে। তাই সে তারা-তারি করে বক্সটা হাতে নেয় এবং বক্সটা খোলে আর খুলে যা দেখে তা দেখে সাথে সাথে আবার চিত্কার করে কান্না শুরু করে দেয়।

চলবে

অসহায় ভালোবাসা : পর্ব-৪

আম্মু আমি রক্তিমের সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। সে কি আমাকে ক্ষমা করবে! ও কি আমায় ওর জীবনে আপন করে নেবে। আমি যে ওকে না দেখেই অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলাম আম্মু। প্লিজ বলো না আম্মু সে কি আমার মেনে নেবে আম্মু বলোনা কি হলো আম্মু বলোনা । এই বলে দিশা ওর আম্মুকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। তারপর হঠাৎ করে ওর চক্ষ চলে যায়’ ফ্লোরে পরে থাকা রক্তিমের দেয়া গিফটের বক্সটার দিকে। তাই সে তারা-তারি করে বক্সটা হাতে নেয়। এবং বক্সটা খোলে। আর খুলে যা দেখে তা দেখে সাথে সাথে আবার চিত্কার করে কান্না শুরু করে দেয়। কারণ বক্সটার ভিতরে ছিলো রক্তিমের নিজের হাতে আঁকা দিশার একটা মিষ্টি হাসি মাখা ছবি । আর একটা চিঠি। দিশা চিঠিটা দেখে তারা-তারি করে হাতে নিয়ে পরতে শুরু করে তারপর’ চিঠিটা পড়া শেষ হওয়ার সাথে সাথেই চিঠিটা ফেলে দিয়ে দৌড়ে বাইরের দিকে চলে যায়। এদিকে হঠাৎ দিশাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে সবাই অনেক অবাক হয়ে যায়। তাই তারাও রক্তিমের দেয়া চিঠিটা পরতে শুরু করে। চিঠিটা পড়া শেষ করার সাথে সাথে সবার চক্ষে পানি চলে আসে।

চিঠিটায় লেখা:

প্রিয় দিশা’ না’না’ দিশু

শুভ জন্মদিন। তোমাকে তোমার জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা। জানিনা আমার গিফটের বক্সটা তুমি খুলে দেখবে কি না। তারপরেরও অনেক আশা নিয়ে আমার নিজের হাতে আঁকা ভালো না হলেও মনের গহিন থেকে তোমার একটা ছবি একে তোমার কাছে গিফট হিসেবে পাঠালাম। ছবিটা একটু দেখো। আর শোনো ‘তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো পারলে একটু সময় করে পড়ে নিয়ো। যানো আমি না সেই ছোট্ট বেলা থেকে মা-বাবা কারো আদর পাইনি। এক কথা বলতে গেলে বলা যায় আমি এতিম। ছোট বেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে বড় হই আমার এক মামির কাছে। কিন্তু আল্লাহ ‘মনে হয় আমার কপাঁলে সেই সুখটাও লেখেন নি।

তাই ১ বছর আগে আমার সেই মায়ের মতো মামিটাকেও আমার কাছ থেকেকেড়ে নিলেন। বিশ্বাস করো আমি তারপর থেকে এক প্রকার হাসতেই ভুলে গেছিলাম। সারাক্ষণ একা একা থাকতাম। কারো সাথে তেমন মিশতাম না। কিন্তু সেটা আর বেশী দিনের জন্য ছিলো না। কারণ হলো তুমি। হঠাৎ কোনো একদিন এক এক্সিডেন্টের মাধ্যমে তোমার সাথে আমার দেখা হয়। বিশ্বাস করো সেদিন তোমায় দেখে আমার মনের মধ্যে যে কি হয়েছিলো তা আমি নিজেই বলতে পারবো না। তখন মনে হয়েছিলো তোমায় শুধু দেখতেই থাকি। তোমাকে যতো দেখছিলাম মনের মধ্যে তখন ততোই কি জানি হচ্ছিল। কিন্তু পরক্ষণে দেখলাম যে তোমার মাথা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পরছে। এবং তুমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলছো। তাই সাথে সাথে আমি আর দাড়িয়ে না থেকে তোমার নিজের বাহুর মধ্য জরিয়ে ধরলাম।

তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না ‘কিন্তু বিশ্বাস করো আমি যখন তোমায় প্রথম স্পর্শ করলাম তখন আমার গোটা শরীরে যেনো এক প্রকার বিদ্যুৎ বয়ে গেছিলো। তখন তোমাকে দেখে মনে হয়েছিলো যে আল্লাহ মনে হয় নিজ হাতে তোমায় আমার জন্য তৈরি করেছেন। তোমাকে সৃষ্টি করেছেন শুধু আমাকে ভালোবাসার জন্য। জানো তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর ডাক্তার আমায় কি বলেছিলো! ডাক্তার বলেছিলো যে তোমার শরীর থেকে নাকী অনেক রক্ত বেড়িয়ে গেছে তাই তোমার রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু সেই সময় তোমার গ্রুপের রক্ত হাসপাতালে ছিলো না।

কিন্তু ভাগ্য ভালো ছিলো বলে আমার রক্তের সাথে তোমার রক্তের মাচিং করে। ফলে আমি সেদিন তোমায় রক্ত দেই। রক্ত দিয়ে সাথে সাথে আমি একটু দরকারে বাসায় চলে আসি। এবং পরে যখন তোমার সাথে দেখা করতে যাই তখন তুমি আমাকে না জেনেই ভুল বুঝো এবং আমাকে অনেক অপমান করো। তবে বিশ্বাস করো সেদিন আমার তোমার কথায় খুব বেশি তেমন কষ্ট হয়নি। শুধু হালকা চক্ষের পানি ধরে ছিলো।

তাই আর সেদিন তোমায় কিছু না বলে চলে এসেছিলাম। কিন্তু বাসায় আসার পর বার বার শুধু তোমার চেহারাটাই চক্ষের সামনে ভেসে আসছিলো। তাই আগে যেই কলজে স্টাডি করতাম সেই কলেজ থেকে টি.সি নিয়ে তুমি যেই কলেজে পড় ‘সেই ভর্তি হই। সেখানে গিয়ে সারাক্ষণ শুধু তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম যেনো তুমি বুঝতে না পারো।

এক সময় যখন তুমি আমায় দেখে ফেললে তখন আবার নানান কথা ‘যেমন গুন্ডা ‘বখার্টে ‘ছোটলোক আরো কতো কি বলে সবার সামনে অপমান করলে। এক সময় তো তুমি আমাকে ছাত্র -ছাত্রী ভর্তি ক্যাম্পাসে সবার সামনে থাপ্পড়ও মেরেছিলে পুরো ঘটনাটা না শুনে। আসলে আমার কপাঁলটাই খারাপ। আমি যখনি তোমার সামনে ভালো থাকতে চাইতাম ‘ঠিক তখনি কোনো না কোনো কারণে খারাপ হয়ে জেতাম। আর তুমি আমাকে দেখে ভাবতে যে আমি গুন্ডা ‘রাস্তার বখার্টে ছেলে। কিন্তু বিশ্বাস করো এতো কিছুর পরেও আমি যেনো তোমাকে ভুলতে পারছিলাম না তাই সারাক্ষন শুধু তোমার পিছন পিছন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম তোমায়। তবে একদিন তোমার লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে দেখতে হঠাৎ করে দেখলাম যে তুমি রাস্তার মধ্যে মাথা ঘুরে পরে গেলে। তাই সাথে সাথে তোমাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। তারপর তোমার ফোন দিয়ে তোমার আব্বু- আম্মুকে ফোন করে হাসপাতালে ডেকে পাঠালাম।

তোমার আম্মু-আব্বু এলে আমি তাদের সাথে দেখা করে হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে এসেছিলাম। এবং ১ দিন পর যখন আবার হাসপাতালে তোমায় দেখতে গেলাম তখন তোমার আম্মু ও আব্বুকে দেখলাম লুকিয়ে লুকিয়ে অনেক কান্না করছেন। তাই আমি কি হয়েছে তা জানার জন্য তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। কিন্তু আন্টি আমায় তখন যা বলেছিলেন তা শুনে আমার সে সময় পা থেকে জেনো মাটি সরে গিয়েছিলো। আন্টি আমায় তখন বলেছিলেন যে’ডাক্তার নাকি বলেছে তোমার দুটো কিডনী নষ্ট হয়ে গেছে।

তাই সেদিনি নাকি তোমার অপারেশন করানো লাগবে। আর তার জন্য চাই দুটো কিডনী। কিন্তু সেই সময় তোমার কিডনীর সাথে মাচিং কোনো কিডনীই মিলছিলো না। সেদিন যদি তোমার অপারেশন না করানো হয় তাহলে নাকী আর তোমাকে বাচাঁনো যাবে না। এই সব কিছু শুনে বিশ্বাস করো আমার তখন মনে হচ্ছিল যে আমার বুকের বাম পাশটায়কেউ ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। আমি সব সোনার পর সাথে সাথে সব জায়গায় কিডনীর খোঁজ করি ‘কিন্তু কোথাও কিডনী পাইনি।

তারপর হঠাৎ আমার খেয়াল হয় যে আমার নিজেরী তো দুটো কিডনী আছে। আর আমার ও তোমার রক্তের গ্রুপ তো একই। তাই সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে অপারেশন করানোর কথা বলি। বলি যে আমি কিডনী দেবো। কিন্তু তখন ডাক্তার ও আঙ্কেল -আন্টি রাজী হচ্ছিল না। তাদের কথা কারো জীবন নষ্ট করে আমি আমাদের মেয়েকে বাচাঁতে চাই না। কিন্তু তারা তো আর জানতো না যে তুমি ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আপন বলতে আরকেউ নেই। আর সেই তুমিই যদি আমায় ছেড়ে চলে যাও তাহলে আমি কি নিয়ে বাচঁতাম।

তাই পরে তাদের অনেক রিকুয়েস্ট করে রাজী করাই। কিন্তু ডাক্তার বলে আপাতোত তোমায় আমার একটা কিডনী দিলেই তুমি বেচেঁ যাবে ‘কারণ তোমার নাকি তখনো আরেকটা কিডনী হালকা নষ্ট হয়েছিলো। সেটা দিয়েই নাকী চলবে। ওই কিডনীটা পরে অপারেশন করলেও নাকী হবে। কিন্তু আমি কি করে তোমাকে আশংকায় রাখী বলো! তাই ডাক্তারকে বলে আমার দুটো কিডনী তোমায় দিয়ে ‘তোমার ওই একটা কিডনী আমি নিয়ে নেই।

বিশ্বাস করো আজ আমি অনেক খুশি।কারণ আজকে আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে বাচাঁতে পেরেছি। জানো তুমি সুস্থ হওয়ার পরে আমি তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে আবার মনে পরে যায় যে’তুমি তো আমাকে আবার সয্যই করতে পারোনা তাই আর তোমার সামনে আসিনি। কিন্তু আজকে যখন হাসপাতালে শুনলাম তোমার নাকী আজকে জন্মদিন, তাই আর না এসে থাকতে পারলাম না। আমি জানি হয়তো বা তুমি আজকে আমাকে দেখলে আবারও অপমান করবে। কিন্তু তারপরেও আজকে তোমায় দেখার বড় ইচ্ছে হচ্ছিল ‘তাই চলে এলাম। সাথে তোমার গিফট হিসেবে তোমার জন্য নিয়েছি আমার নিজের মনের ভাবনা গুলো থেকে আঁকা তোমার একটা মিষ্টি হাসি মাখা ছবি।

জানিনা ছবিটা তুমি দেখবে কিনা। তারপরেরও অামার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো যে তোমাকে নিজের হাতে একে একটা ছবি গিফট করবো। আচ্ছা ওসব কিছু এখন বাদ যাক। অনেক কথাই হয়তো বা বলে ফেললাম প্লিজ রাগ করো না। আমি জানি আমার হাতে আর বেশী সময় নেই তাই আজকে এই শেষ বারের মতো তোমার এই গুন্ডা ‘বখার্টে ছেলেটা তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। জানি কথাটা শুনলে তুমি অনেক রাগ করবে কিন্তু তারপরেরও বলি। I love ‘you’ fariya. আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। বিশ্বাস করো তোমাকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসি।

ইতি’
তোমার ঘৃণার পাত্র, গুন্ডা ‘বখার্টে ছেলে রক্তিম।
চিঠিটি পড়ার পর সবাই এক সাথে বাইরে দিশার কাছে চলে আসে এবং রক্তিমকে খুজতে থাকে।

এদিকে রক্তিম তখন রাস্তার বসে সমানে মুখ দিয়ে রক্ত বমি করতে থাকে। আর কাটা জায়গা গুলো রক্তে ভিজে যেতে থাকে। রক্তিম ওর বুক পকেট থেকে দিশার ছবিটা বের করে ছবিটার দিকে এক নজরে চেয়ে থাকে। আর বলে….

হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা : পর্ব – ৫

আচ্ছা দিশা ‘আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না! আমার সাথে কি তুমি একটু মিষ্টি ভাষায় কথা বলতে পারো না। আচ্ছা তুমি কি আমায় দেখে বুঝতে পারোনা যে আমি তোমাকে কটোটুকু ভালোবাসি। কতোটুকু আছো তুমি আমার রিদয় জুড়ে। তারপরেরও তুমিকেনো আমার সাথে এমন করো। জানো আমার তখন কতো কষ্ট হয় তোমার এরুপ আমার সাথে আচরণ দেখে। কেনো বুঝোনা তুমি কতোক্ষাণি ভালোবাসি তোমায়। একটি বার কি বলতে পারতে না যে রক্তিম আমিও তোমায় অনেক ভালোবাসি।
এই বলে রক্তিমের চক্ষ আবার ঝাপসা হতে শুরু করলো।

ভালোবাসি ‘রক্তিম আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি।

কথাটি হঠাৎ করে রক্তিমের দিকেকেউ দৌড়ে আসতে আসতে বললো। তাই রক্তিম ভালো করে চক্ষের পানি গুলো মুছে দেখতে লাগলো যেকে আসলে এই কথাটা বললো। কিন্তু রক্তিম যা দেখলো তা দেখে অনেকটা অবাক হয়ে যায়। কারণ যে এই কথাটি বলে দৌড়ে আসছে সে আরকেউ না সেটা হলো দিশা। এক প্রকার অনেকটা দৌড়ে এসে রক্তিমের পাশে বসে সাথে সাথে রক্তিমকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে …….

I love you’ Roktim. আমি তোমায় অনেক, অনেক ভালোবাসি। প্লিজ, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দেও।

(রক্তিম নিশ্চুপ। সে এখনো বিশ্বাসী করতে পারছে না যে দিশা ওকে জরিয়ে ধরে ভালোবাসি বলছে)

কি’ হলো রক্তিম! তুমি কথা বলছো নাকেনো। আমাকে কি তুমি ক্ষমা করবে না বলো?

(নিশ্চুপ)।

বিশ্বাস করো ‘আমি তোমার সাথে এতোদিন যা কিছু করেছি ‘সব না জেনে’ না শুনে। আমি যদি যানতান যে ‘যাকে এতোদিন খুজে বেরিয়েছি সেটা আর কেউ না ‘ সেটা তুমি ‘তাহলে আমি বিশ্বাস করো দিন তোমার সাথে এরোকম ব্যাবহার করতাম না। প্লিজ আমাকে তুমি ক্ষমা করে দেও প্লিজ । বিশ্বাস করো আমি আমার ভুল বুঝতে পেরে গেছি। তোমায় অনেক ভালোবেসে ফেলেছি ( এই বলে আবারও রক্তিমকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো)

এদিকে রক্তিম এবার চুপ না থেকে দিশাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে…

আরে ‘তুমি কান্না করছোকেনো। আরকেনই বা আমার কাছে ক্ষমা চাইছো! তুমি তো কোনো অন্যায় করোনি। তাহলে কি জন্য আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া বলো।

(নিশ্চুপ)

আসলে ক্ষমা আমার তোমার কাছে চাওয়ার দরকার। আমার জন্যই তোমাদের অনেক প্রোবলেম হয়েছে। আমার জন্য আজকে তোমার খুশির দিনটাই নষ্ট হয়ে গেলো। পারলে আমাকেই ক্ষমা করে দিয়ো। আর আন্টি -আঙ্কেলকে আমার সালাম জানিয়ো চলি।

এই বলে রক্তিম দিশার সামনে থেকে অনেক কষ্টে উঠলো দিশাকে বুঝতে না দিয়ে। তারপর সামনের দিকে এগুতে লাগলো। কিন্তু সামনে যেতে যেতে হঠাৎ করে আবার মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে । এক সময় সেখানে মাথা ঘুরে পড়ে যায়।

এদিকে দিশা তখন সেখানে বসে বসে শুধু নিরবেই কান্না করে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ যখন সে মাথা তুলে রক্তিমের চলে যাওয়ার দিকে তাকালো’তখনি দেখলো যে রক্তিমের মুখ দিয়ে রক্ত সমানে গড়িয়ে পরছে এবং ওর সারা শার্টে রক্তে ভিজে গেছে। তারপর হঠাৎ দেখে রক্তিম রাস্তায় ধুপ করে পরে গেলো। তা দেখে দিশা সাথে সাথে রক্তিম বলে চিত্কার দিয়ে ওর কাছে দৌড়ে চলে যেতে লাগলো।

এই রক্তিম ‘তোমার কি হয়েছে। এই রক্তিম কি হলো তোমার কথা বলো।

(নিশ্চপ)।

প্লিজ কথা বলো ‘। দেখো আমি তোমায় কথা দিচ্ছি ‘আমি আর কোনো দিন তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করবো না। কোনো দিন গায়ে হাত তুলবো না। কিন্তু প্লিজ তুমি কথা বলো। আজকের পর থেকে তুমি আমাকে যা বলবে আমি তাই শুনবো। তুমি বললে আমি তোমার বাসার কাজের মেয়ে হয়ে থাকবো। তাও প্লিজ তুমি কথা বলো। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না রক্তিম। তোমায় অনেক ভালোবাসি প্লিজ এভাবে আমাকে একা রেখে শাস্তি দিয়ো না। শুধু একবার কথা বলো না রক্তিম।
প্লিজ …

এই বলে সে রক্তিমকে জরিয়ে ধরে চিতংকার করে কান্না শুরু করে দিলো। তারপরেও যখন দেখলো যে রক্তিম কোনো কথা বলছে না তখন আস্তে করে ওর রক্ত মাখা ঠোঁটে নিজের দুটো ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। এভাবে কতোক্ষণ রাখলো তা বলতে পারবে না। কিন্তু এক সময় যখন হঠাৎ রক্তিম জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে দিশাকে জড়িয়ে ধরলো তখনি দিশা রক্তিমের ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট দুটো ছারিয়ে নিলো। সে রক্তিমকে জাগতে দেখে খুশিতে কাঁদতে কাঁদতে ওকে আবারও শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।

এদিকে রক্তিম তখন সমানেকেশে যাচ্ছে। আর মুখ দিয়ে রক্ত ধরিয়ে পরছে। তারপর কাশা বন্ধ করে দিশার দিকে তাকালো। দেখলো দিশার মিষ্টি মুখটাকেঁদেকেঁদে একদম মলিন করে ফেলেছে। ওর এমন চেহারা দেখে রক্তিমের মনে মনে অনেক কষ্ট লাগলো। দিশার এমন অবস্থা দেখে রক্তিমেরো চক্ষের পানি চলে এলো। তাই ওর হাত দুটো দিয়ে দিশার চক্ষের পানি গুলো মুছে দি্য়ে বলে…..

এই পাগলি মেয়ে তুমি কাঁদছোকেনো। কান্না থামাও বলছি। তুমি যানো না আমি তোমার চক্ষে পানি সয্য করতে পানি না। প্লিজ তুমি কান্না থামাও।

(দিশা রক্তিমের কথা শুনে আরো জোড়ে কান্না শুরু করে দিলো)

আরে ‘তুমি আবারও কাঁদছোকেনো । তোমাকে বললাম না কান্না থামাতে। তা না করে আরো বেশি কান্না শুরু করে দিলে।

I love you Roktim. বিশ্বাস করো তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেয়োনা। তুমি যদি আমায় ছেড়ে কোথাও চলে যাও তাহলে হয়তো বা আর আমি বাচবোই না।

আচ্ছা ঠিক আছে। এখন আগে তোমার কান্না থামাও তো। আর আমার কথা গুলো শোনো।

(রক্তিমের কথা শুনে এবার দিশা কান্না করা বন্ধ করে দিলো) তারপর…….

দেখো দিশু ‘আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। সেই প্রথম দেখার পর থেকেই। সারাক্ষণ শুধু তোমার কথা ভাবতাম। শুধু তোমায় নিয়ে মেতে থাকতাম। আমি জানতাম যে আমার ভালোবাসা শুধু এক তরফাই থাকবে। তাই তোমাকে পাবার আশা আমি ছেরে দিয়েছিলাম। তবে আমি এটা জানতাম না যে তুমিও আমাকে ভালোবেসে ফেলবে। জানো আমারো না অনেক দিনের ইচ্ছে তোমাকে বিয়ে করে বউ করে আমার ঘরে নিয়ে আসবো। আমাদের সংসার হবে ‘। একটা সুন্দর ফুট ফুটে মেয়ে হবে যে সারাক্ষণ শুধু বাবাই বাবাই বলে আমার পিছনে লেগে থাকবে। কিন্তু।

কিন্তু কি’রক্তিম। বলো, কি হলো বলো কিন্তু কি।

কিন্তু আল্লাহ’র মনে হয় এটা চাননি। তাই আজকে যখন তোমায় পেলাম তখন আমার কাছে আর সময় নেই। তিনি হয়তো বা তোমার সাথে আমার মিল লিখে দেননি। জানো আমার এখন বড় কষ্ট হয় এটা ভেবে যে তোমায় ছেড়ে আমায় চলে যেতে হবে। (কথাটা বলতে বলতে আবারও ওর মুখে দিয়ে রক্ত গরিয়ে পরতে লাগলো..)

এই রক্তিম কি হলো তোমার। তুমি এসব কি পাগলের মতো কথা বলছো। আমি আছি না ‘ আমি থাকতে তোমায় কিছু হতে দেবো না। তোমাকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে সারা জীবনের জন্য বেধে রাখবো। দেখো তোমার কিছুই হবে না। চলো আমরা ডাক্তারের কাছে যাবো। চলো……(কান্না করতে করতে…)

আরে’পাগলি মেয়ে তুমি কান্না করছোকেনো। তোমাকে না বললাম ‘তোমার চক্ষের পানি আমি শয্য করতে পারি না। তার পরেরও তুমি কাঁদছো।

আজকে তোমার এই সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। আমার জন্য তোমার আজকে এই অবস্থা। আমার জীবন বাঁচাতে গিয়েই আজকে তুমি মরতে বসেছো। কেনো করলে তুমি এমন বলোকেনো করলে। (এই বলে আবারো রক্তিমকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো…)

যাকে,এতো ভালোবাসি তাকে কি করে নিজের চক্ষের সামনে ছেড়ে চলে যেতে দেই বলো। শুধু এই সামান্য কিডনীটাকেনো আমাকে যদি নিজের জীবনটাকেও দিয়ে দিতে হতো ‘তাহলেও আমি হাসি মুখে তা দিয়ে দিতাম। আচ্ছা ওসব কথা বাদ দেওতো ‘শোনো না তোমার মাথাটা একটু নিচে নামিয়ে আনো তো। আমার না অনেক দিনের ইচ্ছে তোমার কপালে একটা চুমু একে দেবো। প্লিজ তাই শেষ বারের মতো যদি একবার।

দিশা ওর কথা শুনে সাথে সাথে কাঁদতে কাঁদতে মাথাটা রক্তিমের মুখের কাছে নিয়ে যায়। তখন রক্তিম সাথে সাথে ওর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়। তারপর হঠাৎ রক্তিমেরকেমন যানি লাগতে শুরু করে। তাই….

দিশা আমাকে একটু শক্ত করে জরিয়ে ধরো না। আমারকেনো জানি তোমায় জরিয়ে ধরতে খুব ইচ্ছে করছে। প্লিজ দিশা একটু তারা-তারি করে জরিয়ে ধরো।

এই তোমার কি হয়েছে। তুমি এমন করছোকেনো। এই দেখো আমি তোমায় জরিয়ে ধরেছি। এই দেখো। অনেক শক্ত করে জরিয়ে ধরেছি।

এই বলে দিশা রক্তিমকে অনেক শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। জরিয়ে ধরার কিছুক্ষণ পর………

রক্তিম ‘এই রক্তিম হয়েছে। এবার তো ছাড়ো। এই কি হলো ছাড়ো।

(নিশ্চুপ)

এই কি হলো কথা বলছো নাকেনো। এই রক্তিম কথা বলো’ রক্তিম’এই রক্তিম। কি হলো তুমি কথা বলছো নাকেনো।

(গল্প ভালো লাগলে এড দিয়ে সাথে থাকেন)

রক্তিমকে কথা বলতে না দেখে দিশা ওকে নিজের কাছ থেকে জরিয়ে থাকা থেকে ছারিয়ে নেয়। তারপর রক্তিমকে পাগলের মতো নাম ধরে ডাকতে থাকে। কিন্তু রক্তিম যখন আর ওর ডাক শুনছিলো না ‘তখন হঠাৎ করে ওর চক্ষ যায় রক্তিমের গায়ের দিকে। দেখে রক্তিমের গায়ের পুরো শার্টটা লাল হয়ে আছে। তাই তারা-তারি করে সে ওর গায়ের শার্টটা উপরে তুলে।

রক্তিমের গা থেকে শার্ট উঠানোর সাথে সাথে দিশা দেখে রক্তিমের যে জায়গা গুলোতে অপারেশন করানো হয়েছিলো সেই জায়গা গুলো দিয়ে রক্ত গরিয়ে পরে পরে পু্রো শার্টটা রক্তে লাল হয়ে গেছে। এদিকে রক্তিমকে আর কোনো কথা না বলতে দেখে দিশা সাথে সাথে সেখানে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। কারণ ওর আর বুঝতে বাকী নেই যে রক্তিম ওকে চিরদিনের জন্য এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে গেছে। সে বুঝে গেছে আরকেউ ওর পিছনে পিছনে ঘুর ঘুর করবে না। আর কাউকে অপমান করতে পারবে না।

পরিশিষ্ট, আজ প্রায় ৩ দিন পর দিশা ঘরে তালা বন্ধ অবস্থায়। এখন সে সারাক্ষণ শুধু রক্তিমকে খুঁজে বেড়ায়। সারাক্ষণ শুধু রক্তিম, রক্তিম করতে থাকে। আর মাঝে মাঝে নিজে নিজেই কথা বলে শুধু হাসে আর হাসে।

এদিকে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে দুর থেকে চক্ষের পানি ঝরান দিশার আম্মু-আব্বু।

আসলে আজ থেকে ৩ দিন আগে দিশা যখন রক্তিমের লাশ দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ঠিক সেই সময় ওর মাথায় অনেক বড় ধরনের আঘাত পায়। যার কারণে আজ সে পাগল হয়ে গেছে। আর সেই জন্যই সে এখন সারাক্ষণ শুধু রক্তিমকে খুজে বেড়ায়।

সমাপ্ত

অসমাপ্ত ভালোবাসা
লেখকঃ খালেদ ওয়াহেদ রক্তিম

আরো পড়ুন- একটি পবিত্র বাসর রাত

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *