রাগী মেয়ের ভালোবাসা পর্ব ৫

রাগী মেয়ের ভালোবাসা – অফিসের বসের সাথে প্রেম পর্ব ৫

রাগী মেয়ের ভালোবাসা – অফিসের বসের সাথে প্রেম পর্ব ৫: একটা সময় অনেক রাগ, অবহেলা আর অপমান সহ্য করেছি, কিন্তু ভালোবাসার পরে কোন মানুষ আর সহ্য করতে পারে না। কারণ ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে এগুলো পেলে বুকের যন্ত্রণা তীব্র হয়, ইগো হার্ট হয়। মন ভাঙ্গার কষ্ট সহজে পূরণ হয় না। তাই ম্যামের সাথে এখন আমার প্রবল অভিমান কাজ করছে।

ক্ষমার নিবেদন

বিকালে ডেক্সে বসে ছিলাম।

হঠাৎ পিওন এসে বললো, ম্যাম নাকি ডাকে আমাকে।

আমি ভিতরে গেলাম।

আমিঃ ম্যাম, ভিতরে আসবো?

ম্যাম ভিতরে আসতে বললো। ভিতরে গিয়ে ম্যামের সামনে দাঁড়াতেই ম্যাম আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

কাজটি যে এতো তাড়াতাড়ি হলো আমি কিছু বুঝতেই পারলাম না। আমারও কেমন জানি ভালো লাগছিল। পরক্ষনেই মনে হলো, এটা তো ঠিক না। আমি এই রকম করছি কেন? আমি ম্যামকে ঝটকা মেরে ছড়িয়ে দিয়ে বলতে শুরু করলাম,

আমিঃ কি মনে করেন, আমি কি মানুষ, না আমার কোনো মন নেই। চাইলেন কাছে টেনে নিলেন, চাইলেন ছুরে ফেলে দিলেন। আপনার এ অভিনয়ের জন্য তো সেরা এ্যাওয়ার্ড দেওয়া উচিত।

আমার কথায় ম্যামের চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা পানি পরে গেল।

আমিঃ আপনার সাথে যেতে পারবো না। আমাকে বারবার বিরক্ত করবেন না।

এই বলে আমি আমার মতো চলে আসলাম।

ম্যাম ঠায় দাড়িয়ে আছে। হয়তো কাদবে। কাদুক আমার কি?

এসব বলে অফিস থেকে বাড়িতে চলে আসলাম। তারপর রাতে একটু খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

খুব কষ্ট হচ্ছে আজ

পরদিন অফিসে গেলাম।

ম্যাম সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় জল ভর্তি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেল।

ঘন্টা কয়েক যাওয়ার পরে ম্যামের কেবিনে ডাক পরলো।

আমিঃ ম্যাম, আসবো।

ম্যামঃ আসো।

ভিতরে গিয়ে দেখলাম, ম্যাম একটা কফির মগ সামনে নিয়ে বসে আছে।

ব্যাপার কি আজ একটা কফির মগ।

ম্যামঃ বসো।

আমিঃ ডেকেছেন কেন?

ম্যামঃ জানো, তোমার কালকের কথায় কত কষ্ট পেয়েছি। কাল সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। এভাবে আঘাত করে আর কথা বলবে না। আমি সইতে পারিনা।

আমিঃ এখন আমাকে ডাকার কারণ কি?

ম্যামঃ এই কফিতে তোমার ঠোটের ছোয়া চাই। এখন কেন জানিনা হাটা চলা সবখানে মন তোমার ছোয়া চায়।

আজ কেন জানি ওকে কষ্ট দিতে মন চাইলো না। তাই কফির মগটা হাতে নিতে নিতে বললাম,

আমিঃ কেন করেন এমন পাগলামি?

এরপর কফিটা আমি একটু খেয়ে ওর কাছে ফিরিয়ে দিলাম।

ম্যামঃ কেনো করি তা জান না। তোমাকে ভালোবাসি, তাই।

আমি শান্তভাবে বললাম,

আমিঃ দেখুন, আপনি আমার চেয়ে আরো ভালো ছেলে পাবেন। আর তাছাড়া আপনি কখনো আমার সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন না। আমার মা বাবা থাকে গ্রামে। সেখানে তো কখনোই থাকতে পারবেন না। সর্বশেষ কথা, আমি আপনাকে ভালোবাসি না।

ম্যামঃ দেখো, তোমাকে আমি আগেও বলেছি, আমার তোমার থেকে ভালো কাউকে দরকার নেই। আর আমি সব পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারি। না পারলে তুমি আছোনা। শেষ কথা কি বলেছো তুমি আমাকে ভালোবাস না। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলোতো ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি না।’

ওর চোখের দিকে তাকানোর সাহস আমার নেই। তাই অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,

আমিঃ তোমাকে আগেও বলেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আমি কোনো অহংকারি মেয়েকে ভালোবাসি না। আর আমার সাথে এরকম করলে আমি এগ্রিমেন্ট ভঙ্গ করে চাকরি ছেড়ে চলে যাব।

আমার কথায় ম্যাম আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি চলে আসলাম।

অবহেলার কষ্ট

ম্যাম বিকালে ফয়সাল আর ইরাকে ওনার কেবিনে ডাকলো।

ওরা একসাথেঃ ম্যাম আসবো।

ম্যামঃ আসো বসো।

ইরাঃ ম্যাম আমাদের ডেকেছিলেন।

ম্যামঃ তোমাদের ডাকার কারণ হলো তোমরা তো জানো, আমি জনিকে কত ভালোবাসি। ও আমাকে কারণ বসত ভুল ভুঝেছে। তোমরা তো জানই আমার রাগ উঠলে রাগ সামাল দিতে পারি না। তোমরা বিশ্বাস করো জনিকে ছাড়া আমি বাচবো না।

এই কথা বলে ম্যাম কান্নায় ভেঙ্গে পরলো।

ফয়সালঃ ম্যাম কাদবেন না। আমাদের কি করতে হবে বলেন?

ম্যামঃ ও চাকরি ছাড়ার হুমকি দিয়েছে। ওকে বুঝাও। ওকে যেভাবেই হোক আমার কাছে ফিরিয়ে দেও। ওকে ছাড়া চলতে আমার কষ্ট হয়। তোমরা ওর কাছের। তোমরা বুঝালে ও নিশ্চয়ই বুঝবে।

ইরাঃ আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমরা দেখছি ব্যাপারটা। কাদবেন না, ম্যাম। আমরা আছিতো আপনার সাথে।

ম্যামঃ আর শোনো, এত দিন তোমাদের সাথে যা খারাপ ব্যবহার করেছি তার জন্য ক্ষমা করে দিও আমাকে।

ফয়সালঃ কি যে বলেন না, ম্যাম। আমরা এখন আসি।

এই বলে ওরা দুজন সোজা আমার ডেক্সে চলে আসলো।

আমিঃ কি ব্যাপার তোমরা দুজন একসাথে, কিছু বলবে?

ইরাঃ না মানে জনি ভাইয়া, ম্যাম তোমাকে সত্যি ভালো বাসে। ওনার সাথে আর অভিমান করে থেকো না।

ফয়সালঃ হ্যা জনি, ও ঠিকই বোলেছে। আর রাগ করে থেকো না।

এবার আমি ওদের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বললাম,

আমিঃ দেখ ইরা, তোমাকে আমার ছোট বোনের মতো জানি। আর ফয়সাল তোমাকে বড় ভাইর মতো। তাই ভাই-বোন কখনো তার ভাইকে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করতে বলেনা। আশা করি, তোমরাও বলবি না।

দেখলাম, ওরা মুখটা কালো করে চলে গেল। যাওয়ার সময় দেখলাম, আমার সাথে কথা না বলে বের হয়ে যাচ্ছে। বুঝলাম আমার সাথে অভিমান করেছে।

অফিসের কলিগদের সাথে কথা

ওদের সামনে গিয়ে বললাম,

আমিঃ তোমরা রাগ করেছো কেন?

ইরাঃ আমরা তোমার কে যে রাগ করবো? আমি ইরার গালে হাত দিয়ে টেনে বললাম, আরে বোন আমার দেখি বেশি জেদি হয়ে গেছে। ভাইয়ের উপর রাগ করে থাকতে নেই।

ইরাকে দেখলাম কেদে দিল। এই জন্যই ওকে এত ভালো লাগে। সহজ সরল মেয়ে একটা। একটুতেই কেঁদে দেয়।

আমি ইরার চোখের পানি মুছে দিলাম।

তখন ইরা বললো,

ইরাঃ আমার চোখের পানি মুছলে কি হবে? তোমার নিলার চোখের পানিতো এখনো পড়তেছে।

আমিঃ আবার ঘুরে এক কথা। শোন বোন আমার, ফয়সাল ভাই তুমিও শোন, ওর আর আমার মাঝে বিশাল ব্যবধান। তা তোমরা কেন বুঝনা? ধরো, তোমাদের কথা ধরে ওর সাথে প্রেম করলাম। এর শেষ পরিণতি কি বিয়ে! ওকি পারবে আমার সাথে মানিয়ে নিতে। কখনোই পারবে না, বুঝলে এবার।

ওরা দেখলাম, মাথা নিচু করে ফেললো। আমি ইরার গালে হাত দিয়ে বললাম,

আমিঃ “পাগলি বোন আমার। চলো, তোমাদের আজকে ট্রিট দিব। এবার তো একটু হাসো।

ইরা একটু মুচকি হাসি দিল।

আমিঃ এইতো হয়েছে, চলো।

ওদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে ট্রিট দিলাম।

অন্যদিকে ম্যাম আমার ওই কথা বলার পর থেকে বেশি একটা জোর খাটানোর সাহস পায় না।

এইভাবেই কিছুদিন চলে গেল।

এর ভিতর কোম্পানির ডেবলআপ হওয়ার জন্য ম্যামের বাসায় ছোটখাট
একটা পার্টি দিয়েছে অফিসের সবাইকে নিয়ে।

তো কাল সন্ধায় অনুষ্ঠান।

ভালোবাসার আবদার

দুপুরে কাজ করছি। তখন ম্যাম আমার ডেক্সে আসলো।

আমি দাড়িয়ে গেলাম।

আমিঃ আমাকে বললেই তো আমি চলে আসতাম।

ম্যামঃ না থাক, শোনো। তোমাকে কিন্তু কাল আসতেই হবে।

আমি একটা মুচকি হাসি দিলাম।

ম্যাম আবারো বললো,

ম্যামঃ হাসলে হবেনা। তোমাকে কিন্তু আসতেই হবে।

আমি প্রতি উত্তরে আবারো একটা মু্চকি হাসি দিলাম।

ম্যাম হয়তো বুঝতে পেরেছে, আমি আসবো না। তাই রাতে ওনার বাবাকে দিয়ে আবার কল করাল।

আমি সালাম দিয়ে বললাম,

আমিঃ স্যার কেমন আছেন?

স্যারঃ এইতো বাবা ভালো। শোনো, যে কারণে তোমাকে কল দিয়েছি তাহলো কাল কিন্তু তোমাকে থাকতেই হবে।

আমিঃ না মানে স্যার আমার….

স্যারঃ মানে টানে বাদ। কাল তুমি সবার আগে আসবে, ব্যাস রাখছি।

কি আর করার? পরের দিন বিকালে ওদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।

বাসার সামনে যেতেই দেখি নিলা দাড়িয়ে রিক্সা থেকে নামলাম। ও আমার সামনে এসে দাড়ালো।

ম্যামঃ আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো তোমার?

আমিঃ জি না, ম্যাম।

ম্যামঃ আচ্ছা, চলো।

আমি কিছু না বলে ভিতরে যেতে লাগলাম।

ম্যাম আমার পিছন পিছন আসতে লাগলো।

ভিতরে গিয়ে দেখলাম, অনেকেই চলে এসেছে।

আমি সোজা স্যারের সাথে দেখা করতে চলে গেলাম।

আমিঃ কেমন আছেন স্যার?

স্যারঃ এইতো ভালো। বাবা তুমি এসেছো। যাও, সবার সাথে কথা বলো।

আমি সবার সাথে কথা বলতে লাগলাম। নিলা যেন কোথায় গিয়েছে? মেয়েটাকে আজ পরীর মতো লাগছে।

বসের রোমান্টিক অত্যাচার

কিছুক্ষণ পর রুমা আসলো। এসেই তার ঢং মার্কা কথা।

রুমাঃ তুমি আগে চলে আসছো। আর আমি তোমার সাথে আসতে চেয়েছি। তুমি না এক…….।

আমিঃ থাক, আর বলতে হবে না। আচ্ছা চলো, ওখানে গিয়ে বসি।

রুমাঃ হ্যা চলো।

রুমার সাথে বসে কথা বলছি। তখন কোথা থেকে নিলা এসে আমার হাত ধরে টানতে লাগলো।

আমিঃ আরে কি হয়েছে, ম্যাম?

দেখেতো মনে হয় রেগে আছে।

টানতে টানতে উপরের বারান্দায় নিয়ে গেল।

একটা দোলনাতে নিয়ে বসালো। আর ও নিজে আমার সামনে চেয়ার টেনে বসলো।

আমার দিকে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।

এইভাবে তাকালে আমি অনেক ভয় পেয়ে যাই।

আমিঃ ম্যাম এই ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আর এখানে নিয়ে আসলেন ক্যানো?

ম্যাম কিছুটা চিৎকার দিয়ে বললো,

ম্যামঃ তুমি জানো না, কেন তাকিয়ে আছি? শোন, তুমি আমার রাগ বাড়াইও না। তুমি জানো, রাগ উঠলে আমি রাগ কন্টোল করতে পারিনা।

নিলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

নিলাঃ কি খাবে?

আমিঃ না, কিছু না।

নিলা একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো,

তুমি না খেলেও আজ আমি খাবো।

আমিঃ কি?

নিলাঃ তোমার ঠোট।

এই বলে আমার ঠোটের উপর হামলা করলো। চুমুক দিয়ে ধরে রেখেছেতো ধরেই রেখেছে। ছাড়ার নামই নেই। আমি আর না পেরে ওর পিঠ খামছে ধরলাম।

কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ওর বান্ধুবিরা চলে আসলো।

বান্ধুবিরাঃ ও সরি সরি! ভুল সময় চলে এসেছি।

নিলা এবার ওদের কথায় আমাকে ছেড়ে দিল।

আমি হাপাচ্ছি। নিলা একটু দম নিয়ে তার বান্ধুবিদের বলতে
লাগলো,

নিলাঃ কি হয়েছে? তোদের আসার আর সময় টময় নেই। চলে এসেছিস, দেখছিস যে আমরা দুজন একসাথে আছি। মন চায় আরো কিন্তু তোদের জন্য আর কিছুক্ষণ পারলাম না।

ওর এই কথা শুনে ওর বান্ধুবিরা….চলবে…

পরের পর্ব- অফিসের বসের সাথে প্রেম শেষ পর্ব

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *