পর্ব ১৩
মা আবার শুনে ফেলেনি তো কিছু?
ফাহমি ও ফিয়োনা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। দুজনের মুখ শুকিয়ে গেছে ভয়ে। ফাহমি আন্টির দিকে ভয় ভয় চোখে তাকালো। আন্টি হেসে বললেন, বাবা ফাহমি আজকে রাতে আমাদের এখানে খেয়ে যাবে।
হাফ ছেড়ে বাঁচলো দুজনে। যাক বাবা আন্টি কিছু শুনে ফেলেনি। ফাহমি প্রত্যুত্তরে বলল, না আন্টি থাক না।
- আহা বড়দের কথা শুনতে হয়। আজ রাতে এখানে খেয়ে যাবে ব্যস। কথা শোনো আমার।
- আচ্ছা আন্টি খেয়ে যাবো। এবার খুশি?
- হুম খুশি। ফিয়োনার সামনে পরীক্ষা। পড়াশোনা কেমন করছে বাবা?
- জ্বি আন্টি মোটামুটি ভালো চলছে। কিভাবে আরো এগোনো যায় আমি সেদিকটা দেখছি।
- আচ্ছা বাবা যাই তাহলে।
আন্টি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো ফাহমি। ফিয়োনা বলল- যা ভয় পেয়েছিলাম বাবাহ। ভেবেছিলাম আম্মু সব শুনে ফেলেছে।
- আমিও তো। প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম। যাইহোক এখন পড়া শুরু করো।
- আবার পড়া? আজকে কত পড়বো?
- আরেকটু..
- আচ্ছা। তবুও আর কিছুক্ষণ আপনি আমার সামনে বসে থাকুন।
- পাগলী একটা। আজকে রাতে একবার ছাদে আসিও তো। কথা আছে তোমার সাথে।
- জরুরি?
- হ্যাঁ খুব জরুরি।
ফিয়োনাকে পড়ানো শেষ করে রাতে একসাথে ডিনার করে নিজের রুমে আসলো ফাহমি। ফিয়োনাও চলে এলো কিছুক্ষণ পরেই। ফাহমি ফিয়োনাকে নিয়ে রুমের বাইরে এসে বসলো। ফিয়োনা বলল, কি দরকারি কথা বলুন?
- বলছি। তার আগে আমাদেরকে কিছু প্লান করে ফেলতে হবে।
- কিরকম প্লান?
- এইযে তোমার পড়াশোনা কিভাবে ভালো করা যায় সেটা। তোমাকে অবশ্যই ভালো করে পড়তে হবে, ভালো রেজাল্ট করতে হবে।
- রেজাল্ট খারাপ হলে বুঝি কথা বলবেন না।
- না বলবো না। পড়াশোনা করতেই হবে, অন্য কোনো অপশন নেই। এবার আসি অন্য কথায়, আন্টি আজকে অল্পের জন্য আমাদের কথা শুনে ফেলেনি।
- হুম। আমি যা ভয় পেয়েছিলাম! ভাগ্যিস!
ফাহমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো- দেখো এভাবে একসাথে থাকলে যেকোনো মুহুর্তে ধরা পড়ে যাবো। তুমি ছাদে আসলে যদি কখনো আন্টি বুঝে ফেলেন আমাদের মধ্যে একটা বন্ডিং হয়েছে তাহলে তোমাকেও বিপদে পড়তে হবে আর আমাকেও লজ্জায় পড়তে হবে।
- তাহলে কি করতে চাচ্ছেন?
- আমার মনে হয় আমি এ বাসা ছেড়ে অন্য বাসায় চলে যাওয়াটাই সবচেয়ে বেটার হবে।
- সত্যি?
- হ্যাঁ। তাহলে আর ধরা পড়ার কোনো চান্স থাকবে না। দুজনের তো ফোনে কথা হবেই, আর প্রতিদিন আমি তোমাকে পড়াতে আসবো।
- প্রতিদিন আসবেন তো?
- হ্যাঁ।
- আমার তো আপনাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। যখন তখন ছাদে আসলেই দেখতে পেতাম!
- দেখো অনেকেই আছে যাদের কখনো দেখাই হয়না। তারা কিভাবে থাকে? আমাদের প্রতিদিন দেখা হবে, কথা হবে। আর তাছাড়া আমরা তো মাঝেমধ্যে দেখা করবোই।
- প্রমিস?
- হুম। দেখা না করলে যে আমারও খারাপ লাগবে।
- আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে। আপনি যেটা ভালো মনে করেন সেটাই করুন। আমার আপত্তি নেই। আমার শুধু আপনাকে দেখতে পেলেই হবে।
ফিয়োনার কথা শুনে ভালো লাগলো ফাহমির। কাছে এগিয়ে এসে ফাহমি ফিয়োনার মুখটা ধরতে চাইছিল। পাছে কেউ এসে পড়ে এই ভয়ে আবার পিছিয়ে এলো। ফিয়োনা বললো- আর কয়দিন থাকবেন এ বাসায়?
- এইতো আছি চার দিন।
- মাত্র! আজকে একটা গান শোনাবেন? আর কখনো হয়তো এভাবে একসাথে চজাদে দাড়ানো নাও হতে পারে।
ফাহমি ফিয়োনার অনুরোধে একটা গান গেয়ে শোনালো ওকে। গান শুনে চলে গেলো ফিয়োনা। যাওয়ার সময় ফিয়োনার ইচ্ছে করছিল ফাহমির হাতটা শক্ত করে ধরতে। কিন্তু সংকোচ লাগছিলো বলে ধরতে পারলো না।
রাতে বিচ্ছানায় শুয়ে শুধু ছটফট করেই কাটলো ফিয়োনার। এদিকে ফাহমিরও একই অবস্থা। সারারাত চোখে ঘুম নেই। এপাশ ওপাশ করে কাটছে। ইচ্ছে করছে ফিয়োনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে। মাত্র দুদিনের ব্যবধানে মেয়েটা কত আপন হয়ে গেলো। দ্রুত মিশে গেলো আপন হয়ে। বুঝতেই পারলো না কখন এত আপন হয়ে গেছে। প্রকৃতির কি অদ্ভুত নিয়ম!
আজ রবিবার
ফাহমি দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে। দূরে একটা মেয়েকে রিক্সায় চড়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। মেয়েটাকে দেখতে ফিয়োনার মত লাগছে। কিন্তু ফিয়োনা কিনা সেটা স্পষ্ট নয়। কচুরিপানা রংয়ের একটা শাড়ি পড়নে। রিক্সাটা কিছুদূর এগিয়ে আসার পর ফাহমি নিশ্চিত হলো এটা ফিয়োনা ই। ফিয়োনাকে একদম কচুরিপানা ফুলের মতই সুন্দর লাগছে। ফাহমি কি করে এর তুলনা দেবে বুঝতে পারছে না।
রিক্সা কাছে আসতেই ফাহমি বলল- রিক্সায় কচুরিপানা ফুল ফুটেছে দেখছি।
- হুম। উঠে আসুন
ফাহমি রিক্সায় উঠে বসলো। ফিয়োনার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করলেও ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখতে বাধ্য হলো। সামনা সামনি বসে মুগ্ধ হয়ে দেখবে ওকে। এখন শুধুই কণ্ঠস্বর শুনে নিজের মাঝে ওকে ধারণ করার সময়।
ফাহমি আলতো করে ফিয়োনার হাতটা ধরে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো। মুহুর্তেই ডুবে গেলো একটা অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতিতে।
পর্ব ১৪
ফিয়োনা শিহরিত হয়ে উঠলো। এই প্রথম কোনো ছেলে পাশাপাশি রিক্সায় বসে হাত ধরলো ওর। কারো হাতের মুঠোয় এত উষ্ণতা মিশে থাকে এটা ওর জানা ছিলো না। ফিয়োনা বারবার শিহরিত হতে লাগলো। ফাহমি ফিয়োনার নরম হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে অনুভব করতে লাগলো। দুজনই ভেসে চলেছে একটা নতুন স্পর্শের উন্মাদনায়।
ফাহমি বলল- তোমার ফুচকা খেতে ভালো লাগে?
- ফুস্কা খেতে কার না ভালো লাগে বলুন তো?
- ফুচকা খাবা? আমার একটা পরিচিত মামার দোকান আছে। দারুণ ফুচকা বানায়।
- সত্যি! ছয় প্লেট খাবো।
- ছয় প্লেট! বলো কি? ছয় প্লেট ফুচকা খাইতে পারবা?
- হুম অবশ্যই পারবো। আমার এক্সপেরিয়েন্স আছে। আপনি খাওয়াবেন কিনা বলুন?
ফাহমি বাধ্য হলো। ফুচকা খাওয়ানোর জন্য রিক্সা ওয়ালা মামাকে রিক্সা ঘোরাতে বললো। রিক্সাটা সারাদিনের জন্য ভাড়া করেছে ওরা। ফুচকার দোকানের সামনে এলে ফাহমি হাত ধরে রিক্সা থেকে নামালো ফিয়োনাকে। নামানোর সময় আশেপাশের ছেলেমেয়েরা তাকাচ্ছিলো। রিক্সা থেকে নেমে ফাহমি নিচু হয়ে ফিয়োনার শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিলো। ফিয়োনা লজ্জায় মরে যাচ্ছে যেন। একইসাথে গর্ববোধ করতে লাগলো। এরকম একজন ছেলেকেই সবসময় চেয়েছে ফিয়োনা। যে ওর খুব খেয়াল রাখবে। কেয়ার করবে, আর ভালোবাসবে সবার চেয়ে আলাদা ভাবে।
ফাহমি ফিয়োনাকে নিয়ে এসে বসলো। ফুচকা ওয়ালা মামা ফুচকা দিয়ে গেলেন। প্রথম প্লেট নিয়ে হরবর করে খেয়ে গেলো ফিয়োনা। ফাহমি হা করে ওর খাওয়া দেখছিল। কোনো মেয়ে এভাবে কিছু খেতে পারে এটা একেবারেজ ফাহমির ধারণার বাইরে ছিলো। ফিয়োনা প্রত্যেকটা ফুচকা পুরোটাই মুখে পুরে দেয়। তারপর আলতো করে মুখ নাড়িয়ে কামড় দিতে থাকে। ওর ফুচকা খাওয়া দেখে ফাহমির মনে হচ্ছে জগতের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য এটি। ফিয়োনা খুব আয়েশ করে ফুচকা খাচ্ছে।
ফিয়োনা আজ ছয় প্লেট খেতে পারলো না। দুই প্লেট খাওয়ার পরেই আজ আর খেতে পারলো না। আবারও ওরা রিক্সায় উঠে পড়লো। রিক্সা চলছে ধীরগতিতে। রিক্সার হুড নামানো। দুজনে একে অপরের হাত ধরাধরি করে বসে আছে। ফাহমি ফিয়োনার দিকে খানিক্ষন পরপর তাকাচ্ছে আর ভাবছে, মেয়েটা দিন দিন কি অপূর্বই না হয়ে যাচ্ছে!
হাত ধরাধরি করে হাঁটা, একে অপরের স্নিগ্ধতা অনুভব করা, মৃদু হাসিতে ভেসে যাওয়া, খাবার তুলে খাওয়ানো, সবমিলিয়ে প্রেমটা বেশ ভালোই যেন জমে উঠলো।
ফাহমি ফিয়োনার চুলে আঙুল ঢুকিয়ে খেলা করে, ফিয়োনা শিউরে উঠে। একে অপরের চোখের দিকে তাকায়, চোখে চোখে যেন কত ভালোবাসার অনুভূতি বলা হয়ে যায়। দুচোখ বোঝে চোখের ভাষা। মন জানেনা আরেকজনের মনে কি অনন্য যন্ত্রণা। একজন আরেকজনকে কাছে পেয়েও যেন পাচ্ছে না। বুকের ভেতর শক্ত করে চেপে ধরতে পারার একটা আকুতি ভেতরে চাপা পড়ে যায়। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েও পারে না। কোথায় যেন একটা বাঁধা। কিছু একটা দুজনকে কাছাকাছি আসতে দেয় না। এভাবেই চলে, এভাবেই চলতে থাকে। তবুও প্রেম কথা বলে। জানি, একজন আরেকজনের হলে কাছে পাওয়া তো হবেই। একদিন তো জড়িয়ে ধরে ভালোবাসাবাসি হবেই।
সারাদিনের ঘোরাঘুরি শেষ করে দুজনে বাসায় ফিরলো। রিক্সা থেকে নামার সময় ফিয়োনা পড়ে যাচ্ছিলো। ফাহমি ওকে ধরে ফেললো। বাসায় কি অশনি সংকেত অপেক্ষা করছিল এটা হয়তো তারই ইংগিত। দুজনেই ভয়ে শংকিত হয়ে উঠলো।
ফাহমি বলল- ভয় পেওনা। কিচ্ছু হবে না।
- আমার টেনশন হচ্ছে। কোনো বিপদের লক্ষন নয় তো?
- আরে কিচ্ছু হবে না। এত ভেবো না তো।
ফিয়োনা বাসায় ঢুকলো। ফাহমিও চলে গেলো নিজের ঘরে। গোসল সেরে দুজনে খাওয়াদাওয়া করে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিলো। সন্ধ্যার পর ফাহমি ফিয়োনাকে পড়াতে যাবে। যথারীতি ফাহমি পড়াতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে পড়াতে আসলো। এসে দেখলো আন্টি নাস্তা বানাচ্ছেন। মুখটা হাসিহাসি। আজ ফিয়োনার বাবা বাসায়। উনি ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছেন। ফাহমি ওনাকে দেখে সালাম দিলো, ‘আসসালামু আলাইকুম আংকেল।’ - ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো?
- জ্বি আংকেল ভালো আছি।
- ফিয়োনা পড়াশোনায় কেমন?
- অনেক ভালো আংকেল। আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না। আমি কিছু নোটস দিয়ে দিবো, সামনে আরো ভালো করবে আশা করি। পরীক্ষা নিয়েও নতুন নিয়মে ওকে পড়ানোর চেষ্টা করছি।
- খুব ভালো। ঠিক আছে যাও পড়াও।
ফাহমি পড়াতে ঢুকলো। আন্টি এসে নাস্তা দিয়ে গেলেন। ফাহমি নাস্তা খেতে খেতে বলল, জামাই আদর। হিহি..
ফিয়োনা হেসে বলল- খান। আজকে দুপুরে আপনার জন্য আমাকে অনেকগুলো খাবার খেতে হয়েছে। এখন ঘুম পাচ্ছে আমার।
- আজ অল্প করে পড়াবো। ঘুমিয়ে যেও।
- আজকে না পড়ালে হয়না? সারাদিনে তো অনেক পড়িয়েছেন।
- অল্প করে পড়াই। তোমাকে না দেখে ভালো লাগছিলো না তাই এলাম।
- আচ্ছা। আজকে সায়েন্স পড়বো না। বাংলা পড়বো।
ফাহমি হেসে বললো- আচ্ছা আচ্ছা আজকে বাংলা ই পড়াবো। বই দাও।
ফিয়োনা বই এগিয়ে দিয়ে কাছে এগিয়ে এসে বসলো। ফাহমি দেখলো বইয়ের নিচ থেকে ফিয়োনার হাত এগিয়ে দেয়া। ফাহমি পড়া বুঝাতে বুঝাতে ফিয়োনার হাত ধরে ফেললো। শিহরিত হয়ে উঠলো ফিয়োনা। ফাহমির হাতের স্পর্শ যেন ওকে মুখরিত করে তুলছে। ফিয়োনা আরো কাছে এগিয়ে এসে বসলো। তারপর ফাহমির পায়ের উপর পা রাখলো। ফিয়োনার উষ্ণ পায়ের স্পর্শ পেয়ে ফাহমিও যেন নতুন একটা উন্মাদনার ছোঁয়া পেলো। একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো অনেক্ষণ। চোখে চোখেই বলা হয়ে গেলো কত না বলা কথা।
দুজনের একজনও নির্ঘাত আজ সারারাত ঘুমাতে পারবে না।
তারাতাড়ি পড়ানো শেষ করে চলে যাওয়ার জন্য বের হলো ফাহমি। ড্রয়িংরুমে আংকেলকে দেখে বলল- আজকে অল্প করে পড়ালাম।
- ভালো করেছো। এখানে এসে একটু বসো, গল্প করি।
ফাহমি এসে আংকেলের পাশে বসলো। আংকেল বেশ হাসি হাসি মুখে ধীরগলায় বললেন, ‘বাবা, তুমি কালকেই এই বাসা ছেড়ে চলে যাও। আর কোনোদিনো আমার মেয়ের সাথে কোনোরকম যোগাযোগ করার চেষ্টাও করবে না।’
অবাক হয়ে আংকেলের দিকে তাকালো ফাহমি। যেন আকাশ থেকে পড়লো ও। আংকেল এসব কি বলছেন!
আংকেল বললেন, ‘দেখো বাবা, আমার মেয়েটা ছোট। কেবল ইন্টারে পড়ছে। ওর মাথাটা তুমি আর খারাপ করে দিও না। আজকে দেখলাম দুজনে রিক্সায় করে ঘুরছো। হাত ধরাধরি করে বসে আছো। আমি বাবা হিসেবে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারিনি। তবুও আমি শান্ত থেকেছি। কিন্তু এখন তোমাকে বলছি। আর কখনো ফিয়োনার সাথে যোগাযোগ কোরো না।’
ফাহমি কি বলবে বুঝতে পারলো না। চুপচাপ মাথা নিচু করে রইলো। আংকেল বললেন, ‘আমার মেয়েটা বড় হোক। পড়াশোনা করুক, নিজের পায়ে দাড়াক বাবা হিসেবে এটাই আমি চাই। তোমার আর ওকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না। কোনো নোটস ও দিতে হবে না। আর নতুন নিয়মে পড়াতেও হবে না। তুমি ওকে কি নিয়মে পড়াচ্ছো সেটা আমরা দেখলাম তো। আমার মেয়ের পিছু ছেড়ে দাও।’
ফাহমি মাথা নিচু করে ভাবছে, জীবনে এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হবে এটা কখনো ভেবে দেখিনি।
আংকেল বললেন ,দেখো যদি আমার মেয়েটা বড় হতো তাহলে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতাম। তোমার যোগ্যতা থাকলে, ভালো চাকরি করলে মেয়ের সাথে বিয়ে দিতাম। কিন্তু তুমি তো বোঝো আমার মেয়েটা ছোট। ওকে প্লিজ নষ্ট করে দিও না। বাবার এই রিকুয়েষ্ট রাখো, কালই এই বাসা ছেড়ে চলে যাও। আর নিজের মত করে ভালো থাকো। মাত্র ক দিনের পরিচয়, আশা করি ঠিক হয়ে যাবে সব।’
ফাহমি উঠে দাঁড়ালো। চলে এলো নিজের রুমে। ফিয়োনাকে আরেকবার ফোন দিয়ে কিছু বলার সাহস ওর হলো না। খুবই অপমানবোধ হচ্ছে। সেইসাথে খারাপ লাগাও কাজ করছে ভীষণ। কিন্তু ছেলেদের বুক ফাটলেও বলার মত কেউ থাকে না। আর এদের চোখে জলও আসে না। ফাহমি নিরবে শুধু জামাকাপড় আর ব্যাগ গুছিয়ে নিলো।
ফিয়োনার সাথে এখনো প্রেম হয়নি। কাছে আসতে আসতে প্রেমের দিকে এগোচ্ছিল, তার আগেই দুজনের আলাদা হয়ে যেতে হবে। ফাহমি ভাবতে ভাবতে শুয়ে পড়লো।
আজ রাতে আর খাবার খেতেও বের হলো না ফাহমি। খিদে পায়নি। সব জামাকাপড় গুছিয়ে নিয়েছে। ফিয়োনা দুবার কল দিলে ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে দিলো ফাহমি। ফিয়োনার সাথে আর যোগাযোগ রাখাটা ঠিক হবে না। আংকেল যা বলেছেন এর পরও যোগাযোগ রাখাটা অন্যায় হয়ে যাবে।
অনেক রাত পর্যন্ত ছটফট করলো ফাহমি। কিন্তু ঘুম আসলো না। ফোন নিয়ে দেখলো ফিয়োনার ছয়টা মেসেজ। ফিয়োনা এখনো জানেনা ফাহমিকে ওর বাবা কি কি বলেছে। ফিয়োনার বাবা হয়তো ওকে কিছুই বলেনি। এই মুহুর্তে কিছু বলে ঝামেলা বাঁধানোর কোনো ইচ্ছে নেই ফাহমির।
ভোরের দিকে হালকা ঘুম লেগে এসেছিল চোখে। ফাহমি জামাকাপড় ও জিনিস পত্র সবকিছু নিয়ে সকালেই বেরিয়ে পড়লো। যাওয়ার আগে আন্টির দরজায় এসে নক দিলো। দরজা খুলে দিলো ফিয়োনা। এমনভাবে ফাহমির দিকে তাকালো যে, একইসাথে নানান প্রশ্ন আর কৌতুহল অন্যদিকে অভিমানও ফুটে উঠেছে।
ফাহমি বলল- আংকেল আন্টি কোথায়?
- আছে। বসুন ডাকছি।
ফিয়োনা ফাহমিকে বসিয়ে রেখে বাবা মাকে ডাকতে চলে গেলো। বাবা মা এসে ফাহমিকে বসতে বললেন স্বাভাবিকভাবে। ফাহমি বলল- বসবো না। আংকেল আন্টি আমি চলে যাচ্ছি। ভালো থাকবেন। আর দোয়া করবেন আমার জন্য।
ফিয়োনা অবাক হয়ে ফাহমির দিকে তাকালো। ফাহমি আজই চলে যাবে এটা তো বলেনি একবারও। তাছাড়া রাতে একবারও ফোন রিসিভ করেনি, মেসেজের উত্তর ও দেয়নি। সকালেও কলটা রিসিভ করলো না। কারণ কি? এমন কেন করছে ও?
ফাহমি ফিয়োনার দিকে তাকিয়ে বলল- আর হয়তো কখনো দেখা হবে না। পড়াশোনা ভালো করে কোরো ফিয়োনা। পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো করে নিও। ভালো থেকো। আসি।
ফাহমি দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। ফিয়োনা দরজা লাগিয়ে জানালায় এসে দেখলো ফাহমি সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছে। ফিয়োনা ভেবেছিলো ফাহমি হয়তো বাবা মায়ের সামনে বুঝতে দিতে চায়নি কিছু তাই ওরকম ফর্মালভাবে কথা ভলেছে। কিন্তু এত মলিন দেখাচ্ছে কেন ওকে? কেনই বা এত শুকনো মুখে চলে যাচ্ছে? একবার ফিরেও তাকাচ্ছে না।
ফিয়োনা ফাহমির নাম্বারে কল দিতেই থাকো। ফাহমি রিসিভ করে বলল- আমাকে আর ফোন দিও না।
- কেন?
- তোমার বাবা আমাদের ব্যাপারে সবকিছু জেনে গেছেন। উনি কাল আমাদেরকে হাত ধরাধরি অবস্থায় রিক্সায় দেখেছেন।
- কিহ!
- হ্যাঁ। আমাকে ভুলে যাও ফিয়োনা। আংকেল আমাকে বারবার করে বলে দিয়েছেন যেন তোমাকে ছেড়ে দিই। তোমার এখন পড়াশোনা করার সময়। ভালো থেকো।
কলটা কেটে দিয়ে ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দিলো ফাহমি। ফিয়োনার কান্না এসে গেলো। আবারও কল দিলো ফাহমির নাম্বারে। ফাহমি ফিয়োনার নাম্বার মটা ব্লাকলিস্টে রেখে দিলো।
ফিয়োনা ডুকরে কেঁদে উঠলো। গতকাল সন্ধ্যাতেও সবকিছু ঠিক ছিলো। সব এমন হঠাৎ করে বদলে গেলো কেন! কেন কেন কেন?
ফিয়োনা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। ফিয়োনার মা ছুটে এসে বললেন, কাঁদছিস কেন?
- মা, তোমরা ফাহমিকে কি বলেছো?
- তুই ভূলে যা ওকে।
কথাটা বলে মা ঠায় দাড়িয়ে রইলেন। ফিয়োনা বিছানায় শুয়ে ডুকরে কান্না করতে লাগলো। আর মা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে মেয়ের কান্না দেখছেন। কিছু বলতেও পারছেন না, সহ্য করতেও পারছেন না।
পর্ব ১৫
ফিয়োনা আনমনা হয়ে বসে আছে চিলেকোঠার ঘরের মেঝেতে। গতকালকেও এখানে ফাহমি ছিলো, অথচ আজ নেই। ঘরের মেঝেতে যেন ফাহমির স্পর্শ লেগে আছে। ফিয়োনা ফাহমির স্পর্শকেই খুঁজে চলেছে। কখনো মেঝেতে শুয়ে শুয়ে কাঁদে, কখনো দরজা ধরে নির্বাক চোখে তাকিয়ে থাকে। নিথর শরীরে যেন প্রাণ নেই। প্রাণশূন্য মেয়েটা গোধূলি লগ্নে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সবকিছু রঙিন হয়ে উঠতে গিয়েও কেন এত অমলিন হয়ে গেলো! কেন সবকিছু এমন হয়ে গেলো?
সারারাত ফাহমির নাম্বারে কল দিয়েছে ফিয়োনা। নাম্বারটা ব্লাকলিস্টে। অনেকগুলো মেসেজ পাঠিয়েছে কিন্তু কোনো রিপ্লাই আসেনি। ফিয়োনার পাগল হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা।
কি যে অসহ্য কষ্ট হচ্ছিলো সে শুধু ফিয়োনাই জানে। খাবার খেতে পারছে না, ঘুমাতে পারছে না। সারারাত শুধু অঝর ধারায় চোখের জল ঝরতে থাকে। কান্নারা বাধ মানে না। বুক ফেটে যেতে চায় কষ্টে। বাবা মায়ের সাথে কাল থেকে কথা বলেনি ফিয়োনা। খাবার টেবিলে জোর করে মা ফিয়োনাকে ডেকে নিয়ে গেছে। ও খাবার খেতে পারছিল না। সেটা দেখে বাবা আরো অনেক রাগারাগি করলেন। রাগ দেখিয়ে উনি টেবিল ছেড়ে উঠে গেলেন। বাবার উঠে যাওয়া দেখে মা আরো খানিকটা বকে নিলেন মেয়েকে।
সবাই মিলে যেন কোণঠাসা করে ফেলেছে ফিয়োনাকে। একটা দিন অসহ্য যন্ত্রণায় কাটলো। বুকের ভিতর দ্রিম দ্রিম করে হাতুরি পিটতে থাকে।
ফাহমি ফিয়োনার জীবনের প্রথম ভালোবাসা। যৌবনের সবটুকু আবেগ অনুভূতি দিয়ে ফাহমিকেই ভালোবেসেছে ফিয়োনা। এর আগে কাউকে নিয়ে স্বপ্নও দেখেনি। ধীরেধীরে ফাহমির প্রতি এতটা দূর্বল হয়ে পড়েছে এটা ফিয়োনা নিজেও টের পায়নি। আজ যেন সমস্ত কান্নারা ছাড়া পেয়ে গেছে। আত্মা ফেটে অশ্রু ঝরতে চাইছে।
ফিয়োনা কি করবে বুঝতে পারছে না। ফাহমির নাম্বারে কল দিতে দিতে শেষে আর পারলো না। ফোনটা জোরে আছাড় মারলো। দেয়ালে লেগে কয়েকটা লাফ দিয়ে মেঝেতে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে রইলো ব্যাটারি ও মোবাইল। কিছুক্ষণ বসে ডুকরে কান্না করলো ফিয়োনা। তারপর উঠে এসে ফোনটা নিয়ে আবার অন করলো। ডিসপ্লে নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও যতটুকু দেখা যাচ্ছিল তাতেই টিপে টিপে ফাহমিকে আবারো কল দিলো। আসলে কল না দিয়ে থাকতেই পারছিল না ফিয়োনা। কিন্তু ফাহমির নাম্বারে কল ঢুকছে না, ব্যস্ত। রাগ করে আবার আছাড় মারলো ফোনটা। শব্দ শুনে মা রুমে এসে দেখলেন ফিয়োনা ফোন আছাড় দিয়েছে। উনি এগিয়ে এসে ঠাস করে ফিয়োনার গালে একটা চড় কষিয়ে দিলেন। তারপর মেঝেতে পড়ে থাকা মোবাইলটা নিয়ে চলে গেলেন।
ফাহমিকে কল দেয়ার উপায়টাও আর রইলো না। ফোন আম্মুর কাছে। ফিয়োনা এখন সারাক্ষণ রুমে পড়ে থাকে আর কাঁদে।
দেখতে দেখতে একটা সপ্তাহ কেটে গেলো। এই এক সপ্তাহ ভয়াবহ কষ্টের মধ্য দিয়ে পার করেছে ফিয়োনা। এতটা কষ্ট হচ্ছিল যে বাধ্য হয়ে ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুম দিয়েই দুটো দিন পার করেছে। বাবা মা ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে মেয়েকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছেন। এটাকে বলে কৈশোর জীবনের পাগলামি ভরা প্রেম। ফাহমি অনেক ম্যাচিউর একটা ছেলে। ওর হয়তো এতটা কষ্ট হয়নি। দিব্যি ভালো আছে সে। খাওয়াদাওয়া করছে, ঘুরছে, বেড়াচ্ছে, কোচিংয়ে ক্লাস নিচ্ছে। ফিয়োনা ভাবলো, আজ থেকে আমিও আর ফাহমিকে নিয়ে ভাব্বো না। যে ছেলে বাবার কথা শুনে আমার কথা না ভেবে, আমাকে কিচ্ছু না জানিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো, তাকে ভেবে আর কষ্ট পাবে না ফিয়োনা। মনেমনে এটাই স্থির করে ফেললো ও।
এক বছর পর
ফেসবুকে লগ ইন করে নিউজফিডে ঘোরাঘুরি করছে নীলাভ। ওর স্বভাব বড্ড অদ্ভুত। বেছেবেছে অপরিচিত দেরকেই ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠাতে ওর ভালো লাগে। নিউজফিডে ঘুরছে, সেলিব্রেটিদের পোস্টের কমেন্ট দেখতে দেখতে যার কমেন্ট টা ভালো লাগে তাকেই ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠায় নীলাভ। এটা একটা বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে মেয়েদেরকে তুলনামূলক কম রিকুয়েষ্ট পাঠায় ও। সবসময় ছেলেদেরকেই দেয়। আজকে হঠাৎ একটা মেয়ের কমেন্টে চোখ আটকে গেলো।
প্রোফাইলে গিয়ে ছবি দেখলো। বেশ স্টাইলিশ মেয়েটা। নীলাভের ভালো লেগে গেলো। সাথে সাথেই কিছু না ভেবে রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে দিলো ও।
অনেক্ষণ অপেক্ষা করলো কিন্তু কোনো রিপ্লাই এলো না। নীলাভ নিউজফিডে ঘুরতে লাগলো। যখন ইচ্ছে হবে একসেপ্ট করে নেবে। এ নিয়ে এত মাথাব্যথার কিছু নেই।
একদিন কেটে গেলো। ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠানো মেয়েটার আইডিতে ঢুকে দেখলো নতুন ছবি আপলোড দিয়েছে কিন্তু এখনো রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করেনি। নীলাভ কি করবে ভেবে না পেয়ে একটা মেসেজ সেন্ড করে দিলো। কেন যে করলো সেটাও জানেনা।
মেসেজে লিখলো, রিকুয়েষ্ট ঝুলিয়ে রাখলে কি সেলিব্রেটি হওয়া যায়?
কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই এলো- কি?
- বাংলা বুঝলে তো আর প্রশ্ন করার কথা না। রিকুয়েষ্ট ঝুলিয়ে রাখলে কি ফেমাস সেলিব্রেটি হওয়া যায় নাকি?
- মানে কি? এই কথা দ্বারা আপনি কি বুঝাতে চাইছেন?
- আমার রিকুয়েষ্ট কেন ঝুলিয়ে রেখেছেন?
- বিখ্যাত হওয়ার আশায় অন্তত নয়। ফেসবুক জিনিসটাতে সেলিব্রেটি হওয়ার কিছু নেই
- বাপ রে। তাহলে আবার ফলোয়ার শো করছেন কেন? আপনার আট হাজার ফলোয়ার আছে সেটা মানুষ কে দেখাতে হবে বুঝি?
- এই লোক আপনার সমস্যা কি? এভাবে জ্বালাচ্ছেন কেন?
- ওমা! আপনি জ্বলছেন বুঝি?
- অবশ্যই জ্বলছি।
- আপনি কি বারুদ? না ম্যাচের কাঠি?
মেসেজের শেষে একটা হাসির ইমোজি। দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো ফিয়োনার। এসব ছেলেরা যে কোথ থেকে আসে। ফেসবুকে অপরিচিত দেরকে মেসেজ পাঠাবে আর শুধু বিরক্ত করতে থাকবে। সাথে সাথেই ব্লক দিয়ে দিলো ফিয়োনা।
আজকে ভার্সিটিতে ক্লাস আছে বারোটায়। এখন এগারোটা বাজে। তারাতাড়ি রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো ফিয়োনা।
বান্ধবী তোরসা বাসায় এসেছে। একসাথে ভার্সিটিতে যাবে ওরা। ফিয়োনাকে দেখে তোরসা বলল- দোস্ত তোকে যা লাগছে না! পুরাই হিরোইন। আজকে তো ছেলেরা পাগল হয়ে যাবে রে।
ফিয়োনা হাসতে হাসতে বলল- কি যে বলিস না। আর পাগল হলেই বা কি? আই ডোন্ট কেয়ার এনিবডি।
- সেটা তো আমি ভালোই জানি। গত এক বছর ধরে তুই ছেলেদের দিকে ফিরেও তাকাস না।
- ছেলেরা কি তাকানোর মত কিছু নাকি? ছেলেদের দিকে তাকানো ছাড়াও লাইফ পার করে দেয়া যায়। ওকে?
- হুম। তার জ্বলন্ত প্রমাণ তো তুই ই দোস্ত। আজ কিন্তু গাড়িতে যাবো না, রিক্সায় যাবো।
- ওকে বেবি।
ফিয়োনা ও তোরসা রিক্সায় ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। বের হওয়ার সময় মায়ের কাছ থেকে পাঁচশো টাকা নিয়ে এসেছে ফিয়োনা। আজকে জমিয়ে ফুচকা খাবে ওরা।
ক্লাস শেষ করে ফুচকার দোকানে চলে এলো বান্ধবীরা। ফুচকা খেতে খেতে হাসাহাসি করছিলো সবাই মিলে। এমন সময় পিছন দিক থেকে একটা ছেলে লাফ দিয়ে ফিয়োনার সামনে এসে বলল- হ্যালো.. ইয়োর নেইম ফিয়োনা চৌধুরি?
ফিয়োনা ভ্রু কুঁচকে বলল- জ্বি। আপনি কে?
- আমি নীলাভ। যাকে আপনি ফেসবুকে ব্লক দিয়েছেন।
ফিয়োনা হা হয়ে বলল- কি আশ্চর্য! আপনাকে আমি ব্লক দিয়েছি ভালো করেছি। কিন্তু আপনি এখানে এসে আমাকে ডিস্টার্ব করছেন কেন? - তুমি আমাকে ব্লক দিয়ে ডিস্টার্ব করেছো তাই আমিও করতে চলে এসেছি।
- ওয়ে হ্যালো, আমি আপনাকে মোটেও ডিস্টার্ব করিনি। আপনি করেছেন বলেই ব্লক দিয়েছি। আমাকে এখানে কি করে খুঁজে বের করলেন আপনি?
নীলাভ হাসতে হাসতে বলল- তোমার এবাউটে দেখলাম আমাদের ভার্সিটির নাম দেয়া। আমি এখানে ফাইনাল ইয়ারে আছি। এসে কয়েকজনকে তোমার ছবি দেখাতেই তারা আমাকে দেখিয়ে দিলো।
- আজব! কিন্তু আপনি কেন এমন করছেন?
- করছি। কারণ তুমি আমাকে ইগনোর করেছো। আমার রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করতে হবে।
- ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করার জন্য এভাবে খুঁজে বের করে হুমকি?
- হুমকি এখনো দেইনি। দিবো।
- আমি কিন্তু প্রিন্সিপাল স্যারকে বিচার দিবো।
নীলাভ হাসতে হাসতে বলল- তোমরা মেয়েরা এছাড়া আর কি পারো বলোতো। কিচ্ছু না। শোনো, আমি তোমাকে আর ডিস্টার্ব করছি না। আজকে ভালোয় ভালোয় আমাকে আনব্লক করে রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করে নেবে। ওকে?
- অসম্ভব। আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়নি।
- এখানে মাথা খারাপ হওয়ার কি আছে?
- আমি অপরিচিত দের সাথে অযথা কথাই বলিনা। আর ছেলেদেরকে আইডিতেও একসেপ্ট করিনা।
- বাট হোয়াই?
- আমার পারসোনাল ব্যাপার। নিজের রাস্তা মাপুন প্লিজ। আমাকে ডিস্টার্ব না করলেই খুশি হবো।
নীলাভ ফিয়োনার প্লেট থেকে একটা ফুচকা তুলে নিয়ে মুখে দিলো। অবাক হয়ে গেলো ফিয়োনা। ছেলেটা ফুচকা খেতে খেতে বললো- আমি তাহলে চলে যাচ্ছি। তবে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট না করলে কাল কিন্তু আবার আসবো। বাইইইই…
নীলাভ চলে গেলো। ধপ করে বসে পড়লো ফিয়োনা। চোখেমুখে রাগ প্রকাশ পাচ্ছে। তোরসা বলল- দোস্ত মাথা ঠান্ডা কর।
- এসব ফালতু ছেলেরা কোথ থেকে আসে বলতো? কি চায়?
- দোস্ত ছেলেটা তো হ্যান্ডসাম আছে। একটু দুষ্টু বটে। রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করে নে না।
- চুপ থাক। আমার বয়েই গেছে। তোর এত ভালো লাগলে তুই কর। প্রেম কর গিয়ে। আমি চললাম।
রাগে গটগট করে হাঁটতে হাঁটতে ফিয়োনা চললো বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছে।
বিকেলে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছিলো ফিয়োনা। এমন সময় একটা আইডি থেকে মেসেজ আসলো, হ্যালো আপু। আমার রিয়েল আইডির রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করুন।
- সরি, কে আপনি?
- আমি নীলাভ।
বাকিটা ইতিহাস হওয়ার মত ফিয়োনা মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার জোগার। কি একটা অবস্থা! এসব যে কোথ থেকে এসে জোটে। বিরক্ত করার আর জায়গা পায় না। ফিয়োনা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ফেসবুকে নিউজফিডে স্ক্রলিং করতে লাগলো। ওই আইডি থেকে টুং টুং করে মেসেজ আসতেই লাগলো। ফিয়োনার মুখে বিরক্তির ছাপ। উফফফ!
পর্বঃ ১৬
নীলাভের মেসেজের শব্দে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে ফিয়োনা। একটার পর একটা মেসেজ করেই চলেছে একটা মানুষ কি করে এতো বিরক্তিকর হতে পারে সেটা ধারণাই ছিল না ফিয়োনার।
ছেলেটার একটাই আবেদন, ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করতে হবে। তাহলেই আর এত বেশি জ্বালাবে না। ফিয়োনা অবশেষে বাধ্য হলো রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করতে।
রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করার সাথে সাথেই ছেলেটার আইডি থেকে মেসেজ, হাই।
ফিয়োনা রাগের ইমোজি দিয়ে রিপ্লাই দিলো, হোয়াটস ইয়োর প্রবলেম মিস্টার? আপনি তো বললেন রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করলে আর জ্বালাবেন না।
- বারে, ফ্রেন্ডিলস্টে আছেন যখন টুকটাক চ্যাটিং তো করতেই হবে।
- চুপ করুন। চ্যাটিং তো করতেই হবে। মামার বাড়ির আবদার নাকি?
- জ্বি না। নীলাভের বাড়ির আবদার।
- দেখুন আমি অন্যসব মেয়েদের মত নই।
- মানে? অন্যসব মেয়েদের থেকে আলাদা? কোনো সমস্যা আছে?
- কি যা তা বলছেন। সমস্যা থাকবে কেন?
- এই যে বললেন অন্যসব মেয়ের থেকে আলাদা।
- আপনি চার লাইন বেশি বোঝেন।
- ভূল বোঝলেন। আমি ছয় লাইন বেশি বুঝি।
- ভাই রে ভাই, দয়া করে বিরক্ত করা বন্ধ করবেন?
- ওকে রে ভাই। বিরক্ত করা বন্ধ করছি। আজকের মত বাই।
হাফ ছেড়ে বাঁচলো ফিয়োনা। অবশেষে বিরক্তিটা গেলো। এসব ছেলেদের নূন্যতম লজ্জা বলে কিছু থাকে না। থাকলে কি আর এভাবে অচেনা মেয়েদেরকে ডিস্টার্ব করতে পারতো।
ফিয়োনা নিউজফিডে স্ক্রলিং করছে। এমন সময় নোটিফিকেশনের শব্দে ফোনের কাঁপুনি শুরু হয়ে গেছে। চেক করে দেখলো নীলাভ সব পোস্টে রিয়েক্ট দিচ্ছে, সব ছবিতে রিয়েক্ট করে যা মন চায় কমেন্ট করে চলেছে। উফফ মাথা ধরিয়ে দিলো ছেলেটা। ফিয়োনা মেসেজ দিলো, সমস্যা কি আপনার? এত কমেন্ট রিয়েক্ট কেন?
- বারে, ফ্রেন্ডির পোস্টে রিয়েক্ট না করলে কি হয়? বন্ধুর পোস্টে বন্ধুরাই তো কমেন্ট করবে তাই না?
- তাই না? ফাজলামো বন্ধ করুন। আমি আপনার বন্ধু?
- অবশ্যই বন্ধু। ফেসবুক বন্ধু।
- চুপ করুন। জাস্ট শাট আপ।
- আমি তো একেবারে শাট ডাউন হয়েই গিয়েছিলাম। আপনি তো আবার আমাকে সুইচ অন করলেন ম্যাডাম।
- কিহ?
- না মানে আপনি তো নক দিলেন। আমি তো আজকের মত বাই বলেছিলাম।
- এভাবে বিরক্ত না করলে হয় না? আমি আপনার কোনো ক্ষতি করেছি?
- না করেননি তো।
- তাহলে? সমস্যাটা কোথায়?
- ওরে বাবা। এত রাগ? আপনি কি রাগের বড়ি খান নাকি? বাবা মা কি রাগ দিয়ে ভাত দেয়?
- মুখ সামলে কথা বলুন।
- মুখ সামলে না, ফোন সামলে।
- যা ইচ্ছে তাই সামলান। তবুও আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিন প্লিজ।
নীলাভ আর কোনো মেসেজ দিলো না। এবার ব্লক দিলে নিশ্চয়ই আর খুলবে না। তাই শান্ত ছেলের মত অফলাইনে চলে গেলো। ফিয়োনা অবাক হলো মেসেজের রিপ্লাই না পেয়ে। হুট করে কোথায় ডুবে গেলো ছেলেটা? এতক্ষণ তো ভালোই বিরক্ত করছিল। এখন আবার নাই হয়ে গেলো যে।
ফিয়োনা ইনবক্সে গিয়ে দেখলো নীলাভ active two ours ago. বেশ অবাক হলো ফিয়োনা। মনেমনে বলল, যাক বাবা বিরক্তিটা নেই। এসে দেখবে আমিও অফলাইনে গেছি আর বিরক্ত করেও লাভ হবে না।
পরেরদিন রাতেও ফিয়োনা দেখলো নীলাভের আইডি থেকে কোনো মেসেজ আসে নি। কিছুক্ষণ আগেও একটিভ ছিল। এরপর একটিভ থেকেও নক দিলো না। ফিয়োনা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
এভাবে কেটে গেলো দুটো দিন। ফিয়োনা ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে রিক্সা খুঁজছিল বাসায় ফেরার জন্য। আশেপাশে কোনো রিক্সা দেখতে পাচ্ছে না। দূরে একটা রিক্সার দেখে কাছে এগিয়ে গেলো ফিয়োনা। রিক্সার উপর একজন যাত্রী বসে আছে। যাত্রী আর কেউ নয়, নীলাভ। ফিয়োনা নীলাভকে দেখেই মুখ কুঁচকালো। এভাবে দেখা হয়ে যাবে কখনো ভাবেনি ও।
ফিয়োনাকে দেখে নীলাভ বলল- যাবেন নাকি?
- না।
ফিয়োনা চলে যাচ্ছিল। দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো রিক্সার জন্য। নীলাভ রিক্সা থেকে নেমে রিক্সাওয়ালা মামাকে পাঠিয়ে দিলেন ফিয়োনার কাছে। রিক্সাওয়ালা ফিয়োনাকে গিয়ে বলল- আপা চলেন।
- আপনার রিক্সায় একজন ছিল না?
- উনি বললেন আপনারে নিয়া যাইতে।
- না। আপনি ওনাকেই নিয়ে যান।
- আপা উনি তো চইলা গ্যাছেন। বইলা দিছেন আপনাকে নিয়া যাইতে। উনি হাইটা হাইটা গেছেন।
ফিয়োনা অবাক হয়ে রিক্সায় উঠে পড়লো। বেয়াদব ছেলেটা আচমকা ভদ্র হয়ে গেলো কাহিনি কি?
রিক্সা থেকে নেমে রিক্সাভাড়া দিতে গিয়ে রিক্সাওয়ালা বললেন, আপা উনি তো ভাড়া দিয়ে দিছেন।
- আমার ভাড়া দিয়ে দিয়েছে?
- না। উনি টেকা দিয়া কইলেন আপা যদি না যায় আপনার তো লস হবে। আপনি এই টাকাটা রাখুন।
ফিয়োনা এবার মুগ্ধ না হয়ে পারলো না। ছেলেটা বেয়াদব হলেও ভালো একটা চিন্তাধারা আছে বলতে হবে। নয়তো ফিয়না রিক্সাকে না বলে দেবে এই ভেবে সে রিক্সাকে টাকা দিয়ে দিতো না। ফিয়োনা মুচকি হেসে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে মামাকে দিয়ে বলল, দিয়েছে ভালো করেছে মামা। আপনি এইটাও রাখুন।
রিক্সাওয়ালা নিতে রাজী ছিলেন না। ফিয়োনার জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে নিতে হলো।
রাত্রিবেলা ফিয়োনা নীলাভকে অনলাইনে দেখে ধন্যবাদ বলার জন্য নক করতে যাচ্ছিল। অনেক্ষণ ভাবল কিন্তু নক করল না। দীর্ঘ এক বছর ফিয়োনা নিজে থেকে প্রয়োজন ব্যতীত ছেলেদের সাথে কথা বলেনি। আজকে বলতে সংকোচ লাগছে।
ফিয়োনা এভাবে দুই ঘন্টা পার করলো। তবুও মেসেজ দিতে গিয়েও আর দিলো না। ভাবলো, থাক না। কি দরকার?
কয়েকদিন পর ফিয়োনা ভূলেই গেছে নীলাভের কথা। ভার্সিটিতে ফ্রেন্ড দের বসে আড্ডা দিচ্ছিল। এমন সময় একটা মেয়ে এসে একটা বাক্স ফিয়োনার হাতে দিয়ে চলে গেলো। ফিয়োনা কৌতুহলী হয়ে বাক্সটা খুলছিল। সব বান্ধবীরা ফিয়োনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
ফিয়োনা বাক্স খুলেই অবাক। বাক্স খুলতেই অনেকগুলো বেলুন উড়ে চলে গেলো। বাক্সে একটা কাচের তাজমহল। রোদের ঝিলিক লেগে ঝিকঝিক করছে। ফিয়োনা মুগ্ধ হয়ে তাজমহল টা বের করলো। ওর বান্ধবী রা অবাক হয়ে বলল- ওয়াও!
তাজমহলের নিচে টেপ দিয়ে একটা চিরকুট আটকানো। ফিয়োনা খেয়াল করলো চিরকিটের দিকে। সেখানে লেখা- “Many Many Happy Returns of the Day” Happy Birthday.
গিফট নিতে না চাইলে এখানেই রেখে যাবেন। আমি এসে নিয়ে যাবো। ওর যদি নিতেন, কৃতজ্ঞ হতাম- নীলাভ।
ফিয়োনা মাথা তুলে আশেপাশে নীলাভকে খুঁজলো কিন্তু কোথাও দেখতে পেলো না। ফিয়োনার অবাক হওয়ার পালা। নীলাভ ওর জন্মদিনের কথা কিভাবে জানলো। যেখানে বান্ধবী রাই কেউ গিফট করেনি সেখানে ও এত সুন্দর গিফট পাঠিয়েছে। বান্ধবীরা শুধু উইশ করেই দায়সারা। এখন গিফট টা নিয়ে যাবে নাকি ফেলে যাবে ভাবছিল ফিয়োনা। ভাবতে ভাবতে তোরসাকে বল, নীলাভ নামের ছেলেটা পাঠিয়েছে রে। কি করবো?
- ওয়াও! সিরিয়াসলি? নিয়ে যা দোস্ত।
- না রে নিয়ে যাবো না। এটা রেখে যাই। ও এসে নিয়ে যাবে।
- দোস্ত। এত সুন্দর একটা গিফট। তাছাড়া গিফট নিলে তো ক্ষতি নেই।
- একটা অচেনা ছেলের গিফট কেন নেবো বলতে পারিস?
- জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে তাই নিবি। নিয়ে যা।
- বলছিস?
- হ্যাঁ। নিয়ে যা।
ফিয়োনা ভাবতে ভাবতে অবশেষে ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেললো গিফট টা।
নীলাভ অপেক্ষায় ছিল ফিয়োনা বাসায় গিয়ে ওকে টেক্সট পাঠাবে। খুশি না হলেও অন্তত রাগ প্রকাশ করবে। রাগ দেখিয়ে একটা মেসেজ তো দেবেই। কিন্তু ফিয়োনা কোনো মেসেজ তো দূরের কথা অনলাইনেই আসলো না। একবার সবুজ বাতিটা জ্বলে উঠে আবার নিভে গেলো। নীলাভ অপেক্ষা করে করে রাত বাড়তে লাগলো তবুও মেসেজ পেলো না।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েকদিন। এরমধ্যে নীলাভ কোনো মেসেজ পাঠায়নি ফিয়োনাকে। নিজেও ভূলতে শুরু করেছে মেয়েটাকে। ফিয়োনার কথা ওর মনেই রইলো না।
একদিন ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে বাইরে বান্ধবীর জন্য অপেক্ষা করছিল ফিয়োনা। পাশেই দেখতে পেলো একটা ছোট্ট মেয়ে মলিন পোষাকে দাড়িয়ে আছে। ফিয়োনা ভাবল মেয়েটাকে কিছু টাকা দিয়ে দেবে। ব্যাগ থেকে টাকা বের করেছে এমন সময় দেখলো নীলাভ দৌড়ে এসে মেয়েটাকে একটা প্যাকেট দিলো।
ফিয়োনা কিছু না বুঝেই রাগ দেখিয়ে বলল, সমস্যা কি আপনার? সবসময় আমাকে ফলো করছেন কেন?
- আমি আপনাকে কখন ফলো করলাম? সেই শুরুর দুষ্টুমির কথা এখনো মনে রেখেছেন?
- দুষ্টুমি না। আপনি যেই দেখেছেন আমি মেয়েটাকে হেল্প করছি অমনি এগিয়ে এলেন। সব লোক দেখানো।
ছেলেটা মিষ্টি হেসে প্যাকেট টা বাচ্চাটার হাতে দিয়ে বলল- খাও। তুমি যেটা খেতে চেয়েছিলে ওটা পাইনি। তোমার ভাইয়ের জন্যও নিয়ে যেও কেমন? বেশি করে এনেছি।
কথাটা বলেই নীলাভ চলে গেলো। ফিয়োনা লজ্জায় পড়ে গেলো। ঘটনাটা বুঝতে পেরে ওর ভীষণ লজ্জা হতে লাগল। কিন্তু নীলাভ তো চলে গেছে। এখন তো সরি বলাও সম্ভব না।
বাচ্চাটা বলল- আপা আপনি ওনারে রাগ দেখাইলেন ক্যান? উনি তো আমারে কইলো কি খাইছো? আমার কি খাইতে ইচ্ছা করে শুইনা খাবার আইনা দিলো। পরায় পরায় ই আইনা দেন। টাকা পয়সা দেয়। আপনি ওনারে বকা হুনাইলেন ক্যান?
ফিয়োনা লজ্জিত হয়ে বলল- ইস রে। লক্ষিটি, বুঝতে পারিনি। আমি ওই ভাইয়াটাকে ভূল বুঝেছিলাম।
- ভাই অনেক ভালা মানুষ। দিলডা অনেক ভালা।
- হুম।
ফিয়োনা মুগ্ধ হলো। বাসায় এসে আজকে আর ইগো নিয়ে বসে থাকতে পারলো না। নীলাভকে মেসেজ দিয়ে বসল- সরি।
নীলাভ এক ঘন্টা পর রিপ্লাই দিলো, সরি কেন?
- আপনাকে ভূল বুঝে রাগ দেখিয়েছি। আসলে আমি বুঝতে পারিনি। সরি ফর দ্যাট।
- ইটস ওকে।
- আমার বার্থডের কথা আপনি কিভাবে জানলেন?
- ফেসবুকে দেখেছিলাম। তাই ভাবলাম বন্ধুকে একটা গিফট দেই।
- আমার বান্ধবী রাও আমাকে কোনো গিফট দেয়নি।
- হুম। আমি বন্ধুকে এইটুকু দিতেই পারি
- আমি আপনার বন্ধু?
- অবশ্যই বন্ধু।
ফিয়োনা অবাক হলো। কিন্তু কথা বাড়াতে চাইলো না। ছেলেদের সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই ওর। তাই একটা মুচকি হাসির ইমোজি দিয়ে অফলাইনে চলে গেলো।