পর্ব ৫
ফাহমি ছাদের এক কোণায় বসে গিটার বাজাতে আরম্ভ করে দিলো। অনেক্ষণ বাজানোর পর উঁচু গলায় গানও গাইতে লাগলো। কিন্তু সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ক্রমশও তবুও ফিয়োনার দেখা পাওয়া গেলো না। ধীরেধীরে রাত বেড়ে গেলো, ফাহমির গানের সুর মিলিয়ে গেলো। তবুও ফিয়োনা ছাদে এলো না। মনটা কেমন করছে যেন। ফিয়োনার সাথে দুটো কথা বলতে না পারলে নিজেকে অকৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে। কখন যে আবার কথা হবে!
ফাহমি নিজেও বুঝতে পারছে না এমন কেন হচ্ছে? ফিয়োনাকে ছাদে দেখতে চাওয়ার জন্য বারবার উঁকি দিচ্ছে। কিন্তু মেয়েটা আজ এলোই না।
ফাহমি গিটার রেখে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি। খুব সকালে ঘুম ভাঙার পর ফাহমির কেবলই মনে হতে লাগলো কেউ ওকে ডাকছে। কিন্তু সত্যিই ডেকেছে কিনা সেটা নিশ্চিত না। ফাহমি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো। দরজা খুলে ছাদের দিকে তাকাতেই একরাশ মুগ্ধতা এসে ঘিরে ধরলো ওকে।
ছাদের সকালের সৌন্দর্য এত সুন্দর হতে পারে ফাহমি জানতো না। এখনো ভোরের অন্ধকার দূর হয় নি। গাছের চারাগুলোতে হাওয়া লেগে দোল খাচ্ছে। অন্যদিকে তাকাতেই দেখলো ফিয়োনা ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ফাহমি আস্তে আস্তে ফিয়োনার পাশে এসে দাঁড়াল। ফাহমি এসেছে এটা খেয়াল করেনি ফিয়োনা। ফাহমি যখন বলল,’এত সকালে ছাদে?’
ফিয়োনা চমকে ফিরে তাকালো। উত্তরে বলল, সকাল দেখি। আপনি এত তারাতাড়ি ওঠেন?
- প্রতিদিন না, মাঝেমাঝে ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম না ভাংলে আমার মত বান্দা সকালে উঠতো না।
- হা হা। প্রতিদিন সকালে উঠবেন। এরকম সুন্দর একটা সকাল দেখে দিন শুরু করলে কনফিডেন্স বাড়বে।
- বাহ! সুন্দর বলেছো তো।
- হুম। আমি প্রতিদিন সকালে এখানে আসি। যদিও আগে আমি এতো সকাল ঘুম থেকে উঠতাম না। আপনার দেয়া বইটা পড়ার পর আমার ঘুমের টাইম চেঞ্জ হয়ে গেছে। এখন প্রায় প্রতিদিন আমি সকাল দেখি, সূর্যের আলো ফোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। আকাশের রং বদলাতে দেখি। চিলেকোঠার ঘরে সময় কাটাই।
ফাহমি বলল, তোমার বুঝি জায়গাটা খুব প্রিয় ছিলো? অথচ এখন আমার জন্য আসতে পারছো না। সরি আমি তোমাকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছি। তবে তোমাকে কথা দিয়েছি তো আগামী মাসেই ছেড়ে দেবো।
ফিয়োনা একবার ফাহমির দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বলল না। কি ই বা আছে বলার? ফিয়োনা চায় তার প্রিয় জায়গাটা তারই থাকুক। তাই আর কিছু বলতে পারলো না।
ফাহমি বলল, থ্যাংকস এ লট। অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার ড্রেসগুলো এত পছন্দ হয়েছে কি বলবো। কিন্তু তোমার কিন্তু এটা ঠিক হয়নি।
- ঠিক না হোক, পছন্দ তো হয়েছে? আপনি খুশি হোন নি?
- খুশিও না, বেজার ও না। এত কষ্ট করার কোনো দরকার ছিলো না।
- কারো কারো জন্য কষ্ট করতে পারাটাও আনন্দের।
- বাহ তাই নাকি?
- হুম।
এরপর অনেক্ষণ কেউ কোনো কথা বললো না। ফাহমির মনে হচ্ছিলো ধন্যবাদটা খুব ছোট হয়ে গেলো। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য শুধু একটা ধন্যবাদ দিয়ে মন ভরে না। কিছু একটা করতে হবে ফিয়োনার জন্য। ফাহমি বলল- আচ্ছা তোমার জন্মদিন কবে?
- সে তো অনেক দেরি আছে। হঠাৎ এই প্রশ্ন?
- না। এমনি। কাল রাতে ভুল করতে আসো নি যে?
ফিয়োনা হেসে বলল- আপনি তো আমাকে জাদুকরী ঘুমের ওষুধ দিয়েছেন। তাই আর আসা হয়নি। ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
- ঘুমের ওষুধ মানে?
- আরে বোকাটা, বইয়ের চেয়ে বড় ওষুধ আর আছে নাকি?
ফাহমি হেসে উঠলো। ফিয়োনার মুখে ‘বোকাটা’ কথা শুনতে দারুণ লাগলো। যদিও অন্যকেউ হলে ফাহমি রেগে যেতো। এত ছোট্ট একটা মেয়ে, সিনিয়র কে বলছে বোকাটা। কিন্তু ফিয়োনার কণ্ঠে আলাদা একটা আদর যোগ হয়েছে বলে বরং ভালোই লাগলো।
সূর্যের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ফিয়োনা আর ছাদে দাঁড়াতে চাইলো না। মা ডাকাডাকি করবে এই কথা বলে ছাদ থেকে নেমে এলো। ফাহমি দাঁড়িয়ে আকাশ দেখায় মনোযোগ দিলো।
বাইরে বের হওয়ার সময় ফাহমি ফিয়োনার দেয়া নতুন শার্ট ও প্যান্ট পরে ওদের দরজায় এসে বেল বাজালো। দরজা খুলে দিলো ফিয়োনা। মুগ্ধ হয়ে বলল, যেরকম ভেবেছিলাম তারচেয়েও বেশি মানিয়েছে।
- থ্যাংকস। আসি তাহলে?
- ওমা! ভেতরে আসবেন না?
- না। তোমার সাথে দেখা করতেই এসেছিলাম। আসছি..
কথাটা বলে আর দাঁড়ালো না ফাহমি। দ্রুত সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো। ফিয়োনা আপনমনে মুচকি হাসলো আর মনেমনে খুশি হয়ে উঠলো।
রাত্রিবেলা ফিয়োনাকে পড়াতে এলো ফাহমি। আন্টি ফাহমির জন্য নাস্তা রেখে গেলেন। ফাহমি টেবিলে বসে ফিয়োনার জন্য অপেক্ষা করছিলো। আসার সময় অনেকগুলো নতুন বই কিনে এনেছে। ওকে তো গত দুদিন পুরনো বই দিয়ে আবার ফেরতও নিয়েছিলো। তাই আজকে নতুন বই।
ফিয়োনা টেবিলে এসে বসার পর ফাহমি বলল, কি অবস্থা?
- এইতো ভালো। আমি কি আপনাকে ভাইয়া ডাকবো?
- নো নো। কিচ্ছু ডাকতে হবে না। বই বের করো।
ফিয়োনা একটা বই বের করে এগিয়ে দিলো। টেবিলের উপরে প্যাকিং করে রাখা বইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, এগুলো কি?
ফাহমি বইগুলো ফিয়োনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এগুলো তোমার জন্য। আমি চলে যাওয়ার পর খুলে দেখো।
ফিয়োনা উত্তেজিত হয়ে বলল- আমার জন্য! কি এগুলো? দেখার জন্য তো মন ছটফট করছে।
ফাহমির ইচ্ছে করছে ওর উত্তেজনা দেখার জন্য। বইগুলো দেখে কেমন পুলকিত হয় সেটা দেখার জন্য ওর নিজেরও মনটা ব্যকুল হয়ে উঠলো।
ফাহমি বলল- আচ্ছা খুলে দ্যাখো।
ফিয়োনা প্যাকেট খুলে বইগুলো দেখেই আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। উত্তেজিত হয়ে বলল, এত্তগুলা সব আমার জন্য?
ফাহমি হেসে উঠলো। মেয়েটা পাগলী আছে। মেয়েদের আনন্দ প্রকাশের ধরণটা অন্যরকম। কিছু পেলে ওরা যেন একেবারে বাচ্চা হয়ে যায়। ফাহমির ও আনন্দ হচ্ছে, খুব আনন্দ।
ফিয়োনা বই খুলে বইয়ের ভেতরের পৃষ্ঠার গন্ধ শুকে দেখলো। বুক ভরে ঘ্রাণ নিয়ে বলল, দারুণ সেন্ট।
- হা হা। তুমি বই পেলে এটাই করো নাকি?
- হ্যাঁ। আমার বইয়ের ঘ্রাণ খুব ভালো লাগে। এনিওয়ে, এত্তগুলো বইয়ের জন্য থ্যাংকস। এত্তগুলাই থ্যাংকস।
- ওকে। আজকে আমি তোমার হাতে এক কাপ চা খেতে চাই। চা বানাতে পারো?
- উমম, পারি টুকটাক।
ফিয়োনা হাসিমুখে চা বানাতে চলে গেলো। ফাহমি বসে বসে বইয়ের পাতা উল্টিয়ে দেখছিলো কি পড়ানো যায়।
ফিয়োনা ফিরে এলো কিছুক্ষণের মধ্যেই। হাতে চায়ের কাপ। মেয়েদের হাতে চায়ের কাপটা খুব সুন্দর মানিয়ে যায়। দেখতে ভালো লাগে। ফাহমি চায়ের কাপটা নিয়ে বলল, তুমি খাবে না?
- আরে না না। আপনি এখন আমাকে পড়াচ্ছেন, আপনার সামনে চা খাওয়াটা বেয়াদবি হয়ে যাবে।
- ধুর কি যে বলো। যাও নিয়ে আসো। আমি তোমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, এটা মনে রাখবে।
ফাহমির কথায় অবাক হলো ফিয়োনা। সবচেয়ে ভালো বন্ধু! কেউ কোনোদিনো এভাবে বলেনি। কি যেন ভাবতে ভাবতে নিজের জন্য এক কাপ চা নিয়ে এলো ফিয়োনা। ফাহমি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বসে আছে। ফিয়োনা ফিরে এসে বলল, কি হয়েছে? খাচ্ছেন না যে?
- একসাথে খাবো তাই। বসো।
- চা ভালো হয়নি?
- হ্যাঁ ভালো হয়েছে। বসো।
ফিয়োনা নিজের কাপে চুমুক দিয়ে চোখ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। এটা চা হয়েছে! একেবারে শরবতের চেয়েও মিষ্টি আর নোনতা নোনতা একটা ভাব আছে। ফাহমি ভাব্বে মেয়েটা শুধু কথাতেই পারদর্শী কিন্তু কাজে না। একেবারে লজ্জায় পড়ে গেলো। কি যে বলবে ভেবেই পেলো না। মুখ কাচুমাচু করে রইলো।
ফাহমি বলল- চা কখনো বানিয়েছিলে?
- না।
- সিরিয়াসলি? আজ বানালে যে?
- আপনি খেতে চেয়েছেন তাই।
- আমি চাইবো বলে বানাতে হবে?
- হ্যাঁ হবে। কিন্তু এত বিশ্রী হবে আমি একবারও ভাবিনি।
ফাহমি হেসে বলল- প্রথমবার বানিয়েছো তো সেই হিসেবে ঠিক আছে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
ফিয়োনা মনেমনে ভাবছে আজকেই চা বানানো শিখে নেবে। চা বানাতে না পারলে ওর নামও ফিয়োনা নয়।
ফাহমি জিজ্ঞেস করলো, কি ভাবছো?
- কিছু না। আমরা পড়া শুরু করবো কখন?
ফাহমি চা শেষ করে পড়া বোঝাতে আরম্ভ করলো। ফাহমির ব্যাখ্যা করার স্টাইলটা খুবই ভালো লাগে ফিয়োনার। ও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। একটা মানুষ কত সুন্দর করে পড়ায়, কি অভিনব কৌশল আর কত সুন্দর কণ্ঠ!
ফিয়োনাকে এভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাহমি বলল- হোয়াটস আপ?
ফিয়োনা চমকে উঠলো- না তো। - বুঝেছো?
- হ্যাঁ বুঝেছি।
- কি বুঝেছো?
- খুব সুন্দর ব্যাখ্যা।
- মানে?
ফিয়োনা লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে নিলো। ফাহমি মুচকি হাসলো।
এভাবেই সম্পর্কটা আস্তে আস্তে সহজ হতে শুরু করেছে দুজনের মধ্যে। রাতে ফাহমি ছাদে বসে গিটার বাজিয়ে গান গাইতে শুরু করে। ফিয়োনা গান শোনার জন্য ছাদে এসে ওর পাশে বসে থাকে। গানও শোনে, গানের কথাগুলোকেও অনুভব করে নিজের মাঝে। ফাহমির গিফট করা বইগুলো পড়ে শেষ করা হলে ফাহমি আবার নিজের সেলফ থেকে ওকে বই দেয়। পড়া শেষ করে ফেরত দিয়ে যায় ফিয়োনা। এভাবেই দিন কাটছিলো।
মাঝখানে বিপত্তি বাঁধাল এক খালাতো বোন। ফিয়োনার খালার মেয়ে নীলা বেড়াতে এসেছে। এসেই ক্রাশ খেয়ে বসেছে ফাহমির উপর। এবার কি যে হবে!
পর্ব ৬
ফাহমি এখনো জানেনা নীলা মেয়েটা ওর উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে। এদিকে ফিয়োনা শুধু জ্বলছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। ও নিজেও জানেনা ফাহমিকে পছন্দ করলে ওর জ্বলার কি আছে এতে? ওর তো খুশি হওয়ার কথা।
নীলা ফাহমির খোঁজে ছাদে চলে এলো। ফাহমি আজকে বাইরে বের হয়নি। রুমে বসে পড়াশোনা করছে। নীলা ছাদে উঠে আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। ফাহমি ভেবেছে ফিয়োনা এসেছে হয়তো। দরজার বাইরে পায়ের শব্দ শুনে ফাহমি বলল, ভেতরে এসো।
নীলা ভেতরে ঢুকে বলল, আপনি কি করে বুঝলেন আমি এসেছি?
ফাহমি মুখ তুলে তাকালো নীলার দিকে। নীলা এসেছে এটা ও ভাবেই নি। সবসময় ফিয়োনা ই ছাদে উঠে হাঁটাচলা করে। সেই ভেবে ফাহমি ভেতরে আসতে বলেছিলো। কে জানে এই মেয়েটা এসেছে।
নীলা রুমের ভেতরটা পর্যবেক্ষণ করে বলল, আপনার ঘরটা তো অনেক সুন্দর। সাজানো গোছানো আর বেশ পরিপাটি।
- থ্যাংকস। আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন।
নীলা খুশিতে গদগদ। খাটের উপর বসতে বসতে বলল, ছোট্ট রুম হিসেবে আপনি যেভাবে সাজিয়েছেন তাতে আপনার বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ পাচ্ছে। - তাই নাকি? এগেইন থ্যাংকস।
- আমার পরিচয় জানতে চাইবেন না?
ফাহমি বই থেকে মুখ না তুলেই বলল, ফিয়োনার কাজিন নীলা। তাই তো?
- হ্যাঁ। ফিয়োনা বলেছে?
- হুম।
- আর কিছু বলেনি?
- কি আজব! আর কি বলবে?
- এই যেমন ধরুন আমি সিংগেল, আমার এখনো বিয়ে হয়নি, বয় ফ্রেন্ড নেই, পড়াশোনায় ভালো এসব?
ফাহমি মনেমনে হাসলো। ভীষণ হাসি পাচ্ছিল ওর। হাসি চেপে রেখে বলল, এসব জেনে আমার কাজ নেই। আপনার বয় ফ্রেন্ড থাকুক বা না থাকুক তা দিয়ে আমি কি করবো?
- হুম তাও ঠিক। তবুও জানার কৌতুহল হয়নি? বাসায় একজন সুন্দরী মেয়ে বেড়াতে এসেছে। তার পরিচয়, ডিটেইলসে সবকিছু জানার দরকার নেই?
ফাহমি এবারও কষ্ট করে হাসি চেপে রেখে বলল, না নেই। আমি অন্য ছেলেদের মত লুচু নই। - এখানে লুচুর কি হলো?
- নিজেই জানেন এটাকে কি বলে?
- না মানে…
নীলা আর কিছু বললো না। উঠে দাঁড়ালো। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। দ্রুত নিচে নেমে গেলো। নীলা চলে যাওয়ার পর হো হো করে হেসে উঠলো ফাহমি। আচ্ছা লজ্জা পেয়েছে মেয়েটা। উফফ!
রাত্রিবেলা ফিয়োনাকে পড়াতে এসেছে ফাহমি। ফিয়োনা আজকে বেশ মনোযোগী পড়াশোনার প্রতি। অনেক্ষণ পড়ানোর পরও নীলাকে কোথাও দেখা গেলো না আজ। ফাহমি জানতে চাইলো, তোমার কাজিন কি চলে গেছে?
কাজিন সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় অবাক হলো ফিয়োনা। সাথে সাথেই জবাব দিলো, কেন? ও পাশের রুমে আছে। তাকে দেখতে না পেয়ে কি আপনার খুব খারাপ লাগছে?
ফিয়োনার এমন উত্তরে ফাহমিও কম অবাক হয় নি। ফিয়োনার চোখমুখ এমন শক্ত দেখে ফাহমির মজা করতে ইচ্ছে করলো। ও বলল, তা তো করছে ই। ভালো লাগছে না কিছু। তোমার বোনটা আশেপাশে ঘোরাঘুরি করলে ভালোই লাগে।
ফিয়োনার ভেতরে দহন শুরু হয়ে গেছে ।অবশ্য হওয়াটাই স্বাভাবিক। মেয়েদের মধ্যে একটা ব্যাপার কাজ করে ,তাকে রেখে আরেকজনকে ভালো লাগার বিষয়টা ওরা ঠিক নিতে পারে না। প্রেম হোক বা না হোক, মেয়েরা চায় ছেলেটা আমাকেই পছন্দ করুক, আমাকেই ভালোবাসুক।
ফাহমি বলল, কি ভাবছো?
- কিছু না। আমি কি আমার বোনকে ডাকবো? আজকে বরং আপনার পড়াতে হবে না। আপনারা এখানে বসে বসে গল্প করুন, আমি পাহারা দেই।
ফিয়োনাকে জ্বলতে দেখে ফাহমির আরো মজা লাগছে। আরেকটু জ্বালাতে বললো, ডাকো। মেয়েটার সাথে গল্প করতে তো আমার বেশ ভালোই লাগে। - ভালো লাগে? আগেও গল্প করেছেন তাহলে?
- হ্যাঁ করেছি তো। তোমাকে বলেনি?সকালেই তো আমার সাথে গল্প করার জন্য আমার রুমে গিয়েছিলো।
- রুমে গিয়েছিলো? এতদিন হয়ে গেল তাও আমি আপনার রুমে যাওয়ার সাহস পাইনি আর ও এসেই…
ফাহমি হেসে বলল, ভালো লাগার মাঝে দ্বিধা থাকে না। সাহস আপনা আপনি চলে আসে।
- বাহ তাহলে তো ঠিকই আছে। দু পক্ষই রাজি আমি আর মাঝখানে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে থাকবো কেন? আমি চলে যাচ্ছি, নীলাকে পাঠাচ্ছি আপনি যা ইচ্ছে করুন।
ফাহমি দেখলো ফিয়োনা রাগে গজগজ করছে। ওর এত মজা লাগছে যে ফাজলামো করেই যেতে লাগলো। ফিয়োনা যথাসাধ্য চেষ্টা করলো রাগ সামলে রাখার। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ানোর সময় ফাহমি উঠে ফিয়োনার হাত টেনে ধরলো। চমকে পিছন ফিরে ফিয়োনা একেবারে ফাহমির বুকের উপর এসে পড়লো। বাম হাতটা ফাহমির বুকের উপর রেখে চোখ বরাবর তাকালো ফিয়োনা। ফাহমি বলল, কই যাও?
- আপনার প্রেমিকাকে ডাকতে যাচ্ছি।
- আমার প্রেমিকা কে?
- কেন? আমার কাজিন নীলা?
- হা হা। আরে বোকা মেয়ে, মজাও বোঝো না?
- মজা করছিলেন? আমার তো মনেহয় আপনি সত্যি সত্যিই..
ফাহমি ফিয়োনার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলল, ভুল ভাবছো। আমি এতক্ষণ মজা করছিলাম। তোমার কোন দিক থেকে মনে হলো আমি ওই মেয়েটার প্রেমে পড়বো?
ফিয়োনা আর কিছু বলল না। ফাহমির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কেমন একটা ঘোর লেগে যাচ্ছে। চোখ নামিয়ে নিয়ে মেঝের দিকে তাকালো। ফাহমি হাত ছেড়ে দিয়ে বলল, সরি।
ফিয়োনা ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। ফাহমি ও নিজের চেয়ারে বসে নিস্তব্ধ হয়ে রইলো।
এভাবে কতক্ষণ সময় কেটে গেল বোঝা গেলো না। ফিয়োনা হঠাৎ টেবিলের উপর মাথা রেখে নিশ্চুপ হয়ে গেলো। ফাহমি বলল, ফিয়োনা..
ফিয়োনা মাথা না তুলেই বলল, প্লিজ আপনি এখন যান। আমাকে একটু একা থাকতে দিন। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।
ফাহমি আর কোনো প্রশ্ন করলো না। ফিয়োনাকে এখন একা থাকতে দেয়াই শ্রেয়। উঠে নিঃশব্দে নিজের রুমে চলে এলো ফাহমি। রুমের দরজা খুলতেই দেখলো মেঝেতে একটা কাগজ পড়ে আছে। নিশ্চয় দরজার নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। কাগজটা নিয়ে পড়তে শুরু করলো ফাহমি। কাগজ বললে ভুল হবে, পুরোটাই একটা চিঠি। খুব বেশি বড় নয়, সংক্ষিপ্ত একটা চিঠি-
ফাহমি,
আমি জানি তুমি আমার অনেক সিনিয়র। তাও আমি তুমি করে বলবো। আমার মনেহয় এই অধিকার আমার আছে। আমার কেন জানি তোমাকে খুব আপন মনেহয়। তুমি আমাকে কতটুকু আপন ভাবতে পেরেছো জানিনা। আমার মনে তোমার জন্য আলাদা একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। জানিনা এটাকে কি বলে? আমি তোমাকে অনেক রেসপেক্ট করি। ভালো থেকো।
ফাহমি বেশ কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে চিঠির দিকে চেয়ে রইলো। শেষে কারো নাম দেয়া নেই। ফাহমি প্রথমে ভেবেছিল চিঠিটা নীলা দিয়েছে। কিন্তু হাতের লেখা দেখে যতদূর মনে হচ্ছে এটা ফিয়োনার হাতের লেখা। তাছাড়া এই ভাষা ফিয়োনা ছাড়া আর কারো হতেই পারে না। ফাহমি সবসময় ফিয়োনাকে অংক করিয়েছে, ইংরেজি পড়িয়েছে। ওর বাংলা হাতের লেখা দেখেনি ফাহমি। হাতের লেখার সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে এটা কার লেখা?
মনটা খুব খচখচ করছে কিন্তু কিছু বুঝতে পারছে না ফাহমি। এটা ফিয়োনাই লিখেছে এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে ও। কেনননা ফিয়নাকে পড়াতে গেলে ফিয়োনা ওকে বসিয়ে রেখে কিছুক্ষণ বাইরে ছিলো। সেই সময়েই চিঠিটা রেখে এসেছে যাতে ফাহমি বুঝতে না পারে এটা কার কাজ?
সারা রাত ছটফট করে কাটলো ফাহমির। এই মাসের আর পনেরো দিন বাকি। ফিয়োনাকে কথা দিয়েছিলো এক মাস পরেই বাড়ি ছেড়ে দেবে। সে কথা রাখতে চাইলে এখন থেকেই বাসা খোঁজা শুরু করতে হবে। কিন্তু বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবলেই কেমন কষ্ট হতে থাকে। যদিও এ বাড়িতে মাত্র পনেরো দিন ছিলো ও। তবুও সবকিছুর প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছে।
পরদিন সকাল সকাল ফাহমির ঘুম ভেঙে গেলো। ও ছাদে হাঁটাহাঁটি করার জন্য বের হলো। প্রতিদিন এই সময়ে ফিয়োনা ছাদে আসতো। কিন্তু আজকে ও এলো না। গত রাতে হঠাৎ করেই ফিয়োনার কি হয়েছিলো কে জানে। আচমকা নিশ্চুপ হয়ে গেলো। নাকি ফিয়োনার মনেও…
ফাহমি ভাবনাটাকে আর বেশি বাড়তে দিলো না। ফিয়োনা বয়সে ওর অনেক ছোট। এসব নিয়ে ভাবাও ভুল। যদি ফিয়োনা কিছু ভেবেও থাকে, ওর ভুলটা ভাঙিয়ে দিতে হবে।
বেলা বাড়তে থাকলো। ফাহমি যথারীতি নিজের কাজে চলে গেলো। কাজ থেকে ফিরলো বিকেল বেলা। ছাদে ওঠামাত্রই ফিয়োনার সাথে দেখা হয়ে গেলো। ফিয়োনা ছাদে ফাহমির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবছিলো। ফাহমিকে দেখে কিছু না বলে এক দৌড়ে নিচে নেমে গেলো। ফাহমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।
দরজা খুলে দেখলো আরেকটি কাগজ পড়ে আছে। কাগজ তুলে দেখলো তাতে লেখা, চিঠির উত্তর দিবেন আজকেই। ফিয়োনার রুমের ডানদিকে লেবু গাছের নিচে রেখে দিলেই হবে। আমি এসে নিয়ে যাবো।
ফাহমি কি বলবে বুঝতে পারলো না। চিঠিটা ফিয়োনার লেখা এটা নিশ্চিত কিন্তু ফিয়োনা এভাবে কেন লিখলো?
রাতে পড়াতে এসে ফাহমি সরাসরি জিজ্ঞেস করলো, তুমি আমাকে চিঠি লিখেছো?
ফিয়োনা চমকে উঠে বলল, না তো। আমি লিখিনি।
- তাহলে কে? তোমার হাতের লেখা।
- আমার হাতের লেখা হলেই ভাবটা যে আমার সেটা কে বলেছে? চিঠি নীলা দিয়েছে। আমি শুধু লিখে দিয়েছি।
- তুমি আরেকজনের চিঠি কেন লিখে দেবে?
- ওর হাতের লেখা খারাপ তাই।
ফাহমি হেসে ফেললো। ফিয়োনার চোখ মুখ, সমস্ত ইন্দ্রিয় বলছে চিঠিটা ওরই লেখা। তবুও স্বীকার করছে না।
ফাহমিও না বোঝার ভান করে বলল, ওহ আচ্ছা। নীলা আমাকে ভালোবাসে?
চমকে ফাহমির দিকে তাকালো ফিয়োনা।
পর্ব ৭
ফাহমি আবারও জিজ্ঞেস করলো, নীলা আমাকে ভালোবাসে?
ফিয়োনা মুখ শক্ত করে বলল, সেটা আপনি বোঝেন না? আপনাকে ভালোবাসে নাকি ঘৃণা করে সেটা তো আপনারই বোঝার কথা।
- না বুঝি না। বুঝলে এটাও বুঝতে পারতাম যে তুমি আমাকে ঘৃণা করো।
ফিয়োনা অবাক চোখে ফাহমির দিকে তাকালো। এত বড় কথাটা বলতে পারলো ফাহমি? ওকে কেন ঘৃণা করবে ফিয়োনা? ক্ষোভে, দুঃখে কান্না পাচ্ছে ফিয়োনার। ফিয়োনা বলল, আপনি আর আমাকে পড়াতে আসবেন না। চলে যান। - আমি আবার কি দোষ করলাম? পড়াতে না আসার সাথে এর সম্পর্ক কি?
- আপনি আসবেন না আর। আমি বারণ করেছি তাই আসবেন না। প্লিজ এখ্যযান, আমাকে একা থাকতে দিন।
- ফিয়োনা, আমার কথা শোনো..
- একদম চুপ। আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না। এক্ষুনি বেরিয়ে যাবেন এখান থেকে।
কোনো কারণ ছাড়াই ফিয়োনার এরকম আচরণ নিতে পারলো না ফাহমি। যা মন চাইবে তাই করবে নাকি? মগের মুল্লুক পেয়েছে। মুখে আসলো আর তাই বলে দিলো। ফাহমি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, আমার মুখের উপর কথা বলতে পারোনা তুমি। তার উপর এমন রেগে কথা বলছো। আমি কি করেছি যার জন্য তোমার রাগ আমাকে দেখতে হবে? এতটা ঠেকায় পড়িনি ভাই। আমি চলে যাচ্ছি। তোমার মা ও যেন আর আমাকে আসতে না বলে।
ফাহমি আর এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না। রুম থেকে বেরিয়ে হনহন করে চলে গেলো। এদিকে ফিয়োনা বালিশে মুখ গুজে দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। কেন যে ফাহমির সাথে এরকম আচরণ করে বসলো নিজেও বুঝতে পারছে না। ওর খুব কষ্ট হতে লাগলো। অন্যরকম একটা কষ্ট।
ফাহমি নিজের রুমে এসে মেজাজ গরম করে বসে রইলো। আজব একটা মেয়ে। কার সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয় সেটাও জানে না। এরকম আচরণ করার আগে ওর অনেকবার ভাবা উচিৎ ছিলো। হুটহাট মুখে যা আসে, সেটাই বলে দিলে হবে নাকি।
অনেক কষ্টে রাগ সংবরণ করে নিলো ফাহমি। তারপর নিজের কাজে মন দিলো। ফিয়োনার কথা আর মনেও রইলো না ওর। রাতে মেসেঞ্জারে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ফাহমি অনেক রাতে ঘুমিয়ে পড়লো। পরেরদিন থেকে শুরু করে দিলো নতুন বাসা খোঁজা। কয়েকজনকে বলে রেখেছে, তারাও সন্ধান দেবে।
সারাদিন বাইরে কাটিয়ে রাতে বাসায় ফিরলো। নিজের রুমেই সময় কাটাতে লাগলো ফাহমি। যাতে মেয়েদুটোর একটার সাথেও আর দেখা না হয়। এই মুহুর্তে ফিয়োনা কিংবা নীলা যে কারো সাথে দেখা হলে ভয়ানক রাগ হবে ফাহমির। তাই নিজের মত পড়াশোনা শেষ করে তারাতাড়ি ঘুমিয়ে গেলো।
দ্বিতীয় দিন সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠে ছাদে পায়চারি করতে বের হলো ফাহমি। আকাশ পরিষ্কার, একটু বাদেই সূর্য উঁকি দেবে। খোলা হাওয়ায় হাঁটতে হাঁটতে সকালের পরিবেশ উপভোগ করছিলো। হঠাৎ টবে গাছের ডালে একটা কাগজ ঝুলতে দেখে কৌতুহলী হয়ে কাগজটা হাতে নিলো ফাহমি। অবাক হয়ে দেখলো তাতে লেখা, ‘আমার চিঠির উত্তর কই?’
ফাহমি ভ্রু কুঁচকালো। একদিনেই চিঠির কথা ভুলে গিয়েছিলো ও। এখন মনে পড়ে গেলো। ফাহমি ভাবলো একটা চিঠি লিখলেই তো হয়। ভাবামাত্র এসে কাগজ কলম নিয়ে বসে পড়লো। সুন্দর করে লিখলো, ‘পরিচয় হীন কাউকে ভালোবাসার আগে অন্তত চোখের দেখাটাও দেখে নিতে হবে তো। হয় নিজের পরিচয় দিন নয়তো দর্শন দিন। তারপর অন্যকিছু ভাব্বো।’
চিঠিটা যেখানে রাখতে বলেছিলো সেখানে রেখে দিলো ফাহমি। তারপর রুমে এসে বই নিয়ে বসলো। পড়তে পড়তে কখন যেন ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। ঘুম থেকে উঠে তারাহুরো করে বাইরে বের হলো ফাহমি।
রাতে ফিরলো বেশ রাত করে। সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় কেউ একজন উপর থেকে দৌড়ে দৌড়ে নামছিলো। ফাহমির সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো প্রায়। ফাহমি ধরে আটকালো। আবছা আলোয় বুঝলো সেটা ফিয়োনা। দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো। চোখাচোখি হতেই বিদ্যুৎ শক খাওয়ার মত চমকে উঠলো ফিয়োনা। দ্রুত হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আবার দৌড় দিয়ে নিচে নেমে গেলো।
ফাহমি রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে দেয়ামাত্র দরজার কাছে চিঠি দেখতে পেলো। চিঠিটা হাতে তুলে নিয়ে দেখে তাতে লেখা, পরিচয় নতুন করে দিতে হবে? এত কাছে থাকার পরও কি বুঝতে পারেন না?
মাত্র দুই লাইনের একটা চিরকুট। ফাহমি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে চাইলো চিঠির ব্যাপারটা। এটা ফিয়োনার কাজ সেটা ও একেবারে নিশ্চিত। যদিও ফিয়োনা সেদিন মিথ্যে বলেছিল, কিন্তু ও ছাড়া আর কেউ এ কাজ করেনি। তবে আচরণের ব্যাথাটা ফাহমি ভোলেনি, ভুলতে পারবেও না। আর যাই করুক, যতক্ষণ পর্যন্ত সরি বলবে না, ফাহমি ফিয়োনাকে নিয়ে ভাবতেও চায় না।
ফাহমি জামাকাপড় বদলে ফেলেছে, এমন সময় আন্টি এসে ডাক দিলেন। দরজা খুলে আন্টিকে সালাম দিলো ফাহমি। আন্টি বললেন, কেমন আছো বাবা?
- জ্বি আন্টি ভালো। ভেতরে আসুন?
- না বাবা। তোমাকে একটা কথা বলতে আসলাম।
- জ্বি বলুন?
- তুমি নাকি আর ফিয়োনাকে পড়াবে না?
- না মানে আসলে আন্টি..
- কি? বলে ফেলো।
- আন্টি ফিয়োনাই তো আমাকে যেতে বারণ করে দিয়েছে। বলেছে আর আমাকে পড়াতে আসবেন না।
আন্টি একটু চুপ থেকে বললেন, আসলে বাবা আমার মেয়েটা একটু বদমেজাজি। তুমি প্লিজ ওর কথায় কষ্ট পেও না। ও রাগের মাথায় বলে ফেলেছে। তুমি কাল থেকে আবার যেও।
ফাহমি মুখের উপর না বলতে পারলো না। কিন্তু ফিয়োনার উপর ওর রাগ জমে গেছে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, কিন্তু আন্টি আমি ওর সাথে কথা না বলে পড়াতে যাবো না। ও তো নিজের মুখে আমাকে সরি বলেনি, যেতেও বলেনি।
- আচ্ছা বাবা তুমি একটু পরে আমাদের রুমে এসো। আমি ওর সাথে কথা বলিয়ে দিচ্ছি।
আন্টির মুখের উপর সরাসরি কিছু বলতে পারলো না ফাহমি। মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, ওকে।’
কিছুক্ষণ পর ফিয়োনার দেয়া একটা ড্রেস পড়েই ওদের রুমে এলো ফাহমি। আন্টি ফাহমিকে নাস্তা এনে দিয়ে বললেন ,তুমি বসো বাবা। আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি।
আন্টি ফিয়োনাকে ধরে নিয়ে আসলেন। ফাহমির সামনে এসে একবারও ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছিলো না ফিয়োনা। ও ভেবেছিলো চিঠির কথা ফাহমি মাকে বলে দিয়েছেম এই ভয়েই জড়োসড়ো হয়ে আছে। কিন্তু ব্যাপারটা অন্যকিছু সেটা বুঝতে পারেনি। ফাহমি চুপচাপ নাস্তা খাচ্ছে।
ফিয়োনা ওর সামনে গুটিশুটি মেরে বসে আছে।
আন্টি বললেন ,ফিয়োনা তুই নাকি ওকে পড়াতে আসতে বারণ করেছিলি?
ফিয়োনা চুপ করে রইলো। আন্টি আরেকবার জিজ্ঞেস করতেই স্বীকার করলো। আন্টি বললেন, তুই ফাহমির কাছে আরো পড়তে চাস? নাকি চাস না? পড়তে চাইলে ও আসবে আর যদি না চাস, তাহলে ও আর আসবে না। কি চাস সেটা এখনই বলে দে।
- উনি যদি আসতে রাজি থাকেন তাহলে..
- তুই কি চাস সেটা বল?
- মা… আমি…
ফাহমি ফিয়োনার দিকে না তাকিয়ে অনবরত নাস্তা খেয়েই চলেছে। আন্টি আবারও ফিয়োনাকে জিজ্ঞেস করলেন, বল? তুই কি? - আমি পড়বো।
- সত্যি তো?
- হ্যাঁ মা আমি পড়বো।
আন্টি ফাহমির দিকে তাকালেন, বাবা ও পড়বে। তুমি কষ্ট করে ওকে একটু সময় দিও কেমন?
ফাহমি কিছু বললো না। ভাবটা এমন যে সরি না বলা পর্যন্ত কিছু বলবে না।
আন্টি ফিয়োনাকে বললেন, ফাহমিকে সরি বলবি। আমি খাবার দিচ্ছি টেবিলে, ফাহমি আজকে আমাদের সাথে খাবে। তোরা কথা বল, আমি আসছি।
আন্টি উঠে চলে গেলেন। ফাহমি কোনো কথা বললো না। চুপচাপ খেতে লাগলো। ফিয়োনা কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। আমতা আমতা করে বলল, আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?
ফাহমি তবুও কথার উত্তর দিলো না। ফিয়োনা বলল, রেগে আছেন? রেগে থাকলে সরি।
- ইটস ওকে। বাদ দাও।
- আচ্ছা।
ফিয়োনা উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। ফাহমি মনেমনে বেজায় খুশি। কি যে আনন্দ হচ্ছে ওর। ফিয়োনা আবার এসে একবার উঁকি দিয়েই চলে গেলো। ফাহমি আন্টিকে ডাকতে ডাকতে বলল, আমি চলে যাবো।
আন্টি এসে বললেন, তুমি খেয়ে যাবে আজকে।
- না আন্টি।
- কোনো না শুনবো না। খেয়ে যাবে, ব্যস।
আন্টির জেদের কাছে বাধ্য হয়ে ফাহমি বসে রইলো। টিভি ছেড়ে দিয়ে চ্যানেল ঘুরাতে লাগলো। মায়ের কথামতো ফিয়োনা গিয়ে টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। খাবার রেডি হয়ে গেলে ফাহমিকে বলল খেতে যেতে।
ফাহমি খাবার টেবিলে এসে বসলো। ওর সামনে সোজাসুজি বসেছে ফিয়োনা। ফাহমি অতি সন্তর্পণে বসে আছে। খুব সতর্ক হয়ে আছে যাতে পায়ের সাথে পা লেগে না যায়। তবুও পা লেগে যাওয়াতে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো ফাহমি। অবশ্য এটাও বুঝতে পারলো যে ঘটনাটা ফিয়োনা ইচ্ছেকৃত ভাবে করেছে।
ফাহমি খাবার খেতে খেতে আন্টির সাথে গল্প করতে লাগলো। বাসায় কে কে আছে, কে কেমন এসব নিয়ে। ফিয়োনা চুপচাপ খাচ্ছে আর শুনছে। হঠাৎ ফাহমির কাশি উঠলে ফিয়োনা গ্লাস এগিয়ে দিলো। পানি খেয়ে ফিয়োনাকে থ্যাংকস জানালো ফাহমি।
ফিয়োনা এর মধ্যে কোনো কথা বলেনি। খাওয়া শেষ করে ফাহমি রুমে যাবে এমন সময় ফিয়োনা বলল, আম্মু আমি ওনার সাথে যাই? একটা বই নিয়ে এখুনি চলে আসবো।
মায়ের অনুমতি পেয়ে ফিয়োনা ফাহমির সাথে সাথেই চললো। ফাহমি তো অবাক! ফিয়োনা ওর সাথে যেতে চাচ্ছে!
সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় ফিয়োনা বলল, আপনি কিন্তু আজকে একটা কথাও বলেন নি। আপনার রাগটা অনেক ভয়ানক সেটা বুঝতে পারছি।
- বোঝার জন্য ধন্যবাদ।
- আচ্ছা আপনি মুখটা এমন কঠিন করে রেখেছেন কেন?
- আমার মুখ এমনই।
ফিয়োনা মুখ বাকা করলো। ফাহমির সাথে ওঠার ছল করে ইচ্ছেকৃত ভাবে পড়ে যাওয়ার অভিনয় করলো যাতে ফাহমি ওকে ধরে ফেলে। ফাহমি ওকে ধরে বলল, আরে একটু সাবধানে চলবা না? তুমি সবসময় এরকম হুলস্থুল কান্ড করো কেন বলোতো?
ফাহমির চোখের দিকে তাকিয়ে কোনো কথা বললো না ফিয়োনা। যা কথা হয়, চোখে চোখেই হোক না।
পর্ব ৮
চোখে চোখেই শত কথা বলাবলি হয়ে যাচ্ছে। ফাহমির চোখের দৃষ্টি এত তীক্ষ্ণ যে বুকের ভিতর গিয়ে বিঁধছে। আর ফিয়োনার দৃষ্টিও ভীষণ ধারালো। বুকটা ছিন্নভিন্ন করে দেয়।
ফাহমি ফিয়োনাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। এরপর আস্তে আস্তে হাঁটতে শুরু করলো। ফিয়োনার নরম হাতের স্পর্শ আচ্ছন্ন করে রেখেছে ফাহমিকে। ফিয়োনাকে ধরার সময় আচমকাই ওর হাত ধরে ফেলেছিল। মেয়েদের হাত এত নরম হয় এই ধারণা ফাহমির ছিলো না। নিজের মধ্যে উত্তেজনা বোধ করতে শুরু করেছে ও।
ফাহমির ঘরের দরজা খুলে আলো জ্বালিয়ে দিলো। ফিয়োনা বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো। ফাহমি বলল, ভেতরে আসবে না? নাকি ভুল হয়ে যাবে?
- অনুমতি দিলে ভুল হলেও আসবো।
- অনুমতি দেয়া হলো।
ফিয়োনা ঘরে ঢুকে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।
ফাহমি ওকে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল, বসো। - বসতে ইচ্ছে করছে না।
- ওকে। কি বই নেবে সেলফ থেকে বেছে নাও।
- সেলফ থেকে নিতে হবে কেন? কেউ কি বেছে দিতে পারে না?
- নিজের পছন্দমতো নিতে পারো সেজন্য সেলফ থেকে নিতে বলেছি।
ফিয়োনা বুক সেলফের সামনে পায়চারি করতে করতে বই দেখতে লাগলো। বলল, এত বই আপনার!
- হ্যাঁ। বই আমার সবচেয়ে বেস্ট ফ্রেন্ড।
- আপনি কিন্তু আমার বই পড়ার নেশা ধরিয়ে দিচ্ছেন।
- তাই বুঝি?
ফিয়োনা বুক সেলফ থেকে একটা বই তুলে এগিয়েছে এলো ফাহমির কাছে। কাছে থেকে আরো কাছে গা ঘেষে দাঁড়ালো। চোখে চোখ রেখে বলল, এখনো অভিমান আমার উপর?
- কিসের অভিমান? অভিমান করবো কেন?
- সেদিনের ওই ঘটনার জন্য। আছে নাকি মান অভিমান?
- অভিমান করার অধিকার আমার আছে?
- আছে বৈ কি। কিছু কিছু জিনিস বুঝে নিতে হয়।
- আমি বাসা খুঁজছি।
- আপাতত না খুঁজলে হয় না?
- বাসা পেয়ে গেছি।
- যেতেই হবে?
- আমি কাউকে কথা দিলে কথা রাখি?
- জেদ আছে বলতে হবে।
- জেদ নয়, সেলফ রেসপেক্ট।
ফিয়োনা ফাহমির পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকালো। ছেলেটা বেশ স্মার্ট আছে। কথার মোক্ষম জবাব দিতে জানে। একটু থেমে বলল, সারাদিন তো দেখি বাইরে বাইরে থাকেন। কি করা হয় শুনি?
- ভার্সিটি কোচিং করাই, টিউশনি করাই। চাকরির চেষ্টা চলছে।
- নিশ্চয় ই অনেক সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে স্টুডেন্টস আছে?
- মেয়ে যখন আছে, সুন্দরী তো থাকবেই। প্রত্যেকটা মেয়েই আমার কাছে সুন্দরী।
- বিশেষ সুন্দরী কেউ নেই?
- আছে। না থাকার তো কারণ নেই।
ফিয়োনা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আর কিই বা বলার থাকতে পারে। ফিয়োনার মুখের দিকে তাকিয়ে ফাহমির অসহায় অসহায় লাগলো। ও মনেমনে হেসে বলল, বই কোনটা নিলে?
- বুঝতে পারছি না কোনটা নেবো।
ফাহমি এগিয়ে এসে একটা বই নিয়ে ফিয়োনার হাতে দিলো। ফিয়োনা কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টে দেখে বলল, ওকে যাই তাহলে।
ফাহমি কিছু বললো না। ফিয়োনা দরজার কাছে গিয়ে আবার পিছন ফিরে বললো, একটা গান শোনাবেন?
ফাহমি না করতে পারলো না। এভাবে মায়াবী কণ্ঠে কেউ গান শোনার আবদার করলে না করা যায় না। ও হেসে বলল, হুম শোনাবো। দাঁড়াও আসছি।
ফাহমি ওর গিটার নিয়ে বাইরে এলো। ছাদে আজকে লাইট দেয়া হয়নি। দূর থেকে আলো আসছে। আবছা আলোয় বসে ফাহমি গিটারে সুর তোলার চেষ্টা করল। ফিয়োনা আনমনে বসে রইলো ফাহমির পাশে। ফাহমি গান ধরলো,
আকাশের ওই মিটিমিটি তারার সাথে কইবো কথা,
নাইবা তুমি এলে..
ফিয়োনা ফাহমিকে থামিয়ে দিয়ে বলল, উহু। এটা আপনার কণ্ঠে মানায় না। এটা গাইবো তো আমি।
- শিওর? তাহলে শুরু করো না?
ফিয়োনা একটু চুপ থেকে গাইতে শুরু করলো,
আকাশের ওই মিটিমিটি তারার সাথে কইবো কথা….
গান চলতেই থাকলো। ফাহমি কোনো কথা বলতে পারলো না। নিঃশব্দে শুধু গিটার বাজিয়ে চলেছে। আর ফিয়োনা গান গাইছে প্রাণ খুলে। ফিয়োনার কণ্ঠে এত মায়া ছিলো ফাহমির জানা ছিলো না। গান শুনে ওর মন ভালো হয়ে যেতে শুরু করেছে। ফিয়োনার প্রতি যে রাগ ছিলো, মুহুর্তেই উবে গেলো সমস্ত রাগের ছিটেফোঁটাও।
ফিয়োনা গান শেষ করে নিরব হয়ে রইলো। ফাহমিও অনেক্ষণ চুপচাপ। তারপর একসময় বলল, অসাধারণ কণ্ঠ তোমার ফিয়োনা। তুমি গান প্রাক্টিস করো না কেন?
- বাবা পছন্দ করেন না।
- সত্যিই খুব সুন্দর গাইতে পারো।
- আচ্ছা, আজকে আসি।
ফিয়োনা উঠে দ্রুত চলে গেল। এভাবে চলে যাওয়ার কারণটা বুঝতে পারলো না ফাহমি। অবশ্য শেষ দিকে এসে ফিয়োনার গলা ধরা ধরা লেগেছিল। যেন গলাটা ভিজে আসছে। ফাহমি বুঝতে পারছে না কিছুই। নাকি ফিয়োনা মনেমনে…
মাথা থেকে ব্যাপারটা ঝেড়ে ফেলে দিতে চাইলো ফাহমি। ফিয়োনা ওর চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। তাছাড়া ওর সাথে কোনো কেলেংকারী হয়ে গেলে আন্টিকে মুখ দেখাবে কি করে? আর মা ও খালার সম্মানটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কে জানে! আগামীকাল এনশিওর হতে হবে ফিয়োনার মনে আসলেই কি চলছে?
পরদিন সকালে…
ফাহমি একটা চিরকুট লিখে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দিলো। চিরকুটে লিখেছে, ‘অন্তত সামনে আসুন একবার। নয়তো আমি আর কখনো চিঠি দেখবো ও না, চিঠির উত্তর তো দূরের কথা। এত লুকোচুরি আমার ভালো লাগছে না। প্লিজ সামনে আসুন।’
চিরকুট টা রেখে যথারীতি নিজের কাজে চলে গেলো ফাহমি। ফিয়োনাকে নিয়ে একদম ই ভাবতে চাইলো না। বাসায় ফিরলো সন্ধ্যার পর। এসেই পড়াতে গেলো ফিয়োনাকে।
কলিং বেল টিপতেই দরজা খুলে দিলো ফিয়োনা। আজকে একেবারে অবাক ফাহমি। ফিয়োনা শাড়ি পড়ে অনন্যা হয়ে সেজেছে৷ কানে বড় দুল, গলায় মালা, শ্যাম্পু করা চুলগুলো পিঠের উপর বিস্তৃত হয়ে আছে। এরূপ সাজের কারণ বুঝতে না পেরে ভ্যাবাগঙ্গারামের মত চেয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই ফাহমির৷ কিন্তু অন্যকিছু ভাবার অবকাশও পেলো না। আজকে ফিয়োনাকে অপূর্ব সুন্দরী লাগছে। ফিয়োনার চেহারায় এত মাধুর্য তা মিশে আছে সেটা আগে খেয়াল করেনি ফাহমি। আজকেই প্রথম মনে হচ্ছে মেয়েটা ছোট নেই, বড় হয়ে গেছে। শাড়ি পড়ার কারণে এরকম বিভ্রম তৈরি হয়েছে কি না কে জানে। নাকি কারণটা মনঃস্তাত্ত্বিক?
ফাহমি আপন মনেই ভাবতে লাগলো। ফিয়োনা বলল, আসুন ভিতরে।
ফাহমি ঘরে ঢুকে আশেপাশে তাকালো। ফিয়োনা ওকে বসার ঘরেই বসতে বললো। ফাহমি বসতে বসতে বলল, সুন্দর ঘ্রাণ আসছে খাবারের।
- হ্যাঁ। আজকে আপনি খেয়ে যাবেন। কেমন?
- তা না হয় গেলাম। কিন্তু খাবারের এত আয়োজন, এত সাজগোছ কি কারণে?
উত্তরে ফিয়োনা একটা হাসি দিলো। সেই হাসির অর্থ বুঝতে পারলো না ফাহমি। তাই নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলো। ফিয়োনা নাস্তা এনে দিলো ফাহমিকে। নাস্তা খেতে খেতে ফাহমি ড্যাবড্যাব করে ফিয়োনার দিকে তাকিয়ে রইলো। ফিয়োনা বলল, স্যার আমি পড়বো না। - কেন?
- আজ আমাকে দেখতে আসবে।
- দেখতে আসবে মানে?
- আজ আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। বিয়ের জন্য।
খাবার নাকে উঠে গেলো ফাহমির৷ অনবরত কাশতেই লাগলো। ফিয়োনাকে দেখতে আসবে কথাটা যেন ওর বিশ্বাসই হতে চাইলো না। অবাক হয়ে বলল, কি বলছো এসব?
ফিয়োনা বলল, হ্যাঁ। ছেলে ভালো ডাক্তার। এমন পাত্র আব্বু আম্মুও হাতছাড়া করতে চায় না।
- কিন্তু এত তারাতাড়ি বিয়ে দিতে চায় কেন?
- তারাতারি কই হলো? আমি তো অনেক বড় হয়ে গেছি। তাছাড়া ভালো পাত্র হাতছাড়া করার মত ইচ্ছে কার থাকে বলুন?
ফিয়োনা হেসে হেসেই কথাগুলো বলছে। একটা মেয়ের জন্য ভালো পাত্র আসাটা নিঃসন্দেহে সুখবর। কিন্তু ফাহমির বিষয় টা ভালো লাগছে না। তারাতাড়ি বিয়ে হওয়ার জন্য নয়, বরং ফিয়োনার বিয়ে হয়ে যাবে এটা ভাবতেই কেমন যেন লাগছে ওর। কিছুতেই মাথা শান্ত করতে পারছে না।
ফিয়োনা বলল, আপনি নাস্তা করে আমার রুমে বসে থাকতে পারেন। চলে গেলে আরো ভালো হয়। আমিই যেতাম আজকে পড়াতে বারণ করার জন্য। কিন্তু সময় পাইনি। সাজগোছ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তাই।
- তুমি খুব খুশি মনে হচ্ছে?.
- হ্যাঁ। দেখতে আসলে মেয়েরা খুশি হবে না? অবশ্য দেখতে আসলেই যে বিয়ে হয় এমন তো না।
- হতেও তো পারে? তুমি যে বললে বাবা মা পাত্র হাতছাড়া করতে চান না।
- এরচেয়েও ভালো পাত্র থাকতে পারে। যাইহোক, আমি এসব নিয়ে ভাবছি না। দেখতে আসবে, দেখে যাবে ব্যস। আপনি কাল আসবেন। নয়তো আমি গিয়ে পড়ে আসবো।
ফাহমি নাস্তা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো। অবাক হয়ে ভাবছে এটা কেমন হলো? ফিয়োনা সবসময় যেরকম কথা বলে, আজকে তারচেয়ে একটু বেশি বকবক করছে। বিয়ের আগে মেয়েরা এত খুশি হয়? তাও আবার এত তারাতাড়ি। ভাবতে পারছে না ফাহমি। ভাবতেই কেমন গা ঘিনঘিন করে উঠছে।