সিনিয়র প্রেম

সিনিয়র প্রেম – ডাক্তার মাইয়া যখন বউ – শেষ পর্ব | Senior Bou

সিনিয়র প্রেম – ডাক্তার মাইয়া যখন বউ – শেষ পর্ব: একটার পর একটা অনুভুতির স্বাদ পাচ্ছি এই ডাক্তার মাইয়াটার জন্য। এক ঘেয়ে জীবনটাকে কেমন যেন রংধনুর মত রাঙ্গিয়ে দিয়ে গেছে এই পাগলি মেয়েটি। জানি না কি হবে আমার? তারে কি সারাজীবনের জন্য পাব নাকি কোন দমকা হাওয়ায় হারিয়ে যাবে চিরতরে। দেখি কি হয়?

হিমুর আকাশে কালো মেঘ

সবাই গুরুগম্ভীর ভাবে এটা নিয়ে চিন্তা করছে কি করা যায়? ছেলেটার নামে অনেক রিপোর্ট আছে। কিছু না করে ফেলে তার আগেই এটার ব্যবস্থা করতে হবে। পরে কোন ঘটনা যদি ঘটে যায় কিছু করা যাবে না।

সবাই যার যার মনের ভাবনা প্রকাশ করছে আর আমি এক জায়গায় দাড়িয়ে ঘামতেছি।

আম্মুঃ কিরে আরমান, তুই এমন ঘামছিস কেন?

মায়ের কথা শুনে চমকে উঠেছি।

আরমানঃ প্রচুর গরম পড়েছে তো, তাই।

আম্মুঃ তোর মাথা ঠিক আছে?

আরমানঃ মাথায় দিয়ে বললাম, ঠিকি তো আছে।

আম্মুঃ মাথার ওপর ফ্যান চলতেছে আর তোর গরম লাগছে?

আরমানঃ গরম মনে হয় আমার ওপর রাগ করছে।

আম্মুঃ কি সব যাতা বলছিস? কি হয়েছে তোর?

কি করে বলি, সবাই যখন হিমুর বিয়ের চিন্তা করছে আমার মনের ভিতরে তখন খরার মৌসুম শুরু হয়ে গেছে।

আরমানঃ কিছুনা।

বড়দের সবার কথাতে একটা কথা বুঝলাম হিমুর বিয়ে দিতে হবে। না হলে সমস্যা। এখন কার সাথে দিবে এটাই ভাববার বিষয়। কারণ বেশি দেরি করা যাবেনা। কিছু ঘটার আগেই সব কাজ শেষ করতে হবে।

ভাবনার জগতে হারিয়ে যাওয়া

হিমুর মন খারাপ। তার কত স্বপ্ন ছিল সে একদিন ডাক্তার হবে। মানুষের সেবা করবে। কিন্তু তা আর হবেনা। একটা বখাটের ভয়ে তাইবলে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবে। খুব কান্না করতে ইচ্ছা করছে হিমুর।

সবার সিদ্ধান্ত হলো হিমুর মামাতো ভাই এর সাথে তার বিয়ে হবে। এটা শুনে আমার বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করতে পারছি। মনে হচ্ছে, দিলটা বুকের ভিতর থেকে লাফ দিয়ে বেরিয়ে ফ্যানের সাথে লটকে যাবে।

আমার আর এখানে থাকা সম্ভব না। যাকে ভালোবাসি তার বিয়ে অন্য কারো সাথে হবে শুনে কি করে থাকি। কেউ থাকতে পারবেনা।

আমি আমার বাড়িতে চলে এলাম। এসে বাথরুমে ঢুকে অনেকক্ষণ গোসল করলাম। আমার যখন মন খারাপ থাকে বা কষ্ট পাই তখন অনেকক্ষণ গোসল করি।

গোসল করে বেরিয়ে। ছাদে চলে গেলাম। আকাশ ভরা তারা। সাথে থালার সমান চাদ। কিন্তু আমার কাছে তখন পুরা আকাশ অন্ধকার দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে, চারিদিকে অন্ধকার আমার কাছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা নাই।

যা হচ্ছে তা নিরবেই মেনে নিতে হবে। মনের গহিনে তখন ভাবনার দুয়ারে চলে গেছি। সে ভাবনা রোমান্টিক। কোন শব্দ নেই। নিস্তব্ধ এক পরিবেশ।

হঠান শরীরে ঝাকুনি অনুভব করলাম। তাকিয়ে দেখি মা দাড়িয়ে কি যেন বলছে। আমি শুনতে পাচ্ছিনা। আচ্ছা, আমি কি মরে গেছি? শুনতে পাচ্ছিনা কেন কিছু?

গালের ওপর ঠাস করে একটা শব্দ হলো। এবার সব শুনতে পাচ্ছি। তার মানে বেঁচে আছি।

আরমানঃ আমাকে মারলে কেন?

আম্মুঃ কতক্ষণ থেকে কথা বলছি। যা বলছি তা শোনা বাদ দিয়ে আবার ভাবনার জগতে যাচ্ছিস?

আরমানঃ আমি মরে গেছি, না বেঁচে আছি, তাই ভাবছিলাম।

আরেকটা থাপ্পর….ঠাসসসসসস!

আম্মুঃ ব্যথা লাগছে?

আরমানঃ হু।

আম্মুঃ তাহলে বেঁচে আছিস। এবার নিচে চল।

আরমানঃ নিচে যাবনা। অন্ধকার আকাশ দেখতে ভালো লাগছে। আকাশে চাঁদ নেই তারা নেই কত সুন্দর!

মায়ের শাসন

মা আমার দিকে অবাক চোখে তাকাচ্ছে।

আরমানঃ এভাবে অবাক চোখে তাকাচ্ছো কেন?

আম্মুঃ ভাবছি তোকে কতক্ষণ মারা লাগবে?

আরেকটা থাপ্পর….ঠাসসসসসসসস!

আরমানঃ মা তুমি এভাবে কথায় কথায় থাপ্পর মারছো কেন? আমার লাগেনা বুঝি।

আম্মুঃ তোকে না মারলে সোজা হবিনা। আকাশে চাঁদ তারা সব আছে আর তুই বলিস কিছু নাই?

আরমানঃ সত্যি আছে?

আরেকটা থাপ্পর….ঠাসসসসসস!

আমার মনে হচ্ছে কান্না শুরু করে দেই। কিন্তু ছেলে মানুষ তাই কান্না করতে পারছিনা। একটু স্যাড মুডে থাকতে চাই তাও থাকতে দিবেনা। আমি না হয় কষ্ট ঐ কথাগুলো বলছিলাম। তাই বলে এতো মারা লাগবে?

আমার রুমে নিয়ে এসে মা বললো,

আম্মুঃ এই পান্জাবীটা পড়ে নে।

আরমানঃ এই রাতে কেন পড়বো?

আম্মুঃ হিমুর বিয়ে আজ রাতে। তার বিয়ের অনুষ্ঠানে কি এভাবেই যাবি?

আরমানঃ আজকেই বিয়ে?

আম্মুঃ হ্যা, আজকেই।

আরমানঃ আমি যাবনা। তোমরা যাও।

আম্মুঃ কেন যাবিনা?

আরমানঃ এমনি।

আরেকটা থাপ্পর…..ঠাসসসসসস!

আম্মুঃ এবার যাবি? না আরো দিবো?

আরমানঃ ব্ল্যাকমেইল করছো তাই যাচ্ছি না হলে যেতাম না।

আম্মুঃ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।

বলে মা রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি মনের দুঃখে ছাদে একা একা দাড়িয়ে ছিলাম। বাট মা চায় দুঃখটা আরো বেশি হোক তাই জোর করে নিয়ে যাচ্ছে।

মনের সব কষ্ট নিয়ে রেডি হলাম। তারপর মায়ের সাথে হিমুর বাড়িতে গেলাম।

অপরূপ সাজে হিমু

বিয়ের সব আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। সবার মনে তখন একটু হলেও খুশি বিরাজ করছে। আর আমার মনে কষ্টের নদি বয়ে যাচ্ছে। না কাউকে বলতে পারছি না কাউকে বুঝাতে পারছি।

আমি গিয়ে এক পাশে দাড়িয়ে আছি। কেউ আমার সাথে কোন কথা বলছেনা। আমি মনে মনে একটু শান্তি পেলাম। যাই হোক, কষ্টের দিনে একা চুপচাপ তো থাকতে পারছি। সব আয়োজন শেষ। হিমুদের পরিচিত কয়েকজন লোক এসেছে। আর প্রতিবেশি কয়েকজন।

হিমুকে সাজিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। নীল বেনারসি পড়ে তাকে নীল পরীর মতো লাগছে। চোখে কাজল। চোখের দিকে তাকালে যে কোন ছেলে ঘায়েল হয়ে যাবে।

আচ্ছা, আমি খুশি হচ্ছি কেন? এই সাজে তো হিমু অন্যের ঘরে চলে যাবে। তাহলে তো কষ্ট পেতে হবে আমাকে। মনটা খারাপ করে। অন্যদিকে তাকালাম। হিমুকে দেখবনা।

কিন্তু ঐ যে ছেলের মন কুত্তার লেজের মতো। হাজার দড়ি দিয়ে বাধলেও সোজা হয়না। তেড়ি তেড়িই থাকে।

এত সুন্দর সাজে না দেখে থাকা যায়? তাই আমি আবার তার দিকে তাকালাম। হিমু মাথা নিচু করে আছে। হয়তো লজ্জা পাচ্ছে। বাট আমি পাচ্ছিনা। আমি এক ধ্যানে দেখছি। আর তো কোন দিন দেখা হবেনা। তাই আজকেই দেখি মন ভরে। সারা জীবনের জন্য।

হিমুর ভাইঃ আরমান ভাই, আপনি ঐ ভাবে আমার আপুর দিকে তাকিয়ে আছেন কেন?

হিমুর ভাই এর কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছি। এমন প্রশ্ন করবে আমি ভাবতেও পারিনি।

আরমানঃ তোমার আপুকে কেন দেখতে যাব? আমার কি কাজ নাই? আমি তোমার আপুর কাপড় দেখছিলাম।

হিমুর ভাইঃ কাপড় কি অন্য কেউ পড়ে আছে?

আরমানঃ তোমার বোনকে দেখিনি।

হিমুর ভাইঃ আমি তো দেখলাম হা করে তাকিয়ে আছেন?

আরমানঃ কেন র্‌ হা করে তাকিয়ে থাকলে সমস্যা?

হিমুর ভাইঃ হ্যা, সমস্যা আমার আপুর পেট খারাপ করবে।

এই ব্যাটা আমার থেকেও বড় জিনিস। এর কাছে থাকলে মান ইজ্জত বলে কিছু থাকবেনা সব পাংচার হয়ে যাবে। তাই তার কাছে অন্য জায়গায় গেলাম।

হিমু বসে আছে। বাট জামাই কোথায়? কিছু বুঝতে পারছিনা। কোনটা জামাই?

হটাৎ বিয়ে এবং সারপ্রাইজ

কাজি সাহেব এসে গেছে। কাজি জামাইকে ডাকতে বললে,

মা আমাকে ডাকছে।

আরমানঃ কি হয়েছে মা?

আম্মুঃ হিমুর পাশে বস।

আরমানঃ আমি কি জন্য বসবো?

আম্মুঃ তোর সাথে বিয়ে, তাই?

আরমানঃ মিথ্যা কেন বলো? আমি নিজে কানে শুনেছি তার মামাতো ভাই এর সাথে বিয়ে।

আম্মুঃ হিমু ওটা না করে দিয়েছে। আর তোকে বিয়ে করতে চেয়েছে।

আরমানঃ আমাকে?

আম্মুঃ হ্যা, তোকে।

আমার মাথা ঘুরতেছে। মনে হচ্ছে, চারিদিকে সব কিছু ঘুরতেছে। কখন যে মাথা ঘুরে পড়ে গেছি বুঝতেই পারিনি।

যখন চোখ খুলে দেখি হিমুর হাতে গরুর ইন্জেকশন। ওটা দেখে আমি তো ভয় পেয়ে গেছি। আমার ইন্জেকশন দিতে ভয় লাগে। আর হিমু ইন্জেকশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আরমানঃ আপনি এই ইন্জেকশন দিয়ে কি করবেন?

হিমুঃ তোমাকে দিব।

আরমানঃ কেন? আমি ইন্জেকশন দেইনা।

হিমুঃ তুমি দাওনা তো কি হয়েছে, আমি দিব।

আরমানঃ না, আমি দিবনা।

বলে উঠে পালাতে যাব তখন হিমু আমাকে ধরে ফেলেছে।

হিমুঃ পালাচ্ছো কোথায়?

আরমানঃ আমার বাড়িতে যাবো। থাকবনা এখানে।

হিমুঃ আমিও তো যাব একটু পর তোমার বাড়িতে।

আরমানঃ আপনি কি জন্য যাবেন?

হিমুঃ ওমা শ্বশুড় বাড়িতে যাবনা তো কার বাড়িতে যাব?

আরমানঃ আপনি খারাপ ডাক্তার। এত বড়বড় ইন্জেকশন মানুষকে দেন। আপনাকে কে বিয়ে করবে?

হিমুঃ তুমি করবে। আর এখন করবে।

আরমানঃ আমি করবনা।

হাতে ইন্জেকশন নিয়ে

হিমুঃ এটা তাহলে তোমাকে দিতে হবে।

আরমানঃ না, আমি দিবনা।

হিমুঃ তাহলে এখন আমার সাথে চলো বিয়ে করতে।

আরমানঃ আমার বিয়ে করার বয়স হয়নি।

সিনিয়র প্রেম

বলতে যা দেরি এক চড়।

আরমানঃ মারলেন কেন?

আরেক চড়।

আরমানঃ এত চড় মারছেন কেন?

হিমুঃ যখন আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছি। তখন তোমার সমস্যা হচ্ছে? তোমার মতো একটা পিচ্ছি ছেলেকে আমি বিয়ে করছি। ঠিক আছে, আমি আমার মামাতো ভাইকেই বিয়ে করছি। তুমি থাকো এখানে।

আমি হিমুর হাত ধরে ফেলেছি।

আরমানঃ ওই বেটার সাথে বিয়ে করতে দিলে তো করবেন।

হিমুঃ কে করতে দিবেনা, শুনি।

আরমানঃ আমি করতে দিবনা।

হিমুঃ তুমি তো আমাকে বিয়ে করবেনা।

আরমানঃ কে বলছে করবনা? এখনি করবো।

হিমুকে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বাহিরে যাচ্ছি।

হিমুঃ এই কি করছো? সবাই কি ভাববে?

আরমানঃ যার যা ভালো লাগে ভাবুক।

হিমুঃ আমার লজ্জা লাগছে।

আরমানঃ কাপড় দিয়ে মুখ ডেকে নেন। তাহলেই আর লজ্জা লাগবেনা।

আমাকে এইভাবে হিমুকে নিয়ে বাহিরে আসতে দেখে সবাই হা করে আছে। মনে হচ্ছে, হিমুকে কোলে করে নিয়েই তাদের মুখের মধ্যে ঢুকে যাই।

আমি যেভাবেই হিমুকে নিয়ে আসিনা কেন তাদের অবাক হবার কি আছে?

আজ হিমুর বিয়ে

হিমুকে দরজার বাহিরে নামিয়ে দিলাম। তার মা তাকে নিয়ে গেল। আমি আমার জয়গাতে চলে এলাম। কাজি সাহেব তার কাজ আরম্ভ করলো। যখন কাজি সাহেব কবুল বলতে লাগলো তখন দুনিয়ার সব কথা মাথার মধ্য ঘুরছে।

আরমান তোর স্বাধীন জীবন শেষ। আজ থেকে বাহিরে বেশি ঘুরতে পারবিনা। কোন মেয়ের দিকে তাকাতে পারবিনা। কাউকে ভালো লাগতে পারবিনা। কোথায় কি করছিস সব কইফিয়ত দিতে হবে?

যেখানেই যাবি সেখানেই বউকে বগল দাবা করে নিয়ে যেতে হবে। আর তুই বেশি তেড়িবেড়ি করলে তোকে গরুর ইন্জেকশন দিবে। তোর জীবন তামাতামা হয়ে যাবে।

বিয়ে সাদি করে যে অকালে মরে সে।

এসব কথা মাথার মধ্যে ঘুরছে। বিয়ে যদি না করতে চাই তাহলে তিন চারটা ইন্জেকশন একবারে দিবে। ইন্জেকশন খাওয়ার থেকে বিয়ে করাই ভালো। তাই কবুলটা বলে দিলাম।

অন্য বিয়েতে মেয়ে মানুষ দেরি করে বলে। বাট আমার বিয়েতে আমি দেরি করে বলেছি। হিমু তো 4G স্পিডে কবুল বলছে।

আমি এখন থেকে ডাবল।

আমি আমার বন্ধুদের ফোন দিয়ে কান্না শুরু করলাম।

বন্ধুঃ কি রে আরামান, কান্না করছিস কেন?

আরমানঃ দোস্ত চাকরিটা চলে গেল, তাই।

বন্ধুঃ চাকরি, কিসের চাকরি? কি করে গেলো?

আরমানঃ ঐ যে সিঙ্গেল গ্রুপের সভাপতি ছিলাম। সেটা আর নাই রে।

বন্ধুঃ নাই কেন?

আরমানঃ বিয়ে করছি।

বন্ধুঃ কাকে?

আরমানঃ হিমুকে।

বন্ধুঃ একবারও বললিনা।

আরমানঃ মিথ্যা কথা কেন বলিস?

বন্ধুঃ কই মিথ্যা বললাম?

আরমানঃ মাত্রই তো বললাম। বিয়ে করছি। আর বলছিস বলিনি।

বন্ধুঃ বিয়ের আগে কেন বলিসনি?

আরমানঃ বিয়ের আগে আমার বিয়ে আমিও জানতাম না।

বন্ধুঃ তাহলে কখন জানলি?

আরমানঃ বিয়ের পরে।

বন্ধুঃ ফাজলামু করিস?

আরমানঃ না না। তুই রাখ। এখন বউয়ের সাথে রোমান্স করতে হবে।

বলেই ফোন কেটে দিয়েছি।

বন্ধুদের মজা আমার ভয়

তারপর হিমুকে তার বাড়ি থেকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসলাম। আসার সময় হিমুর সাথে একটাও কথা হয়নি। বাড়িতে এসে আমার রুমে ঢুকতে যাব। কিন্তু দরজা খুলছেনা।

বাহির থেকে লক করা ছিল। সেটা খুললাম বাট দরজা খুলছেনা। ভেতর থেকে লক হয়েছে মনে হয়। কিন্তু ভিতর থেকে লক হলো কি করে? ভুত টুত ঢুকেনি তো?

প্রথম দিনেই আমার রুমে ভুত। এখন কি হবে আমার? হিমুর পাশে দাঁড়িয়ে। না পাড়ছি পালাতে। বউ না হলে কখন পালাতাম। বউ বলে ভুতের কাছে রেখে পালাচ্ছিনা।

আবার থাকতেও পারছিনা ভয়ে। কি করি এখন? ঘরের মধ্যে ঘুটঘাট শব্দ হচ্ছে। কেমন অল্প হাসির শব্দ পাচ্ছি। আজকে আর রক্ষা নাই। গল্পে পড়েছি রাজকুমারিদের ভুতেরা ভালো বাসতো আর তাদের কে যারা মারতে পারতো তারা রাজকুমারিদের বিয়ে করতো।

আমি তো বিয়ের আগে কাওকে মারিনি। তাহলে কি বিয়ের পরে ভুত এসে হাজির হলো। এখন কি করি? পালাবো??

পালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় দরজা খুলে গেল। দরজা খুলা দেখে আমি হিমুর কলে উঠে গেছি। দেখি আমার বন্ধুরা বের হচ্ছে রুম থেকে।

আরমানঃ তোরা আমার রুমে কি করছিলি?

বন্ধুঃ তোর বিয়ে আর আমরা আসবনা বল এটা হয় বল।

আরমানঃ তোরা সত্যি আমার বন্ধু তো?

বন্ধুঃ কেন কি মনে হচ্ছে?

আরমানঃ ভুত মনে হচ্ছে।

বন্ধুঃ আমরা জীবন্ত মানুষ। তুই ভাবির কোল থেকে নাম। বেচারি হাফিয়ে গেছে। এই চিকন শরীর নিয়ে তোকে ধরে আছে।

আরমানঃ আমি বউ এর কোলে আছি?

বন্ধুঃ না, আমার কোলে।

আরমানঃ তোর কোলে থাকলে আমি এই পার কেন?

বন্ধুঃ তাকিয়ে দেখ, কোথায় আছিস?

তাকিয়ে দেখি হিমু৷ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর রাগে ফুসতেছে। আমি কোল থেকে নেমে তাকে নিয়ে ঘরে গেলাম।

সিনিয়র বউয়ের বাসর রাত

দেখি পুরা ঘর সাজানো।

আরমানঃ এই ঘর আবার কে সাজালো?

বন্ধুঃ আমরা সাজিয়েছি।

আমার বন্ধুদের কথা শুনে পিছে তাকাই।

আরমানঃ আমার বিয়ের কথা তোদের কে বলছে?

বন্ধুঃ তোর মা। আর আমারা এসে ঘর সাজানোতে ব্যস্ত ছিলাম। তাই তোর বিয়েতে যেতে পারিনি।

আরমানঃ তাহলে আমাকে বললি কেন তোদের বলিনি?

বলে তাদের তাড়ানি দিছি। আর ওরাও পালিয়েছে।

বিয়ে বাড়ির সব কাজ সম্পন্ন। এখন ঘুমানোর সময়।

আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে খেয়ে রুমে গেলাম। দেখি, হিমু মাথায় ঘোমটা দিয়ে বেডে বসে আছে। আমার বুকটা কাপতেছে। বিয়ে তো জীবনের প্রথম করছি তাও আবার সিনিয়র মেয়েকে।

আজ থেকে আমার একার বেড রুম আরেকটা মেয়ের সাথে শেয়ার করতে হবে। আমি বউ এর পাশে গিয়ে দুরু দুরু বুকে গিয়ে বসেছি।

অনেকক্ষণ কোন কথা বলিনি। চুপচাপ ছিলাম দুজনে। কারো মুখে কোন কথা নাই। প্রথম বিয়ে তাও সিনিয়র মেয়েকে করলে এমনি হয়।

আরমানঃ আপনার ঘোমটা টা একটু সরান।

কোন কথা নাই।

আরমানঃ কি হলো, কিছু বলছেন না যে।

হিমুঃ তোমার বউ এর ঘোমটা তুমি সরাবে, আমি কেন সরাতে যাবো?

আরমানঃ বউ এর ঘোমটা স্বামী সরাই?

হিমুঃ তো অন্য কেউ সরাই নাকি?

আরমানঃ আমি এর আগে বিয়ে করিনি তো তাই জানিনা।

হিমুঃ আমি কি আগে বিয়ে করছি?

আরমানঃ জানা মতে, না।

হিমুঃ তাহলে আমি কি করে জানলাম?

আরমানঃ আপনি মনে হয় বিয়ে করছিলেন আগে।

হিমু ঘোমটা ফেলে আমার দিকে রাগে কটমট করছে। আর একটা ইন্জেকশন বের করেছে।

আরমানঃ এটা আবার এখানে কেন?

হিমুঃ তোমার মতো ফাজিলকে ঠিক করার যন্ত্র, এটা।

আরমানঃ আমি কি করছি?

হিমুঃ আমি আগে বিয়ে করছি। এটা কে বলছে?

আরমানঃ আমি বলেছি।

হিমুঃ তাহলে ইন্জেকশ কাকে দিব?

আরমানঃ আপনাকে দেন। শুনেছি বউ কষ্ট পেলে স্বামীকে লাগে আর স্বামী কষ্ট পেলে বউকে লাগে।

হিমুঃ আল্লাহ গো আমি আমি কাকে বিয়ে করেছি গো।

আরমানঃ কাকে আবার, আরমান কে।

হিমুঃ তোর একদিন কি আমার একদিন।

সিনিয়র বউয়ের শাসন

বলেই হিমু আমাকে বিছানায় ফেলে দিয়েছে। আর আমার ওপর ইন্জেকশন নিয়ে বসে আছে।

আরমানঃ আরে আরে কি করছেন এটা?

হিমুঃ তোর ফাজলামু দুর করবো।

আরমানঃ ছিছিছি জামাই কে তুই বলছে।

হিমুঃ তোর জামাই এর গুষ্ঠি কিলাই। তুই আর ফাজলামু করবি বল?

আরমানঃ করলে কি হবে?

হিমুঃ এই গরুকে দেয়া ইন্জেকশনটা এখন তোকে দিব।

আরমানঃ না না। এটা করবেননা। আমার ভয় লাগে।

হিমুঃ তাহলে বল আর ফাজলামি করবি?

আরমানঃ আর করবনা। ফাজলামু।

হিমুঃ আমার সামনে কান ধরে উঠ বস কর।

আরমানঃ পারব না।

হিমুঃ দিব ইন্জেকশন?

আরমানঃ না না, করছি।

শালা বিয়েটাই করা ভুল হয়েছে। বাসর রাতে কোথায় রোমান্স করবো, না কান ধরে উঠবস করাচ্ছে। ৩০ বার করার পর থামতে বললো।

হিমুঃ থামো। এখানে এসো।

আরমানঃ কি?

হিমুঃ আমার খুদা লাগছে। খাবার নিয়ে এসো।

আরমানঃ রাতে খাননি?

হিমুঃ না, সেদিকে কি কারো খেয়াল আছে?

আরমানঃ আমার আছে। আপনি বসেন। আমি নিয়ে আসছি।

সিনিয়র বউয়ের পিচ্চি বর

তারপর হিমুর জন্য খাবার নিয়ে আসলাম। রুমে ঢুকে দেখি কেউ নাই। ফাকা ঘর। আমার বউটা আবার পালায়নি তো? কি সব ভাবছি। আজে বাজে।

বাথরুম থেকে বের হলো। কাপড় চেন্জ করে।

বিছানাতে বসে অর্ডার শুরু।

হিমুঃ এখন খাইয়ে দাও।

আমি আগে পিছে তাকাচ্ছি।

হিমুঃ আগে পিছে কি দেখছো?

আরমানঃ দেখতেছি, কাকে খাইয়ে দিতে বললেন?

হিমুঃ তোমাকে বলেছি।

আরমানঃ আমি জীবনে কাউকে খাইয়ে দেইনি।

হিমুঃ তো কি হয়েছে? এখন আমাকে দিবে।

তারপর হিমুকে খাইয়ে দিতে লাগলাম। বিয়ের প্রথম দিনেই এত কিছু করছে। বাকি জীবনে কি করবে। তার ঠিক নাই।

খাওয়ানো শেষ করে। বাথরুমে গিয়ে আমিও কাপড় চেন্জ করে আসলাম। দেখি হিমু বসে আছে।

আমাকে দেখেই বললো,

হিমুঃ এখানে বসো।

আমি গিয়ে হিমুর পাশে গিয়ে বসলাম।

হিমুঃ আজ থেকে তুমি আমাকে তুমি করে বলবে। আর আপনি করে নয়।

আরমানঃ ঠিক আছে, তুমি করে বলবো।

হিমুঃ কোন মেয়ের দিকে তাকাবেনা। কারো সাথে ফাজলামু করবেনা। আর যত মেয়ে বন্ধু আছে সব বাতিল।

আরমানঃ এত কিছু আজ থেকেই।

হিমুঃ আজ থেকে মানে এখন থেকে।

আরমানঃ ঠিক আছে, আমার সিনিয়র বউ যখন বলেছে তখন রাখতেই হবে।

হিমুঃ এই তো গুড জামাই আমার ।

আরমানঃ এত কিছু শুনবো তার বদলে আমি কি পাবো?

হিমুঃ কি পাবে? এই নাও উম্মম্মম্মম্ম প্রতিদিন পাবে তাহলে।

বলেই আমাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার বুকের ওপর মাথা দিয়ে আছে। আজ থেকে তুমি আমার সম্পত্তি। সো তার দেখ ভাল আমাকেই করতে হবে।

বলেই আমার ঠোঠে তার ঠোট লাগিয়ে দিছে। পরে যা হবার তাই হলো। আর দেখার দরকার নাই….পরে আমার বউ এর দিকে নজর দিবেন আবার।

বাই বাই। জান গা এখন আরো জানার জন্য বসে আছেন নাকি? কারেন্ট অফ হয়ে গেছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন। সিনিয়র প্রেমের গল্প কিন্তু শেষ হয় নাই, আমার বাকি জীবনটা এরকম প্রেমে চলবে। আর হ্যাঁ সিনিয়রের সাথে প্রেম বা বিয়ে করতে ভয় পাবেন না, মনের মিলটা হল আসল মিল। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। বাই বাই।

~ সমাপ্ত ~

লেখক- আরমান হোসেন হিমেল

আরো পড়ুন- প্রেমের গল্প – দুই বোনের এক প্রেমিক – পর্ব ১

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *