সিনিয়র প্রেম ৬

সিনিয়র প্রেম – ডাক্তার মাইয়া যখন বউ – পর্ব ৬ | Senior Bou

সিনিয়র প্রেম – ডাক্তার মাইয়া যখন বউ – পর্ব ৬: এই হিমু মেয়েটা আমি আরমানের জীবনে যতটা না কষ্টের কারণ হয়েছে ঠিক ততটাই আনন্দে ভরপুর করেছে। একটার পর একটা সারপ্রাইজ দিয়ে যাচ্ছে এই মেয়েটা। জানি না কতদিন আর এই সুখ আমার কপালে সইবে!

প্রশান্তির পরশ

আমি পাঞ্জাবী পড়ে ছাদে গেলাম। এতটুক সময়ে হিমুর বাবা মা ভাই চলে এসেছে। তিন বন্ধু হিমুর পরিবার আর আমার বাবা মা একটা ছোট খাটো পার্টি। নীল পান্জাবী আমি আগে পড়িনি আজ প্রথম। তবে দেখতে ভালোই লাগছে মনে হয়। আমি ওখানে যেতে হিমু এসে পাশে দাড়ালো আর আমার বন্ধুরা হা করে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে, তাদের মুখের মধ্যে ঢুকে যাই।

বন্ধুঃ দোস্ত,‌ তোদের হেব্বি লাগছে।
আরমানঃ ভালো জিনিস তো ভালো লাগবেই।

বন্ধুঃ তোর খালি উল্টা ভাবনা।
আরমানঃ কথা উল্টা ভাবা যায়?

বন্ধুঃ চুপকর, এদিকে আয়।

তারপর কেক কেটে বার্থ ডে পালন করলাম। সেদিন রাতে অনেক মজা করেছি। অনেক সারপ্রাইজও হয়েছি।

আর তখনকার সবচেয়ে দেখার মতো ছিল হিমু। নীল শাড়ি চোখে কাজল একদম নীল পরীর মতো লাগছে। আমার কাছে রাতটা অনেক স্বরণীয় হয়ে থাকবে। আমি ভেবেছিলাম পান্জাবীটা অন্য কাউকে দিবে। বাট আমাকে দেয়ায় অনেক খুশি খুশি লাগছে।

পরেরদিন আমার এক বন্ধুর আত্মীয় মারা যায়। তার সাথে আমরা ৩ বন্ধু যাই। অনেক দুরের পথ। সেখানে গিয়ে লাশ কবর দিতে দিতে অনেক রাত হয়ে যায়। সেদিন আর বাসায় ফেরা সম্ভব না। সেরাত ওখানেই থেকে যাই।

আমাকে এখানে থাকতে একদম ভালো লাগছিল না। বাড়িতে থাকলে হিমুর সাথে ঝগড়া করলেও তাকে দেখতে পেতাম। আর এখন দেখতে পাচ্ছিনা। একদম মন বসছেনা এখানে। কেমন অস্থির লাগলে। প্রেমে পড়লে হয়তো এমনি ফিলিংস হয়।

তার কথা বারবার মনে হবে। অস্থির লাগবে। তাকে দেখতে মন চাইবে। মনে হবে তার সাথে একটু কথা বলতে পারলে শান্তি হতো। আমারো এমন হচ্ছে।

বন্ধুঃ কি দোস্ত, এত অস্থির কেন?
আরমানঃ কোথায় অস্থির?

বন্ধুঃ বুঝতেই পারছি, কেমন করছিস? কোনো কিছুতে মন বসাতে পারছিস না।
আরমানঃ এমনিতেই ভালো লাগছেনা। হিমুকে মনে পড়ছে?

বন্ধুঃ এখানে হিমুর কথা কেন আসলো?
আরমানঃ যাকে ভাবছি, যার জন্য অস্থির তার কথা তো আসবেই।

বন্ধুঃ তোর এতো ভাবতে হবেনা। তুই চুপচাপ থাক।
আরমানঃ হু। তোর সাথে কথা বলাই বেকার।

বন্ধুঃ তাহলে বলিসনা।
আরমানঃ হুট।

রাগ করে চলে গেল। কোন মতে রাত পার করছি। স্বপ্নেও হিমুকে দেখছি। এই রোগ যার হয়। তার যে কি সমস্যা! কোন মেডিসিন নাই। মরবেও না আবার সুস্থ থাকবেও না। মধ্য ব্যধি একটা।

বন্ধুর বাঁদরামি

পরের দিন বাসায় আসবো। সেদিন ও একটা দরকারে আসা হলোনা দুই দিন অনেক কষ্টে কাটিয়েছি। মনে হচ্ছে ২ দিন ৪৮ ঘন্টা হয়ে গেছে। তবে বাড়িতে ফিরছি। এতে অনেক আনন্দ লাগছে যে হিমুকে দেখতে পাবো।

বন্ধুঃ কি রে আরমান, মুচকি হাসিস কেন? (আমার এক বন্ধুর কথায় তার দিকে তাকালাম)। কথা ঘুরাতে বললাম,
আরমানঃ কাল কার্টুন দেখছি, সে কথা মনে পড়ছে। আর তাই হাসি পাচ্ছে।

বন্ধুঃ আচ্ছা, আমরা কি ফিটার খাই?
আরমানঃ খেতেও তো পারিস চুপিচুপি!

বন্ধুঃ তোর সব কথা তেড়ি করে নেয়া লাগে?
আরমানঃ কথা তো সোজা পথেই যায়। বিজ্ঞান তো সেটাই বলছে।

বন্ধুঃ আর্সের ছাত্র তুই, বিজ্ঞানের কি বুঝিস?
আরমানঃ আরে তোর মতো উল্লুককে পরিচালনার বিজ্ঞান জানি।

বন্ধুঃ আরমান ভালো হবেনা কিন্তু।
আরমানঃ কি করবি?

বন্ধুঃ হিমুকে তোর অতীত বলে দেব?
আরমানঃ তো আমি কি করবো?

বন্ধুঃ ঠিক আছে, বলবনি।

আমি তার কথা ভাবছি। অতীত জীবনে একটা পুলিশ সুপারের মেয়েকে পছন্দ করতাম। মেয়েটা অনেক সুন্দর ছিল। কিন্তু জাদরেল ছিল জানতাম না।

একদিন সেজেগুজে একদম নায়ক সেজে প্রোপোজ করছি। তখন আমাকে তার বন্ধুদের সামনে কান ধরে উঠবস করাইছে।

দুশ্চিন্তা ও ভয়

এই কথা যদি হিমুকে বলে তাহলে ইজ্জত বলে আমার কিছু থাকবেনা। ইজ্জত ফালাফালা হয়ে যাবে।

আরমানঃ রিদয়?
রিদয়ঃ তোর আবার কি হলো?

আরমানঃ চকলেট খাবি?
রিদয়ঃ আমি ছোট নাই যে খাবো।

আরমানঃ তাহলে কি খাবি?
রিদয়ঃ আচ্ছা, তুই হঠাৎ জামাই আদর করতে চাচ্ছিস নিজে থেকেই, বাট কেন?

আরমানঃ তুই আমার কত ভালো বন্ধু! তোর মতো বন্ধু আর একটাও নাই। (আমার কথা শুনে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
রিদয়ঃ কার মুখে কোন কথা শুনছি?

আরমানঃ আমার মুখে শুনছিস।
রিদয়ঃ কিন্তু কেন?

আরমানঃ হিমুকে আমার অতীতের কথা বলিস না।
রিদয়ঃ ও এই ব্যাপার। তাই বলি কার মুখে কি কথা!

আরমানঃ আমার ইজ্জতটা রাখিস, দোস্ত।
রিদয়ঃ পারবোনা।

আরমানঃ ঠিক আছে, তাহলে আমিও সামিয়াকে বলবো তোকে একটা মেয়ে পাবলিক প্লেসে থাপরাইছিল।
রিদয়ঃ তোর মনে আছে?

আরমানঃ থাকবেনা কেন?কেন থাপরাইছে তাও মনে আছে।
রিদয়ঃ দোস্ত চুপকর, এই কথা বললে সামিয়া আমাকে থাপরাবে।

আরমানঃ এক শর্তে বলবনা।
রিদয়ঃ কি শর্ত?

আরমানঃ তুই হিমুকে কিছু বলবিনা। আমিও তাহলে সামিয়াকে কিছু বলবোনা।
রিদয়ঃ ঠিক আছে, রাজি।

আরমানঃ ওকে।

ভিলেনের আগমন

তারপর নিশ্চিন্ত মনে বাড়িতে আসতেছি। বাড়িতে এসে দেখি বাড়িতে কেউ নাই। বেল দিয়ে দিয়ে দরজা খুলছেনা। আমি ফোন বের করে মাকে ফোন দিলাম,

আরমানঃ মা কোথায় তুমি? আমি বাড়ির বাহিরে দাড়িয়ে আছি।
আব্বুঃ আমি তোর বাবা, হিমুর বাসায় আছি।

আরমানঃ ওখানে কেন?
আব্বুঃ কারণ আছে। তুই এখানে আয়।

আরমানঃ আচ্ছা।

ফোনটা রেখে হিমুর বাড়িতে গেলাম। আমার বাবা মা সহ হিমুর কয়েকজন আত্মীয় এসেছে দেখছি। সবার মুখ ভারি হয়ে আছে। মনে হচ্ছে, বড় আকারের কিছু হয়েছে। আমি গিয়ে মাকে ডেকে নিয়ে এক সাইডে এলাম।

য়ারমানঃ কি হয়েছে মা?এত মানুষ কেন? আর সবাই এত চুপচাপ কেন?

মা যা বললো তা শুনে মাথাতে রক্ত উঠে গেছে। ঘটনাটা এমন-

আজ সকালে হিমু তার কলেজ যাবার পথে কিছু বখাটে ঝামেলা করে, আসার পথেও। আর সন্ধ্যার দিকে এসে হিমুর বাবা মাকে বলে গেছে সে হিমুকে বিয়ে করবে। বিয়ে না দিলে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে করবে। তাই এত মানুষ।

আর সবাই এ ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত নিতে এত গুরুগম্ভীর ভাবে ভাবছে সবাই। চলবে….

পরের পর্ব- সিনিয়র প্রেম – ডাক্তার মাইয়া যখন বউ – শেষ পর্ব

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *