মিষ্টি প্রেমের গল্প ১৭

মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ১৭ | স্যারের সাথে প্রেম | Love Story Bangla

মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ১৭ | স্যারের সাথে প্রেম: বিগত পর্বে আমরা দেখেছি রোদ এবং মিষ্টির মাঝে অস্থিরতা। দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসে কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারছে না। শুধু একে অপরের উপর নজরদারী করে যাচ্ছে। মিষ্টির সাথে রাকিবের কথা আর ফুচকা খাওয়া নিয়ে রোদ মিষ্টির উপর রাগ করে, কিন্তু মিষ্টি উল্টো রোদের উপর রাগ করে বাসায় ফিরে। চলুন দেখি দুজনের অভিমানের পালা কোথায় গিয়ে শেষ হয়?

মিষ্টির বিয়ের আলোচনা

এরপর আমি আর রোদের সাথে কথা বলিনি। আমি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। রাতে আব্বু আমার রুমে এসে-

আব্বুঃ মামনি, কি হইছে তোমার? তুমি নাকি আজকে আবারো না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছো?

মিষ্টিঃ হুম।

আব্বুঃ কেনো?

মিষ্টিঃ খেতে ইচ্ছা করছিলো না, তাই।

আব্বুঃ তা বললে হবে না। আর কিছুদিন পর তোমার বিয়ে। এখন নিজেকে ঠিক রাখতে হবেতো, তাই না।

মিষ্টিঃ আমার বিয়ে মানে?

আব্বুঃ তোমার বিয়ে মানে তোমার বিয়ে। আর কিছুদিন পরই তোমার বিয়ে আমরা ঠিক করেছি।

মিষ্টিঃ কিন্তু আব্বু তুমিতো আমাকে কিছুই জানাওনি।

আব্বুঃ সবকিছু হুট করেই হলো তাই আরকি তোমাকে জানাতে পারিনি। আসলে ছেলের বাড়ির লোকেরা তোমাকে খুব পচ্ছন্দ করেছে। তাই তারা বিয়েটা তাড়াতাড়ি করাতে চাইছে। কিন্তু এখনতো তুমি জানলেই।

মিষ্টিঃ আব্বু আমি বিয়ে করবো না।

আম্মু এসে-

আম্মুঃ তা বললে কি হয় মা। প্রত্যেক মেয়েকেই একদিন না একদিন বিয়ে করতেই হবে। শ্বশুর বাড়ি যেতেই হয়। না করলে কিভাবে হবে তুই বল মা।

মিষ্টিঃ কিন্তু এখন আমি বিয়ে করতে চাই না, আম্মু।

আম্মুঃ এখন করলেও বিয়ে করবি, আর দুইদিন পর করলেও বিয়েই করবি। তাহলে দেরী করে লাভ কি? ভালো পাত্র যখন পেয়েছি তখন তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাওয়াটাই শ্রেয়।

আব্বুঃ হুম মামৎ, তুমি আর কোন না করবে না। আমাদেরও ছেলেটাকে খুব পছন্দ হয়েছে। তোমার সাথে খুব ভালো মানাবে। তুমি চাইলে আমি তোমাকে ছেলেটার ছবি দেখাতে পারি।

মিষ্টিঃ তার দরকার নেই আব্বু। তোমাদের যাকে পছন্দ আমি তাকেই বিয়ে করবো। (রোদ স্যারও তো বিয়ে করে নিচ্ছেন। তাহলে আমার আর বাধা কিসের। উনিতো আমাকে ভালোও বাসেনা। তাহলে আমি কার জন্য অপেক্ষা করবো। এর থেকে আব্বু আম্মুর কথাতেই আমি বিয়ে করবো। রোদ স্যার বিয়ে করতে পারলে আমি পারবো না কেনো। আমিও পারবো। মনে মনে)

আব্বুঃ ঠিক আছে। তাহলে তুমি বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নাও। কেমন! (খুশি হয়ে)

এরপর আব্বু আম্মু চলে যায়। আর আমি ওয়াশরুমে গিয়ে জোরে জোরে কান্না করে দিই।

মিষ্টির না বলা কষ্টের কান্না

রোদকে ছেড়ে কিভাবে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করবো। আমিতো রোদকে খুব ভালোবাসি, খুব। রোদ স্যারকি আমাকে একটুও বুঝবে না। উনি আমাকে ছেড়ে সিমাকে কিভাবে বিয়ে করতে পারবে। আমার ও তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। স্যার আর কবে আসবে আমাকে ভালোবাসি কথাটা বলতে। আমি যে অন্য কারো হয়ে যাচ্ছি। তখনতো আমি চাইলেও স্যারের কাছে আসতে পারবো না। তখন আমি সম্পূর্ণ অন্যকারো হয়ে যাবো। আমিতো রোদ স্যার ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবো না। থাকতে পারবোনা আমি উনাকে ছাড়া।

এক ঘন্টা পর আমি শাওয়ার নিয়ে বের হই। মাথা প্রচুর ব্যথা করছিলো তাই এসে আবার শুয়ে পরি। আব্বু আম্মু আবার ডেকে গিয়েছিলো কিন্তু আমার একদম খেতে ইচ্ছা করছিলো না। তাই আব্বু আম্মু অনেক জোরাজুরি করার পরও আমি না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

দুই সপ্তাহ পর-

এই দুই সপ্তাহ আমি কান্না করেই কাটিয়েছি। খাওয়া-দাওয়া ও প্রায় ছেড়ে দিয়েছি। একটাই কারণ রোদ আমাকে ভালোবাসে না। ও সিমাকে ভালোবাসত। আমাকে ভালোবাসলে ও আমাকে ছেড়ে ওই সিমাকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারতো না। হয়তো আমিই ভুল ভেবেছিলাম। উনি আমাকে কখনো ভালোই বাসেনি। তাই আমিও না হয় আব্বু আম্মুর খুশির জন্য তাদের পচ্ছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করলাম। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে মুনর ডাকে ঘুম ভাঙে।

মুনঃ এই মিষ্টি উঠনা তাড়াতাড়ি।

মিষ্টিঃ (চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি মুন) ও তুই।

মুনঃ হুম, আমি।

মিষ্টিঃ এতো সকালে, তুই।

মুনঃ হ্যা, আমি। কি হইছে তোর? এই কয়দিন তুই ভার্সিটি আসিসনি কেনো?

মিষ্টিঃ এমনি। ভালো লাগেনি, তাই। কিন্তু তুই এতো সকালে আসলি যে।

মুনঃ কারণ আছে। এ মা, তুই তোর কি হাল করছিস? চোখ-মুখ ফুলে কি অবস্থা হইছে তোর? সারারাত কাঁদছিস, তাই না।

মিষ্টিঃ নাহ।

মুনঃ মিথ্যা বলবি না আমাকে তুই।

আজ মিষ্টির গায়ে হলুদ

মিষ্টি কিছুক্ষণ নিরবে থেকে বলে- মিথ্যা বলবো কেনো? আমি সত্যি কান্না করিনি। কান্না করবো কেনো আমি। কিসের জন্য কান্না করবো বল। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তাই হয়তো এমন দেখাচ্ছে।

মুনঃ আমাকে অন্তত বুঝাতে আসিস না।

মিষ্টিঃ তাহলে তুই যা বুঝিস।

মুনঃ আচ্ছা উঠ ফ্রেশ হয়ে নে। আজকে কি তা ভুলে গেছিস, তুই?

মিষ্টিঃ আজকে কি?

মুনঃ মানেহ, আজকে না তোর হলুদ। আর তুই ভুলে গেছিস।

মিষ্টিঃ জানিই নাতো আবার ভুলবো। হাহ্।

মুনঃ জানিস না মানে?

মিষ্টিঃ মানে জানতে চেষ্টা করিনি।

মুনঃ আচ্ছা, ঠিক আছে। এখন জেনে নে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হ। তারপর তো আবার তোকে সাজতে হবে। সন্ধ্যায় হলুদ অনুষ্ঠান। আজকে সারাদিন আমি তোর সাথেই থাকবো। আমরা অনেক সাজবো কেমন।

মিষ্টিঃ তুই জানিস না। আমি বিয়ে করতে চাইনা। আর আমি কেনো বিয়ে করতে চাইনি তাও তুই খুব ভালো করেই জানিস। তাহলে এসব বলছিস কেনো তুই?

মুনঃ হুম, জানি। কিন্তু রোদ স্যারের কথা চিন্তা করে এখন আর কি হবে। উনিতো সিমাকে বিয়ে করছে। তাই তুই ওইসব ভুলে গিয়ে নতুন করে আবার সব শুরু কর। দেখবি সবটা ভালো হবে।

মিষ্টিঃ উনাকে আমি ভুলতে পারছি না। আমি সত্যি উনাকে খুব ভালোবাসি।

মুনঃ আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন যা তুই ফ্রেশ হয়ে আস।

মিষ্টিঃ হুম।

সিমু ও মিষ্টি

তারপর আমি ফ্রেশ হয়ে নেই। তারপর আমি আর মুন দুইজনই নাশতা করে নেই। নাশতা শেষ করে দেখি শিমু ও চলে আসছে।

মুনঃ শিমু, তুমিও চলে আসছো। তাহলে আমরা অনেক মজা করতে পারবো, তাই না।

শিমুঃ হুম, মিষ্টি আপুর বিয়ে আর আমি আসবো না।

মুনঃ হুম, দেখো তোমার মিষ্টি আপু মন খারাপ করে বসে আছে। কিছু বলো ওকে।

শিমুঃ মিষ্টি আপু, তোমার কি হইছে হুম? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? কতো শুকিয়ে গেছো তুমি? খাওয়া-দাওয়া করো না তুমি?

মিষ্টিঃ হুম করি, আর আমি কই শুকিয়েছি। আমি কি আগে হাতি ছিলাম নাকি যে এখন আমি শুকিয়ে গেছি, হুম।

শিমুঃ কি বলো তুমি এসব, হ্যা? আপু তুমি মন খারাপ করো না। আসলে আমারো যখন বিয়ে হচ্ছিলো তখন আমারো অনেক ভয়, মন খারাপ হয়েছিলো। কিন্তু এখন দেখো আমার মন খারাপ একটুও হয় না।

মিষ্টিঃ তুমিতো খুব পেকে গেছো? হুম।

শিমুঃ তো পাকবো না। আমার বিয়ে হয়ে গেছে কিন্তু! হুম।

মিষ্টিঃ ওরে বাবারে! সত্যিতো আমাদের শিমুর বিয়ে হয়ে গেছে।

শিমুঃ মজা করোনা, প্লিজ আপু।

মিষ্টিঃ হিহিহি, আচ্ছা যাও করবো না মজা। আচ্ছা, তোমার বর কোথায়?

শিমুঃ ও ওতো আসলে ওর একটা কাজ পড়ে গেছে তাই ও আসেনি। কিন্তু ও কালকে আসবে।

মিষ্টিঃ ওহ!

শিমুঃ হুম।

অবশেষে মিষ্টির বিয়ে

তারপর আমরা আরো কিছুক্ষণ গল্প করে আমাকে নিয়ে ওরা পার্লারে চলে যায়। ওখান থেকে আমরা সেজে গুজে বাড়ি চলে আসি। এরপর আমাকে স্টেজে বসিয়ে দেয়। কিচ্ছুক্ষণ পর রিফাত আসে।

রিফাতঃ মিষ্টিই।

মিষ্টিঃ তুমি এখন আসছো। সারাদিন কই ছিলা তুমি? আসো নাই কেনো সারাদিন হুম।

রিফাতঃ আগেই আসতাম। আসলে ওখানে একটু কাজ ছিলো। তাই দেরী হয়ে গেলো।

মিষ্টিঃ ওখানে মানে।

রিফাতঃ তুমি জানো না, আজকে তো রোদেরও গায়ে হলুদ।

মিষ্টিঃ ওহ!

এরপর আমার গায়ে হলুদ খুব ধুমধাম করে হয়ে গেলো। পরেরদিন ও আমাকে সাজানো হয়েছে বাড়িতেই খুব সুন্দর করে। আজকে আমার আরো বেশি কষ্ট লাগছে। একটা অজানা মানুষের সাথে আমার বিয়ে হয়ে যাবে। আজকে থেকে রোদ নামে কেউ আমার জিবনে থাকবে না। আর কিছুক্ষণ পর আমি অন্য কারো বউ হয়ে যাবো। আবার রোদও অন্য কারো হয়ে যাবে। তাও আবার আজকের দিনেই। সত্যি সব অদ্ভুত। যাকে ভালোবাসি তার আর আমার একই দিনে বিয়ে হচ্ছে শুধু সেই মানুষটার সাথেই হচ্ছে না।

একটু পর আমার বিয়েটা হয়ে যায়। আমি বরের নামটাও শুনিনি। শুধু চোখ বন্ধ করে কবুলটা বলে দিয়েছি।

তারপর যখন আমাকে বিদায় দেওয়া হয় তখন আমি নিচের দিকে তাকিয়েই কাঁদছিলাম। তখন খুব পরিচিত কারো গলা শুনতে পাই। সেই গলাটা আমার খুব কাছে এসে আমার কানে কানে আস্তে করে বলে,

– কাঁদতে কাঁদতে তো চোখের কাজলের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছো তুমি?

আমি গলাটা শুনে তাড়াতাড়ি তার দিকে তাকিয়ে দেখি আর কেউ না, রোদ।

মিষ্টিঃ আপনিই..(অবাক হয়ে)।

রোদঃ জি, জনাবা। চলবে…..

পরের পর্ব- মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ১৮ | স্যারের সাথে প্রেম

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *