মেঘ মিলন – পড় ভালোবাসার গল্প

মেঘ মিলন – পড় ভালোবাসার গল্প: রামিমের মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। সহজ সরল এই মেয়েটার মাথায় এত প্যাচ কোথা থেকে আসলো? রামিম নিজেও বুঝতে পারেনি এতবড় একটা মিথ্যা আদিরা বলতে পারবে।


পর্ব ১

ভাই আপনি বাসাটা ছেড়ে দিন, আপনার মেয়েটা আমার হবু বউকে আম্মু বলে ডাকে আর আদিরার ও বেশ পরিবর্তন দেখছি কিছুদিন যাবত। আমি চাইনা কোনো ঝামেলা সৃষ্টি হোক, আপনি বরং নতুন বাসা দেখুন। ১০ দিনের মধ্যে বাসাটা ছেড়ে দিবেন।
বেশ কড়া গলায়ই কথাগুলা বলে চলে গেলো মাহমুদ।

রামিম মাথা নিচু করে শুনলো সব, মেয়েটাকে এতবার বোঝানোর পরও কেনো যে আদিরাকে আম্মু ডাকে সেটা বুঝে উঠতে পারেনা রামিম।
তিন্নির সাথে তো আদিরার কোনো মিল নেই, না চেহারায় না আচরনে আর তিন বছরের মেয়েটাকে কিভাবেই বা বুঝাবে রামিম।
এবার বাসাটা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

আদিরা মেয়েটাও সুযোগ পেলেই উপরতলায় চলে আসে। আনভিকে নিয়ে তার যত ব্যস্ততা। অথচ কিছুদিন বাদেই তার বিয়ে মাহমুদের সাথে।
মাহমুদ এই বাসার মালিকের ছেলে, একমাত্র ছেলে।
বাবার টাকায় ফুটানি করে বেশ ভালোই কাটছে তার, ভদ্র সহজ সরল আর বেশ অমায়িক ছেলেটা। মাঝে মাঝে রেগে যায় বটে তবে সে রাগ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়না, যাকে বলে অস্থায়ী রাগ।

সোজা কথায় বললে ছেলেটা বেশ ভালো।
তার সাথে বিয়ে যে মেয়েটার তার নাম আদিরা।
স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে, এটা তার ফুপির বাসা। এখানেই থাকে সে। বাবা মা সিলেট থাকে। এসেছিলো ভার্সিটিতে পড়তে তবে পড়ালেখা শেষ হতে না হতেই মাহমুদের মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। হার্টের রুগি তিনি। তিনি বলেছেন ছেলের বিয়ে দিতে।
আদিরাকে ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছেন তিনি।

সুন্দরী, সুশীল, ভদ্র আর পড়ালেখা জানা এমন মেয়ে তিনি আর পাবেন না।
আদিরাও খুশিমনেই বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।
মাহমুদ ছেলেটা কোনোদিক দিয়েই খারাপ নয় তবে প্রেম ভালোবাসা কোনোটাই হয়ে উঠেনি মাহমুদের প্রতি। ছেলেটা কেমন যেনো দুরে দুরে থাকে আদিরার থেকে।
তবুও আদিরার আপত্তি নেই।

রামিম, এ বাসার ভাড়াটিয়া। তিনতলা বাসার ওপরের তলায় থাকে সে আর তার মেয়ে।
বয়স ২৯ বছর। এই বয়সে বিয়ে করে বাচ্চার বাবা হয়ে গেছে তবে কষ্টের বিষয় হলো তার বউ (তিন্নি) মারা গেছে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময়।

বিয়ের আগে প্রেম রামিমও কখনো করেনি তবে তিন্নি মেয়েটাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো সে।
মেয়ের নাম আনভি। তিন্নিরই পছন্দ করা নাম। বিয়ের পর দুজন গল্প করতো মেয়েকে নিয়ে যদিও কেউই জানতো না মেয়ে হবে নাকি ছেলে, তবে তিন্নি বেশ জোর গলায়ই বলতো,
~ তুমি দেখে নিয়ো আমাদের মেয়েই হবে আর নাম রাখবো আনভি।

মেয়েটা জন্মানোর পর রামিম প্রথম চুমুটা তিন্নির কপালে দিয়েছিলো তারপর বলেছিলো,
তোমার মেয়েই হয়েছে তিন্নি, দেখো আনভি কাঁদছে তুমি উঠবেনা?
কিছুদিন অস্বাভাবিক আচরন করতো রামিম আস্তে আস্তে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

এতদিন বাবা মা এর সাথে থাকলেও চাকরির জন্য রামিম ঢাকা চলে আসে। মেয়েটাকে রেখে আসতে ইচ্ছা হয়না তার, তাই সাথে করেই নিয়ে আসা।
দুমাস হলো এই বাসায় উঠেছে রামিম। এই দুই মাসে পরিচয় হয়েছে অনেক মানুষের সাথে তাদের মধ্যে একজন আদিরা।
মেয়েটা আনভিকে দেখে দৌড়ে আসে, কোলে তুলে নেয় মেয়েটাকে।

রামিম অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে, কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকায় চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তার। আনভি মেয়েটাও সেদিন মা বলে ডেকে উঠে আদিরাকে। আদিরা এমনভাবে চুমু খায় আনভিকে যেনো তার নিজের সন্তান। তিন্নি থাকলেও হয়তো এভাবে আদর করতো।

এরপর থেকে প্রতিদিন আদিরার কাছে আনভিকে রেখে অফিসে যায় রামিম।
বিকেলে অফিস থেকে রামিম ফিরলে আদিরার প্রধান কাজ হয় দুকাপ কফি বানিয়ে আনভি সারাদিন কি কি করলো সেগুলো বলা।

আধো আধো কথা বলতে শেখা আনভির কথাগুলা যেনো আদিরা মুখস্থ করে রাখে। কফির কাপে চুমুক দিয়ে রামিম দেখে মেয়েটাকে।
ভালোলাগে মেয়েটাকে, প্রেমে পড়তে ইচ্ছা হয় রামিমের তবে বিবাবিত পুরুষের প্রেমে পড়া বারণ।

কথা শেষ হলে সারাদিনের বেতন হিসেবে একটা চকলেট নিয়ে বিদায় হয় আদিরা।
আদিরার কাছে আনভিকে রেখে যেনো নিশ্চিন্ত থাকে রামিম।
ঢাকা শহরের বুয়ারা যেমন হয় কে জানে কখন কি হয়ে যায়। হয়তো মেয়েটাকে বসিয়ে রেখে সে টিভি দেখতে ব্যস্ত হয়ে যাবে। ক্ষুদায় মেয়েটা চিৎকার করে কাঁদলে হয়তো কপট রাগ দেখিয়ে চড় থাপ্পড় মেরে বসবে। আদিরার কাছে যতক্ষণ থাকে মেয়েটা হাসিখুশিই থাকে যেনো নিজের মায়ের কাছেই আছে।

ছুটির দিনগুলাতে আদিরা আর রামিমের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয় আনভি কার কাছে যাবে। সবসময় আদিরাই জিতে যায়। রামিমের মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় আদিরাকে বিয়ে করতে তবে সে উপায় নেই। সমাজও খারাপ বলবে আর আদিরাই বা কেনো মানবে বিবাহিত একজনকে বিয়ে করতে?

রামিমের চিন্তাভাবনা এবার দ্বিগুণ হয়ে যায়।
নতুন বাসা খুঁজতে হবে, বুয়া লাগবে আবার সবকিছু গোছগাছ করতেও বেশ সময় লেগে যাবে।
সবচেয়ে বড় চিন্তা হলো আনভি, মেয়েটা কি বুয়ার কাছে ভালো থাকবে? নাকি অনাদরে বড় হবে!

ছাদে এসে সিগারেট ধরায় রামিম। ঢাকা শহড়ের বিকেলটাও শান্ত হয়না, কোলাহল আর গাড়ির হর্নের শব্দে অশান্ত থাকে। তিন্নির কথা মনে পড়ে যায় রামিমের, তিন্নি থাকলে এভাবে মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতে হতোনা। মেয়েটা বাচ্চা দেখলেই দৌড়ে গিয়ে কোলে তুলে নিতো আর নিজের মেয়েকে আদর করার সুযোগটা সে পেলোনা।
দির্ঘশ্বাস ফেলে রামিম। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় নিজেও মরে যেতে তবে মেয়েটার জন্য মরতে পারেনা।
মেয়েটার কি হবে সেই চিন্তায়।

রামিম খেয়াল করেনি ওপাশে আদিরা দাড়িয়ে আছে।
আধ খাওয়া চায়ের কাপটা রামিমের দিকে এগিয়ে দেয় তিন্নি,
~ খাবেন?

রামিম হঠাৎ আদিরাকে দেখায় কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আজ প্রথমবারের মতো তিন্নিকে দেখতে পায় রামিম। কিন্তু কোথায় তো তিন্নির সাথে মিল নেই তবে কেনো আদিরাকে এমন লাগছে তার।
~ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু!
ঘোর কাটে রামিমের, আবার আদিরাকে দেখে সে, কই তিন্নি তো নেই!
~ আনভি কোথায়?
~ ঘুমাচ্ছে।

~ মেয়েটা যা দুষ্টু হয়েছে, ওর আম্মু নিশ্চয় খুব দুষ্টামি করতো তাইনা? আপনিতো শান্তশিষ্ট, নিজেকে ব্যক্ত করেন না মন খারাপ থাকলে ছাদে এসে সিগারেট টানেন। মেয়েটা আপনার মতো হয়নি।
গলাটা ধরে যায় রামিমের। উত্তর দেয়,
~ তিন্নির মতোই হয়েছে।

~ হুম আমিও সেটাই বলছিলাম। আপনাকে একটা সিক্রেট বলি?
~ বলুন।
~ আপনি সিগারেট খাওয়া না ছাড়লে আনভিকে আমি সিগারেট খাওয়া শিখাবো।
~ আপনি কিভাবে শেখাবেন? আপনি নিজে পারেন নাকি?
~ হ্যা পারি, দেখবেন?
~ দেখান দেখি।

রামিমের আধপোড়া সিগারেটে টান দিতেই কেঁশে উঠে আদিরা।
রামিম হাসি আঁটকাতে পারেনা। আদিরা রামিমকে হাসতে দেখে নিজেও হেসে উঠে।
রামিমের ইচ্ছা হয় মেয়েটাকে ভালোবাসি বলতে।
কেনো জানি সিগারেট খাওয়া এই ঠোঁটে গাঢ় একটা চুমু খেতে ইচ্ছা হয়।
নিজেকে সংযত করে রামিম। বিবাহিত পুরুষের প্রেমে পড়া বারণ।

রামিম দির্ঘশ্বাসটা চেপে রেখে বলে উঠে,
~ মাহমুদ ভাই বাসাটা ছেড়ে দিতে বলেছে, ১০ দিন পর নতুন বাসায় উঠতে হবে।
আদিরার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য অপেক্ষা করেনা রামিম।
এখানে থাকা কষ্টকর। মেয়েটার চোখ হয়তো পানিতে ছলছল করবে, রামিমের শ্বাস নেওয়া কষ্ট হয়ে যাবে।
হঠাৎ পেছন থেকে ডাকে আদিরা,


পর্ব 2

হঠাৎ পেছন থেকে ডাকে আদিরা। প্রশ্ন করার আগেই রামিম উত্তর দিয়ে দেয়।
~ মাহমুদ ভাই আপনাকে আর আমাকে নিয়ে কিছু ভুল ভেবেছেন তাই বাসা ছেড়ে দিতে বলেছেন।
~ আনভির কি হবে?
~ বুয়া রাখবো একটা বেশি, যতই হোক নিজের মেয়েকে তো আর অন্য কাওকে দিয়ে দিতে পারবোনা, তিন্নির শেষ স্মৃতি যে আনভি।

আদিরা এই প্রথমবার রামিমকে ব্যক্তিগত একটা প্রশ্ন করে বসে,
~ বিয়ে করবেন না?
তিন শব্দের ছোট্ট একটা প্রশ্ন। তবে উত্তরটা ততটা সহজ নয়। দ্বিতীয় বিয়ে করাটা সত্যিই সহজ নয়, না এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। যদি এই প্রশ্নটাই আগে করা হতো যখন রামিম বিয়ে করেনি তখন হয়তো মুখে হাসি রেখে খুব সহজেই বলতো বিয়ে তো করতেই হবে। এখন ব্যাপারটা ভিন্ন, যদিও রামিম ছেলে তবুও কিছু জিনিস থাকে যেগুলা কাওকে বলা যায়না।

মেয়েটার জন্য হলেও হয়তো রামিমকে বিয়ে করতে হবে তবে জিনিসটা সহজ নয়। দ্বিতীয়বার বিয়ে করা কোনো লোক জোর খাটিয়ে বলতে পারবেনা যে তার বউ তার সৎছেলেকে বা সৎমেয়েকে তার আপন ছেলের মতোই ভালোবাসে।
তবুও অহরহ বিয়ে হচ্ছে, মানুষ দ্বিতীবার বিয়ে করছে, ভাগ্যক্রমে কিছু ছেলেমেয়ে আপন ছেলেমেয়ের মতোই ভালোবাসা পায়।

কয়জনই বা ছেলেমেয়ের কথা ভেবে বিয়ে করে? বেশিরভাগই তার চাহিদা মেটানোর জন্য বিয়ে করে। রাতে পাশে শুয়ে কেউ সঙ্গ দিক সেই আশায় বিয়ে করে। ছেলেমেয়ের নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য কয়জন বিয়ে করে? নিজের নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্যই বিয়ে করে। মেয়ে সুন্দরী বিয়ে করে ফেলে, দ্বিতীবার বিয়ে বলে কথা, সুন্দরী মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

আর ওদিকে নিজের ছেলেমেয়ে যে অনাদরে বড় হচ্ছে সেটা দেখেও না দেখার ভান করে থাকতে হয়।
মায়েরা নাকি সবচেয়ে বেশি কোমল হয়, তবে কেনো খাবার প্লেটে নিজের ছেলেকেই মাছের বড় টুকরাটা দেওয়া হয়?
এসব ভাবতে হয়, গভীরভাবে ভাবতে হয়। সেসব ভেবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত বারবার নাকোচ করে দেয় রামিম।
তিন্নির ডাকে ঘোর কাটে রামিমের,
~ শুনছেন?

~ জ্বি বলুন।
~ আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম একটা।
~ আমি কোনোদিন বিয়ে করতে পারবোনা।
~ কিন্তু কেনো? তিন্নির কথা ভেবে?

~ নাহ, আনভির কথা ভেবে। মেয়েটার নিঃসঙ্গতা কাটবে বটে তবে জানিনা তার মা কেমন হবে। যদি বাকি দশটা সৎমায়ের মতো হয়? যদি সেই অনাদরেই বড় হতে হয়? কি দরকার?
~ নিজের কথাটাও তো ভাবুন। বয়স কত হয়েছে আপনার?
~ দেখুন আদিরা, আপনি আমার চাইতে বয়সে ছোট। আর আপনি একটা প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে তবুও আপনি আমার ছোট। আমি চাইনা আপনার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে।

রামিম কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়না আদিরাকে।
ব্যাপারটাকে এখানেই শেষ করার দরকার ছিলো।
আনভিকে নিয়ে ভাবনাটা বাড়ছে, মেয়েটা কি কোনোদিন মায়ের আদর, ভালোবাসা কখনো পাবেনা?
যতই তিন বছর বয়স হোক তবুও তো সে ছোট। মায়ের চেয়ে আপন কেউ কি এই পৃথিবীতে আছে?

আদিরার সাথে যতক্ষণ সে থাকে নিজের মায়ের কাছে যতটা যত্নে থাকতো ঠিক ততটাই যত্নে থাকে সে।
হতে পারে রামিমের মনের ভুল,তবুও আদিরা মেয়েটা আনভিকে খুব যত্নে রাখে।
অফিস থেকে ফিরে কখনো মেয়েটাকে কাঁদতে দেখেনি রামিম, না দেখেছে কোনো অভিযোগ করতে।
রাত কাটে, সকাল হয়।

ঢাকা শহড়ে জানালা খুললে দমকা বাতাস আসেনা, আসে রাস্তার পাশে নর্দমার পঁচা দূর্গন্ধ।
এ শহড়ে শিমুল ফুল ফোটেনা। ছোট বাচ্চারা সকাল হলে লাল ফুল কুড়িয়ে ফ্রকে তুলেনা।
তৃলবে কেনো? শিমুল ফুলের কোনো গন্ধ নেই। শুধু লাল দেখতে, গাছে থাকলে ভালো লাগে। নিচে পড়লে সেটা দিয়ে কেও প্রেম নিবেদন করেনা। বরং আবর্জনা হিসেবে শুকানো হয় তারপর কোনো এক টোকাই এসে বস্তা ভর্তি করে নিয়ে যায়
দুবেলা রান্নার জ্বালানি হিসেবে।

দ্বিতীয় বিয়েও একই রকম।
না আছে সুগন্ধ না করে প্রেম নিবেদন।
শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে চালিয়ে দেওয়াটাই তখন অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
মেয়েটাকে খাওয়ানোর পর অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয় রামিম।

গেটে মাহমুদ ভাইয়ের সাথে দেখা। বাজারের ব্যাগ হাতে, ঘেমে একাকার হয়ে গেছে ছেলেটা।
পড়নে লুঙি আর হাফহাতা গেন্জি(টিশার্ট)।
সালাম দেয় মাহমুদ,
~ আসসালামু আলাইকুম।
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম।

~ ভালো আছেন রামিম ভাই?
~ এইতো আছি, আপনি কেমন আছেন?
~ আছি ভালো ভাই।
রামিম খেয়াল করে ছেলেটার সেই রাগ আর নেই।

মুখের সেই কঠিন ভাবটা গায়েব হয়ে গেছে, ছেলেটার রাগ অস্থায়ী।
~ কিছু মনে করিয়েন না রামিম ভাই, গতকাল মনে হয় আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আপনার যতদিন ইচ্ছা থাকুন এই বাসায় আমার কোনো সমস্যা নেই। এমনিতেও আর দুমাস পর বিয়ে।
~ আরে না না আমি কিছু মনে করিনি।
উত্তর দেয় রামিম।

~ আনভি কোথায়?
~ এইতো বাসায়।
~ আপনি অনুমতি দিলে আদিরা আর আনভিকে নিয়ে ঘুরতে যেতাম কোথাও।
~ সমস্যা নেই, তবে আইসক্রিম খাওয়াবেন না। মেয়েটা একদম মায়ের মতো হয়েছে আইসক্রিম খেলেই ঠান্ডা লেগে যাবে।
~ আচ্ছা,আমি আসি তবে আর ভাই কিছু মনে করিয়েন না।

রামিম মুচকি হেসে রাস্তায় বেরোয়। মানুষগুলা কত অদ্ভুত তাইনা?
গতকালই রেগে বাসা ছেড়ে দিতে বললো সকাল হতেই আবার থাকতে বললো।
প্রথমেই বলেছিলাম মাহমুদ ছেলেটা এমনি। হুটহাট রেগে যায়।

রামিম কিছুটা নিশ্চিত আদিরা মাহমুদকে কিছু বলেছে নয়তো এতটা বদলানো সম্ভবনা।যাই হোক বাসা খুঁজতে হবেনা নতুন করে। মেয়েটাকে নিয়েও নিশ্চিন্ত রামিম। আদিরার কাছেই থাকবে।
সন্ধায় বৃষ্টি নামে। রামিমের বৃষ্টি পছন্দ না। ঢাকা শহড়ে বৃষ্টি মানে রাস্তায় হাটু পর্যন্ত পানি।
ঢাকা শহড়টা রামিমের মতো। বৃষ্টির ফোটাগুলো কষ্ট। মেইন রোডে হাটৃ পর্যন্ত পানি আটকা পড়লেও বাইরে বেরোনোর রাস্তা নেই। সেই ঢাকা শহড়েই মিশে যেতে হবে। রামিমের কষ্টগুলাও তেমনি। বাইরে বের করে দেওয়ার উপায় নেই। আপনাতেই মিশে যেতে হবে।


পর্ব ৩

দরজায় টোকা পড়ার আওয়াজ পাওয়া যায়।
বন্ধ দরজার ওপাশে কে আছে সেটা বুঝতে পারেনা রামিম।

দরজা খুলে ভিতরে চলে রামিম, আদিরা আর মাহমুদ ভাই আনভিকে কোলে নিয়ে ঘরে ঢুকে।
চকলেটে কামড় দিতে দিতে আদিরা বলে,
~ আব্বুকে বলো কোথায় কোথায় ঘুরেছো আজ।
বলেই মাহমুদ আর আদিরা মুচকি হাসে।

অপেক্ষায় থাকে রামিম, আনভি বলবে কোথায় ঘুরেছে।
তবে আনভির হাসিমাখা মুখটা হঠাৎই ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
কথা বলেনা আনভি, মুড নেই বলার এমন একটা ভাব।

রামিমকে খাবারের প্যাকেটটা হাতে দিয়ে আদিরা বলে,
~ আজ আর ঠান্ডা খাবার খেতে হবেনা, এটা খেয়ে নিয়েন রাতে।
রামিম মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।

মাহমুদ ভাই দরজার দিকে পা বাড়ায়, সঙ্গ দেয় আদিরা।
দুজনকে বেশ মানিয়েছে, এখানে রামিম কেনো ঝামেলা বাধাবে?

রামিম মনে মনে ঠিক করে নেয়, এমন কিছু সে করবেনা যাতে মাহমুদ আর আদিরা কোনোভাবে কষ্ট পায়।
কদিন গেলেই মেয়েটা বুঝতে শিখে যাবে, তখন আর সমস্যা হবেনা।
বর্ষাকাল চলে এসেছে।

রোজ সন্ধায় বৃষ্টি নামে। সারাদিন ভ্যাঁপসা গরমে সিদ্ধ হয়ে সন্ধায় ঠান্ডা বাতাসে যেনো প্রান জুড়িয়ে যায় রামিমের।
বৃষ্টি রামিমের পছন্দ নয় তবে বৃষ্টির পর ঠান্ডা বাতাসটা ইদানিং ভালো লাগতে শুরু করেছে।
মাহমুদ ছেলেটা ইদানিং ভিষন ব্যস্ত, বিয়ের সব ব্যাবস্থা তাকেই করতে হচ্ছে।

বাবার একমাত্র ছেলে, নিজের বিয়ের কাজও নিজেকেই করতে হচ্ছে তার।
আদিরাকে নিয়ে নাকি তার অভিযোগ বেড়ে গেছে। আদিরা নাকি বিয়ের কোনো কাজ করছেনা, কেনাকাটা করছেনা।
কোথাও যাচ্ছেওনা কারোর সাথে, সবসময় শুধু আনভিকে নিয়ে ব্যস্ত।
মাহমুদ ছেলেটা অকপটে বলে দিলো রামিমকে সব কথা।

নিচে আদিরা, আনভির হাসির আওয়াজ পাওয়া যায়।
খিলখিল করে হাসে আদিরা, বিল্ডিংটা মনে হয় কেঁপে উঠেছে,সাথে রামিমের হ্রদয়ও। কে জানে হয়তো মাহমুদের একই অবস্থা। তবে মাহমুদের হ্রদয় কম্পিত হওয়াটা স্বাভাবিক, রামিমের কেনো কাঁপবে?
আদিরা তো কেউ না রামিমের।

২৩ দিন বাকি বিয়ের, বড় প্রস্তুতি। বড় পরিবারের বড় ছেলের বিয়ে। আত্মিয়~স্বজনের অভাব নেই।
মাহমুদ ছেলেটা ইঙ্গিতে আবারো বুঝিয়ে দেয় ~ বাসাটা নিজ ইচ্ছায় ছেড়ে দিন রামিম ভাই।

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার পর মাহমুদের আওয়াজ পাওয়া যায়,
~ কি এই মেয়েটাকে নিয়ে পড়ে আছো আদিরা? কদিন পর তোমার বিয়ে একটু নিজের ব্যাপারেও ভাবো।
~ এরকম রিয়েক্ট করছো কেনো? আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি? বিয়েটা তো তোমাকেই করছি তাইনা?
~ হ্যা আমাকেই করছো তবে মনে হচ্ছে মনটা অন্য কাওকে দিয়ে দিয়েছো। বউ মরে যাওয়া লোকটার ঘরে এত কেনো থাকতে হবে তোমার?

চড়ের একটা আওয়াজ পাওয়া যায়। কে কাকে মারলো বুঝতে পারেনা রামিম তবে এবার বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে মাহমুদ ছেলেটা মোটেও আদিরার এই বাসায় আসাটা পছন্দ করছেনা।
নিচে নামেনা রামিম। এই সময়ে নিচে নামলে হয়তো কারো চোখে পানি দেখতে পাওয়া যাবে, কেউবা রাগ লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করবে।

দির্ঘশ্বাস ফেলে আনমনে রামিম বলে উঠে, বাসাটা ছেড়ে দিতে হবে।
কয়েক মিনিট পর নিচে নামে রামিম। তিন্নির মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।
নাহ কোথাও চড়ের কোনো চিহ্ন নেই, না আছে কাঁন্নার ছাপ।
~ আদিরা বসুন একটু কথা আছে।
~ জ্বি বলুন।

~ মাহমুদ ভাইয়ের সাথে ওরকম আচরন করাটা আপনার উচিত হয়নি, মাফ চেয়ে নিবেন আর আনভির কাছে কম আসিয়েন। মেয়েটাও আপনার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছে।
~ আর আপনি?

~ মানে? বুঝলাম না ঠিক।
~ কিছুনা, রান্নাঘরে খাবার রাখা আছে খেয়ে নিয়েন। আমি আসি।

রামিম অবুঝ নয়, আদিরা যে শুধু আনভির জন্য সারাদিন এখানে পড়ে থাকে সেটা যেমন সত্যি তেমনই দিনশেষে রামিমের সাথে কিছুটা কথা বলা, দেখা হওয়ার জন্যও এ বাসায় থাকে আদিরা।
আনভির সাথে রামিমের দুরত্ব তৈরি হচ্ছে, সারাক্ষণ শুধু আম্মু আর আম্মু। দিন শেষে ঠিকমতো কথা বলার সুযোগটাও পায়না রামিম। মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়ে। শুক্রবার বাদে সপ্তাহের বাকি দিনগুলা ঠিকমতো খেয়ালও রাখতে পারেনা রামিম।
মেয়েটা আদিরার কাছে ভালো থাকবে আর আদিরা মাহমুদের কাছে।

যদি তা নাও হয়। আদিরার পরিবার কেনো মানবে একটা বিবাহিত ছেলের কাছে নিজের অবিবাহিত শিক্ষিত সুন্দরী মেয়েটাকে বিয়ে দিতে?
কেনো দুইটা পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করবে তারা?

দুদিন আদিরা আসেনি আনভির কাছে। মেয়েটা কিছু খাচ্ছেনা, বারবার আদিরার কথা বলছে।
মাসের শেষ আজ। নতুন বাসা দেখা হয়ে গেছে, আগামিকাল চলে যাবে।
দাঁতে দাঁত চেপে মেয়েটাকে রাগ দেখায় রামিম। ভয় পেয়ে, কাঁন্না করে ঘুমিয়ে যায় আনভি।
দিনশেষে আনভি ঘুমালে রামিম একা। মেয়েটাকে কিভাবে বুঝাবে সে এই সম্পর্কটা কেউ মানবেনা।

পরেরদিন,
শুক্রবার। মাহমুদকে ভাড়া দিতে গিয়ে আদিরার কাছে মেয়েকে রেখে যায় রামিম।
বাসার জিনিসপত্র নামানো হয়েছে, গাড়িতে উঠিয়ে নতুন বাসায় নেওয়া হচ্ছে।
এ বাসা থেকে কাছেই, পনের কি আঠারোটা বিল্ডিং পড়েই দোতলা বাসার ওপরের ফ্লাটে।
কাছেই অফিস সেজন্য দুরে বাসা নেয়না রামিম।

মাহমুদ কয়েকবার মিথ্যে আটকানোর চেষ্টা করেছিলো বটে। তবে রামিম সেকথা শোনেনি।
বাসাটা না ছেড়ে দিলে হয়তো কয়েকটা জিবন ভুল পথে পা বাড়াবে।
সবকিছু নিয়ে গোছাতে গোছাতে বিকেল হয়ে যায়।

সন্ধার পর আনভিকে আনতে যায় রামিম। মাহমুদের মা বলে আদিরার সাথে ছাদে গেছে।
পরিচিত বাসায় এই প্রথমবার ছাদে যেতে দ্বিধাবোধ করছে রামিম। এই প্রথমবার মনে হচ্ছে কে কি ভাববে।
আনভিকে ঘুম পাড়িয়ে কোলে নিয়ে হাটছে আদিরা, শেষ সিঁড়িটায় দাড়িয়ে রামিম দেখে ঘুমন্ত আনভিকে কয়েকবার চুম্বন করে আদিরা। হঠাৎ থমকে দাড়ায় মেয়েটা। ছাদে এনার্জি বাল্বের আলোয় কারো ছাঁয়া থেকে দাড়িয়ে পড়ে।

মুখটা পরিষ্কার হতেই জিজ্ঞেস করে,
~ কখন এসেছেন?
~ এইমাত্র।
~ চা খাবেন?

~ নাহ, আজ সময় নেই।
~ বসুন, আর হয়তো সন্ধার পর এভাবে চা খেতে বলবোনা।
আনভিকে রামিমের কাছে দিয়ে চা বানাতে চলে যায় আদিরা।

মেয়েটার আচরন বেশ ভাবাচ্ছে রামিমকে। তবে শেষ সিদ্ধান্ত এটাই, নিজে থেকে কিছু প্রকাশ করবেনা।
এ সমাজে কেউ মেনে নিবেনা, বরং কটু কথা শুনতে হবে, মান~সম্মানে টান পড়বে।
কয়েকমিনিট পর দু কাপ চা হাতে খুব সাবধানে ছাদে আসে আদিরা।
ছাদের গেটটা লক করে দেয় রামিমকে চা দিয়ে।

~ কোন বাসায় উঠলেন?
~ মোস্তফা সুফিয়ান।
আদিরা শ্লান হেসে বলে,
~ ওই টাকাওয়ালা ভুঁড়িমোটা লোকটা?
~ হুম।

~ ভাড়া কত?
~ ৮ হাজার।
~ এখানে ৬ হাজার ছিলো।
~ বুয়ার বেতন কত?
~ দুজন মিলে ৮৫০০।

~ এখানে একজন লাগতো।
~ আনভি কার কাছে থাকবে?
~ বুয়ার কাছে।
~ সে যত্ন নিবে ওর?
~ নিবে।

~ সন্ধার পর চা বানিয়ে খাওয়াবে আপনাকে?
~ বুয়া বিকেলে চলে যাবে।
~ এখানেই থেকে যেতে পারতেন।
~ কদিন পর আপনার বিয়ে।
~ একটা কথা বলবো?
~ বলুন।

~ আপনি বিয়ে করবেন আমাকে? অন্তত আনভির জন্য হলেও।
মেয়েটার মুখের দিকে তাকায় রামিম।
উত্তরের অপেক্ষায় একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে মেয়েটা।
আজ না বললে হয়তো আর কখনো বলা হবেনা।

পর্ব ৪

সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়িয়ে আদিরার হাত স্পর্শ করে রামিম।
~ আপনাকে যে আমি পছন্দ করিনা সেটা কিন্তু না, হয়তো সেটা ভালোবাসার পর্যায়েও পৌছে গেছে। আপনি কি ভাববেন জানিনা তবে সত্যি বলতে আপনি আমি রাজি থাকলেও আর কেউ মেনে নিবেনা এই সম্পর্ক। আর যদি বলেন পালানোর কথা, তবে আমি বলবো পালিয়ে যাওয়া সম্ভবনা। যে মেয়েটার জন্য পালিয়ে যাবো সেই মেয়েটারই ক্ষতি হবে। আপনি বুঝতে পারছেন নিশ্চয় আমি কি বলতে চাচ্ছি?

একদমে কথাগুলা বলে দির্ঘশ্বাস ফেলে রামিম।
আদিরার মুখে চিন্তার কোনো ছাঁপ নেই। বরং হাসির রেখাটা ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে। একটা সময় সকল কিছু উপেক্ষা করে রামিমের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আদিরা মেয়েটা।
রামিম কিছুটা ভিমড়ি খেয়ে যায়।

ভিমরি খাওয়ারই কথা, মেয়েটা কি বুঝলো কে জানে!
~ আপনি কি বুঝতে পেরেছেন আমি কি বলেছি? নাকি বুঝিয়ে বলবো?
~ পরিবারকে আমি বুঝাবো, তারা আগামিকাল আসবে এখানে।

~ আদিরা এগুলা পাগলামী ছাড়া আর কিছু নয়, আমি আসছি।
~ কাল আরেকবার আসবেন, আমি অপেক্ষা করবো।
ছাদের গেটটা খুলতেই মাহমুদের গোলগাল চেহারাটা দেখতে পায় রামিম।

রাগে দাঁত কড়মড় করে উঠে মাহমুদ। রামিম ভয় পায়না, ছেলেটাকে রাগলর ভয়ংকর লাগেনা বরং হাসি পায়। রামিম হো হো করে হেসে উঠে। মাহমুদ ছেলেটা বিচলিত হয়, এবার রাগের বদলে মুখটা চুপসাতে শুরু করে।
ছেলেটার কানের কাছে এখন যদি জোরে শব্দ করা যায় তবে নিশ্চিত ছেলেটা দৌড় দিবে। তারাতারি দৌড়াতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পরেও যেতে পারে।

তবে সেরকম কিছু হয়না।
আসি মাহমুদ ভাই, ভালো থাকবেন। এখানেই সমাপ্তি হয় সেখানকার কথোপকথন।
নিচে নামতে নামতে আবারো মাহমুদের উচ্চস্বর শুনতে পায় রামিম।
স্বাভাবিক ব্যাপার। যার সাথে দুদিন পর বিয়ে তাকে রেখে আরেকটা ছেলেকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াটা মনে হয়না খুব ভালো একটি কাজ।

পরের দিন যাওয়ার কথা রামিমের, অথচ তিনদিন কেটে গেছে কোনো খোঁজ নেই তার।
তিন্নি ভাবে একবার কি দেখে আসবো নতুন বাসায়?
এত ভাবাভাবির কিছু নেই, আমি যাবো।

সকাল ৫ টা। এত সকালে কারো জেগে থাকার কথা নয়, স্বভাবতই গেটের দাড়োয়ান ঘুমুচ্ছে।
সারারাত পাহাড়া দিয়ে সকাল হলে ঘুমিয়ে পড়াটা এদের স্বভাব।
ভিতরে ঢুকে আদিরা! দোতলার সিঁড়িতে কেউ একজন বসে আছে, মুখ দেখা যাচ্ছেনা। আদিরা গুরুত্ব দেয়না, নক করে রামিমের দরজায়।

আদিরার ইচ্ছে হচ্ছে দেয়ালের বাইরে থেকেই রামিমকে দেখতে।
পাথরের মতো শক্ত ট্রান্সপারেন্ট কাচ থাকলে ভালো হতো। দেয়ালটা ওই কাচ দিয়ে তৈরি হলে বাইরে থেকেই তিন্নি রামিমকে দেখতে পেতো।

দরজা খুলে রামিম আবার বিছানার দিকে পা বাড়ায়, রামিমের ধারনা বুয়া এসেছে।
আদিরা অবাক হয়, রামিম তাকালোও না একবার?
~ আপনি আসলেন না কেনো?

রামিম পেছনে তাকায়, বিচলিত হয়না। যেনো মনে মনে আদিরাকেই ভেবেছিলো সে।
~ আপনিতো এসেছেন।
~ আনভি কোথায়?
~ ঘুমাচ্ছে।

~ আজ সারাদিন আমি আপনার সাথে কাটাতে চাই।
~ আমাকে অফিসে যেতে হবে।
~ আজ যাবেন না, আমি কাল সিলেট চলে যাচ্ছি।
~ হঠাৎ সিলেট কেনো?

~ যাওয়ার আগে বলে যাবো,সারাদিন আমার সাথে থাকবেন?
~ আচ্ছা।

দরজায় আবার শব্দ হয়। আদিরা এগিয়ে যায়। বুয়া এসেছে।
দুর থেকে রামিম আন্দাজ করে আদিরা বুয়াকে চলে যেতে বলছে।
ঘটনা সত্যি, বুয়া চলে গেলো। আদিরা রুম গুছিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলো।
এমনভাবে কাজগুলো করছে যেনো নিজেরই সংসার।

এই প্রথমবার রামিমও অনুভব করলো তিন্নি এসেছে বাসায়, আদিরার রুপে।
এতদিন সে দেখতে পায়নি, আনভি পেয়েছে। আজ রামিমও দেখতে পেলো।
ভাবনাগুলো ঝাপসা হয়ে আসে, আদিরা তার নয় ~ মাহমুদের।
মাহমুদ ছেলেটা ভাগ্যবান বটে।

এককাপ চা ঝটপট রামিমের হাতে দিয়ে আবার রান্নাঘরে ছুটে যায় আদিরা।
মেয়েটা আজ ব্যস্ত,ভিষন ব্যস্ত, প্রচন্ড রকমের ব্যস্ত নয়। তিনটা প্রচন্ড ব্যাবহার করলে যেমন প্রচন্ড প্রচন্ড প্রচন্ড ব্যস্ত হয়, ঠিক তেমন ব্যস্ত আদিরা।
একবার এদিক আসছে আরেকবার ওদিকে ছুটে যাচ্ছে।

রামিম বুঝতে পারছেনা মেয়েটা কি বুঝাবোনা চেষ্টা করতেছে তবে একটু বুঝতে পারছে মেয়েটা সংসারটাকে নিজের করে নিতে চাইছে কোনো স্বার্থ ছাড়াই।
আনভি আজ খুবই

তিনদিন পর আদিরা এসেছে, প্রথমে অভিমান করে থাকলেও পরে রাগ কমে গেছে।
রামিম তাকিয়ে দেয়ে মেয়েটা আদিরার পাশে ঘুরঘুর করছে। মাঝে মাঝে রাস্তা আটকে দাঁড়াচ্ছে আর হাজারটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে, অথচ রামিম একটা প্রশ্নও করতে পারেনি।

কেনো পারেনি? এটা কি ইগো? নাকি সমাজ কি বলবে সেই নিয়মে বাধা?
রামিম খেয়াল করে আনভির কোনো প্রশ্নে আদিরা বিরক্ত হয়না বরং উত্তর দিয়ে যায়।
এমনকি একই প্রশ্ন বারবার করার পরও।

আনভি কি সারাক্ষণ আদিরাকে এভাবেই জ্বালায়?
কিসের এত টান আদিরার? কেনো সহ্য করে এসব আর কেনোই বা আমাকেই ভালোবাসলো। তার মতো সুন্দরী শিক্ষিত মেয়ে চাইলেই আমার চাইতে শতগুনে ভালে একটা ছেলেকে ভালোবাসতে পারতো।

উত্তর পায়না রামিম। ভালোবাসতে কারন লাগেনা। অকারনেই ভালোবাসা যায়, ভালোবাসা হয়ে যায়।
রান্না শেষ হয়েছে, খাবার টেবিলে বসে আনভি আজ বেশ খুশি। এই প্রথমবার বাবা মা দুজনের সাথে একসাথে খেতে বসেছে সে।একবার আদিরা একবার রামিম এভাবে দুজনের হাতে খাচ্ছে সে। মেয়েটার আজ ক্ষুদা মেটেনা, আরো কিছুক্ষণ খায়।
আদিরা রামিমের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আনভির দিকে একবার তাকান! আপনি কি চাননা ও এভাবেই হাসিখুশি থাকুক?

~ চাই কিন্তু এটা কোনোভাবেই সম্ভবনা।
~ আপনি চেষ্টা না করেই হার মেনে নিচ্ছেন! মেয়েটার ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন না আপনি।
~ ভাবছি বলেই বলছি আপনি মাহমুদকেই বিয়ে করুন, সুন্দর একটা জিবন পাবেন।
~ আর ভালোবাসা?

~ মাহমুদ ছেলেটা ভালো।
~ হা করুন আমি আপনাকে খাইয়ে দেই।
~ তাবিজ করেছো নাকি?

থমথমে পরিবেশটা হঠাৎই কেটে যায়। দুজনেই শব্দ করে হেসে উঠে।
এখন দুজনকে খুশি মনে হচ্ছে। হাসিই একমাত্র জিনিস যা মানুষের বিষন্নতা দুর করতে পারে।
দুপুর কাটে বিকেল হয়। সকল চিন্তাভাবনা ছেড়ে একটা দিন অন্তত আদিরার সাথে হেসেখেলে কাটায় রামিম। কি আসে যায় আগামিকাল সে চলে যাওয়া না যাওয়ায়?
দু কাপ লেবুর চা নিয়ে আড্ডা দিতে বসে রামিম আদিরা।

ভাগ বসায় মাহমুদ, আদিরাকে নিতে এসেছে। চোখমুখ শক্ত, ছেলেটাকে এভাবে মানায় না।
আরেককাপ চা বানায় আদিরা, প্রতিদিনের মতো মন খুলে কথা বলেনা মাহমুদ। চুপচাপ চায়ের কাপে চুমুক দেয়। আদিরারও কিছু বলা হয়না আর।
চা শেষ করে মাহমুদ নিচে গিয়ে দাড়ায়।
আদিরা এগিয়ে আসে রামিমের দিকে।

আরো একবার জড়িয়ে ধরে রামিমকে। অস্বস্তিতে পড়ে যায় রামিম।
মেয়েটা এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছে যেনো রামিমের সাথে কতবছরের প্রেম।
আদিরা কানের কাছে মুখটা এনে বলে,
~ বিয়েটা আমি ভেঙে দিয়েছি বুঝলেন? আমি আপনাকেই বিয়ে করবো। আনভির খেয়াল রাখবেন, আমি আসি।

সিঁড়িতে পায়ের শব্দ পাওয়া যায়। দ্রুতগতিতে নিচে নামে আদিরা।
দাড়োয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আজ রামিমের ঘুম হবেনা।

পর্ব ৫

পরদিন আদিরার সিলেট চলে যাবার কথা কিন্তু যায়নি।
বাবা মায়ের সাথে আদিরা সকালবেলাই রামিমের বাসায় চলে এসেছে।

মেয়ে যার জন্য বিয়ে ভেঙে দিয়েছে তার সাথে দেখা না করে গেলে কি হয়?
অবশ্যই হয়না, কেনো হবে?

ভদ্রলোক চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রামিমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন,
~ প্রথম স্ত্রী কিভাবে মারা গেলো?
~ বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে।

লোকটা কিছুটা দুঃখিত হলো বলে মনে হলো।
চোখমুখ প্রথমে কঠিন থাকলেও আপাতত কোমল মনে হচ্ছে রামিমের।
আদিরা আনভিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

আদিরার মা পাশে বসে কথা শুনছেন আর খুুঁটিয়ে খুুঁটিয়ে দেখছেন সবকিছু, আজই সব ফয়সালা হবে। শেষবেলা তিনি বলবেন তাই চুপ করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেছেন।

ভদ্রলোক বলল,
~ তোমাকে কিছু কঠিন কথা বলে চলে যাব।
কঠিন কথা বলবেন বললেন কিন্তু তার চোখে মুখে কাঠিন্য নেই, ঠিক মানাচ্ছে না লোকটাকে।
চোখমুখ শক্ত করে, গম্ভির একটা ভাব নিয়ে কথাটা বললে বেশ মানাতো।
বয়স হয়েছে, মুখের চামড়ায় ঘোঁজ পড়েছে তবুও সৌন্দর্য কমেনি লোকটার।

আদিরাকেও চুপচাপ দেখছে রামিম, যদিও আনভিকে নিয়ে ব্যস্ত তবুও এদিকের কথাবার্তা শোনার ইচ্ছা সে দমিয়ে রাখতে পারছেনা। রাখবে কেনো? তার বিয়ের কথাবার্তাই তো হচ্ছে।
রামিম ঘাবড়ে যাচ্ছে কিছুটা, ঘেমে যাচ্ছে।

লোকটা আবার চায়ের কাপে চুমুক দিলো তারপর আবার বলা শুরু করলো।
মনে হয় এটা তার অভ্যাস। প্রতিবার চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার পরপর একটা করে সিরিয়াস বাক্য নির্গত করবেন।
~ আমি তোমার সম্পর্কে শুনেছি, আদিরা বলেছে। কিছুটা বাড়িয়ে বলেছে তবে পঁচানব্বই দশমিক পাঁচ ভাগ সত্য বলেছে।

আমি তোমাকে আমার কোনো সিদ্ধান্ত দিবোনা, সবটাই তোমার ওপর নির্ভর করবে। তুমি চাইলে আমার মেয়েকে এখনি তোমার কাছে রেখে যাবো আর না চাইলে নিয়ে যাবো আর কোনোদিন দেখা পাবেনা। তার আগে আমার কিছু কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এটা আদিরার সিদ্ধান্ত।

~ বলুন আমি শুনছি।
রামিম বুঝতে পারছেনা উনি কি বলবেন। তবে এটুকু বুঝতে পারছে এমন কিছু বলবেন যেটাতে রামিম নিশ্চুপ হয়ে যাবে। এত সহজে তো কেউ বলতে পারেনা মেয়েকে রেখে যাবেন, নিশ্চয় কোনো কিন্তু আছে!
ভদ্রলোক চায়ের কাপে লম্বা একটা চুমুক দিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন,
তোমাকে গতকাল আদিরা বলেছিলো সে বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে। কথাটা ও মিথ্যা বলেছে।

রামিম খেয়াল করলো লোকটার গলা কেঁপে উঠলো। আওয়াজ নিচু হয়ে আসলো।
তবুও বলতে শুরু করলো।
ও মিথ্যে বলেছে, বিয়েটা ও ভাঙেনি বিয়েটা মাহমুদ আর তার বাবা ভেঙেছে।
কেনো ভেঙেছে জানতে চাও?
চাই!

ওইযে মেয়েটাকে দেখছো বাচ্চাটাকে নিয়ে খেলতাছে। কত খুশি তাইনা?
ওর ছোটবাচ্চা পছন্দ, কিন্তু কয়েকদিন আগে জানতে পেরেছে ও নাকি আর মা হতে পারবেনা।
কথাটা ও চেপে গেছে ঠিকই তবে মাহমুদের পরিবার জেনে গেছে বিষয়টা! একমাত্র ছেলের বিয়ে এমন মেয়ের সাথে কেনো দিবে? যতই আত্মিয় হোক তার একটামাত্র ছেলে, বাচ্চাকাচ্চা না হলেতো এখানেই বংশ নির্মুল। তুমি হলেও নিশ্চই এই সিদ্ধান্তটাই নিতে?

জ্বি নিতাম।
মানুষ সুযোগসন্ধানী, আমিও। আমার মেয়েটার কোনো ভালো যায়গায় বিয়ে হবেনা, কোনো বাবাই চাইবেনা তার ছেলে এমন কাওকে বিয়ে করুক যে কখনো মা হতে পারবেনা। যেমনটা আমি চাইনি আমার মেয়ের বিয়েটা কোনো বিবাহিত ছেলের সাথে হোক। যদিও তোমার বয়স অল্প তবুও চাইনি। এখন চাচ্ছি কেনো জানো?
জানি।

বলো কেনো?
আমার চাইতে ভালো ছেলে পাবেন না তাই।
ঠিক ধরেছ! ভদ্র শিক্ষিত অল্পবয়সী আর এমন সুদর্শন ছেলে আমি পাবোনা তাছাড়া আমার মেয়েটাও তোমাকে ভালোবাসে তবে তোমার চাইতে তোমার মেয়েটাকে বেশি ভালোবাসে।

আমি আমার কথা বললাম এবার তুমি তোমার উত্তর জানিয়ে দাও!
রামিমের এবার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
মেয়েটা মা হতে পারবেনা এটা কি খুব বড় কারন? ভালোবাসার চাইতেও বড়?

কয়েকমিনিট চিন্তাভাবনা করার পর রামিম উত্তর দিলো,
~ আদিরাকে নিয়ে আপনি চলে যান! আমি বিয়েটা করতে পারবোনা।
চশমাটা ঠিক করে চায়ের কাপে শেষ একটা চুমুক দিয়ে ভদ্রলোক উঠে গেলেন।
আদিরার মা বিশেষ কিছু বললোনা শুধু ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।

আদিরার দিকে তাকিয়ে রামিম দেখলো।
হাস্যজ্জ্বল মুখটা ইতিমধ্যে ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে, চোঁখের কোনে অশ্রুবিন্দু জমা হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে অশ্রু গড়িয়ে পড়বে গাল বেয়ে! ঠোঁটের কাছে এসে থেমে যাবে।
আদিরা দাড়ালোনা!
সে চায়না রামিম দেখুক!

কিছু সিদ্ধান্ত খুব তারাতারি নিতে হয়! জিবন থেকে অনেককিছু হারিয়ে যায়,অনেক প্রিয়জন,অনেক প্রিয় জিনিস। অনেকসময় ভালোবাসাও তবুও নিতে হয়! না নিয়ে উপায় কোথায়?
তবে রামিম কি ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা অজানা।
হয়তো আদিরা মা হতে পারবেনা সেই চিন্তায়!
ঘন্টাখানেক পর আনভিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে রামিম।

আনভি খাবেনা, তার মা লাগবে!
সে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে মা এনে দিতে হবে!
আনভি ভুলে গেছে তার আসল মা কে!
সে জানে আদিরাই তার মা। এতদিন আবদার না করলেও ইদানিং কিছুটা বুঝতে শুরু করেছে!
~ মাকে এনে দাও নইলে খাবোনা।

কখনো না।
রামিম ভাবনা থেকে জেগে উঠে। এটাই কি করার ছিলো? মেয়েটা এতটা ভালোবাসতো আনভিকে! পরিবারটাকে নিজের মনে করেই মাসের পর মাস মেয়েটাকে আগলে রেখেছে সে।
আজ একটা ক্ষুদ্র কারনে মেয়েটাকে সারা জিবনের জন্য দুরে সরিয়ে দিলো সে?
কল দিলো রামিম, ফোন বন্ধ।

মেয়েকে নিয়ে রওনা দিলো কমলাপুর রেলস্টেশনে।
গুলিস্তান পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরো বিশ মিনিট। সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে আরো দশ মিনিট।
দেড়ঘন্টা কেটে গেছে। এতক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার কথা।
হ্যা ট্রেন আরো পনেরমিনিট আগেই ছেড়ে গেছে।

এতক্ষণ দৌড়াদৌড়িতে শরীর ঠান্ডা থাকলেও এখন ঘামতে শুরু করেছে।
রামিম স্পষ্ট আনভির চোখে পানি দেখতে পায়। মেয়েটা কাঁদছে।

তার কি এতটাও বোঝার ক্ষমতা হয়েছে যে সে কাঁদবে?
রামিম শুন্য হাতে রিক্সায় উঠে। এটাই হবার ছিলো। কেনো যে তখন না বললো। একটা ভুল সিদ্ধান্ত সারাজিবন হয়তো কাঁদাবে রামিমকে।
অন্যমনস্ক রামিম রিক্সায় উঠে বসলো।

চোখ লাল হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। এত মানুষের সামনে কাঁদা যাবেনা সে বড় হয়েছে।
~ ওদিকে চেপে বসুন।
রামিম ঘাবড়ে যায়!
আদিরার কন্ঠ!
আবারো শুনতে পায় রামিম,
~ বললাম না ওদিকে চেপে বসুন।

ঝাপসা চোখ পরিষ্কার হয় রামিমের। সত্যিই আদিরা সামনে দাড়িয়ে।
~ আপনি কি ভেবেছেন আমি চলে যাবো? ভালোবাসি আপনাকে আর আনভিকে। মা না হতে পারার মিথ্যে নাটকটা আমিই সাজিয়েছি কার জন্য জানেন? শুধুমাত্র আপনার আর আনভির জন্য। আমার বাবা সুযোগসন্ধানী মানুষ! তিনি জিবনেও আপনার সাথে আমার বিয়ে দিতোনা।
এখন দিবেন।

রামিমের মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। সহজ সরল এই মেয়েটার মাথায় এত প্যাচ কোথা থেকে আসলো? রামিম নিজেও বুঝতে পারেনি এতবড় একটা মিথ্যা আদিরা বলতে পারবে।

স্বপ্ন মনে হচ্ছে সবকিছু।
আদিরা আবারো বলে,
~ কাজি অফিস চলুন।

রিক্সা কাজি অফিসে থামে। বিয়ে হয়। রামিমের ঘোর এখনো কাটেনি।
আদিরা মুচকি হাসছে! রামিম মেয়েটার বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারেনা।

আনভি ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুম ভাঙলে মাকে পেয়ে নিশ্চয় আনন্দে লাফিয়ে উঠবে।
বাসায় ঢুকার আগে মাহমুদের সাথে দেখা রামিমের।

ছেলেটার হাস্যজ্জ্বল মুখটাতে কাঠিন্য ভাব চলে এসেছে।
রামিম ডাক দেয়,
~ মাহমুদ ভাই, আজ বাসায় বিরিয়ানি রান্না হবে, খেতে আসবেন।
রাতে বৃষ্টি নামে। মাহমুদ বিরিয়ানি খেতে আসেনা। বিরিয়ানি আজ হজম হবেনা তার, আজ সে সারারাত সিগারেট ফুঁকবে।

লেখকঃ রামিম ইসতিয়াক

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “মেঘ মিলন – পড় ভালোবাসার গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – তুমি হলেই চলবে (১ম খণ্ড) – ভালোবাসার কথা sms

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *