পালিয়ে বিয়ে

পালিয়ে বিয়ে – কাজি সাহেব যখন শশুর | Romantic Love Story

আজ আমি আপনাদের পালিয়ে বিয়ে করার এক কাকতালীয় মজার কাহিনি বা গল্প শেয়ার করব। প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করতে গিয়ে কিভাবে ধরা খেল দুজনে, কি হল শেষ পর্যন্ত তা জানব আজকে। চলুন শুরু করা যাক।

প্রেমের ফ্ল্যাশব্যাক

আমার ক্রাশ সোমা যে ভার্সিটিতে ভর্তি হলো আমিও সেই ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। তবে ট্রান্সফার হতে হলো পূর্বের ভার্সিটি থেকে৷ এবার যা করতে হবে সেটা হচ্ছে, সোমার বাসার একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে হবে৷ যাতে তাকে সবসময় মনপ্রাণ উজার করে জন্মের মত দেখতে পারি৷ তার মন জয় করার জন্য তার কাছাকাছি থাকার বিকল্প নেই৷ তার বাসাতে থেকেই মন জয় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সোমার বাবা কি বাসার ফ্ল্যাট ভাড়া দিবেন?

তার বাসার সামনে পিছনে ভালভাবে লক্ষ করে দেখলাম দু-দুটা টু লেটের সাইনবোর্ড লাগানো আছে৷ পেয়ে গেলাম সুযোগ, দিলাম ফোন৷ বললাম ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে ইচ্ছুক৷ কিন্তু হবু শ্বশুর প্রশ্ন করে বসলেন ব্যাচেলর নাকি বিবাহিত! আমি উত্তর দিলাম মাদ্রাসার হুজুর আমি৷ এমন মিথ্যাচার শুনে হবু শ্বশুরের মুখের স্বর পাল্টে গেল৷ বুঝতে পারলাম চাল কাজে লেগেছে, বেচারা হুজুরে বিশ্বাস করে৷ গম্ভীর স্বরে কথা বলা ভুলে গিয়ে তিনি নরম মোলায়েম কন্ঠে বললেন –

হুজুর, আসলালামু আলাইকুম৷ হুজুর আপনি রুম ভাড়া নিবেন শুনে খুশি হলাম৷ আপনি আজই আমার বাসায় চলে আসুন! জি আঙ্কেল, আমি এখন আপনার বাসার পিছনে৷ বাসার ভেতর থেকে বাইরে আসুন! দেখুন, আমি আপনার অপেক্ষায়!

অতঃপর তিনি এলেন৷ আমার মুখভর্তি দাড়ি দেখে বিশ্বাস করলেন আমি মাদ্রাসার হুজুর৷ তবে পরনের শার্ট, প্যান্ট, টুপিহীন মাথা দেখে একটু সন্দেহ করলেন৷ কিন্তু আমি চাপা ও পাম মেরে তাকে ভুলিয়ে দিলাম৷ পরেরদিন সমস্ত মালপত্র এনে সোমার বাসাতে উঠলাম৷ আমার থাকার জায়গা হলো চিলেকোঠা৷ তবুও বাধ্য হয়ে থাকতে হলো৷ প্রেমের যুদ্ধে সফল হতে হাজারো মহাপুরুষ কত কিছু করেছে, কত ত্যাগ স্বীকার করেছে, সাত সমুদ্র তের নদী পার করে প্রেমিকার সাথে দেখা করেছে৷ তাজমহল বানিয়েছে৷

হবু শশুরকে পটানো

আর আমাকে তো চিলেকোঠায় থেকে ক্রাশকে পটাতে হবে, এটা আর কি কঠিন! তবে সিদ্ধান্ত নিলাম সোমাকে পটানোর পূর্বে তার বাবাকে আগে পটিয়ে ফেলতে হবে, যাতে প্রেমটা সহজে হয়ে যায়৷ এজন্য হবু শ্বশুর যা কাজ করতে বলতো, বাধ্য ছেলের মত সেসব করে ফেলতাম৷

হবু শ্বশুর ইসলামিক বই পড়তে ভালবাসতো, এজন্য কম দামী বই ক্রয় করে তাকে গিফট দিতাম৷ ২ মাসে ২ টা নতুন পাঞ্জাবী, ৩টা জায়নামাজের পাটি, ৫ টা টুপি, ৯ টা আঁতরের কৌটা৷ সবকিছু গিফট করা হয়ে গেল৷ হবু শ্বশুর হয়ে গেল ঘনিষ্ঠ বন্ধু৷ একসাথে মসজিদে যাওয়া, মাঝেমধ্যে ঘুরাঘুরি চললো হবু শ্বশুরের সঙ্গে৷ একদিন সোমার আব্বুকে লাজ শরমের মাথা খেয়ে বললাম-

আঙ্কেল, সরি বন্ধু, তুমি তো জানো আমি মাদ্রাসায় পড়া শেষ করে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি৷কিন্তু ভার্সিটির একটা মেয়েকে খুব ভাললেগে গেছে৷ তাকে ভুলতে পারছিনা৷ না না, প্রেম করার ইচ্ছা নেই৷ তাকে সোজা বিয়ে করবো৷ কিন্তু কি করলে তার মন জয় করা যাবে এবং সে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হবে এসব আমি জানিনা৷ যদি আপনি একটু টিপস দিতেন! শুনেছি আপনি আন্টিকে ভালবেসে বিয়ে করছেন! এ সম্পর্কে তো আপনার দারুণ অভিজ্ঞতা আছে!

হবু শ্বশুর বিষম খেয়ে আমতা আমতা করে বলল- ঠিক আছে, তুমি টিপস পাবে৷ তবে শোনো, এই যুগের মেয়েদের সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিলে তারা কিছুতেই বিয়েতে রাজি হবেনা৷ এজন্য তোমাকে প্রথমে তার মন জয় করতে হবে৷ কিভাবে মন জয় করবে সব ধীরে ধীর বলবো তোমাকে। এরপূর্বে আগে মেয়েটার নাম্বার জোগাড় করো! এরপর কি করতে হবে সব তোমাকে বলবো৷

ক্রাশকে পটানো

অনেক কষ্টে সোমার নম্বর জোগাড় করলাম৷ সোমাকে ফোনে কি কি বলে তাকে প্রাথমিক পর্যায়ে আকৃষ্ট করবো সেসব টিপস সোমার বাবার থেকে জেনে নিয়েছি৷ সেইসব সোমার উপর প্রয়োগ করলাম এবং কি সুন্দর ভাবে কাজেও ফলে গেল! সোমা আমার সঙ্গে প্রথমদিন কথা বলায় অনেকটা পটে গেল৷ এভাবে ৩০ দিন চললো কথা বলা৷ একপর্যায়ে সোমা আমার প্রতি পুরোপুরিভাবে দুর্বল হয়ে গেল৷ তাকে প্রোপজ করার উপযুক্ত সময় পেয়ে গেলাম৷ প্রোপজ করবো কিনা এটা সোমার বাবার থেকে জেনে নিলাম৷

তিনি বললেন প্রোপজ করো, এটাই সঠিক সময়, তবে করবে সিনেমাটিক স্টাইলে৷ একগুচ্ছ গোলাপ সঙ্গে করে নিয়ে যাবে৷ হাঁটু গেড়ে গোলাপগুলো তাকে দেবার ভঙ্গিমায় আই লাভ ইউ বলে বসবে৷ ব্যাস, সে এতেই মুগ্ধ হয়ে তোমাকে প্রেমিক হিসেবে গ্রহণ করে নিবে!

হবু শ্বশুরের কথামত তার মেয়েকে প্রোপজ করতে গেলাম ভার্সিটিতে৷ ক্লাস শুরুর পূর্বে সোমাকে প্রোপজ করলাম ঠিক সেভাবে, যেভাবে সোমার আব্বু করতে বলেছিল৷ প্রোপজ করার সাথে সাথে সোমা আমাকে বুকে টেনে নিলো৷ এভাবেই সোমার সঙ্গে আমার মধুর প্রেমের সূচনা হলো৷ চুটিয়ে প্রেম করতে লাগলাম৷ সোমা যখন অনার্স দ্বিতীয় ইয়ারে উঠলো, আমি তখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র৷ সোমার বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সোমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে৷

পাত্র বিসিএস ক্যাডার৷ হবু শ্বশুর বিসিএস পাত্র পেয়ে লোভ শামলাতে পারেনি৷ তাইতো, মেয়ের লেখাপড়াকে বানের জলে ভাসিয়ে দিয়ে বিয়ে ঠিকঠাক করলো৷ বিয়ে সামনের মাসের ১ তারিখে৷ বিয়ে ঠিক হয়েছে বিধায় সোমা চোখের ও নাকের পানি নির্গত করে রাত দিন কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে৷ কিন্তু এতেও আমার হবু শ্বশুরের মনে দয়া হলোনা তার মেয়ের প্রতি৷ সোমা আমাকে ফোন দিয়ে শুধু বলে যা করার তাড়াতাড়ি করো!

প্রেমে ধরা খাওয়া

জোৎস্ন্যালোকিত রাতে চাঁদের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ছাদের একপাশে অবস্থিত দোলনাতে বসে সোমার কাঁধে হাত রেখে দোল খেতে খেতে সুখ দুঃখের কথা প্রকাশ করছিলাম৷ অকস্মাৎ, হবু শ্বশুর ছাদে এসে পা রাখলো৷ তাকে দেখে আমাদের দুজনের অবস্থা হলো বাঘের পদতলে অবস্থিত নিরীহ হরিণের মত৷ ভয়ার্ত চোখে তাকালাম তার দিকে৷ সোমা কাঁধ থেকে আমার হাত সরিয়ে দিয়েছে অনেক আগেই৷ তার বাবা আমাদের দেখে চোখ দুটো গোলগোল বানিয়ে তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলল,

সোমার বাবা: কি ব্যাপার, তোমরা ছাদে কি করছ?

সোমা ভয়ার্ত কণ্ঠে জবাব দিলো- আব্বু, হুজুরের থেকে কাহিনী শুনছিলাম৷

বাবা: কিসের কাহিনী?

সোমা: বাবা, ঐ যে আছেনা, হাদিসের কাহিনী!

বাবা: একটু শোনা তো, দেখি কি শুনলি?

মাঝখানে আমি বলে উঠলাম, আঙ্কেল, তাকে এখনো কোনো কাহিনী বলিই নি৷ সে তো মাত্রই ছাদে এলো৷ তবে এখনই তাকে কাহিনীটা বলবো৷ আপনি চাইলে শুনতে পারেন৷ ঠিকআছে, শোনাও তো৷

এরপর বানিয়ে বানিয়ে কারবালার কাহিনী শুনাতে লাগলাম৷ ভাগ্যিস অল্পের জন্য ধরা পড়ে যাইনি৷

বন্ধু শশুরের সাথে প্রেমালোচনা

কেটে গেল ২৭ দিন৷ সোমার বিয়ে সেই টাকওয়ালা বিসিএস ক্যাডারের সঙ্গেই হবে, আর ৪ দিন পর৷ এরমধ্যেই আমাকে কিছু একটা করতে হবে৷ যাতে সোমাকে আমার সিংহাসনের রাণী বানাতে পারি৷ হবু শ্বশুরের থেকে বুদ্ধি নিতে রাত্রীতে তার নিকট গিয়ে বললাম, বন্ধু, আমার তো সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে৷ কিছু একটা করো!

হবু শ্বশুর কৌতূহলের চোখে তাকিয়ে বলল, তোমার কি হলো আবার?

আমি: আমার গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে৷

বন্ধু: তো, কি সমস্যা? পালিয়ে বিয়ে করো৷ দরকার পড়লে আমি হেল্প করবো তোমাদের৷ টাকার দরকার পড়লে আমাকে বলো৷

আমি: বন্ধু, তার বাবা কঠিন লোক৷ পালিয়ে বিয়ে করলে খুন করে দিবে৷

বন্ধু: মেয়ের বাবা কি করে?

আমি: সেটা তো জানিনা৷ তবে এটা জানি তিনি নাকি পুলিশ ছিলেন৷ সাসপেন্ড করা হয়েছে৷

বন্ধু: বর্তমানে তো সে পুলিশ না৷ তোমার হবু শ্বশুরের সাথে দেখছি আমার মিল আছে, আমিও তো পুলিশ অফিসার ছিলাম৷ শোনো, আমার বিশ্বাস লোকটার মন আমার মতই নরম হবে৷ তুমি পালিয়ে বিয়ে করো, কিচ্ছু হবেনা৷ কিছু হলে আমি আছি!

বন্ধু, খুব ভাললাগলো তোমার সাজেশন্স পেয়ে!
তবে টাকা দরকার ২০ হাজার, দিও!

ঠিক আছে, আজই নিয়ে যাও! তারপর বন্ধু শশুরের কাছ থেকে বিদায় নিলাম।

প্রেমিকার সাথে পালানো

পরেরদিন ভোর হতে না হতেই সোমাকে নিয়ে পালিয়ে গেলাম৷ দুপুর পর্যন্ত আত্মগোপন করে থাকলাম দুজন৷ এরপর সোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে গেলাম৷ বাবা, মা সোমাকে দেখে বেজায় খুশি৷ হবেই না কেন পরীর মত বউমা পাচ্ছে৷ সোমাকে ছোট বোনটার বোরখা পরিয়ে নিয়ে চললাম কাজী অফিসের দিকে৷ সোমাকে সাবধান করে দিলাম কোনো কথা না বলতে৷ কাজীর সামনে গিয়ে কথা বলা যাবেনা আমি অনুমতি না দিলে৷ সোমাকে রিকশায় চড়িয়ে কাজী অফিসের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলাম৷

সে কি যেন বলতে চাইলে তাকে বারবার থামিয়ে দিয়ে বললাম এখন তোমার কোনো কথা শুনবোনা৷ যত কথা আছে সব বিয়ের পর বলো৷ পালিয়ে বিয়ে করতে গেলে এক সমস্যা! অনেক মেয়ে ছিল যারা পালিয়ে বিয়ে করতে গিয়ে বাবা, মায়ের সম্পর্কে কথা বলতে বলতে শেষপর্যন্ত বিয়েই করেনি৷ কাজী অফিস ছেড়ে বাড়ি চলে গিয়েছিল৷ তুমি সেরকমটা করো সেটা চাইনা, এজন্য তোমাকে চুপ থাকতে বলছি ৷ সোমা চুপ রইলো৷ তবে মনে হলো সে রেগে আছে৷

কেন যেন ছটফট করছিল৷ রিকশা থেকে নেমে কাজী অফিসের ভেতর ঢুকতে গেলে সোমা আমার হাত টেনে ধরলো৷ বুঝতে পারলাম তার মধ্যে ঐসব মেয়েদের মত ব্যারাম ঢুকে গেছে, যারা কাজী অফিসে এসেও বাবা, মায়ের কথা স্মরণ হতেই বিয়ে না করে চলে গিয়েছিল৷ এজন্য তাকে জোর করেই রুমের ভেতর নিয়ে গেলাম৷ সে কথা বলতে গেলেই মৃদ্যুভাবে থাপ্পর মেরে চুপ করিয়ে দিলাম৷ কাজীর চেম্বারে আরামদায়ক সোফায় বসে আছি সোমাকে নিয়ে৷ সোমা ফোঁসফোঁস করছিল৷ তার মুখ নেকাপ দিয়ে আটকানো থাকলেও বুঝতে পারছি সে চরম রাগা রেগেছে৷

পালিয়ে বিয়ের গল্প

অকস্মাৎ, আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো৷ বুকের ভেতর অসংখ্য বিষাক্ত তীর বিদ্ধ হচ্ছিল৷ যা কল্পনাতেও ভাবিনি সেটাই হলো৷ সম্মানীত কাজীকে রুমের ভেতর আসতে দেখে আমার দুনিয়া উলটপালট হয়ে গেছে৷ কাজীটা অন্য কেউ নয়, সোমার বাবা, আমার হবু শ্বশুর ওরফে পাতানো বন্ধু!

ওনাকে দেখে গলার পানি শুকিয়ে গেল৷ ঢোক গিলতে গিলতে বাচ্চাদের মত কণ্ঠ বানিয়ে বললাম- বন্ধু তুমি এখানে?

অতঃপর সোমার দিকে নজর দিয়ে তীক্ষ্ণকণ্ঠে বললাম, সোমা, তোমার বাবা এই অফিসের কাজী আগে বলোনি কেন?

সোমা নেকাপটা সরিয়ে হিংস্র বাঘিনীর মত রুপ নিয়ে কষে আমার গালে কয়েকটা থাপ্পর মেরে ক্ষীপ্তকণ্ঠে বলল, আরো চুপ থাকতে বল, শালা বাইঞ্চো….

আজ ১৫ বছর পরও এমন ভয়াবহ ঘটনার কথা মনে পড়ে ৷ মনে পড়তেই গা শিউরে ওঠে ৷ ভাগ্য আমার ভাল যে সোমার বাবা আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিয়েছিল! এরপর আমাদের সুখে শান্তিতে দিন যেতে লাগল। ভাগ্যের এই রকম খেলা কখনো ভোলার মত নয়। তবে মাঝে মাঝে সোমার মনে পড়লে এখনো আমাকে বাইঞ্চো.. বলে গালি দেয়। তবে তা দুষ্টামি করে। আমরা সুখে আছি, আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

আরো পড়ুন- হঠাৎ বিয়ের গল্প – ভাবি যখন বউ হয়ে দেবরের বাসর ঘরে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *