মিষ্টি প্রেমের গল্প পর্ব ১: আমি মিষ্টি শেখ। অনার্স সেকেন্ড ইয়ার এ পড়ছি। আমার বাবা আসাদ শেখ। মা জাবিন রহমান। আমি বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে। আমার নাম মিষ্টি হলেও আমি খুব দুষ্টু। কিন্তু আবার অনেক ভালোও। আমি ভীষণ মজা করতে পচ্ছন্দ করি। আজকে কলেজে নাকি নতুন ইংলিশ টিচার আসবে। তাই তাড়াতাড়ি যাওয়া। বাকি কথা পরে হবে, এখন আমার অনেক দেরি হয়ে গেছে।
মিষ্টি প্রেমের গল্প শুরু যেখানে
আম্মু এবং আমার কথোপকথন: আম্মুউউউউউ…কই তুমিইইইই?
আম্মুঃ কি হলোটা কি? আমায় এতো জোরে জোরে ডাকছিস কেন রে?
আমিঃ কি হলো মানে! এতো লেট হয়ে গেছে এখনো ডাকোনি কেন আমায় তুমি?
আম্মুঃ কিই!! তোকে আমি ডাকিনি! তোকে সেই সকাল থেকে ডাকতে ডাকতে আমার মুখ ব্যথা হয়ে গেলো আর তুই বলছিস আমি তোকে ডাকিনি!
আমিঃ আম্মু, আমার একদম সময় নেই। আমাকে তাড়াতাড়ি রেডি হতে হবে। না হলে ইম্পরট্যান্ট একটা ক্লাস মিস হয়ে যাবে। আবার আজকে নাকি নতুন স্যার আসবে ক্লাস নিতে। তাই আজকে আমাকে যেতেই হবে।
তারপর আমি ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাই। কোনমতে তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নিচে নামতে গেলে আম্মু বলে-
আম্মুঃ কিছু খেয়েতো যা রে পাগলি।
আমিঃ নাহ মা, ক্যান্টিনে খেয়ে নিব। এখন সময় নেই।
আম্মুঃ আচ্ছা, ঠিক আছে। আজকে কিন্তু কারো সাথে একদম দুষ্টুমি করবি না, কেমন?
আমিঃ আরে আম্মু, আমি খুব ভালো মেয়ে তুমি জানো না!
আম্মুঃ হ্যা, আমি খুব ভালো করেই জানি। তাই সাবধান করে দিচ্ছি। যদি তোর নামে কিছু শুনছি তাহলে তোর বাবাও আজকে তোকে বাঁচাতে পারবেনা বুঝলি।
আমিঃ ওকে মা দেখা যাবে। বলে দৌড়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লাম।
ঝগড়া থেকে প্রেমের শুরু
দৌড়ে ভার্সিটিতে ঢুকার সময় আমি কারো সাথে জোরে ধাক্কা খেয়ে ধপাস করে পড়ে যাই। এরপরের ঘটনা আমি আর বলতে পারব না, যা বলার লেখক বলে দিবে কেমন! আমি শুধু কাণ্ড ঘটাব, আর আপনারা দেখবেন। এইযে লেখক সাহেব, লেখা শুরু করেন।
মিষ্টিঃ কেরে, তুই আমারে ধাক্কা দিলি? এই মিষ্টিরে ধাক্কা দিলি। তোর সাহস তো কম না রে?
ছেলেটাঃ এক্সকিউজমি, আমি আপনাকে ধাক্কা দেইনি। বরং আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন। (চোখ রাঙিয়ে)
মিষ্টিঃ কিইইইইই! আমি তোরে ধাক্কা দিছি। (রাগি চোখে)
ছেলেটাঃ হ্যা। অবশ্যই আপনি দিয়েছেন। আর তুই তোকারি করে কথা বলছেন কেন? এটা কোন ধরনের ভদ্রতা? হ্যা!
মিষ্টিঃ একশোবার বলমু, হাজারবার বলমু। তোর কি? তুই একটা সজারু, বিলাই, উজবুক কোথাকার।
ছেলেটাঃ কিহহহ? আমি উজবুক, সজারু! আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে এগুলা বলার?
মিষ্টিঃ আমার সাহসের দেখছেনটা কি? হ্যা! আমার অনেক সাহস। আর কে আপনি? যে আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন। আপনি জানেন আমি কে?
ছেলেটাঃ দেখুন, আপনি কে আমি জানি না। আর জানতে চাইওনা। আপনার মতো এরকম অসভ্য মেয়ের সাথে কথা বলতে আমার কোন ইচ্ছাই নেই। আর আমি কে তা না হয় আপনি পরেই জানবেন।
প্রতিশোধ থেকে প্রেমের চারা রোপণ
বিড়বিড় করে অনেক কিছু বলে ছেলেটা হনহন করে চলে যায়, কতো বড় সাহস? আমাকে অসভ্য মেয়ে বলল। দাঁড়া এর শোধ আমি নিমুই। আমার সাথে কেউ এভাবে কথা বলে নাই। দূর, ওর সাথে এখন ঝগড়া করতে গেলে আমার দেরি হয়ে যাবে। এমনিতেই আমার কতো দেরি হয়ে গেছে। ও কে তো আমি পড়ে দেখে নিবো। এই বলে আমিও ছেলেটাকে একশোটা বকা দিতে দিতে ক্লাসে ঢুকে মুনের পাশে বসি। তখন মুন বলে-
মুনঃ কিরে তোর মুখটা এমন লাগছে কেন রে? কি হইছে বলতো?
মিষ্টিঃ কি আর হবে! ভার্সিটিতে ঢুকার সময় একটা বজ্জাতের সাথে ধাক্কা খাইয়া আমি পইরা গেছি। বজ্জাতটা কতো জোরে ধাক্কা দিলো আমারে, উফফ.. কি ব্যথা পাইছি আমি।
মুনঃ সত্যি লোকটা তোরে ধাক্কা দিছে নাকি তুই লোকটারে ধাক্কা দিছিস রে?
মিষ্টিঃ আমি ধাক্কা দিতে যাবো কেন? ওই লোকটাই আমারে ধাক্কা দিছে।
মুনঃ তোরে আমি সেই ছোটকাল থেকে চিনি। তুই কেমন তা আমি খুব ভালো করেই জানি। তোর কি মনে হয় আমি তোর কথা বিশ্বাস করি। তুই খুব ভালো করেই নিজের দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে পারিস। আর এটা আমি খুব ভালো করেই জানি।
মিষ্টিঃ তুই না আমার বান্ধুবি। তুই আমারে এই কথা বলতে পারলি।
মুনঃ তোরে আমার বিশ্বাস হয় না। আর তাছাড়া ধাক্কাটা হয়তো অনিচ্ছাকৃত ভাবে লেগে গেছে। তার জন্য তুই লোকটারে এইভাবে বলবি?
মিষ্টিঃ তোর দেখি লোকটার জন্য দরদ উতলাইয়া উঠতাছে।
মুনঃ দূর, তা না।
মিষ্টিঃ তাহলে কি বল?
মুনঃ তোর মাথা। আচ্ছা, নতুন যে ইংলিশ স্যার আসছে সে নাকি খুব রাগী।
মিষ্টিঃ রাগী তো কি হইছে? আমি ভয় পাই নাকি?
মুনঃ নারে সত্যি আমার অনেক ভয় লাগছে। তোরতো সমস্যা নাই। তুইতো সব পারিস। আমিতো পড়া কিছুই পারি না। কিছু জিজ্ঞাসা করলেও তো পারবো না।
মিষ্টিঃ এখনি এতো চিন্তা করছিস কেন তুই? পরেরটা পরে দেখা যাবে।
মুনঃ আচ্ছা! স্যারটা ছেলে হবে নাকি বুড়া হবে?
মিষ্টিঃ আমি কেমনে কমু। কেনরে, তা যাইনা তোর কি লাভ?
মুনঃ আছে আছে। লাভ আছে। প্রেম ট্রেম করলেও করতে পারি।
মিষ্টিঃ বাহ! ভালো তো। তুই প্রেম করবি? হুহুহু…..
মুনঃ তুই হাসলি কেন রে?
মিষ্টিঃ তোর দ্বারা প্রেম, আমার মনে হয় তোর দ্বারা ওসব প্রেমটেম সম্ভব না।
মুনঃ ওই যা ভাগ, তোরে বলছে।
মিষ্টিঃ স্যারটা যেহেতু রাগি তাইলে নিশ্চয় বুড়া হবে। (মুনকে ক্ষেপানোর জন্য)
মুনঃ তাহলে কি এবারও আমার প্রেম হবে না রে। (মন খারাপ করে)
মিষ্টিঃ তুই ভাবতে থাক রে, আমি একটু পড়ি।
একটু একটু প্রেমের গল্প
তারপর মিষ্টি বইটা খুলে একটু পড়ছিল। কিছুক্ষণ পর মুন তাকে হাত দিয়ে খোঁচাচ্ছে দেখে রেগে গিয়ে মুনকে বলে-
মিষ্টিঃ ওই এইভাবে খোঁচাচ্ছিস কেন রে? কি হইছে টাকি? দেখছিস না আমি পড়ছি।
মুনঃ স্যার আসছে। দাঁড়া।
মিষ্টিঃ ওহ্, বলে উঠে দাঁড়িয়ে সামনে তাকিয়ে দ্যাখে হতবাক হয়ে যায়। (ওই ছেলেটা)
আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। ভাবতে পারছি না। এইটা আমাদের নতুন ইংলিশ টিচার। ওরে আল্লাহ্রে এবারতো আমারে মাইরাই ফেলবো এই স্যার।
সবাই বসে পড়ছে। কিন্তু আমি তা খেয়াল না করে হা করে তাকিয়েই আছি।
স্যারটা আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। নিশ্চয় মনে মনে ভাবছে এবার আমায় মজা দেখাবে। কেন যে এর সাথে ঝগড়া করতে গেছিলাম। আল্লাহ গো!
মুনঃ ফিসফিস করে বলছে- কিরে এভাবে স্যারের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? সবাই দেখছে। বস,
মুনের ডাকে আমার হুশ আসলে আমি ঠাস করে বসে পড়ি।
মুনঃ কিরে কি হইছে এমন করে আছিস কেন?
মিষ্টিঃ আরে এইটাতো ওই ছেলেটা।
মুনঃ কোন ছেলেটা? (অবাক হয়ে)
মিষ্টিঃ আরে ওই ছেলেটা! যার সাথে আমার আজকে সকালে ধাক্কা লাগলো।
মুনঃ কিহ্! সত্যি?
মিষ্টিঃ হুম!
মুনঃ এবার তুই শেষ মিষ্টি রে।
মিষ্টিঃ ওই তুই আমারে ভয় দেখাচ্ছিস কেন? হ্যা!
মুনঃ তুই না ভয় পাস না।
মিষ্টিঃ কিছুটা অস্বস্তি আর কিছুটা ভয় লাগছে রে! কি যে হবে কে যানে?
আমাদের মিষ্টি প্রেমের গল্প পর্ব ১ এটি বাকি পর্ব চলবে…
আরো পড়ুন- মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ২
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প