-দারচিনি চিবিয়ে খেয়েছেন কখনো?
অনুর মুখে এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে দাঁরিয়ে আছে সাদ।মেয়ে দেখতে এসেছে তাই আলাদাভাবে কথা বলার জন্য ছাদে দাঁরিয়ে আছে।কিন্তু এমন অদ্ভুত কথার কি উওর দিবে সে বুঝতে পারছে না।কিছুক্ষন পর আমতাআমতা করে বলল,
-মানে?
সাদের কথায় মুচকি হাসে অনু।
-খাননি তাইনা?
-নাহ্।
-বিরিয়ানি খানতো আপনি?
আরেকদফায় অবাক হলো সাদ।এ কেমন অদ্ভুত প্রশ্ন?অনুর কি মাথায় সমস্যা আছে?বিরিয়ানি তো সবাই খায়।
-আপনি অযথাই আমাকে পাগল ভাবছেন।আমি পাগল নই।এবার আমার উওরটা দিন।
নিজেকে কৌতুহলটা যথাসম্ভব দমিয়ে সহজ গলায় উওর দিল সাদ,
-হ্যাঁ,খাই।
-জানেন দারচিনি ছাড়া বিরিয়ানি হয়না।বিরিয়ানি রান্নার জন্যে দারচিনি অতিআবশ্যক।কিন্তু রান্না হয়ে গেলে সেটা আর কেউ খায়না।ফেলে দেয়।
নিজের কৌতুহলটা আর দমাতে না পেরে অনুকে প্রশ্ন করল সাদ,
-কিন্তু তুমি এইসব কেন বলছো?
অনু আবারও মুচকি হাসলো।মুচকি হাসলেও অনুর গালে টোল পড়ে।সাদের হঠাৎই কেন যেন মনে হলো অনু অসম্ভব রূপবতী একটা মেয়ে।কিন্তু ও এমন উদ্ভট কথাবার্তা কেন বলছে সেটাই বুঝতে পারছেনা সাদ।
সাদের ভাবনার মাঝেই অনু বলে উঠল-শুনছেন?
-হু,বলো।
এবার একটা বড় শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো অনু,
-আপনিতো জানেন যে আমি এতিম।বাবা-মা দুজনেই মারা গিয়েছে সেই ছোট থাকতে।সেই ৮ বছর বয়সেই
আমার একমাএ ঠাঁই হয় চাচার বাসায়।প্রথম প্রথম বেশ আদর-যত্ন করতো তারা।আমার সেই ছোট্ট মাথায় এটা বোঝার ক্ষমতা ছিল না যে এরা যা করছে সবই তাদের স্বার্থের জন্য।
এই পৃথিবীটা বড়ই স্বার্থপর।
চাচা চাচীকে আমি মা-বাবাই ভাবতাম।কিন্তু ধীরে ধীরে চাচি আমার উপর অত্যাচার শুরু করে।
আমার যখন বারো কি তেরো বছর তখন থেকে আমাকে আর অর্নি আপুর(চাচাতো বোন)সাথে ঘুমাতে দেয়া হতোনা।অর্নি আপু শুতো বিছানায় আর আমি শুতাম মাটিতে।তবুও কিছু মনে করতাম না আমি।
একটু যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই উপলদ্ধি করতে পারতাম আমার জীবনটা বিশেষ সুখকর হবেনা।
ভাতিজীর মতো নয় কাজের লোকের মতো ব্যবহার করা শুরু করলো তারা।কথায় কথায় বকাঝকা,মার এগুলো ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী।১৬ বছর বয়সে জানতে পারলাম চাচা-চাচী আমাকে এখানে রেখেছেন শুধুমাত্র সম্পত্তির জন্য।
১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত তারা আমার সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নিতে পারবে না।এজন্যই আমাকে নিয়ে এত আদিখ্যেতা।১৮ বছর হওয়ার পরই তারা আমার থেকে সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নেয়।যদিও আমার এসবের প্রতি লোভ নেই।তারা ভালো করে চাইলেও আমি এমনেই দিয়ে দিতাম।
কিন্তু তাহলে আর জানতে পারতাম না যে এই পৃথিবীতে সবকিছুর উর্ধে হলো টাকা।
এতটুকু বলে থামল অনু।সাদ একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।সাদের দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে,জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আবার বলতে শুরু করলো অনু,
-আমিও হলাম দারচিনির মতো আমাকেও ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হচ্ছে।দারচিনি ছাড়া যেমন বিরিয়ানি রান্না হয়না তেমনি আমাকে ছাড়া তারা সম্পত্তি পেতোনা।তাই দারচিনির মতোই ব্যবহার করে আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তারা।
এখন আর আমাকে এখানে রাখতে পারবেন না তারা।বিরিয়ানি খাওয়া হয়ে গেলে দারচিনিকে যেমন উচ্ছিষ্টের বাটিতে ফেলে দেয়া হয় তেমনি আমাকেও রাস্তায় ফেলে দিতে চাচ্ছিল তারা।কিন্তু হয়তো একটু দয়া হয়েছে আমার উপর তাই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।
সাদ কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
আপন মানুষও এতটা স্বার্থপর হয়?সাদের মনে হচ্ছে অনু মেয়েটা এখনই কেঁদে দিবে।মেয়েরা অনেক নরম মনের হয়।
কিন্তু না,তার ধারণাকে ভুল প্রমান করে অনু কাঁদল না।বরং শক্ত কন্ঠে বলল-আপনি যদি আমাকে বিয়ে করতে চান তাহলে অবশ্যই আমাকে এতটুকু আশ্বস্ত করেন যে আপনি কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেননা।কখনো ধোঁকা দিবোননা।নিজের স্বার্থর জন্য আমাকে
ব্যবহার করবেন না।এবার আপনি আপনার মতামত জানাতে পারেন।
সাদ জানে আজ যদি সে মানা করে দেয় তাহলে জীবনের অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলবে। নিজের হাতটা বাড়িয়ে সে শক্ত করে অনুর হাতটা ধরল।
অনু ইতস্তত বোধ করে হাতটা ছাড়াতে নিতেই বলল,
-তুমি চাইলেও আমি এই হাতটা আর কখনোই ছাড়ছিনা।
অনু কাঁপা গলায় বললো-আ..আপনি?
সাদ চোখের ইশারায় অনুকে আশ্বস্ত করে বলল,
-নিচে,চলো।তোমাকে নিজের করে নিতে আর একমুহূর্তও দেরি করবো না।
সমাপ্ত
দারচিনি
লেখিকা- মালিহা খান