এলাকার বড় আপু – বয়সে বড় মেয়ের প্রেমে

এলাকার বড় আপু – বয়সে বড় মেয়ের প্রেমে: আমি কারো আসার শব্দ শুনছি। আমি দরজার দিকে তাকালাম। এ আমি কাকে দেখছি! নিপা আপু দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগল। আমার হাত পা বেধে রাখায় বাধা দিতে পারলাম না।


পর্ব-১

মাইয়ারে তোর বিজলি ঝরা রুপ (ঠাস ঠাস)। বুঝেন নাই ভাই দুই গালে দুইটা চড় পড়ছে। আমি সামনে তাকিয়ে দেখি নিপা আপু।
(আপু হচ্ছে এলাকার লেডি গুন্ডা। আমার থেকে দুই বছরের সিনিয়র। তাকে এলাকার সবাই ভয় পায়।)

আমিঃ আপু আমাকে মারলেন কেন?

নিপাঃ ওই, রাস্তায় সুন্দরি মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না?

আমিঃ মানে?
নিপাঃ তুই আমাকে দেখে গান গাইলি কেনো।
আমিঃ আপু সত্যিই আমি আপনাকে দেখি নাই।
নিপাঃ ওই, আবার কথা বলস?
(দেখি আপু রাগে কটমট করছে, অবস্থা ভালো না তাই উঠে দাড়ালাম। ) তারপর বললাম স্যরি আপু।
নিপাঃ আর এরকম করলে থাপরিয়ে দাত ফেলে দিব।

(আপু রাগের কারণে গাল দুটো লাল হয়ে আছে। তাই ভাবলাম একটু দুষ্টুমি করি)
আপুর কমলার মতো গালগুলো টেনে বললাম আপনাকে রাগলে অনেক ভালো লাগে।
এই বলে দিছি দৌড়। এখন পরিচয়টা দিই। আমি সিয়াম মাহমুদ, ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরি। আর যার সাথে কথা বললাম সে নিপা আপু অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। আমার থেকে দুই বছরের সিনিয়র।

এরকম দাজ্জাল মেয়ে আমার বাপের জন্মেও দেখি নাই।
আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে বাসায় চলে আসলাম। কলিং বেল দিলাম মা দরজা খুললো।
যেই ঘরে ঢুকলাম ওমনি রেডিও চালু।

বাসায় ঢুকতেই আম্মু বললো এতক্ষনে আসার সময় হলো নবাবজাদার।
পিছন থেকে কে এসেছে ভাইয়া। (ওহ বলতেই ভুলে গেছি আমাদের বাসায় একটা পেত্নি আছে। মানে আমার ছোট বোন। সবসময় আমাকে বাশ দেওয়ার জন্য বসে থাকে।)
আমার বোনের নাম শিউলি

শিউলিঃ তা ভাইয়া এই শীতের মধ্যে ঘামিয়ে গেছিস কীভাবে?
আমিঃ কই নাতো।
আম্মুঃ এই মিথ্যা কথা কেন বলস তুইতো সত্যি ঘামিয়ে গেছিস।
আমিঃ আসলে আম্মু হয়েছে কী………

আমাকে বলতে না দিয়ে…

শিউলিঃ দেখ, তোমার ছেলে আবার কোথায় কী গন্ডগোল পাকিয়ে আসছে?
আমিঃ এই পেত্নি একদম ফালতু কথা বলবি না।
শিউলিঃ এই কি বললি আমি পেত্নি। তবেরে…..
এই বলে আমার দিকে তেড়ে আসতে লাগলো।

হঠাৎ আম্মু ধমক দিয়ে বললো এই তোরা থামবি। ওমনি শিউলি দাড়িয়ে গেলো।
আমিঃ আম্মু ক্ষুধা লাগছে খাবার দেও।
আম্মুঃ সারাদিন তো শুধু খাই খাই কাজের ধারেকাছেও নাই।
আমিঃ ডায়লগ বন্ধ করে খাবার দাও।

তারপর খেয়েদেয়ে আমার রুমে আসলাম। এসে দিলাম এক ঘুম।
ঘুম থেকে উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তারপর সব বন্ধুকে ফোন দিয়ে লিটন কাকার চায়ের দোকানে আসতে বললাম।
আমি গিয়ে দেখলাম সবাই চলে এসেছে শুধু আমি বাদে।

শাহিনঃ কিরে কেমন আছিস? (শাহিন, শাওন নয়ন, ইমরান, সিহাব আমার বন্ধু) কিন্তু শাহিন আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।
আমিঃ ভালো আছি। তোরা কেমন আছিস?
সবাই একসাথে বলে উঠলো ভালো আছি।

শাহিনঃ তা বল তোর কী খবর?
তারপর ওদেরকে সকালের ঘটনা খুলে বললাম।
(ওরা আমার জানপ জিগার দোস্ত ওদেরকে না বলে পারি?
কিন্তু হারামিগুলা সব শুনে হাসাহাসি করতে থাকল।

সিহবঃ দোস্ত ওই মাইয়া খুব ডেন্জারাস তোর কপালে খারাপি আছে।
আমি ভাব নিয়ে বললাম দেখা যাবে।

তারপর আরো কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে বাসায় আসলাম। এসে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম।
বাবাঃ কিরে তোর পড়ালেখা কেমন চলছে?
(আমার বাবার নাম রাফসানুল হক। তিনি একজন টপ বিজনেসম্যান)
আমিঃ পড়াশোনার কি হাত পা আছে যে চলবে।

আম্মুঃ ফাজলামি বাদ দে।
আমিঃ ভালোই চলছে, বাবা।
তারপর আরো কিছু কথা বলে রুমে আসলাম।

ভাবলাম যে করেই হোক নিপাকে আপন করে পেতেই হবে।
পরক্ষনেই আবার ভয় হতে লাগল যে ডেন্জারাস মাইয়া আবার কি করে বসে।
এভাবে ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম।


পর্ব ২

সকালে ঘুম ভাঙল শরীরে পানির অনুভবে।

আমি ভাবছি ছাদ ফুটো হয়ে গেছে।
(তাই চিৎকার দিলাম আম্মুগো ছাদ ফুটো হয়ে গেছে। এই বলে দিলাম দৌড়)
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম কেউ বিছানার পাশে মিটিমিটি করে হাসছে।
আমার বুঝতে আর বাকি রইলো না এইটা শিউলির কাজ।

(আমি গিয়ে ওর কান ধরে বললাম, এই ডাইনি আমায় ভিজিয়ে দিলি কেন? )
শিউলিঃ তোকে কলেজে যেতে হবেনা, তোকে ডাকছি তুই উঠস নাই কেন?
আমিঃ তাই বলে তুই ভিজিয়ে দিবি?
শিউলিঃ কথা না বাড়িয়ে খেতে আয় আম্মু অপেক্ষা করছে।

(কি আর করা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে কলেজের দিকে রওনা দিলাম)
কলেজ গেট দিয়ে ঢোকার সময় হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেলাম। অতপর দুজনেই পড়ে গেলাম।
আমি উঠে যখন নিচে তাকালাম আমার চোখ তো ছানাবড়া।
কারন নিচে নিপা আপু পড়ে রয়েছে।

নিপাঃ এই শয়তান ছেলে আমাকে টেনে তোল
(আমি নিপা আপুকে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম, এই প্রথম ভালোবাসার মানুষের হাতের ছোয়া পেলাম। নিপা আপু আমার হাত ধরে উঠে এলো। আমার অন্য একটা অনুভুতি হলো)
নিপাঃ এই ছেলে ধাক্কা দিলি কেন? চোখে দেখতে পাসনা?
আমিঃ আমি ইচ্ছা করে দিছি নাকি, আমি আপনাকে দেখি নাই।

নিপাঃ একেতো অন্যায় করেছিস আবার বড় বড় কথা। তুই কোন ক্লাসে পড়িস রে?
আমিঃ ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।
নিপাঃ আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ার। সো আমি তোর সিনিয়র। আমাকে আপু বলে ডাকবি।
এর মধ্যে নিপার কিছু বান্ধবি শ্যামলি, রুবা, আনহা আসে।

শ্যামলিঃ কি হয়েছে রে নিপা? (শ্যামলি নিপার বেষ্ট ফ্রেন্ড)
নিপাঃ আর বলিস না আমার সাথে বেয়াদবি করেছে। এই কালকের আর আজকের জন্য দশবার কানে ধরে উঠবস কর?
আমিঃ মানে?
নিপাঃ তুই শুরু করবি। নয় এই শ্যামলি তোরা শুরু কর?

আমিঃ এই না, না(কি আর করার মেয়েদের হাতে মার খাওয়ার চেয়ে কান ধরে উঠবস করলাম। )
ওদিকে আমার হারামি বন্ধু গুলা গাছের নিচে বসে হাসাহাসি করতে আছে।
নিপাঃ এই ছেলে শুন তোর নাম কি?
আমিঃ সিয়াম মাহমুদ।
নিপাঃ আচ্ছা যা।

আমি সোজা হারামি বন্ধুগুলার কাছে এলাম।
শ্যামলিঃ এই নিপা ছেলেটা অনেক কিউট রে।
রুবাঃ ওর সাথে এরকম না করলে ও পারতি?
নিপাঃ এই তোরা চুপ করে ক্লাসে চল

এদিকে,

সিহাবঃ তোরে আগেই বলছিলাম এই মেয়ে খুবই ডেন্জারাস।
আমিঃ আরে আমি ইচ্ছা করে ধাক্কা দিয়েছি নাকি?
আমার মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেল তাই ক্লাস নাকরেই বাড়ির দিকে হাটা দিলাম।
কলিংবেল দিতেই আম্মু দরজা খুলে দিল।

আম্মুঃ কিরে এত তাড়াতাড়ি এলি যে?
আমিঃ ভালো লাগতেছিল না।

আম্মুঃ যা ফ্রেশ হয়ে নে আমি খেতে দিচ্ছি।

(আমি ফ্রেশ হয়ে খেতে গেলাম। খেয়েদেয়ে দিলাম এক ঘুম)
ঘুম থেকে উঠে নিচে গেলাম।
আম্মুঃ এই সিয়াম যাতো একটু বাজার করে নিয়ে আয়।
(আব্বু ব্যস্ত থাকায় আমাকেই বাজার করতে হয়)

আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ দেখি নিপা আপু আসতেছে।
আমি ভাবলাম আজই আপুকে মনের কথা বলে দিব।
আমিঃ নিপা আপু কেমন আছেন?

নিপাঃ ভালো।
আমিঃ আপু একটা কথা বলার ছিল/
নিপাঃ বল কি বলবি?
আমিঃ আপু আমি তোমাকে ভালোবাসি।

ঠাস ঠাস দুইটা চড় দিল।

নিপাঃ তোর লজ্জা করেনা সিনিয়র আপুকে প্রোপোজ করছিস?

এই বলে চলে গেলো। আমিও শপথ করলাম ওকে আমি প্রেমের জালে ফাসাবোই।
আমি বাজার করে বাসায় আসলাম।

তারপর চলে গেলাম সেই আড্ডাখানায়।
বন্ধুদেরকে এই কথা বলতেই হাসাহাসি শুরু করল।
এভাবে প্রতিদিন নিপা আপুকে প্রোপোজ করতাম।
আর প্রতিদান হিসেবে দুটো করে চড় খেতাম।

একদিন আমি সিড়ি দিয়ে নামতেছিলাম হঠাৎ দেখি আপু পড়ে যেতেছিল।
আমি গিয়ে আপু কে ধরলাম। আপু আমার শরীরের সাথে মিশে গেছে।
আপু নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আমাকে তিনটা চড় দিল। আর বলল

নিপাঃ লুচ্চা, বদমাইশ তোকে কতো বলেছি আমার কাছে আসবি না। তোর লজ্জা করেনা তারপরও আসিস।
এই বলে নিপা চলে গেল।

আমি নির্জন জায়গায় এসে ভাবলাম। আসলেইতো আমার লজ্জা নেই। নাহলে শত অপমানের পরও ওকে প্রপোজ করি।
আমি ভাবলাম ওকে আর ডিস্টার্ব করবো না।
আমি মন খারাপ করে বাসায় আসলাম।

বাসায় এসে দিলাম এক ঘুম।
কিছু না খেয়েই বাইরে চলে আসলাম। মা অবশ্য খেতে বলছিল।
আমি সোজা চলে আসলাম লিটন কাকার দোকানে।
এমনিতে সিগারেট খাইনা। আজ কারো সাথে কথা না বলেই একটা সিগারেট ধরালাম।


পর্ব-০৩

শাহিনঃ কিরে আমি যা দেখছি তোরাও কি তাই দেখতে পাচ্ছিস।
(হ্যারে ভদ্র ছেলে দেখি সিগারেট ও খায়। সবাই একসাথে বলল। )
শাহিনঃ তোর কি হয়েছে আমাদের বলবিতো?

আমিঃ না কিছু হয়নি।
সিহাবঃ দেখ সিয়াম আমরাতো তোর ভালোই চাই।
(তারপর ওদের জোড়াজুড়িতে সব বললাম)
আমিঃ ও কিভাবে আমাকে লুচ্চু বলতে পারলো।

শাওনঃ তোকে আগেই বলছিলাম ও খুব ডেন্জারাস মেয়ে।
আরো কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে বাসায় আসলাম।
তারপর থেকে খাওয়া নেই নাওয়া নেই কেমন যেন অগছালো হয়ে গেছি আমি নিজেও জানিনা।

এদিকে নিপা কলেজে গেলে কেউ তাকে ডিস্টার্ব করে না। প্রথম প্রথম তার ভালো লাগলেও পরে সিয়ামকে মিস করতে থাকে।
একদিন শিউলি সিয়ামের ঘরে এলো।

শিউলিঃ ভাইয়া একটা কথা বলতাম?
আমিঃ শিউলি ও হ্যা বল।

শিউলিঃ ভাইয়া আমি কিন্তু জেনে গেছি তুমি কেন এভাবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ?
আমিঃ নিজেকে কষ্ট দিচ্ছি মানে?
শিউলিঃ শাহিনভাইয়া সব বলছে।
আমিঃ ও আচ্ছা।

শিউলিঃ ভাইয়া তুমি ভেঙে পড়লে চলবে না ওই মেয়েকে দেখিয়ে দিতে হবে। আমার ভাইয়া ও কোন কিছুতে কম না।
আমিঃ তুই কি বলতে চাইছিস শিউলি?
শিউলিঃ আমি বলতে চাচ্ছি, তুমি আগের মতো কলেজে যাবা, হাসিখুশি থাকবা।
(একটু ভেবে বললাম, আমার পেত্নি বোনটা বলেছে আমি কি তার কথা ফেলতে পারি। )

শিউলিঃ যা দুষ্টু ভাই আমার।

এরপর দিলাম এক ঘুম।
পরদিন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে কলেজে গেলাম।

দেখি নিপা ও তিন চার জন মিলে আড্ডা দিচ্ছিল।
আমি পাশ কাটিয়ে হেটে যেতেছিলাম।
তারপর নিপা যা করল তা আমি স্বপ্নেও ভাবি নাই…….

আমি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে ছিলাম হঠাৎ নিপা আপু এসে আমাকে সিয়াম বলে জড়িয়ে ধরলো।
আমিঃ এই আমি আপনাকে চিনি না জানি না আপনি আমায় জড়িয়ে ধরলেন কেনো।
(নিপা আপুকে ছাড়িয়ে বললাম)
নিপাঃ এগুলো কি বলতাছো সিয়াম।

(আমাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল)
আমার ভালো লাগছিল। কিন্তু পরক্ষনেই মনে পড়ল ওর জন্য আমাকে কতো অপমান সয্য করতে হয়েছে।
তাই নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিপা আপির দুই গালে দুটি চড় দিয়ে চলে এলাম।

নিপা আপু সেখানে হা করে দাড়িয়ে রইলো। সে হয়তো এমনটা আশা করেনি।
আমার ও খারাপ লাগছিলো কি আর করার আমি ওতো কম থাপ্পর খাইনি।
আমি চলে গেলাম ক্যান্টিনে। গিয়ে দেখি হারামিগুলা কফি খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে।

আমিঃ কিরে আমাকে রেখে আড্ডা দেওয়া হচ্ছে।
(আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে তাকালো)
শাহিনঃ কিরে সিয়াম ঘর থেকে বের হয়েছে বুঝি।
সিহাবঃ আমি ওতো তাই দেখতাছি।

আমিঃ ফাজলামি বাদ দিয়ে বল তোদের অবস্থা কী?
শাওনঃ আমাদের আবার অবস্থা, অবস্থাতো এখন তোর?
আমিঃ মানে?
সিহাবঃ ন্যাকা সাজতে হবে না।
আমিঃ কি হয়েছে বলবিতো?

শাওনঃ নিপা আপুতো তোকে মনে হয় ভালো বেসে ফেলেছে।
তুই এই কয়দিন আসোস নাই, নিপা আপু তোকে পাগলের মতো খুজেছে।
(ওদেরকে আমি থামিয়ে সকালের ঘটনা বললাম)

শাহিনঃ সিয়াম তুই না ওকে ভালোবাসিস। তাহলে তুই কিভাবে এটা করতে পারলি।
আমিঃ আরে আমি এখনো ওকে ভালোবাসি। ও আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তাই আমি ওকেও একটু কষ্ট দিতে চাই।
শাওনঃ আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে।
আমিঃ বল কি আইডিয়া?

শাওনঃ অন্য একটা মাইয়ার সাথে তোর প্রেমের অভিনয় করতে হবে। এতে আপু জেলাস ফিল করবে।
আমিঃ বুঝলাম কিন্তু মেয়ে পাবো কোথায়?
সিহাবঃ আরে চিন্তা করিস আমার চাচাতো বোন আছে এই কলেজে। ওকে বলে দিব।
আমিঃ আচ্ছা চল ক্লাসে চল।

(ক্লাস শেষে সিহাব তার চাচাতো বোনের সাথে কথা বলিয়ে দিয়ে সব তাকে বুঝিয়ে দিল। )
তারপর আমি বাসায় চলে আসলাম।
আমি রুমে বসে আছি। হঠাৎ, শিউলি আসলো

শিউলিঃ ভাইয়া কেমন কাটলো কলেজ?
(তারপর আমি শিউলিকে সব বললাম)
শিউলিঃ আইডিয়াটা ভালো এখন ঘুমা।
তরপর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে তাড়াতাড়ি বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
রাস্তায় রিমিকে নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
(রিমি হলো সিহাবের চাচাতো বোন)
বাইকের পিছে রিমিকে নিয়ে যখন ঢুকলাম তখন নিপা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।


পর্বঃ ০৪

নিপা আমাদের হাত ধরে হাটতে দেখে,

দৌড়ে আমাদের সামনে এসে দাড়ালো।
নিপাঃ এই মেয়ে ওর হাতটা ছাড়ো।
রিমিঃ সিয়াম জানু এই মেয়েটা কে? তোমার হাত ছাড়তে বলছে কেনো?

আমিঃ আরে জানু ওসবের কথায় কান দিওনা। চলো আমরা ওই গাছতলাতে গিয়ে বসি।
(নিপা এসে আমার হাতটা ধরে বললো, সিয়াম তুমি এমন করছো কেন? )
আমি ওর হাতটা ছাড়িয়ে একটা চড় মেরে চলে এলাম।

আসার সময় রিমিকে বললাম আজ আজ অভিনয় করতে হবেনা। ছুটির পর বাড়ি চলে যেও।
আমি চলে এলাম আমার বন্ধুদের কাছে। আমিঃ কিরে তোরা কেমন আছিস।
শাহিনঃ তা বল তোর খবর কী?

তারপর ওদেরকে সকালের ঘটনা বললাম।
সিহাবঃ তাহলে আমার বুদ্ধি কাজে লাগছে।
এদিকে নিপা, সুমাইয়াঃ এটা কি হলো?

নিপাঃ আমাকে এতো অপমান এর বদলা আমি নিবই।
সুমাইয়াঃ কিন্তু কিভাবে?
নিপাঃ সিয়ামকে আজই আমি বিয়ে করব।

সুমাইয়াঃ কিভাবে?
নিপাঃ তাহলে শুন আমার প্লান। (
প্লানতো ভালোই এখন তোর ভাইয়াকে ফোন কর।
নিপা তার ভাইয়াকে ফোন দিল।

নিপাঃ ভাইয়া একটু আমাদের কলেজে আসোতো।
শাকিলঃ ওকে। (শাকিল নিপার বড় ভাই। তার বোনের জন্য সব করতে পারে)
আমিতো নিপার প্লান জানিনা। আমি খুশিমনে ক্লাস করতেছি।

নিপার ভাইয়া কলেজে চলে এলো
শাকিলঃ বল নিপা কোন সমস্যা?
নিপাঃ ভাইয়া আমি আজ বিয়ে করব।

শাকিলঃ মানে?
নিপাঃ ছেলেটা রাজি না ওকে কিড ন্যাপ করে আমাদের গোডাউনে আটকে বিয়ের ব্যাবস্হা কর। আর বাবাকে রাজি করার দায়িত্ব তোমার।
শাকিলঃ আমি এটা করতে পারবো না
নিপাঃ তাহলে তোমার বোনের মরা মুখ….

শাকিলঃ থাম। তুই গিয়ে রেডি হয়ে পুরনো গোডাউনেযা। আমি ব্যাবস্থা করছি।
নিপাঃ ওকে আমার সুইট ভাইয়া।
আমি কলেজ ছুটি শেষে বাইক নিয়ে বের হলাম।

একটু নির্জন রাস্তায় আসতেই তিনটা ছেলে আমার পথ আটকালো।
কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে অগ্গান কে ফেলল।
আমার আর কিছু মনে নেই।

যখন আমার গ্যান ফিরল আমি নিজেকে একটা ভাঙা ঘরে আবষ্কার করলাম। সামনে দুজন লোককে দেখতে পেলাম।
একজন আমাকে চোখ খুলতে দেখে বলল আপামনি ভাইয়ার গ্যান ফিরেছে।

আমি কারো আসার শব্দ শুনছি। আমি দরজার দিকে তাকালাম। এ আমি কাকে দেখছি! নিপা আপু দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগল। আমার হাত পা বেধে রাখায় বাধা দিতে পারলাম না।

আমিঃ আমাকে এভাবে বেধে নিয়ে আসার কারন কী?

নিপাঃ কেন অন্য মেয়ের সাথে আরো ঘুরো।
আমিঃ তাতে তোমার কী? তুমিতো আমায় ভালোবাসো না।
নিপাঃ আগের ব্যবহারের জন্য সরি সিয়াম। এখন আমাকে বিয়ে করে নাও।
নিপা যে বিয়ে করতে বলবে তা আমি আশা করিনি.

আমিঃ এসব কি বলছ আপু আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না।
নিপাঃ আমি তোর কোন কালের আপু লাগিরে। আর কি বললি বিয়ে করতে পারবিনা। তোর বাপ করবে।
আমি রেগে গিয়ে বললাম তা আমার বাপকেই ডেকে আনুন না।
নিপাঃ ফাজলামি বাদ দিয়ে বল বিয়ে করবি কী করবি না?
আমিঃ না করব না।

নিপাঃ এই স্বপন পিস্তলটা দেতো?
একজন এসে নিপার হাতে একটা পিস্তল দিয়ে গেল।

পিস্তলটা আমার মাথায় ঠেকিয়ে নিপা আপু বলল এবার বল বিয়ে করবি কী করবি না।
(আমি ভাবলাম যে ডেন্জারাস মেয়ে বেশি বারাবারি করলে গুলি চালিয়ে দিবে)
আমিঃ আমি রাজি।

নিপাঃ ভাইয়া তুমি কাজি ডাক ও বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।
একটু পর শাকিল ভাইয়া কাজি নিয়ে এলো।

আমার হাত পায়ের বাধন খুলে দিল। আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম।
নিপা কোথায় যেন গেল।

আবার আধ ঘন্টা পর ফিরে এলো।
আমি নিপা আপুর দিকে তাকিয়ে থ হয়ে গেলাম। লাল বেনারশিতে একদম পরীর মতো লাগছে।
একটা ব্যাগ নিয়ে আমার কাছে আসলো

নিপাঃ এই নাও এটা ওই রুম থেকে পড়ে এসো।
আমি দেখলাম ওর ভিতরে শেরওয়ানি। আমি শেরওয়ানি পড়ে বাহিরে এলাম।
অবশেষে রাত দশটার মধ্যে বিয়েটা হয়ে গেল?

আমিঃ এখন আমরা থাকব কোথায়?
নিপাঃ কেন তোমাদের বাড়িতে।

আমিঃ না আমি পাড়ব না।
নিপাঃ বিয়ে যখন করেছ এখন বাড়িতে নিয়া যাবা নাহলে একদম মাইরা ফালাব।
এতো ভালো জ্বালায় পড়লাম।

আমিঃ আচ্ছা দেখতেছি কী করা যায়।
আমি শিউলিকে ফোন দিলাম

আমিঃ শিউলি একটা সমস্যা হইয়া গেছে।
শিউলিঃ কী হয়েছে ভাইয়া?
আমিঃ আমি বিয়া কইরা ফালাইছি।
শিউলিঃ what, কাকে?

আমিঃ নিপা আপুকে।
শিউলিঃ আমাদের জানানোর দরকার মনে করলি না?
আমিঃ আরে আমি জানি নাকি। প্লেন অনুযায়ী অভিনয় করার পর আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে হুমকি দিয়ে বিয়ে করে।
শিউলিঃ আচ্ছা আমি মা/বাবাকে সামলাচ্ছি তুই ভাবিকে নিয়ে বাড়িতে আয়।

আমিঃ আচ্ছা।
আমি নিপার কাছে এসে বললাম, চলো বাড়িতে যাই। নিপা ওর ভাইকে জড়িয়ে ধরে খুব কাদছিল।
শাকিল ভাইয়া একটা গাড়ি ঠিক করে দিল।
(আমি গাড়িতে বসে ভাবলাম কি করতে চেয়েছিলাম আর কি হয়ে গেল। যাক ভালোই হয়েছে আমিতো ওকে বিয়ে করতেই চাইছিলাম। কিনতু ওকে একটু শাস্তি দিতে হবে। ওকে প্রথম স্বামীট অধিকার দিবনা। )

এসব ভাবতে ভাবতে বাড়িতে চলে এলাম।
(এদিকে শিউলি বাবা মাকে সব বলে দিয়েছে। বাবা আমার উপর রেগে আছে। কারন আমি কাউকে পছন্দ করি বললেই পারতাম, বাকিটা বাবার দায়িত্ব ছিল। )
আমিকলিংবেল বাজালাম শিউলি দরজা খুলে দিল।
সামনে তাকিয়ে দেখি বাবা মা দাড়িয়ে।
…..
নিপা গিয়ে বাবা মাকে সালাম করল।
(পরিবেশ ঠান্ডা তার মানে শিউলি বুঝিয়ে বলেছে) তাই আমি ঘরে ঢুকতে গেলাম ওমনি বাবা বলল
বাবাঃ তুমি ঘরে ঢুকছ কেনো? তোমার জন্য এই বাড়ির দরজা বন্ধ।
আম্মুঃ তুমি এসব কি বলছ। তাহলে ওরা এখন যাবে কোথায়।

বাবাঃ বৌমা তুমি ঘরে এসো।
নিপাকে আম্মু আর শিউলি নিয়ে গেল। ওমনি আব্বা ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিল।
(আমি ভাবলাম এটা কিহলো)
আমি কিছুক্ষন দরজায় দাড়িয়ে থাকার পর আম্মু এসে দরজা খুলে বলল

আম্মুঃ আয় বাবা ঘরে আয়। তুই যে এমন একটা কাজ করবি তা তোর আব্বা ভাবতে পারেনি। তাই একটু রেগে আছে।
(আমি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে ভাবলাম শিউলি তাহলে কিডন্যাপের ব্যাপারে কিছু বলেনি)

আমি সোজা আমার রুমে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি রুমটা শিউলি কিছুটা সাজিয়েছে। আর নিপা খাটের উপর বসে রয়েছে।
আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। শিউলি রুমে আসলো।

শিউলিঃ ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে খেতে আয়।
আমিঃ আমি খাবনা। ওকে নিয়েযা। (কিছুটা রাগ করে বললাম)
নিপাঃ আমিও খাবনা।
শিউলিঃ ভাবি ভাইয়াকে দেখে রেখো।
(এই বলে শিউলি দৌড় দিলো) আর নিপা মুচকি হাসছে।

আমি সেদিকে খেয়াল না করে একটা বালিশ এনে সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম।
নিপা বিছানা ছেড়ে উঠে এসে বলল
নিপাঃ এই তুমি এখানে ঘুমিয়েছে কেনো?
আমিঃ আমি আমার ইচ্ছামতো ঘুমাব। তাতে আপনার কী?

নিপাঃ আমরা এখন স্বামী স্ত্রী তাই একসাথে ঘুমাব।
আমি ধমক দিয়ে বললাম, আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মানিনা। আপনি আমায় জোড় করে বিয়ে করছেন। তাই স্বামির অধিকার ফলাতে আসবেন না।
নিপা ধমক খেয়ে গিয়ে ঘুম পড়ল।

সকালে শিউলি দরজা ধাক্কচ্ছিলো, আমি তাড়াতাড়ি উঠে বিছানায় বালিশ রেখে নিপাকে ডাকতে লাগলাম।
নিপাঃ কি হয়েছে এত সকালে ডাকছো কেনো?

আমিঃ বাইরে শিউলি ডাকছে গিয়ে দরজা খুলুন?
নিপা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
শিউলিঃ কিরে ভাবি এখোনো ঘুমোচ্ছ ভাইয়া বুঝি সারারাত ঘুমোতে দেয়নি।
নিপা শুনে মুচকি হাসছে।

আমি গিয়ে শিউলির কান ধরে বললাম। বেশি পাকামো না করে বল কী বলবি।
শিউলিঃ তোমাদের দুজনকে বাবা ডাকতেছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো। আমিঃ আচ্ছা যা।
নিপাঃ ওয়াসরুমটা কোন দিকে? আমি ওয়াসরুমটা দেখিয়ে দিয়ে শাহিনকে একটা ফোন দিলাম।
আমিঃ শাহিন আজ কলেজে যাবি না?
শাহিনঃ হ্যা, যাব।

আমিঃ না যাওয়া লাগবে না। সবাইকে নিয়ে লিটন কাকার চায়ের দোকানে আয়।
শাহিনঃ কিন্তু কেন?
আমিঃ আগে আয় তারপর বলছি।

শাহিনঃ আচ্ছা।
একটুপর নিপা ওয়াশরুম হতে বের হলো। আমিতো ওর থেকে চোখই ফেরাতে পারছি না।


পর্বঃ ০৫

নিপাকে হালকা সাজে অপুর্ব লাগছে। আমি একদৃষ্টিতে চেয়ে আছি।
(নিপা আমার সামনে এসে তুরি বাজিয়ে বলল এভাবে কী দেখছ) নিপার কথায় আমার ঘোড় কাটল।
আমিঃ কই কিছু নাতো।

নিপাঃ হয়েছে এবার চলেন নিচে যাওয়া যাক।
খেতে এসে নিপা আমার সামনের চেয়ারটা টেনে বসল। বাবা আমাকে বললেন
বাবাঃ সিয়াম তুই এভাবে কাজটা ঠিক করিসনি। আমাকে বললেই হতো।
আমিঃ বাবা আমি………

বাবাঃ থাক আর বলতে হবেনা। বৌমা তোমার পরিবারে কে কে আছে?
নিপাঃ আমি, আমার ভাইও বাবা।
বাবাঃ তোমার মা নেই?
নিপাঃ না বাবা আমার
মা আমি ছোট থাকতেই মারা গেছে। (কাদো, কাদো স্বরে)

আম্মুঃ এই পাগলি মেয়ে কাদছিস কেনো আমি আছি না তোর মা।
বাবাঃ আচ্ছা তোমরা দুজন কি একই কলেজে পড়ো?
আমিঃ হ্যা, বাবা। ও আমার দুই বছরের সিনিয়র।

বাবাঃ কি? আচ্ছা ঠিক আছে তোদের দু তিন দিন কলেজে যাবার দরকার নেই।
তারপর আমি চলে এলাম লিটন কাকার দোকান। গিয়ে দেখি সবাই হাজির।
আমিঃ কিরে তোরা কেমন আছিস?
শাওনঃ আগে বল কলেজ বাদ দিয়ে এখানে ডাকলি কেনো?

আমিঃ কিভাবে যে বলি তোদের কথাটা।
শাহিনঃ আরে বলে ফেল?
আমিঃ আমি বিয়ে করে ফেলছি।
(সবাই একসাথে বলল আমাদের না জানিয়ে। )

আমিঃ আরে আমি জানতাম নাকি আমার বিয়ে।
সিহাবঃ তুই জানতি না মানে?
আমিঃ মানে সব হয়েছে তোদের জন্য। তোদের কথা শুনে অভিনয় করার পর নিপা অত্যন্ত রেগে যায়। আর আমাকে কিডন্যাপ করে হুমকি দিয়ে বিয়ে করে।
সিহাবঃ নিপা আপু যে এরকম করবে তাতো আমরা ভাবতেই পারি নাই।

শাওনঃ ওসব বাদ এখন আমাদের ট্রিট চাই।
আমিঃ আমার সর্বনাশ করে আবার ট্রিট চাওয়া হচ্ছে।
শাহিনঃ তুই দিবি কিনা বল।
(কি আর করা ওদেরকে খাইয়ে বাড়িতে চলে আসলাম)

বিকালে আমি রুমে বসে আছি। তখননিপা আসল রুমে।
নিপাঃ চলো না একটু বাহিরে ঘুরে আসি।
আমিঃ পারবো না।
নিপা চলে গেল রুম থেকে চলে গেলো।

একটু পর আবার আসল রুমে মাকে নিয়ে।
আম্মুঃ এই সিয়াম নিপাকে নিয়ে একটু বাহির থেকে ঘুরে আয়তো।
আমিঃ মা আমার ভালো লাগছে না।

আম্মুঃ আমি কোন কিছু শুনতে চাই না।
আমি সেই কখন রেডি হয়ে বসে আছি। নিপা এখনো রুম থেকে বের হচ্ছে না।

আমিঃ আজকি হবে।
নিপা বাথরুম থেকে বের হলো একটা নীল শাড়ি পড়ে। শাড়িটা কোনমতে পেচিয়ে আছে। আমারতো হাসি পাচ্ছে।

নিপাঃ প্লিজ শাড়ির কুচিটা ঠিক করে দিন না।
আমিঃ না আমি পারবো না।
নিপাঃ প্লিজ।
(আমি নিপার কুচিটা ঠিক করে দিলাম। যখন ওর পেটে গুজে দিব। তখন ওর পেটে আলতো করে ছোয়া লাগে নিপা কেপে উঠলো) আমি উঠে নিপার দিকে তাকালাম।

নিপাকে নীল শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
নিপাঃ এভাবে কী দেখছো?
আমিঃ কই কিছু না। চলো
তারপর বাহিরে এসে একটা রিকশা ডাকলাম। রিকশা চলতে শুরু করল। নিপার চুল গুলো খোলা। বাতাসে বারবার আমার মুখে এসে লাগছে।

আমি যতই সড়ে বসতেছি, নিপা ততই চেপে বসতেছে।
আমিঃ এই আপনার সমস্যা কী এমন করতেছেন কেন?
নিপাঃ কি করতেছি?
আমিঃ এভাবে চেপে বসলে তো আমি পড়ে যাব।

নিপাঃ তা আপনি ওদিকে সড়ছেন কেনো। আমারতো তোমার কাধে মাথা রাখতে ইচ্ছা করছে।
আমিঃ এতো আলগা পিরিত দেখাবানা তাহলে কিন্তু চলে যাব।
নিপা মন খারাপ করে বলল আর এমন হবে না।

রিকশা নির্জন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ নিপা বলল
নিপাঃ আমাকে আপনি করে বলেন কেনো তুমি করে বলা যায়না?
আমিঃ আপনি আমার সিনিয়র আপনাকে তুমি করে বলতে পারবো না।
নিপাঃ এখনতো আমরা স্বামী স্ত্রী।

আমিঃ আমি মানি না। আর আপনার প্যাচাল বাদ না দিলে আমি চলে যাব।
নিপার মন খারাপ হয়ে গেলো।
রিকশাটা একটা নদীর ধারে এসে থামলো।

আমরা দুজনে দাড়িয়ে নদী দেখছি। কেউ কারো সাথে কথা বলছি না।
নিপার মুখে রোদ পড়েছে। মুখটা জ্বল, জ্বল করছে। চুল গুলো বাতাসে উরছে।
ইচ্ছা করছে পিছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে।
কিন্তু তা করা চলবে না। কারন ওকে একটু শাস্তি দিতে হবে।

আরো কিছু সময় থেকে আমরা বাড়ি চলে এলাম। সেদিনও আমি সোফায় ঘুমালাম।
পরদিন একটু তাড়াতাড়ি উঠলাম। কারন আজ থেকে কলেজে যেতে হবে।
উঠে দেখি নিপা এখনো ঘুমুচ্ছে। ওকে ঘুমন্ত অবস্থায় নিষ্পাপ শিশুর মতো লাগছে।

ওকে ডেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে খাবার টেবিলে গেলাম।
বাবাঃ সিয়াম তুই আর নিপা একসাথে কলেজে যাবি।
আমিঃ বাবা ও একা যেতে পারবে।
বাবাঃ আমি কোন কথা শুনতে চাই না।
খেয়ে রুমে এসে নিপাকে বললাম,

আমি নিচে আছি তাড়াতাড়ি আসেন।
আমি গাড়িতে এসে বসে আছি। নিপা এসে দাড়িয়ে আছে।
আমিঃ কি হলো উঠছেন না কেনো?
নিপাঃ আপনার বাইক বের করেন। আমি বাইকে যাব।
আমিঃ না আমি বাইকে যাবো না।

নিপাঃ তাহলে বাবাকে ডাকি।
আমিঃ তা আর প্রয়োজন নেই। আমি বাইক নিয়ে আসলাম।
আমিঃ উঠেন। আর একটু সড়ে বসবেন নাহলে নামিয়ে দেব।
নিপাঃ ঠিক আছে।

তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে কলেজের দিকে রওনা দিলাম।
কলেজে আমাদের একসাথে দেখে সবাই অবাক হলো।
শাহিন এসে বলল,

শাহিনঃ কিরে ভাবি কেমন আছেন?
নিপাঃ ভালো। আর আমাকে ভাবি বলে ডাকবে অনেক ভালো শুনায়।
আমিঃ এই শাহিন ওকে একদম ভাবি বলে ডাকবি না।
শাহিনঃ কেনো?
আমিঃ ওকে আমি বউ হিসেবে মানি না। ও আমাকে জোড় করে বিয়ে করেছে।

নিপাঃ এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে, সিয়াম।
আমিঃ বাড়াবাড়ি হচ্ছে মানে, যা সত্যি তাই বলছি। (নিপা রাগ করে কলেজ থেকে বের হয়ে গেলো)
শাহিনঃ সিয়াম তুই এটা কি করলি?

আমিঃ কি করেছি মানে, ও কি আমায় কম কষ্ট দিয়েছে।
শাহিনঃ ওসব ভুলে গিয়ে ভাবিকে মেনে নে।
আমিঃ মন থেকে তো ওকে মেনেই নিয়েছি। এখন বাহির থেকে একটু জ্বালাতে হবে।
শাহিনঃ তার মানে এসব………..

আমিঃ সিরিয়াস না। এসব ফাজলামি। ওকে একটু বুঝাতে হবে কাছের মানুষকে না পাওয়ার কষ্টটা। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি।
শাহিনঃ হয়েছে অনেক ভালো অভিনয় করছো, এখন ক্লাসে চলো।
আমি আর শাহিন ক্লাসে চলে এলাম।

এদিকে, নিপা বাসায় এসে কলিংবেল দিলো। আম্মু এসে দরজা খুলে দিয়ে বলল,
আম্মুঃ কিরে মা এত তাড়াতাড়ি চলে এলে কেনো?
নিপাঃ মা, ভালো লাগতেছিলনা। তাই চলে এলাম।

আম্মুঃ আচ্ছা আয় রেষ্ট নে।
নিপাঃ মা শিউলি কোথায়? আম্মুঃ ও ওর রুমে আছে। তুমি যাও।
নিপা শিউলির রুমে চলে গেলো।
নিপাঃ কেমন আছো শিউলি?
শিউলিঃ ভালো আছি ভাবি। বসো, তুমি কেমন আছো।

নিপাঃ আছি কোনরকম। তোমার ভাইতো আমাকে………….
শিউলিঃ মেনে নিতে পারে নাই তাইতো?
নিপাঃ হ্যা। তবে তুমি কিভাবে জানলে?

শিউলিঃ আমি আরো অনেক কিছু জানি।
নিপাঃ মানে?
শিউলিঃ ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি তাকে অনেক অপমান করছো, তাই একটু তোমাকে কষ্ট দিতে চায়।
নিপাঃ তাহলে এই কথা।

শিউলিঃ প্লিজ ভাবি আমার কথা আবার ভাইয়াকে বলো না।
আমি কলেজ ছুটি শেষে বাড়ি চলে এলাম।

কলিংবেল দিতেই আম্মু দরজা খুলে দিল।
আম্মুঃ কিরে নিপা রে তুই বাড়িতে নিয়ে আসলি না কেনো?
আমিঃ ও আমাকে বলে আসেনি। (ডাহা মিথ্যা কথা)

আমি রুমে চলে এলাম। এসে দেখি নিপা রুমে নেই। তাই আমি খাটে এসে দিলাম ঘুম।
নিপা শিউলির রুম থেকে এসে দেখে সিয়াম খাটের উপর ঘুমিয়ে আছে।
(নিপা ভাবলো এই তো সুযোগ)

নিপা গিয়ে সিয়ামের বুকের উপর ঘুমিয়ে পড়ল।
সিয়াম ঘুম থেকে উঠে বিকালে বুকের উপর ভাড়ি কিছু অনুভব করে। সিয়াম চোখ মেলে তো অবাক হয়ে যায়।
কারন তার বুকের উপর নিপা ঘুমিয়ে রয়েছে।

সিয়ামের ভালোই লাগছিলো। তারপরও নিপাকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিল।
যার ফলে নিপার ঘুম ভেঙে গেলো

নিপাঃ তুমি এভাবে আমাকে ধাক্কা দিলে কেনো?
আমিঃ তাহলে আপনি আমার বুকের উপর শুয়ে আছেন কেনো?
নিপাঃ আমি আমার স্বামীর বুকে ঘুমিয়েছি তাতে কার কী?
আমিঃ আমি এই বিয়ে মানি না।

নিপাঃ তাতে আমার কী আমিতো মানি।
ধ্যাৎ কথা বলাই ভুল এই বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
নিপা মনে মনে বলল……


পর্বঃ ৬(অন্তিম পর্ব)

নিপা মনে মনে বলল (কেবল তো খেলা শুরু। আমাকে কষ্ট দেওয়ার প্লান)
রাতে খেয়ে আমি রুমে গেলাম। আমি যেই বালিশ নিয়ে সোফায় যাব, ওমনি নিপা বলে উঠল,

নিপাঃ খাটে এসে ঘুমান।
আমিঃ বলছি না স্বামীর অধিকার ফলাতে আসবেন না।
নিপাঃ আমার ভয় করছেতো?

আমিঃ আমি বললাম তো পারবো না।
নিপাঃ সিয়াম তুমি কিন্তু আমাকে আগের নিপার মতো দেখবে।
আমিঃ মানে।

(নিপা খাট থেকে নেমে এসে আমাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরেছে। তার ঠোট দুটো আস্তে আস্তে আমার কাছে নিয়ে আসছে। তার গরম নিশ্বাশ আমার ঘারে পড়ছে। আমি কিছু বলার আগে আমার ঠোটের সাথে তার ঠোট শিউলিয়ে দিলো। ) পাচ মিনিট পর যখন ছাড়লো তখন আমরা দুজনেই হাপাচ্ছি।
আমিঃ এটা কি করলেন মেরে ফেলবেন নাকি?

নিপাঃ হ্যা, আমার কথা না শুনলে মেরেই ফেলবো।
আমিঃ মানে?
নিপাঃ এখন চুপচাপ খাটে গিয়ে ঘুমাও।

আমিঃ পারবো না।
নিপা বালিশের নিচ থেকে টান দিয়ে একটা ছুড়ি বের করে বলল”কী বললে আবার বল।
আমিঃ কই আমিতো বললাম যাইতেছি।

নিপা ছুরিটা রেখে বললো চলো।
নিপা আমার পাশে গিয়ে ঘুমালো।
নিপা হঠাৎ আমার হাতটা ধরে বললো

নিপাঃ আপনি এখনো আমার উপর রেগে আছেন। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন।
আমিঃ আপনার উপর আমার কোন রাগ নেই।

নিপাঃ তাহলে আমি তোমার স্ত্রী হওয়া সত্যেও, আমাকে আপনি আপনি করে বলেন কেনো?
আমিঃ এমনিই ভালো লাগে না।

নিপাঃ তুমি যখন আপনি করে বলো আবার তোমার বন্ধুর সামনে ওরকম ভাবে কথা বললে তখন আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো।
(নিপা এসব কথা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে কাদো কাদো শুরে বললো)
আমি কী বলবো আমি নিজেই হাড়িয়ে ফেলেছি।
আমিঃ আচ্ছা আজ থেকে সবসময় আপনাকে তুমি করে বলবো।

নিপাঃ তোমার সাথে কথাই বলবো না। তুমি আবার আপনি বললে।
আমিঃ আর ভুল হবে না।
(নিপা আমায় পিছন থেকে জড়িয়ে ঘুমালো।
আমিও কিছু বললাম না)
সকালে ঘুম ভাঙলো আমার মুখে পানি পড়ার জন্য।

আমি চেয়ে দেখলাম নিপা একহাতে কফি নিয়ে অন্যহাত দিয়ে তার চুল থেকে পানি ছিটাচ্ছে। তার চুলের ঘ্রান আমায় মাতাল করে দিচ্ছে। তারপরও নিজেকে সামলে নিলাম।
নিপাঃ তোমার কফি।
আমিঃ টেবিলে রেখে যাও।
নিপা কফি রেখে চলে গেলো। আমি কফি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলাম।

দেখি নিপা আর মা টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। আমি গিয়ে বসলাম।
সবাই খাওয়া শুরু করলো। খাবার মুখে দিতেই অন্যরকম একটা স্বাদ পেলাম। অনেক ভালো রান্না। তাই বললাম
আমিঃ আম্মু আজকের রান্নাটা অনেক ভালো হয়েছে। (আমার কথা শুনে নিপা শিউলি আম্মু সবাই মুচকি হাসছে)

আমিঃ আমি কি হাসার কথা বলছি যে তোমরা হাসছো।
শিউলিঃ না মানে আজ মা রান্না করেনি।
আমিঃ তাহলে কে রান্না করেছে।
শিউলিঃ আজ ভাবি রান্না করেছে।

আমিঃ তাইতো ভাবি খাবার থেকে এরকম গন্ধ আসছে কেনো। (মোটেও গন্ধ আসছে না। খাবারটা অনেক ভালো হয়েছে। কিন্তু ওকে একটু জ্বালানোর জন্য বললাম)
নিপা রাগ করে খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো।
আম্মুঃ কিরে সিয়াম তুই এটা কী করলি তোর জন্য মেয়েটা না খেয়ে চলে গেলো।
শিউলিঃ ভাইয়া কাজটা ঠিক হলো না।

আমিও না খেয়ে চলে এলাম। বারান্দায় এসে ভাবতে লাগলাম, এভাবে আর চলতে দেওয়া যাবে না। আমার ও ভালো লাগে না।
আজই কলেজ থেকে এসে নিপাকে আমার মনের কথা বলে দিব।
আমি বাজারে গিয়ে কিছু জিনিস কিনে আনলাম।

শিউলিকে বললাম আমরা বাহিরে ঘুরতে বের হলে আমাদের রুমটা যেন সুন্দর করে সাজায়।
আমি কলেজ থেকে এসে নিপাকে বললাম
আমিঃ নিপা চলো তোমার জন্য কিছু শপিং করবো।
নিপা খুশি হয়ে বলল আচ্ছা আমি রেডি হয়ে আসছি।

আমি নিপাকে নিয়ে রিকসা করে মার্কেটে গেলাম।
নিপাকে কিছু কসমেটিক্চ বাছতে দিয়ে আমি ফাকে নিপার জন্য একটা নীল শাড়ি কিনলাম।
নিপাকে জানালাম না।
আমি আরো কিছু কেনাকাটা করে নিপাকে নিয়ে বাসায় আসলাম।

আমি নিপার হাত থেকে ব্যাগ গুলো নিয়ে, ওকে শাড়ির ব্যাগটা দিয়ে বললাম, এটা শিউলির বাথরুম থেকে পড়ে নিচে আসো।
নিপাঃ এটা কী?
আমিঃ খুললেই দেখতে পাবে। এই বলে আমি নিচে চলে আসলাম।

নিচে এসে
আমিঃ শিউলি সবকিছু ঠিকমতো করেছিস তো?
শিউলিঃ হ্যা ভাইয়া করেছি। এখন আমাকে পাচ হাজার টাকা বখশিশ দাও।

আমিঃ এইটুকু কাজ করে পাচ হাজার টাকা চাওয়া।
শিউলিঃ থাক লাগবে না। মন খারাপ করে বলল।
আমিঃ এই নে টাকা। আগে থেকেই রেখে দিয়ছি।

তারপর নিপা নীল শাড়ি পড়ে নিচে আসলো।
নিপাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো।

তারপর খাওয়া শেষে সবাই রুমে চলে গেলো।
আমি নিপাকে বললাম, চলো উপরে চলো।
আমি নিপাকে নিয়ে রুমে ঢুকলাম।
নিপা চারদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। সারাঘর ফুলও জড়ি দিয়ে সাজানো।

মাঝে বড় করে লেখা I love you Nidhi..
নিপা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগলো।

আমিঃ করছো কী দরজা খোলা যে কেউ দেখতে পাড়ে।
নিপাঃ দেখুক তাতে কী। আমি আমার স্বামীকে আদর করছি। আমি নিপাকে ছাড়িয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে এসে খাটে বসলাম।

নিপাও এসে আমার পাশে বসে আমার কাধে মাথা রাখলো।
আমিঃ আমি কি তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শুব।
নিপাঃ এতে বলার কি আছে।
আমি নিপার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি।

হঠাৎ নিপা কেদে উঠলো।

আমিঃ এই তুমি কাদছো কেনো?
নিপাঃ তুমি জানো এই সুখের দিনটার জন্য আমি কতো অপেক্ষা করছি।
আমিঃ সরি, আসলে ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ার কষ্টটা বুঝাতে তোমার সাথে এমন করেছি। আমাকে তুমি মাফ করে দাও।
নিপাঃ আমি তোমার উপর রেগে নেই।

তারপর আমরা শুয়ে পড়লাম। নিপা আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমালো।
সকালে নিপার ডাকে ঘুম ভাংলো।
আমিঃ এতো সকালে ডাকছো কেনো?

নিপাঃ এখন সকাল, নয়টা বাজে। কলেজে যেতে হবে না।
আমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিপাকে নিয়ে কলেজে রওনা দিলাম।

কলেজে গিয়ে,

আমিঃ নিপা, চলো ওই গাছতলাতে বসি।
নিপাঃ হুম, চলো।
আমরা বসে কথা বলতেছি, তখন শাহিন, শাওন, সিহাব সাথে রিমিও আসলো।
শাহিনঃ ভাবি, কেমন আছো?

নিপাঃ রাখো তোমার ভালো থাকা আগে বলো এই মেয়ে এখানে কেনো?
শাহিনঃ আসলে ভাবি আমি বলছি ঘটনাটা।
আমিঃ আরে এসব বলার কী দরকার, এখন?

নিপাঃ তুমি চুপ করো।
রিমিঃ আমি বলছি।
নিপাঃ তুমি কী বলবা হ্যা?

রিমিঃ আসলে আমার সাথে সিয়ামের কোন সম্পর্ক নেই, আর আগেও ছিলনা।
নিপাঃ তাহলে বাইকে করে আসা, হাত ধরে ঘোরা এসব কি ছিলো?
রিমিঃ আসলে সিয়াম চেয়েছিলো তোমাকে একটু কষ্ট দিতে। তাই আমি সিয়ামের সাথে অভিনয় করছি।
নিপাঃ কী?

(নিপা এসে আমার কলার ধরলো)
নিপাঃ সিয়াম তুমি আমার সাথে এটা করতে পারলে?
আমিঃ এটা কলেজ নিপা কলার ছাড়ো। সবাই দেখছে।
নিপাঃ সরি। (কলার ছেড়ে দিয়ে বললো)

আমিঃ এইটুকুতেই তুমি এমন করছো। তাহলে তুমি আমাকে যে অপমান করছো। আমার কী করা উচিত?
নিপাঃ সরি। আমাকে ক্ষমা করে দাও।

শাহিনঃ সিয়াম ওসব ভুলে ভাবিকে ক্ষমা করে দে। আমি দেখলাম নিপার চোখে পানি। আমার খুব মায়া হলো।
আমি নিপাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম, আমি কী আমার বড় আপুর উপর রাগ করতে পারি? সবাই হেসে উঠলো।
নিপাঃ ওই কুত্তা তুই কী বললি?

আমিঃ তুমি তুই তুকারি করছো কেনো? তুমি তো আমার সিনিয়র। তুমিইতো তোমাকে আপু বলতে বলছিলা মনে নাই।
নিপাঃ তাই বলে তুই আপু বলবি?
আমিঃ আচ্ছা সরি। আমিতো মজা করছিলাম।
নিধঃ হবে না কানে ধরো।
আমিঃ কী বলছো এসব।

(আমার হারামি বন্ধুগুলাও তাল মিলালো)
আমাকে দশবার কানে ধরে উঠবস করতে হলো। আর হারামি বন্ধু গুলা মজা নিলো।

নিপাঃ চলো সবাই রেস্টুরেন্টে যাব।
আমিঃ কেনো?
নিপাঃ আজকে সবাইকে আমি খাওয়াব।
আমরা সবাই একটা রেস্টিরেন্টে গেলাম।

আজকের বিল নিপা দিলো।
সবাইকে বিদায় বলে আমি আর নিপা একটা রিকশা নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
রাতে খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছি। তখন বাবা আসলো।

বাবাঃ বৌমা তোমার বাবার নাম্বারটা দাও।
আমিঃ কেনো?
বাবাঃ অনেকদিন যাবত ভাবছি, তোদের বিয়ের সময় তো কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। তাই একটা পার্টির আয়োজন করতাম। আর তোদের বন্ধু, বান্ধবিদের জানিয়ে দিস, কাল রাতেই পার্টি হবে।

খাওয়া শেষে নাম্বার দিয়ে আমরা উপরে এসে শুয়ে পড়লাম। নিপা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমালো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বন্ধুদেরকে ডেকে পার্টির কথা বললাম। নিধও ওর বান্ধবিদের জানিয়ে দিলো।
সন্ধ্যায় নিপাদের বাড়ি থেকে, নিপার বাবা, মা, ভাই এবং ওর কিছু কাজিনরা এলো।
তারপর সবাই একসাথে রেস্টুরেন্টে গেলাম।

আগে সবাই খেয়ে নিলাম। তারপর শুরু হলো নাচ। শালিকারা এসে ঘিরে ধরলো বলে যে, তাদের সাথে নাচতে হবে।

নিপাঃ এই না ও নাচবে না। তুমি গেলে কিন্তু তোমার খবর আছে। আমি আর কিছু বললাম না। শালিকারা চলে গেলো।
দেখি হারামি বন্ধিগুলো দারুন মজা করছে। আর আমি কিনা এখন বন্দি।
পার্টি শেষে বাড়ি চলে এলাম। সবাই ক্লান্ত তাই ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন, রাতে ঘুমিয়ে আছি। তখন নিপা আসলো।
নিপাঃ সিয়াম একটা কথা বলার ছিলো।
আমিঃ বলো।

নিপাঃ আমার না একটা বাবু লাগবে।
আমিঃ কি? না আমি এখন পারবো না। নিপাঃ তোমাকে পারতেই হবে।
আমিঃ তুমি এই পিচ্চি ছেলের সাথে এমন করতে পারিবে?
নিপা কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো।

দুজনেই সুখের সাগরে ডুবে গেলাম। কিছুদিন পর জানতে পারলাম নিপা প্রেগন্যান্ট। আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম। এরপর থেকে আমি, শিউলি, মা ওর সেবা করি। ওকে কোন কাজ করতে দেই না। অবশেষে নিপার কোলে জুড়ে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান আসে। তার নাম রাখা হয় সামিয়া।

লেখা – অবুঝ ছেলে

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “এলাকার বড় আপু – বয়সে বড় মেয়ের প্রেমে”গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ুন – আদর্শ বাসর রাত এর ৫টি গোপন সূত্র

1 thought on “এলাকার বড় আপু – বয়সে বড় মেয়ের প্রেমে”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *