ভাইয়ের শালী যখন আমার বউ – True love story in Bengali language

ভাইয়ের শালী যখন আমার বউ – True love story in bengali language: ইয়াহু দরজা আটকিয়ে একটা লুঙ্গি ডান্স দিলাম। রেডি হয়ে ফুরফুরা মনে সবাই কে নিয়ে পার্কে ঘুরতে এলাম। পার্কে এসে ভাবি আর ভাই চলে গেলো অন্য পাশে একটু প্রেমালাপ করতে। ভাবির বোন আর আমি পাশে দাড়িয়ে আছি। কেমন যেনো একটা ইতস্থবোধ হচ্ছে। তারপর…


পার্ট ১

সকালে মনের আনন্দে ঘুমাচ্ছি। হঠাৎ মনে হলো আমাকে কেউ জড়িয়ে ধরেছে।
~ কাছে আসো না এমন করছো কেনো। আমার লক্ষী বউ।

এমন কথা শুনে তাকিয়ে দেখি ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ঠোট আমার দিকে নিয়ে আসছে।
~ এইইই কি হচ্ছে সর বলছি (বলেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম)
~ কি হয়েছে এমন ধাক্কা দিলি কেনো (ভাই নিচে পড়ে)

~ কি করছিলি তুই আমার সাথে তোর মনে নেই। (আমি)
~ কি কি করেছি আমি (ভাই)

~ কি করেছিস দাড়া আম্মুকে বলছি….আম্মু ও আম্মু (আমি)
~ এর মধ্য আম্মুকে ডাকছিস কেনো কি করেছি আমি বলবি তো। (ভাই)
~ একটু দাড়া আম্মু আসুক তারপর বলছি। (আমি)

~ কিরে কি হয়েছে এমন ডাকছিস কেনো আর তোর ভাই নিচে পড়ে আছে যে (আম্মু দরজার সামনে এসে)
~ পড়ে আছে কেনো তাইনা তোমার বড় ছেলে কি করেছে জানো। (আমি)
~ কি করেছে? (আম্মু)

~ তোমার বড় ছেলেকে বিয়ে দাও (আমি)
~ কি বলছিস সকাল সকাল মাথা ঠিক আছে তো। (ভাই)
~ আমার মাথা ঠিক আছে তোমার বড় ছেলে কি করেছে জানো। ঘুমের করে স্বপ্ন দেখে আমাকে বউ মনে করে জড়িয়ে ধরেছে আর…….(আমি)

~ ওই চুপ করবি। (ভাই)
~ আর কি। (আম্মু)
~ আর উম্ম দিতে গিয়েছিলো (আমি)
~ উম্ম মানে কি হু (আম্মু)

~ ভাই চুপ কর প্লিজ (ভাই)
~ উম্ম কি বল (আম্মু)
~ আরে কিস করতে গেছিলো (আমি)

আমার কথা শুনে দেখি আম্মু হাসতেছে আর ভাই লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
~ হাসবা না জানো আমার ইজ্জত চলে যেতো (আমি)
~ তোর আবার ইজ্জত আছে নাকি। (আম্মু)

~ আমি ওতো কিছু জানি না হয় ভাইকে বিয়ে দাও নাইলে ভাইকে অন্যরুমে পাঠিয়ে দাও। আমার কাছে থাকলে কবে যেনো শুনতে পাবে তোমার ছোট ছেলের সাথে তোমার বড় ছেলে কি কি করেছে (আমি)
~ ওই চুপ করবি তোর মুখে একটা কথাও আটকায় না। (ভাই)

~ দেখো কেমন লজ্জা পাচ্ছে বলছি বিয়ে দিয়ে দাও অনেক দিন ভালো মন্দ খাওয়া হয় না ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে কিছু ভালো মন্দ খাওয়া যাবে আবার মেয়েদের সাথে টাংকি মারা যাবে। (আমি)
~ চুপ এতোই যখন শখ যা গিয়ে তোর বাবাকে বল তোর ভাইয়ের বিয়ের কথা আমি পারবো না। (আম্মু বলেই চলে গেলো)

~ ঠিক আছে আমি এখনই যাচ্ছি আব্বুর কাছে। (আমি)
~ ভাই তোর পায়ে ধরি আমাকে বলি কা বাখড়া বানাস না স্বাধীন আছি এটাই ভালো বিয়ে করে বউয়ের গোলাম হতে পারবো না (ভাই)
~ তা হচ্ছে না তোমার জন্য আমার বিয়ে আটকে আছে (আমি)

~ আমার জন্য মানে (ভাই)
~ তুই বিয়ে না করলে আমিও করতে পারচ্ছি না। (আমি)
~ এতোক্ষন পর লাইনে আসছিস বল নিজে বিয়ে করবি শুধু শুধু আমাকে জড়াচ্ছিস কেনো দাড়া আব্বুকে গিয়ে বলছি (ভাই)

~ চুপ বেশি কথা বলবি না ঠিক আছে। (আমি)
রুম থেকে বের হয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার টেবিলে বসে দেখি খাবার রেডি সবাই বসে গেছে
~ কিরে সিয়াম তোর পড়া লেখা কেমন চলছে (আব্বু)
~ পড়া লেখা কোনো গাড়ি নাকি যে চলবে। (আমি)

~ সব সময় ফাইজলামি। আমি বলতে চাচ্ছি পড়া লেখার কি খবর পড়তেছিস তো ঠিক মতো (আব্বু)
~ সেটা আবার বলতে একে বাড়ে ১২ টার খবরের মতো (আমি)
~ চুপ জানি তো পড়া লেখা করিস না (আব্বু)

~ জানোই যখন তাইলে জিজ্ঞাসা করতেছো কেন? (আমি)
~ বেশি বেড়ে গেছিস। কালকে থেকে তোর ভাইয়ের সাথে দোকানে যাবি। (আব্বু)
~ এহ্ আইছে ভাইয়ের সাথে দোকানে যাবে। আর ভালো কথা তোমাকে একটা কথা বলার আছে। আমি ভাইয়ের সাথে থাকতে পারবো না। (আমি)

~ কেনো কি হয়েছে। (আব্বু)
~ কি হয়নি। তোমার বড় ছেলে আমাকে নিজের বউ মনে করে কি কি করতে যায় বিয়ে দাও তোমার বড় ছেলেকে নাহলে আমার আলাদা রুমে পাঠাইয়া দাও। (আমি)
~ দেখ সকাল থেকে অনেক কিছু বলছিস এবার কিন্তু মাইর খাবি। (ভাই)

~ এহ্ আইছে মাইর দিবে লজ্জায় গাল এখনো লাল হয়ে আছে বিয়ের কথা শুনে। (আমি)
~ তোরা দুইটা চুপ করবি তাড়াতাড়ি খেয়ে ভার্সিটিতে যা (আম্মু)
~ হুমম যাচ্ছি। (আমি)
খাওয়া শেষ করে ব্যাগটা নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে গেলাম আর ভাই তার দোকানে।

~ সিয়াম কিন্তু কথাটা মন্দ বলে নি। (মা)
~ মানে কি বলতে চাচ্ছো তুমি (বাবা)
~ না সাকিব তো বড় হয়ে গেছে ওর একটা বিয়ে দিয়ে দিলে হয় না। আমাদের বাসায় ও তো একটা বউ মা দরকার।
~ হুমম ঠিকই বলেছো কিন্তু সাকিব কে জানানো দরকার না বিষয় টা

~ ওকে কি জানাবে দেখলে না মুখটা কেমন লজ্জায় লাল হয়ে আছে। আর তুমি জানোই তো তোমার বড় ছেলে কেমন লাজুক প্রকৃতির ওকে বললে ও কিছুই বলবে না।
~ ঠিক আছে যেটা ভালো মনে করো।

রাস্তা দিয়ে হাটছি ভার্সিটি এখনও অনেকটা দূরে। রিকশাও নেই যে যাবো। ওই তো দূরে একটা রিকশা দাড়িয়ে আছে
~ এই মামা যাবে (রিকশার কাছে এসে)
~ কোথায় যাবেন। (অন্য দিকে তাকিয়ে আছেই)
~ এই সামনেই।

~ সামনে কোথায় (বলতে বলতে পিছনে ঘুরলো)
~ সাদমান তুই……
~ সিয়াম তুই আজকে তোরে খাইছি।
~ আমারে খাইছিস মানে আর তোর এই অবস্থা হলো কি করে।
~ জানিস না তাইনা দাড়া তোরে দেখাচ্ছি।

রিকশা থেকে নামা দেখেই দৌড় দিচ্ছি দেখি ও‌ আমার পিছনে দৌড়াচ্ছে।
~ ভাই আমি করছি কি বলবিতো। (দৌড়াতে দৌড়াতে)
~ তুই আমার আব্বার কাছে ফোন করে কি বলছিস। এখন আব্বা আমারে একটা টাকাও দেয়না আর উল্টা আমারে তার প্রতিদিন এখন পাঁচশ টাকা দেওয়া লাগে। তোর জন্য আমার গার্লফ্রেন্ড টাও চলে গেছে। দাড়া বলছি দৌড়াবি না দাড়া (পিছনে দৌড়াচ্ছে আর বলতেছে)

ওর কথা শুনে মনে পড়লো। কয়েকদিন আগে ওর আব্বারে ফোন করছিলাম।
~ আসসালামু ওয়ালাইকুম আংকেল। (আমি)

~ ওয়ালাইকুম আসসালাম কে বলছেন। (ওপাশ থেকে)
~ আমাকে আপনি চিনবেন না। শুধু একটা কথা বলার জন্য আপনাকে ফোন করেছি।
~ কি

~ আপনার ছেলে সাদমান ভার্সিটিতে এসে কি করে জানেন।
~ মানে কে বলছেন আর আমার ছেলে কি করেছে।
~ আপনার ছেলে ভার্সিটিতে মেয়েদের ডিস্টার্ব করে আর আপনি যে টাকা দেন সেই টাকা মেয়েদের পিছনে উড়াই। (বলেই ফোনটা কেটে দিছি)

কিন্তু ও কিভাবে জানলো যে আমি ফোন করে ছিলাম হয়তো নাম্বার দেখছে। রাগ হয় ছিলো তাই রাগের মাথায়কি বলছিলাম নিজেরও মনে নাই। সিয়াম দৌড়া নিজের বেঁচে থাকলে আরও রিকশা পাবি।
~ ওই দৌড়াবি না দাড়া (পিছন থেকে)

কে শোনে কার কথা আমি তো ঝাড়ে দৌড়। খালি মনে করতেছি আমার পিছন থেকে পাগলা কুত্তা দৌড়ানি দিতাছে হি হি।


পার্ট ২

দৌড়াতে দৌড়াতে হাপিয়ে গেছি। পিছনে তাকিয়ে দেখি ও আর নেই। মনে হয় রিকশার মায়া করে চলে গেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ক্লাসের ১০ মিনিট লেট হয়ে গেছে। দৌড়িয়ে গেলাম।
~ স্যার আসবো (আমি)

~ আরে সিয়াম এসেছো আসো আসো তোমার জন্য ক্লাসটা ফাকা ফাকা মনে হচ্ছিলো। এমন হাপাচ্ছো কেনো দৌড়ে আসছো বুঝি। (স্যার)
বুঝলামনা স্যারের সুর এমন শোনাচ্ছে কেনো আমাকে আবার পচানো জন্য খিচুড়ি পাকাচ্ছে না তো কে জানে কি হয়।

~ ছাত্র ছাত্রীরা তোমরা দেখো পড়ার প্রতি কি গুরুত্ব দেয় ছেলেটা। রাস্তায় এতো গাড়ি থাকতেও সে দৌড়িয়ে ভার্সিটিতে আসে। তা সিয়াম তোমার কাছে একটা প্রশ্ন দৌড়ে আসার কারণ কি। টাকা বাঁচানোর জন্য তা কয় টাকা বাঁচে। (স্যার)

ক্লাসের সবাই হাসচ্ছে। বুঝেছি স্যার আমাকে আজকে না পচিয়ে ছাড়বে না সুযোগ পেয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে। কারণটা হলো কয়েকদিন আগে স্যার সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। আস্তে করে একটা চুইংগাম চিবিয়ে তার প্যান্টের সাথে লাগিয়ে দিছিলাম। পড়ে একটা চেয়ারে বসার পর স্যার আর উঠতে পারে না।

অনেক জোড়াজুড়ির পর উঠছিলো। কিন্তু স্যার বুজতে পারলো কি ভাবে যে ওইটা আমি লাগিয়ে ছিলাম। হয়তো কেউ বলে দিয়েছে। বুঝতেছি না আজকে যে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছি। ও ভাইয়ের মুখ দেখে সেই জন্যই তো আজকে এই অবস্থা।
~ স্যার আমি গিয়ে বসবো (আমি)

~ ও হ্যা যাও দৌড়িয়ে এসেছো যাও জায়গায় গিয়ে বসো কিছু লাগবে ওই কেউ পাখা দিয়ে বাতাস করো ওকে (স্যার)
স্যারের কথা শুনে ক্লাসের সবাই হেসেই যাচ্ছে। এমন হচ্ছে আমি যেনো একটা হাসির পাত্র। ঠিক আছে আমিও দেখে নিব। ক্লাসটা শেষ হোক। তারপর ভদ্র ছেলের মতো এক কোনায় চুপচাপ বসে ছিলাম কোনো কথা বলিনি। জানি কথা বললেই স্যারের ভাষণ শুনতে হবে। ভার্সিটি শেষে সোজা বাসায় চলে আসছি।
~ আম্মু খেতে দাও ক্ষুদা লাগছে। (আমি)

~ এহ্ আইছে নবাব পুত্র বাসায় আসতে না আসতেই খেতে দাও ক্ষুদা লাগছে টেবিলে খাবার আছে নিয়ে খা। (আম্মু)
কি বেপার আম্মু হঠাৎ করে এই কথা বললো কেনো। এমনটা তো কখনও হয়।
~ কি বেপার আম্মু এমন করছো কেনো আজকে কি হয়েছে। (আমি)
~ কি হয়নি সকালে তুই কি বলেছিস
~ আমি আবার সকালে কি বললাম,

~ মনে নেই
~ না
~ আমি আর তোর বাবা ভেবে নিয়েছি সাকিবের বিয়ে দিবো।
~ ওয়াও সত্যি

~ এতো খুশি হবার দরকার নেই। বিয়ের কথা যেহেতু তুই বলেছিলি সুতরাং শাস্তি হিসাবে তোকেই মেয়ে খুজতে হবে।
~ আম্মু এমন একটা বাচ্চা শিশুকে তুমি এতো বড় শাস্তি দিতে পারলে। তুমি জানো যে আমি কোনো মেয়ের পিছনে ঘুরি না।

~ এহ্ আইছে বাচ্চা শিশু আর মেয়েদের পিছনে ঘুরে না তাইলে কি করো আচল ধরে বসে থাকো যা কাজে নেমে পর। যত দিন পর্যন্ত খুজতে পারবি না তত দিন পর্যন্ত নিজে হাতে নিয়ে খাবি। (আম্মু)
এ কেমন বিচার বিয়ে করবে ভাই আর বউ খুজে দিতে হবে আমাকে।
কোনো কিছু না ভেবে নিজের হাতেই সব কিছু নিয়ে খেলাম। রাতে ভাইয়া দোকান থেকে আসলো। খাবার খাওয়ার জন্য আম্মু ডেকে গেলো।

খাবার টেবিলে বসে আছি। আম্মু সবাইকে ভাত বেড়ে দিলো কিন্তু আমাকে দিলো না কেমন ডা লাগে।
~ কি হলো ওকে দিলে না যে (ভাই)
~ ওর কাজ আগে পূরণ করবে তারপর না হলে নিজের হাতে নিয়ে খেতে কবে। (আম্মু)
~ কি কাজ (ভাই)

~ আমি আর তো বাবা মিলে ঠিক করেছি তোর বিয়ে দেবো আর সেই জন্য তোর বউ খুজার জন্য ওকে দায়িত্ব দিয়েছি সেটা না করা পর্যন্ত শাস্তি বরাদ্দ থাকবে। (আম্মু)
ভাই দেখি ভাত গালে নিয়ে আমার দিকে এক অদ্ভুত ভাবে তাকালো। হয়তো মনে মনে বলছে।

~ দেখ কেমন লাগে। আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলি তাইনা।
বুঝলাম ভাইও মনে মনে খুশি। আজকে কেনো যে ঘুম থেকে উঠেই ভাইয়ের ওই রকম মুখটা দেখলাম। সারাদিন টাই খারাপ গেলো।
রাতে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভাই এসে উপস্থিত।

~ কিরে তুই এখানে কেনো (আমি)
~ এখানে কেনো মানে ঘুমাবো
~ না তুই এই রুমে ঘুমাতে পারবি না অন্য রুমে যা।
~ আমি তো এখানেই ঘুমাবো দরকার পড়লে তুই যা।

~ দেখ বেশি বারাবারি করবি না এমনিতেই মন মেজাজ ভালো না।
~ তোর মন মেজাজের নিকুচি করি (বলেই শুয়ে পড়লো)
~ এই যে মাঝ খানে পাশবালিশ দিলাম। এইটার এই পাশে আসলে কিন্তু ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো। (আমি)
কোনো কথা না বলে অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো।

ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ কিসের আওয়াজে যেনো ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। পাশে তাকিয়ে যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম। ভাই পাশবালিশ টাকে জড়িয়ে ধরে কি করতেছে ছি ছি। না এভাবে আর থাকা যায় না ওকে বিয়ে দিতেই হবে। কিন্তু তার জন্য আবার মেয়ে আমাকে খুজতে হবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম।

~ ভাই চল। (আমি)
~ চল মানে কই যাবি?
~ দোকানে কেনো?
~ আজকে সূর্যকোন দিকে উঠেছে। (আব্বু)

~ ছি আব্বু এতো বড় হয়েছো এখনও পর্যন্ত জানোনা সূর্য কোন দিকে ওঠে (আমি)
~ আমি বলতে চায়ছি আজকে কি মনে করে দোকানে যাবি কোনো দিন বলেও তো পাঠানো যায় না। (আব্বু)
~ কিছু করার নেই ভাইয়ের জন্য যেতেই হবে
~ মানে

~ মানে ওর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে হবে না। রাত ভরে যে কি কি করে।
~ ওর মেয়ে দেখার সাথে তোর দোকানে যাবার কি সম্পর্ক
~ তোমার বয়স হয়েছে বেশি বুঝা লাগবে না এমনি তেই চুল অর্ধেক পেকে গেছে। ভাই চল (আমি)
ভাইয়ের সাথে দোকানে এসে বসে আছি।

~ শোন ভাই সামনে দিয়ে যেই মেয়েই যাবে মনে করবি ওইটাই তোর বউ হবে বুঝছোস। (আমি)
~ কেমনে
~ সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না তুই চুপ চাপ বেচা কেনা কর।

আমি এক কোনায় বসে শুধু মেয়েদের দেখছি। কোনটাকে ভাবি বানানো যায়। হঠাৎ দেখি এক সুন্দরি মেয়ে দোকানের দিকে এগিয়ে আসছে। হুমম এটাকে ট্রাই করে দেখি ভাবি বানানো যায় কিনা।
মেয়েটা ভাইয়ের কাছে এসে কি যেনো জিনিস চেয়েছে। ভাই দেখি এক ভাবে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে সাথে মেয়েটাও। জিনিসটা ভাই মেয়েটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক যেনো পড়ছেই না। তাদের কে উদ্দেশ্য করেই একটা গান ধরলাম।

“পড়ে না চোখের পলক, কি তোমার রুপের ঝলক।”
মেয়েটা লজ্জা পেয়ে জিনিসটা নিয়ে অন্য দিকে ঘুরে হাটা ধরলো। কিছু দূর গিয়ে দেখি আবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো। বাহ্ পেয়ে গেছি।
~ এই জন্যই তো বলি প্রতিদিন এতো রোমান্টিক স্বপ্ন দেখে কিভাবে। তা ভাইয়া তোর স্বপ্নের রাণী কি এইটা। (আমি)
~ কাজটা ঠিক করলি তোর জন্য চলে গেলো।

~ বাহ্ ভালোই তো দাড়া বাসায় বলছি তারপর সারা জীবন দেখিস।
~ দেখ ভাই যাই দেখছোস বাসায় বলিস না।
~ এহ্ বললেই হলো তোর জন্য এখন আমার নিজের হাতে নিয়ে খেতে হয়।
আর কোনো কথা না বলে বাসায় চলে এলাম।

~ কিরে চলে এলি কেনো। (আম্মু)
~ বলছি আগে খাইয়ে দাও
~ শাস্তির কথা ভুলে গেছিস
~ না ভুলিনি মনে আছে আর তোমার কাজও হয়ে গেছে।

~ এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে
~ দেখতে হবে না আমি কার ছেলে আগে খাইয়ে দাও তারপর বলছি।
আম্মু চুপচাপ ভাত খাইয়ে দিলো নিজের হাতে। আহ্ কি মজা।
~ এখন বল মেয়েটা কে

~ আমি কি মেয়ে খুজবো তোমার বড় ছেলে তলে তলে কি করছে দেখো।
~ কি করেছে ও
~ কি আর করবে একটা মেয়েকে পছন্দ করে আর মেয়েটাও ভাইয়াকে পছন্দ করে। কিন্তু দূঃখের বিষয় হলো কেউ কাউকে মনে হয় মনের কথা বলে নি।

~ সাকিব আজকে বাসায় আসুক যদি তোর কথা সত্যি হয় তাহলে কালকেই মেয়ের বাসায় যাবো।
~ ঠিক আছে ভাইয়াকে আসতে দাও।
যথা রিতি ভাই রাতে বাসায় আসলো। আসার সাথেই আম্মুর রেডিও বাজা শুরু
~ সাকিব শোন

~ হ্যা মা
~ সিয়াম আমাকে যা বললো তা কি সত্যি।
দেখি ভাই আমার দিকে তাকালো। হয়তো বুঝে গেছে আম্মু ওকে কি বলতে চাচ্ছে।
~ না মানে…..(লজ্জায় লাল হয়ে)

~ থাক বুঝতে পেরেছি। নাম কি ওর আর বাসা কোথায়
~ জ্বি ওর নাম তিতলি আর বাসাটা আমার দোকানের অপর পাশেই যে বিল্ডিং আছে ওই টা।
~ আচ্ছা তুই রুমে যা আমি দেখছি
~ সিয়াম শোন (আম্মু)

~ হ্যা
~ কালকে আমরা সকালে মেয়ে দেখতে যাবো রেডি থাকিস
~ তোমরা যাও আমি তো দেখছি আমি যাবো না।

~ ঠিক আছে তোর যেতেও হবে না বলা যায় না যদি কোনো গন্ড গোল পাকিয়ে ফেলিস।
~ ধুর সব সময় খালি উল্টা বোঝে। থাকো তুমি।
তারপর রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।


পার্ট ৩

লেখকঃ সিয়াম হোসেন
সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুটা অবাক হলাম। কারণ ভাই পাশে নেই। তাহলে গেলো কোথায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় ৯ টা বাজে। আম্মুও ডাক দেয়নি সকালে বেপার কি। বিছানা থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে বাইরে এলাম।
~ আম্মু (জোড়েই ডাকদিলাম)
কারও কোনো সাড়া শব্দ নেই। ভালো ভাবে চারপাশে তাকিয়ে দেখি সব কিছু শান্ত। মনে হচ্ছে এই বাসাটা অনেক দিন ধরে পরিত্যক্ত কারও কোনো অস্তিত নেই। কোথায় গেলো সবাই। আম্মুর রুমে গেলাম সেখানেও নেই। তাহলে কোথায় যেতে পারে। কোনো কিছু না ভেবে আম্মুর নাম্বারে ফোন দিলাম।

~ হ্যালো আম্মু কই তুমি(আমি)
~ শোন আমরা তোর ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে আসছি পরে ফোন দে।
~ পরে ফোন দিবো মানে আর মেয়ে দেখতে গেছো আমাকে বলবানা।

~ তোকে তো কালকেই বললাম যে আমরা সকালে মেয়ের বাসায় যাবো।
~ ঠিক আছে কিন্তু আমাকে সকালে বলবে না।
~ তুই ঘুমিয়ে ছিলি তাই বলার কিছু মনে করিনি।
~ আজব

~ আজবের কিছুই নাই টেবিলে খাবার রাখা আছে খেয়ে নে আর বাসা থেকে কোথাও যাবি না ঠিক আছে। (বলেই ফোন কেটে দিলো)
কেমন লাগে মানলাম কালকে না করেছি তাই বলে আমাকে বলবে না। ফ্রেশ হয়ে এসে খেয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম। আম্মুও খুব চালাক বাইরে থেকে তালা দিয়ে গেছে যাতে বাইরের বেরতে না পারি।

নিজেকে কেমন যেনো একটা বন্দি পাখির মতো মনে হচ্ছে। রুমে এসে মোবাইলে গেমস খেলছি। কিছুক্ষন বাদে দেখি আশিকের ফোন। (আশিক আমার বন্ধু একই সাথে পড়ি)
~ হ্যালো সিয়াম( অপাশ থেকে)
~ হুমম বল

~ কি বেপার ভার্সিটিতে আসলি না স্যার তো তোকে সেই রকম মিস করতেছে। (বলেই হাসতে লাগলো ওর হাসির আওয়াজ পাচ্ছি)
~ দেখ এমনিতেই ভালো লাগছেনা। ফাইজলামি করলে টম এন্ড জেরি কার্টুনের মতো মোবাইলের ভিতরেই মারমু (আমি)
~ আচ্ছা বাদ দিলাম। বল আসলি না কেনো।

~ আর বলিস না। আম্মু আব্বু সবাই গেছে ভাইয়ের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে আর আমাকেও বলে নাই। এমনকি বাইরে থেকে তালা দিয়ে গেছে যাতে বের হতে না পারি।
~ হা হা হা
~ হাসছিস কেনো
~ তোর আম্মু তোকে এখনও ঘরের মধ্য রেখে বাইরের থেকে তালা দেয় ঠিকই আছে।

~ চুপ দাড়া আজকে বাসায় আসুক তোরে পাইলে কি করবো নিজেও জানি না
~ রাগ করিস কেনো। আচ্ছা তোর ভাইয়ের বিয়েতে দাওয়াত দিস অনেক দিন ভালো মন্দ খাওয়া হয় না। অবশ্য তুই দাওয়াত না দিলেও আন্টি ঠিকই দিবে।
~ হ আসিস এখন রাখ।

ফোন কেটে দিয়ে আবার গেমস খেলতে লাগলাম। কিছুক্ষন বাদে মন হলো কেউ দরজা খুলছে। হয়তো আম্মুরা চলে এসেছে। রুম থেকে বাইরে বের হয়ে দেখি। তারা রুমে প্রবেশ করছে। চোখে মুখে হাসির ছাপ। তার মানে ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
~ সিয়াম শোন (আব্বু)
~ কি

~ তোর ভাইয়ের বিয়ের কথা পাকা করে এসেছি। এখন বিয়ে পর্যন্ত যত কাজ আছে তোকেই করতে হবে।
~ আমি পারবো না
~ বিয়ের কথা তুলেছিলি তুই সুতরাং যা কাজ আছে তোকেই করতে হবে।
~ আগে বলো আমাকে ভিতরে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়েছিলে কেনো।
~ ও ওই ম মনে করেছিলাম ভিতরে কেউ‌ নেই তাই তালা মেরে রেখে দিছিলাম। (আব্বু)

বলেই সবাই রুমে চলে গেলো। মানে কি রুমে কেউ নেই। একটা জলজ্যান্ত মানুষ ঘরের ভিতরে থাকতেও তারা মনে করে ঘরে কেউ নেই। না এটা মেনে নেওয়া যায় না। রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গলির মাথায় দাড়িয়ে আছি।
~ কিরে এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো (পিছনে তাকিয়ে দেখি আশিক)

~ এমনি ভার্সিটি থেকে চলে আসলি কেনো।
~ ভালো লাগছিলো না তাই। তা তোকে কি মুক্ত করে দিছে। (বলেই একটা হাসি দিলো)
~ মেরে তোর বত্রিশটা দাঁত ফেলে দিবো। আমি বাঁচতেছি না আমার জ্বালায় আর ও হাসছে।
~ বত্রিশটা নেই ত্রিশটা আছে।

~ আবার
~ আচ্ছা তা তোর আবার কিসের জ্বালা
~ আম্মুরা বাসায় আসছে বুঝছোস। জিজ্ঞাসা করলাম তালা দিয়ে গেছিলো কেনো বলে কি জানিস
~ কি
~ বলে মনে করেছিলাম ঘরে কেউ নেই তাই তালা দিয়ে গেছি। কেমন ডা লাগে তুই বল। আমার মতো একটা এত বড় ছেলে থাকতে বলে ঘরে কেউ নেই।

আমি মনে হয় কোনো হাসির জোকস বলেছি যে আশিক এক ভাবে হেসেই যাচ্ছে।
~ দাড়া তোর হাসি আমি বন্ধ করছি (বলেই লাঠি খুজতে লাগলাম)
তাকিয়ে দেখি আশিক দৌড় দিছে মনে হয় ভয় পায়ছে। ভেবে নিজেই হেসে উঠলাম মনে মনে।
আরও কিছুক্ষন ঘোরা ঘুরি করে বাসায় চলে এলাম।

~ কিরে কোথায় গেছিলি। (আম্মু)
~ সেটা যেনে তুমি কি করবে
~ কি করবো মানে আর তোর ফোন বন্ধ কেনো।

~ তোমার না জানলেও চলবে। ঘরে থাকতেও ভাবো ঘরে কেউ নেই তাহলে আমি থাকা আর না থাকা নিয়ে কার কি।
~ রাগ করিস কেনো আচ্ছা তোর ভাইয়ের বিয়ে আগামী সপ্তাহে সুতরাং মার্কেট করা লাগবে তো। কালকে তুই আর তোর ভাই গিয়ে মার্কেট করে আসবি।
~ আর তোমরা

~ আমরা বাসায় থাকবো।
~ কেনো
~ কারণ তোর ভাইয়ের বিয়ে সেহেতু সব কাজ তোকেই করতে হবে।
~ ধুর

রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। বিয়ের কথা তুলে নিজেই যেনো বোকা বনে গেছি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি। ভাই এক ভাবে শুয়ে আছে। বাহ্ বিয়ের জন্য গড়াগড়িও কমে গেছে। ভালো তো। ফ্রেশ হয়ে এসে ভার্সিটি যাবার জন্য রেডি হচ্ছি।
~ কিরে কোথায় যাচ্ছিস (আম্মু)

~ ভার্সিটিতে
~ কেনো ভুলে গেলি নাকি কালকের কথা আজকে তুই আর তোর ভাই মার্কেটে যাবি। আর তোর ভাইয়ের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত কোথাও যেতে পারবি না।
~ আম্মু

~ কোনো কথা হবে না যা তোর ভাইকে ডাক দে রেডি হয়ে মার্কেটে যা।
রুমে এসে দেখি এখন শুয়ে আছে। দিলাম এক ধাক্কা পড়ে গেলো খাটের ওই পাশে।
~ কি হলো ধাক্কা দিলি কেনো

~ তোর শান্তি তে ঘুম পারাচ্ছি। তোর বিয়ের জন্য আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আর উনি ঘুমাচ্ছে।
~ তো কি হয়েছে জানিস কি সুন্দর স্বপ্ন দেখতেছিলাম।
~ আর দেখতে হবে না যা ফ্রেশ হয়ে আয় মার্কেটে যাবো।
ভাই উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

দুজনে রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম মার্কেটের উদ্দেশ্য। মার্কেটে এসে ভাইয়ের জন্য পান্জাবী পছন্দ করছি। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেনো এসে বললো
~ সাকিব কেমন আছো (ঘুরে দেখি হবু ভাবি মনে হয় সেও মার্কেট করতে এসেছে)
~ ভালো তুমি এখানে। (ভাই)

~ এই মার্কেট করতে এসেছি। শোনো না আমার এক জোড়া চুড়ি কিনবো তুমি পছন্দ করে দিবে। (ভাবি)
~ ভাবি এতো ভালো বাসা দেখিও না হিংসে হয়। (আমি)
~ কেনো হিংসে হবে কেনো
~ কারণ আমি সিঙ্গেল (বলেই মাথাটা নিচু করে ফেললাম)

~ থাক লজ্জা পেতে হবে না। তুমি কেমন তোমার মা আমাদের বাসায় এসে বলেছে।
এই যা মান সম্মানের মনে হয় বারো টা বাজিয়ে দিয়ে এসেছে।
~ শোনো তুমি এখানে তোমার ভাইয়ের জন্য পান্জাবী পছন্দ করো আমি আর তোমার ভাই আসছি। (ভাবি)

যা আসলাম মার্কেট করতে আর ভাই পেয়ে গেলো গুপ্তধন। এখন আমার কি হবে।
~ ভাবি একটা কথা জিজ্ঞাসা করি।
~ কি
~ না মানে বলছিলাম কি তোমার কোনো ছোট বোন আছে

~ কেনো
~ না মানে তুমি তো ভাইকে নিয়ে যাবে আমি একা হয়ে যাবো তাই বলছিলাম আরকি।
~ তোমার মুখে কিছুই আটকায় না।
~ বলনা ভাবি আছে নাকি

~ হুমম আছে তবে ও এখানে আসেনি। সময় হলেই দেখতে পাবে। (একটা হাসি দিয়ে পিছন ঘুরে চলে গেলো)
ধুর আর কি করার একাই সব মার্কেট করলাম। আর ভাইতো সারাক্ষন ভাবির আচল ধরেছিলো। বিয়ের আগেই এই অবস্থা আর বিয়ের পরে কি হবে কে জানে।

মার্কেট শেষে বাসায় এসে সোজা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। সারা শরীর ব্যাথা করছে। আবার একদিক দিয়ে সুবিধায় হলো। ব্যাথা শরীরে ঘুম বেশি হয়। চোখ বুজার সাথে আর কি হয়েছে মনে নাই।


পার্ট ৪

লেখকঃ সিয়াম হোসেন
শরীর ব্যাথা হয়ে আছে। তাই শুয়ে আছি মনে হয় না বিছানা থেকে উঠতে পারবো।
~ ওই সিয়াম ওঠ (আম্মু)

~ আম্মু ঘুমাতে দাও তো সারা শরীর ব্যাথা আমি উঠতে পারবো না।
~ তা বললে হবে না ওঠ অনেক কাজ বাকী এখনও।
~ কাজ বাকী মানে আবার কি কাজ আছে মার্কেট তো করেইছি।

~ মার্কেট করলেই কি কাজ শেষ হয়ে যায়। কার্ড বানাতে হবে। বাড়িটা সাজাতে হবে। অন্যান্য দের দাওয়াত করতে হবে। কত কাজ তাড়া তাড়ি ওঠে ফ্রেশ হয়ে নে। আর গিয়ে তোর ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে একটা সুন্দর করে কার্ড বানাতে দিয়ে আয়
~ আম্মু…..

~ আর একটা কথাও না সময় নেই তাড়াতাড়ি যা।
ধুর কেমন লাগে। ভাবছিলাম একটু ঘুমিয়ে থাকবো তা আর হলো না। বিয়েতে যে এতো ঝামেলা আগে জানলে কখনই ভাইয়ের বিয়ে কথা বলতাম না বাসায়। সেটা বাদ আম্মু রাও কেমন আমি না হয় কি না কি বলেছিলাম। আর তাড়াও রাজি হয়ে গেলো।

~ কিরে সিয়াম তোর হলো (আম্মু বাইরে থেকে ডাকছে)
~ হুমম হয়েছে।
~ আয় নাস্তা করে বেড়িয়ে পড়।
নাস্তা করে বাইরে বের হচ্ছি।
~ শোন (পিছন থেকে আম্মু)
~ আবার কি

~ কার্ড টা বানিয়ে দিয়ে ডেকোরেশন এর দোকানে যাবি। আর বলবি একটা বিয়ের অনুষ্ঠান সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে হবে বাড়ি ঠিক আছে। (আম্মু)
~ হু ( মুখ গোমড়া করে)
~ এমন করিস কেনো তোরই তো ভাই তাইনা যা বাবা রাগ করিস না (মায়া ভড়া কন্ঠে)
~ যাচ্ছি।

বাইরে এসে কার্ডের দোকান খুজে একটা পেলাম কিন্তু যে ভাবে বললো আমার পছন্দ হয় না। ভালো ভাবে তৈরি করতে পারে কে নিজেও জানি। মনে পড়লো এর আগে তো সাদমানের বোনের বিয়েতে আমাদের দাওয়াত দিয়েছিলো কার্ডটাও অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে ছিলো। সাদমানের সাথে যোগাযোগ করে দেখি।

এটা ভেবে যেই ফোন দিতে যাবো ওমনি মন খারাপ হয়ে গেলো। কারণ সাদমান যে ভাবে আমার উপর রেগে আছে। মনে হয় ফোনের মধ্যই খেয়ে ফেলবে। আচ্ছা ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবো। এটা ভেবেই ফোন দিলাম। কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। দুই তিনবার দিয়েও একই অবস্থা বন্ধ।

আচ্ছা ওকে কোথায় পাওয়া যাবে। রিকশা স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি বেচারা রিকশার হুডি তুলে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। দেখতেই একটা শয়তানি হাসি দিলাম মনে মনে। বেচারা আমার জন্য কত কষ্টই না করতে হচ্ছে।
~ এই সাদমান ওঠ (ওর কাছে এসে)

~ তুই দাড়া তোরে আজকে খায়ছি (চোখ খুলেই)
~ ভাই খাওয়া দাওয়া পড়ে করিস তোর সাথে যা করেছি তার জন্য সরি রে।
~ নিকুচি করি তোর সরি। তোর জন্য আমার এই অবস্থা তোকে তো কোনো ভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না।

~ ভাই রাগ করিসনা সেদিন তোর উপর রাগ উঠেছিলো তাই কি না কি বলেছি মনে নেই। আমি একটা কাজের জন্য তোর কাছে এসেছি বুঝার চেষ্টা কর।
~ ঠিক আছে তবে একটা শর্ত আছে
~ কি

~ তুই আমার বাবার কাছে ফোন করে যা বলেছিস বলবি যা কিছু বলেছিলাম সব মিথ্যা। যদি রাজি থাকিস বল
~ আচ্ছা ঠিক আছে ফোন দে আংকেলের কাছে
~ আমার কাছে ফোন নেই
~ কেনো

~ তোর জন্য তুই বলার পরে আমার ফোনটাও নিয়ে গেছে। তোর ফোন দিয়ে দে (রেগে)
~ আচ্ছা ভাই দিচ্ছি।
নাম্বার বের করে সাদমানের বাবার কাছে ফোন দিলাম।
~ আসসালামু ওয়ালাইকুম আংকেল।
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম

~ আংকেল আমাকে চিনতে পেরেছেন। এর আগে সাদমানের বিষয় নিয়ে ফোন দিছিলাম। আসলে আংকেল আপনাকে যা বলেছিলাম সব মিথ্যা ছিলো। আপনার ছেলে অনেক ভালো রাগ হয়েছিলো বলে কি বলেছিলাম মনে নেই। ওকে মাফ করে দিন

~ কি তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছিলে। তুমি জানো তোমার জন্য আমার ছেলেকে কত কষ্ট দিয়েছি আমি। (কর্কষ কন্ঠে আরও কিছু কথা শুনিয়ে কেটে দিলো)
~ নে ভাই বলে দিয়েছি এখন তো সাহায্য করবি।
~ হুমম বল কি করতে হবে।

~ আমার ভাইয়ের আগামী কয়েকদিন বাদে বিয়ে তাই কার্ড বানাতে দিবো। তোর বোনের বিয়ের কার্ডটা কার কাছ থেকে বানিয়ে ছিলি। যদি সেখান থেকে আমার ভাইয়েরটাও বানিয়ে দেওয়ার কথা বলে দিতি আরকি।
~ ঠিক আছে তুই আমার সাথে আয়।

তারপর সাদমানের সাথে গিয়ে কার্ডটা বানাতে দিলাম। বললো দুইদিন লাগবে। কার্ডটা বানাতে দিয়ে এসে চলে গেলাম ডেকোরেশনের দোকানে। তারা কালকে থেকে কাজ করবে। যাক সব কাজ শেষ এখন একটু বাসায় গিয়ে ঘুমাতে হবে। বাসায় এসে দেখি ফুফু আর ফুপা এসেছে।
~ কেমন আছো ফুফু (আমি)

~ এই তো ভালো তুই।
~ ভালো কখন আসলে।
~ অনেকক্ষন হলো কোথায় ছিলি তুই দেখতে পেলাম না।

~ এই একটু বাইরে কাজ করতে গেছিলাম। আচ্ছা তোমরা বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
সেখান থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে যেই একটু ঘুমাতে যাবো আম্মু এসে হাজির।
~ তোর ফুফুরা আসছে বাজার করে নিয়ে আয়

~ এইটা কোনো কথা সকাল থেকে কাজ করেছি এখন আমি ঘুমাবো।
~ এমন করিস কেনো। তোর ফুফুরা কি ভাববে
~ হুমম যাচ্ছি ( মন খারাপ করে)

তারপর বাজার করে এনে সোজা ঘুমিয়ে পড়লাম। পরেরদিন সকালে ডেকরেশনের লোকরাও চলে এসেছে। তাই সকাল থেকেই তাদের সাথে লেগে আছে। কোথায় কি করতে হবে। সব কিছু দেখিয়ে দিচ্ছি। একদম নিজের পছন্দ মতো তাদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিলাম। সারা বাড়িটা এখন চকচক করছে লাইটের আলোয়। দেখতে দেখতে ভাইয়ের বিয়েটাও চলে এসেছে।

সবাই রেডি হয়ে বর যাত্রি যাচ্ছি হবু ভাবিকে আনতে। আর অল্প কিছুক্ষনই হবু থাকবে তারপর তো ভাবি। গেটের সামনে দাড়ালাম। অনেক মেয়ে গেট আটকিয়ে ধরে রেখেছে। তাদের এক দাবি টাকা না দিলে গেট খুলবে না।
~ টাকা দেন তারপর গেট খুলবো।

~ ভাই কিছু একটা কর আমি টাকাও আনি নাই। (ভাই কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো)
~ সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। দাড়া দেখছি কি করা যায়। (আমি)
~ কানে মুখে কি কথা হচ্ছে দুজনের টাকা না দিলে আজকে গেট ছাড়বো না। (মেয়েরা)

~ ঠিক আছে আমি সবাইকে টাকা দিবো। কিন্তু এই ভিড়ের ভিতরে তো আর দেওয়া যায় না। এক কাজ করুন গেটটা খুলে তাদের যেতে দিন আমি না হয় আপনাদের সাথেই থাকবো। (আমি)
~ ঠিক আছে তবে যদি কোনো চালাকি করেন খবর আছে। ওই বরকে যেতে দে বরের ভাইকে ধর। (ওদের সামনে থাকা একটা মেয়ে)

গেট খুলে ভাই চলে গেলো। আর আমি আটকে আছি। আস্তে করে মানিব্যাগ থেকে টাকা কয়টা বের করে তাদের হাতে মানিব্যাগটা ধরিয়ে টুক করে কেটে পড়লাম।
কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানোয় ব্যাস্ত। আমি চারপাশটা ঘুরে দেখছি।

~ আপনি আমাদের এভাবে ঠকালেন কেনো (পিছন থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠে)
পিছনে তাকিয়ে যেনো কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকে গেছি। একটা মেয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে। চুল গুলো খুলে দেওয়া চোখে কাজল ঠোটে হালকা লিপিষ্টিক আর মুখে হালকা মেকাপ সব মিলিয়ে অপূর্ব লাগছে।

~ কি হলো কথা বলছেন না কেনো (সামনে তুড়ি মেরে)
~ কি
~ আপনি আমাদের ঠকালেন কেনো
~ আমি আবার কখন ঠকালাম।

~ আপনি যে মানিব্যাগ দিছেন ওর ভিতরে টাকা নেয় কেনো
~ এটা তো হতে পারেনা দেখেন কেউ নিয়ে নিয়েছে কিনা।
~ আমাদের কেউ টাকা নেয়নি আপনি ফাকা মানিব্যাগ দিয়েছেন ফকির একটা (বলেই অন্য পাশ হয়ে হাটা দিলো)
~ শুনুন

~ কি
~ নাম কি আপনার
কিছু না বলে মুখ বাকিয়ে চলে গেলো। ও দিকে বিয়ের কাজও শেষ। তাই আর মেয়েটার সাথে কথা বলতে পারিনি। আসার সময় সারা রাস্তা তার চিন্তায় কাটিয়ে দিলাম। আচ্ছা তার দেখা কি আর পাবো না। মন খারাপ হলো কিছুটা।
~ বাসায় এসে সব কাজ শেষ করে ভাই গেলো বাসর ঘরে আর আমি গেলাম নিজের ঘরে। আজকে কেমন যেনো ফাকা বিছানা মনে হচ্ছে। কারণ ভাইযে এখন অন্য রুমে। ক্লান্ত লাগছে তাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।


পার্ট ৫

লেখকঃ সিয়াম হোসেন
বিয়ের ঝামেলা শেষ। তাই শান্তিতে ঘুমানো যাবে। কিন্তু সেটাও মনে হয় সম্ভব না।
~ এই সিয়াম ওঠো।

কি বেপার আম্মুর কন্ঠ এমন পরিবর্তন হলো কি করে। আর তুমি করে বলছে। চোখ বন্ধ করে ভাবছি।
~ কি হলো সিয়াম ওঠো বলছি।
~ আম্মু আর একটু ঘুমাতে দাও প্লিজ।
~ কিইই আমি তোমার আম্মু না।

চোখ খুলে দেখি ভাবি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যা মানসম্মান মনে হয় শেষ। ভাবিকে আম্মু বলে ফেলছি।
~ তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে আসো সবাই খাবারে টেবিলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। (ভাবি)
~ হুম আসছি।

ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসেছি।
~ আম্মু তোমার হাতের রান্না এতো ভালো হলো কি করে।
~ তোর ভাবি রান্না করছে আজকে।

~ ভাবি ওয়াও তোমার রান্না অনেক সুন্দর আম্মু কেউ একটু শিখিয়ে দিও কি রান্না করে খাওয়ায় যায় না। (আমি)
~ কি বললি আমার রান্না খাওয়া যায়না। মনে রাখিস আমিই এতো দিন রান্না করে খাইয়েছি। (আম্মু রাগী ভাব নিয়ে)
~ মজা করছি রাগ করো কেনো। (আমি)

খাওয়া শেষ করে। রেডি হয়ে ভার্সিটিতে গেলাম। আজ অনেক দিন পর ভার্সিটিতে এসেছি। কেমন যেনো সবকিছু নতুন মনে হচ্ছে। না জানি আবার ওই স্যার কি বলে। ক্লাসে এসে বসার পরেই স্যার এসে হাজির। পিছনের দিকে বসে আছি যাতে স্যার দেখতেনা পারে। কিন্তু সেটাও মনে হয় হলো না।
~ আরে সিয়াম দাড়াও দাড়াও (স্যার)

~ জ্বি স্যার
~ এতোদিন পর ভার্সিটিতে কি মনে করে না আসলেও পারতে।
~ আসলে স্যার ওই হয়েছে কি…..
~ থাক আর বাহানা করতে হবে না আমরা বুঝি। তা আজকে দৌড়িয়ে আসো নি।
~ আসলে স্যার…..

~ থাক তোমাকে কিছু বলতে হবে না বসে পড়ো।
না এটা মেনে নেওয়া যায় না। স্যার আমার কোনো কথা না শুনেই যা ইচ্ছা বললো। এর একটা ব্যাবস্থা করতেই হবে। ভার্সিটির শেষে স্যারের পিছু পিছু হাটা দিলাম।

~ কি বেপার সিয়াম পিছনে আসছো কেনো আজ কেউ কি কিছু লাগানোর ইচ্ছা আছে। (স্যার পিছনে ঘুরে)
~ না স্যার আসলে আমি সেই দিনের ওই কাজের জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছি।
~ সেটা তো ভার্সিটিতেই বলতে পারতে এখানে পিছু নেওয়ার কারণ কি।

~ তখন তো আপনি আমাকে কিছু বলতেই দিলেন না।
~ দেখ সিয়াম তুমি একটু দুষ্টু টাইপের তাই বলে স্যারদের সাথে এমন কিছু করো না যাতে স্যারের সম্মান নষ্ট হয়। আশা করি বুঝতে পেরেছো।

~ জ্বি স্যার (মাথা নিচু করে)
সেখান থেকে বাসার দিকে হাটা দিলাম। আসলেই স্যাররা আমাদের বড় স্যারদের সাথে এমন দুষ্টুমি আর করবো না। নিজের ভুল বুঝতে পেরে চলে এলাম বাসায়।
~ কি বেপার এমন মাথা নিচু কেনো আমার দেবরের কেউ কিছু বলেছে বুঝি (ভাবি মজা করে)
~ এমনি তাছাড়া কার এতো সাহস যে আমাকে কিছু বলবে। (ভাব নিয়ে)

~ থাক আর বলতে হবে না।
~ আচ্ছা ভাবি তুমি না বললে তোমার বোন আছে কই।
~ কেনো দেখনো নি বিয়ের সময়।
~ আমি চিনি নাকি আমাকে কি তার ছবি দেখিয়েছো যে চিনবো।
~ আহারে বেচারা আমার বোন কালকে সকালে আসছে দেখো।

~ থাক ময়দা সুন্দরিদের আমি দেখিনা।
~ আমার বোন মোটেও ময়দা সুন্দরি না ওকে। (একটু রেগে)
~ হুমম। আচ্ছা ভাবি আমাকে একটা মেয়ের কথা বলতে পারবে।
~ কে

~ দাড়াও তোমাদের বিয়ের ভিডিও তে দেখাচ্ছি।
বিয়ের সময় ধারন কৃত ভিডিওটা চালিয়ে মেয়েটাকে বের করে ভাবির কাছে নিয়ে গেলাম। ভাবি দেখি রুমে শুয়ে আছে।

~ ভাবি এই দেখো এই মেয়েটা চিনো নাকি ওকে ( তার সামনে ল্যাপটপটা ধরে)
ছবিটা দেখে ভাবি একবার আমার দিকে তাকায় আবার ল্যাপটপের দিকে। বুঝলাম না কিছু।
~ কি হয়েছে ভাবি এই ভাবে দেখছো কেনো।
~ কিছু না।

~ তুমি চিনো মেয়েটাকে।
~ হুমম ( মুচকি হাসি দিয়ে)
ভাবির কথাটা শুনে ফাল দিছি। এমন মনে হচ্ছে যেনো কোনো গুপ্তধন আমার হাতে এসেছে।
~ ভাবি বলবনা মেয়েটার নাম কি। (অনেকটা আগ্রহ নিয়ে)
~ কেনো

~ বলনা না ভাবি প্লিজ।
~ এখন বলা যাবে না সময় হলেই দেখতে পাবে। (বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো)
যা এতোটা আশা করলাম। এখন আশায় গুড়োবালি। ধুর মন খারাপ করে রুমে চলে এলাম।
রাতে সবাই মিলে খেতে বসেছি।

~ ভাবি বলনা। (সবার সামনেই)
মাথা নাড়িয়ে না বললো।
~ ওই কি বলবে তোর ভাবি। (আম্মু)
~ কিছু না।
~ কিছুনা বললেই হলো বল কি জিজ্ঞাসা করলি।
~ বললাম তো কিছুনা।

~ আচ্ছা না বললি বউমা তুমি বলো তো।
~ ও কিছু না মা (ভাবি)
~ তুমি কি বলবে।
~ আসলে মা আপনার ছেলে একটা……

~ ভাবি এইটা বইলো না তাইলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিলাম। ( ভাবিকে থামিয়ে দিয়ে)
~ তুই চুপ করবি। বউমা তুমি বললো (আম্মু)
~ আপনার ছেলে একটা জায়গায় আমাকে আর আপনার বড় ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায় তাই আপনার বড় ছেলেকে জিজ্ঞাসা করতে বললো। (ভাবি)
কথাটা শুনেই ভাবির দিকে তাকালাম। বাহ্ এই না হলে আমার ভাবি কি সুন্দর আম্মুকে মিথ্যা কথা বলে বাঁচিয়ে নিলো আমাকে।

~ ওহ্ সাকিব যা বউমাকে নিয়ে ঘুরে আয়। (আম্মু)
~ হুমম যাবো তা ভাই কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে আর তোর ভাবিকে। ( ভাই)
যা এ তো দেখি আর এক ঝামেলা। এখন আমি কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবো তাদের। ভাবির দিকে তাকিয়ে দেখি এক রাজ্যজয় করা হাসি তার মুখে। আম্মুর হাত থেকে বাঁচিয়ে এখন নিজের জালে ফাসিয়ে নিলো ধুর।
~ কি হলো বল কোথায় নিয়ে যাবি ( ভাই)

~ হুমম গেলেই দেখতে পাবি।
~ আচ্ছা কালকে সকালে আমার বোন আসবে আমরা এক সাথে যাবো ঠিক আছে। (ভাবি)
~ হুমমম।

খাবার শেষে রুমে এসে শুয়ে আছি। ভাবি তো বললো ঘুরতে নিয়ে যাবো। কিন্তু কোথায় নিয়ে যাওয়া যায়। হুমম পার্কে নিয়ে যাবো। তাছাড়া এখানে আর ঘুরতে যাওয়ার মতো তেমন কোনো জায়গা নেই।
সকালের ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি ভাবি আমার রুমে বসে আছে।
~ কি বেপার ঘুরতে নিয়ে যাবেনা।

~ যেতে তো হবেই যে প্যাঁচে ফেলছো।
~ হি হি শোনো‌ আমরা কিন্তু চারজন যাবো ঠিক আছে।
~ চার মানে আর ‌একজন কোথা থেকে এলো।
~ তোমাকে না বললাম আমার বোন আসবে।
~ কেনো এসেছে

~ হুমম দেখবে নাকি।
~ না আমি ওই সব ময়দা সুন্দরি দেখি না যেই মেয়েটাকে তোমার দেখালাম ওইটাকে দেখাও।
~ কি আমি ময়দা সুন্দরি (পিছন থেকে মেয়েলি কন্ঠে)
পিছনে তাকিয়ে তো আমি রিতি মতো অবাক। এটা তো সেই মেয়েটায় কিন্তু এখানে কি করছে। তাহলে কি এটাই ভাবির বোন।

~ ময়দা সুন্দরি বললেন কেনো। (রেগে)
~ আসলে ও ও ওই হয়েছে কি…
~ থাক তোমাকে আর তোতলাতে হবে না। রেডি হয়ে নাও ঘুরতে যাবো (ভাবি বলেই তার বোনকে নিয়ে চলে গেলো)
ইয়াহু দরজা আটকিয়ে একটা লুঙ্গি ডান্স দিলাম। রেডি হয়ে ফুরফুরা মনে সবাই কে নিয়ে পার্কে ঘুরতে এলাম।
পার্কে এসে ভাবি আর ভাই চলে গেলো অন্য পাশে একটু প্রেমালাপ করতে। ভাবির বোন আর আমি পাশে দাড়িয়ে আছি। কেমন যেনো একটা ইতস্থবোধ হচ্ছে।

~ বুঝিনা আপু কেনো যে আপনার মতো একটা ফকিরের কাছে রেখে গেলো।
~ ফকির মানে কি
~ ফকিরই তো যার মানিব্যাগে টাকা থাকে না সে তো ফকিরই।
~ আসলে সেদিন হয়েছিলো কি‌….

~ থাক বলতে হবে না।
~ হুমম আচ্ছা আপনার নামটা একটু বলা যাবে।
~ নাম শুনে কি করবেন। কিছু খাওয়াতে পারবেন। জানি পারবেন না ফকির একটা।
~ আপনি কিন্তু আমার মতো একটা নিষ্পাপ ছেলেকে যা তা বলছেন।

~ এহ্ আইছে নিষ্পাপ আপনি কেমন আপনার মা আমাদের বাসায় এসে বলে ছিলো।
~ কি বলে ছিলো
~ থাক না জানলেও চলবে। .
যা আম্মুও গিয়েছিলো ভালো কথা আমাকে নিয়ে বলার কি দরকার ছিলো।
~ কিরে তোরা দুইটা ঝগড়া করছিস কেনো। (ভাবি)

~ ওহ্ কিছু না আপু।
~ ঠিক আছে চল ওই পাশটা থেকে ঘুরে আসি।
আ‌মি আর ভাই এক সাথে হেটেছি। সারা রাস্তায় আর ভাবির বোনের সাথে কথা বলি নি। বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।


পার্ট ৬

লেখকঃ সিয়া‌ম হোসেন
ঘুম ভাঙলো রাতে আম্মুর ডাকে।
~ কিরে কখন থেকে ডাকছি উঠছিস না কেনো শরীর খারাপ।
~ না আম্মু তেমন কিছু না এমনি শুয়ে আছি।

~ আচ্ছা আয় কিছু খেয়ে নে তারপর দরকার হয় আবার শুয়ে থাকিস।
~ হুমম তুমি যাও আমি আসছি।
উঠে মুখ ধুয়ে খেতে চলে গেলাম।

খাবার শেষে নিজের রুমে এসে শুলাম। কিন্তু ঘুম আসছে না। এতোক্ষন ঘুমিয়ে থাকার পড়েও কি আর এতো তাড়াতাড়ি ঘুম হবে। ছাদে এসে দাড়িয়ে আছি। আজকে আকাশের চাঁদটাও অনেক সুন্দর লাগছে। নিজের সম্পূর্ণ আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর বুকে। মাঝে মাঝে কিছু মেঘ এসে চাঁদটাকে ঘিরে দিচ্ছে। যেনো মেঘাচ্ছন্ন একটা জ্যোৎসা বিলাসী রাত।

~ আজকে চাঁদটা অনেক সুন্দর লাগছে তাইনা। (পিছন থেকে কেউ একজন বললো)
তাকিয়ে দেখি ভাবির বোন দাড়িয়ে আছে। আমি কোনো কথা না বলে আবার উল্টো দিকে ঘুরে আকাশ দেখতে লাগলাম।
~ কি হলো রাগ করে আছেন বুঝি আমার উপর।

কথাটা শুনে কিছুটা অবাক চোখ নিয়ে তার দিকে তাকালাম। আচ্ছা আসলেই কি আমি তার উপর রাগ করে আছি। বুঝতে পারছি না। যদি রাগ করে নাই থাকি তাহলে কথা না বলে অন্য দিকে তাকাচ্ছি কেনো। কোথায় যেনো কিছু একটা বাধা দিচ্ছে কিন্তু সেটা বুঝতে পারছি না। মুখের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছি।
~ কিহলো কথা বলবেন না।

~ না
~ ওহ্ তার মানে আপনি আমার সাথে কথা বলতে চাননা। ঠিক আছে আমি নেমে যাচ্ছি। (বলেই সামনের দিকে হাটা ধরেছে)
~ শুনুন (ডাক দিয়ে)
~ কি (আমার দিকে ঘুরে)

~ আসলে আমি বলতে চেয়েছি যে আমি আপনার উপর রাগ করে নেই।
~ তাহলে কথা বলছেন না কেনো।
~ এমনি।

~ এমনি নাকি তখন আমার কথায় কিছু মনে করেছেন।
~ তেমন কিছু না এমনি ভালো লাগছিলো না।
~ তখন কার ওই‌ কথা গুলো বলার জন্য দুঃখিত। আসলে আমি ‌মজা করে বলেছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি আপনার খারাপ লাগবে।

~ না না আমি কিছু মনে করি নি।
~ কিছু মনে করিনি বললেই হলো আপনাকে দেখেই বুঝাযায় তা নাহলে সারা রাস্তা আমার সাথে তো‌ আর‌ একটা কথাও বলেন নি।
কথাটা শুনেই মাথাটা নিচু করে নিলাম। হয়তো তখন কিছুটা খারাপ লেগেছিলো তাই এখন কথা বলছিনা। ‌
~ যাই হোক আমার নাম মিতালি।

~ আপনার আর ভাবির নাম তো দেখি একই রকম।
~ হুমম আব্বু রেখেছিলো শুনুন আপনি আমাকে আপনি করে বলবেন না। কারণ আপনি আমার বড়।
~ কেনো তুমি কিসে পড়ো।
~ এইবার ইন্টারে পরিক্ষা দিয়েছি। সামনে অনার্সে ভর্তি হবো।
~ ওহ্ ঠিক আছে তাহলে তুমিও আমাকে তুমি করে বইলো। কারণ দুই~ তিন বছরের বড় ধরতে হয়না।
~ তাই বুঝি (মুচকি হাসি দিয়ে)
~ হুমম।

~ আচ্ছা তুমি ‌এতো ঘুমাও কেনো। তোমাকে কতবার ডাক দিছি ঠিকও‌ পাওনায়।
~ আসলে আমি একটু ঘুম কাতরে তো তাই আর কি
~ ‌এখন থেকে বেশি ঘুমাবা না ঠিক আছে। আর সকালে‌ উঠবা তুমি জানো সকালের‌ আবহাওয়াটা কত উপকারি।
~ ঘুম থেকেই‌ তো‌ উঠি না তার জানবো কি ভাবে (ফাইজলামি‌ করে)

~ তুমি‌ খুব ‌ফাজিল এখন থেকে সকালে‌ উঠবা আর বেশি রাত জাগাও ভালো না চলো ঘুমাবেনা। ‌
~ দেড়ি আছে তুমি যাও‌ আমি‌ আরও‌ পরে‌ ঘুমাবো‌।
~ যখনই ঘুমাও‌না কেনো ‌সকালে রেডি থেকো। ‌
~ কেনো।
~ সেটা সকালেই‌ বুঝতে পারবে।

কথাটা বলেই‌ সে চলে গেলো। দাড়িয়ে দাড়িয়ে‌ ওর কথা ভাবছি। যেমনটা ভেবেছিলাম তেমনটা না। মিশুক প্রকৃতির কত সহজেই‌ আমার সাথে নিজে থেকেই কথা বলে একটা সম্পর্কের সৃষ্টি করে দিয়ে গেলো মনের ভিতর। ওর বলা কথা গুলোই ভাবছি। মুচকি হাসি টাও কত সুন্দর ইচ্ছা করে ওকে সামনে বসিয়ে‌ এক ভাবে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে ওর মুচকি হাসিটার দিকে। আরও কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে রুমে চলে এলাম।
~ এই সিয়াম উঠো। (ধাক্কা দিয়ে কে যেনো ডাকছে)

~ কি হলো উঠবে নাকি পানি দিবো।
তাকিয়ে দেখি মিতালি ডাকছে।
~ কি হয়েছে ডাকছো কেনো।
~ উঠতে বলছো ওটো বাইরে হাটতে বের হবো।
ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখি ভোর ৫ টা বাজে।

~ এতো সকালে কোথায় ঘুরতে যাবো এতো সকালে তো কেউ ঘুম থেকেই উঠেনি। তাছাড়া আমারও ঘুম আসছে অনেক রাত করে ঘুমিয়েছি।
~ উহু তা বললে হবে না আমি রাতেই বলেছি বেশি রাত না জাগতে তাও তুমি জেগেছো এটা তোমার দোষ এখন চলো।

ইচ্ছা না থাকা সত্তেও ঘুম থেকে উঠে যেতে হচ্ছে তার সাথে।
মিতালি সামনের দিকে হাটছে আর আমি ওর পিছনে। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। হাটতে হাটতে আমাদের বাড়ির পিছনের দিকে মাঠটায় আসলাম।

চারপাশে কুয়াশা পড়ছে শীতও লাগছে। কোনো মতে চাদরটা ধরে আছি ঠান্ডার জন্য। ঘুম এতোটাই ঘিরে ধরছে যে চাদরটাও ধরে রাখার শক্তি নেই। মাঠের কাছে এসেই মিতালি নিজের স্যান্ডেল খুলে এক পাশে রেখে দিলো।
~ তোমার স্যান্ডেলটাও খুলো। (মিতালি)
~ কেনো।

~ আগে খুলো তারপর বলছি।
~ না দেখছো না ঘাসগুলো কেমন ভিজে আছে।
~ সেই জন্যই তো খুলবে। তুমি‌ আর আমি এখন এখানে খালি পায়ে হাটবো খুলো বলছি।
~ পাগল হলে নাকি।
~ চুপ আসো তো।

বলেই আমার হাত ধরে টান দিলো। মিতালি আমার হাত ধরে হাটছে আর আমি ওর পাশে থেকে এক ভাবে তাকিয়ে দেখছি। ভালোই লাগছে পাশাপাশি হাটতে। কেমন একটা অজানা অনুভূতি হচ্ছে মনের ভিতর। যতই সামনের দিকে হাটছি ততই যেনো ওর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি সত্যি সকালটা যে এতো সুন্দর হয় সেটা হয়তো ও পাশে না থাকলে বুঝতে পারতাম না। ধীরে ধীরে কুয়াশাটা কমতে শুরু করেছে। মানুষের কোলাহল কানে আসছে।

~ চলো এখন বাসায় যায়। (মিতালি)
~ আর একটু থাকি।
~ এই দেখি আসতে চাইছিলে না।
~ সকালটা যে এতো সুন্দর হয় সেটা আগে জানা ছিলো না তো।

~ হুমম হয়েছে আর বলতে হবে না। মানুষজন বাড়তে শুরু করেছে। বাসায় চলো সবাই উঠে যদি না দেখতে পায় তাহলে আবার খারাপ ভাববে। (মিতালি)
বলেই বাসার দিকে হাটতে শুরু করলো। বাসায় এসে দেখি ভাবি উঠে রান্না করছে।
~ কিরে কোথায় গেছিলি তোর দুইজন। (ভাবি)

~ এই একটু বাইরে ঘুরতে গেছিলাম। (মিতালি)
~ আচ্ছা তুই যা।
মিতালি সামনের দিকে হাটা দিলো। আমিও হাটতে যাবো
~ তুমি কোথায় যাচ্ছো দাড়াও (ভাবি)
~ কি

~ তোমাকে তো ৯ টার সময় ও ডেকে উঠানো যায় না। তা আজ কি মনে করে এতো সকালে।
~ দেখতে হবে কে ডাক দিয়েছে।
~ কে
~ আমার হবু বউ মানে তোমার বোন (বলেই দিলাম দৌড়)
~ ফাজিল ধরতে পারলে কান মলে দিতাম।

মিতালে এখানে এসেছে দুই দিন হয়ে গেছে। এই দুই দিনে আমি ওর প্রতি অনেকটাই দূর্বল হয়ে পড়েছি। রাতে ছাদের উপর দাড়িয়ে আছি।
~ কালকে সকালে চলে যাচ্ছি।
কথাটি শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখি মিতালি। চলে যাবার কথাটা শুনে কেমন যেনো একটু খারাপ লাগলো।
~ আর কয়েকটা দিন থাকলে হয় না। (আমি)
~ কেনো থাকলে কি হবে।

~ কিছু না তবুও আবার কবে দেখা হবে।
~ চাইলে প্রতিদিনই দেখা হয়তে পারে।
~ কিভাবে

কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিলো আবারও দেখা মিললো সেই হাসিটার।
~ আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। (আমি)
~ হুমম।

~ তুমি কাউকে ভালোবাসো না।
~ কেনো।
~ এমনি বলো না।
~ না তুমি কাউকে ভালোবাসো।
~ জানি না।

~ এটা আবার কেমন কথা।
~ কথার কি আবার প্রকার আছে। আচ্ছা চলেই যেহেতু যাবে তোমার নাম্বারটা দাও।
~ নাম্বার দিয়ে কি করবে তুমি না ফকির তোমার কাছে টাকা থাকে না ফোন দিবা কিভাবে। (বলেই হেসে উঠলো)
বুঝলাম ফাইজলামি করছে। তাই একটু মন খারাপের অভিনয় করলাম।
~ কি হলো মন খারাপ করলে নাকি। আচ্ছা আর কখনও বলবো না। আর এই নাও আমার নাম্বার। (একটা কাগজ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে)

বুঝলাম আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলো হয়তো আমাকে দেওয়ার জন্য।
~ শোনো কাগজে কিছু লিখা আছে। আমি এখান থেকে যাওয়ার পরে খুলে পড়বা তার আগে পড়লে কিন্তু ভালো হবে না। (মিতালি)

~ ঠিক আছে তুমি না যাওয়া পর্যন্ত পড়বো না।
~ হুমম এখন চলো ঘুমাবেনা।
~ তুমি যাও আমি আসছি।
মিতালি চলে আসার কিছুক্ষন পরে আমিও ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে চলে গেলাম।


পার্ট ৭ (অন্তিম পর্ব)

লেখকঃ সিয়াম হোসেন
~ এই সিয়াম ওঠো (মিতালি)
~ আর একটু।
~ আমি চলে যাচ্ছি।

কথাটি শুনেই লাফ দিয়ে উঠলাম।
~ কি হলো এমন ভাবে লাফ দিলে কেনো
~ তুমি চলে যাচ্ছো আর দুই একটা দিন থাকো। (মন খারাপ করে)
~ মন খারাপ করছো কেনো আমাদের বাসা তো এখানে অল্প একটু পথ আবার তো দেখা হবে।
~ তবুও…

~ উহু তাছাড়া তোমাকে তো আমার নাম্বার দিয়েছি। আমি এখান থেকে চলে যাবার পরে কাগজটা পড়বা ঠিক আছে।
~ হুমম
~ আর শুনো প্রতিদিন সকালে উঠবা বেশি রাত জাগবে না ঠিক আছে। আমি এখন গেলাম। (বলেই মিতালি বের হয়ে গেলো)

আমি তাড়াতাড়ি উঠে কোনো রকম মুখটা ধুয়ে ওকে এগিয়ে দিয়ে এলাম।
মন খারাপ করে বসে আছি। বালিশের নিচে হাত দিতেই কালকে রাতে মিতালির দেওয়া কাগজটা হাতে চলে এলো। খুলে পড়তে লাগলাম
প্রিয় সিয়াম

কেমন আছো। আশা করি ভালো আমি কালকে এখান থেকে চলে যাচ্ছি। তোমার সাথে দুই তিন দিন যেভাই থেকেছি তোমাকে খুব কাছ থেকে জানতে পেরেছি। জানি না কেনো চলে যেতে মন চায়ছে না। বুঝতে পারছি না। হয়তো আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।

সামনা সামনি বলার সাহস নেই তাই তোমাকে জানানোর জন্য চলে যাচ্ছি যাতে চিঠিটা তোমার হাতে দিতে পারি। জানি না তুমি আমাকে ভালো বাসো কিনা। কিন্তু আমি তোমাকে ভালো বাসি
I love You
যদি ভালোবেসে থাকো তাহলে জানিয়ে দিও।
ইতি
মিতালি

চিঠিটা পড়েই যেনো স্বপ্নের রাজ্য ভাসতে শুরু করেছি। চিঠির নিচে দেওয়া নাম্বারে ফোন দিলাম।
~ হ্যালো কে বলছেন (ওপাশ থেকে)
~ আমি সিয়াম বাসায় পৌছে গেছো
~ হুমম কখন।
~ ভালো

~ এটা জানার জন্যই কি ফোন দিয়েছো নাকি আরও কিছু বলবে।
~ হুমমম
~ বলো
চুপ করে আছি কিছু না বলেই। ওপাশেও চুপ নিশ্বাসের আওয়াজ পাচ্ছি। হয়তো অনেকটা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে।

~ আমিও তোমাকে ভালোবাসি (এক দমে তাড়াতাড়ি করে বললাম)
~ কি বললা আবার বলো
~ বললাম আমি তোমাকে ভালোবাসি।
~ আমিও
~ আমিও কি

~ আমিও যে তোমাকে ভালোবাসি পাগল।
~ তাহলে চলে গেলে কেনো। (মন খারাপ করে)
~ না আসলে যে বলতে পারতাম না।
~ হয়েছে আর বলতে হবে না।

~ এক কাজ করবে যাতে আমাদের প্রতিদিন দেখা হয়।
~ কি (আগ্রহ নিয়ে কারণ এটাই তো চায়)
~ তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে দোকানে আসবে প্রতিদিন।
~ এইটা একটা কথা।
~ এটাই কথা এখন রাখো ক্ষুদা লাগছে খাবো।
~ ওকে

ফোনটা কেটে দিলাম। প্রেমে পড়ে আর এক জ্বালা এখন আবার দোকানে যেতে হবে প্রতিদিন কেমন লাগে।
নাস্তা করতে এসে দেখি ভাইয়ের খাওয়া প্রায় শেষ।
~ শোন ভাই তোর সাথে এখন থেকে আমি রোজ দোকানে যাবো। (আমি)
~ ভুতের মুখে রাম রাম কেমনে কি (ভাই)

~ এমনি বাসায় ভালো লাগছে না তাই।
~ ভালো লাগছেনা নাকি অন্য কোনো কারণ আছে (ভাবি হাসি দিয়ে)
~ কি যে বলো না ভাবি কারণ কেনো থাকবে।
~ হুমম বুঝি

নাস্তা করে দোকানে চলে এসেছি ভাইয়ের সাথে। ভাই দোকানের ভিতরে বসে আছে আর আমি একটা চেয়ার নিয়ে দোকানের বাইরে মিতালিদের বিল্ডিং সোজা অপর পাশে বসে আছি।
মিতালি কে ফোন দিলাম।
~ হ্যালো (মিতালি)

~ কোথায় তুমি
~ বাসায় কেনো
~ কই দেখতে পাচ্ছি না তো।
~ কেনো তুমি কোথায়।

~ তোমার বাসার অপর পাশে বসে আছি তুমি বেল কনিতে আস।
মিতালি বেল কনিতে দাড়িয়ে আছে। আর আমি এখানে বসে আছি। দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে ফোনে কথা বলছি। কি রোমান্টিক একটা মুহুর্ত।

দেখতে দেখতে অনেকদিন হয়ে গেছে। আমার আর মিতালির সম্পর্ক টাও আগে থেকে মজবুত হয়ে গিয়েছে। ভাবি ভাই দুজনেই জানে আমাদের সম্পর্ক শুধু আম্মু আব্বু বাদে। রাতে মিতালির সাথে কথা হচ্ছে
~ আচ্ছা মিতালি কবে আসছো আমাদের বাসায়। (আমি)
~ কালকে

~ সত্যি
~ হুমম
আরও কিছুক্ষন কথা বলে ঘুমিয়ে পড়লাম।
~ তোমার বদ অভ্যসটা গেলো না এখনও ঘুমিয়ে আছো ওঠো (মিতালি)
চোখ খুলে দেখি মিতালি পাশে রাগী ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কোনো কথা না বলে হাত টান দিয়ে বিছানা ফেলে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

~ কি করবো তুমি যে নেই ডেকে দেবার জন্য।
~ তাই না এতো যখন ইচ্ছা তাহলে বিয়ে করে নাও।
~ হুমম চলো কাজী অফিসে।
~ যাও দুষ্টু ছাড়ো কেউ দেখে ফেলবে।

~ দেখুক আমার হবু বউই তো।
~ মিতালি কি হচ্ছে এই সব। (ভাবি দরজার সামনে জোড়ে চিৎকার করে)
মিতালি তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে গেলো।
~ না মানে আপু ওই…….

~ রুমে যা তুই। (রেগে গিয়ে)
মিতালি চলে গেলো ভাবিও সাথে সাথে চলে গেলো। বুঝলাম না হঠাৎ করে ভাবির কি হলো। ভাবি তো সব জানে তাহলে এই ভাবে চিৎকার করলো কেনো। কিছুক্ষন বাদে আম্মু এসে হাজির।
~ তোর ভাবি যা বললো তা কি সত্যি (আম্মু)
একি ভাবি আম্মুকেউ বলে দিয়েছে।

~ কি হলো কথা বলছিস না কেনো যা বললো তা কি সত্যি। (ঝাড়ি দিয়ে)
আমি মাথা নিচু করে হা সুচক বললাম।
~ ছি ছি ছি আমি ভাবতে পারিনি তুই এটা করবি।

আম্মু কথাটি বলেই চলে গেলো। বুঝলাম না ভাবির কি হলো। তাছাড়া আম্মুই এমন করে বলছে কেনো। তার বড় ছেলের বেলায় তো এক বারেই রাজি হয়ে গেলো। মন খারাপ করে বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখি ভাবির বাড়ির সবাই এসেছে। আর মিতালি তার মা বাবার পিছনে দাড়িয়ে আছে।

কি এমন করেছি যে তারা পর্যন্ত চলে এসেছে। নাকি মিতালির সাথে এসেছে কিছুই বুঝতে পারছি না। সবার মুখ কালো হয়ে আছে। নিজেকে কেমন যেনো অপরাধী মনে হচ্ছে।
~ বেয়ান সাব যা হয়েছে তার জন্য আমরা খুবই লজ্জিত। (আব্বু)

~ কিসের লজ্জিত আপনার ছেলে যা করেছে তার জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে। (মিতালির বাবা)
কথাটি বলে সবাই আমার দিকে তাকালো। আমি তো ভয়ে ভেজা বেড়ালের মতো হয়ে গেছি। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।

নিজেকে কেমন যেনো জোকার মনে হচ্ছে। কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে এখানে।
~ তা বেয়ানসাব বিয়ে কবে হচ্ছে। (মিতালির বাবা)
~ সামনের শুক্রবারেই হোক তাহলে।
~ ঠিক আছে তাই হোক।

কিছুই বুঝলাম না কার বিয়ে কার কি সবই যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। পরে জানতে পেরেছি বিয়েটা আমার আর মিতালির শুনেই পুরা নাগিন ড্যান্স দিছি।
দেখতে দেখতে আমার আর মিতালির বিয়েটা হয়ে গেলো। বাসর ঘরে ঢুকে দেখি মিতালি বসে আছে। কাছে যেতেই সালাম করে আবার বসে পড়লো।

~ কেমন অভিনয় হয়েছিলো সেদিন। (মিতালি)
~ মানে
~ যেদিন আমাদের বিয়ের কথা ঠিক হলো।
~ তার মানে তুমিও জানতে।
~ হুমম

~ তুমি জানো আমি কতটা ভয় পেয়েছিলাম।
~ তাই বুঝি
~ হুমম
~ ঠিক আছে আজকে আমি তোমার সব ভয় দূর করে দিবো। (বলেই লাইট বন্ধ করে দিলো)

বাকিটা ইতিহাস……

লেখক – সিয়াম হোসেন

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “ভাইয়ের শালী যখন আমার বউ – True love story in bengali language” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – বেস্ট ফ্রেন্ড – bertho premer golpo bangla

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *