রাতের খাবার মুখে দিতেই বমি করে দেয় মানহা। সাথে সাথেই ওয়াশরুমে চলে যায় মানহা। মানহার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে আমিন। আমিন মানহার স্বামী। মানহারমি দেখে আমিনের দু চোখে রাগ আর চেহারাটা মলিন হয়ে যায়।
মানহা মুখে পানি ছিটিয়ে আবার খাবারের কাছে আসে, আজ আর খাবার খেতে পারবে না মানহা, শুধু আজ না, এখন প্রতিদিনই খাবারের ঘ্রাণ মানেই মানহা বমি করবে।
মানহার মুখে হাসির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। আমিন নীরবে খাবার খাচ্ছে। নিজের স্ত্রীর বমি দেখেও আমিনের মনটা খারাপ হলো না। মানহা আমিনের খাবার খাওয়ার দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমিন খাবার শেষ করে মানহার দিকে তাকায়। মানহা মুচকি হেসে বলে,
মা বলতো, বাচ্চা পেটে আসলে নাকি মেয়েদের বমি হয়? তাহলে আমি মা হচ্ছি!
মানহা খুব খুশিতে কথাগুলো বলে। কিন্তু আমিন এর মুখটাতে একটুও হাসির রেখা পর্যন্ত নাই।
আমিনের মন খারাপ দেখে মানহা বললো, কাল কিন্তু আমায় ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবে? মনে তো হচ্ছে আমার মা হওয়ার ইচ্ছাটা পূরণ হবে এবার।
মানহার কথার কোনো উত্তর না দিয়েই রুমে চলে যায় আমিন। মানহা আমিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে খাবার টেবিল পরিষ্কার করতে শুরু করে।
আমিন বিছানায় শুয়ে আছে, ভাবনায় অনেক কথা আসছে। মানহার খুশী দেখে মনে হচ্ছে সত্যিই মানহা মা হবে। আমিন একবার চোখ খুলে আবার বন্ধ করে, মানহা কী রুমে আসলো?
মানহা রুমে এসে কী করবে? আমিনের এসব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে মানহা রুমে আসে
মানহাকে দেখে আমিন চোখ দুটো আবার বন্ধ করে নেয়। মানহা বিছানায় না বসে রুমে পায়চারি করতে থাকে।
আমিন মানহাকে বসতে বলে, আমিনের কথা শুনে মানহা মুচকি হেসেই আমিনের পাশে বসে।
মানহা আমিনের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
তুমি বাবা হবে, এতে তুমি খুশী না?
বাচ্চাটা,
আমিনকে কিছু বলতে না দিয়েই মানহা বললো,
আবার যদি এই কথা বলো, তাহলে তোমার মাথা ফাটাবো কিন্তু?
মানহার রাগী কণ্ঠের কথা শুনে আমিন মানহাকে জড়িয়ে ধরে, আর নরম কণ্ঠে বলে।
মানহা তুমি তো সব জানো! বিয়ের এতোটা বছর পার করে দিলাম তোমার সাথে, তোমার মা হওয়ার ইচ্ছাটা আমি কখনো পূরণ করতে চাইনি, বা চাচ্ছিলাম না। তবুও মনে হচ্ছে তুমি মা হবে!
আচ্ছা মানহা তুমিই বলো! মানুষ আমাদের বাচ্চাকে যদি অপমান করে, আমার বাচ্চাটা যদি আমার মতো অপমান হয়।
মানহা নিজের স্বামীর কথা শুনে কিছুক্ষণ নীরব থাকে। আমিনের এমন পাগলামো কথা শুনে মানহা বারবার অবাক হয়।
বিয়ের ৮টা বছর কাটিয়ে দিলো আমিন এমন পাগলামি করেই। মানহা যখনই আমিনকে বাচ্চা নেওয়ার কথা বলতো, তখনই আমিন নিজের জীবনের কথাটা বলতো। মানহাও রাগ না করে সব সময় মা হতে চায়, মা হতে চায় বলে চিল্লাতো।
দুজনের মধ্যে গভীর নীরবতা। মানহা তো খুব খুশী, আজ আমিনের মুখে হাসি দেখবেই সে।
মানহা ভাবতে থাকে কিছু কথা।
আমিন মানহার খালাতো ভাই। মানহাও আমিনকে একসময়
জ্বালাতো। মানহার ৪বছরের বড় আমিন। আমিন কালো বর্ণের ছেলে। শ্যামল বর্ণের একবারে শেষ শ্রেণীর ছেলে আমিন। আমিনের চেহারা দেখতে সুন্দর। কিন্তু রঙ কালো।
এই কালো শব্দটার জন্য আমিন অনেক অপমান সহ্য করেছে জীবনে। আমিনের বাবা মা সুন্দর, কিন্তু আমিন কালো। কারণ আমিনের দাদা ছিলেন কালো। আমিন এর কালো রঙের জন্য কোনো ছেলে মেয়েই ফ্রেন্ডশিপ করতো না।
মানহাও আমিনকে কালো ভাই বলে ডাকতো। এইজন্য মানহাকে আমিন সহ্য করতে পারতো না।
আমিনের বিয়ের বয়স হবার পর থেকে অনেক মেয়ে দেখেছে আমিনের পরিবার। কিন্তু কোনো মেয়ের পরিবারই আমিনকে পছন্দ করেনি।
আমিনকে তো এক মেয়ের পরিবার বলছিলো, এই ছেলের গায়ের রঙ কালো, কোনো মেয়েই এই মেয়েকে বিয়ে করবে না।
আমিন এমন কথা শুনে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলো। আমিন নিজের বাবা মা ছাড়া সবার করা অপমান সহ্য করতে পারছিলো না, তাই আত্মহত্যার কথা চিন্তা করে।
মানহা আমিনকে হঠাৎ করেই বিয়ে করবে বলে। কারণ আমিন ভেঙে পড়েছিল। মানহা আমিনের এই অবস্থা দেখে নিজেকে আমিনের বউ বানাতে চায়।
মানহা বুঝতে পেরেছিলো, আমিনকে নিজের জীবন সঙ্গী বানালে, অনেক অনেক ভালোবাসা পাবে।
সত্যিই আমিন রাজরানী করে রেখেছিলো মানহাকে। মানহাও আমিনকে নিজের বন্ধুবান্ধবদের গর্বের সাথে পরিচয় দিতো।
মানহাও কম ভালবাসেনি আমিনকে।
আমিন মানহাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মানহা এবার হেসেই বললো।
তুমি আসলেই পাগল! প্রথম সন্তানের বাবা হবে। মনে মনে তো তুমি অনেক খুশী, কিন্তু নিজের কালো শব্দটার জন্য নিজের খুশীটা প্রকাশ করতে পারছো না।
আচ্ছা তুমি ভুলে গেছো, তোমার স্ত্রী একজন সুন্দরী। তোমার সুন্দরী স্ত্রীর বাচ্চা যদিও কালো হয়, তবুও আমি কষ্ট পাবো না, গর্ব করে বলবো। আমার সন্তান আমার স্বামীর মতো হয়েছে।
তুমি নিজের জীবনের কষ্টের জন্য ভুলেই গেছো তোমার স্ত্রী একজন সুন্দরী।
আমিন নিজের স্ত্রীর কথা শুনে কেঁদে কেঁদে বললো।
আমি চাইনা আমার সন্তানকে কেউ আমার মতো অপমান করুক। আমি চাইনা এই তমসা সমাজ আমার সন্তানকে অপমান করে ভেঙে ফেলুক। আমার সন্তান যদি আমার মতো সহ্য করতে না পারে।
আমিনের কথা শুনে মানহা একটু রেগেই বললো, আরে পাগল!
বাচ্চা হবার আগেই তুমি এতো ভাবছো। আচ্ছা আল্লাহ আমাদের কী দিবেন, তা তো আমরা জানিনা, আচ্ছা তোমার মা বাবা সুন্দর ছিলেন তবুও তো তুমি কালো, এটা আল্লাহ এর দান। আর দেখছো?
তুমি কালো বলে তোমার বিয়ে হচ্ছিলো না। কিন্তু দেখো, আজ তুমি একটা সুন্দরী বউয়ের মালিক। এখন আর চিন্তা করো না তো।
মানহার কথা শুনে আমিন শুধুই নীরব থাকে, মানহা আবার বলে।
কালো বলে অপমানিত হয়েছো, ওরা আল্লাহ এর দেওয়া নেয়ামত নিয়ে মজা করেছে, নেয়ামতকে অপমান করেছে৷
আমিন বললো, আচ্ছা মানহা আমার সন্তান তোমার মতো হবে?
তুমি দোয়া করলেই হবে।
আমিন হুম বললো।
সেও তো বাবা হতে চায়, কিন্তু মানুষের খারাপ কথার জন্য চাচ্ছিলো না বাবা ডাক শুনতে।
কিন্তু মানহা তো বাচ্চার জন্য পাগল।
মানহার আশা পূরণ হচ্ছে, আমিনও খুব খুশী, কিন্তু কালো শব্দটার জন্য সাহস পাচ্ছিলো না। প্রতিটা মানুষ চায় বাবা বা মা ডাক শুনতে। আমিনও ব্যতিক্রম ছিলো না।
আমিনের বিশ্বাস, সন্তানটা মানহার মতোই হবে। আর আল্লাহ যদি কালোও দেন, তবুও সে মন খারাপ করবে না। আল্লাহ যা করেন সব ভালোর জন্যই।
সমাপ্ত
লেখক: হানিফ আহমেদ
(গল্পটা ভালোভাবে লিখতে পারিনি, ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে
দেখবেন। কালো শব্দটাই খুব খারাপ ভাবে ব্যবহার করে সমাজ। কিন্তু কালো মেয়েরাও আবার ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচেনা!)
লেখক: হানিফ আহমেদ
সমাপ্ত