বেশ কিছুদিন ধরে নীরব হয়ে থাকছো কেন মাহফুজা?
আমি প্রেগন্যান্ট, তাই।
জহির নিজের স্ত্রীর এমন উত্তর শুনে কিছুটা অবাক হয়, তাই চিন্তিত হয়ে বলে।
‘প্রেগন্যান্ট এর সাথে নীরব থাকার সম্পর্কটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না?’
তুমি বুঝি আমার চঞ্চলতাকে খুব করে চাচ্ছো?
হুম, আমার স্ত্রীকে নীরব থাকতে ভালো দেখায় না।
মাহফুজা নিজের স্বামীর কথায় নিজের পেটে হাত দিয়ে বললো।
গর্ভে থাকা সন্তানটা পৃথিবীতে আসুক, তারপর আবার চঞ্চল হয়েই চলবো।
সন্তান গর্ভে আছে বলে তুমি প্রতিটা সময় নীরব থাকবে? আমি যে তোমায় এভাবে দেখতে চাই না!
মাহফুজা হেসেই বললো, ‘আমার নানি বলতেন, একজন নারীর গর্ভে সন্তান আসলে ওই নারী যা করবে, নারীর গর্ভে থাকা সন্তানও তাই করবে জন্মের পর।’
তাই বলে তুমি এভাবে নীরব হয়ে থাকবে?
উঁম, শুধু নীরব না, এখন থেকে পর্দা করে চলবো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিক সময় মতো পড়বো, আল্লাহ এর দেওয়া সব আদেশ মেনে চলবো।
জহির নিজের স্ত্রীর কথা গুলো শুনে মুচকি হেসে বললো।
তুমি তো এমনিতেই এসব করো, তাহলে?
না, সব সময় করলেও, এখন আমার আলসেমি হয়। নামাজ পড়তে ইচ্ছা হয় না, কুরআন পড়তে ইচ্ছে হয় না। এখন যদি আমি আল্লাহ এর ইবাদত পালন না করি, তাহলে নিশ্চয় আমার ছেলেমেয়ে আমার মতোই হবে!
হুম বুঝলাম। তাহলে সব তোমার মতোই করো, আমার কোনো সমস্যা নাই। তবে একটু চাঞ্চল্য হও!
না, আমি চাইনা আমার ছেলেমেয়ে আমার মতো চাঞ্চল্য প্রকৃতির হোক।
আমি যে তোমার চঞ্চলতা কে খুব ভালোবাসি।
এখন না হয় নীরবতাকেও ভালোবাসো।
জহির নিজের স্ত্রীর কথায় মন খারাপ করে বলে।
হোক না আমার ছেলেমেয়ে তোমার মতো চঞ্চল! চঞ্চলতা তো খারাপ না মাহফুজা?
কে বললো খারাপ না! আমি চঞ্চল বলেই যে সব চঞ্চল ভালো হবে তা তো কথা না। মনে রেখো! “একটি আম গাছ থেকে যদি আরো একটি চারা রোপণ করা হয়, তাহলে প্রথম আম গাছের আমের মতোই স্বাদ হয়?”
জহির নিজের স্ত্রীর কথা শুনে চুপ থাকে।
মাহফুজা আবার বলে।
জানো তুমি! প্রতিটা মেয়েরই উচিৎ, সন্তান গর্ভে আসার পর নিজেকে আড়ালে রাখা মানুষের ভীড় থেকে। ওই মানুষ গুলোই, যাদের সামনে বের না হওয়াই একটা মেয়ের জন্য ভালো।
জহির জানে নিজের স্ত্রীর সাথে কথায় পারবে না, মাহফুজার মতো একজন স্ত্রী পেয়ে জহিরও খুব আনন্দিত।
জহির বললো, আচ্ছা মাহফুজা একটা আবদার তো রাখতে পারো আমার?
হুম বলো কী আবদার?
মা বাবা ভাই বা অন্য কারো সামনে না হয় তোময়ার সব মেনে চলো, কিন্তু আমার সাথে সেই প্রথম মাহফুজা হয়েই চলো।
মাহফুজা মুচকি হেসে বলে, আচ্ছা গো আচ্ছা।
জহির মুচকি হেসে নিজের স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে রাখে।
মাহফুজা নিজের স্বামীর বুকে থাকা অবস্থায় বললো।
এই যে আমি তোমার বুকে আছি, দেখবে তোমার সন্তান গুলোও এভাবে তোমার বুকে থাকবে।
তাহলে তো ভালোই, আমার ছেলে মেয়ে তো আমার বুকেই থাকবে। জহির নিজের স্ত্রীর কথাটা শুনে মুচকি হেসেই কথাটা বলে।
মাহফুজা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের স্বামীকে।
সমাপ্ত
গর্ভবতী নারী
লেখক: হানিফ আহমেদ
আরো পড়ুন – আমার মায়াবতী (১ম খণ্ড) – লোভনীয় প্রেমের গল্প