স্ত্রীকে জীবনে এই ১০ টি কথা কখনো বলবেন না। অর্থাৎ সংসার জীবনে সুখী হতে হলে এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আজীবন ভালোবাসা অটুট রাখতে চাইলে কোনো স্বামীই তার স্ত্রীকে এই দশটি কথা কখনো বলবেন না। স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যের জন্য পোশাক স্বরূপ। স্ত্রীকে বলা হয়, স্বামীর অর্ধাঙ্গী। অর্থাৎ একজন ভালো স্বামী এবং স্ত্রী উভয় মিলেই পূর্ণাঙ্গ হয়, পরিপূর্ণ হয় তাদের জীবন।
এছাড়া জীবনের প্রকৃত সুখ পাওয়া যায় না। স্বামী স্ত্রী শুধুমাত্র একটি সম্পর্ক নয়। বরং একে অন্যের জন্য একজন ভালো বন্ধু। বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে একে অন্যের ভরসা দেওয়া। একজন স্ত্রী তার জীবনের সুখ-দুঃখ সকল কিছু স্বামীর সাথে শেয়ার করবেন। আর স্বামীও তার সকল কিছু তার স্ত্রীর সাথে শেয়ার করবেন। একজন স্বামীর কর্তব্য তার স্ত্রীর সাথে সর্বদা ভালো আচরণ করা। যেন সে একজন উত্তম স্বামী হতে পারে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যিনি তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি।”
অতএব একজন স্বামীর কর্তব্য হলো তার স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম হওয়া। এবার মূল আলোচনায় আসি, স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে এমন গোপন কিছু থাকবে না যা একে অন্যের নিকট থেকে লুকাবে। তবে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক অটুট রাখতে বিশেষ করে দশটি কথা যা কোনো স্বামীই তার স্ত্রীকে কখনো বলবে না বা বলা উচিত নয়। কারণ এ কথাগুলো বললে সংসারে শান্তি থাকবে না। আর দুজনার মধ্যে ভালোবাসার বদলে ঘৃণা আর মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে।
স্বামী যে ১০টি কথা তার স্ত্রীকে বলবে না, তা হলো –
১। তোমার মা-বাবা ভাল না। অথবা তাদের গালমন্দ করা।
সবচেয়ে বড় কবিরা গুনা হচ্ছে, কোন ব্যক্তি কতৃক তার মা-বাবাকে অভিশাপ দেওয়া। বলা হল যে, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষ তার মা বাবাকে কিভাবে অভিশাপ দেয়?
রাসূল (সাঃ) বললেন, “কোনো ব্যক্তি অপরের মা বাবাকে গালি দেয়, ফলে সেও তার মা-বাবাকে গালি দেয়।”
সুতরাং কখনোই স্ত্রীর মা-বাবাকে গালি দেওয়া যাবে না। তাদের সম্পর্কে খারাপ কথা বলা যাবে না।
২। তোমাকে বিয়ে করে ভুল করেছি
অনেক সময় স্বামীরা এমন কথা বলে থাকে তার স্ত্রীকে। বলে যে, তোমাকে বিয়ে করে ভুল করেছি। অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করলে আমি অনেক সুখি থাকতাম ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকমটা বলা চরম মূর্খতা। কোন মানুষই ভুলের উর্ধে নয়। স্ত্রী যদি কোন ভুল করেও ফেলে তাহলে একজন আদর্শ আর উত্তম স্বামী হিসেবে আপনার উচিত হবে স্ত্রীকে ভালভাবে বুঝে ভুল শোধরানো। তার সাথে উত্তম আচরণের মাধ্যমে ভুল পথ থেকে তাকে ফিরিয়ে আনা। সুতরাং তাকে বিয়ে করে ভুল করেছেন এমন কথা বলা যাবে না।
৩। আমি কত টাকা উপার্জন করি জানো! এভাবে অহংকার করা বা বড়াই করা
অনেকেই আবার তার স্ত্রীদেরকে আয় উপার্জনের ব্যাপারে বড়াই করে বলে যে, আমি কত টাকা ইনকাম করি, তুমি কি তা জানো? এরকম নানান কথা। অথচ এভাবে বলাটা উচিত নয়। সব কিছুরই একটা মাত্রা থাকে। আর এইভাবে বলার ফলে স্ত্রীও অনেকটা আশাবাদী হয়ে ওঠে খরচের ব্যাপারে। আর তখন তার চাহিদাটা বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ মেয়েরা সাধারণত কেনাকাটা করতে খুব পছন্দ করে। তাই এই ব্যাপারে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাটাই হবে সব থেকে ভালো।
৪। তোমাকে আর ভালো লাগেনা
অনেক স্বামী কথায় কথায় তার স্ত্রীকে এমনটা বলে থাকে যে, তোমাকে আর ভালো লাগেনা আমার। আগে তোমাকে অনেক ভালো লাগতো, কিন্তু এখন আর লাগে না। এছাড়াও অনেকে আবার দ্বিতীয় বিয়েও করে নেয়। যদিও একান্ত প্রয়োজন ও পরিস্থিতির চাহিদা ছাড়া এমন করা মোটেও উচিত নয়। আর আপনি যদি সত্যিকারভাবে আপনার স্ত্রীকে ভালোবেসে থাকেন তাহলে কখনো আপনার কাছে আপনার কাছ থেকে খারাপ লাগবে না। সুতরাং স্ত্রী কে ভালবাসুন। তার কাছে নিজেকে একজন উত্তম স্বামী হিসেবে প্রকাশ করুন।
৫। ভাই-বোনদের ব্যাপারে ওরা ভালো না -এটা বলা
অনেকেই ভাই-বোনদের ব্যাপারে স্ত্রীকে বলে যে, ওরা তো ভালো না। কিংবা অনেক সময় তাদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য ও কটুক্তিও করে থাকে। এই কাজ করা ঠিক নয়। কারণ সম্পর্ক কখনো একরকম যায় না। আপনার ভাই বোনদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে এমন কথা বললেন, কিন্তু পরে তো আবার আপনার সাথে সম্পর্ক ভালো হবে। তখন কিন্তু আপনার স্ত্রীর মনে এই কথাগুলো থেকেই যাবে। সুতরাং সাবধান কোন কিছু বলার আগে।
৬। স্ত্রীর সামনে কান্না করা
পুরুষ মানুষের অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। অনেক বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। তাই একজন ছেলে মানুষ কখনোই সহজে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে না। আর স্ত্রীর সামনে নিজের কোন কষ্ট বা কোনো ব্যাপারে কান্না করলে তা একেতো ভালো দেখায় না একজন পুরুষ হিসেবে। এছাড়া স্ত্রী তার দুর্বলতা সম্পর্কে জেনে যায় এবং হতে পারে পরবর্তীতে তার থেকেও এমন আঘাত পেতে পারেন। তাই এমনটা করবেন না।
৭। স্ত্রীকে খাবার খাওয়া নিয়ে কথা বলা বা বিদ্রুপ করা
সকলের আচার-আচরণ সভা ভালোলাগা-মন্দ লাগা একরকম হবে না। হয়তো কোন কোন স্ত্রী খেতে খুব পছন্দ করেন। তাই বলে তাকে খাদক বা তার খাবার খাওয়া নিয়ে তাকে কখনো উপহাস করা কিংবা বিদ্রুপ করা যাবে না। আর কোন স্ত্রীই এটা পছন্দ করবেন না যে, তার স্বামী অন্তত তাকে এরকম কথা বলুক। এটা চরম নিন্দনীয় একটা কাজ।
৮। তোমার কারণেই আমার সকল কষ্ট – এ জাতীয় কথা বলা
অনেকেই কোন কিছু হলেই সেই দোষ দিয়ে চাপিয়ে দেন তার স্ত্রীর উপর। এমনটাও বলেন যে, তোমাকে বিয়ের আগে আমি অনেক ভালো ছিলাম। আর আমার কোন সমস্যাও ছিল না। কিন্তু তোমাকে বিয়ে করার পর আমার যত কষ্ট আর যত যন্ত্রণা শুরু হলো। একজন ভালো স্বামী কখনোই এমন কথা বলবেন না। এতে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে নয়।
৯। স্ত্রীকে কুলক্ষণে বা অপয়া বলা
অনেক সময় স্বামী তার স্ত্রীকে অলক্ষে বলে থাকে। বলে যে, তুমি আসার আগে আমার ব্যবসা ভালো ছিল। সুখ ছিল, শান্তি ছিল। আর তোমাকে বিয়ের পর থেকে আমার নানান সমস্যা শুরু হয়েছে। তুমি অশুভ বা কুলক্ষণ ইত্যাদি। এসব একদম বানোয়াট আর ফালতু কথা। কোন স্ত্রী তার স্বামীর সংসারে খারাপ চায়না। আর কোন মানুষও এই সমস্ত সমস্যার জন্য দায়ী নয়। সুতরাং স্ত্রীকে কখনই এমনটা বলবেন না।
১০। স্ত্রীকে কাজের ব্যাপারে বলা যে, তুমি কোনো কাজ জাননা
স্বামীর কর্তব্য হলো যে কোনো বৈধ উপায়ে আয় রোজগার করা। আর স্ত্রী তার ঘর সংসার সামলাবেন। এখানে অনেক সময় কোন কোন কাজ হয়তো স্ত্রী নাও জানতে পারেন। তাই বলে তাকে তিরস্কার করা যাবে না। প্রয়োজনে শিখে নিবেন। তাহলে দুজনের প্রতি দুজনের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসাটা আরো বেড়ে যাবে।
আর এভাবেই একজন স্বামী তার স্ত্রীর নিকট উত্তম ও আদর্শ স্বামী হিসেবে বিবেচিত হবে।
সুতরাং এই দশটি কাজ সম্পর্কে খেয়াল রাখুন। আজীবন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হলে পারস্পরিক সমঝোতা আর বোঝাপড়া থাকা খুবই দরকার। আশা করছি, এই লেখাটি পড়ে কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পেরেছেন।
আরো পড়ুন – বউকে ভালবাসার উপায়