বেস্ট ফ্রেন্ড – bertho premer golpo bangla

বেস্ট ফ্রেন্ড – bertho premer golpo bangla: হয়তো ভালোবাসার ব্যর্থতায় আমি আত্মহত্যা করতে পারি। কিন্তু আমি এমনটা করবো না। আমি যেমন তোর কলিজায় আছি, তেমনি আমার আমার মা-বাবার কলিজায়ও আমি আছি। যদি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাই তাহলে তাদের কি হবে?


পর্ব ১

এতদিন গল্প লিখতে না পারার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, কিন্তু আমার কোন সুযোগ ছিল না গল্প লেখার। অল্প বয়সেই আমি চোখের সমস্যায় জর্জরিত। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এখন কিছুটা সুস্থ। তাই আবার গল্প লিখতে চেষ্টা করছি}

শুভ বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তবে সে ধনী পরিবারের সন্তান নয়। মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম তার। অনার্স শেষ করে সে এখন মাস্টার্সের ছাত্র। ভালোই মেধাবী সাথে খুব ভদ্র আর ধৈর্যশীল। তার স্বপ্ন সে একজন প্রভাষক হবে। তাই সে স্বপ্ন পূরণ করার জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো।

শুভ দেখতে বেশ ভালো, মোটামুটি ফর্সা। খুব একটা স্টাইল বা ফ্যাশন পছন্দ করে না। তাই সে সাদাসিধে ভাবেই থাকে।
এজন্য সে কলেজের কোন মেয়ের ক্রাশ নয়। সবাই তাকে এড়িয়ে চলে। সত্যি কথা বলতে ভদ্র ছেলে দের কোন মেয়ে ভালবাসে না। ভদ্র ছেলেদের জন্য মেয়েদের যদি কিছু থাকে তাহলে সেটা সহানুভূতি।

শুভর বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা একটু কম। বন্ধু বান্ধব নেই বললেই চলে। কেননা কারো কোয়ালিটি সাথে তার কোয়ালিটি মিল হয় না। তবে তার একজন বান্ধবী আছে। খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দুই জনের মধ্যে তবে সেটা বন্ধুত্ব,অন্য কিছু নয়।
তার বান্ধবীর নাম নীলা।

নিলা তার বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। নীলার বাবাঃ মা যথেষ্ট শিক্ষিত। নীলার বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা। আর মা গৃহিণী।

নীলা দেখতে মাশাআল্লাহ। দুধে আলতা গায়ের রং। লম্বা লম্বা চুল। সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় নীলার গালের টোল। নীলাকে যেসময় হাসে তখন টোল পড়ে। সব মিলিয়ে এক কথায় অসাধারণ।
তবে মেয়েটা স্বভাবে বেশ রাগী। অল্পতেই রেগে যায়। তবে রেগে গেলে মেয়েটাকে আরো মিষ্টি দেখায়। দেখতে বেশ সুন্দরী হওয়ায় সে অনেক ছেলের ক্রাশ। তবে নীলা প্রেম পিরিতি থেকে সবসময় দূরে থাকে। তার একটা কারণ অবশ্যই আছে সেটা পরে বলব।

এখন সকাল 9 টা
শীতের সকাল……
শুভ নিজের পড়া শেষ করে নীলাকে ফোন করল।

তিনবার রিং হয়ে যাওয়ার পরে নীল ফোন রিসিভ করল
শুভঃ হ্যালো।
নীলাঃ হ্যালো। বল শুভ। (ঘুম ঘুম চোখে)
শুভঃ মহারানী কি এখনো ঘুমাচ্ছেন?

নীলাঃ এত সকাল সকাল ফোন করলি যে?
শুভঃ সকাল সকাল মানে?
নীলাঃ দিলিতো সাত সকালে ঘুমটা ভাঙিয়ে। কত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম তোকে নিয়ে।
শুভঃ মানে?

নীলাঃ বলছি তুই আমার স্বপ্নটা ভাঙ্গিয়ে দিলি। (কথা ঘুরিয়ে)
শুভঃ ওহহ, তাই বল।
নীলাঃ হুম।

শুভঃ তুই জানিস এখন কয়টা বাজে?
নীলাঃ না, কয়টা আর বাজবে? (মোবাইলের স্কিনে তাকিয়ে দেখল)
শুভঃ নয়টা বেজে গেছে।

নীলাঃ হুম রে, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না।
শুভঃ ঘুম বাদ দিয়ে একটু পড়াশুনা কর। তা না হলে পরীক্ষায় পাস করতে পারবি না।
নীলাঃ তুই তো আছিস।

শুভঃ আমি কি করবো নাকি?
নীলাঃ কেন তুই আমাকে পাশ করিয়ে দিবি?
শুভঃ আমি কি তোর শ্বশুর নাকি যে আমি তোকে পাস করবো?

নীলাঃ তুই আমার শ্বশুর হতে যাবি কেন? তুইতো আমারই।
শুভঃ কি বলিস ভালো করে বল।
নীলাঃ বলছি তুই আমার শ্বশুর হতে যাবি কেন। শশুর তো হবে তোর বাবা। (বিড়বিড় করে)
শুভঃ কিছু বললি? (বুঝতে না পেরে)

নীলাঃ কই না তো। (কথা ঘুরিয়ে)
শুভঃ ঘুম থেকে উঠে পড়তে বস।
নীলাঃ সকাল সকাল কি তোর মাথাটা গেছে?
শুভঃ কেন?

নীলাঃ আমি পড়তে বসবো তুই ভাবলি কি করে? তুই পড়।
শুভঃ আমি পড়ালেখা শেষ করেই তাই আপনাকে ফোন করলাম। দয়া করে আপনি আমাকে উপদেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
নীলাঃ তোরে কি শয়তানে লারে চারে?
শুভঃ কই নাতো।

নীলাঃ তাহলে এমন গায়ে পড়া কথা বলিস কেন?
শুভঃ কই আমি তো তেমন কিছু বলিনি?
নীলাঃ ওটা তুই বুঝবি না।

শুভঃ সবকিছু না বোঝো ভালো।
নীলাঃ হুম, সেটাই ভালো।
শুভঃ …….
নীলাঃ শোননা একটা কথা বলি।
শুভঃ হুম, বল।

নীলাঃ আজ বিকালে নিউমার্কেটে যে কফি শপ টা আছে সেখানে আসতে পারবি?
শুভঃ অন্য কোন জায়গায় গেলে হতো না?
নীলাঃ কেন রে?

শুভঃ ওইখানে কফির যে দাম। আল্লাহই জানে ওরা কফিতে কি মেশায়?
নীলাঃ এই কথা?
শুভঃ তুই বড়লোক বাবার মেয়ে তোর কাছে টাকা টাকা খরচ করা কোন বিষয় নয়। কিন্তু আমরা তো মধ্যবিত্ত? এজন্য অন্য কোথায় গেলে ভালো হয়।
নীলাঃ একদম বেশি জ্ঞান দিবি না

শুভঃ আবার কি হলো?
নীলাঃ আমার সাথে গেলে তোকে কখনো বিল দিতে হয়েছে?
শুভঃ না। (একটু মত হয়ে)
নীলাঃ তাহলে এবারও দিতে হবে না।
শুভঃ …..

নীলাঃ কিরে রেগে কথা বললাম বলে মন খারাপ হয়ে গেল? আর কখনো বলবো না। কিন্তু তুই এমন করিস কেন?
শুভঃ তুই কি করে বুঝলি আমার মন খারাপ হয়েছে?
নীলাঃ আমি না বুঝলে আর কে বুঝবে?

শুভঃ ধুর আমি শিশু মনে করিনি।
নীলাঃ তোকে একটা কথা বলি ভালই ভালই শুনে রাখ।
শুভঃ কি কথা?

নীলাঃ নীলা যতদিন তোর সাথে আছে ততদিন তোকে একটা টাকাও খরচ করতে হবে না। আমিতো বুঝি তোর অবস্থাটা। (একটু নত হয়ে)
শুভঃ কিন্তু প্রতিদিন তুই বিল দিলে আমার একটু লজ্জা বোধ করে। দেখিস না ওয়েটার গুলো আমার দিকে কিভাবে তাকায় বিল দিলে।
নীলাঃ এই কথা।
শুভঃ হুম।

নীলাঃ এবার দেখব কার কত সাহস?
শুভঃ কেন কি করবি নাকি?
নীলাঃ সেটা আজকে দেখতে পাবি।
শুভঃ নতুন কোন সিনক্রিয়েট করলে আমি কিন্তু যাব না?
নীলাঃ ধুর এমন কিছু করবো না।

শুভঃ সেটাই ভালো হবে।
নীলাঃ তুই তাহলে সময়মতো আসবি কিন্তু?
শুভঃ কয়টায় আসতে হবে?

নীলাঃ ঠিক বিকাল তিনটায়। এক মিনিট লেট হলে কিন্তু মেরে নাক ফাটিয়ে দেবো।
শুভঃ আচ্ছা যদি লেট হয় তাহলে মারিস।
নীলাঃ মনে থাকে যেন।
শুভঃ থাকবে।
নীলাঃ …..

শুভঃ আচ্ছা এখন তাহলে রাখি। আমার একটু কাজ আছে।
নীলাঃ আর একটু কথা বললে অসুবিধা কোথায়?
শুভঃ বিশ্বাস কর আমার একটা কাজ আছে।
নীলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে। নিজের খেয়াল রাখিস।
শুভঃ হুম।

তারপর শুভ ফোন রেখে দিল।
আর নীলা পাশ বালিশ জড়িয়ে নিয়ে বিছানার উপর আবার শুয়ে পড়লো।
আর মনে মনে বলতে থাকলো….. কেন জানি তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে রে….


পর্ব ২

নীলা অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকলো যে কখন 3 টা বাজবে।
দুপুর 2:30 এর কাছাকাছি সময়ে।
নীলা কফি শপে গিয়ে পৌঁছলো। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকল।

তারপরে নীলা দেখল শুভ চলে এসেছে। তখন সে আবার সময় দেখল
দুইটা বেজে 58 মিনিট।
শুভ আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে নীলার মুখোমুখি অর্থাৎ ঠিক তার সামনের চেয়ারে বসল।
নীলাঃ কি রে 2 মিনিট আগে আসলি?

শুভঃ আচ্ছা তাহলে তুই থাক আমি ঠিক দুই মিনিট পরে আসবো।
নীলাঃ আরে ধুর. আমি কি তাই বলেছি নাকি?

শুভঃ তাহলে? 2 মিনিট আগে আসলে ও আমার দোষ।
নীলাঃ আরে না।
শুভঃ তুই কখন এসেছিস?
নীলাঃ এইতো একটু আগে।

শুভঃ হঠাৎ এত জরুরি তলব।
নীলাঃ কেন রে? আমার সাথে দেখা করতে আসতে কি তোর কষ্ট হয়।
শুভঃ না তেমন কিছু নয়।

নীলাঃ তাহলে চুপচাপ বস।
শুভঃ কেন তোর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। (ফাজলামি করে)
নীলাঃ তুই ও না। এটাতো আমি কথার কথা বলেছি।
শুভঃ তাই নাকি?

নীলাঃ ফাইজলামি রাখ। কি ধরনের কফি খাবি অর্ডার কর।
শুভঃ কেন তুই কর না।
নীলাঃ আজ আমি তোর পছন্দমত খাব।
শুভঃ তাহলে দুইটা কোল্ড কফি।

নীলাঃ ওটা আমাকে না বলে একটা ওয়েটারকে বল।
তারপর শুভ একটা ওয়েটার কে ডেকে অর্ডার দিল।
অল্পক্ষণ বাদেই অর্ডার করা কপি চলে এলো।

নীলাঃ সুন্দর হয়েছে তাই না। (পান করতে করতে)
শুভঃ দামি জিনিস ভালো হতেই হবে।
নীলাঃ আচ্ছা তুই এত হিসাবী কেন রে?
শুভঃ মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নিলে বুঝতি।

নীলাঃ মনে কর, আমার মধ্যবিত্ত ঘরে বিয়ে হল।
শুভঃ থাম থাম, তুই তো একদিন ও টিকতে পারবি না।
নীলাঃ কে বলল?
শুভঃ আমি বলছি।

নীলাঃ তুই দেখিস আমি ঠিক টিকে যাব।
শুভঃ তুই এমন ভাবে বলছিস যেন তোর সবকিছু সেটেল হয়ে আছে!
নীলাঃ আরে না,তেমন কিছু না। (আমতা আমতা করে)
শুভঃ ……

নীলাঃ একটা কথা শুনবো সত্যি কথা বলবি?
শুভঃ আমি কি তোকে কখনো মিথ্যা বলেছি?
নীলাঃ না ঠিক তা নয়।
শুভঃ তাহলে?

নীলাঃ আসলে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে এর জন্য আর কি?
শুভ কি কথা জিজ্ঞেস করতে চাস?
নীলাঃ তুই কি কোন মেয়ে কে পছন্দ করিস?
শুভঃ হঠাৎ এমন প্রশ্ন?

নীলাঃ প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নের মাধ্যমে দিতে হয়না জানিস না?
শুভঃ না। আর যদি করতাম তাহলে তো সবার আগে তোকে বলতাম।
নীলাঃ আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু করছিস না তো?
শুভঃ আরে না। প্রশ্নই উঠে না।

নীলাঃ তাহলে তো ভালোই হলো। (খুশি হয়ে)
শুভঃ মানে?
নীলাঃ কিছু না। কিন্তু তুই প্রেম করিস না কেনো?
শুভঃ এমনি ভাল লাগেনা তাই।

নীলাঃ কোন কথার মত কথা হল।
শুভঃ তা বাদেও গার্লফ্রেন্ডের পেছনে তো প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়। যেটা আমার নেই।
নীলাঃ এইসব বাজে কথা কে বলে?

শুভঃ কে আবার বলবে আমি নিজেই তো দেখি।
নীলাঃ মনে কর আমি তোর গার্লফ্রেন্ড, কিন্তু তোরই হলো টাকা খরচ হচ্ছে?
শুভঃ সবাই তো আর তোর মত হবেনা।
নীলাঃ সেটা ঠিক।

শুভঃ বাজে কথার রাখ। তুই কি প্রেম-ট্রেম করিস নাকি?
নীলাঃ সরাসরি তো করিনা। তবে মনে মনে একজনকে প্রচন্ড ভালোবাসি।
শুভঃ কে সে!!

নীলাঃ সেটা তো তোকে বলা যাবে না।
শুভঃ কেন? আমি না তোর বেস্ট ফ্রেন্ড।
নীলাঃ ওখানেই তো যত সমস্যা।
শুভঃ মানে?

নীলাঃ বলবো অন্য কোনদিন।
শুভঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
এরমধ্যে দুজনের কফি খাওয়া শেষ।
এবার বিল দেওয়ার পালা।


পর্ব ৩

নিয়ম অনুযায়ী বিল পেপার নিয়ে ওয়েটার এসে উপস্থিত।
ওয়েটার – স্যার এই যে আপনার বিল। (শুভকে উদ্দেশ্য করে)
শুভঃ …… (ওয়েটার এর দিকে তাকিয়ে)

নীলাঃ দেখতো নিচে কি যেন পরছে। (শুভ কে উদ্দেশ্য করে)
শুভঃ … (একটু অবাক হল তারপর নিচের দিকে তাকালো)

শুভ দেখল নীলার রুমালের সাথে 1000 টাকার একটি নোট নিচে পড়ে আছে।
শুভ যত্নসহকারে দুটিই উঠালো। নীলার ইশারায় সে নোটটি ওয়েটারের দিকে এগিয়ে দিল।
শুভ নীলার কথামতো টাকাটা ওয়েটারকে দিয়ে দিল।

ওয়েটারঃ ধন্যবাদ স্যার।
শুভঃ ঠিক আছে।
তারপর ওয়েটার চলে গেল।
নীলাঃ এবার উঠা যাক?
শুভঃ হুম, চল।

তারপর তারা দুইজন কফিশপ থেকে বের হলো।
শুভ রিক্সা ডাকার জন্য এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে
নীলাঃ কিরে, কি খুজছিস?
শুভঃ রিক্সা খুঁজছি। কিন্তু কোন রিক্সা তো দেখছি না।
নীলাঃ রিক্সার কি দরকার?

শুভঃ মানে কি? বাসায় ফিরব কি করে?
নীলাঃ আরেকটু পরে ফিরব। (আবদার করে)
শুভঃ আরেকটু পরে তো এখন কি করবি?

নীলাঃ চলনা দুজন রাস্তার পাশ দিয়ে একটু হাটি।
শুভঃ সোসাইটির লোকজন কি ভাববে? একটু ভাব।
নীলাঃ সোসাইটি কি তোকে খেতে দেয়?
শুভঃ না।
নীলাঃ তাহলে সোসাইটির লোক কি বলল তাতে তোর, আমার কি? তুই চলত।
শুভঃ কিন্তু….

নীলাঃ কোন কিন্তু নয় তুই চল? (শুভর হাত ধরে টানতে টানতে)
শুভঃ আচ্ছা চল।
তারপর তারা দুইজন রাস্তার পাশ দিয়ে হাটতে লাগল।

শুভঃ তুই কফিশপে ইচ্ছে করে টাকা নিচে ফেললি সেটা ঠিক আছে কিন্তু টাকার সাথে রুমাল ফেলার কি দরকার ছিল?
নীলাঃ যদি আমি শুধু টাকা ফেলতাম তাহলে তোকে নিচে থেকে শুধু টাকা উঠাতে হত। আর ওই ওয়েটার বুঝতে পারত যে তুই টাকাটা নিচে থেকে তুলেছি। কিন্তু রুমালটা ফেলার কারণে ওয়েটার বিষয়টা বুঝতে পারিনি। ওয়েটার মানে করেছে তুই নিচ থেকে রুমালটা উঠেছিস টাকাটা কথা তোর হাতে ছিল।
শুভঃ তোর বুদ্ধি আছে বলতে হবে?

নীলাঃ দেখতে হবে না। তবে আজ আর ছোট হতে হলো না। অন্যদিন কফিশপে ঢোকার আগে আমি তোর কাছে টাকা দিয়ে দেবো আর তুই বিল পেমেন্ট করবি।
শুভঃ তুই আমাকে নিয়ে এত ভাবিস কেন?
নীলাঃ যেমন?
শুভঃ এই যে কয়েক ঘন্টা পর পর ফোন করে খোঁজ নিস আমি কি করছি? খেয়েছি কিনা? ঠিকমতো ঘুমাচ্ছি কিনা? এত কেয়ার করিস কেন তুই আমায়?
নীলাঃ ভালো লাগে তাই।
শুভঃ …

নীলাঃ তুইও তো আমার অনেক কেয়ার করিস?
শুভঃ বাল করি? তুই তো সব সময় আগে ফোন করিস। আমি তো একটা বারও করিনা। মাঝে মধ্যে দু’একবার করি কিন্তু সেটা ধরায় আসে না।
নীলাঃ অত ধরতে গেলে বন্ধুত্ব চলে না।
শুভঃ ….

নীলাঃ আচ্ছা একটা কথা বলি মন থেকে উত্তর দিবি।
শুভঃ বল।
নীলাঃ তুই কেমন মেয়ে বিয়ে করতে চাস?

শুভঃ এমন প্রশ্ন কেন করেছিস?
নীলাঃ মানুষ প্রশ্ন কখন করে?
শুভঃ কোন কিছু জানার আগ্রহ থাকলে।
নীলাঃ তাহলে। আমার জানতে ইচ্ছে করছে এজন্য জিজ্ঞাসা করলাম।
শুভঃ …
নীলাঃ কি হল বল?

শুভঃ আমি শুধু এমন একজনকে চাই যে আমাকে বুঝবে। অর্থাৎ যার ক্ষমতা থাকবে আমাকে বোঝার।
নীলাঃ এমন মেয়ে তুই কোথায় পাবি?
শুভঃ জানিনা।

নীলাঃ নিজের মনের মত মেয়ে দেখে প্রেম কর। তাহলে তো আর কোন সমস্যা থাকে না।
শুভঃ সেটা কোথায় পাব?
নীলাঃ তোর আশেপাশে খুজে দেখ হয়তো পেয়ে যাবি।

শুভঃ জানিনা রে। প্রেম করতে গেলে তো স্মার্ট হতে হবে। কিন্তু আমি তো সেটা পারবো না।
নীলাঃ সত্যি তুই অনেক ভালো একটা ছেলে।
শুভঃ বাল ভালো।
নীলাঃ তুই একটা জব কেন করছিস না?
শুভঃ আমার কি লেখা পড়া শেষ হয়েছে? যে তাই জব করব।

নীলাঃ লেখাপড়া শেষ হয়নি তাতে কি হয়েছে? তুই তো চাইলে যেকোন একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করতে পারিস?
শুভঃ ভালো লাগে না রে।
নীলাঃ ভালো লাগে না বললে হবে না, বিয়ের পর খাওয়াবি কি?
শুভঃ বুঝলাম না?

নীলাঃ বলছি, তুই যাকে বিয়ে করবি তাকে খাওয়াবি কি? কোন জব না করলে তো তোকে কেউ মেয়ে দেবে না।
শুভঃ তুমি তো এখন বিয়ে করতে চাচ্ছি না, যে তাই জব করতে।
নীলাঃ একদিন না একদিন তো করতেই হবে?
শুভঃ সেটা তো অবশ্যই।
নীলাঃ তাহলে তো জব করতে হবে।
শুভঃ হুম।

নীলাঃ আমার মনে হয় তোর লেখা পড়ার সাথে সাথে কোন একটা জবে জড়িয়ে পড়া উচিত।
শুভঃ আচ্ছা ট্রাই করবো।
নীলাঃ এইতো ভালো ছেলের মত কথা।
শুভঃ হুম, হাঁটতে হাঁটতে অনেক দেরি হয়ে যাবে চল একটা রিক্সায় উঠি।

নীলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তারা আরো অনেক গল্প করতে করতে যে যার বাসায় পৌঁছালো
বলে রাখা ভালো নীলা আর শুভর বন্ধুত্বকে প্রায় চার বছর।

সন্ধ্যার পর……
নীলা সোফায় বসে বসে ভাবতে থাকে।
আমার সব সময় ইচ্ছে হয় তোকে আমার সামনে বসিয়ে রাখি। যাতে তোকে মন ভরে দেখতে পারি। কিন্তু তুই আমাকে বুঝিস না কেন?
সব সময় আমার থেকে দূরে যাওয়ার বাহানা করিস কেন?

তুই কি আমাকে সত্যিই বুঝিস না?
তোর মত ভদ্র ছেলেকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া যে কোন মেয়ের ভাগ্যের বিষয়।
তুই কি বুঝিস না, আমি তোকে কতটা ভালোবাসি?

লেখাপড়া শেষ করে তুই ভালো একটা জব কর। তারপরও তুই আমাকে ভালবাসিস আর নাই বাসিস আমি তোকে বিয়ে করবো।
অবশ্য তুই জব না করলে ও চলবে। তুই জব করিস আর না করিস তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমার মা-বাবাকে তো মানাতে হবে।
তারা তো ভালোবাসা দেখবে না তারা জব দেখবে।
তাইতো কিছু একটা করতেই হবে?


পর্ব ৪

এভাবে দিনের পর দিন কেটে যায়। মাসের পর মাস কেটে যায়। তত ভালবাসাটা বেড়ে যায়।
কিন্তু বলার মত সাহস হয়ে ওঠে না নীলার।

তাই তো সে বিভিন্ন ইঙ্গিত দিয়ে বোঝাতে চায় শুভকে যে নীলা তাকে ভালোবাসে।
কিন্ত নীলার কোন ইঙ্গিতই কাজ করছে না। শুভ তাকে কোন ভাবেই বুঝতে চেষ্টা করছে না। এজন্য নীলার মন খারাপ।

এদিকে শুভ ভাবে……..

আমি বোকা হতে পারি কিন্তু এতোটুকু বোঝার ক্ষমতা আমার আছে।
তুই আমাকে পছন্দ করিস এটা আমি জানি। আমিও তোকে পছন্দ করি।
কিন্তু তোকে কাছে পাওয়ার চেয়ে হারানোর ভয়টা আমি বেশি করি।

এই ব্যস্ত আর নিষ্ঠুর শহরে গরিবের ভালবাসার মূল্য হয় না। এটা তুই বুঝবি না। কেননা তুই তো বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে।
ভালোবাসতে গেলে টাকা লাগেনা, কিন্তু সেই ভালবাসাটাকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে অবশ্যই টাকার প্রয়োজন পড়বে। এটা আমার দ্বারা পূরণ করা সম্ভব নয়।

তুই আমার পরিস্থিতিটা বুঝবি না। হয়তো তোকে ভালোবাসাটা আমার পক্ষে সহজ কিন্তু তোকে নিজের করে পাওয়াটা বড্ড কঠিন হবে।
তাই আমি চাই তুই আমাকে ভুলে যা। এটা আমাদের দুজনেরই পক্ষে ভাল হবে।

তাই তুই আমাকে যতই ইঙ্গিত দিস না কেন আমি সেটাকে সবসময় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। আর তোকে প্রপোজ করা তো দূরের কথা আমি এই বিষয় নিয়ে তোর সাথে কোন আলোচনা আলোচনাই করবো না।

তবে আমি জানিনা তোকে আমি কতটা ভালোবাসি? তবে এটা জানি তোকে হয়তো নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।
আমি জানিনা তুই যদি কোনদিনও আমাকে প্রপোস করে বসিস জানিনা আমি কী উত্তর দেবো।

দিন চলে যায় মাস চলে যায় ভালোবাসা ততো বেড়ে বেড়ে যায়।
যার কারণে একে অপরের প্রতি কেয়ার করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
এদিকে নীলা ভাবতে থাকে….

আমি জানি ওর কোন মেয়ের সাথে কোন রিলেশন নেই। কিন্তু রিলেশন হয়ে যেতে কতক্ষণ। যদি কারো সাথে রিলেশনে জড়িয়ে যায়।
আমি ওকে এভাবে হারাতে পারবো না। আমার না বলা কথাটা ওকে বলতে হবে।

শুধু শুধু আমি তোকে হারাতে চাইনা। তাই মনের লুকানো কথা টা তোকে বলতেই হবে। তুই আমাকে কিছু একটা উত্তর তো দিবি।
প্রতিমুহূর্তে তোকে হারানোর দুশ্চিন্তা আমাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

নীলা অনেক চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিল যে সে শুভকে মনের কথাটা বলেই ফেলবে।
এ কয়দিনে সে শুভকে বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে শুভ বুঝেছে কিন্তু কোন রিয়াক্ট করিনি।
নীলা প্রথমে সিদ্ধান্ত নিল যে সে ফোন করে প্রপোজ করবে। কিন্তু পরক্ষণেই সে তার সিদ্ধান্ত বদলে নিল কেননা সে ভাবল যদি আমি ফোনে প্রপোজ করি তাহলে সে তাহলে শুভ ফাজলামি করে উড়িয়ে দেবে। তাই তাকে সামনাসামনি প্রপোজ করতে হবে

এজন্য নীলা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো। এবং ঠিক করল পরের দিনই প্রপোজ করবে। এবং সে এটাও ঠিক করল যে কোথায় প্রপোজ করবে।
কিন্তু উক্ত জায়গায় তো শুভকে উপস্থিত থাকতে হবে। এজন্য তাকে অবশ্যই বলতে হবে সে যেন ওই জায়গায় যায়।

তাই নীলা শুভ কে ফোন করল।
প্রথম রিং হতে না হতেই শুভ ফোন রিসিভ করল।
নীলাঃ হ্যালো?
শুভঃ ধুম করে ফোন করে বুম করে আমার কাচা ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলি তো?

নীলাঃ দেখ একদম ফাজলামি করবিনা?
শুভঃ রিয়েলি আমি ঘুমাচ্ছিলাম।
নীলাঃ শীতের বিকালে আবার কেউ ঘুমায়?
শুভঃ শরীরটা একটু খারাপ লাগছিলো তাই আর কি?

নীলাঃ কেন কি হয়েছে? (উদ্বিগ্ন হয়ে)
শুভঃ সামান্য মাথা ব্যাথা।
নীলাঃ ওষুধ খেয়েছিস?
শুভঃ এই সামান্য অসুস্থতায় কেউ ওষুধ খাই নাকি?

নীলাঃ তবুও।
শুভঃ আমি ঠিক আছি। আমার জন্য চিন্তা করিস না।
নীলাঃ এএএএ বানর কোথাকার আমি তোর জন্য চিন্তা করতে যাব কেন?
শুভঃ না এমনি বললাম।

নীলাঃ শোন না একটা কথা ছিল?
শুভঃ জি মহারানী আপনি বলুন আমি শুনছি।
নীলাঃ তুই এমন কেন রে?
শুভঃ কেমন?

নীলাঃ সেটা তোকে ঠিক বলে বোঝানো যাবে না।
শুভঃ না বোঝানোই ভালো? তুই কি যেন বলতে চাচ্ছিস?
নীলাঃ হুম

শুভঃ তো বল।
নীলাঃ কি করে যে বলি? (দ্বিধাবোধ করে)
শুভঃ মুখ দিয়ে বলবি।
নীলাঃ আচ্ছা শোন।

শুভঃ শুনছি বলছি তো, কিন্তু তুই বলছিস কই?
নীলাঃ বলার সুযোগ টা কোথায় দিচ্ছিস? কথার মাঝে সমান বাম হাত দিচ্ছিস। বলার সুযোগ টা তো দে।
শুভঃ আচ্ছা আর রাগ দেখাতে হবে না, আমি চুপ থাকবো। তুই এবার বল।
নীলাঃ ….হুম।

শুভঃ …..
নীলাঃ কালকে নিরিবিলি পার্কে ঠিক সকাল 11 টায় দেখা করবি।
শুভঃ ওহ, এই কথা।
নীলাঃ হুম।

শুভঃ কিন্তু পার্কে কেন? আমরা তো কফিশপে দেখা করতে পারি?
নীলাঃ সেটা কাল এলেই বুঝবি?
শুভঃ আচ্ছা ভুলে গিয়েছিলাম আমি আবার কম বুঝি।
নীলাঃ ঠিক তাই?
শুভঃ হয়েছে হয়েছে?

নীলাঃ আর একটা কথা বলি শোন, কাল তোর নীল রংয়ের পাঞ্জাবিটা গায়ে দিয়ে আসবি?
শুভঃ ঠিক আছে। কিন্তু পাঞ্জাবি কেন? কালকে কি আমার বিয়ে দিবি?
নীলাঃ বয়েই গেছে আমার তোর বিয়ে দিতে, আমি তো তোকে বিয়ে করবো। (বিড়বিড় করে)
শুভঃ কিছু বললি?

নীলাঃ বলছি সেটা কালকেই বুঝবি।
শুভঃ যথা আজ্ঞা মহারানী।
নীলাঃ মনে থাকে যেন?
শুভঃ থাকবে।

নীলাঃ এখন তাহলে রাখি? আমার একটা কাজ আছে?
শুভঃ আচ্ছা।
আসলে নীলার কোন কাজ নেই সে মিথ্যা বলেছে এজন্য যাতে সে ভেতরে ভেতরে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পায়।
পরদিন সকাল এগারোটা…..


পর্ব ৫

পরের দিন সকাল 11 টা

শুভ ঠিক সময়ে পার্কে গিয়ে পৌঁছাল।
কিন্তু সে গিয়ে দেখল নীলা এখনো আসেনি।
সে মিনিট 5 অপেক্ষা করল।

সে দেখল নীলা আসছে।
কিন্তু একটু অন্য সাজে। নীল শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে সবকিছু পড়েছে। সব মিলিয়ে নীলাকে অপরূপ সুন্দর লাগছে। শুভ যেন তার থেকে নজর ফেরাতে পারছে না।
সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে নীলার দিকে চেয়ে রইল।

একটা সময় নীলা শুভর সামনে চলে আসলো।
নীলাঃ এমন করে কী দেখছিস।
শুভঃ …. (নীলার দিকে চেয়ে আছে)

নীলাঃ কি হল কথা বল? (শুভর গায়ে ধাক্কা দিয়ে)
শুভ…… (নীলার কথায় তার ঘোর ভাঙলো)
নীলাঃ কি দেখছিস এমন করে?
শুভঃ তোকে দেখছিলাম।

নীলাঃ কেমন লাগছে আমাকে? (একটু লজ্জা পেয়ে)
শুভঃ আগে পেত্নীর মত লাগত। আর এই সাজে তোকে পুরাই ডাইনীর মত লাগছে।
নীলাঃ
শুভঃ

নীলাঃ তুমি এত কিপটা কেন?
শুভঃ আমি আবার কিপটামি কি করলাম?
নীলাঃ কেমন সুন্দর করে সেজে এসেছি। কোথায় একটু প্রশংসা করবি তা না।
শুভঃ প্রশংসা? তাও আবার তোর?

নিলাঃ তো কার? সত্যি করে বলনা আমাকে কেমন লাগছে?
শুভঃ খুব খুব সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে কোন 1 নীল পরী নেমে এসেছে।
নীলাঃ সত্যি!! (লজ্জা পেয়ে)

শুভঃ হুম।
নীলাঃ যদি এমন সুন্দর কেউ তোর বউ হয় তাহলে তুই কি করবি?

শুভঃ ফুল যেমন ফুলদানিতে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা হয় ঠিক তেমনি এমন সুন্দর বউকে ফুলের মতো গুছিয়ে রাখতাম।
নীলাঃ কি যে বলিস? আমি এত সুন্দর নাকি?
শুভঃ তুই সত্যি অনেক সুন্দর।
নীলাঃ আচ্ছা চল, একসাথে হাটি। (মুচকি হাসতে হাসতে)

শুভঃ বলিস কি?
নীলাঃ কেন আবার কি হলো?
শুভঃ তুই আর আমি ম্যাচিং ড্রেস পরেছি। আমি যদি একসাথে হাটি তাহলে যে কেউ ভাববে সদ্য বিয়ে করা নতুন কাপল।
নীলাঃ যার যা ইচ্ছে তাই মনে করুক।

শুভঃ (একটু ভেবে) আচ্ছা চল।
তারপর তারা দুইজন কিছুক্ষণ পাশাপাশি হাটলো।
কিছুক্ষণ পর…….
নীলাঃ তোকে একটা কথা বলব?

শুভঃ হুম, বল।
নীলাঃ আগেই বলে দিচ্ছি আমি কিন্তু ইয়ার্কি ফাজলামি করছি না
শুভঃ তো আমি করেছি নাকি?
নীলাঃ আমি তোকে যে কথাটা বলব তুই কিন্তু কথাটা সিরিয়াসলি নিবি। কেননা আমি সিরিয়াসলি বলবো।
শুভঃ আচ্ছা বল আমি সিরিয়াসলি নেব।

নীলাঃ বলবো তার আগে একটা কথা বল। তোর আমাকে কেমন লাগে?
শুভঃ মাশাল্লাহ তুই দেখতে সুন্দর খারাপ লাগার কি আছে?
নীলাঃ কথাটা তোকে অনেকদিন বলবো বলবো ভাবছি কিন্তু ঠিক সাহস করতে পারছি না।
শুভঃ আমি কি বাঘ না ভাল্লুক?

নীলাঃ দেখ একজন ভালো বন্ধুই একজন ভালো জীবনসঙ্গী হতে পারে।
শুভঃ সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তুই এসব কথা আমাকে কেন বলছিস?

নীলাঃ কেননা আমি তোকে আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে সারা জীবন পাশে চাই।
শুভঃ ……. (অবাক দৃষ্টিতে নীলার দিকে চেয়ে আছে)
নীলাঃ আমি তোকে খুব খুব ভালোবাসি। তুই আমাকে ফিরিয়ে দিস না। (শুভর হাত ধরে)
শুভঃ …

নীলাঃ আমি তোকে অনেক আগে থেকে ভালবাসি। আমি অনেক ইঙ্গিত দিয়ে তোকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু তুই বুঝিস নি।
শুভঃ ….
নীলাঃ প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিস না, তোকে হারানোর ভয় আমাকে কুরে কুরে খায় তাই আজ বলেই ফেললাম।
শুভঃ সহজ কথায় তুই আমাকে প্রপোজ করছিস তাইতো?
নীলাঃ হুম,

শুভঃ তাহলে ফুল দিয়ে প্রপোজ কর।
নীলাঃ এখন ফুল কোথায় পাবো?
শুভঃ তাহলে তো উত্তর পাবি না।

নীলাঃ একদম কাহিনী করবি না। সোজাসুজি বল। তবে উত্তর জানো হা সূচক হল। (শুভর পাঞ্জাবির কলার ধরে)
শুভঃ আমি তোকে খুব ভালোবাসি রে পাগলি। (নীল কে কাছে টেনে নিয়ে)
নীলাঃ তাহলে এতদিন বলিস নি কেন? (শুভর বুকে মাথা রেখে)
শুভঃ ভয়ে।

নীলাঃ তারমানে আমার ইঙ্গিত গুলো তুই বুঝতে পারছিলি?
শুভঃ হুম, তবে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু আজ আর এড়িয়ে পারলাম না।
নীলাঃ এড়িয়ে যেতিস কেন?
শুভঃ ব্যবধানের কারণে?

নীলাঃ কিসের ব্যবধান?
শুভঃ তোর আর আমার সামাজিক ব্যবধান।
নীলাঃ কই আমি তো শত ব্যবধান উপেক্ষা করে তোকে ভালোবেসেছি। তাহলে তুই কেন পারিস নি? তারমানে আমার ভালোবাসার কাছে তুই হেরে গেছিস?
শুভঃ আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুমি আমাকে ছেড়ে তোর ভালোবাসার কাছে যা।
নীলাঃ সে সবগুলো তো তুই।

শুভঃ তাহলে চুপচাপ অতীতকে ভুলে যা।
নীলাঃ সেটাই ভালো।

আরো কিছুক্ষণ তারা প্রেমের গল্প করল।
ততক্ষণে দুপুর 2 টা

শুভঃ চল এবার বাসায় ফিরে যাই।
নীলাঃ যেতে হবে কিন্তু আজ তোকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।
শুভঃ আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি নাকি?
নীলাঃ তবুও।

শুভঃ ধুর পাগলী, এবার বাসায় যা।
নীলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি। কিন্তু ফোনে কথা বলিস।

শুভঃ আচ্ছা ঠিক আছে। এবার তুই বাসায় যা। তা না হলে আঙ্কেল আন্টি চিন্তা করবে।
নীলাঃ ওকে। তুই ও যা।
শুভঃ হুম।
নীলাঃ সাবধানে যা। আর বাসায় পৌঁছে একটা ফোন করিস।
শুভঃ ওকে।


পর্ব ৫

প্রকাশ্যে এল একটা ভালোবাসার রঙিন গল্প। অর্ধ পূর্ণতা পেল একটা ভালোবাসা।
কারো প্রতি যদি আপনার কোনো অনুভূতি থাকে তাহলে সেটা যত দ্রুত সম্ভব প্রকাশ করুন। কেননা এক মিনিট পরে আপনি বাঁচবেন কিনা সেটা আপনি নিজেই জানেন না। মৃত্যু যে কোন সময় আসতে।

কারো প্রতি অনুভূতি থাকলে যদি সেটা আপনি প্রকাশ করেন। তাহলে সম্ভাব্য ফলাফল হতে পারে মাত্র 2 টি। 1. হয়তো সে আপনাকে গ্রহন করবে। 2. অথবা সে আপনাকে রিজেক্ট করবে।

যদি গ্রহণ করে তাহলে আপনি নিজের আপন মানুষটার সাথে বেশি সময় অতিবাহিত করতে পারবেন যদি আপনি সেটা প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু মনের কথা বলতে দেরি করলে যে সময়টা হারিয়ে যাচ্ছে সেটা আপনি আর কোনদিনও ফিরে পাবেন না।

আর যদি সে আপনাকে রিজেক্ট করে তাহলে নিজেকে আবার নতুন করে প্রস্তুত করতে পারবেন সেই মানুষটার ইচ্ছে মত। আসলে ব্যর্থতা বলতে কিছু নেই। হয় আপনি জিতে যাবেন নয়তো নতুন কিছু শিখবেন, নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।
তাই মনের কথা লুকিয়ে না রেখে বলে দেন। সেটাই সবার জন্য মঙ্গল।
যাইহোক গল্পে আসা যাক,

অনেকদিনের লুকানো ভালোবাসা প্রকাশ পেল আজ।
এমনিতেই তারা একে অপরের প্রতি কেয়ারিং ছিল।
কিন্তু সেই কেয়ারিং আরো বহুগুণে বেড়ে গেল।

ভালোবাসা মানে রাগ, আবেগ, অভিমান অথবা ব্রেকআপ নয়, তবে এগুলো না হলে ভালোবাসায় খুনসুটি আসেনা।

ভালোবাসা মানে একে অপরের কেয়ার করা, চোখের ভাষা পড়তে শেখা, প্রিয় মানুষটার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করা।
কিন্তু এখনকার ভালোবাসা গুলো অশ্লীলতায় ভরে গেছে। এর জন্য দায়ী প্রেমিক-প্রেমিকা উভয়ই। কেননা একহাতে কোনদিনও তালি বাজে না।
এদিকে যত দিন অতিবাহিত হতে থাকলো দুজনের মধ্যে ভালোবাসা পরস্পর বৃদ্ধি পেল। তবে সেটা অশ্লীলতা নয়।
দুজন দুজনের কেয়ার করে। মাঝে মাঝে দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া করে, দুজন দুজনকে ভীষণভাবে মিস করে,

সপ্তাহে অন্তত দুইদিন ঘুরতে যায়, পার্কে বসে বাদাম খায়। সন্ধ্যার সময় বাসায় ফেরার সময় রাস্তার পাশে দোকান থেকে ঝাল মুড়ি আর ফুচকা খায়। খুনসুটির মধ্য দিয়ে সময় কাটায়। একে অপরের প্রতিমুহূর্তের খবর রাখে।
এভাবে তাদের প্রেম কাহিনী চলতে থাকলো।

এক বছর পর……….
ভালোবাসাটা ঠিক আগের মতোই অটুট আছে।
শুভ যে নীলার বন্ধু এটা নীলার বাসার সবাই জানতো। কিন্তু শুভ ভালো ছেলে হওয়ার কেউ কখনো আপত্তি করেনি।
কিন্তু তারা যে একে অপরকে ভালোবাসে এটা কেউ জানতো না।
কিন্তু হঠাৎ একদিন…….

শুভ আর নীলা রিকশায় করে যাচ্ছিল।
যেটা নীলার বাবার চোখে পড়ে।

রিকশায় করে যাচ্ছিল সেটা বড় কথা নয়। নীলার বাবার চোখ পড়ার কারণ রিক্সায় নীলা শুভকে জড়িয়ে ধরে বসেছিল।
এটা দেখে নীলার বাবা সন্দেহ করে।

নীলার বাবা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। নীলার বাবা বিষয়টি নীলার মায়ের সাথে ও শেয়ার করে। নিজেদের একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা খুবই চিন্তিত।
অবশেষে তারা নিলেন তারা তাদের মেয়ের সাথে কথা বলবে এই বিষয় নিয়ে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হলে
নীলা বাড়ি ফিরল।

নীলাকে দেখে তার আব্বু ডাক দিল।
নীলার আব্বু- নীলা মা এদিকে শোনতো।
নীলাঃ কিছু বলবা বাবা? (একটু দূরে দাঁড়িয়ে)
নীলার আব্বু-হুম।

তারপর নীলা তার আব্বুর দিকে এগিয়ে আসলো।
নীলাঃ এবার বল বাবা।
নীলার আব্বু- কথাটা যে তোকে কি করে বলি?
নীলাঃ কি এমন কথা?

নীলার আব্বু- সেটাইতো।
নীলাঃ তুমি বলতো।
নীলার আব্বু- শুভর সাথে তোর কি সম্পর্ক?
নীলাঃ …

নীলার আব্বু- কি হল বল?
এরমধ্যে নীলার মা চলে আসলো….
নীলার আম্মুঃ তোর আব্বুকে জিজ্ঞেস করছে না?

নীলাঃ হুম।
নীলার আব্বু- তাহলে বল।
নীলাঃ দেখো আমি খুব একটা মিথ্যা কথা বলি না তাই সত্যি কথাটা বলছি। আমি আর শুভ একে অপরকে ভালোবাসি।
নীলার আব্বু-কীহহহ আমার মুখের উপর এত বড় কথা?

নীলার আম্মুঃ এজন্য তাকে মানুষ করছিলাম?
নীলাঃ আমি ভুল তো কিছু করিনি। আমরা শুধু একে অপরকে ভালোবাসি।
নীলার আব্বু- এটাই সব থেকে বড় ভুল
নীলার আম্মুঃ ছেলেটাকে সাদাসিধে ভাবতাম। কিন্তু তলে তলে এত কিছু?

নীলাঃ ওর নামে একদম বাজে কথা বলবেনা। কেননা আমি নিজে ওকে প্রপোজ করেছি।
নীলার আম্মুঃ এখন বুঝছি, তুই একের পর এক পাত্র কেন রিজেক্ট করছো। তোর জন্য কত ভালো ভালো সম্বন্ধ এসেছিল কিন্তু তুই রাজি হলি না।
নীলার আব্বু- তবে এটা ভাবিস না তোর বিয়ে শুভর সাথে দেবো।
নীলাঃ ….
নীলার আম্মুঃ কি আছে ছেলেটার, ওর কি তোর সাথে যায়?
নীলার আব্বু- না আছে ভালো জব, না আছে ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড।
নীলাঃ কিন্তু আমি তো ওকে ভালোবাসি।
নীলার আব্বু- ভুলে যা এসব আবেগী কথা। ওই ছেলে কি তোকে সুখে রাখতে পারবে?

নীলাঃ আমি কিন্তু শুভ কে বিয়ে করবো বলে দিলাম।
নীলা আম্মু- নিকুচি করেছে তোর ভালোবাসার।
নীলার আব্বু- তোর জন্য এর থেকে ভালো ছেলে এনে দেবো। তোর দোহাই লাগে তুই এভাবে আমাদের মান-সম্মান নষ্ট করিস না।
নীলাঃ কিন্তু বাবা আমি তো ওকে ভালোবাসি।

নীলার আব্বু- বললাম তো তোর জন্য এর থেকে ভালো ছেলে এনে দেবো।
নীলাঃ আমি ওর থেকে ভালো কাউকে চাইনা। আমি শুধু ওকেই চাই। তুমি আমার কথাটা কেন বুঝনা?

নীলর আব্বু- আজ থেকে তোর বাসার বাইরে যাওয়া বন্ধ। ঠিক ততদিন তুই ঘরে বন্ধ থাকবি যতক্ষণ না তোর বিয়ে হয়।
নীলার আম্মুঃ এটা আমাকে দে? (বলেই নীলার হাত থেকে ফোন নিয়ে নিল।
তারপর সেটা ফ্লোরে আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলল।

নীলার আম্মুঃ সিনেমার মতো ভাবিস না ঘরে বন্দী থেকে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিলেই আমরা তোর ভালোবাসা মেনে নেব। তোর জন্য আমরা আমাদের মান-সম্মানের ক্ষতি হতে দিব না। এটা মনে রাখিস।
নীলাঃ সেটা আমিও দেখে নেবো।

নীল কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার মা-বাবা তাকে ঘরের ভিতরে আটকে রাখলো।
নীলার মা-বাবা দুজনেই তাদের সিদ্ধান্তে অটল তারা কোনোভাবেই এ সম্পর্ককে মেনে নেবে না।
কিন্তু তারা জানে তাদের মেয়েও খুব জেদি


পর্ব ৭

তারা জানে তাদের মেয়ে খুব জেদি

আর এই ব্যাপারটা নিয়ে নীলার বাবাঃ মা দুজনেই খুব চিন্তিত।
কিন্তু নীলার এই সম্পর্ক মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব।
সব বাবা মা চায় তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হোক। নীলা ধনী বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়ায় তার বাবা-মা তার পাশে মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান শুভকে কোন মতেই মেনে নিতে পারছে নাহ।

এদিকে নীলা
তার মা-বাবার এই ব্যবহারে খুবই ভেঙে পড়েছে।

নীলার কোন উপায় নেই শুভর সাথে যোগাযোগ করার। কেননা তার ফোন তার মা ভেঙে ফেলেছে।
একদিন পর……..
নীলার কোন খবর না পেয়ে শুভ চিন্তায় পড়ে যায়।

সে নীলার নম্বরে বার বার ট্রাই করতে থাকে কিন্তু কোন লাভ হয় না।
শুভ ভাবতে থাকলো নীলা কি অসুস্থ হয়ে পরলো নাকি? ওতো আমার সাথে কথা না বলে থাকতেই পারে না। তাহলে ফোন বন্ধ করে রেখেছে কেন?
অসুস্থ হলেও তো ফোন বন্ধ থাকার কথা না। তাহলে কি হলো?

এই প্রশ্ন বারবার কড়া নাড়তে থাকে শুভর মনে।
অন্যদিকে নীলা…..

তার ইচ্ছা হচ্ছে শুভর সাথে কথা বলার, তাকে এক নজর দেখার। কিন্তু বদ্ধ ঘরের চারদেয়ালের ভিতর তার কেঁদে বুক ভাসানো ছাড়া অন্য কোন ভয় নেই।
তার রুমের দরজা দিনে মাত্র তিনবার খুলে। আর সেটাও তার মা খুলে। তিনবেলা খাবার দেওয়ার জন্য। খাবার দিলে ও নীলাভ রায় খায়না বললেই চলে। তার মা খাবার দিতে এসে প্রায়ই দেখে খাবারের প্লেট প্রায় ফুল।

কিন্তু এ বিষয় নিয়ে নীলার মা নীলাকে কোনো প্রশ্ন করবেনা। শুধু খাবার ভর্তি প্লেট নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। আর শুধু একটাই কথা বলে…..
নীলার আম্মুঃ তুই যাই করিস না কেনো, তোর এই সম্পর্ক আমরা কোনদিনই মেনে নিতে পারব না।
নীলাঃ শুধু অশ্রু টলমল চোখে তার মায়ের দিকে চায়।
এভাবে প্রায় তিন দিন কেটে গেল।

নীলার চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে কেঁদে কেঁদে। চেহারা টা মলিন হয়ে গেছে। চুলগুলো অগোছালো হয়ে যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।
কিন্তু তার এই অবস্থা দেখে ও তার মা-বাবা দৃষ্টিপাত করেনা। তারা রয়েছে শুধুমাত্র তাদের আত্মসম্মানবোধ নিয়ে।
সব সময় মা মেয়ের পক্ষে থাকে কিন্তু এখানে সেটাও বিপরীত।

এদিকে তিন দিন নীলার কোন খোঁজ না পেয়ে শুভ প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। তিন দিন হয়ে গেল নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে কোন কথা নেই দেখা নেই।
চারদিনের মাথায় সে সিদ্ধান্ত নিল যে সে নীলাদের বাসায় যাবে।

দিনটা শুক্রবার।

সকাল দশটায় শুভ নীলনদের বাসায় আসলো।
বাসার কলিং বেল চাপতেই নীলার বাবা দরজা খুলে দিল।
নীলার বাবাঃ আরে আরে শুভ যে?
শুভঃ জ্বী আঙ্কেল।

নীলার বাবাঃ ভেতরে আসো।
শুভঃ জ্বী আঙ্কেল
নীলার বাবাঃ বস বাবা। (সোফা দেখিয়ে দিয়ে)
শুভ চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসল।

নীলার বাবাঃ অনেকদিন পরে আসলে যে?
শুভঃ জি আঙ্কেল, খুব ব্যস্ত থাকতে হয় এজন্য।
নীলার বাবাঃ ওহ।

শুভঃ আঙ্কেল নীলা কোথায়? (মাথা নিচু করে)
নীলার বাবাঃ কেন?
শুভঃ আজ প্রায় চার দিন হয়ে গেল নীলার কোন খবর পাচ্ছি না।

নীলার বাবাঃ পাবে কেমন করে নীলা তো কানাডায় চলে গেছে।
শুভঃ ঠিক বুঝলাম না কেন? (নিজের কানকে বিশ্বাস করতে না পেরে)
নীলার বাবাঃ বলছি নীলা কানাডায় চলে গেছে।

কথাটা শোনামাত্র শুভর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
শুভঃ আমাকে বলে গেল না তো।
নীলার বাবাঃ হয়তো বলার প্রয়োজন মনে করিনি।
শুভঃ ……..

নীলার বাবাঃ একটা কথা জিজ্ঞাসা করি বাবা?
শুভঃ জ্বী আঙ্কেল। (ছলছল চোখে)
নীলার বাবাঃ তোমার আর নীলার মধ্যে কি সম্পর্ক?
শুভঃ শুধু বন্ধুত্ব।

নীলার বাবাঃ এ কারণে বুঝি নীলার কানাডা যাওয়ার কথা শুনে তোমার চোখে পানি।
শুভঃ ….. (চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করলো কিন্তু সে ব্যর্থ হলো)
নীলার বাবাঃ তুমি কি নীলাকে ভালোবাস?
শুভঃ …

নীলার বাবাঃ কি হল বল?
শুভঃ হুম।
নীলার বাবাঃ তাহলে এই কথা?
শুভঃ …….


পর্ব ৮

নীলার বাবাঃ তাহলে এই কথা?
শুভঃ …

নীলার বাবাঃ আমরা জানি তোমাদের রিলেশন এর কথা।
শুভঃ …
নীলার বাবাঃ কিন্তু আমরা কখনও তোমাদের এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারব না?
শুভঃ … কেন আঙ্কেল?

নীলার বাবাঃ দেখো কন্যা যেমনই হোক না কেন প্রত্যেকটা বাবার কাছে তার কন্যা রাজকন্যার সমান। তেমনি আমার মেয়ে ও আমার কাছে রাজকন্যা।
শুভঃ …
নীলার বাবাঃ আর আমার রাজকন্যার জন্য আমি একটা রাজপুত্র চাই। তবে শুধু সম্পদশালী হলে হবে না পাত্রকে চরিত্রবান হতে হবে।
শুভঃ আমাকে কি করতে হবে?

নীলার বাবাঃ আমার মেয়েকে ভুলে যেতে হবে।
শুভঃ এটা অসম্ভব, দয়া করে আমাকে এমন টা বলবেন না।

নীলার বাবাঃ আমার মতে তুমি আমার মেয়ের যোগ্য নও।
শুভঃ আমাকে যোগ্য হওয়ার মতো সময় দিন। (অনুরোধ করে )
নীলার বাবাঃ ওটাইতো আমার কাছে নেই।
শুভঃ কেন আঙ্কেল?

নীলার বাবাঃ তুমি শিক্ষিত ছেলে তোমাকে আবার এ কথা বলতে হয় নাকি? এখন আমাদের দেশের পরিস্থিতি কি বুঝতেই তো পারছো? টিভি খুললে শুধু ধর্ষণের নিউজ। আমি তো মেয়ের বাবা এর জন্য আমার খুব ভয় হয়। তুমি যেদিন বাবা হবে সেদিন আমার পরিচিতিটা বুঝবে। (ইমোশনাল হয়ে )
শুভঃ কিন্তু আঙ্কেল আমি নীলাকে খুব ভালোবাসি আর নীলা ও আমাকে ভালোবাসে। আমরা একে অপরকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।
নীলার বাবাঃ সব মিথ্যা কথা।
শুভঃ আমি সত্যি বলছি আঙ্কেল।

নীলার বাবাঃ আচ্ছা আমাকে একটা কথা বল, তোমার ভালোভাবে জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর তোমার কোন আপন জনকে হারিয়েছ?
শুভঃ হুম, আমার দাদাকে। বছর তিনেক আগে তিনি গত হয়েছেন।
নীলার বাবাঃ সত্যি কথা বলবা, তার কথাকি তোমার এখন মনে পড়ে?
শুভঃ খুব একটা পড়ে না।

নীলার বাবাঃ তোমার বয়স তো আনুমানিক চব্বিশ-পঁচিশ হবে। সে হিসেবে তোমার দাদা আর তোমার সম্পর্ক 21 বছরের। এই 21 বছরের সম্পর্ক যখন ভুলে যেতে পেরেছ তখন আমার মায়ের সাথে তোমার 5 বছরের বন্ধুত্ব অবশ্যই ভুলে যেতে পারবে।

শুভঃ এমনভাবে বলবেন না আঙ্কেল। আমি এটা করতে পারব না। (হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে)
নীলার বাবাঃ মানুষ চাইলে সবকিছু পারে। আসলে কাউকে ভোলা যায় না এমন কিছু হয় না। এটা একটা মোহ। যেটা কিছুদিন পর কেটে যায়। কারো জীবন অন্য কারো জন্য থেমে থাকে না, তোমার জীবনও থেমে থাকবে না আমার মেয়েকে ছাড়া। তুমি আমার মেয়েকে ভুলে যাও।
শুভঃ …..

নীলার বাবাঃ আমার মেয়েকে ভুলে গিয়ে আবার নতুন করে শুরু করো সবকিছু।
শুভঃ সেটা সম্ভব নয়।
নীলার বাবাঃ কোন কিছুই অসম্ভব নয়। মানুষ চাইলেই সব কিছু সম্ভব।

শুভঃ একে অপরকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। আপনি এভাবে আমাদের আলাদা করে দেবেন না।
নীলার বাবাঃ দেখো প্রেম ভালোবাসা আর বাস্তব জীবন সম্পূর্ণ আলাদা। নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক কিছু মেনে নিতে হয়।
শুভঃ আমি অন্য সবকিছু মেনে নিতে পারবো শুধুমাত্র এটা ছাড়া।

নীলার বাবাঃ তোমরা যদি একে অপরকে ভুলে যাও তাহলে তোমাদের জীবনটা আরো সুন্দর হবে।
শুভঃ নীলা আমার পাশে নেই এটা আমি ভাবতেও পারি না।
নীলার বাবাঃ তুমি বিশ্বাস করো ভালোবাসাটা একটা মোহ যেটা কিছুদিন পর কেটে যাবে।

শুভঃ সব মোহ যদি কেটে যেত তাহলে সম্রাট শাহজাহান কেন তাজমহল বানালেন? স্ত্রীর আহত হওয়ার পর পাহাড় টপকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারল না ইন্ডিয়ার দশারথ মাঝি। তাহলেই স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি সেই পাহাড় কেটে রাস্তা কেন বানালেন?
নীলার বাবাঃ ……
শুভঃ সব ভালোবাসা মোহ হয় না আংকেল। কিছু ভালোবাসা খাঁটি হয়।

নীলার বাবাঃ আমি অত কিছু জানতে চাই নাহ। আমি শুধু আমার মেয়ের নিশ্চিত ভবিষ্যৎ চাই।
শুভঃ সেটা তো আমিও পারি।
নীলার বাবাঃ না তুমি সেটা পারোনা।

শুভঃ কিন্তু কেন?
নীলার বাবাঃ এমন কি আছে তোমার?
শুভঃ আজ নেই কিন্তু কাল তো হতে পারে।

নীলার বাবাঃ কিন্তু আমার কাছে তো সেই সময়টা নেই। আমি যত দ্রুত সম্ভব ওর বিয়ে দেবো একটা প্রতিষ্ঠিত ছেলের সাথে। দেশের পরিস্থিতি মোটেও ভালো না। কে জানে কবে আমার মেয়েটা হয়তো রাস্তার হায়নার শিকার হবে। তাই আমি ওকে বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাই।
শুভঃ আমাকে ভুল বুঝবেন না আঙ্কেল। আপনি দেখে নিয়েন আমরা খুব ভালো থাকবো।

নীলার বাবাঃ এমন কি আছে তোমার যেটা দেখে আমার মেয়েকে আমি তোমার হাতে তুলে দেবো? একটা ভালো চাকরি আছে তোমার? ভালো ফ্যামিলি স্ট্যাটাস আছে তোমার?
শুভঃ এসবের কিছু হয়তো আমারই নেই। কিন্তু আপনার মেয়ে সবথেকে সুখী থাকবে আমার কাছে।

নীলার বাবাঃ শুধু ভালোবাসা দিয়ে বাস্তবতা চলে না। বাস্তবতা চলে টাকা দিয়ে।

শুভঃ আপনিতো এটা চান আপনার মেয়ে সুখে নয় আরামে থাকুক।
নীলার বাবাঃ তুমি যাই বলো না কেনো আরাম আর সুখ একে অপরের পরিপূরক। একটা ছাড়া আর একটা অর্থহীন। তাই যেখানে আরাম আছে সেখানে সুখ অবশ্যই আসবে। কিন্তু শুধু সুখ থাকলে আরাম আসবেনা।

শুভঃ আপনি একটু বোঝার চেষ্টা করুন আঙ্কেল (অনুরোধ করে)
নীলার বাবাঃ আমার নতুন করে বোঝার কিছু নেই। যেটা বোঝার সেটা তুমি বোঝ। শুধু আবেগ দিয়ে বাস্তবতা চলেনা।
শুভঃ কিন্তু…..
নীলার বাবাঃ কোন কিন্তু নয়। তুমি আমার মেয়েকে ভুলে যাও বাবা। তুমি আমার মেয়েকে নতুন করে বাঁচার সুযোগ দাও।
শুভঃ আপনি আমার কথাটা একটু ভাবুন।

নীলার বাবাঃ আমি তোমাদের দুজনের কথা ভেবেই এই কথা বলছি। তোমাদের কখনোই মেনে নিতে পারব না আমরা। তাই তুমি আমাদের থেকে আমাদের মেয়ে কে আলাদা করোনা।তুমি আমার মেয়েকে ভিক্ষা দাও। (শুভর দুই হাত ধরে কেঁদে কেঁদে)
শুভঃ (একটু ভেবে) আচ্ছা ঠিক আছে।
নীলার বাবাঃ ….

শুভঃ আমি কি ওর সাথে শেষবারের মতো একটু দেখা করতে পারি। আর কখনো আসবো না আমি আপনার মেয়ের সামনে।
নীলার বাবাঃ কিন্তু নীলা তো এখন কানাডার।
শুভঃ আমি জানি ও এই বাড়িতেই আছে। শেষবারের মতো প্লিজ।

নিলার বাবা- বললাম তো ও এখন দেশের বাইরে। আর তুমি এখন আসতে পারো।
শুভ কিছুক্ষণ তীর বিদ্ধ হরিণের মত নীলার বাবার দিকে চেয়ে রইল।
তারপর চোখ মুছতে মুছতে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।


পর্ব ৯

নিলার বাবা- বললাম তো ও এখন দেশের বাইরে। আর তুমি এখন আসতে পারো।
শুভ কিছুক্ষণ তীর বিদ্ধ হরিণের মত নীলার বাবার দিকে চেয়ে রইল।
তারপর চোখ মুছতে মুছতে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।
শুভ কিছুদূর করে পথে এগোই আর বারবার বাড়ির দিকে ফিরে ফিরে চায়।

বাড়িটা ছেড়ে সে যতই দূরে যাচ্ছে তার ততো মনে হচ্ছে তার মূল্যবান কোন একটা জিনিস তার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
কেন জানি বারবার তার ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠছে।
সে অনেক চেষ্টা করছে দু চোখের পানি আটকে রাখার কেননা ছেলেরা কাঁদে না। কিন্তু কান্নার কাছে সে আজ হার মেনে গেছে।

মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান বলে আজ শুভর ভালোবাসা হেরে গেল। যদি সে ধনী হত তাহলে হয়তো এমনটা হতো না।
শুভ আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাড়ে গিয়ে বসল।
কেননা সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা। এই অবস্থায় বাসায় গেলে তাকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।

শুভ নদীপাড়ের একটা গাছ হেলান দিয়ে ভাবতে থাকলো।
আমি জানি তুই আমাকে ছেড়ে যেতে পারিস না। কেননা আমার বিশ্বাস আমি তোকে কতটা ভালোবাসি তার থেকে বেশি তুই আমাকে ভালবাসিস।
আমি এটা জানি তোর বাবা আমাকে মিথ্যা বলেছে। তুই নিশ্চয়ই বাড়িতে ছিলি। আমি জানি এই চারদিন হয়তো তুই খুব খুব কষ্টে আছিস। কেননা তুই তো আমাকে ছাড়া থাকতেই পারবি না।

আজ বুঝতে পারলাম যে তুই আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতি না সেই তুই আমাকে ছেড়ে কিভাবে চারদিন আছিস। তোর খুব কষ্ট হয়েছে তাই না?
কিন্তু কি করবো বল বাস্তবতার কাছে তোর আর আমার ভালোবাসা হেরে গেল। তোর নির্দয় বাবা যখন তোর চোখের পানি মানে বুঝতে পারলো না, তাহলে তোর সেই বাবা কিভাবে আমার চোখের পানির মানে বুঝবে?
আজ বুঝলাম তুই কেন আমাকে বারবার লেখাপড়ার পাশাপাশি জব খুজতে বলতিস।

যদি আমি একটা ভালো জব করতে পারতাম তাহলে আমাদের পথে বাস্তবতা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত না।
কিন্তু তুই যদি ছেলে হইতিস তাহলে বুঝতিস একটা জব পাওয়া কত কঠিন। আমিতো আমার সর্বোত্তম চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনো জব পাই নাই।

জবের জন্য যেখানেই গিয়েছি সেখানেই বলে অভিজ্ঞতা আছে কিনা? কিন্তু আমি যদি কোথাও জব করতে না পারি তাহলে আমার অভিজ্ঞতাটা হবে কি করে? এটা কেউ বুঝলো না জানিস

আমি হয়তো চাইলে জোর করে তোর সাথে দেখা করতে পারতাম। কিন্তু আমি কোন ভাবেই তোর বাবাকে ন্যূনতম অপমান করতে চাইনি।
কিন্তু তোর বাবা তোর সাথে আমার শেষ দেখাটা ও করতে দিল না।

তুই হয়তো জানিস না আজ আমি গিয়েছিলাম তোদের বাসায়। তোর বাবা মা হয়তো আমার যাওয়ার কথাটা তোর থেকে লুকাবে।
হয়তো তোকে নিয়ে কোনভাবে আমি তোর বাসা থেকে পালিয়ে আসতে পারতাম। আমাকে বিয়ে করতে পারতাম।

কিন্তু এমনটা করলে তোর আর আমার মা-বাবার সবারই মান সম্মান এর ক্ষতি হতো। এই শিক্ষিত সমাজে তাদের অশিক্ষিতর মতো মাথা নিচু করে থাকতে হতো। যেটা আমি চাইনি।
আমাদের জন্ম দিয়ে তারা কোন পাপ করেনি। কিন্তু তুই আর আমি কোন পাপ না করে ও শাস্তি পাচ্ছি।

কষ্টে আমরা থাকি, কিন্তু আমাদের মা বাবা ভালো থাকুক।

তাছাড়া তুই আর আমি পালিয়ে বিয়ে করলে হয়তো কিছুদিন তুই আর আমি খুব সুখে থাকবো। কিন্তু আমাদের মা বাবা খুব কষ্ট পাবে।
প্রিয়জন ছাড়া কেউ সুখী হতে পারে না। আমরাও পারতাম না। একটা সময় তাদের শূন্যতা আমরা ঠিকই উপলদ্ধি করতে পারতাম। আমরা তাদের শূন্যতায় ভুগতাম। কিছুদিন সুখে থাকলেও আমাদের পরবর্তী দিনগুলো সুখের হত না।

হয়তো ভালোবাসার ব্যর্থতায় আমি আত্মহত্যা করতে পারি। কিন্তু আমি এমনটা করবো না।
আমি যেমন তোর কলিজায় আছি, তেমনি আমার আমার মা-বাবার কলিজায়ও আমি আছি। যদি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাই তাহলে তাদের কি হবে?
তারা তো আমাকে বড় করেছে এজন্য যাতে আমি বৃদ্ধ বয়সে তাদের সম্পদ হতে পারি।

জন্য সারাজীবন তোর সাথে থাকতে পারলাম না। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমাকে ভুল বুঝিস না।
আমি জানি আমার অনুভূতির কথা গুলো হয়তো তোর কাছে পৌঁছাবে না।

এরপর শুভ মনের জেদ নিয়ে বাড়ি ফিরল। তাকে যে করেই হোক ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে হবে।
অনেক জোর করে বাবার পৈত্রিক ভিটা বিক্রি করে পাড়ি জমালো বিদেশে লেখা পড়ার উদ্দেশ্যে।

কিনা?
আর বেশি কিছু লিখলাম না।
খুব দ্রুত আরেকটা নতুন গল্প নিয়ে ফিরে আসবো ততক্ষণ ভালো থাকবেন। এই প্রত্যাশা রেখে শেষ করলাম।

লেখক – আবু ইছা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “বেস্ট ফ্রেন্ড – bertho premer golpo bangla” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – বেনামি চিঠি (১ম খণ্ড) – রোমান্টিক প্রেমের চিঠি
http://valobasargolpo.com/romantic-love-story-bangla/রোমান্টিক-প্রেমের-চিঠি/

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *