কষ্টের বাসর রাত – এরকম ভুল যেন কেউ না করে | Basor Raat

কষ্টের বাসর রাত – এরকম ভুল যেন কেউ না করে: কত শখ ছিল বিয়ে করব, বাসর হবে, বউ আমাকে বিরক্ত করবে আমি মজা করব। কত কিছুই না ভেবে রেখেছিলাম, কিন্তু জীবন যে এতটা নিষ্ঠুর হবে তা কখনো ভাবি নি। আজ আমি আপনাদের আমার জীবনে কষ্টের গল্প বলব।
বিয়ে ও বাসর রাত
বিবাহ! বিবাহ!
মনে অনেক আশা বেধে রেখেছিলাম বিবাহ নিয়ে। প্রায় দীর্ঘ ২১ টি বছর ধরে অপেক্ষা করছি এর জন্য। কখনো কাউকে মনে ঠাই দেইনি। শুধুই অপেক্ষা করেছি কোনো একজনের। কেননা, আমি চাইনি হঠাত কোনো দুর্ঘটনায় আমার ভালোবাসা কারো সাথে ভাগাভাগি হয়ে যাক। আমি চেয়েছিলাম একমাত্র আমার ভালোবাসার অধিকার আমার স্ত্রীর আছে। তাই করেছি শুধুই অপেক্ষা।
অবশেষে, আজ আসল আমার জীবনের সবচেয়ে মধুর দিন। কারণ আজকে রাতে আমার বাসর রাত। আমার দাদির অনেক ইচ্ছা নাত বউয়ের মুখ দেখে যাবে তাই ঠিক মত বিয়ের বয়স না হতেও আমি বিয়েতে রাজি হয়েছি। মেয়ে আমার পূর্ব পরিচিত, আমার কাজিন হয়। বয়স কম মাত্র ইন্টার পরীক্ষা দিবে। বিয়ের সব ঝামেলা শেষ করে এখন মাত্র বাসর ঘরে ঢুকব। ভাবিরা হাসাহাসি করছে আমার খুব লজ্জা লাগছে। এক সময় আমি বাসর ঘরে ঢুকলাম।
বউ ঘুমটা দিয়ে খাটে বসে আছে আশা করেছিলাম। বউ হয়ত আসবে, আমার কাছে এসে সালাম করবে। বাস্তবে কিছুই হল না। যেমন ছিল তেমন বসে রইল। মনে করলাম, ছোট মানুষ তাই হয়ত নার্ভাস হয়ে আছে। আমি কাছে গিয়ে কিছু কথা জিজ্ঞেস করলাম। সে জবাব দিল, যখন শোয়ার কথা বললাম তখন সে বলল আমার কিছু কথা আছে। আমি বললাম, বল। সে বলল,
বউঃ দেখেন আমার বিয়ের কোন ইচ্ছেয় ছিল না। পারিবারিক চাপে পরে আপনাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। আমি চাই পড়ালেখা শেষ করতে।
আমিঃ হাঁ শেষ করবে, সমস্যা নাই।
বউঃ পড়ালেখা শেষ না করে বিয়ে বাচ্চা নিব না।
আমিঃ আচ্ছা, সেটা পরে দেখা যাবে। এখন আস শুয়ে পরি, অনেক রাত হয়েছে।
বউঃ না, আমি আপনার সাথে ঘুমাব না।
আমিঃ কেন?
বউঃ আমার ভয় করে।
আমিঃ কিসের ভয় করে?
বউঃ জানি না। আমি ঘুমাব না আপনার সাথে, ব্যাস। আমার এই শেষ কথা।
বিয়ে ও সংসার জীবন
আমার মাথা খুবই গরম হয়ে গেছে। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলাম। কি করব বুঝতে পারছি না! কোন মুরব্বি ঢাকব নাকি। অনেক চিন্তা করে ফোনে এক বড় ভাবিকে আসতে বললাম। ফোনে সে একটা অন্যরকম হাসি দিল। কারণটা বুঝতে পারলাম না। সে রুমে আসার পরে সব খুলে বললাম। সে বলল, ছোট মানুষ ভয় পাইছে। জোর কর না। কয়েক দিন পরে ঠিক হয়ে যাবে।
পরে অনেক প্রতিজ্ঞা করার পরে সে আমার সাথে ঘুমাতে রাজি হলো। তবে শর্ত হল, তার কাছাকাছি যেতে পারব না। মাঝ রাতে একবার তার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলাম, ফলাফল হল উলটো। সে ঘুম থেকে উঠে সারারাত জেগে বসে রইল। সকালে সবাই হাসি মশকরা করে আমি নিরবে সহ্য করে যাই। এই ভাবেই ৭ দিনের মত কেটে গেল। ভাবি ছাড়া কাউকে কিছু বলি নাই। পরে ডাক্তারের কাছে গেলাম। সেখানেও কিছু হল না ফলাফল।
রাগের মাথায় কয়েকবার জোর করেছি তার ফল হয়েছে সম্পূর্ণ উলটো। অন্তত প্রায় মাস দু’য়েক চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন ফল হয়নি। এখন আশা ছেড়ে দিছি যা হওয়ার হবে। চাকরির সুবাদে আমি ঢাকা থাকি। ইচ্ছা ছিল বিয়ের মাস তিনেক পরে ঢাকা নিয়ে আসব। কিন্তু আর আনা হয় নাই, মন টানে না। নতুন বিয়ের পরে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দু’বার বাড়ি যেতাম।
বিয়ে ও আমার অভিমত
এখন মাসে এক বারের বেশি যাই না। কেমন জানি হয়ে গেছি! কোন আকর্ষণ লাগে না। আর এক ধরণের অভিমান ঘিরে ধরে আমাকে। আজ প্রায় ৭ মাস এই রকম চলছে। আমি হয়ে গেছি বিবাহিত ব্যাচেলর।
তাই আমি অনুরোধ করব, ঐ সমস্ত অভিভাবকদের যারা তাদের সন্তানদের মনের কথা বোঝার চেষ্টা না করে তাদের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়ে দেয়। আপনারা অন্তত একবার তাদের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করুন। তারা কি চায় -তা বুঝুন। নয়তো আমার মত হলে একটি নয় দুটি জীবনই বিফলে যাবে। অনর্থক হবে তাদের বেঁচে থাকা। পৃথিবীর বুকে তারা শুধু বেঁচে থাকবে বোঝা হয়ে।
একবুক ঘৃণা নিয়ে বেঁচে আছি। সঙ্গী নেই বলে সূর্যের জ্যোৎস্নাকে আমার দখলে নিয়েছি। তাই সূর্যের জ্যোৎস্না এখন শুধুই আমার।
আরো পড়ুন- একতরফা ভালোবাসা – এভাবে ভালবাসলে জীবন ধন্য হবে আপনার