রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ৬

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৬ | Love Story

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৬: বিগত পর্বে আমরা দেখেছি কিভাবে মাহি ও নাবিলের মাঝে এক রোমান্টিক না বলা ভালবাসার তৈরী হয়। নাবিলকে সহ্য করতে না পারা মাহি কেমন যেন নাবিলকে দেখে লজ্জা পেতে শুরু করেছে। দেখা যাক আজ কি হয়?

নাবিলের না বলা ভালবাসা

নাবীল মাহির দিকেই তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। আজ ওকে পরীর মতো লাগছে। এভাবে চলতে থাকলে নিজেকে ওর কাছ থেকে দূরে রাখতে কষ্ট হয়ে যাবে। আচ্ছা মাহি কি এখনো বুঝতে পেরেছে আমি ওকে কতো ভালোবাসি। এক নাম্বারের গর্দভ, আমি খুব ভালো করেই জানি! ও হয়তো এখনো বুঝেনি।

কিভাবে ওকে বুঝাবো? আমাকে দেখলেই এড়িয়ে চলে। মনে হয়, আমি কোন জঙ্গল এর বাঘ ওকে গিলে খেয়ে ফেলবো। ওওও আল্লাহ এ মেয়েটাকে একটু বুদ্ধি দাও। তা না হলে আমার জীবন তেজপাতা করে তুলবে। (নাবীল মাহির দিকে এক নযরে তাকিয়ে মনে মনে কথাগুলো বলছে আর হাসছে)

মাহিঃ সীমা তোকো অনেক সুন্দর লাগছে, দুলাভাই দেখলে পাগল হয়ে যাবে।

সীমাঃ তাই তুমিও কোন দিক দিয়ে কম লাগছো না। দেখনা, বউ আমি আর সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। কতো জনকে আজ ঘায়েল করে দিচ্ছো কে জানে?

মাহিঃ তাইনি! জেলাস ফিল করছো গো। (মাহি মুখটা একটু ভেঙ্গচিয়ে সীমাকে বললো।)

চারদিক নজর করতে গিয়ে হঠাৎ নাবীল এর চোখ পড়লো সকালের ছেলে তিনটার দিকে। ষ্টেজ এর পাশে একটা গাছে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আর মাহির দিকে তাকাচ্ছে। ওরা মাহিকে নিয়ে কিছু একটা বলছে এটা নাবীলের বুজতে আর বাকি রইলো না। তাই সে তাড়াতাড়ি শফিকের কাছে গেলো, আর সব খুলে বললো। শফিককে ছেলেগুলোকে দেখিয়ে বললো, এদের কে এখানে ইনভাইট করেছে?

বিয়ের দায়িত্ব

শফিকঃ মামা দেখোতো এদের চিনো নাকি।

মামা তাকিয়ে দেখলো আর বলল-

মামাঃ এরা এই এলাকার মেম্বার এর ছেলে আর তার বন্ধু।

শফিকঃ মামাকে সব খুলে বললো, সকালে কি কি হলো, আর এখনও ওরা মাহিকে ইশারা করে কি যেনো বলছে। (শফিক মামার সাথে)

মামাঃ হে আল্লাহ, কি বলস! আমাকে আগে বলস নাই কেনো। এরা একবার যার দিকে নযর দেয় তার জীবন নষ্ট করে দেয়। এই এলাকার অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। মেম্বার এর ছেলে বলে কেউ কিছু করতে পারে না। দেখ তোরা মাহির দিকে একটু নযর রাখিস। ওকে একা কোথাও যেতে মানা করিস। ঠিক আছে। আল্লাহ.. আল্লাহ করে দুদিন ভালোয় ভালোয় গেলেই হলো। তার পর এক মিনিটও তোদের এখানে থাকার দরকার নাই।

নাবীল ও শফিক টেনশনে পরে গেলো। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিলো নাবীল যেহেতু মেহমানদের বেশির ভাগকেই জানে না তাই নাবীল শুধু মাহির দিকে নযর রাখবে। আর শফিক মেহমানদের আপ্যায়ন করবে।

শফিকঃ নাবীল মাহিকে কিছু বলিস না, ওর মনটা খারাপ হয়ে যাবে। টেনশনও করবে।

নাবীলঃ হুমমম, ঠিক বলেছিস। ওকে বুজতে দেয়া যাবেনা, ওর আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে।

শফিক চলে গেলো, কারণ মামার একার পক্ষে এতো কিছু করা সম্ভব না। আর নাবীল দূর থেকে মাহিকে পাহারা দিচ্ছে।

মাহি ও নাবিলের দুষ্টু মিষ্টি কথা

একজন একজন করে সীমাকে সবাই গায়ে হলুদ দিলো। শফিক ব্যস্ত বলে নাবীলকে ভাই হয়ে হলুদ দিতে বলল সবাই। নাবীল সীমার কপালে একটু হলুদ দিয়ে একটু মিষ্টি খাইয়ে দিলো।

হঠাৎ মাহি বলে উঠলো-
মাহিঃ এতো মিষ্টি খাইস না। বিয়ের আগেই মুটকি হয়ে যাবি।

মাহির কথা শুনে নাবীলের খুব হাসি পেলো। একটু হলুদ নিয়ে মাহির নাকে লাগিয়ে দিলো।

নাবীলঃ সীমার কথা না ভেবে তুই নিজেকে দেখ দিন দিন কোলবালিশ হয়ে পড়ছিস। তোর জামাইয়ের কোলবালিস কেনা আর লাগবে না, তোকে পেলেই হবে।

নাবীলের কথা শুনে মাহির মাথা নস্ট হয়ে গেলো।

মাহিঃ কি কি কি! আমি কোলবালিস? কোন দিক দিয়ে। আপনার চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঢাকায় গিয়ে চোখের ডাক্তার দেখাবেন। আর আপনে আমাকে হলুদ দিয়েছেন কেনো? বিয়ে কি আমার?

নাবীলঃ না তোর না, তবে শুনেছি বউয়ের হলুদ কুমারী মেয়েদের দিলে তার বিয়ে নাকি তাড়াতাড়ি হয়। তাই আর কি তোকে দিয়ে দিলাম যাতে করে তোকেও আমরা তাড়াতাড়ি বিদায় করতে পারি।

মাহিতো রেগে গিয়ে চলে যেতে চাইলে সীমা বাধা দেয়।

সীমাঃ আরে কই যাস, নাবীল ভাইয়া তোর সাথে দুষ্টুমি করছে। দেখস না মিটমিটিয়ে হাসছে। মাহি খেয়াল করলো সত্যিই নাবীল হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে।

মাহি মনে মনে যতো গালি ছিলো সব নাবীলকে দিলো।

ভীষণ কষ্টের মুহুর্ত

অনুষ্ঠানের গান বাজনাও শুরু হয়ে গেলো। সবাই অনেক আনন্দ করছে। ছেলে পক্ষ আর মেয়ে পক্ষের মধ্যে অনেক খেলা চলছে, গিফট আদান প্রদান। কেউ ভাঙ্গা গলায় গান করছে, আবার কেউ নাচছে। যে যেটা পারছে করছে।

হঠাৎ মাহির দিকে খেয়াল করলো, একটা ছোট মেয়ে মাহিকে শরবত এনে দিলো, মাহি মেয়েটার সাথে কথা বলছে আর শরবতটা খাচ্ছে। নাবীল ভাবলো হয়তো মাহির পিপাসা পেয়েছে তাই মেয়েটাকে দিয়ে আনিয়েছে।

মাহিঃ আরে এটা কার জন্য, ছোট মেয়েটি এটা তোমার জন্য। আমার জন্য কে দিয়েছে। ভাইয়া দিয়েছে মেয়েটি বলে দৌড় দিলো।

মাহি ভাবলো হয়তো শফিক ভাই মাহির জন্য শরবতটা পাটাইছে। তাই অন্য কিছু চিন্তা না করে খেয়ে ফেললো। আরে এটার টেস্টটা এমন কেনো? কেমন জানি? হয়তো গ্রামের পানি দিয়ে বানিয়েছে বলে এমন হইছে। মাহি আবার গায়ে হলুদ এর অনুষ্ঠানের দিকে মন দিলো হঠাৎ মনে হলো মাহির মাথাটা একটু ঘুরাচ্ছে। মাহি ভাবলো হয়তো ক্লান্ত লাগছে বলে এমন হচ্ছে। তাই সীমাকে বলে বাড়ীর ভেতরে যাবার জন্য হাটতে লাগলো। মাথাটা খুব বেশি ঘুরাচ্ছে। হাটতেও কষ্ট হচ্ছে।

নাবীল এতক্ষণ একটু সাইড গিয়ে শফিকের সাথে ফোনে কথা বলছিলো। তাই খেয়ালি করেনি মাহি কখন উঠে চলে গেছে। ফোনটা পকেটে রেখে দেখলো মাহি নাই। আরে মাহি কই গেলো। নাবীল সীমাকে জিঙ্গেস করলো,

নাবীলঃ সীমা মাহি কই, তোমার সাথে না ছিলো?

সীমাঃ ভাইয়া ওর নাকি মাথা ঘুরাচ্ছে তাই বাড়ির ভেতরে চলে গেছে।

নাবীলঃ মাথা ঘুরাচ্ছে কেনো হঠাৎ।

নাবীল ও বাড়ির ভেতরে দৌড় দিলো, কিন্তু বাড়ীর ভেতরে মাহিকে পেলো না। আশেপাশে খুঁজতে গেলে হঠাৎ নাবীল দেখলো মাহির স্যান্ডেল পরে আছে বাড়ীর পেছনে। নাবীল বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে। শফিককে ও অনেক কল করলো কিন্তু এতো শব্দে ফোনের রিং শফিক শুনতে পাইনাই। নাবীল আর কিছু চিন্তা না করে বাড়ীর পেছনের দিক হাটতে লাগলো। পেছনের দিকটা একটু জঙ্গলের মতো আর কিছুটা দূরে মাহির মামাদের একটা পরিতেক্ত বাড়ী আছে, যেটা এখন স্টোর রুম বানিয়ে। আসলে আগে ওখানেই মাহির মামারা থাকতো। পরে এখানে নতুন বাড়ী করে ওটাকে স্টোর রুম বানিয়ে রাখছে।

নাবীল সোজা ওই বাড়ীর দিকে হাঁটা ধরলো। দেখলো স্টোর রুমের দরজা খোলা। নাবীলের মনে একটু খটকা লাগলো। তাই ফোনের লাইটটা অন করে ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে গিয়ে দেখে মাহি অঙ্গান হয়ে পরে আছে মাটিতে। নাবীল দৌড়ে গিয়ে মাহিকে জরিয়ে ধরে, আর মাহি মাহি বলে ডাকতে থাকে। হঠাৎ নাবীলের মাথায় ভারী কিছু দিয়ে কেউ বারি মারে আর নাবীলও সেখানে অঙ্গান হয়ে পড়ে যায়। চলবে…

আরো পড়ুন: রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৭

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *