প্রতিশোধ অতঃপর ভালোবাসা

প্রতিশোধ অতঃপর ভালোবাসা – বর্ষণ মৌ কে তার সব টুকু শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে খবরদার আর কখনো এমন কথা বলবা না। আমি কোথাও যাবো না বুঝলা, না তোমাকে যেতে দিবো।


পর্ব ০১

গল্পটি মৌ এর, যে জীবনে শুধু ঠকেই গেছে, ৬ মাস আগে তার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা তাকে মানসিক ভাবে বেকুল করে দেয়। তার জীবনের সাথে সাথে তার পুরো পরিবার টাও ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়।

একদিন সকাল,

লিরা লিরা মা কে ডাক তো। (মৌ)

মা আপ্পি ডাকছে। (লিরা) [লিরা মৌ এর ছোট বোন]

কিরে মা ডেকেছিলি আমাকে। (মা)

হুম কি করছিলে তুমি মা। (মৌ)

কিছু না এমনি একটু দোয়া দুরুদ পড়তেছিলাম। (মা)

মা শুনো ওই যে বাবার বন্ধু ছিলেন না আফজাল আংকেল আমি আজকে একটু ওনার অফিসে যাবো ভাবছি দেখি কিছু হয় কিনা, মামাদের দান আর কত নিবো এখন তো মামিরাও অন্যরকম ব্যবহার করে। (মৌ)

যাবি বলছিস, যা দেখ কি হয়। (মা)

আচ্ছা মা শুনো সব নাস্তা বানিয়ে দিলাম, তুমি আর লিরা খেয়ে নিও ভাবছি এখনি বের হই। (মৌ)

তুই খাবি না মা কিছু খেয়েছিস। (মা)

হুম বানানোর সময় খেয়ে নিয়েছি। (মৌ)

আচ্ছা তাহলে যা, সাবধানে যাস কেমন। (মা)

আচ্ছা। (মৌ)

প্রায় ১ ঘন্টা পর মৌ তার বাবার বন্ধু আফজাল সাহেবের অফিসে পৌছায়।

ম্যাডাম একটু শুনবেন। (মৌ)

জি বলুন কাকে চাই? (সেক্রেটারি)

আফজাল সাহেব কি অফিসে আছেন? আসলে আমি একটু ওনার সাথে দেখা করতে চাই, খুব দরকার। (মৌ)

এপোয়েন্টমেন্ট লেটার টা একটু দেখি। (সেক্রেটারি)

জি আমার কাছে তো এপোয়েন্টমেন্ট লেটার নেই, উনি আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনেন। (মৌ)

দেখুন ম্যাডাম, এপোয়েন্টমেন্ট লেটার ছাড়া তো ওনার সাথে দেখা করা যায় না। (সেক্রেটারি)

আপনি যদি দয়া করে ওনাকে বলেন যে ওনার বন্ধু শরীফ আহমেদের মেয়ে মৌ এসেছে একটু উপকার হয় ম্যাডাম। (মৌ)

আচ্ছা আপন একটু বসেন, দেখছি আমি স্যারকে বলে। (সেক্রেটারি)

[১০ মিনিট পর ]

স্যার আসতে পারি। (সেক্রেটারি)

জি আসুন। (আফজাল সাহেব)

স্যার আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে। (সেক্রেটারি)

কে? (আফজাল সাহেব)

স্যার বলল তো আপনার নাকি কোন ফ্রেন্ড আছে শরীফ আহমেদ নাম ওনার মেয়ে হয়, কি জানি নাম টা বলল? (সেক্রেটারি)

মৌ। (আফজাল সাহেব)

জি স্যার জি স্যার উনি উনি। (সেক্রেটারি)

বসিয়ে রেখেছেন কেন নিয়ে আসুন ওকে। (আফজাল সাহেব)

জি স্যার আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। স্যার একটা কথা বলি। (সেক্রেটারি)

জি বলুন। (আফজাল সাহেব)

মেয়েটা অত্যন্ত ভদ্র ভাবে কথা বলে, চেহারায় অদ্ভুত রকম মায়া আছে, অত্যন্ত ঠান্ডা হয়ে কথা বলল, মনে হয় কিছু হয়েছে স্যার। (সেক্রেটারি)

আপনি ডেকে নিয়ে আসুন প্লিজ। (আফজাল সাহেব)

জি স্যার আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। (সেক্রেটারি)

[বাহিরে এসে]

এই যে ম্যাডাম কি যেন নাম আপনার বার বার ভুলে যাই। (সেক্রেটারি)

জি মৌ আমার নাম।

আচ্ছা আচ্ছা মৌ, তা স্যারকে বললাম আপনার কথা আপনাকে ভেতরে যেতে বলেছে। (সেক্রেটারি)

জি অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ম্যাডাম। (মৌ)

জান ভেতরে। (সেক্রেটারি)

[রুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে]


পর্ব ০২

স্যার আসবো। (মৌ)

আরে আয় আয় মা ভিতরে আয়, বস। (আফজাল সাহেব)

কেমন আছেন আংকেল। (মৌ)

ভালো আছি রে মা। (আফজাল সাহেব)
তুই কেমন আছিস? এমন লাগছে কেন তোকে? তোর বাবার কি খবর।

আংকেল বাবা,[কেঁদে কেঁদে ]। (মৌ)

কি হয়েছে শরীফ এর, কাঁদছিস কেন? বলবি তো নাকি। (আফজাল সাহেব)

আংকেল আপনি এত দিন কোথায় ছিলেন আমি কত বার এই অফিসে ফোন দিছি গত কয়েক মাস। আপনার পিওন ধরত আর বলত আপনি দেশের বাহিরে গেছেন। (মৌ)

আমি তো ৬ মাসের জন্য ইংল্যান্ড গেছিলাম, এখন কি হইছে আংকেল কে বল মা। (আফজাল সাহেব)

আংকেল বাবা গত ৬ মাস আগে মারা গেছেন। (মৌ)

কিহ,কি বলিস রে মা, শরীফ আর নেই। (আফজাল সাহেব)

নাহ আংকেল আপনাকে অনেক কল করছিলাম আপনার এই অফিসেও করছিলাম। এমন কি গত কাল কেও কল দিছি তখন জানতে পারি আপনি নাকি পরশু দিন দেশে আসছেন। তাই আপনার সাথে দেখা করতে আসলাম। (মৌ)

ভালো করছিস মা, খুব ভালো করছিস, ভাবি কেমন আছে আর লিরা। (আফজাল সাহেব)

মা বেশি ভালো নাই আংকেল বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে মাও জানি কেমন হয়ে যাচ্ছে আর লিরা টারও একই অবস্থা। আংকেল আমি আপনার কাছে একটা দরকারে আসছিলাম, প্লিজ আংকেল একটু হেল্প করেন আমাকে। (মৌ)

বল না মা, কি দরকার বল। (আফজাল সাহেব)

আংকেল সংসারের অবস্থা খুব খারাপ, চলে না ঠিক মতন সংসার আংকেল, মামা রাও হেল্প করছে এতো দিন কিন্তু মামি রাও এখন কথা শুনায় আমি এতো দিন আপনার জন্য অপেক্ষা করছি আংকেল। (মৌ)

বুঝলাম এখন বল কি করতে পারি। (আফজাল সাহেব)

আংকেল আমার একটা চাকরি লাগবে, প্লিজ আংকেল প্লিজ আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেন আংকেল, আমি সারাজীবন আপনার কাছে ঋণী হয়ে থাকবো আংকেল। (মৌ)

চুপ কর তুই, কি বলিস এই সব, তুই আমার মেয়ের মতন, তুই এতো হাত জোর করিস কেন, তুই কাল থেকে আমার অফিসে চাকরি করবি, ঠিক আছে। (আফজাল সাহেব)

অনেক অনেক ধন্যবাদ আংকেল আপনাকে, আপনার এই ঋণ আমি কোন দিন ভুলতে পারবো না আংকেল। (মৌ)

আচ্ছা শোন মা, তুই যেন কতটুকু পর্যন্ত পড়া লেখা করছিস। (আফজাল সাহে)

জি আমার তো অর্নাস শেষ, একাউন্টিং নিয়ে অর্নাস করছিলাম। (মৌ)

ব্যাস হয়েই গেলো তাহলে। (আফজাল সাহেব)

কি হয়ে গেলো আংকেল। (মৌ)

তুই কাল থেকে আমার কোম্পানির একাউন্টেন্ট অফিসার হিসেবে জয়েন করবি, শুধু কাল আসার সময় তোর সমস্ত সার্টিফিকেট গুলা নিয়া আসিস, কেমন। (আফজাল সাহেব)

জি আংকেল। (মৌ)

তোর মাকে আমার সালাম দিস, আমি যাবো একবার তোদের বাসায়, ঠিক আছে। (আফজাল সাহেব)

আচ্ছা আংকেল, আমি তাহলে উঠি আংকেল। (মৌ)

আচ্ছা মা আয়, কাল ঠিক টাইম মত চলে আসিস। (আফজাল সাহেব)

জি। (মৌ)

[মৌ উঠে যাচ্ছিলো এমন সময় আফজাল সাহেব ]

মৌ, মা শুন। (আফজাল সাহেব)

জি আংকেল। (মৌ)

তোর না, (আফজাল সাহেব)

আংকেল বাদ দেন, আংকেল আপনি বাসায় যাইয়েন আর আমি কালকে ঠিক টাইমে আসবো। (মৌ) [কেঁদে কেঁদে ]

আচ্ছা যা। (আফজাল সাহেব)

[মৌ চলে যায় ]

রিং রিং রিং রিং,

হ্যালো স্যার। (সেক্রেটারি)

একবার রুমে আসুন। (আফজাল সাহেব)

জি স্যার। (সেক্রেটারি)

স্যার আসবো। (সেক্রেটারি)

জি, শুনুন একটু আগে যে গেলো সে এখন থেকে এই অফিসে জব করবে, কাল থেকে এই অফিসের একাউন্টেন্ট পদে জব করবে তার জন্য কেবিন ঠিক করে দেন কেমন? (আফজাল সাহেব)

জি স্যার। (সেক্রেটারি)

[মৌ বাসায় এসে]

মা মা ও মা, মা কোথায় গেলা। (মৌ)

কিরে আপ্পি কি হয়েছে। (লিরা)

মা কই রে। (মৌ)

এই তো আমি কি হইছে ডাকছিলি কেন? (মা)

মা আংকেলের সাথে দেখা হয়েছে আর চাকরিও পেয়ে গেছি মা। (মৌ)

তাই। (মা)

হুম মা, আংকেল কে সব বললাম মা, আংকেল খুব কষ্ট পেয়েছে আর বলেছে আমাদের বাসায় আসবে। (মৌ)

যাক আলহামদুলিল্লাহ্‌, আল্লাহ যা করে ভালোই করে রে মা। (মা)

ভালো আর করল কোথায় মা, সব তো এক সাথে কেড়ে নিল, যাই হোক আমি রুমে যাই, ফ্রেশ হই আর তুমি খাবার দাও। (মৌ)


পর্ব ০৩

পরদিন সকালে মৌ অফিসে যায়। আর কাজ শুরু করে দেয়

এইভাবে ১ মাস ভালোই কাজ করছে মৌ। কিন্তু সব তো ভালো হয় না। ভালোর মাঝেও কিছু খারাপ লুকায়িত থাকে।

হঠাৎ একদিন সকালে

ম্যাডাম আসবো। (পিওন)

জি আসুন। (মৌ)

ম্যাডাম স্যার আপনাকে তার রুমে যেতে বলেছে। (পিওন)

ঠিক আছে আপনি যান, আমি যাচ্ছি। (মৌ)

স্যার আসবো। (মৌ)

হুম আসো, এই তোকে না কত বার বলছি এই সব স্যার ট্যার বলবি না আমাকে একদম, বাবা বলতে পারিস না কেন, ছোট বেলায় তো আব্বু আব্বু করতিস। (আফজাল সাহেব)

এই টা অফিস, আর আমি আপনার কর্মচারী, বাহিরের সম্পর্ক টা বাহিরেই থাক না স্যার। (মৌ)

তোর সাথে কথায় পারবো না আমি
আচ্ছা শুন কাল তোকে একটু এয়ারপোর্ট যেতে হবে রে মা। (আফজাল সাহেব)

কেন স্যার। (মৌ)

কাল তোদের M.D. আসছে তো দেশে, উনি সোজা অফিসেই আসবেন, বুঝলি, তোকে রিসিভ করতে যেতে হবে। (আফজাল সাহেব)

ঠিক আছে কিন্তু M.D. টা কে স্যার, মালিক তো আপনি। (মৌ)

হা হা হা ভুলে গেছিস তুই, আমার ছেলে রে বোকা মেয়ে ও তো দেশের বাহিরে ছিল এতো দিন, এখন থেকে দেশেই থাকবে, আর আমার বিজনেস সামলাবে আমি আবার আগামী ৫ তারিখ ইংল্যান্ড যাবো। (আফজাল সাহেব)

ওহ আচ্ছা ঠিক আছে স্যার। (মৌ)

এই মৌ শুন তো। (ইসরাত)

হুম বল। (মৌ)

স্যার কেন ডাকলো রে তোকে। (ইসরাত)

কাল নতুন M.D. আসবে ওনাকে রিসিভ করতে হবে। (মৌ)

O.M.G স্যারের ছেলে আসতেছে। (ইসরাত)

তুই চিনিস নাকি যেইভাবে বললি। (মৌ)

of course চিনি, গত বছরেও এসেছিলো মাত্র ২ দিন ছিল তারপর আবার চলে গেছে। (ইসরাত)

ভালো। (মৌ)

ইস মৌ তুই কত লাকি রে ইয়ার। (ইসরাত)

কেন। (মৌ)

তুই জানিস ছোট স্যারের সাথে যাস্ট বেড শেয়ার করার জন্য কত মেয়েরা পাগল হয়ে থাকে, ছোট স্যার কে যা হট লাগে না, বাট অনেক বদ মেজাজি আর ফ্লার্ট বাজ একটা পোলা, কোন মেয়েকে ছাড়ে না। (ইসরাত)

বাদ দে তো, এই সব শুনে আমি কি করব, আর গত ২৫ তারিখের ফাইল টা নিয়ে কেবিনে আয়। (মৌ)

মৌ শুন একটা কথা বলি। (ইসরাত)

বল শুনতেছি। (মৌ)

মৌ তুই আজকে এক মাস এই অফিসে আছিস, সব থেকে আমার কাছের বন্ধুও তুই হয়েছিস তাই তোকে বলি, মৌ তুই সব সময় সাদা পরিস কেন রে, কখনো সাদা শাড়ী, কখনো সাদা কাপড়, কখনো সাদা থ্রী-পিজ, কেন রে মৌ। (ইসরাত)

যার জীবন থেকে সব রঙ হারিয়ে যায় তার শুধু সাদা রঙ টাই পরে থাকে রে, নিজেকে এখন আর রঙিন মনে হয় না তাই আর রঙিন হতেও চাই না,
ফাইল গুলা নিয়ে আয়। (মৌ)

আচ্ছা। (ইসরাত)

ইসরাত শুন। (মৌ)

হুম বল। (ইসরাত)

M.D. স্যারের নাম টা তো বললি না। (মৌ)

বর্ষণ চৌধুরী। (ইসরাত)

ওহ। (মৌ)

[পরদিন সকাল ১০ টা]

[প্লেন ল্যান্ড হয়েছে]

excuse me sir। (মৌ)

yes। (বর্ষণ)

are you Mr. borshon chowdhury। (মৌ)

yes,who are you? (বর্ষণ)

i am mow, i am your employ। (মৌ)

আসুন আপনার বাবা আমাকে পাঠিয়েছেন আপনাকে রিসিভ করতে। (মৌ)

what a sexy girl

কিছু বললেন। (মৌ)

nothing। (বর্ষণ)

তাহলে যাওয়া যাক। (মৌ)

হুম যাওয়া যাক। (বর্ষণ)

[গাড়িতে ২ জনই পাশাপাশি বসে অফিস যাচ্ছে]

এই প্রথম কোন মেয়েকে ভালো লাগলো বর্ষণের। বিদেশে বড় হয়েছে, তাই ভালোবাসা টাকে সে টাইম পাস মনে করত, তার কাছে ভালোবাসা মানেই ছিল কিছু টাইম স্পেন্ট আর লাস্ট হচ্ছে বেড। কিন্তু এই প্রথম কাউকে দেখে সে এতো টা মুগ্ধ হয়েছে।

গাড়ি এসে অফিসের সামনে থামল। সবাই তাদের নতুন স্যারকে ফুল দিয়ে বরণ করছে কিন্তু সেইখানে মৌ ছিল না। বর্ষণ তার বাবার রুমে বসা ছিল। ঠিক সেই সময় আফজাল সাহেব মৌ কে ডেকে পাঠায়

জি স্যার। (মৌ)

আরে মৌ আসো। প্লিজ বসো। তুমি কোথায় ছিলে, দেখতে পেলাম না। (আফজাল সাহেব)

স্যার আমি সরাসরি কেবিনে চলে গিয়েছিলাম কোন প্রবলেম স্যার। (মৌ)

না, আমি আজকে রাতের ফ্লাইটেই ইংল্যান্ড চলে যাচ্ছি, ৫ তারিখ যাওয়ার কথা ছিল বাট আজকেই যেতে হবে, আমি বর্ষণ কে সব বুঝিয়ে দিয়েছি আর তুমি তো আছোই, কেমন? (আফজাল সাহেব)

জি স্যার। (মৌ)

so মিস মৌ আজ থেকে আমিই আপনার বস। [হাত এগিয়ে] nice to meet u। (বর্ষণ)

same to u sir। (মৌ)

ঠিক তখনই বর্ষণ মৌ কে চোখ মারে। আর মৌ অবাক হয়ে যায় পরে চলে যায় আর বর্ষণ মুচকি হাসি দেয়।


পর্ব ০৪

সেইদিনের মতন সব চুকিয়ে মৌ বাসায় চলে এসেছে
পরের দিন আবার অফিস। মৌ অফিসে আসে, আজকে তাদের একটা মিটিং আছে। তার আগে তাকে তার বস মানে ছোট স্যারের সাথে কথা বলতে হবে
আর ছোট স্যার হচ্ছে বর্ষণ।

স্যার আসবো। (মৌ)

oh yes, come in। (দুস্টামির স্বরে)

স্যার আপনি তো জানেন যে আজ বিকেলে একটা মিটিং আছে, ওই টা নিয়ে একটু কথা বলি। (মৌ)

i don’t like any discussion,

ok, বাকি টা আমি সামলে নিবো, আপনি কি যাবেন মিটিং এ? (মৌ)

তোমার সাথে তো আমি জাহান্নামেও যেতে রাজি

স্যার আমি আপনাদের অফিসের কর্মচারী, দয়া করে বসের মতন আচরন করলে খুশি হবো। (মৌ)

[মৌ এর এই রকম কথায় বর্ষণ অপমানিত বোধ করে]

আসছি আমি। (মৌ)

বিকেলে মিটিং এটেন্ড করে মৌ আর বর্ষণ। ভালো ভাবেই হয়ে যায়।

[তারপর কেটে যায় প্রায় ২ সপ্তাহ ]

বর্ষণ ধীরে ধীরে মৌ এর প্রতি দুর্বল হয়ে পরতে থাকে। কিন্তু মৌ এখন আর তাকে ভালো চোখে দেখে না। কারন তার আচরন মৌ এর পছন্দ হয় না।

[একদিন সকালে অফিসে]

মৌ আসবো। (বর্ষণ)

জি স্যার, কিছু বলবেন। (মৌ)

আমার কেবিনে আসো। (বর্ষণ)

মৌ বর্ষণের কেবিনে গিয়ে

স্যার আসবো। (মৌ)

হুম

কিছু বলবেন। (মৌ)

আচ্ছা মৌ আমাকে একটা কথা বলব

জি বলুন না স্যার [বিরক্ত হয়ে]। (মৌ)

তুমি always সাদা পর কেন

মানে। (মৌ)

মানে always সাদা ড্রেস আপ কর কেন, আর তুমি কখনো হাসো না কেন?

এই টা আমার ব্যাপার। (মৌ)

এইভাবে কথা বলতেছো যে

আপনার প্রবলেম কি স্যার, সেই প্রথম দিন দেখে আসছি আপনি এমন করছেন, কেন স্যার। (মৌ)

আজব,কি করেছি আমি

আমার পিছনে এইভাবে পরে আছেন কেন আপনি আপনার তো অফিসের দিকে কোন মন নেই, শুধু অফিসের মেয়ে গুলার দিকে আপনার নজর, এখন আবার আমার ড্রেস আপ নিয়ে আপনার সমস্যা আমি হাসি না কেন, সেই টা নিয়েও আপনার প্রবলেম। (মৌ)

তুমি কি বলতে চাচ্ছো, আমি অফিসে শুধু মেয়ে দেখতে আসি, অফিস টা আমার ok

আপনার না আপনার বাবার, ভিক্ষা দিয়ে গেছে আপনাকে। (মৌ)

mind your language

আগে অফিসের জন্য কিছু করেন তারপর দেখবো, বাপের অনেক টাকা পয়সা আছে তো তাই আর গায়ে লাগে না তাই না। (মৌ)

তুমি জানো তোমাকে আমি কি করতে পারি

হুম জানি তো, এই যে আমি আপনাকে এতো কথা বললাম আপনি আমাকে চাকরি থেকে বের করে দিবেন আমি হয়তো চলে যাবো, কিন্তু আপনার কি হবে আপনার জীবন কি এইভাবেই যাবে, কখনো ক্লাব কখনো মদ আর কখনো মেয়ে মানুষ নিয়ে হোটেলের বেডে পরে থাকবেন। (মৌ)

মৌ এই সব বলে চলে গেছে আজকে মৌ এর খুব রাগ হয়েছে তাই সে বর্ষণকে ওই সব বলেছে। সে দেখছিল যে বর্ষণ কাজে একদম মন দিচ্ছে না তাই তার এইসব বলা। আর ওইদিকে তো বর্ষণ রাগে গজ গজ করতেছে তাকে আজ এতো অপমান করেছে মৌ। সে কিন্তু আর যাই করুক মৌ কে খুব ভালোবাসে।

সে মৌ কে ভালোবেসে ফেলেছিল। সেইদিন রাতে বর্ষণের চোখে ঘুম নেই, সিগারেট একটার পর একটা খেয়েই যাচ্ছে আর ভাবছে মৌ তাকে কি বলে গেলো। তারপর সব ভেবে ভিন্তে ডিসিশন নিল সে মৌ এর পছন্দের মতন হবে, তারপর থেকে বর্ষণ অন্য মানুষে রুপান্তরিত হয়, এখন সে আর ক্লাব, মদ, মেয়ে এই সব থেকে দূরে থাকে, ১ মাসে তার বিজনেস অনেক ইম্প্রুভ করে যায়।

অফিসের সবাই যেমন খুশি তেমনি অবাক। । এই সেই বর্ষণ যে কিনা ক্লাব পার্টি মদ আর মেয়ে নিয়ে মেতে থাকত সে কিনা এখন এতো চেঞ্জ হয়ে গেছে। মৌ ও ভাবে যাক তাহলে তার ওইদিনের কথা গুলা কাজে এসেছে। কিন্তু মৌ ভাবে নি যে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে

রিং রিং রিং,

হ্যালো। (মৌ)

মৌ আমার কেবিনে আসুন। (বর্ষণ)

জি স্যার বলুন। (মৌ)

বসুন না

জি। (মৌ)

মৌ আমি কি তেমন টা হতে পেরেছি যেমন টা তুমি চেয়েছিলে

মানে। (মৌ)

মানে হচ্ছে তুমি তো এইটাই চেয়েছিলে যে আমি এমন হই দেখো আমি এমন টাই হয়েছি এখন তো

এখন তো মানে। (মৌ)

[বর্ষণ তার চেয়ার থেকে মৌ এর কাছে এসে বলে ]

মৌ i love u মৌ
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি
আমি আর আগের মতন নেই মৌ
দেখো আমি এখন অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছি
বিলিভ মি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি

আরে কি হচ্ছে কি ছাড়ুন তো আমাকে, পাগল হয়ে গেছেন নাকি, কি বলছেন এই সব। (মৌ)

হ্যা আমি পাগল হয়ে গেছি তোমার জন্য পাগল হয়ে গেছি মৌ প্লিজ ভালোবাসি তোমাকে

আরে ভালোবাসা কি সস্তা নাকি যখন চাইলেন তখনই পাবেন, সরেন এইখান থেকে আমাকে যেতে দেন। (মৌ)

কোথায় যাবে তুমি [মৌ এর হাত ধরে ]
বলে যাও প্লিজ মৌ

আমি ভালোবাসি না
আমি আপনাকে ভালোবাসি না
বুঝেছেন বাসি না ভালো আপনাকে আমি
আর কোন দিন আমাকে এই সব বলবেন না তা না হলে আমি আপনার বাবাকে বলতে বাধ্য হবে আর না হয় সোজা অফিসের চাকরি ছেড়ে দিব। (মৌ)

মৌ তোমার সমস্যা কোথায়, নিজেকে কি ভাবো, আমার কাছে তো তুমি কিছুই না, তারপরও তোমার এতো অহংকার কিসের, তুমি জানো আমার সাথে বেডে শোয়ার জন্য কত মেয়ে পাগল হয়ে থাকে। আর তুমি,

আর আমি যে অন্য মেয়ে না তাই, আমি যদি অন্য মেয়ে হতাম তাহলে প্রথম যেদিন আপনি আমাকে চোখ মেরেছিলেন তার পর দিন আমিও থাকতাম এক দিনের শয্যাসঙ্গিনী। নিজেকে আর ছোট করবেন না প্লিজ
আমাকে আর বিরক্ত করবেন না। (মৌ)

এই বলে মৌ চলে গিয়েছে কেবিন থেকে আর বর্ষণ পাগল প্রায়। মৌ তাকে কি বলে গেলো, তারপর বর্ষণ নিজে নিজে বলে

ok মৌ
তুমি আমার ভালোবাসার অপমান করেছো
আমাকে অপমান করেছো
এখন থেকে তুমি দেখবে মৌ অপমান কাকে বলে
আজ থেকে তোমার প্রতি আমার সব ভালোবাসা মরে গেলো।


পর্ব ০৫

[পরদিন অফিসে ]

রিং রিং রিং,

হ্যালো। (ইসরাত)

আমার কেবিনে আসুন, ফাস্ট। (বর্ষণ)

জি স্যার আসছি। (ইসরাত)

স্যার আসবো, (ইসরাত)

হুম আসুন

জি স্যার কিছু বলবেন। (ইসরাত)

গত প্রজেক্ট এর ফাইল কার কাছে

ওই টা তো মৌ ম্যাম এর কাছে স্যার। (ইসরাত)

ok, thnx, আপনি এইবার আসতে পারেন

রিং রিং রিং,

হ্যালো। (মৌ)

গত প্রজেক্ট এর ফাইল টা নিয়ে যাস্ট ১ মিনিটের মধ্যে আমার কেবিনে আসুন। (বর্ষণ)

জি স্যার। (মৌ)
[মৌ মনে মনে বলে কি ব্যাপার হঠাৎ এইভাবে কথা বলার কারন কি ]

স্যার আসবো। (মৌ)

জি আসুন ফাইল এনেছেন

জি। (মৌ)

দিন আর সোজা কেবিন থেকে বের হয়ে যান

আজিব লোক ভদ্রতা জানে না নাকি, অবশ্য জানবে কিভাবে বড়লোক বাপের বিগরে যাওয়া পোলা তো। (মৌ)

আপনি কিছু বললেন মনে হয়

কই না তো। (মৌ)

আসতে পারেন

[নিজের কেবিনে এসে]

ভাবে কি নিজেকে উনি যত্তসব, আমাকে বেডে নিতে চেয়েছিলো পারে নি তো তাই এমন রাগ দেখায় আসুন না আবার ঘুরিয়ে চড় যদি না মারছি আমার নাম মৌ না

রিং রিং রিং,

হ্যালো আবার কে। (মৌ)

এক্ষুনি আমার কেবিনে আসুন। (বর্ষণ)

আবার কি হইলো। (মৌ)

জি বলেন। (মৌ)

এই সব কি

কি এই সব। (মৌ)

দেখতে পাচ্ছেন না কি এই সব

না দেখতে পারছি না তো সব তো ঠিকই আছে। (মৌ)

আমি এই প্রজেক্ট এ হ্যাপি নই, এই প্রজেক্ট বাদ, পুরা বাদ করে দিলাম আমি [এই বলে ফাইল টা মৌ এর গায়ের উপরে ছুড়ে মারে বর্ষণ ]

এই সবের মানে কি স্যার আমি তো নিজেই বানিয়েছিলাম এই টা, আর আমি অনেক কষ্ট করে বানিয়েছি। (মৌ)

কি কি কি আবার বলেন কি করেছেন কষ্ট করে বানিয়েছেন হা হা হা হাসালেন আমাকে আপনি, কষ্ট কি জিনিস বুঝেন নাকি আপনি

দেখুন স্যার পারসোনাল কিছু কাজের এইখানে কেন আনছেন আপনি, এই প্রজেক্ট টা তো অনেক ভালো হয়েছে, সবাই অনেক পছন্দ করেছে। (মৌ)

আমার ভালো লাগে নাই, আমার পছন্দ হয় নি
আপনি এখন আসতে পারেন,

তার এমন কথা শুনে মৌ এর চোখ দিয়ে পানি পরা শুরু হয়ে গেলো। মৌ কেবিন থেকে বের হয়ে নিজের কেবিনে চলে যায়

কাঁদো মৌ কাঁদো, সবে তো শুরু, আরো অনেক আছে সামনে, আরো কাঁদতে হবে তোমাকে, আজকে প্রজেক্ট দিয়ে শুরু করেছি কাল অন্য কিছু দিয়ে, দিন দিন তোমার প্রতি অনেক অত্যাচার শুরু হয়ে যাবে মিস মৌ, তোমাকে ভালোবেসেছিলাম, সত্যি কারের ভালোবাসা।

কিন্তু তুমি আমাকে অপমান করেছো আমার ভালোবাসা কে অপমান করেছো, এখন তো আমার পালা, প্রতিশোধ নিতে হবে না, এই সবের প্রতিশোধ নিতে হবে তো, গুনে গুনে আমাকে করা প্রত্যেক টি অপমানের প্রতিশোধ নিব আমি, ready for my revenge , হা হা হা। (বর্ষণ)

অফিস এর পর মৌ বাসায় ফিরে আসে, আজকে বাসায় একা আছে মৌ, তার মা আর বোন তার খালার বাসায় গেছে ২ দিন ওইখানেই থাকবে, বাসায় আসতে আসতে রাত ৯ টা বেজে গেছে মৌ এর, ফ্রেশ হয়ে খাবার রান্না করে খেতে গিয়ে ১১৩০ বেজে গেছে। মৌ শুতে যায়, প্রায় ঘুম চলে আসবে এমন সময় ফোন বেজে উঠে

হ্যালো। (মৌ)

কি ব্যাপার ঘুমান নাকি। (বর্ষণ)

স্যার আপনি। (মৌ)

ঘুম বাদ দেন আর ঠিক ২০ মিনিটের মধ্যে অফিসে চলে আসুন

কি বলেন এইসব কয় টা বাজে এখন দেখছেন। (মৌ)

হুম ১২৩০

তাহলে এত রাতে কেউ অফিসে যায়
এই টা কি অফিস টাইম। (মৌ)

ok তাহলে আমিই আসি আপনার বাসায়

না না না ঠিক আছে আমি আসছি। (মৌ)

শুনুন গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি সোজা গাড়িতে করে চলে আসবেন, ফাস্ট ok

[ফোন রাখার পর ]

কি অসৎ লোক এই টাইমে অফিসে ডাকে, আল্লাহ্‌ যা করে আজকে যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে তাহলে আজকে মেরেই ফেলবো। (মৌ)

[বাসার ড্রেস পরেই দৌড় মারে মৌ]

wow চলে আসছেন। (বর্ষণ)

বলুন কি করতে হবে। (মৌ)

নাহ নাহ আপনি যা ভাবছেন তা কিন্তু নয়, এত্ত রাতে আপনাকে ডেকেছি তার মানে এই নয় যে আপনাকে আজকে আমার শয্যাসঙ্গিনী হতে হবে। (বর্ষণ)

মানে। (মৌ)

nothing, এই ফাইল গুলা ঠিক ২ ঘন্টার মধ্যে রেডি করে দিন,

এতো ফাইল আর মাত্র ২ ঘন্টা। (মৌ)

হুম তারাতারি,

তারপর বর্ষণ এ.সি. টা অন করে দেয়, আর মৌ এই ঠান্ডার মধ্যে কাজ করতে থাকে, ঘড়িতে ৪৩৫ বাজে

এই নিন সব ফাইল রেডি। (মৌ)

oh good, আপনি আসতে পারেন। (বর্ষণ)

মৌ এর মুখ চোখ সব ফুলে গেছে এই ঠান্ডার মধ্যে তাকে বসিয়ে রাখা হয়েছে তারপরও মৌ কিছু বলে নি
মৌ চলে যাচ্ছিলো এমন সময় বর্ষণ বলে,

গাড়িতে যাবেন আর ঠিক সকাল ৯ টায় অফিসে উপস্থিত থাকবেন, এখন আসতে পারেন,

মৌ বাসায় চলে যায়,

বাসায় এসে মৌ ইচ্ছামত কাঁদতে থাকে,

আর এই দিকে বর্ষণ বলে, আজকে তো তোমার ঘুম কেড়ে নিলাম, ঠিক এইভাবে তোমার কাছ থেকে সব কেড়ে নিবো আমি। তুমি নিজেকে প্রিপেয়ার করতে থাকো মিস মৌ, তোমার সামনে আরো ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করে আছে তোমার জন্য, আমাকে অপমান করা, আমার ভালোবাসা কে অপমান করার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে ম্যাডাম।

কাল সকালে অফিসে আসো, দেখো তোমার সাথে কি হয়, কাল অফিসে যা হবে তা তুমি কল্পনা তেও আনতে পারছো না। কাল তোমার জন্য অনেক ধাক্কা অপেক্ষা করে আছে ,


পর্ব ০৬

[পরদিন সকালে অফিসে]

মৌ সময় মতন অফিসে চলে আসে আর এই দিকে বর্ষণ ও চলে আসে। সে ভেবেছিল হয়তো মৌ আজকে আর আসবে না। কিন্তু সে মৌ কে দেখে খুশি হয় তার কারন আজ সে মৌ কে আরেক রকম শাস্তি দিবে।

[বর্ষণ বোর্ড মিটিং এ সবাইকে ডাকলেন ]

২ ঘন্টার মধ্যে সবাই পুল-সাইডে দেখা করবেন ওই খানে কিছু কথা বলব আপনাদের সাথে। সেই মিটিং এ মৌ ও ছিল। সবাই ভাবছে কি হয়েছে কেন সবাইকে পুল সাইডে যাওয়ার জন্য বলা হলো।

[২ ঘন্টা পর পুল সাইডে]

হ্যালো লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান আপনাদের সবাইকে এইখানে ডাকার কারন হচ্ছে আমাদের প্রজেক্ট টা সাবমিট হয়ে গেছে। আগামী ১৬ তারিখ একটা বড় সাকসেস পার্টি এরেঞ্জ করা হবে। আপনারা সবাই সেইখানে উপস্থিত থাকবেন আশা করি।

[ওহ হ্যা বলাই হয় নাই এই মিটিং এ বর্ষণ একজন লোক কে ভাড়া করে যে মৌ কে, আর একটু পর বলি, আগে দেখি মিটিং এ কি হচ্ছে ]

মিটিং প্রায় শেষের দিকে, এমন সময় কে যেন ঝুপ করে পুলের পানিতে পরে যায়, সবাই পুলের দিকে তাকায় সাথে বর্ষণও।

ওহ হো ইসসস কি হলো মিস মৌ পরে গেলেন কিভাবে
(বর্ষণ)

[হুম যা ভেবেছেন বেচারি মৌ পরে গেছে পুলের মধ্যে। এখন বলি কি হয়েছিল। (মিটিং চলা অবস্থায় একজন ওয়েটার হয়ে সবাইকে জুস সার্ভ করছিল, সবাইকে জুস দেয়ার পর সে সেইখান থেকে সরে যায় আর মৌ এর পিছনে গিয়ে দাড়ায়, আর তারপর মিটিং এর এক ফাকে বর্ষণ তাকে হাতে ইশারা দেয় আর সে খুব চালাকের সহিত মৌ কে ধাক্কা মেরে পুলে ফেলে দেয় আর সেইখান থেকে সরে পরে যা মৌ খেয়াল করে নাই]

তারপর ইসরাত মৌ কে তুলে আর সবাই মৌ এর দিকে তাকিয়ে থাকে। একে তো মৌ এর জ্বর তার উপরে এই ঠান্ডা পুলের পানিতে পরে আরো অবস্থা খারাপ হয়ে যায় মৌ। সবাই চলে যায় অফিসের দিকে, সেইখানে শুধু মৌ, ইসরাত আর বর্ষণ ছিল।

কিভাবে পরলিরে বাবু। (ইসরাত)

মৌ নিশ্চুপ,

বর্ষণ হেসে সেইখান থেকে চলে যাচ্ছিলো হঠাৎ ইসরাত এর চিৎকার শুনে বর্ষণ দাঁড়িয়ে পরে।

এই মৌ কি হয়েছে তোর মৌ। (ইসরাত)

বর্ষণ পিছনে ঘুরে দেখে মৌ মেঝেতে পরে আছে

oh seat, কি হয়েছে ওনার,

স্যার ওর গায়ে এমনিতে জ্বর ছিল, এখন আবার পরে গেলো পানির মধ্যে অতিরিক্ত ঠান্ডার কারনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে স্যার। (ইসরাত)

বর্ষণ মৌ কে কোলে তুলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায় আর সাথে ইসরাত ও যায়।

সব ব্যবস্থা করে দিয়ে বর্ষণ চলে আসে হাসপাতাল থেকে। তারপর রাতে ভাবে বেশি হয়ে গেলো না ব্যাপার টা, বাবা যদি জানতে পারে মেরে ফেলবে আমাকে। না না কি ভাবছি আমি এইসব, ওকে কষ্ট পেতে হবে। ও আমায় কষ্ট দিয়েছে ওকে কষ্ট পেতে হবে।

[১ সপ্তাহ পর মৌ অফিস জয়েন করে ]

রিং রিং রিং,

হ্যালো। (মৌ)

কেমন আছেন মিস মৌ। (বর্ষণ)

যেমন আপনি রেখেছেন, দেখতেই তো পাচ্ছেন কেমন আছি। কাল হাসপাতালল থেকে রিলিজ হলাম আজকে অফিস জয়েন করলাম, জানি এই ১ সপ্তাহের বন্ধের জন্য আমার সেলারিও কেটে রাখবেন আপনি
আর কিছু বলবেন কি, আমি এখন সুস্থ আছি আপনার নেক্সট অত্যাচার চাইলে শুরু করতে পারেন। (মৌ)
[কেঁদে কেঁদে ]

সাট আপ

বলে লাইন কেটে দেয় বর্ষন

তারপর একদিন অফিসে মৌ নিলয়ের সাথে একটু হেসে কথা বলছিল। মৌ অফিসের অন্য ছেলেদের সাথে তেমন একটা কথা বলে না শুধু নিলয় ছাড়া নিলয় ও মৌ এর সাথে হেসে হেসে কথা বলে, এই টা বর্ষণ দেখে ফেলে তারপর নিজের কেবিনে এসে হাত কামড়াতে থাকে

১ ঘন্টা পর নিলয় এর হাতে বরখাস্তের কাগজ চলে যায় সবাই খুব অবাক হয়ে যায় কারন নিলয় ছিলেন সব চাইতে ভালো employee .

what is this sir। (মৌ)

what। (বর্ষণ)

এই সব কি করছেন, নিলয় ভাই কে বরখাস্ত করছেন কেন, ওনার অপরাধ কি, উনি কি এমন করেছে যার জন্য ওনাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। (মৌ)

ওহ হো,মায়া লাগছে নিলয় ভাইয়ার জন্য তাইনা, লিসেন আমি অফিস টা খুলেছি বিজনেস এর জন্য, হাসা-হাসি আর মজ-মাস্তি করার জন্য অফিস খুলি নাই, ok

oh i see, at that moment, i understand
আমি ওনার সাথে হেসে কথা বলেছি তার জন্য আপনি ওনাকে, ছি কি নোংরা মাইন্ড আপনার ছি, (মৌ)

ওই কিসের নোংরা মাইন্ড হ্যা, তোমরা রাসলিলা করতে পারবা আর আমি বললেই ছি,তাই না। [এই বলে মৌ এর হাত শক্ত করে ধরে], নিলয় তো বিবাহিত, ওর মধ্যে কি পাইছো, বিবাহিত পুরুষ রা কি বেশি সুখ দেয়?

ঠাসসসসসসস,
mind ur language, অসভ্য লোকের মতন কথা বলতে লজ্জা করে না আপনার, আপনি ভেবেছেন কি হ্যা, আপনি যা ইচ্ছা করবেন, নাহ তা হবে না, আমি এইখানে আছি শুধু আপনার বাবার জন্য তা না হলে কবে এইখান থেকে আমি চলে যেতাম, hate u, i just hate u, (মৌ)

মৌ চলে যায়,
আর বর্ষণ গালে হাত দিয়ে বলে,
এই চড়ের বদলা আমি নিয়েই ছাড়বো, আরেক জনের জন্য আমাকে চড় মারলা, দেখো আর কি কি হয় তোমার সাথে, just wait & watch,

মৌ কেবিনে এসে অনেক কান্না করে আর ভাবে সব ছেলেরাই এক, সবাই এক, এরা কি মানুষ, এরা মেয়েদের ইচ্ছামত কাঁদাতে পারে আবার ইচ্ছামত মেয়েদের ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলেও দিতে পারে


পর্ব ০৭

মৌ রাতে ভাবছে নাহ এই অফিসে আর কাজ করবো না। এমন সময় মৌ এর মায়ের আগমন ঘটে রুমে

কিরে মা ঘুমাস নাই। (মা)

নাহ, ঘুম আসছে নাহ। (মৌ)

কেনো রে মা শরীর কি খারাপ নাকি, সব ঠিক আছে তো। (মা)

হুম মা সব ঠিক আছে, তুমি কি কিছু বলবা। (মৌ)

শুন না মা তুই তো জানিস যে লিরার ফাইনাল চলতেছে কয়েকদিন পর ওর আবার টাকা লাগবে, এখন তোর কাছে কি টাকা আছে নাকি আমি মেনেজ করে দিতাম লিরা কে। (মা)

উফফ মা তুমি এইটার জন্য এতো রাতে আসছো, আছে আমার কাছে টাকা, তুমি টেনশন কইরো না তো, যাও ঘুমাই পরো, যাও যাও। (মৌ)

মা আলতো করে কপালে চুমো দিয়ে বলে

তোরে খুব জালাই নারে মা। (মা)

উফ মা কিযে বল না তোমরা ছাড়া আমার আর কে আছে, যাও মা ঘুমাও গিয়ে। (মৌ)

মা চলে যায়

[মৌ জানালায় মাথা ঠেকায় আর ভাবে আচ্ছা ৬ মাস আগে কি আমি ভেবেছিলাম যে আমার জীবনের মোড় টা এমন হবে, কেন যে এমন টা হলো, আর বাবা, বাবাও আমাকে রেখে চলে গেলেন, বাবা তুমি খুব বাজে, তুমি তোমার প্রিন্সেস কে রেখে চলে গেছো, তোমার প্রিন্সেস টা তোমাকে খুব মিস করে বাবা। (কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে গেছে মৌ) আর ভালো লাগছে না ওর তাই সে ঘুমিয়ে গেছে ]

পরদিন অফিস,

মৌ তার কেবিনে কাজ করছিলো আর ভাবছিল বর্ষণ কেন এমন করতেছে ওর সাথে হঠাৎ পিওন এসে বলল ম্যাম আপনাকে স্যার ডাকছেন,

কি ব্যাপার ডাকছেন কেন আমাকে। (মৌ)

what a rubbish girl, knock করে আসতে পারো না idiot কোথাকার। (বর্ষণ)

আমার ভুল হয়ে গেছে স্যার, কিছু বলবেন। (মৌ)

নেক্সট উইক পার্টি জানো তো, সব তোমাকেই সামলাতে হবে, মাইন্ড ইট কোন রকম ভুল যাতে না হয়

জি স্যার। (মৌ)

পার্টির দিন সন্ধ্যায় সবাই উপস্থিত হয়েছেন, আজ মৌ একটা সাদা শাড়ী পরে আসছে পার্টিতে, মৌ কে অসম্ভব সুন্দর লাগছে আজকে। আর বর্ষণ এই শাড়ী কে কেন্দ্র করেই তার নতুন প্লেন টা সাজিয়ে ফেলেছে।

বর্ষণ আর তার কয়েকজন ফ্রেন্ডস রা দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো ঠিক ওই টাইমে মৌ তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো, মৌ কে দেখে একজন বলে উঠলো

এই বর্ষণ এই মেয়েটা কেড়ে, তোর অফিসে কাজ করে না? (বন্ধু)

হুম, আমার বাবার কেমন ফ্রেন্ড এর মেয়ে জানি

ওহ আচ্ছা, কিন্তু মেয়েটা কিন্তু যাক্কাস। (বন্ধু)

sexy ও আছে কিন্তু। ( রুবেল)[আরেক ফ্রেন্ড]

আরে বাদ দে তো। (বর্ষণ)

কেন বাদ দিবো কেন। (রুবেল)

কত মেয়ে আসলো আর কত মেয়ে গেলো, এ তো হচ্ছে মিডেল ক্লাস মেয়ে, এর মেন্টালিটিও মিডেল ক্লাসের, বুঝোস না গরিব টাইপের তো, যেইদিকে বড়লোক পায় সেই দিকেই দৌড়ায়। (বর্ষণ)

হুম তা ঠিক বলেছিস, আচ্ছা দোস্ত, মেয়েটা all time সাদা পরে কেন রে। (রুবেল)

জানি না রে, মনে হয় বিধবা আর না হয় স্বামী রেখে চলে গেছে, তাই সাদা কেই আপন করে নিছে, হা হা হা। ( বর্ষন)

মৌ এতোক্ষন দাঁড়িয়ে সব কথা শুনেছে তাদের, তারপর আর সহ্য করতে না পেরে তাদের সামনে গিয়ে দাড়ায় আর বলে,

বাহ মিস্টার বাহ, কি সুন্দর উক্তি আপনাদের, বাহ, হাত তালি না দিয়ে থাকতে পারলাম না, আমার অবাক লাগে আপনারা সত্যি কি কোন মায়ের সন্তান, যারা মেয়েদের এতো সহজেই অপমান করেন, আমি গরিব বলে এতো কথা বলছেন নাকি আমি ওনার অফিসে কাজ করি বলে বললেন নাকি আমার সাদা পোশাক নিয়ে বললেন নাকি আমি কারো এক রাতের শয্যাসঙ্গিনী হই নি বলে বললেন। (বলতে গিয়ে কেঁদে দেয় মৌ)।
তাই না মিস্টার বর্ষন, জানেন তো মিস্টার বর্ষন আমার ভাবতেও অবাক লাগে যে আপনি আফজাল আংকেলের ছেলে। বিদেশে বড় হয়েছেন বলে মেয়েদের খেলার পুতুল ভাবেন তাই না, আসলে কি বলেন তো এই সবের জন্য একজন অভিভাবক লাগে আপনার তো তা নেই তাই আপনি এইসব বুঝবেন না। তাই মেয়েদের খেলনা ভাবেন, একটু আগে আপনাদের মধ্যে কেউ একজন আমাকে sexy বলেছেন
, শুনেছেন নিশ্চয়ি আপনি মিস্টার বর্ষন, এই নাকি আপনি আমাকে ভালোবাসেন, ওইদিন তো খুব বড় বড় কথা বলেছিলেন আমাকে, ভালোবাসেন আমাকে এই সেই, আজ আপনারই সামনে আপনার এক ফ্রেন্ড আমাকে sexy বলে আর তখন আপনি হাসেন, আবার সেই আপনিই আমাকে বলেন আমি নাকি বড়লোক দেখলে দৌড়াই, আচ্ছা বলুন তো আমি গিয়েছিলাম আপনার কাছে নাকি আপনি এসেছিলেন আমার কাছে, সেইদিন আপনার কেবিনে বলা প্রতিটি কথাই তাহলে মিথ্যা ছিল তাই মিস্টার বর্ষণ।

আসলে সত্যি বলতে কি আপনি আমাকে না আমার শরীর টাকে ভালোবেসেছিলেন, আমাকে নয়। আরে এমন হলে পাড়ায় চলে যান না, আমার থেকেও অনেক ভালো মেয়ে আছে ওইখানে যারা আপনাকে অতি সহজেই তাদের দেহ বিলিয়ে দিবে। আর কোন দিনও আপনার ওই মুখে ভালোবাসা শব্দ টা উচ্চারণ ও করবেন না। (মৌ)

বলেই চলে গেলো কাঁদতে কাঁদতে,

কিরে এই মেয়ে তো তোকে ভোতা করে চলে গেলো। (রুবেল)

how dare she, এর দাম তো একে দিতেই হবে, দিতেই হবে বলে হাতের গ্লাস টা আছাড় দেয় বর্ষণ, আরর সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকে,

মৌ তারপর থেকে আর কোন রকম কথা বলে নি বর্ষণের সাথে, সে জানে যে তাকে এই চাকরি টা ধরে রাখতে হবে, তার উপরেই তার মা আর বোনের ভবিষ্যৎ।

আর ওইদিকে বর্ষণ আরো ক্ষেপে যায়, আরো ভয়ংকর হয়ে উঠে,


পর্ব ০৮

মৌ ভাবছে কি করে সে অফিসে বর্ষণের সাথে কথা বলবে, মৌ এর কাছে তো বর্ষণ কে একদম ভালো লাগে না, আর পার্টিতে সে যা করছে তারপর তার সাথে কথা বলতে রুচিতে বাধে।

আর এই দিকে অফিসে বর্ষণ মৌ কে দেখে, আর সে তার নতুন প্ল্যান টাও সাজিয়ে ফেলে, সে আজকেই তার প্ল্যান টি এক্সিকিউট করবে বলে ঠিক করে।

hello everyone। ( বর্ষণ)

yes sir, any problem sir। ( all staff)

yes, আমার কাছে এই অফিস টা আর ভালো লাগছে না, i mean to say, আমি চাচ্ছি এই অফিস টাকে আবার নতুন করে সাজাতে, paint করতে হবে, so কাল থেকেই কাজ শুরু করে দিবো ভাবছি, আপনাদের কি কারো প্রবলেম হবে?

no sir। (all staff)

ok, thanks everybody,

ম্যাম আসবো। (হাবিব)

হুম আসেন হাবিব সাহেব। (মৌ)

ম্যাম, এই ফাইল টা যদি একটু দেখে দিতেন। (হাবিব)

দেখি কি ফাইল, ওহ আচ্ছা মুন ইন্ডাস্ট্রিয়ালস এর ফাইল। (মৌ)

জি ম্যাম। (হাবিব)

এইটা তো স্যার দেখবেন, তাই না। (মৌ)

হ্যা বাট স্যার বলল আপনাকে দেখিয়ে দিতে, তাই নিয়ে আসছি আর কি। (হাবিব)

আচ্ছা ঠিক আছে। (মৌ)

[মৌ বর্ষণের কেবিনে গিয়ে]

স্যার আসবো। (মৌ)

জি আসুন। (বর্ষণ)

এই ফাইল টা দেখে দিন আর সাইন করে দিন। (মৌ)

এই নিন

thanks। (মৌ)

এই বলে মৌ চলে যায়, বর্ষণ ভাবতে থাকে আজকেই প্ল্যান টা সাকসেস করতে হবে,

বর্ষণ অফিসের সব স্টাফ কে ছুটি দিয়ে দেয়।, শুধু মৌ কে ছাড়া।

অফিসে শুধু মৌ আর বর্ষণ ছিল, পেইন্টার রা খেতে গেছেন, অফিস পুরা ফাকা।

মিস মৌ এই দিকে আসুন তো। (বর্ষণ)

জি আসছি, কিছু বলবেন? (মৌ)

হুম এই দিকে আসুন

জি বলুন। (মৌ)

মৌ কাছে যেতেই বর্ষণ মৌ এর গায়ে পুরো এক বক্স রঙ ঢেলে দেয়, মৌ হতভম্ভ হয়ে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে থাকে, আজ মৌ এর গলা থেকে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না। একদম স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মৌ

খুব সাদা পরার সখ তাই না, আমি না আবার সাদা পছন্দ করি না, u know what i don’t like white। (বর্ষণ)

এইটা কি করলেন স্যার, আমার গায়ে এইভাবে রঙ ঢেলে দিলেন, এই বলে কেঁদে দেয় তবে আজ তার কান্নার মাঝে অন্যরকম সুর ছিল, নিরবে চোখের জল ফেলে মৌ

আমাকে আমার ফ্রেন্ডস দের সামনে অপমান করার সময় মনে ছিল না তোমার, কেমন লাগে এখন, দেখো নিজেকে আয়নায়, সাদা এখন লালে পরাবর্তিত হয়েছে।

মৌ উল্টা পথে হাটা শুরু করে দিল কিছুই বলল না আজ সে, তার সব চিন্তা আজ বন্ধ হয়ে গেছে, এতো টাই ঘৃণা করে উনি আমাকে যে আমার মান-সম্মানে আঘাত করল।

মৌ এর এমন নিরবতা বর্ষণকে একটু অবাক করে, কিন্তু পরে সে ভাবে যা করেছি বেশ করেছি এখন দেখো
মৌ কেমন লাগে

এই দিকে বাসায় ফিরে মৌ

এই আপ্পি কি হয়েছে তোমার পুরো শরীর এ এতো রঙ পরলো কিভাবে। (লিরা)

মৌ কোন কথা না বলে বাথরুমে ঢুকে গেলো,

সাওয়ার ছেড়ে ইচ্ছামত কাঁদতে থাকে আর বলে আল্লাহ্‌ আমাকে কি শান্তি দিবা না তুমি, আর কি করলে আমি একটু শান্তি পাবো বলতে পারো, ৫ ওয়াক্ত নামায পরি তারপরও আমাকে এতো কষ্ট কেন দিচ্ছো আল্লাহ্‌, আমার কপালে কি সুখ নামের জিনিস টা নাই আল্লাহ্‌, ৬ মাস আগে আমার জীবন থেকে আমার সব থেকে প্রিয় দুইটা জিনিস কেড়ে নিছো তুমি আমি কিছুই বলি নাই আর এখনো আমার সাথে তুমি এমন খেলা খেলছো আল্লাহ্‌।
নাহ অনেক হয়েছে আর নাহ,

সাওয়ার নিয়ে মৌ বের হয় নামায পরে তারপর সারাদিন রুমেই ছিল

মৌ

হ্যা মা আসো

কিরে মা কিছু হইছে

নাহ তো মা কি হবে

লিরা বলল তোর গায়ে নাকি রঙ ছিল

হ্যা মা অফিসে কাজ চলতেছে তো তাই অসাবধানতা বশত আমার গায়ে পেইন্ট পরে গেছে তুমি কি কিছু বলবা মা

হুমম বিকেলে আমি আর লিরা একটু তোর খালার বাসায় যাবো, তুই যাবি মা

নাহ মা তোমরা যাও, আমার ভালো লাগে না

আচ্ছা

বিকেলে মৌ এর মা আর বোন চলে যায়

রাত ৯ টা

মৌ বর্ষণ কে কল দেয় কিন্তু মোবাইল অফ তখন মৌ কল দেয় বর্ষণের ড্রাইভার রহমত কে

হ্যালো রহমত ভাই

জি ম্যাডাম কিছু বলবেন

স্যার কোথায়

স্যার তো বাসায় ম্যাডাম

স্যারের মোবাইক টা অফ পেলাম

মনে হয় ঘুমায়

বাসায় কি কেউ আছে ওনার সাথে

না তো ম্যাডাম স্যার তো একাই আছেন

রহমত ভাই একটা হেল্প করবেন

বলেন ম্যাডাম

আমাকে একটু ওনার বাসায় নিয়ে যাবেন

এখন

হুম আপনি একটু আসেন আর আমাকে নিয়ে যান

কিন্তু স্যার যদি

ওই টা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না আমি মেনেজ করে নিব

কখন আসবেন

ভাই আপনি ১ ঘন্টার মধ্যে আসুন

আচ্ছা আপনি রেডি থাকেন,

আচ্ছা

আজকে মৌ সাজবে
অনেক সাজবে
আজকে মৌ লাল পরবে
লাল শাড়ী
লাল চুড়ি
লাল টিপ
সুন্দর পারফিউম
সব কিছু দিয়ে সাজবে সে
সেজেও নিলো

বর্ষণের বাসার সামনে, মৌ এর আজ কোন সংকোচ নেই

এতো বড় বাড়ি, এতো সুন্দর করে সাজানো গোছানো বাসা, মৌ দেখে উপরে একটা রুমের লাইট জলছে

মৌ ভাবে হয়তো বর্ষণ উপরে ওই রুমেই আছে। মৌ উপরে যায়, ওই রুমে যায় গিয়ে দেখে বর্ষণ সিগারেট খাচ্ছে

আসবো। (মৌ)

কেহ, (বর্ষণ)
মৌ তুমি এইখানে এই বাসায় কি করে চিনলা

ভিতরে আসতে বলবেন না

আসো,

কি করছেন

তোমাকে যা জিজ্ঞাস করলাম তার উত্তর দাও

আপনাকে সাহায্য করতে আসলাম

সাহায্য, কিসের সাহায্য

হুম সাহায্য
আমাকে ভোগ করতে চেয়েছিলেন আমি রাজি হই নি তারপর মিথ্যা ভালোবাসার নাটক করলেন, তাতেও সাড়া পান নাই, তাই তো সব জায়গায় আমাকে ছোট করেছেন, অত্যাচার করেছেন আমার উপরে তাই না, তাই ভাবলাম আজকে চলেই আসি,

মৌ তুমি এখন আসতে পারো
please go

কেন যাবো, এসেছি যাবো বলে তো নয়

মানে

মানে হচ্ছে। (দরজা লাগাতে লাগাতে)
এই বলে বর্ষণের সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ীর আচল টা বুক থেকে সরিয়ে দেয়, নিন চলে আসছি আজকে আপনার শয্যাসঙ্গিনী হতে, আসুন আপনার মনের জালা মিটিয়ে নিন, আমার দেহ বিলিয়ে দিলাম আপনাকে আমি, আসুন আর ভোগ করুন আমায়। আজ এই রাতের সাক্ষী শুধু আপনি আর আমি আর কেউ জানবেও না এই বন্ধ ঘরে আজ কি হবে। আসুন।

বর্ষণ ভ্যাবলার মতন মৌ এর দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর মৌ এর ডাকে তার হুশ আসে


পর্ব ০৯

বন্ধ রুম, মৌ আর বর্ষণ ছাড়া আর কেউ নেই বাসায়

কি হলো মিস্টার, রাত গভীর হচ্ছে, আপনার নেশাও বাড়ছে, তাহলে শুরু করা যাক। (মৌ)

are u mad, get lost। (বর্ষণ)

no, i am ok, আসুন আসুন, কাজ শুরু করুন। (মৌ)

মৌ এর শাড়ীর আচল ঠিক করে দেয় বর্ষণ আর বলে এইখান থেকে এই মুহূর্তে বের হয়ে যাও

তারপর মৌ বর্ষণের জামার কলার ধরে টানা টানি শুরু করে দেয় আর বলতে থাকে
কেন এখন কেন নয়, ভালো মানুষ সাজা হচ্ছে তাই না, এতো দিন কি করছেন বুঝি না ভাবছেন, হ্যা, আরে এই শরীর টার প্রতি তো লোভ ছিল তাই না তাহলে আজকে এতো ভালো হইলেন কিভাবে,

তারপর ঠাসসসসসসস, বর্ষণ মৌ কে মারে আর ওর চুলের মুঠি ধরে বলে চুপ একদম চুপ, অকেক্ষন যাবত বাজে বকে যাচ্ছো, একদম চুপ তা না হলে সোজা গায়েব করে দিবো, আর কি বলে যাচ্ছো তখন থেকে তোমার শরীরের প্রতি আমার লোভ ছিল, কখনোই না আরে এই মেয়ে আমি ভালোবেসেছিলাম তোমাকে বুঝতে পেরেছো ভালোবেসেছিলো।

কিন্তু বার বার বার বার তুমি আমাকে অপমান করেছো ছোট করেছো তাই আমিও তার প্রতিশোধ নিচ্ছি, got it, আর তোমার দেহের প্রতি আমার লোভ থাকলে তোমাকে আমি এতো দিন বসিয়ে রাখতাম না, কবেই নস্ট করে দিতাম তোমাকে, যাও বের হও এইখান থেকে, এই বলে ধাক্কা দিয়ে মৌ কে মেঝেতে ফেলে দেয় বর্ষণ। তারপর মৌ মেঝে থেকে উঠে বর্ষণ কে
ঠাসসসসসসস, [আল্লাহ্‌ গো কেমনে পারে এমন পিটাপিটি করতে, এই বজ্জাত গুলার গাল কি ব্যাথা করে না, হি হি হি হি ]
আর কোনদিনও আমার সামনে আসবেন না, আর কখনো যাতে আপনার মুখ টা আমায় দেখতে না হয়, আল্লাহ্‌ যেন আপনার মুখ টা দেখার আগে আমাকে মরণ দেয়

মৌ, (বর্ষণ)

এই খবরদার, আমার নাম আর কোনদিনও আপনার ওই নোংরা মুখে আনবেন না, তারপর অনেক কান্না করে মৌ, নিজেকে সামলে নিতে যায় আর তখন বর্ষণ মৌ কে ধরতে যায় আর মৌও চিৎকার দিয়ে বলে don’t touch, don’t u dare,

তারপর চলে যাওয়ার সময় বলে যায় কাল সকালে আমার resignation letter টা পেয়ে যাবেন,

এই বলে মৌ রুম থেকে বের হয়ে যায়

বর্ষণ ঘড়িতে তাকায় আর দেখে ১২৩০ বেজে গেছে, এতো রাতে ও কিভাবে বাসায় যাবে,

হ্যালো রহমত। (বর্ষণ)

জি স্যার। (রহমত)

কোথায় তুমি। (বর্ষণ)

স্যার আমি তো রুমে আসছিলাম, কেন স্যার কোন দরকার? (রহমত)

রহমত মৌ নিচে গেছে ওকে বাসায় দিয়ে আসো। (বর্ষণ)

ok, sir। (রহমত)

তারপর রহমত মৌ কে তার বাড়িতে দিয়ে আসে

পরদিন সকালবেলা,

অফিস টাইমে,

স্যার আসবো। (হাবিব)

আসো হাবিব। (বর্ষণ)

স্যার একটা কথা বলার ছিল। (হাবিব)

বল, আর কি হইছে মন খারাপ কেন। (বর্ষণ)

স্যার এই যে এই টা। (হাবিব)

কি এইটা। (বর্ষণ)

resignation letter। (হাবিব)

কার এইটা। (বর্ষণ)

স্যার মৌ ম্যাডাম দিয়ে গেছে, উনি চাকরি ছেড়ে দিছে। (হাবিব)

বর্ষণ যেন আকাশ থেকে পরলো, আর মনে মনে ভাবলো মৌ কাল রাতে যা বলেছে তাই করলো সে

রেখে দিয়ে তোমার কাজে যাও। (বর্ষণ)

জি স্যার। (হাবিব)

বর্ষণ ভাবছে, সে কি আর মৌ কে দেখতে পাবে না, কেন করলো ও এমন টা

তারপর কেটে যায় ২ মাস,

বর্ষণ আর আগের মতন নেই, অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে এখন শুধু অফিস আর বাসা, আর বাসায় মাঝে মাঝে ড্রিংক করে এই আর কি

আফজাল সাহেব দেশে চলে আসেন,

বর্ষণ আমার কেবিনে আসো। (আফজাল সাহেব)

[ওরে আল্লাহ্‌ রে খাইছে রে জমে ডাক মারছে]
জি স্যার আসছি। (বর্ষণ)
অফিসে বর্ষণ তার বাবাকে স্যার বলে

স্যার আসবো। (বর্ষণ)

হুম আসো। (আফজাল সাহেব)

জি স্যার কিছু বলবেন। (বর্ষণ)

মৌ চাকরি ছাড়লো কেন। (আফজাল সাহেব)

ওরে বাপরে খাইছে রে আমি এইবার শেষ, যদি জানে আমি এইসব কিছু করছি সোজা ত্যাজ্যপুত্র করবেন, না মানে স্যার আমি তো কিছু জানি না। (বর্ষণ)

ok,now u can go। (আফজাল সাহেব)

বাড়িতে,

বর্ষণ আসবো। (আফজাল সাহেব)

হ্যা বাবা আসো, তুমি এখন অনুমিত নিবা আমার রুমে আসার জন্য, বাবা তুমিও না। (বর্ষণ)

আফজাল সাহেব ছেলের পাশে বসে আর বলে বাবা কিছু কথা ছিল

হ্যা বাবা বল

বর্ষণ তুমি তো জানো আমার বয়স বেড়েছে, শরীর ততটাও ভালো না আর তাছাড়া আমি দেশের বাহিরে বেশির ভাগ টাইম থাকি, আর তোমারও তো বয়স হয়েছে তাই আমি চাইছিলাম,

কি ভাবছিলে, বলে ফেলো বাবা, হালকা হাসি দিয়ে

আমি চাইছিলাম এইবার তোমার বিয়ে টা দিয়েই দিবো আচ্ছা তোমার কি কাউকে পছন্দ আছে, কাউকে পছন্দ করো, থাকলে আমাকে বলতে পারো

বর্ষণ মনে মনে বলে, করতাম একজন কে কিন্তু সে হারিয়ে গেছে,

এই কথা বলছো না যে,

হ্যা বাবা, না বাবা আমার কোন পছন্দ নেই, তুমি যাকে বলবে তাকেই বিয়ে করতে আমি রাজি আছি

yes, that’s like my boy
আমি তোমার জন্য মেয়ে ঠিক করে রেখেছি
জানতে চাইবে না কে সে

জানার দরকার নেই বাবা, তোমার পছন্দই আমার পছন্দ

মেয়েটা তোমার শরীফ আংকেলের মেয়ে।
মৌ

এই কথা শুনে বর্ষণ বলে উঠে what?
কি বললা তুমি বাবা?
মৌ

হুম বাবা মৌ
মৌ খুব ভালো মেয়ে
লক্ষী একটা মেয়ে

উহুহ লক্ষী না ছাই

কিছু বললা,

নাহ বাবা

এখন বল তোমার কি মত
তুমি রাজি আছো

[মনে মনে রাজি মানে এক পায়ে খারা আমি]
হুম বাবা তুমি যা বল

ঠিক আছে আমি মৌ এর মায়ের সাথে আলাপ করব

এই বলে বাবা চলে যায়

আর এই দিকে বর্ষণ মনে মনে বলে আয় না একবার আমার বউ হয়ে, আমার থেকে ২ মাস দূরে ছিলি আর এখন সারাজীবনের জন্য আমার সাথে থাকবি।
এই ২ মাসের সব জালা আমি উসুল করে নিবো, কথা দিলাম, বিন্দু মাত্র অপূৃর্ণতা রাখবো না তোকে কাঁদানোর।


পর্ব ১০

মৌ এখন অন্য অফিসে জব করে, ভালোই আছে মৌ এখন, সব রকম কষ্ট আর অশান্তি নিয়ে ভালোই আছে মেয়েটা।

এইদিকে আফজাল সাহেব মৌ এর মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে, আর মৌ এর মাও এক কথাতেই রাজি হয়ে যান। কথা দিয়ে ফেলেন আফজাল সাহেব কে, এমন কি বিয়ের তারিখও ফেলে দেন। অথচ মৌ এই ব্যাপারে কিছুই জানে না

মৌ বিকেল বেলা বাসায় ফিরলে

কিরে মা, আসলি। (মা)

হুম মা। (মৌ)

হাত মুখ ধুয়ে আয়, খেতে দেই। (মা)

আচ্ছা। (মৌ)

খেতে খেতে, মারে একটা কথা ছিল। (মা)

একটা কেন তুমি হাজার টা কথা বল মা। (মৌ)

আচ্ছা এখন খা রাতে বলবো। (মা)

আচ্ছা। । ।

রাতের বেলায়,

মৌ এই মৌ ঘুমিয়ে গেছিস। (মা)

নাহ মা আসো। (মৌ)

কি করিস। (মা)

কাজ করতেছিলাম মা, কিছু বলবা। (মৌ)

হ্যা। (মা)

ওহ আচ্ছা বলো। (মৌ)

আ,আ,আমি তোর বি,বি,বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি। (মা)

কিহ, কি বললা মা, আরেক বার বল তো। (মৌ)

আমি তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি, আগামী মাসের ৫ তারিখ তোর বিয়ে। (মা)

wait wait মা, তুমি কার কথায় বিয়ে ঠিক করেছো, আর কার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলা, আমাকে একবারের জন্যও জিজ্ঞাস করছো তুমি মা, তুমি এইসব কি করে করতে পারলা। (মৌ)

কি করে করলাম মানে আমি তোর মা আমি সব কিছুই করতে পারি, আর কতদিন তুই এইভাবে থাকবি, বিয়ে তো করতেই হবে রে মা। (মা)

মা,প্লিজ থামো, তুমি কি ভুলে গেছো মা আজ থেকে ৮ মাস আগে কি হয়েছিলো, তারপরও তুমি কিভাবে পারলা আমার বিয়ে ঠিক করতে, আমি বিয়ে করবো না, যাদের কথা দিয়েছো মানা করে দাও, আমি বিয়ে করতে পারবো না, আমার অসহ্য লাগে এইসব, আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না মা। (মৌ)

কি বলস তুই মানা করে দিবো মানে, কথা দিয়ে ফেলছি আমি, আর ৮ মাস আগের কথা নিয়ে বসে থাকলে জীবন চলবে না, আমি মরার আগে তোদের ২ বোনকে ভালো ঘরে বিয়ে দিতে চাই। (মা)

[আচ্ছা কি হইছিলো ৮ মাস আগে, বলেও না আমগোরে একটু, বললে কি হয়, যত্তসব ]

মা, তুমি একটু চুপ করবা প্লিজ। (মৌ)

নাহ তুই যদি এই বিয়েতে অমত করিস তাহলে, তাহলে তুই আমার মরা মুখ দেখবি এই বলে দিলাম। (মা)[মা-বাপের কমন ডায়ালগ ]

মা, (মৌ)

হুম ঠিক বলছি আমি, মারে আমি তোর ভালো চাই, তাই এইখানে তোর বিয়ে ঠিক করছি, ছেলে খুব ভালো রে মা। (মা)

আচ্ছা ঠিক আছে মা তুমি যা ভালো মনে করো। (মৌ)

হ্যারে মা শুন তুই চাকরি টা ছেড়ে দে, বিয়ের পর আর কি চাকরি করবি, ওনাদের নিজেদের অনেক বড় কোম্পানি আছে তখন না হয় ওইখানেই জব করিস, একটু হেসে বললেন। (মা)

হাসছো কেন, আচ্ছা মা কাদের কথা বলেছো। (মৌ)

মারে তোর কপাল খুলেছে রে মা, তোর আফজাল আংকেল তোকে সারাজীবনের জন্য তার ঘরের লক্ষী করে নিয়ে যাবে রে মা, তার ছেলের বউ করে। তিনি নিজে এসেছিলেন আজ, তোর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে, আমি আর না করতে পারি নাই মা, তার ছেলে বর্ষণের জন্য তোকে চাইতে আসছে রে। (মা)

এই কথা শুনে মৌ এর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরে, আল্লাহ্‌ গো অবশেষে আমাকে এখন তার বউ হতে হবে এর আগে আমার মরণ হইলো না কেন, এখন আমি কি করব, মাকে তো কিছুই বলতে পারবো না কারন মা আমার অনেক খুশি, এর সাথে বিয়ে হলে এতো আমাকে জ্যান্ত কবর দিয়ে দিবে, এই কথা ভেবেই বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠে, বুক টা ফেটে কান্না আসতেছে কিন্তু মায়ের জন্য পারতেছি না। (মৌ)

তারপর আবার মৌ এর মা বলা শুরু করে,
জানিস বর্ষণের ছবি দেখলাম, ছেলেটা মাশা-আল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে আর অনেক ভালো, সেই ছোট বেলায় দেখেছিলাম, যখন ওর বয়স ৭ বছর আর তোর ছিল ২ বছর ও একদিন তোকে কোলেও নিয়েছিলো [ কয় কি আবার লেদা কালে কোলেও নিছে আল্লাহ্‌ এমন দিনও দেখতে হইবো ]
আচ্ছা মা তুই এখন ঘুমা, আমি খুব খুশি রে মা তোর জন্য। (মা)

মা চলে যাওয়ার পর,

মৌ মাটিতে বসে পরে আর ইচ্ছামত কাঁদতে থাকে আর বলে,
যার কাছ থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলাম তার সাথেই আমার জুটি বেধে দিলা আল্লাহ্‌, আমি এখন কি করবো, আমি যে অসহায় হয়ে গেলাম আল্লাহ, আর পারছি না আমি।

দেখতে দেখতে ১০ দিন কেটে যায়,

আর বিয়ে টাও হয়ে যায়,

বিদায়ের সময় মৌ পাগলের মতন কান্না করে ওর মাকে ধরে, ওর কষ্ট হচ্ছিলো মা আর বোনকে ছেড়ে যেতে, ওর কান্না দেখে বর্ষণ নিজেকে ঠিক রাখতে পারে নাই, তারও চোখের কোণে পানি চলে আসছে, অনেক কষ্টে আফজাল সাহেব বুঝিয়ে শুনিয়ে গাড়ির কাছে আনে আর তখন মৌ মা বলে চিৎকার দিয়ে কান্না করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, বর্ষন পাশে ছিল তার জন্যই ও ধরে ফেলে মৌ কে, পরে গাড়িতে উঠিয়ে নেয় ওকে।

গাড়ি যখন বাড়ির সামনে তখন মৌ এর জ্ঞান ফিরে, পরে মৌ কে কয়েকজন ধরে নামিয়ে নেয় আর ঘরে নিয়ে যায়,

মৌ এর এই শাড়ী গহনা এই সাজ-সজ্জা কিছুই ভালো লাগে না, তাই সে সব খুলে ফেলে, নরমাল একটা শাড়ী পরে, ওযু করে নামাযে দাড়ায়, এমন সময় বর্ষণ রুমে ঢুকে আর দেখে মৌ নামায পরতেছে, তারপর সে সোফায় বসে বসে ফেসবুকিং করতে থাকে

এই দিকে মৌ এর নামাযে সালাম ফিরায়। মৌ আজ আল্লাহ্‌র কাছে দুই হাত তুলে অনেক দোয়া করে, কান্নাও করে, বর্ষণ অবশ্য খেয়াল করে নি, নামায শেষ করে সব ঠিক করতে থাকে, কেউ কারো সাথে কোন কথা বলে না,

তারপর মৌ খাটের দিকে যাবে ঠিক এই সময় বর্ষণ বলে উঠে, wait মিসেস মৌ, এই বলে বর্ষণ মৌ এর কাছে যায় তারপর খাটে থাকা সমস্ত ফুল ছিড়ে মৌ এর দিকে ছুড়ে মারে, তারপর বর্ষণ বলে আমার আবার ফুলের ঘ্রানে ঘুম আসে না, মৌ ভাবে,
মৌ সবে মাত্র শুরু, শক্ত হো মৌ শক্ত হো, এই লোক টা তার প্রতিশোধ গুলা গুনে গুনে নিবে, তোকে সইতে হবে, আর কারো জন্য না হোক তোর মায়ের জন্য তোকে সইতে হবে রে মৌ।

মৌ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ঠিক আছে আপনি সরেন আমি বিছানা গুছিয়ে দিচ্ছি, এই বলে মৌ পুরো বিছানা থেকে সব ফুল ফেলে দেয় আর পুরো ঘর টাকে পরিস্কার করে দেয়।

তারপর, দুইজন দুই দিকে ফিরে শুয়ে পরে, মৌ এর চোখে আজ অঝোরে পানি ঝরছে, আর মনে মনে বলছে আমি জানতাম আমার জীবন এমনই হবে, আল্লাহ্‌ আমাকে শক্তি দাও, আমি যেন তার দেয়া সমস্ত কষ্ট গুলা সহ্য করতে পারি। আল্লাহ্‌ আমার মা আর বোন টা যাতে ভালো থাকে।

আর এই পাশে বর্ষণ বেশ বুঝতে পারছে যে মৌ কাঁদছে, কাঁদো মৌ কাঁদো। আরো কাঁদতে হবে তোমায়। আমার প্রতিশোধ টুকু আমি নিয়েই তোমাকে মুক্ত করে দিবো।

কাল থেকে দেখবে এক নতুন বর্ষণ কে, কাল থেকে তোমাকে সিডিউল অনুযায়ী অত্যাচার সহ্য করতে হবে, কষ্ট সহ্য করতে হবে, যে অপমান তুমি আমাকে করেছো, প্রতিটা অপমানের কথা মনে করিয়ে দিবো কথা দিলাম। যেই থাপ্পড় আমাকে মেরেছো তার থেকে হাজার গুন আঘাত তুমি আমার কাছ থেকে পাবে আশা করি।

মৌ বেচারি টা মনে হয় কষ্ট নিয়েই পৃথিবী তে আসছে। কথায় আছে না অভাগী যেই দিকে যায় সাগরও নাকি শুকিয়ে যায়।


পর্ব ১১

পরদিন সকালে,

মৌ ঘুম থেকে উঠে নামায পড়ে, তারপর বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে থাকে, ভোর দেখা টা মৌ এর অভ্যাস তাই সে আজো ভোর হওয়া দেখবে। তারপর সে নিচে যায় নাস্তা বানানোর জন্য রান্না ঘরে যায় আর এর মধ্যে ময়নাও চলে আসে

এই ময়না টা কে?

ময়না হচ্ছে এই বাড়িতে কাজ করে, মেয়ে টা খুব ভালো, ময়নার মা আগে এই বাসায় কাজ করত। আফজাল সাহেব ময়নার মাকে খুব শ্রদ্ধা করতেন মহিলা টাও বেশ ভালো ছিল। তিনি মারা যাওয়ার পর ময়না আসে রোজ এই বাসায় কাজ করে দিয়ে যায়।

আফজাল সাহেবও ময়না কে বেশ আদর করেন আর বর্ষণ ও ময়না কে ছোট বোনের মতন দেখে। ময়নার হাজবেন্ড বর্ষণের অফিসের ক্যান্টিনে কাজ করে। ময়নারা এই বাড়ির সার্ভিস কোয়াটারে থাকে।

আরে ভাবি আন্নে কিতা করেন। (ময়না)

কেন নাস্তা বানাবো, তুমি কে? (মৌ)

হায় হায় হেতি কয় কি আমারে বলে চিনে না, আমি ময়না বুঝলেন ময়না, ওহ অবশ্য চিনবেন কেমনে, কাইল তো আমনে যেই মিলে ঘুইরা ফরলেন পরে কি আর হুশ আছিলো নি। (ময়না)

ময়নার কথা শুনে হেসে দেয় মৌ
তুমি খুব মজা নিয়ে কথা বল। (মৌ)

হো হইছে হইছে, এহন কন এনো কিল্লাই আইছেন, রানতেন আইছেন কেন? (ময়না)

হুম। (মৌ)

কিল্লাই গো ভাবি এই ময়নায় কি মইরা গেছে যে আন্নে রানবেন। (ময়না)

আরে ময়না আমি রান্না পারি আর আমার ভালো লাগে রান্না করতে, ভাবছিলাম আজকের নাস্তা টা আমি বানাই। (মৌ)

ওহ আইচ্ছা তাইলে বানাইতে থাকেন আইজ্জা আমি খামু। (ময়না)

আচ্ছা খেও। (মৌ)

সকাল ৯ টা সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে, আজকে অনেক সুন্দর সুন্দর নাস্তা বানানো হয়েছে, আফজাল সাহেব অনেক খুশি এই সব দেখে।

হ্যা রে ময়না তোর মাথায় বুদ্ধি হলো তাহলে আমাদের এতো দিন পর এত ভালো ভালো নাস্তা দিলি। (আফজাল সাহেব)

এহহ কেমনে কয় মনে হয় খারাপ খাওন খাওয়াই আমি হেগোরে আমি রান্দি না আইজ্জা ভাবি রানছে। (ময়না)

তাই নাকি তাহলে তো খেয়ে দেখতে হয় আমার মা আমার জন্য কি কি রান্না করেছে। (আফজাল সাহেব)

হ হ খান খাইতে থায়েন পরে আর কইবেন নি ময়না চা নিয়া আয়, কচু ডা দিমু চা বানাইয়া। (ময়না)
[ ও মা গো কাজের মেয়ের এতো ধাপ, আল্লাহ্‌ কই আছি আমি ]

এই ময়না তোকে না কত বলি একটু সুন্দর করে কথা বল এই গুলা কি কথা বলিস তুই, দাড়া তুই, তোর জামাইকে আজকে বলব যে তোকে সায়েস্তা করার জন্য। (বর্ষণ)

এহহ হেয় বলে করবো সায়েস্তা তাও আবার আমারে, হেয় তো এক নাম্বারের সিদা হি হি। (ময়না)

ময়নার কথা শুনে বাবা-ছেলে হাসে আর নাস্তা খায়, আর মৌ সেইখানেই চেয়ারে বসে থাকে, কিন্তু একবারের জন্যেও বর্ষণ মৌ এর দিকে তাকায় নি

নাস্তা খাওয়ার পরে,

মারে এইদিকে আয় তো। (আফজাল সাহেব)

জি আংকেল। (মৌ)

এহ আংকেল, আমাকে আর আংকেল ডাকবি না বাবা ডাকবি। (আফজাল সাহেব)

ঠিক আছে বাবা। (মৌ)

এই নে মা তোর উপহার। (আফজাল সাহেব)

হাতে নিয়ে কি এইটা বাবা? (মৌ)

বউ প্রথম রান্না করছে তাকে উপহার দিতে হয়।, এই গুলা তোর শাশুড়ীর বালা তুই সব সময় পরে থাকবি। (আফজাল সাহেব)

আচ্ছা, চোখের পানি ফেলে। (মৌ)

কিরে গাধা শুধু খেয়েই যাচ্ছিস, কিছু বল কেমন হয়েছে আর ওকে কিছু দে। (আফজাল সাহেব)

ভালো হয়েছে আর ওর উপহার ওর রুমে দিবো বাবা। (বর্ষণ)

এই কথা শুনে মৌ এর ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠে, রুমে গেলে হয়তো কিছু করবে আর তাকে সহ্য করতে হবে

আচ্ছা আমি অফিসে যাচ্ছি তুই আর আজকে যাস না বাড়িতেই থাক। (আফজাল সাহেব)

আচ্ছা, thanks বাবা, আমার প্রতিশোধ এর জন্য সুযোগ করে দেয়ার জন্য(মনে মনে)

আফজাল সাহেব অফিসে চলে যায় আর মৌ আর ময়না মিলে সব গুছায় আর এই দিকে বর্ষণ ও রুমে চলে যায়।

মৌ রুমে যায় দেখে তার বর ল্যাপটপ এ কাজ করে, মৌ কে দেখে বর্ষণ বলে এক মিনিট দাড়াও

মৌ দাড়িয়ে পরে,

বর্ষণ মৌ এর কাছে যায়, এতো টাই কাছে চলে যায়, মৌ পিছনে যেতে যেতে দেয়ালের সাথে আটকে যায়, আর বর্ষণ রোমান্টিক ভাবে মৌ এর দিকে তাকায়, মৌ একবার তার বরের দিকে তাকিয়ে আবার নিচে তাকায়, আর তারপর বর্ষণ মৌ এর হাত টা শক্ত করে ধরে, এতো টাই শক্ত করে ধরে যে মৌ এর হাত এর চুড়ি ভেঙে গিয়ে হাত কেটে রক্ত পরা শুরু হয়ে যায়।

আর তখনো বর্ষণ মৌ এর দিকে তাকিয়ে থাকে। (মৌ মনে মনে বলে শক্ত হো মৌ, সহ্য কর, এই ব্যাথায় কাঁদলে হবে না) মৌ দেয়ালের সাথে লেপ্টে দাড়িয়ে আছে, তার মুখে একটু উহ আহ শব্দ নেই, সে শুধু তার বরের দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে তার।

তারপর বর্ষণ তার হাত ছেড়ে দেয়, মৌ তখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, তখন বর্ষণ বলে, বাবা বলেছিলো উপহার দিতে এই টা হলো উপহার এর থেকে ভালো উপহার আর পেলাম না, আর ইউ হ্যাপি?

মৌ মাথা নিচু করে চলে যায়।

মৌ রান্না ঘরে গিয়ে ময়নার সাথে রান্না করতে থাকে। দুপুরে রান্না শেষ করে মৌ রুমে গেছে, গিয়ে দেখে রুম টা পুরা এলো মেলো করা, দেখেই বুঝা যাচ্ছে কেউ ইচ্ছা করে সব জিনিসপত্র আর জামা কাপড় এর এমন অবস্থা করে রাখছে, মৌ বুঝে গেছে যে এইটা তার বরের কাজ, সে ইচ্ছা করেই এমন করে গেছে, একজনকে কত প্রকারে জালানো যায় আর কি।

বেচারি মৌ পুরা রুম সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে, আর তারপর গোসলে যায়, এর মাঝেই বর্ষণ চলে আসে রুমে, দেখে রুম টা খুব সুন্দর করে গুছানো।

এর মধ্যে মৌ বাথরুম থেকে বের হয়ে আসে, মৌ কে দেখে বর্ষণ তো পুরাই টাস্কি খায়, কি সুন্দর লাগছে তার বউকে, চোখ গুলা লাল হয়ে আছে, মৌ এমনিতে সুন্দর, তাই তাকে লাল বর্ণের লাগছে, সব মিলিয়ে দারুন লাগছে তার বউকে, কিন্তু সে কিছুই করতে পারবে না, তারপর দেখলো মৌ নামায পড়তেছে।

নামায পড়ে মৌ আফজাল সাহেব কে কল দেয়

হ্যালো বাবা খেতে আসবেন না। (মৌ)

নারে মা, তোরা খেয়ে নে আমি মিটিং এ আছি। (আফজাল সাহেব)

আচ্ছা। (মৌ)

তারপর মৌ বর্ষণের কাছে গিয়ে বলে,

বাবা আসবে না, আমি কি খাবার দিবো, আপনি কি এখন খাবেন? (মৌ)

হুম খাবো তো। (খাবার টেবিলে নেক্সট প্ল্যান)। (বর্ষণ)

মৌ নিচে গিয়ে সব খাবার, সার্ভ করে দেয়, বর্ষণ আসে খেতে।

আমি তো সুপ খাই আমার সুপ কোথায়। (বর্ষণ)

আপনি এখন খাবেন সুপ, আমি করে আনবো? (মৌ)

হুম যাও। (বর্ষণ)
[হারামি লাংচ টাইমে সুপ খায় না, এইটা তো ইচ্ছা করে বলছে মৌ কে আর মৌ বেচারি ভাবছে হয়তো সত্যি সে লাংচ টাইমে সুপ খায়, আল্লাহ মালুম এই সুপ নিয়ে সে কি করে, অসভ্য পোলা একটা ]

মৌ চট জলদি বর্ষণের জন্য সুপ করে নিয়ে আসে,
তারপর বর্ষণকে দেয়,

বর্ষণ সুযোগ বুঝে পুরো এক বাটি টাটকা গরম সুপ মৌ এর হাতের উপর ফেলে দেয়, আর মৌ সাথে সাথে চিৎকার করে উঠে

oppss I am sorry., হাতের ধাক্কা লেগে পরে গেলো,

আর মৌ চুপ করে কান্না করতে করতে চলে গেলো রুমে

রুমে এসে অনেক্ষন কান্না করে, আমাকে সহ্য করতে হবে, এই সব আমাকে সহ্য করতে হবে, আমিও দেখি সে আমায় আর কি কি উপায়ে অত্যাচার করে, আর কতটা নিচে নামতে পারে, পরে না খেয়েই ঘুমিয়ে যায় মৌ।
বর্ষণও আর কিছু খেলো না। আসলে সে প্রতিশোধে অন্ধ হয়ে গেছে তাই সে বুঝতে পারছে না সে কি করছে মৌ এর সাথে। সেও রুমে চলে যায়, গিয়ে দেখে মৌ পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে।

তারপর ঘুরে মৌ এর দিকে যায়।, গিয়ে দেখে মৌ এর চোখ বেয়ে পানি পরছে আর পুরা মুখ টা লাল হয়ে আছে। তারপর বর্ষণ মৌ এর হাতের দিকে তাকায়, দেখে হাত টা পুরা ফোস্কার মতন ফুলে গেছে, বর্ষণ ড্রয়ার থেকে একটা মলম এনে মৌ এর হাতে লাগিয়ে দেয়। তারপর সে চলে যায় বাহিরে।


পর্ব ১২

বর্ষণ বাহিরে ছিল, আর মৌ বাসায়

অনেক রাতে বর্ষণ বাসায় ফিরে, রুমে এসে দেখে মৌ ঘুমাচ্ছে তাই সে আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে রুমে হাটা চলা করে। পরে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় আর ভাবে মৌ এতো চুপ-চাপ হয়ে গেলো, আগে তো কিছু বললে হয় ঠাসসসসসসস করে চড় মারত আর না হয় অনেক কথা শুনাত, এখন এতো চুপ-চাপ হয়ে গেছে, ব্যাপার কি।

২ দিন পর,

খাবার টেবিলে

বর্ষণ আমি আজকে রাতের ফ্লাইটে ইংল্যান্ড চলে যাচ্ছি ৬ মাসের জন্য। (আফজাল সাহেব)

হঠাৎ, বাবা কোন সমস্যা হয়েছে নাকি ওইখানে, আমাকে কি যেতে হবে। (বর্ষণ)

নাহ রে বোকা, ওইখানে একটা সাইট আছে যেই টা আমাকেই দেখা লাগবে, আর হ্যা বউমাকে দেখে রাখিস, কেমন? (আফজাল সাহেব)

কথা বলে নাই এই ব্যাপারে বর্ষণ,

মৌ মা এইদিকে আয় তো। (আফজাল সাহেব)

জি বাবা কিছু বলবেন। (মৌ)

হুম এই টা রাখ। (আফজাল সাহেব)

এইটা কি বাবা। (মৌ)

এইখানে চাবি আছে আর লকারের চাবি আছে আজ থেকে এই সব তোর, এখন থেকে তুই সব দেখে রাখবি বুঝলি রে মা। (আফজাল সাহেব)

কিন্তু বাবা। (মৌ)

কোন কিন্তু না এই সব তোর এখন থেকে এই সব কিছুর মালকিন তুই। (আফজাল সাহেব)

মৌ আর কিছু বলে নাই কিন্তু মনে মনে বলে এই সব কিছুই আমার না

রাতে আফজাল সাহেব বিদায় নিয়ে চলে যায়, বাড়ি টাও খালি হয়ে যায়, আর মৌ ও একা, ময়না যতক্ষন থাকে তখন ভালোই থাকে মৌ।

এই কয়েকদিনে বর্ষণ আর কোন অঘটন ঘটায় নাই

তারপর আবার তার মাথায় ভুত চাপলো, সে ভাবে বাবা তো বাসায় নাই এখন যা ইচ্ছা করা যাবে মৌ এর সাথে [শালা psycho]

একদিন অফিসে,

may i come baby

দরজায় তাকিয়ে বর্ষণ হাসি দেয় আর বলে yes come baby

i miss u so much darling

i miss u too darling। (বর্ষণ)

[এই ঘাটের মরা টা কেডা আবার, আগুনের মধ্যে ঘি হয়ে আসছে ]

তুর্না তুমি কবে এসেছো

কাল এলাম, আর আজ তোমার কাছে চলে এলাম,

good, খুব ভালো করেছো,

[ওহ এই ঘাটের মরায় আইছে, এই টা একটা বেয়াদব মাইয়া, দেশের বাহিরে এই মাইয়া আর এই ছেমড়া এক সাথে পড়া লেখা করছে ]

আচ্ছা বাসায় চলো আমার। (বর্ষণ)

নাহ আজ আর যাচ্ছি না। (তুর্না)

তুর্না কে দেখে বর্ষণের মাথায় তার নেক্সট প্ল্যান চলে এসেছে [আচ্ছা এই পোলায় কি প্ল্যানিং এর কারখানা নাকি এতো বদমাইসসা প্ল্যান আসে কেমনে এর মাথায়, বদ পোলা, বজ্জাত পোলা, জালিম পোলা, ]

ঠিক আছে তুর্না তাহলে কাল চলে আসো আমার বাসায় আমি অপেক্ষা করবো। (বর্ষণ)

Ok যাওয়া যেতেই পারে, done। (তুর্না)

বর্ষণ বাসায় এসে প্রথমে ময়না কে ছুটি দেয় যাতে সে কাল না আসে এই বাসায় কারন সে জানে তার বাবা ময়না কে তার পিছে লাগিয়ে রাখছে, উনি এইখানের সব খবর ময়নার কাছ থেকে নেন

তারপর মৌ কে বলে, কাল আমার এক ফ্রেন্ড আসবে বাসায়, লাঞ্চ করবে এই বাসায়, সো তুমি সব রান্না করবে ok

আচ্ছা, কি কি রান্না হবে বলেন। (মৌ)

তোমার মন মতন তবে রান্না ভালো হতে হবে ok। (বর্ষণ)

আচ্ছা। (মৌ)

পরদিন সকাল থেকে মৌ সব রান্না করার কাজে লেগে রইলো

ঘড়িতে যখন দুপুর ১২ টা বাজে তখন তুর্না বাসায় আসে, তুর্না কে দেখে অবাক মৌ, ওহ তার মানে ওনার gf আসবে, বুঝতেই পারি নাই, মৌ তুই আবার ঠকে গেছিস রে।

বর্ষণ ইচ্ছা করেই মৌ এর সামনে তুর্না কে জড়িয়ে ধরলো, তারপর আদরে গদ গদ হয়ে বলল এখন এলে সেই কখন থেকে বসে ছিলাম

তুর্না একটা কিস করে বলল sorry darling

মৌ এইসব দেখতে পারছিল না তবুও তাকে দেখতে হচ্ছে। বর্ষণ আড়চোখে দেখছিল মৌ কে।

তারপর তারা প্রায় ২ ঘন্টা বসে গল্প করলো মৌ এর সামনেই, কথা বলার সময় তুর্না বার বার বর্ষণকে কিস করছিল,

তারপর তারা খেতে বসলো, তখন মৌ নিজেই তাদের সার্ভ করে দিচ্ছিলো তখন তুর্না বলল বর্ষণ who is she?

তখন বর্ষণ উত্তর দেয় সে আমাদের বাসায় কাজ করে, অনেক পুরানো লোক, তাই বাবা ওকে এই বাসায় রেখেছে

ওহ আচ্ছা তাই তো বলি কাজের মেয়ের এতো ভালো পোশাক, সত্যি আংকেল খুব ভালো সাথে তুমিও খুব ভালো my jaan .(তুর্না)

বাহ বাহ মিস্টার বর্ষণ এখন gf এর সামনে নিজের বউকে কাজের মেয়ে বলেন, সত্যি আপনি অসাধারন একজন মানুষ, আল্লাহ্‌ শক্তি দাও আমাকে অনেক শক্তি দাও আল্লাহ্‌ যাতে এই সব সহ্য করতে পারি। (মৌ)

মৌ চাইলেই সব সত্যি টা বলে দিতে পারতো, কিন্তু সে চায় নি কোন সিন-ক্রিয়েট হোক তাই সে চুপ করেই আছে।

খাবার শেষ করে, তারা ড্রইং রুমে বসে cold-drinks খাচ্ছিলো, হঠাৎ ইচ্ছা করেই বর্ষণ তুর্নার কাছে যায় আর তুর্নার চোখ এড়িয়ে ওর গ্লাসের cold-drinks টা তুর্নার পায়ে ঢেলে দেয়

omg, দেখেছো জান কি হলো, এতো দামি জুতো গুলোর মধ্যে এই গুলা পরে গেলো,

no tenson আমি দেখছি কি করা যায়, এই বলে মৌ কে ডাক দেয়, hey u, come here, fast

মৌ তখন আসে আর বর্ষণ বলে ওর জুতো গুলো মুছে দাও, এই টা শুনে মৌ বর্ষণের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দেয়, পরে নিচে বসে তুর্নার জুতো মুছে দেয়, তারপর তুর্না আর বর্ষণ বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় আর মৌ দৌড়ে উপরে চলে যায়, আর অনেক জোড়ে জোড়ে কান্না করে। আজ পুরা বাড়ি খালি, তাই সে আজ অনেক কান্না করে, এতো টাই কান্না করে যে ফ্লোর থেকে উঠার শক্তি টাও ওর মধ্যে নাই,

প্রায় ১ ঘন্টা পর সে সাভাবিক হয় তারপর উঠে বিছানায় নিজের শরীর টা লাগিয়ে দেয়। খুব ক্লান্ত সে তাই ঘুমিয়ে যায়।

যখন ঘুম ভাঙে তখন ঘড়িতে ১১৩০ বাজে, ওরে বাবা আমি এতোক্ষন ঘুমাইলাম, পরে পাশে তাকিয়ে দেখে বর্ষণ ঘুমিয়ে আছে। পরে মৌ আস্তে করে উঠে গিয়ে বারান্দায় রকিং চেয়ারে বসে পরে, তারপর ভাবে বিয়ের এতো দিন হয়ে গেছে কিন্তু বর্ষণ তার গায়ে একটা দিনও টাচ করে নি, সে তো চাইলেই সব অধিকার ফলাতে পারতো। কিন্তু সে তো এমন কিছুই করে নাই। তাহলে সে আমাকে বিয়ে করলো কেন শুধু মাত্র আমার উপরে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। । এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চেয়ারে ঘুমিয়ে পরে সে নিজেও জানে না

ঘুম যখন ভাঙে তখন ঘড়িতে ৯ টা বাজে, তারাতারি করে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায় দেখে বর্ষণ চলে গেছে অফিসে আর ময়না কাজ করছে কিচেনে।

তাই সে আবার রুমে চলে যায়

দুপুর ১ টায় কল দেয় বর্ষণ মৌ কে

হ্যালো। (মৌ)

হ্যালো। (বর্ষণ)

জি কিছু বলবেন। (মৌ)

আজ-কাল ভালোই তো ঘুমাও
যখন বাসায় আসি তখনই দেখি ঘুমাও। (বর্ষণ)

আচ্ছা আর ঘুমাবো না বলেন কিছু বলবেন

kindly একটু অফিসে আসতে পারবা,

কেনো কোন সম্যা হয়েছে নাকি

হুম

কি হয়েছে

তুমি থাকা-কালিন সময় জাহান ইন্ডাস্ট্রিয়ালস দের সাথে একটা ডিল হয়েও হয় নি, মনে আছে?

হুম আছে, এখন

ওনারা আমাদের সাথে মিটিং এ বসতে চাইছেন, লাঞ্চ এর পরে টাইম দিলেন

তো আমি কি করতে পারি, আপনি মালিক, আপনি মিটিং করেন

তা সম্ভব নয়

মানে

মানে বাবা যাওয়ার আগে তোমাকে এই কোম্পানির 51% share আর আমাকে 49% share এর মালিক করে দিয়ে গেছেন, তাই তুমিই এখন এই সৌরভী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালকিন,

[একদম ভালো কাজ টাই করছেন আফজাল সাহেব এখন কেমন লাগে বর্ষণ ফাযিল। (ওহ বলে রাখি সৌরভী বর্ষণের মায়ের নাম মানে আফজাল সাহেবের স্ত্রী। ওনার নামেই এই কোম্পানির নাম) ]

আমি তো এই সবের কিছুই জানি না

আমিও জানতাম না কিছুক্ষন আগেই জেনেছি

এখন দয়া করে একটু আসবেন ম্যাডাম ,

ok আসছি, এই ডিল টা এই কোম্পানির জন্য খুব দরকার,

মৌ রেডি হয়ে অফিসে যায়, আজ অনেক দিন পর সে অফিসে পা দেয়, কেমন জানি লাগছে তার কাছে, অফিসে যাওয়ার পর সবাই মৌ কে ম্যাডাম বলে ডাকতে থাকে।
তারপর মৌ সবার সাথে দেখা করে আর পরে মিটিং এ যায়।

মিটিং রুমে ভালো ভাবেই সব হয়ে যায়, ডিল টাও তারা পায়, বর্ষণ খুব খুশি, মিটিং শেষ হলে মৌ আবার বাড়ি চলে যায়।

বর্ষণ ভেবেছিল সে মৌ কে thanks দিবে, কিন্তু মৌ তো বাসায় চলে গেলো।


পর্ব ১৩

সেইদিন বর্ষণ ভেবেছিল তারাতারি বাসায় যাবে। অফিসের কেবিনে বসে বসে ভাবছে আমি কেন মৌ এর সাথে এমন করছি, ওকে তো আমি ভালবাসি তাহলে কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছি আমি, আর মৌ সব সহ্য করছে কেন?

কেন ও আমার অত্যাচারের প্রতিবাদ করছে না? কেনই বা ও আমার বাবার কাছে কিছুই বলছে না? উফফ আমি পাগল হয়ে যাবো এইভাবে। নাহ আর ভালো লাগছে না আমার, অনেক হয়েছে আজই এর শেষ করে ছাড়ব,

কিন্তু অফিসের কাজের চাপে আজকে একটু দেরি হয়ে গেছে। অফিস থেকে বের হবে এমন টাইমে রুবেল সহ মানে বর্ষণের ফ্রেন্ডস রা সবাই আসে বর্ষণ কে নিতে। ওরা ক্লাবে যাবে তাই বর্ষণ কেও নিতে আসছে। কিন্তু বর্ষণ যেতে চায় নাই তারপরও জোড় করে করে নিয়ে গেছে।

রাত যত বাড়ছে এইদিকে মৌ তত টেনশন করছে। এতক্ষন তো লাগার কথা না অফিসে থেকে আসতে, কোথায় গেছে লোক টা, আসলে বর্ষণের সাথে থাকতে থাকতে মৌয়ের ও বর্ষণকে ভালো লাগতে শুরু করে তবে অল্প পরিমানে কারন মৌ এই সব ভালোবাসা কে ঘৃণা করে।

রাত প্রায় ২ টা নাগাদ বর্ষণ বাসায় ফিরে, তখন মৌ বুঝতে পারে যে বর্ষণ ড্রাংক, বর্ষণ বিছানায় শুয়ে পরে আর তখন মৌ গিয়ে তাকে জিজ্ঞাস করে, আপনি খাবেন না? এতো রাত করে এলেন আজ কে?

এই এই প্যান প্যান করবা না আমার সাথে, সরো। (বর্ষণ)

না মানে খেয়ে নিতেন, না খেলে তো শরীর খারাপ হবে। (মৌ)

ওই তুমি কি যাইবা এইখান থেকে, অফিসের মালিক বলে কি ঘরেরও মালিক নাকি তুমি। (বর্ষণ)

নাহ, আপনি আসেন খেয়ে নেন, আমারো ক্ষুধা লাগছে আমিও কিছু খাই নাই আপনি খেলে ভাবলাম পরে খাবো, আসেন খাইতে আসেন। (মৌ)

তাই না, খাও নাই, আমার পরে খাবা, দাড়াও খাওয়াইতেছি তোমাকে বলে শোয়া থেকে উঠে একটা কষে চড় মারলো সে, একদম ভনিতা করবা না Ok, তোমাকে আমি চিনি আমার বাবাকে পটিয়ে সব সম্পত্তি হাতিয়ে নিছো আর এখন নাটক করা হচ্ছে এই বলে সে মৌ এর দিকে তেড়ে গিয়ে মৌ এর গলা টিপে ধরে আর বলে একদম মেরে ফেলবো, বুঝলা নাটক করবা না

মৌ পুরা থ হয়ে থাকে, বর্ষণ কি বলেছে,

কিন্তু বর্ষণ যা করলো, তার কিছুই মনে নাই, কারন সে নেশার মধ্যে ছিল, তার বন্ধুরা তাকে জোর করে ড্রিংক করায় আর এমনিতেও বর্ষণ ড্রিংক করলে নিজের মধ্যে থাকে না, তাই সে কিছুই বুঝে নাই

সকালবেলা,

ঘুম থেকে উঠে বর্ষণ মাথায় হাত দিয়ে মাথা চেপে বসে থাকে, তার মাথা ফেটে যাবে মনে হয়, পরক্ষনে সে বুঝতে পারে যে সে কাল রাতে ড্রিংক করেছে

oh god, কাল কেমন করে বাসায় আসলাম আর মৌ কি ভাবলো আমাকে, আমি ওর সাথে খারাপ কিছু করি নাই তো নাহ গায়ের কাপর তো ঠিকই আছে, oh god মাথা তুলতেই পারছি না। ( বর্ষণ)

পরক্ষনেই সে টেবিলে দেখে লেবু-পানি রাখা আছে, তখন সে বুঝে যে এই কাজ মৌ এর কিন্তু এখন কিভাবে ওর সামনে দাঁড়াব ও কি ভাববে আমায়,

লেবু-পানি খেয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নেয় তারপর উঠে ওয়াসরুমে যায় বর্ষণ

বর্ষণ রেডি হয়ে নিচে যায় দেখে মৌ কিচেনে আছে, আজকে ময়না টেবিলে খাবার দিচ্ছে

বর্ষণকে দেখে ময়না বলে, ওই তো ভাইয়ায় আইছে

ভাবি ভাইয়ে আইছে তো খাবার কি দিয়া দিমু। (ময়না)

হুম দিয়ে দাও। ( মৌ)

বর্ষণ মনে মনে ভাবে, কি ব্যাপার, কি হলো আজকে, ময়না কে দিয়ে নাস্তা দেওয়াচ্ছে, নিজে একেবারের জন্যও আসলো না কেন? (বর্ষণ)

এই নেন ভাইয়া সব আছে খান। (ময়না)

নাস্তা সেড়ে বর্ষণ রুমে যায় তারপর সব গুছিয়ে নিতে যায় ঠিক সেই সময় মৌ রুমে আসে, বর্ষণ মৌ এর দিকে তাকায় তখন দেখে মৌ ওড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা দেয়া, মৌ শুধু নামায পড়তে গেলে মাথায় ওড়না ব্যবহার করে, গালটা এইভাবে ঢাকা কেন বুঝতে পারলাম না।
Oh my god কাল কিছু করি নাই তো, এখন কিভাবে জিজ্ঞাস করি ওকে, যাই হোক এতো ভেবে কাজ নেই আমার

বর্ষণ বের হয়ে যায় আর তার পর পর মৌ ও বাসা থেকে বের হয়ে যায়, প্রায় ৪ ৫ ঘন্টা পর বাসায় আসে।

ইদানীং মৌ যেন কোথায় যায় কাউকে কিছু বলে না কোথায় যাচ্ছে কি করছে কিছুই জানে না বর্ষণ,

একদিন দুপুরেই বর্ষণ বাসায় ফিরে আসে তখন বাসায় এসে দেখে মৌ বাসায় নেই, ময়না কে জিজ্ঞাস করাতে ময়না বলে ভাবি কই জানি যায় প্রতিদিন, আপনে বের হইলেই ভাবি বাইর হয় আবার আপনে আওনের আগেই ভাবি আইয়া পরে। ময়নার কথা শুনে বর্ষণের মাথায় ঝিম ধরে যায়। । সেইদিনও মৌ এর আসতে লেট হয়ে যায়। কিন্তু সেইদিন বর্ষণ মৌ কে কিছু বলে নাই,

রাতে মৌ ঘুমালে মৌ এর ফোন নিয়ে সে অনেক ঘাটাঘাটি করে কিন্তু কিছুই পায় না, সে পরে ফেসবুকে যায় মৌ এর। মৌ এর মোবাইলে মৌ এর আইডি সব সময় লগ ইন করা থাকে তবে মৌ খুব একটা যায় না ফেসবুকে।

তারপর মৌ এর কাছে যায়।, গিয়ে দেখে মৌ ঘুমে ব্যাকুল, মৌ এর মুখের উপরে কিছু চুল এসে পরেছে আর বর্ষণ মৌ এর মুখের চুল গুলা সরাতে যায় আর তখনই দেখে মৌ এর গালে ৪ টা লম্বা লম্বা ছোপ ছোপ দাগ, বর্ষণের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে ওইদিন কেন মৌ ওড়না দিয়ে গাল টা ঢেকে রাখছে, তার মানে ওইদিন রাতে আমি মৌ কে মেরেছিলাম, ছিঃ ছিঃ আমি এতো খারাপ, নিজের ওপরে তো এখন আমার ঘৃণা হচ্ছে, আর এই মেয়েটা সব সহ্য করে এখানে পরে আছে, কেন?

তাহলে কি ও আর আমার সাথে থাকতে চায় না, ওর কি আরেকজনের সাথে রিলেশন আছে, ও কি কারো সাথে দেখা করতে যায় প্রতিদিন। নাহ নাহ আমি কি ভাবছি এই সব। ।

তারপর দিন অফিসে বসে বর্ষণ ভাবে সে আর মৌকে কষ্ট দিবে না সে, মৌ কে ভালোবাসার কথা বলবে, সে মৌ কে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে, সে আর পারছে না, এই বলে বর্ষণ অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় চলে যায়, বাসায় গিয়ে দেখে একই পরিস্থিতি, মৌ বাসায় নেই, মৌ কখন বাহিরে গেছে জানতে চাইলে দারোয়ান চাচা বলে বউমনি তো সেই সকালে বের হইছে এখনো আসে নাই, আপনি বের হওয়ার পর পরই বউমনি বের হয়ে গেছে।

এই কথা শুনে বর্ষণ পুরা পাগল হয়ে যায়, সে রুমে গিয়ে সব ভেঙে ফেলে,
তখনই মৌ বাসায় আসে, আর মৌ কে দেখে বর্ষণের রাগ চরমে উঠে যায়, আর তখন বর্ষণ মৌ কে ধাক্কা মেরে দেয়ালের সাথে আটকিয়ে ধরে আর অনেক বাজে বাজে কথা শুনায় মৌ কে

ওই তুই প্রতিদিন কই যাস, বল আমাকে, এতো দিন ধরে দেখছি কিন্তু কিছুই বলি নাই, কই গেছিস বল আমাকে। (বর্ষণ)

ছাড়ুন আমাকে, কি বলছেন এই সব। (মৌ)

ওই চুপ একদম চুপ, বড় গলায় কথা বলবি না, কোন প্রেমিকের কাছে যাস প্রতিদিন, হ্যা, ওই বল কার কাছে যাস, আমার কাছ থেকে সরতে চাচ্ছিস তাই না

ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন। (মৌ)

কেন আমার ছোয়া ভালো লাগে না, আরেকজনের টা ভালো লাগে, প্রেমিকের ছোয়া ভালো লাগে তাই না?

ছিঃ ছিঃ আপনি এতো নোংরা ছিঃ, (মৌ)

আয় আমার সাথে আয়, এই বলে মৌ কে বিছানায় ফেলে দিয়ে মৌ এর উপরে উঠে যায় আর বলে এখন আমার সাথেও তাই কর যা তুই পর পুরুষের সাথে করে আসছিস, এই বলে পাগলের মতন মৌ কে চুমো দিতে থাকে,

মৌ শত চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারছে না

এখন কেন এমন করস, আমার সাথে s,x করতে ভালো লাগে না, আরেকজনের সাথে করতে ভালো লাগে তাই না, ওই তোরে কি সুখ দেয়, বল আমাকে বল, তোরে কি সুখ দেয় বল, একদম মেরে ফেলবো, খবরদার,

মৌ নিজেকে কোন মতে ছাড়িয়ে নিয়ে সরে পরে,

আজ সতি ঘৃণা হচ্ছে আপনার উপরে, আপনি এতো খারাপ, ছিঃ ছিঃ, এতো বাজে আপনার মুখের ভাষা, ছিঃ, (মৌ)

মৌ দৌড়ে আরেক রুমে চলে যায়, আর দরজা লক করে দেয় তারপর জোড়ে জোড়ে কান্না করে,

বর্ষণের ঘোর কাটে এতক্ষনে, কি বললাম এতক্ষন মৌ কে আমি, আর কি করছিলাম এতক্ষন আমি, মৌ এর সাথে জোর করে, oh god আমার রাগ টা কেন আমি কন্ট্রোল করতে পারি না

তারপর বর্ষণ দৌড়ে সেই রুমের সামনে যায়, যেই রুমে মৌ নিজেকে লক করে রাখছে, মৌ প্লিজ দরজা খুলো, প্লিজ মৌ i am sorry, আমার ভুল হয়ে গেছে, sorry প্লিজ দরজা খুলো,

এইদিকে মৌ আয়নায় নিজেকে দেখছে, তার গায়ে আঁচড়ের দাগ। তার নিজেরই বর তার সাথে এমন আচরন করতে পারে, এই ভাবছে আর কান্না করতে থাকে, এক সময় নিজেকে আর সামলাতে পারল না মৌ, ওইখানে ওইভাবেই জ্ঞান হারায় মৌ,

বর্ষণ অনেক কষ্টে একটা জানালা খুলে তারপর দেখে মৌ ফ্লোরে পরে আছে, আর তখন বর্ষণ চিৎকার করে উঠে মৌ বলে,


পর্ব ১৪

কোন রকমে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে বর্ষণ। মৌ এর তখন জ্ঞান নেই, মৌ কে কোলে করে রুমে নিয়ে শুয়ে দেয় বর্ষণ, পরে তাদের পারসোনাল ডাক্তার কে খবর দেয়, ডাক্তার এসে দেখে মৌ এর ১০৩ ডিগ্রী জ্বর। পরে মেডিসিন দিয়ে যায় আর যত্ন নেয়ার কথা বলে,

ডাক্তার যাওয়ার পরে বর্ষণ সারারাত মৌ এর পাশে বসে থাকে, ভোরের দিকে মৌ এর জ্বর কমে আসে,

২ দিন পর সুস্থ হয় মৌ, এর মাঝে মৌ একবারও বর্ষণের সাথে কথা বলে নি, মৌ এর সব যত্ন ময়নাই করতে থাকে, কিন্তু সে বর্ষণ কে এড়িয়ে কাকে যেন ফোন করে, বর্ষণ ব্যাপার টা বুঝতে পারে তবুও কিছু বলে না, সে ভাবে একবার এই নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে, ওর যদি অন্য কাউকে ভালো লাগে ও চলে যাক, আমি খারাপ মানুষ, আমার কাছে থাকলে ও শুধু কষ্ট পাবে। এই বলে সে অফিস চলে যায়

সেইদিন অফিসে কাজ করে বর্ষণ বাসায় ফিরবে এই টাইমে তুর্নার কল আসে।

তুর্নার কল পেয়ে বর্ষণ বিরক্ত হয়ে বলে এই মেয়ে আবার কল দেয় কেন? অসহ্য লাগে,

হ্যালো। (বর্ষণ)

হ্যালো। (তুর্না)

হ্যা বলো, কিছু বলবা? (বর্ষণ)

হুম। ( তুর্না)

বলো কি বলবে তারাতারি বলে ফেলো আমার কাজ আছে। (বর্ষণ)

আমার বাসায় একটু আসবা প্লিজ একটা প্রবলেম হইছে। (তুর্না)

কিন্তু আমার তো বাসায় যেতে হবে। (বর্ষণ)

প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ আসো না প্লিজ। (তুর্না)

আচ্ছা আসছি। (বর্ষণ)

yes yes yes he is coming yes। (তুর্না)

প্রায় ১ ঘন্টা পর

বলো কেন ডেকেছো কি প্রবলেম। (বর্ষণ)

প্রবলেম তো এইখানে এই কথা টা বলে একটু বাজে ভাবে বুকের দিকে ইংগিত করে তুর্না

বর্ষণ বুঝতে পেরে বলে ok তাহলে আমি আজ আসি
এই বলে বর্ষণ যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় আর তখনই তুর্না ওর হাত ধরে ফেলে, আর বলে একটু উপরে আসবে প্লিজ, জোর করে বর্ষণকে উপরে তার বেড রুমে নিয়ে যায়

রুমে গিয়ে তো বর্ষণ পুরা থ হয়ে যায়।, একটা বাসর ঘর সাজানোর মতন করে সাজানো, চারিদিকে ফুল আর মোমবাতি দিয়ে ডেকোরেট করা।

এই সব কি তুর্না। (বর্ষণ)

কেন তুমি দেখছো না। (তুর্না)

দেখছি বাট এই সব কেন। (বর্ষণ)

আজ তুমি আর আমি এক হবো তাই এই গুলা যাস্ট একটু প্রিপারেশন আর কি। (তুর্না)

r u sick turna। (বর্ষণ)

no, i am fine, anyway come, বলে বর্ষণ কে জোর করে বিছানায় নিয়ে যায় তুর্না

এমনিতেই বর্ষণ এর মন ভালো না তার উপরে এইসব

এই ছাড়ো তো যত্তসব ফালতু কাজ। (বর্ষণ)

কি হলো সোনা, এত দিন বাহিরে যা করে আসছো আর আজ তা তোমার কাছে ফালতু মনে হচ্ছে। (তুর্না)

shut up idiot। (বর্ষণ)

কি হলো। (তুর্না)

এই সবের মানে কি হ্যা। (বর্ষণ)

owh come on yaar, তুমি মনে হয় আজকে নতুন এমন করতে যাচ্ছো, এর আগের সব কিছু কি ভুলে গেছো নাকি, তোমার কাছে মেয়ে মানেই তো ছিল শরীর। (তুর্না)

আর নিজেকে কন্ট্রোল করে না রাখতে পেরে একটা চড় মেরে দিল তুর্না কে

একদম চুপ বেয়াদব মেয়ে, আমার সাথে নেক্সট টাইম এই ধরনের ব্যবহার করবা না got it আমি যাই করি না কেন বিয়ের আগে করেছি এখন আমার ঘরে বউ আছে এখন আমি শুধু তারই, ঠিক আছে। ( বর্ষণ)

what r u married বর্ষণ? (তুর্না)

yes i am। (বর্ষণ)

তাহলে কিছুদিন আগে আমার সাথে তোমার বাসায় যা করলে, তা কি ছিল। (তুর্না)

ওই টা কি ছিল মানে কি? হ্যা, আমি ওইদিন যা করেছি ওইটা একটা ভালো বন্ধুরাও করে। (বর্ষণ)

owh really, তা তোমার বউ টি কে জানতে পারি মিস্টার বর্ষণ। (তুর্না)

তোমার না জানলেও চলবে, ok।, আমাকে আর কোন দিনও এইভাবে আর বিরক্ত করবা না, মাথায় যাতে থাকে, এই বলে বর্ষণ চলে যাচ্ছিলো আর তখনই

হা হা হা, যাও যাও, ঘরে পার্মানেন্ট কাজের মেয়ে থাকতে বাহিরের মেয়ের দরকার পরে নাকি দিনে বাহিরে কাজ আর রাতে কাজের মেয়ের সাথে কাম, হা হা হা। (তুর্না)

ওই চুপ, চুপ ভদ্র ভাবে কথা বলো তা না হলে আমি ভুলে যাবো তুমি একজন মেয়ে, আর খবরদার ওকে কাজের মেয়ে বলবা না, সে আমার বউ। (বর্ষণ)

what। (তুর্না)

yes, that girl is my wife., understand। (বর্ষণ)

yes yes i understand, কাজের মেয়েকে বউ করে রাখছো, গুড, ভালোই। (তুর্না)

আরে তুমি তো ওর পায়ের নখের ও যোগ্য নও, ওকে আমি যেমন ভাবে রেখেছি ও ঠিক তেমন ভাবেই থেকে আসছে বিগত ৩ মাস, তোমার মতন অন্য কাউকে নিজের শরীর বিকিয়ে দিতে যায় নি। (বর্ষণ)

বর্ষণ রাগে গজ গজ করতে করতে বের হয়ে বাসায় গেলো। সে এতক্ষন তুর্না কে মৌ সম্পর্কে যা বলে এলো হয়তো তা ঠিক বলে নি, হয়তো সত্যি মৌ এর অন্য কারো সাথে রিলেশন আছে,

বাড়িতে গিয়ে আজো একই অবস্থা, মৌ নেই বাসায়।
বর্ষণ আসার প্রায় ১ ঘন্টা পর মৌ বাসায় ফিরে।

বর্ষণ আর মৌ কে কষ্ট দেয় না এখন, মৌ কে দেখে বর্ষণ বলে আজো বের হতে হলো তোমায়?

আপনি কখন এলেন। (মৌ)

অনেক্ষন। (বর্ষণ)

ইদানীং এতো তারাতারি বাসায় আসেন, আমার উপরে পাহারা দেন, তাই না। (মৌ)

তুমি কি চোর যে পাহারা দিবো। (বর্ষণ)

হুম তাও ঠিক, আচ্ছা একটা কথা জানার ছিল। (মৌ)

হুম বলো, শুনি। (বর্ষণ)

আপনার নেক্সট অত্যাচার কবে থেকে শুরু করতে চাচ্ছেন। (মৌ)

আমি শুধু কি অত্যাচারই করি মৌ? (বর্ষণ)

আমি তো তাই জানি, আচ্ছা যাই হোক খেয়েছেন? (মৌ)

নাহ। (বর্ষণ)

তাহলে আসেন খাবার দিচ্ছি খেয়ে নেন। (মৌ)

হুম। (বর্ষণ)

কিছু হয়েছে কি? (মৌ)

কি হবে? (বর্ষণ)

মুড অফ মনে হচ্ছে। (মৌ)

নাহ এমনি। (বর্ষণ)

ওহ আচ্ছা ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে আসেন খাবার দিচ্ছি। (মৌ)

এই বলে মৌ চলে যাচ্ছিলো, তখনই বর্ষণ মৌ এর হাত টা ধরে বলে

আমি তোমাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলছি তাই না, ওইদিন খুব খুব খুব খারাপ ব্যবহার করছি তোমার সাথে তাই না, আমি খুব খারাপ একটা মানুষ তাই না মৌ। (বর্ষণ)

ভালো লাগছে না এখন
খেতে আসেন
এই বলে হাত টা ছাড়িয়ে নেয় মৌ আর সেইখান থেকে চলে যায়

মৌ একটু শুনবা। (বর্ষণ)

হুম, বলেন। (মৌ)

আমাকে ছেড়ে চলে যাবা তাই না, কারন আমি খারাপ মানুষ। (বর্ষণ)

নাহ আপনি খারাপ নন, হয়তো আমি খারাপ, হয়তো আমার ভাগ্য খারাপ। (মৌ)

মৌ প্রতিদিন কোথায় যাও তুমি, আমাকে কি বলা যায় না? (বর্ষণ)

জেনে যাবেন খুব শিগ্রই এই বলে মৌ চলে যায়

আর বর্ষণ ওইখানেই বসে থাকে,
হয়তো মৌ কে হারানোর ভয় টা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে,

খাবার টেবিলে মৌ আর বর্ষণ ২ জনেই বসা আছে, কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বলল না, বর্ষণ লক্ষ্য করে মৌ কিছুই খাচ্ছে না কি যেন ভাবছে, হয়তো তার প্রেমিকের কথা ভাবছে,

মৌ এই মৌ। (বর্ষণ)

জি, কিছু বলবেন? (মৌ)

খাচ্ছো না যে। (বর্ষণ)

আমার ক্ষুধা নেই, আপনি খেয়ে নিন বলে টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো মৌ।

বর্ষণও আর কিছু খেলো না, হঠাৎ করেই রুবেলের ফোন এলো,

রুমে এসে,

মৌ ঘুমিয়ে গেছো। (বর্ষণ)

নাহ, কেন? কিছু বলবেন? (মৌ)

আসলে রুবেল কল দিয়েছিল, কাল একটা party রেখেছে, আমাদের যেতে বলেছে। (বর্ষণ)

যেতে বলেছে যাবেন। (মৌ)

তোমাকেও বলেছে যেতে। (বর্ষণ)

ওরা জানে আমি কে। (মৌ)

হুম ওদের বলেছি। (বর্ষণ)

ওহ, কাল কখন party। (মৌ)

সন্ধ্যায়

ঠিক আছে যাবো

thanks

কাল party তে কি হতে চলেছে।


পর্ব ১৫

সেইদিন ও মৌ বাড়ি ছিল না। সেই সকাল বেলা বেড়িয়েছে বিকেলে বাসায় ফিরেছে। বর্ষণ আর তাকে জিজ্ঞাস করে না, কোথায় যায় ও, কি করে ও, কারন সে নিজেই ছোট হয়ে আছে মৌ এর কাছে।

যথারিতি সন্ধ্যায় party তে যাওয়ার জন্য ready হয় মৌ। বর্ষণ ready হয়

মাশা-আল্লাহ ২ জনই ২ জন কে দেখে থ। অপূর্ব লাগছে ২ জনকেই। এক দিকে মৌ কে দেখে বর্ষণ পাগল প্রায় আর অন্যদিকে বর্ষণকেও খারাপ লাগে নি মৌ এর কাছে

কিন্তু কে জানতো আজকের রাতে তাদের ২ জনের জন্যই অনেক খারাপ কিছু অপেক্ষা করে ছিল

party venu তে পৌছানোর পর সবাই মৌ আর বর্ষনকে দেখছে।

বর্ষণের সব ফ্রেন্ডস রা ছিল। ।

ওদের কায়দা ছিল আজকে মৌ এর সাথে খারাপ কিছু করবে

ঠিক তাই হল

বর্ষণ মৌ কে রেখে একটু দূরে গিয়েছিলো, ঠিক এই সময় বর্ষণের ফ্রেন্ডস রা বর্ষণের চোখ এড়িয়ে মৌ এর কাছে যায়। ।

কি ব্যাপার ম্যাডাম কেমন আছেন। (রুবেল)

জি ভালো, আপনারা। (মৌ)

আমরাও ভালোই আছি। (আসিফ)

তা আপনার তো ভালোই থাকার কথা। (রুবেল)

মানে। (মৌ)

মানে এই যে, বিদেশ ফেরত ছেলেকে পটাইলেন তার আগে তার বাপ কে পটাইলেন, আর এখন পুরা সম্পত্তি নিজের দখলে নিয়ে নিলেন।, আপনাকে ধন্য না হিয়ে পারছি না ম্যাডাম। (রুবেল)

মৌ অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে

এইভাবে তাকিয়ে থাকার দরকার নেই, ওই আসিফ একটা party তে ম্যাডাম অনেক ভাশ্য দিয়েছিল না রে আর আজ দেখ ম্যাডাম পুরা ম্যাডাম হয়ে গেছে রে। (রুবেল)

আমাকে যেতে হবে। (মৌ)

আরে দাড়াও সুন্দরী কই যাও।, আমাদের মজা লাগে না, নাকি খালি জামাইর টাই ভালো লাগে। ( আসিফ)

mind ur language। (মৌ)

সে কিরে ম্যাডাম তো দেখি ইংলিশ ছাড়ে, by the way তুর্নার সাথে তো বর্ষণের হেব্বি লাইন চলতাছে, জানা আছে কি। (রুবেল)

আর জানা থাকলেও বা কি, ম্যাডামের যার দরকার ছিল তাই তো পেয়ে গেছে তাই না। (আসিফ)

ওইদিন তো বর্ষণ তুর্নার সাথে ছিল ওর বাসায়, জানতা নাকি কিছু। (রুবেল)

আরে দোস্ত ওই টা বাদ দে, এই শোন তো ও তোমাকে ছুঁয়েছে। (আসিফ)

আরে রাখ বেটা আজকে সাড়ে ৩ মাস বিয়ে হইছে আর তুই এই কথা কস। (রুবেল)

অন্ধকারে সবই এক লাগে। বর্ষণের কাছে অন্ধকার টাই আসল এইবার সেই অন্ধকারে মৌ রানী থাকুক না হয় তুর্না বেবি থাকুক, একই লাগে বর্ষণের কাছে।

ছিঃ,ছিঃ,
আর কত নিচে নামবেন, নিজেদের বন্ধুর বউকে এইসব কথা বলতে বাধে না আপনাদের। (মৌ)

বাহ বাহ তোমরা করতে পারো আর আমরা বলতে পারি না, যাক ভালোই তাহলে কাটে দিন কাল কি বল
বর্ষণ ঠিকই বলেছিল তুমি তার টাকা পয়সা তার বাপের টাকা পয়সা জন্য ওকে বিয়ে টা করেছো, তা না হলে ওর মতন পোলারে কে বিয়া করে, যেই পোলা মাইয়া নিয়া পইরা থাকে তারে তুমি কর বিয়ে হা হা হা, (রুবেল)

মৌ আর এক মিনিট ও দাঁড়ালো না, চলে আসলো বাসায়,

রকিং চেয়ারে বসে বসে ভাবছে,

পুরা বাসা টা ভালোমত দেখেও নিয়েছে,

তার সমস্ত কাজ গুলাও কমপ্লিট করেছে সে,

এখন শুধু বর্ষণের ফেরার অপেক্ষা,

প্রায় ১ ঘন্টা পর বর্ষণ বাসায় ফিরে,

একটু রেগে আছে, থাকারই কথা কারন মৌ তাকে কিছু না বলে চলে এসেছে,

মৌ
মৌ এই
এই তুমি কোথায়। (বর্ষণ)

পুরা বাসা খালি,

ববর্ষণের বুক টায় মোচড় দিয়ে উঠে।

মৌ কোথায় গেলো এত রাতে তার মানে আমাকে ফেলে চলে গেছে,

তারপর বর্ষণ রুমে ঢুকে, রুমে এসে খাটে বসে পরে।

হঠাৎ তার চোখ যায়, টেবিলের উপরে।

২ টা খাম আর ২ টা বক্স রাখা।

বর্ষণ ধীরে ধীরে গিয়ে দেখে একটা খামের উপরে তার নাম লিখা আছে, তাই সে সেই খাম টাই আগে খুললো।


পর্ব ১৬

খাম টা খুলে বর্ষণ চেয়ারে বসে, একটা চিঠি ছিল তাতে, বর্ষণ চিঠি টা হাতে নিয়ে হালকা হাসি দিয়ে বলল, মৌ চলে গেছো তোমার গন্তব্যে, আবার চিঠি দেয়ার কি দরকার ছিল।

যাই হোক দেখি, কি লিখা আছে চিঠি টাতে,

লিখা আছে,

আসসালামুআলাইকুম,
কি বলবো বুঝতেছি না, কি বলে সম্বোদন করবো বুঝতেছি না, কে হন আপনি আমার, হয়তো কাগজ-কলমে আপনি আমার স্বামী, কিন্তু মনের দিক থেকে না আমি আপনার বউ না আপনি আমার স্বামী।
আপনি তো বিয়ে টা ভালোবেসে করেন নি, করেছিলেন আপনাকে করা আমার প্রতিটা অপমানের প্রতিশোধ নিতে, নিয়েওছেন বিয়ের পর দিন থেকে, কিছুই বলি নাই। শুধু নিজের ভাগ্য কে দোষারোপ করে গেছি, আমার জীবন হয়তো এইভাবেই যাবে, আমিও যে আপনাকে ভালোবেসে বিয়ে করি নাই করেছি মায়ের জন্য, আর এই ৩ মাস ১৫ দিন আপনার সাথে থেকেছি আপনার বাবার জন্য, তা না হলে বিশ্বাস করেন থাকতাম না আপনার সাথে।

কারন আমি এইসব বিয়ে আর ভালোবাসায় বিশ্বাস করি না। শুধু আমার মা আর আপনার বাবার জন্য এই বিয়ে টা করেছি, অনেক টা অসহায় হয়েই বিয়ে টা করতে হয়েছে আমাকে। তা না হলে এতো অত্যাচার সহ্য করে আমি এইখানে পরে থাকি কিসের জন্য।

আর পড়তে পারতেছিল না বর্ষণ, ওর গলা ধরে আসছিল, একটু দম নিয়ে আবার শুরু করল,

সবাই তো টাকা দিয়ে জুয়া খেলে আর আমি খেললাম আমার জীবন দিয়ে, একবার নিজের জীবন টা নিয়ে জুয়া খেলেই দেখি না, তবুও আমার মা আর বোন টা তো ভালো থাকবে। বিয়ের আগে আপনার ব্যবহার গুলা আমাকে অবাক করে তুলতো। ভাবতাম এই সব হয়তো আপনার মোহ, মোহ কেটে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু বিয়ের পর বুঝতে পারলাম আপনার মোহ টা দীর্ঘ ছিল, তাই তো এমন প্রতিশোধ নিতেও পিছপা হন নি আপনি।

যেইদিন প্রথম হাত টা কেটেছিলেন সেই দিন বুঝেছি আমার অত্যাচারের শুরু হয়ে গেছে, কিছুই বলি নাই। তারপর গরম সুপ দিয়ে শুরু করলেন, আমার হাতেই ঢেলে দিলেন তখনো একটু শব্দ করে নি, তারপর একদিন রাতে মদ খেয়ে আমাকে অনেক জোড়ে চড় মারলেন, আর বলেছিলেন আমি নাকি আপনার বাবাকে হাত করে সব কিছু হাতিয়ে নিয়েছি, তখনো কষ্ট পাই নি কারন আমি তো মেনে নিয়েছিলাম আমার ভাগ্য কে।

আপনি হয়তো ভেবেছেন আমি কেন চুপ হয়ে গেছি, হ্যা আমি চুপ হয়ে গেছিলাম কারন আমি হেরে গেছিলাম। তারপর একদিন আপনি আপনার। gf কে নিয়ে বাসায় আসলেন, তার জুতা মুছাইলেন আমাকে দিয়ে তখনো কিছুই বলি নাই কারন আমি জানি আপনার আমাকে দিয়ে পুষাবে না, শুধু কেঁদেছি সেই দিন আমার কান্নার সাক্ষী ছিল এই রুম টা।

তারপর একদিন সব কিছুর উর্ধে চলে গেলেন, বলেছিলেন অন্য কারো সাথে নাকি আমার রিলেশন চলে, আমি নাকি তার সাথে s,x করে আসি, তারপর পশুর মতন আমার উপরে হামলা করেছিলেন, নিজের পুরুষত্ব দেখানোর জন্য, তখনো খুব কেঁদেছি কিন্তু আওয়াজ হয় নি, কিন্তু নিজেকে নষ্ট হতে দেই নি।

আমি এখনো শুদ্ধ, বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না আমি এখনো শুদ্ধ। আমি তো ভালোবাসা নামক শব্দ টাকেই ঘৃণা করি তাহলে অন্য কাউকে কেনই বা ভালোবাসতে যাবো, বলতে পারেন? জানি পারবেন না। আমার প্রত্যেক দিন বাহিরে যাওয়া নিয়ে আপনার অভিযোগ ছিল, কিন্তু একবারের জন্য বুঝতে চান নি মৌ তো এতো টাও খারাপ না, শুধু খারাপ ছিল মৌ এর ভাগ্য টা। যে কখনো ভাবে নি তার জীবনের মোড় টা এমন ভাবে ঘুরে যাবে।

আজ যেন চোখের বাধ মানছে না বর্ষণের।

আবার পড়তে থাকে, লিখা ছিল

পাশে আরেকটি খাম আছে, একটু খুলবেন প্লিজ

বর্ষণ গিয়ে খাম টি খুলে দেখে কিছু দলিল আছে, সেইখানে স্পস্ট করে লিখা আছে, সমস্ত স্থাবর সম্পত্তির মালিক বর্ষণ চৌধুরী। তার মানে মৌ সমস্ত সম্পত্তি মৌ বর্ষণের নামে transfer করে দিছে। এই টা তারই transformation letter .

তারপর আবার চিঠির মধ্যে চোখ বুলায় তাতে লিখা আছে,

এই নিন, আপনার সমস্ত সম্পত্তি আপনার নামে করে দিলাম।, এই কয়েকদিন এই টার জন্যই দৌড় ঝাপ করতে হয়েছে, আপনার বাবার বন্ধু লোইয়ার আসিফ আংকেলের সাথে যোগাযোগ করেই সব ঠিক করে দিয়েছি, জিজ্ঞাস করে দেখতে পারেন। আমি কারো সাথে দেখা করতে যাই নাই, কারো সাথে নষ্টামি করতেও যাই নাই, কারো বিছানাতেও যাই নাই, শুধু আপনার সম্পত্তি আপনার নামে করার জন্য এতো দিন দৌড়া-দৌড়ি করেছি। আর আপনি কত খারাপ কথা বলেছেন আমাকে।

আর আজকের কথা কি বলবো, হয়তো রেগে আছেন আমার উপরে। না বলে চলে এসেছি তাই। থাকতে পারি নাই এইখানে সব ঠিক করতে হয়েছে তাই তারাতারি চলে আসছি। আপনার বন্ধু রা সবাই অনেক কথা বলল আমায় জানেন, আমি নাকি আপনার বাপ কে পটাইছি, আপনাকে পটাইছি, তারপর সমস্ত কিছু নিজের নামে করেছি। আরো বলল আপনি আমার গায়ে হাত দিয়েছেন কিনা, আরো বলল আপনি নারীর শরীর ভালোবাসেন তাই অন্ধকারে আপনি তুর্না বা মৌ কে একই ভাবেন।

তুর্নার সাথে তুর্নার বাসায় গিয়েছেন নাকি, সময় কাটিয়েছেন। আমি তাদের কোন কথার জবাব দিতে পারি নি, কারন আমি তো হেরে যাওয়া একজন ব্যর্থ নারী, যাক ভালো। আমি জানতাম আমি ঠকে যাবো, কারন আমি তো প্রথম থেকেই ঠকে আসছি। তাই আর কষ্ট লাগে না তেমন। ।

ওইখানে ২ টা বক্স রাখা আছে দেখে নিবেন, একটার মধ্যে আপনার মায়ের বালা জোড়া আছে যা আপনার বাবা আমাকে দিয়েছিলেন উপহার হিসেবে আর আপনার দেয়া প্রতি টা উপহার আমি আমার মাঝেই বদ্ধ করে রেখে দিয়েছি। আর আরেকটি বক্সে আপনার বাসার আর লকারের চাবি রাখা আছে, একটু দেখে নিবেন।

যা আমার নয় তা আমি নিতে পারি না। আর ভালো লাগছে না, চোখ বুজে আসছে আমার। আমি হেরে গেছি বর্ষণ, আমি হেরে গেছি। নিজের কাছে, মনের কাছে, জীবনের কাছে, আমি হেরে গেছি।
আপনি যখন এই চিঠি পড়বেন।, হয়তো আমি আর থাকবো না। নাহ কারো সাথে ভেগে যাবো না। নিজেকে শেষ করে দিয়েছি বর্ষণ, নিজেকে শেষ করে দিয়েছি, আর পেরে উঠছিলাম না। অনেক হাপিয়ে গেছি, এইবার একটু শান্তি চাই।

এই জীবনে হয়তো সুখ নামের পাখি টা আর ধরা দিবে না আমাকে, সুখ নামের সোনার হরিণ টার পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আজ আমি ক্লান্ত, বড়ই ক্লান্ত জানেন, তাই ছুটি দিয়ে দিলাম জীবন কে। শান্ত করে দিলাম সব কিছুকে।
suicide case হবে হয়তো। হয়তো আমার মা টা মরেই যাবে, বোন টা আমার অসহায় হয়ে যাবে।

আপনাকে কেউ দায়ি করবে না, আপনি কোন টেনশন করবেন না। ওইখানে দেখবেন আরেক টা চিঠি আছে, এই টা পুড়িয়ে দিবেন আর ঐ চিঠি টা আমার মা আর আপনার বাবাকে দেখাবেন। ওইখানে আমি আমার মিথ্যা প্রেমের গল্প বলে দিয়েছি। ভালো থাকবেন বর্ষণ, আপনাকে মুক্ত করে দিয়ে গেলাম। ।

বর্ষণ চিঠি টা পড়ে পাগলের মতন হয়ে গেলো। মৌ মৌ করে চিৎকার দিতে লাগলো। তারপর উঠে গিয়ে সব রুম তন্ন তন্ন করে খুজতে লাগলো। একটা রুমের দিকে বর্ষণের দৃষ্টি আটকিয়ে যায়। এই তো মৌ, রুমে ঢুকতেই বর্ষণের বুক টা কেঁপে উঠলো। মৌ এর শরীর টা অসার হয়ে বিছানায় পরে আছে। ঘুমিয়ে আছে মৌ, উফফফফ কি সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে মৌ।

বর্ষণ এই প্রথম মৌ কে জড়িয়ে ধরে বুকে লাগিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। তার চিৎকার শুনে ময়না ছুটে আসে। তারপর দেখে এই অবস্থা। মৌ এর শরীর টা নিথর হয়ে পরে আছে বিছানায়। আর বর্ষণ মৌ কে বুকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলছে এই ভাবে আমাকে শাস্তি না দিলেও পারতা মৌ। শাস্তি না দিলেও পারতা।

কি হতে যাচ্ছে তাদের সাথে? কি আছে তাদের ভাগ্যে?


পর্ব ১৭

রাত ১০ টা বাজে, এতো রাতে কি হচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ময়না,

ভাই কি অইছে। (ময়না)

বর্ষণ শুধু মৌ কে ধরে কেঁদে যাচ্ছে, মনে হয় বুকের মধ্যে মিশিয়ে রেখেছে মৌ কে।

ও ভাই, ভাই কি হইছে এমনে কান্দেন কেন? কি অইছে। (ময়না)

ময়না তোর ভাবি আমার সাথে রাগ করে আমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে গেছে রে, আমাকে একটা বারের জন্য মাপ চাওয়ার সুযোগ টাও দিল না তোর ভাবি। (বর্ষণ)

ভাই আমনে এডি কি কন, আমি কিছুই তো বুঝতাছি না, কি অইছে ভাবির। (ময়না)

তোর ভাবি রাগ করছে রে ময়না, অনেক কষ্টের পর তোর ভাবি আমাকে ফেলে চলে গেছে। (বর্ষণ)

আমনে শান্ত হন, ছাই কি অইছে ভাবির, এমনে হুইয়া রইছে কিল্লিগা। (ময়না)

ও আর উঠবে না রে ময়না আর উঠবে না, ও ঘুমাচ্ছে তুই দেখিস না কিছু, যা সর এইখান থেকে, কথা বলিস না, কথা বললে ও উঠে যাবে। (বর্ষণ)

বর্ষণ এর এমন পাগলামি দেখে ময়নার আর কিছু বুঝতে বাকি থাকে নাই, তাই সে নিজেও কান্না করে দেয় আর বলে,

হায় হায় গো ভাবি, আন্নে এডি কি করছেন গো ভাবি, এহন কি হইবো গো ভাবি। (ময়না)

ময়নার চেঁচামেচিতে ময়নার বর ও চলে আসে, তখন সে নিজেই পরিস্থিতি সামাল দেয়।

ময়না চুপ কর, বর্ষণ ভাই চুপ করেন, দেখেন ভাবির হাত পা এখনো গরম আছে, দেখেন তো ভাবির নিঃশাস চলাচল করে নি। (ময়নার বর)

ময়নার বরের কথা শুনে বাস্তবে ফিরে বর্ষণ।

ঠিক বলছ আমি তো এতক্ষন খেয়াল করি নি,
হ্যা হ্যা ওর নিঃশাস চলতেছে। (বর্ষণ)

তার মানে ভাবি শুধুই জ্ঞান হারাইছে, ভাই আমাদের হাতে এখনো সময় আছে, অঘটন ঘটার আগে আমাদের ভাবি কে হাসপাতালে নিতে হইবো। (ময়নার বর)

হ হ তুমি ঠিক কইছ, ওহন দেখ তো ভাবি কি খাইছে নাকি হাত ফাত কাটছে। (ময়না)

ওই তুই চুপ করবি, নাইলে তোরে এখন এইদিকে জিন্দা কবর দিয়া দিমু, বজ্জাত মাইয়া লোক, বিপদের সময় আজগুবি কথা লইয়া বইয়া রইছে, একদম চুপ কইরা থাক কইয়া দিলাম। (ময়নার বর)

আরে তোমরা থামো, এখন আমার মৌ কে বাঁচাতে হবে। (বর্ষণ)

ভাই দেখেন তো ভাবির শরীর গরম আছে নি। (ময়নার বর)

হুম আছে এখনো। (বর্ষণ)

তাইলে লন উডান ভাবিরে, হাসপাতালে নিয়া যাই। (ময়নার বর)

আরে আরে খাড়াও খাড়াও কই যাও, এতোই সহজ নি, এই ঢাকার শহরে বেক্কেই ভাইয়েরে চিনে লগে তোমারেও লগে ভাবিরেও এহন আন্তাইজ্জা কোন হাসপাতালে নিবা। (ময়না)

দাপরানি খাইয়া এতক্ষনে একটা ভালা কথা কইছত তুই। (ময়নার বর)

আচ্ছা আমাদের যেই হাসপাতাল টা আছে ওইখানে ওকে নিয়ে যাই। (বর্ষণ)

মাথা ঠিক আছে নি ভাই, আপনের আব্বায় তো জায়গায় জায়গায় সাটার মাইরা থয় আন্নে জানেন না, আপনের আব্বার বন্ধু তো হেই হাসপাতালের ডাক্তার। এহন ভাবিরে লইয়া গেলে কাইল কাই আন্নের আব্বায় দেশো হাজির হইবো। (ময়না)

ময়নায় ঠিক বলছে ভাই, একটু মাথা ঠান্ডা করেন আমারে ভাবতে দেন। (ময়নার বর)

আরে কি ভাববো, বলবা একটু আমারে কি ভাববো, আমার মৌ মরে যাচ্ছে আর আমি নাকি এখন ভাববো। (বর্ষণ)

একটু পর মৌ এর মুখ থেকে সাদা ফেনা বের হওয়া ধরে আর নাক বেয়ে রক্ত পরা শুরু করে, বর্ষণ দেখে আর সহ্য করতে পারে নাই আরো জোড়ে কান্না করে,

তারপর ময়নার বর ওদের সবাইকে নিয়ে অন্য আরেকটা হাসপাতালে যায় [লোকটার জ্ঞান-বুদ্ধি ভালোই প্রখর ]

যাই হোক, মৌ কে হাসপাতালে আনার সাথে সাথে ওইখান কার ডাক্তার রা মৌ এর চিকিৎসা শুরু করে দেয়,

প্রায় ২ ঘন্টা অতিবাহিত হতে চলছে মৌ এর কোন খবর দিচ্ছে না কেউ। বিপদের রাত মনে হয় অনেক দেরি করে কাটে। প্রত্যেক টা সেকেন্ড অনেক কষ্টের হয়। কি করবে কেউই কিছুই বুঝতে পারছে না। এখন আল্লাহ্‌ কে ডাকা ছাড়া কিছুই করার নাই।

ময়নাও কাদতেছে আর আআল্লাহ্‌ কে ডাকতেছে, এমন অবস্থায় বর্ষণ হাত জোড় করে ময়নার সামনে গিয়ে দাড়ায় আর বলে,

ময়না প্লিজ তুই বাবাকে কিছু জানাস না কেমন? তা না হলে বাবার শরীর খারাপ হবে আর জানিসই তো যে বাবা আমার থেকে বেশি ভালোবাসে মৌ কে। (বর্ষণ)

আরে ভাই কি কন, আমি কি এতোই পাগল হইছি নি যে এই সব কথা এখন মামার কানে দিমু, আপনে টেনশন কইরেন না, আল্লাহ রে ডাকেন। (ময়না)

৩ ঘন্টা পর doctor O.T থেকে বের হয় আর বলে
now she is fine, টেনশন করবেন না সব clean করা হয়ে গেছে তবে আরেকটু দেরি হলে অনেক বড় বিপদ হয়ে যেতো। ঠিক আছে টেনশনের কোন কারন নেই কিছুক্ষন পরে ওনাকে কেবিনে দিবো। তখন এক এক করে দেখা করে নিয়েন। ।

thanks doctor, thanks a lot। (বর্ষণ)

no, this is our duty। (doctor)

কিছুক্ষন পর মৌ কে কেবিনে দেয়া হল,

কেবিনে সবাই ছিল ময়না, ময়নার বর, আর বর্ষণ

মৌ এর জ্ঞান ফিরে আর মৌ আস্তে করে চোখ মেলে তাকায়। বর্ষণ এর দেহে যেন প্রান চলে আসে। মৌ বুঝতে পারছে না কিছুই, কিন্তু শরীর তার খুব দুর্বল, কথা বলারও শক্তি নেই তার

তারপরও অনেক কষ্টে কথা বলল ময়নার সাথে

আ,আ,মি এ,ই,খানে। (মৌ)

তো কই থাকবেন ভাবছেন, কি ভাবছিলেন আমগোরে রাইখা যাইবেন গা, এতো খায় না, বুজ্জেন নি এতো খায় না, এতো তারাতারি কই যাইবেন আপনে হ্যা দেখছেন ফিরায়া আনছি। (ময়না)

ময়নার কথা শুনে মৌ হেসে দেয়। শত হোক ময়না মেয়ে টা কিন্তু আসলেই ভালো। সরল সহজ মেয়ে।

ময়নার বর ময়নাকে খোচা মেরে বর্ষণ কে দেখিয়ে দেয় পরে ময়না বলে ভাই আন্নেরা কতা কন আমি আর আমার জামাই কিছু খাইয়া আহি। আমার অনেক ক্ষিদা লাগছে রাইত ভাতও খাই নাই।

ওদের একা রেখে ওরা বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।

বর্ষণ এসে মৌ পাশে বসে। মৌ এর হাত ধরে বর্ষণ খুব কান্না করে, আর মৌ সে একবারের জন্যও বর্ষণএর দিকে তাকায় নাই, সেও অন্য দিকে মুখ করে আছে আর চোখ দিয়ে অবিরাম পানি পরছে। এক পর্যায়ে সব নিরবতা ভেঙে বর্ষণ বলে

আচ্ছা আমি কি এতোই খারাপ ছিলাম যে আমাকে এইভাবে শাস্তি দিলা, আমি মানি আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করছি, তোমাকে অনেক খারাপ কথাও বলছি, কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি মৌ খুব ভালোবাসি আমি তোমাকে, তুমি আমাকে একটা বারের জন্য ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ টাও দিলা না তার আগেই নিজেকে এইভাবে শেষ করে দিতে চাচ্ছিলা, কেন মৌ কেন?

এইভাবে আমাকে একা ফেলে চলে যেতে চাইলা। এই কঠিন শাস্তি টা না দিলেও পারতা তুমি মৌ।

মৌ বর্ষণ এর কথা শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে বর্ষণ নিজেও বুঝতে পারে নি, পরে দেখে মৌ ঘুমিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে একটা বাচ্চা মেয়ে ঘুমিয়ে আছে, বর্ষণ মৌ এর কপালে একটা চুমো দিয়ে উঠে গেলো।

doctor এর সাথে কথা বলে মৌ কে বাসায় নেয়ার ব্যবস্থা করলো।

২ দিন পর মৌ কে রিলিজ করে দিলো,

মৌ এখনো বর্ষণ এর সাথে কথা বলে নি, ময়নার সাথে হালকা পাতলা কথা বলে।

হাসপাতাল থেকে মৌ কে বর্ষণ নিয়ে আসে গাড়িতে ২ জন কেউ কথা বলে নি কারো সাথে, বর্ষণ বার বার মৌ এর দিকে তাকিয়ে দেখছিল মৌ কে।

বাড়িতে আসার পরে ময়না মৌ কে উপরে নিয়ে যায়, রুমে ঢুকে একটু অবাক হয়ে যায় মৌ, খাটের পিছনে ফাকা জায়গা টাতে বিয়ের সময় না চাইতেও হাসি মুখে বর্ষণ এর সাথে তোলা একটা ছবি অনেক বড় করে টাঙানো আছে, রুমের সব কিছু নতুন করে সাজানো আছে,এই সব দেখে মৌ একটু অবাক হয়ে ময়নার দিকে তাকায়,

ভাইয়ে করছে এই সব ভাবি
মানুষ টা খারাপ না ভাবি
আপনারে খুব ভালোবাসে মানুষ টা। (ময়না)

ময়না আমি একটু ফ্রেশ হবো, তুমি যাও এখন কেমন। (মৌ)

আইচ্ছা ভাবি। (ময়না)

মৌ শাওয়ার নিতে বাথরমে গেলো। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন কান্না করে, তারপর বলে আল্লাহ এইবারো আমাকে বাঁচিয়ে দিলা, কেন আল্লাহ্‌ কেন
,
তারপর অনেক্ষন পর বের হবে তখন দেখে শাড়ী আনে নাই, শুধু ব্লাউজ আর পেটিকোট, আল্লাহ্‌ শাড়ী তো আনি নাই এখন, কোন রকম ব্লাউজ আর পেটিকোট টা পরে তারাতারি রুমে এসে ড্রয়ার থেকে শাড়ী বের করে যেই না পিছে ঘুরে দেখে পিছনে বর্ষণ দাড়িয়ে আছে

মৌ চমকিয়ে যায় আর তার হাত থেকে শাড়ী টা পরে যায়। বর্ষণ এক ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে বলে এতো সুন্দর কেউ হয়। তারপর মৌ এর কাছে যায়, আর মৌ কে শাড়ী পরিয়ে দেয়
কান এর কাছে মুখ নিয়ে বলে, “এইভাবে দরজা খুলে শাড়ী ছাড়া থাকলে তো পরে প্রবলেম হবে, আমার জায়গায় যদি অন্য কেউ চলে আসতো তখন কি হতো “

বর্ষণ এর কথা শুনে মৌ নিচেই তাকিয়ে থাকে। বর্ষণ আবারো বলে, কোমড় টা অনেক সুন্দর, দুধে আলতা রঙ আমার বউয়ের এই বলে বর্ষণ মৌ এর গালে একটা কিস করে দেয় তারপর কোলে নিয়ে খাটে শুয়ে দেয় আর বলে একটু বিশ্রাম কর এই বলে কপালে আরেকটি চুমো দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। ।

মৌ এর জানি কেমন লাগে ব্যাপার টা। কিন্তু মৌ এর ভালো লাগে। হঠাৎ বর্ষণের এমন ব্যবহারে সে অবাক। । তবে রুম টা আগের থেকে একদম আলাদা, সব কিছু সাজানো গুছানো, যেন কেউ আপন মনে সাজিয়ে রেখেছে রুম টা।

তবে কি বর্ষণ আর মৌ এর প্রেমের শুভ অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে?

দেখা যাক কি হতে চলেছে তাদের ২ জনের মধ্যে।


পর্ব ১৮

রাতে মৌ রুমেই শুয়ে ছিল, ভাবছিল সকালের কথা, বর্ষণ এর এমন আচরন, তাকে কিস করা তাও ২ বার, হাসপাতালে পাগলের মতন কান্না করা, এই সব কিছুই ঢুকছে না তার মাথায়, এমন সময় বর্ষণ রুমে আসে, বর্ষণ কে দেখে মৌ তারাতারি চোখ বন্ধ করে ফেলে একরকম ঘুমের ভান ধরা যাকে বলে আর কি,

চোখ বন্ধ করে মনে মনে, আল্লাহ্‌ গো বাচাও, লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতুম মিনাজ-জলিমিন, আল্লাহ্‌ আর যেন কিস ফিস না দেয়। (মৌ)

এমন খিট্টা শুয়ে থাকার কোন মানেই হয় না, উঠে পর খাবার খেতে হবে আর মেডিসিন ও নিতে হবে ok। (বর্ষণ)

ও রে আল্লাহ্‌ ধইরা ফালাইছে রে। (মৌ)

উঠ উঠ আমি দেখছি তুমি তারাতারি চোখ বন্ধ করছো আমাকে দেখে, মনে হলো আমি হয় বাঘ নয় ভাল্লুক। (বর্ষণ)

মৌ আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সোজা উঠে নিচে চলে যায় খাবার টেবিলে

ভাবি আইছেন বন। (ময়না)

হুম। (মৌ)

ময়না খাবার দে। (বর্ষণ)

নেন ভাই, খাবার বাইরাই রাখছি আমি। (ময়না)

বর্ষণ মৌ এর আগে খেয়ে রুমে চলে যায়, মৌ ভাবে আল্লাহ্‌ বাচাইছে।

অনেক্ষন হয়ে গেছে মৌ এখনো রুমে এলো না কেন, ব্যপার কি ওর? (বর্ষণ)

বর্ষণ ও কম কিসের, ঘুমের ভান ধরে আছে,

এমন সময় মৌ আসে, দেখে বর্ষণ ঘুমে বিভোর। তাই সে চেক করার জন্য বর্ষণ এর মুখের উপরে গিয়ে দেখতে লাগলো বর্ষণ আসলেই ঘুমোচ্ছে কিনা, কিন্তু এই বর্ষণ এতো পাজি একটু ও লরে নাই তাই মৌ ও ভেবেছে বর্ষণ বুঝি ঘুমিয়েই গেছে।

মনের অজান্তেই বলে ফেলে,
আল্লাহ্‌ বাচাইছে আমাকে, ঘুমাইছে উনি, তা না হলে সকালের ব্যাপার টা নিয়ে আমি তো ওনার দিকে তাকাতেই পারছিলাম না, সিট আর কখনো শাড়ী ছাড়া শাওয়ার নিতে যাবো না, ধুর ধুর, (মৌ)

এই বলে মৌ বাথরমে ঢুকে যায় আর বর্ষণ মৌ এর কথা শুনে মুখ টিপে হাসে।

ফ্রেশ হয়ে মৌ এপাশ ফিরে শুয়ে থাকে, ঘুম আসবে আসবে ভাব হঠাৎ মৌ টের পায় তার পায়ের উপরে বর্ষণ পা উঠিয়ে দিয়েছে, মৌ একবার বর্ষণ এর দিকে তাকায় তারপর ভাবে বেচারা ঘুমের মধ্যে হয়তো পা উঠাই দিছে, কিন্তু বর্ষণ বজ্জাত তো ইচ্ছা করেই এমন করতেছে যাতে মৌ তার সাথে একটু কথা বলে।

আরেকটু সময় পার হবার পর এইবার মৌ টের পায় তার পেটে বর্ষণ এর হাত, এখন কি হবে 😲😲, মৌ আস্তে করে হাত টা সরাইতে যায় আর তখনই বর্ষণ আরো জোড়ে চাপ দিয়ে রাখে হাত টা মৌ এর পেটে।

তুমি কি ভেবেছো আমি ঘুমিয়ে গেছি, হে হে হে, ঘুমের ভান কি শুধু তুমি একা ধরতে পারো আর কেউ পারে না। (বর্ষণ)

মৌ একদম শক্ত হয়ে যায়, আল্লাহ্‌ গো বাচাও আমাকে,

মৌ এই দিকে ফিরো, ফিরো বলতেছি। (বর্ষণ)

মৌ তো আবার ঘাড় ত্যাড়া, সে বর্ষণ এর দিকে ফিরে নি তাই বর্ষণ আস্তে করে মৌ পিঠের উপর থেকে চুল সরিয়ে নেয় আর ঘাড়ের মধ্যে সুরসুরি দেয়, আর সাথে সাথে মৌ বর্ষণ এর দিকে ফিরে তাকায়

দেখছো, সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল টা যে বাকাইতে হয়। (বর্ষণ)

মৌ চোখ বড় বড় করে বর্ষণ এর দিকে তাকায়,

বর্ষণ মৌ এর একদম কাছে চলে আসে, এতোই কাছে যে ২ জন ২ জনের নিঃশ্বাস এর শব্দ শুনতে পাচ্ছে, বর্ষণ মৌ কে জড়িয়ে ধরে আর বলে,

আচ্ছা মৌ আমি কি এতোই খারাপ মানুষ ছিলাম যে তুমি আমার জন্য নিজেকে শেষ করতে চেয়েছিলে, আমাকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ টাও তুমি দাও নি, তার আগেই তুমি, আসো আজকে তোমাকে আমার গল্প শুনাবো।

বর্ষণ মৌ কে জড়িয়ে ধরে তার জীবনের গল্প শুরু করে

আমার যখন ৯ বছর তখন আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে যায় অনেক দূরে, তারপর থেকে আমি একা। বাবা যে আমাকে কম ভালোবাসতো তা কিন্তু নয়। ।

কিন্তু বাবা সব সময় ব্যস্ত থাকতেন, একদম একা হয়ে পরি আমি। তারপর বাবা আমাকে ইংল্যান্ড পাঠিয়ে দেয়, ওইখানে আমাদের বিজনেস আছে আর বাড়িও আছে, আমি ওইখানেই থাকতাম, তারপর থেকে আমার ওইখানেই বড় হয়ে ওঠা।

উইকেন্ডে পার্টি মাস্তি এইসব কে আকড়ে ধরেছি কারন আমি যে বোড্ড একা ছিলাম মৌ। তারপর যখন আরেকটু বড় হই, তখন মেয়েদের প্রতি আশক্ত হয়ে পরি আর হবো নাই বা কেন ওরা নিজেরাই নিজেদের বিলিয়ে দিত সবাই কি আর তোমার মতন যে নিজের হাজবেন্ড কেও ছুতে দেয় না।
আচ্ছা যাই হোক, এই সব মিলিয়ে ইংল্যান্ড এ ভালোই ছিলাম কিন্তু সব ঝামেলা হলো বাংলাদেশে এসে, ২০ বছর পর বাংলাদেশে এসে যে তোমার মতন কাউকে দেখবো আশা করি নি জানো, তোমার প্রেমে আমি কখন পরি জানো, যখন তুমি আমাকে রিসিভ করতে গিয়েছিলে, হয়তো ওইটা ছিল আমার মোহ যেই টার কথা তুমি চিঠিতে লিখেছিলা। কিন্তু তোমার প্রতি এই মোহ টা কবে যে কেটে যায়, আর তা ভালোবাসা হয়ে দাড়ায় আমি বুঝি নাই। । আর তোমার প্রতি আমার এই ভালোবাসা তুমি বুঝতে চাও নি কখনো।

বার বার আমাকে ছোট করেছো অপমান করেছো আমাকে আর তখনই আমার জিদ উঠে যায়। আমি নানা ভাবে তোমাকে অপমান করেছি, খারাপ ব্যবহার করেছি শুধু মাত্র আমার এই জিদের জন্য। তারপর তুমি সহ্য করতে না পেরে একদিন রাতে আমার কাছে নিজেকে সপে দিতে আসছিলা, মনে আছে হয়তো, সেইদিন কিন্তু তোমাকে ভোগ করতে আমি একটু টাইমও নিতাম না শুধু ভালোবাসি বলে তোমাকে ছুইও নাই, [ছোন নি তবে থাপ্পড় মেরেছিলেন 😢😢]।
তারপর বাবার কথায় তোমাকে বিয়ে করলাম হয়তো তুমি পরিস্থিতির চাপে পরে বিয়েটা করেছো, কিন্তু আমি নিজ জ্ঞানেই তোমাকে বিয়ে করেছি। প্রতিশোধ নিতে পারবো বলে বিয়ে টা করে ছিলাম। শুধু ভালোবাসি বলেই প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম যাতে একবার হলেও তুমি নিজে আমাকে বল ভালোবাসি, সেই জন্য তুর্না কে এনেছিলাম, বিশ্বাস করবা ওর সাথে আমার কোন খারাপ কিছু নাই। ।

আমার বন্ধুরা তোমাকে যা যা বলেছে তা পুরো টা সত্যি না। তারপর তোমাকে বলা প্রত্যেক টি জঘন্য কথা আমার বুকে বাধে এখনো কারন আমি ভাবতাম মায়ের মতন তুমিও আমাকে ফেলে চলে যাবা, আরে মৌ একটা বার আমাকে বলতা, না বলেই আমাকে শাস্তি দিতে চাচ্ছিলা তাই না মৌ

মৌ খেয়াল করে বর্ষণ এর চোখ বেয়ে পানি গুলা মৌ এর গালে পরছে [তার মানে বর্ষণ মৌ কে এতো টাই নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে]

বর্ষণ আপনি কি কাঁদছেন। (মৌ)

কই না তো, ঘুমিয়ে পর অনেক রাত হয়েছে। এই বলে মৌ এর কপালে একটা চুমো দিয়ে ওইদিকে ফিরে যায় বর্ষণ।

কি হলো। (মৌ)

কোথায়। (বর্ষণ)

এই যে ওইদিকে ফিরে গেলেন। (মৌ)

হালকা হাসি দিয়ে আমি খারাপ মানুষ মৌ, তোমাকে একটু ছোঁয়াতে তুমি ভয়ে একদম শক্ত হয়ে গেছো। তাহলে ভাবো তুমি আমার জন্য কি ফিল করো।

মৌ আমি নারীর শরীর এর জন্য পাগল না আমি তোমার ভালোবাসার জন্য পাগল, হয়তো আমরা এক রুমে থাকবো এক বিছানায় ঘুমাবো, কিন্তু তুমি যতদিন না তুমি নিজে আমার কাছে আসবে আমি তোমার দিকে হাত বাড়াবো না মৌ, হ্যা তবে একটু আদর তো করতেই পারি তাই না আর শাড়ী ও পরিয়ে দিতে পারি, এখন ঘুমিয়ে যাও তোমার শরীর ভালো না। (বর্ষণ)

মৌ আর কিছুই বলে নাই, সেও এইদিকে ফিরে আছে,

না চাইতেও আজ মৌ এর চোখ বেয়ে পানি গরিয়ে পরছে, নাহ নিজের জন্য না, বর্ষণের জন্য

আজ কেন জানি বর্ষণ এর জন্য মায়া হচ্ছে তার, অতীত ছেড়ে বের হতে পারলে হয়তো ওকে ভালোবাসাও যেতে পারতো। ভালোবাসা তো আর এমনি এমনি হয় না,

ভালো লাগছে না তার,
বর্ষণ কে মিস করছি না তো নাকি ওর স্পর্শ কে মিস করছি আমি, ছিঃ,ছিঃ কি ভাবছি আমি। (মৌ)

এই সব ভাবতে ভাবতে মৌ ঘুমিয়ে পরে,

সকাল বেলা উঠতে একটু দেরি হয়ে যায় মৌ এর

ঘুম থেকে উঠে দেখে বর্ষণ নেই, তারাতারি ফ্রেশ হয়ে, নিচে যায় মৌ, দেখে নিচেও বর্ষণ নেই, ময়না কাজ করছে,

ভাবি আইছেন আপনে, ঘুম কেমন হইছে। (ময়না)

হুম ভালো, ময়না তোমার ভাইয়া কি অফিসে চলে গেছে। (মৌ)

হ ভাবি ভাইয়ে তো ৯ টার দিকে গেছে গা। (ময়না)

নাস্তা খেয়েছে? (মৌ)

ভাইয়ের আর নাস্তা, ব্ল্যাক কফি খাইয়া তারপর গেছে আর আপনারে কইছে ঠিক মতন নাস্তা খাইতেন আর ওষুধ খাইতেন। (ময়না)

নাস্তা করে তারপর রান্নার কাজে হাত দেয় মৌ, মৌ বরাবরই রান্না নিজের হাতে করে,

বর্ষণ দুপুরে কখনো বাসায় আসে না, কিন্তু মৌ আজ বর্ষণ এর জন্য নিজে রান্না করেছে, সে জানে না কেন রান্না করছে বর্ষণের জন্য কিন্তু করছে।

মৌ রান্না করে ময়নার হাজবেন্ড এর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।

অফিসে,

আসব স্যার। (রফিক) [ময়নার বর]

আসো আসো কি ব্যাপার এই টাইমে তুমি, আর এই স্যার স্যার বন্ধ কর। (বর্ষণ)

ভাবি লাঞ্চ পাঠাইছে আপনার জন্য। (রফিক)

হঠাৎ, কখনো তো পাঠায় না, আজকে পাঠালো। (বর্ষণ)

আমি তো জানি না ভাই, আইচ্ছা আমি উঠি। (রফিক)

কিরিং কিরিং কিরিং,

হ্যালো। (মৌ)

হঠাৎ আজ লাঞ্চ পাঠালা। (বর্ষণ)

আল্লাহ্‌ গো এখন কি বলি, নাহ মানে এমনি, ময়না বলল আপনি খেয়ে যান নি তাই ভাবলাম লাঞ্চ পাঠাই। (মৌ)

ওহ আচ্ছা তাই। (বর্ষণ)

হ্যা তাই। (মৌ)

তুমি নাস্তা করেছো, মেডিসিন নিয়েছো। (বর্ষণ)

হুম আচ্ছা রাখি বাই। ( মৌ)

বাই বলার আগেই টুট টুট টুট,

এইভাবে ২ দিন কাটে, মৌ যেন এখন বর্ষণ কে বুঝতে পারে, বর্ষণের হাটা-চলা, কথা-বার্তা, সব কিছুই ভালো লাগতে শুরু করে মৌ এর।

রাতে ঘুমায় ২ জন এক বিছানায় কিন্তু মাঝে থাকে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার বর্ডারের মতন ফারাক।

শুক্রবার, ছুটির দিন,

ওইদিন বর্ষণ বাড়িতেই ছিল,
তার রুমে আর মৌ নিচে রান্না ঘরে কাজ করছে।

হঠাৎ লেন্ড-লাইনে ফোন আসে,

নিচ থেকে মৌ ফোন টা রিসিভ করে,


পর্ব ১৯

হ্যালো। (মৌ)

কি আজব, হ্যালো কে বলছেন। (মৌ)

সোনা পাখি আমি, লিরা। (লিরা)

হুম ওরে আমার বাবুই পাখি টা, কেমন আছিস রে বাবুই পাখি। (মৌ)

হুম ভালো, তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো তাই না। (লিরা)

নারে সোনা, আপুনি কি কখনো আমার বাবুই কে ভুলতে পারি বল। (মৌ)

মা কেও তো এখন খুব একটা কল দেও না রেগে আছো বুঝি মায়ের সাথে। (লিরা)

নারে বাবুই আমি একটু বিজি ছিলাম রে, আচ্ছা বল এখন কল করেছিস কেন। (মৌ)

আপ্পি তুমি কি ভুলে গেছো। (লিরা)

কিরে বাবু। (মৌ)

১৫ তারিখ, (লিরা)

ওহ, আসলে ভুলে গেছিলাম রে, কষ্টের দিন গুলা এতো তারাতারি ভুলে যাবো ভাবি নি আমি। (মৌ)

যাক ভালোই হলো আপ্পি ভুলে গেছো, তা না হলে যন্ত্রণা পাবা। (লিরা)

এখন বল নাম্বার পাইলি কই থেকে। (মৌ)

তার আগে তুমি বলো তোমার মোবাইলের কি হইছে বন্ধ কেন, এতো বার কল দিচ্ছি, মোবাইল বন্ধ কেন তাই তো ল্যান্ড লাইনে কল দিলাম আর নাম্বার মায়ের ডায়েরি তে ছিল। (লিরা)

শোন না বাবু মোবাইল কালকেও খোলা ছিল কিন্তু কাল সন্ধ্যায় আমি না ভুলে মোবাইল টা পানির মধ্যে ফেলে দিছি, তাই আর কি করা মোবাইল ছাড়া চলতেছি আজকে। (মৌ)

হা হা হা, তা ভাইয়া কে বলো একটা কিনে দিতে। (লিরা)

নারে, কি বলবো, ধুর এমনি ভালো আছি এই সব বাদ দে এখন বল কেন কল দিছিস। (মৌ)

আপ্পি মা চায় আর তো ৫ দিন বাকি আছে, তুমি আর ভাইয়া যদি এই ৫ টা দিন আমাদের বাসায় এসে থাকার জন্য, আসবা আপ্পি, মা খুব খুশি হবে। (লিরা)

না রে, সম্ভব না রে, আর তাছাড়া তোর ভাইয়া থাকতে পারবে না, ও তো অভ্যস্ত না এই সবে, ওর কষ্ট হবে। (মৌ)

কিন্তু আপ্পি, (লিরা)

আচ্ছা শুন মা কি কি করবে রে। (মৌ)

এই তো ফকির মিসকন দের খাওয়াবে নাকি। (লিরা)

ঠিক আছে তাহলে আমি ওইদিন এক ফাক এসে দেখা করে যাবো মায়ের সাথে। (মৌ)

কিন্তু আপ্পি মা যে বলল, (লিরা)

আচ্ছা বাদ দে, আমি যাবো নে ঠিক আছে রাখ ভালো থাক, মায়ের যত্ন নিস। (মৌ)

মৌ ফোন রাখার পর, উপরেও কেউ একজন ফোন টা কান থেকে আস্তে করে রাখলেন।

জানতে চাইবেন না কে সে, সে আর কেউ নয় সে বর্ষণ

মৌ ফোন ধরার সাথে সাথে বর্ষণও উপরে থেকে ফোন টা রিসিভ করে তখনই সব শুনে নেয় বর্ষণ।

রাতে খাবার টেবিলে,

ময়না আর রফিক আমি আর তোমাদের ভাবি কাল এক জায়গায় যাবো, তোমরা বাড়ি দেখে রেখো, আর রফিক আমি অফিসে রোজই যাবো, ok। (বর্ষণ)

তা কোথায় যাবেন ভাইয়া। ( রফিক)

আমার শ্বশুড় বাড়ি। (বর্ষণ)

ওহ আইচ্ছা। (ময়না)

মৌ তখন পানি খাচ্ছিলো
এই কথা শুনে মৌ এর নাকে মুখে পানি উঠে গেলো

আরে আস্তে আস্তে পানি খাও
বিষম লাগবে তো
তাই না
এই বলে মৌ কে একটা চোখ মেরে আর মুচকি একটা হাসি দিয়ে বর্ষণ উপরে চলে যায়

মৌ মনে মনে বলে, উফফ দিন দিন তার প্রতি এতো উইক হয়ে যাচ্ছি তার উপরে সে এমন হাসি দিলে আরো উইক হয়ে যাবো আমি

রুমে এসে

কারো কথা এইভাবে আড়ি পেতে শুনা ভালো না। (মৌ)

ফোন থাকতে কারো কথা শুনতে আড়ি পাতা লাগে না, কেউ মনে হয় ভুলে যাচ্ছে বাড়িতে সব ল্যান্ড লাইন সেম হয়। (বর্ষণ)

সিট আমি তো ভুলেই গেছিলাম, মনে মনে

আপনি শুধু শুধুই জেদ করছেন ওইখানে আপনার প্রবলেম হবে, ওইখানে এইরকম পরিবেশ নাই আর তাছাড়া এ.সি. ও নাই আপনার অনেক সমস্যা হবে। (মৌ)

আমার প্রবলেম নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। (বর্ষণ)

মানে কি। (মৌ)

মানে কিছুই না, আমরা কাল যাচ্ছি, ok। (বর্ষণ)

রাতে বর্ষণ ঘুমিয়ে যাওয়ার পর মৌ বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে,

জীবন টাকে কি আরেকটা বার সুযোগ দিবো। কি আছে বর্ষণের মাঝে যা আমায় এমন ভাবে টানে।
আমি কি বর্ষনকে ,? না না তা কিভাবে সম্ভব, আচ্ছা সম্ভব নয় কেন? সে তো আমার স্বামী, তাহলে সম্ভব নয় কেন,
ঘড়ির কাটা ৩ টা ছুই ছুই, তখনো মৌ বারান্দা। হঠাৎ একটা হাত মৌ এর কাধ স্পর্শ করে

কেহ। (মৌ)

রিলেক্স রিলেক্স আমি। (বর্ষণ)

ওহ, তা আপনি এইখানে ঘুমান নাই, উঠে আসলেন যে। (মৌ)

তুমি কি করছো এতো রাতে এইখানে, ঘুমাবা না। (বর্ষণ)

ঘুম আসছে না তাই। (মৌ)

ওহ আচ্ছা তাই বলো। (বর্ষণ)

আহহ, কি সুন্দর ঘ্রান আসছে, এতো সুন্দর ঘ্রান কই থেকে আসতেছে। (মৌ)

বেলী ফুলের ঘ্রান, বাগানে অনেক বেলী ফুল ফুটেছে, দেখলাম। (বর্ষণ)

প্লিজ আমি যাবো, আমি যাই একটু বাগানে প্লিজ। (মৌ)

এখন এতো রাতে, মাথা ঠিক আছে তোমার, যাও রুমে যাও ঘুমাও। (বর্ষণ)

যাই না প্লিজ। (মৌ)

মৌ এর এমন ভাবে প্লিজ বলায় আর না করতে পারে নি বর্ষণ।

আচ্ছা চলো, তবে আমিও যাবো ok। (বর্ষণ)

তাহলে যাওয়া যাক। (মৌ)

এই চার মাসে এই প্রথম মৌ বাগানে আসলো। যাক তাহলে তাদের ভালোবাসা একটু একটু করে দানা বাধতে শুরু করেছে।

বাগানে এসে মৌ অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে এতো এতো ফুল, তাকে বেশি কাছে টানে বেলী ফুল গুলো।

আর বর্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে মৌ কে, কি অপূর্ব লাগছে মৌ কে, রাতের গভীরতা যেন ডাকছে তাকে আর মৌ কে। নিজেকে সামলাতে পারছে না সে।

মৌ এর কাছে গিয়ে আস্তে করে মৌ এর খোপার চুল গুলো খুলে দেয় বর্ষণ, আর মৌ যেন বাক হারিয়ে ফেলেছে। বর্ষণের চোখে কিছুর চাহিদা দেখতে পাচ্ছে মৌ, অন্য রকম একটা মাদকতা তার চোখে, ভালোবাসার মাদকতা, যাতে মৌ হারাতে চেয়েও পারে না। মৌ কোন কথা বলতে পারছে না, বর্ষণ একটা হাত দিয়ে মৌ এর চুল গুলো ঘাড়ের কাছ থেকে সরিয়ে ঘাড়ে চুমো দিয়ে দেয়।, এক মুহূর্তে মৌ এর শরীর কেঁপে উঠে সমস্ত শরীর অসার হয়ে যেতে থাকে। কি যেন টানছে মৌ কে

বর্ষণ মৌ কে কোলে করে রুমে নিয়ে যায়, মৌ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বর্ষণের দিকে, আজ যেন নিজেকে ছাড়ানোর কোন চেষ্টা করতে তার ভালো লাগছে না।

মৌ কে খাটে শুইয়ে দিয়ে বর্ষণ, মৌ তখনো নিঃশ্চুপ, বর্ষণ যেন নিজের মাঝে নেই

মৌ ও এই প্রথম বর্ষণের ছোঁয়ায় শিহরিত হতে থাকে, শরীরে কোন সাড় নেই তার, নিজেকে আজ সপে দিতে ইচ্ছে করছে তার বর্ষণের কাছে,

বর্ষণ মৌ এর কাছে আসে, ২ জনেই চুপ চাপ, কারো মুখে কথা নেই, ২ জনেই যেন অন্য জগৎ এ আছে

বর্ষণ মৌ এর ঠোঁটের একদম কাছে চলে আসে, এতো কাছে যে এক জনের নিঃশাস অন্য জন শুনতে পাচ্ছে,
মৌ এর ঠোঁট জোড়া কাঁপছে, বর্ষণ দেখলো মৌ এর বা চোখের কোণা দিয়ে পানি বেয়ে পরছে তখনই বর্ষণের হুশ আসে।

এক ঝাটকায় বর্ষণ মৌ এর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়,

[এই টা কি হলো, এতো সুন্দর রোমান্টিক মুহূর্তে এসে বর্ষণ এই টা কি করলো , ধুর ছাতার মাতা,]

i am sorry মৌ
i am extremely sorry for this behave,
আমি ভুলে গেছিলাম তুমি তো আমাকে ভালোই বাসো না। আর আমিও তোমাকে কথা দিয়েছিলাম যতদিন পর্যন্ত তুমি নিজ থেকে আমার কাছে না আসবে আমি তোমাকে ছোবো না। আসলে কি বলো তো আমি আমার মাঝে ছিলাম না। sorry। (বর্ষণ)

না ঠিক আছে। (মৌ)

ok তুমি ঘুমাও একটু পরেই ভোর হয়ে যাবে। (বর্ষণ)

[রোমাঞ্চের ১৮ টা বাজাই দিছে এই পোলায় ]


পর্ব ২০

সকাল বেলা,

মৌ রেডি হয়ে নাও আমরা ১১ টায় বের হবো, লাঞ্চ আমার শ্বশুর বাড়ি হবে। (বর্ষণ)

আপনিও না, কেন এমন করছেন, বলেন তো। (মৌ)

কেন? তুমি কি চাও না আমি ওইখানে যাই। (বর্ষণ)

না মানে ইয়ে আর কি। (মৌ)

হয়েছে হয়েছে, ১৫ তারিখ আমার শ্বশুরের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী, আর আমি বড় জামাই, আমি যাবো না। (বর্ষণ)

এই এই দাঁড়ান দাঁড়ান আপনি কিভাবে জানলেন। (মৌ)

যার একজন আধী-ঘরওয়ালী আছে তার তো সবই জানার কথা তাই না। (বর্ষণ)

তার মানে লিরা, ওরে তো খাইছি আমি আজকে। (মৌ)

ওই তুমি কি রাক্ষসী নাকি, নাকি তোমার খানা কোথাও কম পরে, যার জন্য তুমি ওমন মিষ্টি গলুমুলু বাবুই পাখি টা কে খাবা, খবরদার ওর যদি কিছু হয় একদম জেলে ভরে দিবো। (বর্ষণ)

বাহ বাহ একদিনেই এতো ভাব, ওর সাথে নিঃশ্চয়ই দেখাও হয়ে গেছে তাই না, তাই তো বলি এতো ভালো ভালো কথা আসে কেন। (মৌ)

কি করবো বলো যার সাথে ৪ মাস আছি তার কাছেই কোন মূল্য পাই না তাই অন্যকে আঁকড়ে ধরে ভালো লাগা গুলা খুঁজে বেরাই। (বর্ষণ)

বর্ষণ একটা কথা ছিল, কাল রাতে এমন করলেন যে। (মৌ)

মৌ তুমি রেডি হও আমি একটু আসছি ok। (বর্ষণ)

যাহ বাবা কিছুই বলল না, কি হল। (মৌ)

মৌ রেডি হয়ে বসে আছে সেই কখন থেকে কিন্তু বর্ষণ এখনো আসছে না ঘড়িতে ১১ টার জায়গায় ১১৩০ বাজতে চলল,

হঠাৎ বর্ষণ তারাহুরা করে এলো,

মৌ চল চল এতো দেরি হয়ে গেছে বুঝতে পারে নি। (বর্ষণ)

আপনি আসছেন, সেই কখন থেকে বসে আছি, কোথায় গেছিলেন। (মৌ)

ওরে বাবা রে এতো প্রশ্ন তাও আবার এক সাথে কোন টার উত্তর দিবো বুঝতেছি না। (বর্ষণ)

বুঝতে হবে না, চলুন। (মৌ)

আচ্ছা দাড়াও একটু শুনো তো। (বর্ষণ)

আবার কি হলো, বলেন। (মৌ)

এই টা রাখো। (বর্ষণ)

কি এইটা। (মৌ)

দেখো কি। (বর্ষণ)

[মৌ খুলে দেখে একটা ব্র‍্যান্ড নিউ মোবাইল ]

কি দরকার ছিল এইসবের। (মৌ)

দরকার ছিল তাই তো দিলাম, নিউ সিম আছে, সব করে দিয়েছি। (বর্ষণ)

thanks। (মৌ)

আচ্ছা, চলো। (বর্ষণ)

রহমান ভাই গাড়ি আস্তে আস্তে চালাইয়েন। (বর্ষণ)

হুম ভাই। (রহমান ভাই)

মৌ এর বাসার সামনে,

মৌ কে আর তার বর কে দেখার জন্য পারা-প্রতিবেশীরা এসেছে,
[এই এক দোষ প্রতিবেশী দের, হয় বউ নয় বর বা হোক না কোন মেহমান আসলেই দেখতে চলে আসে, আল্লাহ্‌ এতো টাইম যে তারা কই পায় আল্লাহ্‌ মালুম ]

এই মৌ দেখছো, আমাকে দেখতে সবাই আসছে, আমি এখন ভাব -সাব নিয়া নামবো। (বর্ষণ)

হে হে হে এদের কাজ নাই তো
আর এরা আপনাকে দেখতে না আমাকে দেখতে এসেছে। (মৌ)

ধুর ধুর ধুর চলো নামি। (বর্ষণ)

হা হা হা চলেন। (মৌ)

গাড়ি থেকে নামার পরে,

মৌ তো পুরাই টাস্কি, বর্ষণ এতো কিছু কিনেছে। বর্ষণ কয়েক রকমের ফল, কয়েক রকমের মিষ্টি, আরো কত কিছু, তার মানে এতো কিছু কিনতে গিয়েই সে এতো লেট করেছে।

এতো কিছু আনার কি দরকার ছিল বাবা।
তুমি আসছো আমি এমনি খুশি বাবা। (মা)

কি যে বলেন আন্টি, আমি হলাম আপনার ছেলে আন্টি। (বর্ষণ)

ছেলে বুঝি মা কে আন্টি ডাকে? (লিরা)

ওরে আমার ছোট গিন্নী। (বর্ষণ)

হে হে হে, আসেন ভিতরে,
আপ্পি আমার ময়না পাখি টা আসছে। (লিরা)

সর সর দূরে থাক, তুই কি এখন তোর আপ্পি কে মিস করিস নাকি, এখন তো নাকি চুপি চুপি দেখা হয় ভাইয়ার সাথে সবই জানি আমি বুঝলা। (মৌ)

আচ্ছা চলো চলো
ভিতরে চলো। (লিরা)

মৌ তুই ওকে তোর রুমে নিয়ে যা মা। (মা)

আসুন। (মৌ)

wow, nice রুম কিন্তু। (বর্ষণ)

হুম আমি বরাবরই গুছানো। (মৌ)

আচ্ছা বারান্দায় কি রাখা আছে? দেখা যাচ্ছে। (বর্ষণ)

ছোট ছোট টবে ফুল গাছ লাগিয়ে ছিলাম
বাবার খুব পছন্দের জিনিস ছিল এই টা। (মৌ)

ওহ আচ্ছা। (বর্ষণ)

আচ্ছা আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন আমি মায়ের কাছে গেলাম। (মৌ)

রাতে খাবার টেবিলে,

এই ভাইয়া, আপনি খাচ্ছেন না কেন। (লিরা)

কোথায়? খাচ্ছি তো। (বর্ষণ)

হে হে হে হে। (লিরা)

হাসবি না পাকনি বুড়ি। (বর্ষণ)

রাত ১২ টা

কি ব্যপার, এইখানে দাঁড়িয়ে আছেন, ঘুমাবেন না। (মৌ)

ঘুম আসছে না। (বর্ষণ)

কষ্ট হচ্ছে, তাই না, আমি বলেছিলাম আসার দরকার নেই, তারপরও আসলেন। (মৌ)

আরে ধুর, যাও ঘুমাও। (বর্ষণ)

সকালবেলা,

আরে ভাইয়া কই যান। (লিরা)

একটু অফিস যাবো। (বর্ষণ)

আচ্ছা ভাইয়া, বিকালে আমার ফ্রেন্ডস রা আসবে আমরা সবাই আড্ডা দিবো, ok। (লিরা)

ok done
তাহলে বিকালে দেখা হচ্ছে, bye। (বর্ষণ)

bye ভাইয়া। (লিরা)

এই এই দাড়া দাড়া, কিরে কে কে আসবো রে বাসায়। (মৌ)

তুমি কি jelous feel করছো আপু। (লিরা)

কিহ, তোর তো বড় সাহস, অনেক পাকা পাকা কথা বলছ। (মৌ)

আরে না না আমি এমনি বলছি আর কি। (লিরা)

কে কে আসবো। (মৌ)

আমার ফ্রেন্ডস রা আপ্পি, ভাইয়া কে তো দেখে নাই তাই আসবে। (লিরা)

ওরা কি খুব সুন্দরী। (মৌ)

এই এই আপ্পি শুনো তোমার বর কে কেউ নিবে না ok
হে হে হে। (লিরা)


পর্ব ২১

বিকেল বেলা লিরার সব মেয়ে ফ্রেন্ডস রা চলে আসে

লিরা সবাইকে নিয়ে গল্পে মেতে ওঠে

এই দিকে মৌ এর অবস্থা খারাপ

[কেন খারাপ তা আমরা কিছুক্ষন পরেই দেখতে পারবো থুক্কু পরতে পারবো ]

দরজায় কড়া নারার শব্দ

ভাইয়া, আপু, এই আপু, ভাইয়া দরজা খুলো না কেন। (লিরা)

দরজা খুলে কিরে ব্যাপার কি এমন চিল্লাস কেন। (মৌ)

ভাইয়া কোথায়? ভাইয়া কে নিতে আসছি
সরো তো সামনের থেকে। (লিরা)

এই এই এই যা, ওয় যাবে না। (মৌ)

এই কে বলল, আমি যাবো না, আমি কি একবারও বলছি যে আমি যাবো না, চলেন ছোট গিন্নী যাওয়া যাক। (বর্ষণ)

ধুর যা ইচ্ছে কর আমার কি [মনে মনে]। (মৌ)

মা, এই মা। (মৌ)

কিরে কি হইছে এমন চিল্লাস কেন, কি হইছে তোর। (মা)

ওরা কই। (মৌ)

কারা কই। (মা)

মা একদম ঢং করবা না আমার সাথে, তুমি বুঝো না আমি কার কথা বলতেছি
তোমার গুনী মাইয়া আর তোমার বজ্জাত জামাই, ওরা কই। (মৌ)

ওরা ছাদে গেছে,
আচ্ছা শুন তো আমি ওদের সবার জন্য কিছু নাস্তা বানিয়েছি একটু দিয়া আয় তো মা। (মা)

আমি কেন মা। (মৌ)

এইখানে তুই আছিস তাই তোকেই বলছি, যা মা, দিয়ে আয়। (মা)

দাও তো
যত্তসব। (মৌ)

ছাদে গিয়ে মৌ এর চোখ ২ টা ৬ টা হয়ে যায়

একটা মেয়ে বর্ষণের গায়ে ঢুলে ঢুলে পরে যাচ্ছে প্রায়

কত্ত বড় ফাযিল মাইয়া
আরেকজনের জামাইর সাথে করে কি দেখছস
বেয়াদব মেয়ে
আজকে লিরার খবর আছে
আর উনিও যেমন, কি হেসে হেসে কথা বলছে
এতো হাসাহাসি করার কি দরকার। (মৌ)

আরে আপু এসে গেছে
আপু আসো আসো। (মুনা)

আপ্পি আসো আসো। (লিরা)

বর্ষণ একবার মৌ এর চোখের দিকে তাকায় আর মুচকি হাসে

আচ্ছা ভাইয়া আপনার বাসা কোথায়,
আর আপনি কত হ্যান্ডসাম। (শিলা)

উফফ এই মাইয়া করে কি
অসহ্য লাগে
ফালতু মাইয়া কি দরকার গায়ের উপরে পরা
এক কাজ কর না শুয়ে পর
বেয়াদব মেয়ে
নামের কি ছিরি শিলা
যত্তসব আদিক্ষেতা। (মৌ)

আরে আপু কিছু বলো না যে। (মুনা)

কি আর বলবো বল
তোমরাই তো বলতেছো
আর কে কি করতেছো সবই দেখতেছি আমি। (মনে মনে)

আচ্ছা তোমরা কথা বল
আমি বরং যাই
আর হ্যা আপনি বর্ষণ সাহেব ভালো মতন গল্প করবেন কেমন। (মৌ)

হুম ঠিক আছে thnx
আমাকে সুযোগ করে দেয়া জন্য মুচকি হেসে। (বর্ষণ)

মৌ রাগে কট-মট করতে করতে চলে যায়

গল্প ভালোই জমতে থাকে

হঠাৎ লিরার আরেক ফ্রেন্ড বলে উঠে,

এই লিরা তোর ভাইয়া তো অনেক সুন্দর আর অনেক অনেক হ্যান্ডসাম তাই না বল

হুম হুম আমার ভাইয়া না
সুন্দর আর হ্যান্ডসাম তো হবেই। (লিরা)

আরেক ফ্রেন্ড বলে
হ্যা ঠিক, তবে কিন্তু এই ভাইয়া অনেক কিউট
আগের ভাইয়া টা এতো টাও ভালো ছিল না

আগের ভাইয়া
কে?
কে গো ছোট গিন্নী
ওরা কার কথা বলছে। (বর্ষণ)

কেউ না ভাইয়া। (লিরা)

এই চল চল আমরা এখন নিচে যাই
আয় তোরা
ভাইয়া চলেন তো। (লিরা)

এই শুন না লিরা সা,

আহ মুনা আয় না প্লিজ নিচে যাই
আর কিছু ভালো লাগছে না
সন্ধ্যাও হয়ে গেছে। (লিরা)

হুম চল চল

ok ভাইয়া
আমরা আজ আসি
অনেক মজা করলাম
এই লিরা আপু আর ভাইয়া কে নিয়া আসিস,

বর্ষণের মনে ঘটকা থেকেই যায়
তখন ওরা কি বলল
আর লিরাও কথা এড়িয়ে গেলো
ব্যাপার কি

কি হল আড্ডা শেষ নাকি। (মৌ)

হুম শেষ। (লিরা)

আর আপনি এতো হা হা হি হি করার কি দরকার ছিল। (মৌ)

কোথায় হা হা হি হি করলাম আমি। (বর্ষণ)

আর বলতে হবে না আমি দেখেছি। (মৌ)

আচ্ছা ছোট গিন্নী
কোথা থেকে যেন কিছু জ্বলার গন্ধ পাচ্ছি। (বর্ষণ)

হুম ভাইয়া
আমিও পাচ্ছি
কার যেন দিল পুরছে। (লিরা)

এই লিরা
তুই যাবি এইখান থেকে
তা না হলে আমার হাতের মাইর খাবি। (মৌ)

আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি
যত দোষ নন্দ ঘোষ
সত্যি কথা বললেই মানুষ যে কেন এতো রাগ করে বুঝি না। (লিরা)

এই এই তুই দাড়া
আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন

হইছে হইছে আর কিছু করতে হবে না। (বর্ষণ)

এই বলে বর্ষণ মৌ এর হাত ধরে

ছাড়ুন তো আমাকে
যান যান ওই শিলা না টিলা
ওর কাছে যান
দেখলাম তো ভালোই ঢলা ঢলি করলেন। (মৌ)

নিজের বউ দেয় না তো কি করবো
তাই তো শিলা টিলার কাছে যেতে হয়। (বর্ষণ)

রাতের বেলা,

মৌ ঘুমানোর পরে বর্ষণের চিন্তা আরো ঘাঢ় হয়।
আচ্ছা তখন ওরা কি বলতে চাইলো।
আর লিরাই বা কেন ওদের থামিয়ে।
আর কোন ভাইয়ার কথা বলল,
আচ্ছা কোন ভাবে এইসব মৌ এর সাথে জড়িত নয় তো।
সব কিছু মাথার উপড়ে দিয়ে যাচ্ছে।
কাল মৌ এর চোখের আড়ালে লিরাকে জিজ্ঞাস করতে হবে।


পর্ব ২২

পরদিন দুপুর বেলা,

সবাই খাবার খেয়ে যে যার মতন কাজ করছে,

বর্ষণ দেখে মৌ শুয়ে আছে, কয়েকবার মৌ মৌ করে ডাকে, দেখার জন্য যে মৌ জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে আছে।

পরক্ষনেই সে সিউর হয় মৌ ঘুমিয়ে আছে

এই সুযোগ,

লিরার মুখ থেকে সত্যি টা বের করতে হবে

বর্ষণ আস্তে করে রুম থেকে বের হয়

লিরা কি করে দেখার জন্য, দেখে লিরা ড্রইং রুমে বসে ফেসবুকিং করতেছে।

আরে ছোট গিন্নী কি করা হচ্ছে? (বর্ষণ)

আরে ভাইয়া আসুন, বসুন তার আগে আপনি বলেন আপনি এইখানে কেন, আপনার বউ কই। (লিরা)

আমার আর বউ
নাক ডাকে
হা হা হা। (বর্ষণ)

আপুর ছোট থেকেই অভ্যাস দুপুরে খেয়ে একটু ঘুমায়
পরে যখন অফিস জয়েন করে তারপর থেকে তার দিনের ঘুম হারাম। (লিরা)

আচ্ছা বল আমরা এখন কি করি,

আচ্ছা দাবা খেলতে পারেন আপনি ভাইয়া? (লিরা)

হুম একটু আধটু তো পারি। (বর্ষণ)

তাহলে চলেন, এক রাউন্ড খেলা হয়ে যাক। (লিরা)

তুমি পারো নাকি। (বর্ষণ)

আবার জিগায়, বাবা নিজের হাতে আমাকে আর আপুকে শিখিয়ে দিয়েছিল, আপু কিন্তু আমার থেকেও ভালো খেলতে পারে, আপু যখন শিখে যায়, তারপর থেকে আপু একা এক টিমে আর আমি আর আব্বু এক টিমে খেলতাম, তারপরও সে আমাদের দুইজন কে হারিয়ে দিত। (লিরা)

তাই,
আমি তো জানতাম না তোমার আপুর এই গুন টাও আছে।
আচ্ছা চল খেলা হয়ে যাক। (বর্ষণ)

ok আপনি বসেন, আমি বোর্ড আর গুটি নিয়া আসি। (লিরা)

ok
এই সুযোগ
সুযোগ টা কাজে লাগাতে হবে, লিরার কাছ থেকে সব টা জানতে হবে আমাকে। (বর্ষণ)

খেলা শুরু হয়ে যায়,

২ জনেই মনযোগ দিয়ে খেলছে
এমন সময় বর্ষণ বলে আচ্ছা ছোট গিন্নী একটা কথা জিজ্ঞাস করি

হ্যা ভাইয়া বলেন না। (লিরা)

আচ্ছা ওইদিন তোমার ফ্রেন্ডস রা কি বলতে চেয়েছিল
আর কোন ভাইয়ার কথা জিজ্ঞাস করলো
আর তুমিও ওদের চুপ করিয়ে সবার সব কথা এড়িয়ে গেলা
আমাকে কি সত্যি টা বলা যাবে প্লিজ। (বর্ষণ)

এই কথা শুনে লিরা থতমত খেয়ে যায়
পরে কথা ঘুরিয়ে দেয় আর বলে
ভাইয়া আমরা খেলি আসেন
এই যে দেখেন আপনি কিন্তু পারছেন না
আমি জিতে যাবো কিন্তু

ছোট গিন্নী প্লিজ
আমাকে বল না কি হয়েছিল ১ বছর আগে। (বর্ষণ)

ভাইয়া প্লিজ বাদ দেন না
আর তাছাড়া আপু যদি জানতে পারে খুব রাগ করবে
আমাকে মেরেই ফেলবে আর কখনো এ বাড়িতে আসবে না
আপু কিন্তু খুব শান্ত কিন্তু যখন রাগে তখন সেই রাগ কমানোর সাধ্য কারো নাই ভাইয়া
তাই বলছি বাদ দেন। (লিরা)

নাহ
আজকে তোমাকে বলতেই হবে
প্লিজ লিরা বলো
প্লিজ বলো
কাল ওরা কোন ভাইয়ার কথা বলতে চাচ্ছিল
আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল
ওরা কি বলতে চাচ্ছিল লিরা। (বর্ষণ)

তাহলে শুনেন,

দেড় বছর আগে আব্বু আপুর বিয়ে ঠিক করে এক ভাইয়ার সাথে। ছেলেটির নাম ছিল সাব্বির। আব্বুর কেমন যেন এক আত্নীয় হয় ওনারা। তারপর দেখা শুনা শুরু হয়, ওনারা আমাদের বাসায় এসেছিল আপুকে দেখতে, সেইদিন সাব্বির ভাইয়াও এসেছিল তাদের সাথে, ছেলেটি দেখতে শুনতে ভালো ছিল।
আপুকে তাদের বেশ পছন্দ হইছে, আমাদেরও ওনাদের পছন্দ হয়। আপুকে রিং পরিয়ে বিয়ের ডেট ফালানো হয় ৬ মাস পর।
অনেক লং টাইম পরে ডেট ফালানো হয় বলে আপু আর সাব্বির ভাইয়ার মাঝে বেশ ভালো বন্ধুত্ত সুলভ রিলেশ হয়। যা পরবর্তিতে ভালোবাসায় রূপ নেয়। । আপু অনেক অল্প সময়ের মধ্যে সাব্বির ভাইয়াকে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলে।
তারপর দেখা করা, ঘুরতে যাওয়া, এক সাথে খাওয়া দাওয়া সব একসাথেই করে। এতো ভালোবাসার কারন ছিল তা হচ্ছে সাব্বির ভাইয়া ভালো মানুষ ছিলেন, তার প্রত্যেক কাজ ছিল নিখুঁত, যার মধ্যে বিন্দু পরিমান ফাক ছিল না।

আর আপুর খুব টেক-কেয়ার করত। আস্তে আস্তে সময় পার হতে থাকে আর আপু সাব্বির ভাইয়ার প্রতি আরো দুর্বল হতে থাকে। আমার সাথেও ভালো ব্যবহার করত সাব্বির ভাইয়া। আপু তো চোখে হারাতো সাব্বির কে।

সাব্বির কে নিয়ে অনেক সময় আমাদের সাথে মজা করে ঝগড়া করত। কি করবে বেচারি কখনো তো প্রেম ট্রেম করে নি তাই হয়তো প্রথম ভালোবাসা পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করত। রাত জেগে কথা বলা স্কাইপে তে কথা বলা সব সময় ফেসবুকে ম্যাসেজিং চলত তাদের। ।

এই টা বলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে লিরা

তারপর
তারপর কি হলো। (বর্ষণ)

তারপর,
আর মাত্র ১৫ দিন বাকি ছিল আপুর বিয়ের। মার্চ এর ২ তারিখ আপুর বিয়ে,
আর ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ দুপুরে হঠাৎ আব্বু স্ট্রোক করে। আব্বুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিচ্ছুক্ষণ পর আব্বুর মৃত্যু হয়। ।

এই বলে লিরা কান্না করে দেয়,
পুরা ভেঙে পরি আমরা সবাই, জানেন ভাইয়া। আপু সেইদিন অনেক কেঁদেছে, কারন আব্বু আপুকে খুব ভালোবাসতেন, আর আপুও আব্বুকে। সাব্বির এর পরিবার আসে। শুধু সাব্বির বাদে। এক প্রকার শোকের মধ্যে ছিল আমাদের ৩ জনের জীবন।

এর মধ্যে আফজাল আংকেল মানে আপনার বাবাকে অনেক বার আম্মু কল করেছিল কিন্তু উনি তখন দেশের বাহিরে ছিলেন।

এক শোক কাটিয়ে না উঠতেই আবার আরেকটি খারাপ খবর আমাদের কাছে আসে তা হচ্ছে,

নিঃশ্চুপ লিরা,

তা হচ্ছে
কি খারাপ খবর লিরা। (বর্ষণ)

তা হচ্ছে সাব্বিরের পরিবার বিয়ে টা ক্যান্সেল করে দেয়। এই খবর টা শুনা মাত্র মাও অনেক অসুস্থ হয়ে পরে। মা তাদের অনেক বুঝায়, যে এখন না হলেও পরে যাতে বিয়ে টা হয়, কিন্তু তারা রাজি হয় নাই। তাদের একটাই কথা যেই মেয়ের বাবা নেই সেই মেয়েকে তারা বউ করে নিবে না।

তারপর মা আপুকে বলে,
আপু তো বিশ্বাস করতেই চায় না, আপু ভেবেছে হয়তো সাব্বির মজা করছে,
একদিন বিকেলে আপু সাব্বিরকে কল করে অনেক গুলা কল দেয়ার পর সাব্বির কল টা রিসিভ করে।

আপুকে আমি সেইদিন অনেক অসহায় হতে দেখেছিলাম,
দেখেছি একটা মেয়ে কিভাবে তার ভালোবাসার মানুষ টাকে পাওয়ার জন্য তার সাথে একবার দেখা করার জন্য কেমন পাগল হয়েছিল

যাই হোক, তারপর অনেক কিছু বলার পর সাব্বির রাজি হয় আপুর সাথে দেখা করার জন্য। ।
পরদিন বিকেলে আপু তারাহুরা করে বাইরে চলে যায়, আমিও গিয়েছিলাম আপুর পেছনে পেছনে,
আমি জানতাম, যে আপু ওইখানে তো যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু ওইখান থেকে ফিরতে পারবে না একা।

ওরা একটা পার্কে দেখা করে, অনেক্ষন কথা বলে
আমি দূর থেকে দেখছিলাম, আপু শুধু কান্না করতেছে আর কি যেন বলতেছে আর সাব্বিরের হাত ধরছে আর সাব্বির বার বার আপুর হাত টা সরিয়ে দিচ্ছে। যার হাত টা এতো দিন সে ধরে ছিল আজ সে নিজেই সেই হাত টা সরিয়ে নিচ্ছে। আপুর এই অসহায় কান্না আর মেনে নিতে পারছিলাম না।

তারপর এক পর্যায়ে দেখলাম সাব্বির আপুর হাতের থেকে রিং টা খুলে নেয় আর আপু পাগলের মতন সাব্বিরের পা ধরে কান্না করতে থাকে।

তখন ভেবেছিলাম ওই কাপুরুষ টাকে গিয়ে বলি একটা মেয়ের বাবা থাকলেই কি তার বিয়ে করার অধিকার থাকে নাকি। তারপর সাব্বির ওইখান থেকে চলে যায় আর আমিও আপুকে নিয়ে আসি। সারা রাস্তা মেয়েটা একটা কথাও বলে নি জানেন ভাইয়া।
বাসায় এসে সোজা বাথরুমে ঢুকে যায় আর সে যে কি কান্না,

ওইদিন ওর কান্না দেখে আমিও নিজেকে ধরে রাখতে পারি নাই, বাথরুম থেকে বের হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুধু একটা কথাই বলেছিল যা এখনো আমার কানে বাজে “লিরা ও লিরা আমি পারলাম না আমার সম্বল টা ধরে রাখতে, আমাকে ফেলে চলে গেছে আমার সম্বল টা “
বলেই লিরা কান্না করে দেয়।

আর বর্ষণও নিজের চোখ কে কন্ট্রোল করতে পারে নি, আজ তার চোখ যেন আপন মনেই পানি ঝরাতে থাকে।

তারপর কি হলো। (বর্ষণ)

তারপর আর কি,
বিয়েটা কিন্তু মার্চ এর ২ তারিখ ঠিকই হয় শুধু বউ টা বদলে যায়।

শুনেছিলাম সাব্বির তার এক কাজিন কে বিয়ে করে অনেক ধুম-ধাম করেই, বুঝতেই পারলাম না একটা মেয়ের সপ্ন কিভাবে ভেঙে গুরিয়ে দিল তারা।
তারপর থেকে আপুও নিজেকে শক্ত করে ফেলে
এইসব ভালোবাসা, বিয়ে, সংসার আপুর অসহ্য লাগতো।

বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য ট্রাই করতে থাকে, কি করবে বলেন ভাইয়া সংসার চলছিল না। মামারা হেল্প করত কিন্তু কয়েকদিন পরে মামিরাও চোখ তুলল।
এইভাবেই ছয় মাস পার হয়।
এর মাঝে আপনার বাবাও আসেন দেশে। আপু আপনার বাবার সাথে দেখা করেন।
আর তারপর আপনাদের কোম্পানি তে জয়েন করেন। আমার আপুটা খুব কষ্ট পেয়েছে ভাইয়া। ওকে কখনো কষ্টের মাঝে রাইখেন না ভাইয়া।

শুনলেন তো সব। (লিরা)

হুম। (বর্ষণ)

আরে আরে ভাইয়া আপনি তো হেরে যাচ্ছেন, হাহাহা
আমি তো চাল দিয়ে দিলাম, এই আপনার ঘোড়া কাত এখন কি করবেন ভাইয়া জান আমার। (লিরা)

oh shet man, এখন কি করবো। তুমি আমাকে এইভাবে ফাঁসিয়ে দিয়েছো ছোট গিন্নী। (বর্ষণ)

তারপর ২ জনেই টান টান উত্তেজনায় দাবা বোর্ড এর দিকে তাকিয়ে থাকে। লিরা ভাবে একবার ভুল দান দেন ভাইয়া জিত আমার আর বর্ষণ ভাবে একবার ভুল দান দিলে আমার রাজা শেষ সাথে আমিও শেষ।

তারপর হঠাৎ করেই সুন্দর একটা ফর্সা কমল হাত বর্ষণের কাধ ছুঁয়ে পেছন থেকে ঘুরে এসে দাবা ঘরের সব গুটি ভেদ করে একটি গুটি সামনে এগিয়ে দিয়ে বলে “”চেক-মেট”।


পর্ব ২৩

আপ্পি তুমি এইটা কি করলা। (লিরা)

কি করলাম আমি। (মৌ)

কি করলাম মানে, তুমি চাল দিলা কেন, এখন তো আমি হেরে গেলাম। (লিরা)

আর তুই ওকে এতো নাকানিচোবানি খাওয়াচ্ছিস কেন। (মৌ)

ধুর ধুর আর কথা বলবো না তোমাদের কারো সাথে আমাকে হারিয়ে দিলো। (লিরা)

এই বলে লিরা রাগ করে চলে যায়

আর মৌ ও হাসতে হাসতে রুমের দিকে পা বাড়ায়

বর্ষণ তখনো মৌ এর দিকে তাকিয়ে থাকে
খুব সুন্দর লাগছে আজকে মৌ কে
ঘুম থেকে উঠেছে বলে গাল গুলো ফুলা ফুলা হয়ে আছে একদম একটা পরীর মতন লাগছে তাকে
অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে মৌ এর মাঝে
ইচ্ছে করছে জড়িয়ে ধরে রাখি

এই বলে বর্ষণও মৌ এর পিছনে দৌড়ে রুমে ঢুকে যায়
আর রুমে ঢুকেই মৌ কে পিছন দিক থেকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে

মৌ কে দেয়ালের সাথে আটকে ধরে সে আর একদম কাছে চলে আসে।

তারপর সে মৌ এর ঘাড়ের পিছনে হাত দিয়ে মৌ এর ঘাড় থেকে চুল গুলা সরিয়ে দেয় আর কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে বলে thank you

মৌ একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলে কেন?

এই যে আমাকে জিতিয়ে দেয়ার জন্য। (বর্ষণ)

মৌ আবার একটু হাসি দিয়ে বর্ষণের দিকে তাকায়

উফফফফ এমন হাসি দিলে পাগল হয়ে যাবো তো। ( বর্ষণ)

পাগল হতে হবে না। (মৌ)

আচ্ছা একটা জিনিস দিতে চাচ্ছিলাম gift হিসেবে। (বর্ষণ)

কিসের gift। (মৌ)

আমাকে জিতিয়ে দিলে তার gift। (বর্ষণ)

ওহ আচ্ছা তাই। (মৌ)

হুম তাই
এখন নেবে কি নেবে না ওই টা বলো। (বর্ষণ)

দিলে তো সবাই নেয়। (মৌ)

তাহলে চোখ বন্ধ কর। (বর্ষণ)

ok। (মৌ)

মৌ চোখ বন্ধ করার পরে বর্ষণ মৌ এর ২ টা চোখের পাতায় আলতো করে ২ টা চুমো দেয়।

আর মৌ তখন লাজুক চোখে বর্ষণের দিকে তাকায়

তারপর বর্ষণ চলে যেতে ধরে আর মৌ তখন বর্ষণের হাত টা ধরে আর নিজের মাথা টা দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে বলে এই রকম gift সারাজীবন চাই বর্ষণ।

পরে বর্ষণও হাসি দিয়ে বের হয়ে যায়।

ওই দিন মৌ শুধু বর্ষণের কথা ভাবে আর বলে আমি কি ওকে খুব ভালোবেসে ফেললাম।
হ্যা।
আমি ওকে খুব ভালোবাসি।
হ্যা আজ মৌ বুঝতে পারে যে সে বর্ষণ কে খুব ভালোবাসে।
যেই ভালোবাসা শব্দ টাকে মৌ সব থেকে বেশি ঘৃণা করত সেই ভালোবাসা শব্দ টা মৌ কে আবার জড়িয়ে ফেলেছে বর্ষণের কাছে।

মৌ ভাবতে থাকে কি করে বর্ষণের কষ্ট কমানো যায় কারন সে বর্ষণ কে অনেক কষ্ট দিয়েছে অনেক ছোট করেছে অনেক অপমান করেছে।
নাহ সে ভালোবাসে তার বরকে, সে আজ তার বরকে পরিপূর্ণ ভাবে পেতে চায়। সে চায় তার বর তার কাছে আসুক তাকে ভালোবাসুক।


পর্ব ২৪

আজ তাকে বলবো আমার মনের কথা। আবারো ভালোবাসার কাছে হার মানলো আমার রাগ। আমি যে ভালোবাসি তাকে। আমি যে ভালোবাসি আমার বর কে। সে যে শুধুই আমার। আমি হয়তো অনেক ভুল বুঝেছি তাকে।

আমি অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি তার সাথে। আমি তাকে হয়তো বুঝতেই পারি নি। আর সময় কে এইভাবে চলে যেতে দিবো না। নিজের জেদের জন্য অনেক ভুল করেছি অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করেছি কিন্তু আর নয়।

আজ রাতে আমার ভালোবাসার দাবি নিয়ে তার কাছে দাঁড়াবো। সে আমায় মেনে নিবে তো? ভালোবাসবে তো আগের মতন? নাকি আবারো আগের মতই ঠকে যাবো?
ভাবতে পারছি না আর। সব ভাবনার অবসান ঘটাবো আজ কে। (মৌ)

সন্ধ্যার পর,

আরে ভাইয়া কোথায় ছিলেন এতক্ষন? (লিরা)

এই তো একটু কাজ ছিল। (বর্ষণ)

ওহ, আচ্ছা আসুন বসুন এখানে। (লিরা)

হুম,
তা আর কি খবর তোমার ছোট গিন্নী, পড়াশুনা কেমন চলে। (বর্ষণ)

এই তো ভালোই চলছে। (লিরা)

আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসি
তারপর এক সাথে খাবো
একটু বসো। (বর্ষণ)

ভাইয়া ওই রুমে যাবেন না। (লিরা)

কেন কি হলো
ওই রুমে তো আমরা থাকি তাই না। (বর্ষণ)

হুম থাকেন তো
মানে ওই রুমের ওয়াশরুমের পানির লাইনে আজ কে কাজ করেছে। (লিরা)

কখন করলো
আমি তো দেখলাম না
কখন কাজ করলো। (বর্ষণ)

আরে আপনি যখন বের হয়ে ছিলেন তখন করেছে
হয়েছে
এখন যান ওই রুমের ওয়াশরুমে যান
কত কথা যে আপনি জিজ্ঞেস করেন
আল্লাহ। (লিরা)

আচ্ছা আচ্ছা ok
এতো রাগ করো কেন গো ছোট গিন্নী। (বর্ষণ)

রাতের খাবারের পর,

যেই না বর্ষণ রুমে যাবে ওমনি

ভাইয়া ভাইয়া একটু শুনবেন প্লিজ। (লিরা)

হুম বলেন
কি হয়েছে। (বর্ষণ)

বসেন একটু গল্প করি
আপনি এতো তারাতারি রুমে গিয়ে কি করবেন
নাকি আপ্পি কে ছাড়া এক মিনিট ও থাকতে পারেন না। (লিরা)

আরে না না তা না
আসলে কাল তো বাসায় মিলাদ
হুজুররা আসবেন
রান্নার লোকরা আসবেন

অনেক মেহমান আসবেন বাসায়
অনেক কাজ আছে
যাও যাও ঘুমাও গিয়ে আর আমাকেও ঘুমাইতে দাও। (বর্ষণ)

আরে যাবেন তো একটু বসেন। (লিরা)

পরক্ষনেই মৌ এর মেসেজ

ওকে আসতে দে লিরা

ok ok যান যান ঘুমান
যত্তসব
কত ঢং দেখলাম আমি। (লিরা)

এই বলে লিরা চলে যায়,

যাহ বাবা এই মেয়ে কি
একবার বসিয়ে রাখবে
আবার ঝারি দিয়ে চলেও যাবে। (বর্ষণ)

বর্ষণ রুমে যায়,

যেই না বর্ষণ রুমে যায় তখনই বর্ষণ এর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। ।
এতো সুন্দর করে রুম টা সাজিয়েছে, খাট টাও অনেক সুন্দর করে সাজানো। এইই সব দেখে বর্ষণ তো পুরাই থ। আর তার থেকে বড় অবাক হয়েছে মৌ কে দেখে

এতো সুন্দর করে সেজেছে মৌ। লাল শাড়ী পরেছে সে আজ। বর্ষণ যেন ওই জায়গাতেই আটকে আছে। মৌ কাছে এসে বর্ষণ এর গলা জড়িয়ে পা দুইটা উচু করে বর্ষণ এর দিকে লাজুক চোখে তাকিয়ে আছে

কি হলো কি দেখছেন এইভাবে। (মৌ)

নিশ্চুপ, (বর্ষণ)

এই কি হলো এখন কি কথা ও বলবেন না আমার সাথে নাকি। (মৌ)

হ্যা হ্যা
বল কি বলবা। (বর্ষণ)

ভালোবাসি বর্ষণ
খুব বেশি ভালোবাসি আপনাকে
বুঝতেই পারি নি এইটা
এতো বেশি দেরি করে ফেলেছি এই কথা টা বলতে। (মৌ)

অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পরো।
কাল অনেক কাজ। (বর্ষণ)

এই বলে মৌ এর হাত টা ছাড়িয়ে সামনে পা বাড়ায় বর্ষণ

শুনেন। (মৌ)

হুম
কিছু বলবা। (বর্ষণ)

আপনি কি খুশি হন নি। (মৌ)

খুশি হবো
খুশি হওয়ার মতন কি কিছু হয়েছে? (বর্ষণ)

এই যে আমি আজকে সাজলাম
কেন সাজলাম জানতে চাইবেন না? (মৌ)

কেন সেজেছো? (বর্ষণ)

আপনি কি সত্যি জানেন না কেন সেজেছি? (মৌ)

নাহ
জানলে তো আগেই বলতাম
তাই না। (বর্ষণ)

তাহলে আমিই বলি
আমি আজ আপনার জন্য সেজেছি
এই যে খাট টা দেখছেন সাজানো আছে
এই যে রুম টা সাজানো আছে
পুরা টাই আপনার জন্য সাজানো হয়েছে। (মৌ)

আমার জন্য
হঠাৎ। (বর্ষণ)

মৌ আর থাকতে পারছিল না
তাই সে বর্ষণ এর কাছে আবার ছুটে গেলো

অভিনয় করছেন
নাকি ভনিতা করছেন
নাকি কিছুই বুঝতে পারছেন না
নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছেন। (মৌ)

আমি ঘুমাবো মৌ
তুমিও ঘুমিয়ে পরো
অনেক রাত হলো তো। (বর্ষণ)

এই বলে বর্ষণ বিছানার দিকে পা বাড়ায়
আর মৌ বর্ষণ এর হাত ধরে ফেলে

বর্ষণ প্লিজ এমন করবেন না। আপনি কি আসলেই বুঝতে পারছেন না আজ এই সময় আমি কেন এইভাবে আপনার সামনে আসছি। (মৌ)

নাহ
বুঝতে পারছি না। (বর্ষণ)

ঠিক আছে
তাহলে আপনাকে বুঝেই বলি

আপনি বলেছিলেন না যেই দিন আমি নিজ থেকে আপনার কাছে আসবো সেই দিন আপনি আমায় স্পর্শ করবেন, সেইদিন আপনি আমায় ভালোবাসবেন, আমি আর থাকতে পারি নি বর্ষণ আমি আর থাকতে পারি নি, আমি আপনার কাছে নিজেকে উজার করে দিতে এসে গেছি বর্ষণ।

আজ আমি আপনার কাছ থেকে সেই সব কিছু চাই যা একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে প্রাপ্য। আমায় আজ আপন করে নিবেন প্লিজ। আজ আমায় ভালোবাসবেন প্লিজ। (মৌ)

মৌ এর কথা শুনে বর্ষণ পুরা হা হয়ে থাকে তারপর মৌ এর ডাকে তার হুশ ফেরে।

তারপর বর্ষণ মৌ এর কাছে আসে। দুই হাত দিয়ে মৌ এর দুই গালে ধরে, দেখে মৌ এর চোখে পানি টলমল করছে, তারপর মৌ এর কপালে একটা চুমো দিয়ে তাকে কোলে তুলে নেয় আর বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়।

[তারপর
হে হে হে
তারপর বাকিটা ইতিহাস 😛😛]

(আরে আরে আরে আরে
কি ভাবছেন আপনারা, হি হি হি
আপনারা তো খুব পচা, যা তা একেবারে,
লজ্জা সরম কিছু নাই আপনাদের
আসলে কি হইছে জানেন তো
চলেন আপনাদের ইতিহাস টা দেখাই থুক্কু শুনাই)

কিছুক্ষন আগে যা হয়েছিল আর কি

তারপর বর্ষণ মৌ এর কাছে আসে। দুই হাত দিয়ে মৌ এর দুই গালে ধরে, দেখে মৌ এর চোখে পানি টলমল করছে, তারপর মৌ এর কপালে একটা চুমো দিয়ে তাকে কোলে তুলে নেয় আর বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়।

তুমি কি জানো, তুমি এর আগেও একবার ঠিক এইভাবে আমার কাছে এসেছিলে। ( বর্ষণ)

তখন বুঝতে পারি নি
শুধু নিজের জেদের জন্য এমন করেছিলাম
কি করবো বলেন, আমি যে অসহায় ছিলাম
আমি যে ঠকে গেছি, যার কারনে আবারো ঠকে যাওয়া টা মেনে নিতে পারবো না বলে এমন করেছিলাম। প্লিজ আমায় মাপ করবেন, আমি ভালোবাসি আপনাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে, প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না। (মৌ)

বলতে গিয়ে মৌ এর চোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে।

বর্ষণ মৌ এর চোখের পানি মুছে দেয় আর বলে,

থাক আর বলতে হবে না, এখন ঘুমিয়ে যাও, আর কাল বিকেলে আমরা ফিরবো, ok, আর কথা বারিও না। (বর্ষণ)

এই বলে বর্ষণ মৌ এর কপালে আলতো করে আরেকটা চুমো দিয়ে দেয় আর ওইপাশ ফিরে শুয়ে পরে।

কি হইলো এই টা।
এই লোক তো খুব খারাপ।
রোমাঞ্চের ১৪ টা বাজিয়ে ছাড়লো।

আর মৌ ও এপাশ ফিরে শুয়ে যায় আর বালিশ চেপে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে তারপর এক সময় ঘুমিয়ে যায়।

কেঁদে নেও মৌ কেঁদে নেও
কারন আজ রাতের পর তোমাকে আর কাঁদতে দিবো না, তোমার সব কষ্ট আমার করে নিবো।

[এই হলো তাদের ইতিহাস বুঝলা আপুরা ]

গভীর রাত,

বর্ষণ এর আর ঘুম আসে নাই, খুব খারাপ লাগছিল মৌ এর জন্য। সে উঠে গিয়ে মৌ এর পাশে যায়, দেখে মৌ এর চোখে পানি আর পুরা মুখ ফুলে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক কান্না করেছে।
তখন বর্ষণ এর চোখেও পানি চলে আসে, তারপর আরেকটা চুমো দেয় মৌ এর গালে।
তারপর আবার শুয়ে পরে।


পর্ব ২৫

সকাল বেলা,

বর্ষণ সব একা হাতে সামলাচ্ছে। একদম মিলাদ পড়ানো থেকে শুরু করে ফকির-মিসকিন খাওয়ানো পর্যন্ত সব একা হাতে সামাল দিচ্ছে সে

মৌ এবং মৌ এর মা ও বোন সব দেখেতেছিল। তারা সবাই অবাক চোখে বর্ষণ এর দিকে তাকিয়ে থাকে।

আর মৌ ভাবছে এই কি সেই বর্ষণ যে কিনা ক্লাব – পার্টি – মদ নিয়ে থাকতো। আর সেই বর্ষণ কিনা আজ একা হাতে সব করছে।

এইদিকে মৌ এর মামা-মামি রাও চলে এসেছে। বর্ষণ সবার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে।

তারপর সব কাজ শেষ করে পরিবারের সবাই খেতে বসে। বর্ষণ রা চলে যাবে তাই মৌ এর মা মৌ কে আর বর্ষণ কে একসাথে খেতে দেয়।

এর মাঝেই বর্ষণ কে উদ্দেশ্য করে মৌ এর এক মামি মৌ এর মাকে বলে “আপনি খুব কপাল করে এমন জামাই পাইছেন আপা, যে কিনা শ্বশুড় বাড়ির সব কিছু একা হাতে সামলায়, এখন কার যুগে এমন ছেলে পাওয়াই যায় না, এখন কার যুগের ছেলেরা তো মেয়ের বাপ কে চায় মেয়েকে না ” [ দেখেছেন আপনারা মানুষ কত খারাপ, একটু সুযোগ পাইলে আর ছাড়ে না, কথায় আছে না কয়লা যতই ধুইবে মাগার ময়লা যাবে না, এদের অবস্থা হয়েছে ওই রকম ]

মামির মুখে এই কথা শুনে মৌ এর কলিজা আঁতকে উঠে। ভয়ে চুপশে যায় সে, চোখের পানি টলমল করতে থাকে।

মৌ এর এই অবস্থা দেখে বর্ষণ একটু হেসে বলে ‘মামি এতো টেনশন করার কি আছে বলেন তো, আমি তো আর মেয়ের বাপ কে নেয় নাই মেয়েকে নিয়েছি, তাই না আর আপনাদের দোয়ায় আমার অঢেল আছে যার একমাত্র মালকিন হচ্ছে আপনাদের মেয়ে। তাই বলছি আমাদের নিয়ে অহেতুক চিন্তা করে আপনাদের প্রেশার বাড়াবেন না, কেমন

মৌ এর এমন চুপ করা দেখে বর্ষণ বলে মৌ তারাতারি করো, আমাদের বেরোতে হবে তো

মৌ ও বর্ষণ এর কথা শুনে তারাতারি খেয়ে রেডি হয়ে সবাই এর কাছ থেকে বিদায় নেয় সাথে বর্ষণও বিদায় নিয়ে চলে যায়

গাড়িতে দুইজনের কেউ কারো সাথে কোন রকম কথা বলে নি। মৌ শুধু ভাবছে বর্ষণ কি বলল তখন

বাসায় এসে

মৌ ফ্রেশ হয়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় আর তখনই বর্ষণ বলে কোথায় যাচ্ছো?

নিচে। (মৌ)

কেন? (বর্ষণ)

ওমা কেন কি আবার
রাতের খাবার বানাতে হবে না
তাই রান্নাঘরে যাচ্ছিলাম আর
আপনি কফি খাবেন
বানিয়ে দিবো? (মৌ)

আজকে আর রান্না করতে হবে না। (বর্ষণ)

কেন। (মৌ)

আজকে রাতে বাহিরে dinner করবো। (বর্ষণ)

হঠাৎ। (মৌ)

এমনি
খেতে ইচ্ছা হলো
অনেক দিন বাহিরে যাওয়া হয় না তাই। (বর্ষণ)

কিন্তু। (মৌ)

কোন কিন্তু টিন্তু নয়
যখন যাবো বলেছি যাবো
Ok। (বর্ষণ)

Ok। (মৌ)

রাত,

বর্ষণ মৌ কে নিয়ে বেরিয়ে পরে
আসলে বর্ষণ চাইছিলো না যে মৌ এর মন খারাপ থাকুক। মা আর বোনের জন্য মন খারাপ করবে তাই মৌ এর মন টা ভালো রাখতে মৌ কে বাহিরে নিয়ে আসা হয়েছে আর কি

ওরা কিছুক্ষন ঘুরলো তারপর রেস্টুরেন্টে গেলো

ওরা খাবার অর্ডার করে বসে আছে, আর নিজেরা কথা বলছে, আজ মৌ কে খুব সুন্দর লাগছে তাই বর্ষণও মৌ এর দিকে তাকিয়ে আছে আর কথা বলছে

কিন্তু হঠাৎ, ওদের কথার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে কেউ একজন বলে উঠলো

আরে মৌ,

মৌ পিছনে তাকায়,
আর মৌ এর কলিজা টা মোচর দিয়ে উঠে।
মৌ কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে এমন অবস্থা হয়ে গেছে, তার মনে একটাই ভয় তার সাথে বর্ষণ। এখন কি করবে সে।

একবার বর্ষণ এর দিকে তাকায় তো আরেকবার সেই অজ্ঞাত লোকটির দিকে তাকায়। ভয়ে মৌ এর মুখ শুকিয়ে আসে আর চোখের পানি টলমল করতে থাকে। বর্ষণ ব্যাপার টি বুঝতে পারে তারপরও চুপ করে থাকে

এমতাবস্থায় লোকটি আবার বলে উঠে

চিনতে পারছো না
নাকি না চেনার ভান করছো,

মৌ তোমাকে উনি ডাকছে তো
কথা বলো। (বর্ষণ)

আমি তাকে চিনি নাহ। চলেন আমরা উঠি। (মৌ)

সত্যি কি চিনো না নাকি এক বছরের ব্যবধানে সব ভুলে গেছো,

না চিনি না। (মৌ)

সত্যি চিনো না,

আচ্ছা উনি যখন তোমাকে চিনে
তাহলে কথা বলো। (বর্ষণ)

আপনি কি হন মৌ এর,

কোন টা শুনতে চান। (বর্ষণ)

যেই টা বলে আপনি শান্তি পান,

আচ্ছা তাহলে বলেই ফেলি
আমি মৌ এর husband। (বর্ষণ)

ওহ,
তাই বলুন
এই জন্যই হয়তো মৌ আমার সাথে কথা বলতে চাইছে না বা চিনতেও পারছে না
তাই না,

কেন ও কি চুরি করেছে নাকি
যে কথা বলবে না। (বর্ষণ)

চলুন না
আমরা চলে যাই
বাদ দেন না প্লিজ। (মৌ)

wait wait
চুপ করে বসো
আমি কথা বলছি তো
তাই না
ওহ হ্যা by the way আপনি এতক্ষন তো অনেক কথাই বললেন এখন আপনি বলেন আপনি কে? who r u? (বর্ষণ)

মৌ কে জিজ্ঞাস করেন
আমি কে? ,

মৌ কে দেখে তো মনে হচ্ছে না ও কিছু বলবে
কেন আপনি কি মুখে ব্যাথা পাবেন নাকি?
আপনার পরিচয় টা আপনিই বলেন। (বর্ষণ)

আমি সাব্বির, আমার সাথে মৌ এর,
[খাইছে রে হারামজাদায় হাজির]

ব্যাস হয়ে গেছে
বুঝে গেছি
আর বলতে হবে না
আপনি মৌ এর কি সেই টা আমি জানি আর ব্যাখ্যা করতে হবে না। (বর্ষণ)

মৌ অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে বর্ষণ এর দিকে।

শুনলাম তো বিয়ে করেছেন।
তা একা একা খেতে এসেছেন।
বউকে সাথে আনেন নি। (বর্ষণ)

[বাশ বাশ আর বাশ খা আরো বাশ বজ্জাত হারামি একটা ]

না মানে এই আর কি। (সাব্বির)

ok ok ভালো থাকবেন
যদি ভাগ্যে থাকে তাহলে আবার আপনার মুখোদর্শন হবে।
চলো মৌ আমরা যাই। (বর্ষণ)

এই বলে বর্ষণ মৌ এর হাত ধরে সেইখান থেকে চলে আসে।

মৌ কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না বর্ষণ এই সব কিভাবে জানতে পারলো।


পর্ব ২৬

রাতের বেলা,

মৌ বাসায় এসেছে ঠিকই কিন্তু সে বর্ষণের সাথে কোনরকম কথা বলে নাই। বর্ষণও বলে নাই। কারন সে বুঝতে পেরেছে এই মুহূর্তে মৌ কথা বলার মতন অবস্থায় নেই। তার মানে হাজারো প্রশ্নের ঘুরপাক। মৌ নিজের মতন change করে বারান্দায় গিয়ে রকিং চেয়ারে বসে বসে ভাবে

আচ্ছা ও কেন এলো আবার। পুরা ১ টা বছর পর ও কেন ফিরে এলো। তাও এমন এক মুহূর্তে যে মুহূর্তে আমি নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিলাম বড় নিবির ভাবে। আজ প্রায় ৪ মাসের মতন যাকে বিয়ে করলাম তার সাথে এখনো সংসার টাই গুছিয়ে উঠতে পারি নি যখন ভাবলাম গুছিয়ে সংসার করবো তখনই সে এসে হাজির হলো আমার সামনে।

কি করব আমি এখন? যে ছেলে আমার বাবা মারা গিয়েছে বলে আমাকে বিয়ে করলো না, আমার কান্না যার চোখে পরলো না, আমার কথা গুলো যার কান অবদি পৌছায় নাই আজ সে আবারো এসে হাজির আমার সামনে। ওহ কি অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের ভেতরে।

তার থেকে বড় কথা বর্ষণ কিভাবে এই সব জানতে পারলো। কে বলেছে ওকে এইসব কথা। উফফফ শরীর টা যেন অসার হয়ে যাচ্ছে, দম বন্ধ হয়ে আসছে, আর পারছি না
এই সব ভাবছে আর তার দু চোখ দিয়ে বেয়ে বেয়ে পানি পরছে

কিভাবে জানলাম
কে বলেছে আমাকে
এইসব তোমাকে না ভাবলেও চলবে
তুমি নিজেকে শক্ত করো মৌ। (বর্ষণ)

বর্ষণ এর কথা শুনে চমকে বর্ষণ এর দিকে তাকায় মৌ
ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকা মৌ কে যেন আজ একদম অন্যরকম লাগছে। বর্ষণ এসে মৌ এর সামনে নিজে হাটু গেরে বসে,

কি হয়েছে মৌ?
একদম চুপ হয়ে গেছো যে
বাহিরে থেকে এসে কোন কথাও বললা না
এইখানে এইভাবে বসে আছো,
একি তোমার চোখে পানি কেন?

তুমি কি কাঁদছ মৌ?
কার জন্য কাঁদছ?
যে তোমাকে তোমার দুঃসময়ে ফেলে চলে গেছে তার জন্য কাঁদছ বুঝি। (বর্ষণ)

মৌ কোন কথা বলতে পারছে না
আস্তে করে রকিং চেয়ারের পিছনের দিক টায় মাথা টা ঠেকিয়ে শুয়ে আছে সে।
বর্ষণ এই সব দেখে মৌ এর হাত টা শুক্ত করে ধরে।
মৌ চমকে তাকিয়ে আছে বর্ষণ এর দিকে

এতো দিন পর মৌ এর মনে হচ্ছে এই হাত টাকে অনেক ভরসা করা যায়। এই হাত টার সাথে হাত রেখে বাকি জীবন টা পার করা যাবে। এই হাতের স্পর্শে সারা শরীর এক অজানা শিহরন এর আলোরন হয়।

মৌ এক কাজ করো, দেখো তো কয় টা বাজে?
এখন রাত ১ টা বাজে, আমরা বাসায় এসেছি প্রায় ২ ঘন্টার মতন হয়ে গেছে, অথচ তুমি একটা কথাও বলো নি আমার সাথে। (বর্ষণ)

ভেজা ভেজা কন্ঠে মৌ বলে আপনি ঘুমিয়ে যান কাল তো অফিস আছে তাই না, যান ঘুমিয়ে যান

আচ্ছা মৌ দেখো চারিদিক টা কত শান্ত, রাত জোনাকিরা কি সুন্দর করে জ্বলে নিভে। মৌ আজ তুমি তোমার সমস্ত কষ্ট গুলো ঝেড়ে ফেলো। আমাকে তোমার সমস্ত কষ্টের ভাগ দাও। আমি তোমার সমস্ত কষ্ট গুলা কে আমার মাঝে ধারন করে নেই। । বলো মৌ বলো। (বর্ষন)

আমার কষ্ট গুলা আমারই থাক। আপনাকে আমার কষ্ট বইতে হবে না। আপনিও কষ্ট পাবেন, তার থেকে বরং আপনি ভালো থাকুন। (মৌ)

আমার বউ টা কষ্টে ব্যাথিত আর আমি ভালো থাকি কিভাবে, বলতে পারো। তার থেকে চল আজ থেকে আমরা একটা নতুন অধ্যায়ের শুভ সূচনা করি, তুমি তোমার সমস্ত দুঃখ গুলো দিয়ে দাও আর বিনিময়ে আমার সমস্ত সুখ দিয়ে তোমায় ভরিয়ে দিবো। কি দেবে আমায় তোমার কষ্ট গুলা।
এই বলে মৌ কে উঠিয়ে কোলে তুলে নেয় বর্ষণ। তারপর মৌ কে নিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ায় বর্ষণ

ছাদে রাখা দোলনায় মৌ কে বসিয়ে দেয় আর তারপর নিজেও মৌ এর সামনে বসে পরে আর মৌ এর হাত টা আবার শক্ত করে ধরে।

এইবার বলো
তোমার মনের সকল অব্যক্ত কথা গুলা আজ আমি শুনবো। আজকের পর থেকে আমি হবো তোমার দুঃখের সাথী আর তুমি আমার সুখের সঙ্গি। (বর্ষণ)

রাত বাড়ছে, গোটা শহর টা ঘুমিয়ে আছে। চারদিক টা থমথমে, হালকা কুয়াশা ঢেকে রেখেছে চারদিক টা।

দোলনার এক পাশে মাথা ঠেকিয়ে মৌ বলা শুরু করে,

একটা সময় ওকে খুব ভালোবাসতাম জানেন, নিজের থেকেও বেশি। কিন্তু ও কেন এমন টা করলো আমার সাথে। ও আমায় কথা দিয়েছিল যে আমাকে ছেড়ে নাকি কখনো যাবে না, অথচ সব মিথ্যা ছিল। মন উজার করে ভালোবেসেছিলাম ওকে আমি।

শুধু একটা কথা চিন্তা করে যে, এই মানুষ টা হয়তো আমার জন্যই তৈরি হয়েছে অথচ তখনো বুঝি নাই যে সব কিছুই ছিল মিথ্যা। মিথ্যার সাথে আর যাই হোক বসবাস করা যায় না। ও তো নিজেই বলেছিল আমার পাশে ও নাকি সব সময় থাকবে অথচ দেখেন যখন পাশে থাকার সময় এসেছে তখনই ও আমার থেকে সরে গেলো। কত বুঝিয়েছি জানেন তো, অনেক কেঁদেছি, শেষ পর্যন্ত ওর পায়ে ধরলাম, কেন জানেন যাতে আমায় ছেড়ে না যায়।

কিন্তু সে কি করলো আমার হাত থেকে রিং টা জোর করে খুলে নিলো। (কথা গুলো বলতে গিয়ে মৌ এর গলা টা বার বার বন্ধ হয়ে আসছিলো, মনে হচ্ছে এখনি বুঝি তার প্রাণ টা বের হয়ে যাবে)

তারপর। (বর্ষণ)

বিয়েও হলো শুধু বউ টা পাল্টে গেলো, ও খুব সুখে আছে কিন্তু আমার সামনে কেন আসলো সে। এইভাবে আমার সামনে এসে আমাকে আবার কষ্টের মাঝে ফেলে দিল দেখলেন। শুধু ওকে ভালোবেসে ঠকেছি বলে এই ভালোবাসা শব্দ টাকেই ঘৃণা করেছি।

আপনার মনে আছে যখনই আপনি ভালোবাসার কথা বলতেন আমি কি করতাম, এই টাই ছিল তার কারন বর্ষণ। আচ্ছা আমার কি দোষ ছিল বলেন তো, আমার অপরাধ টা কোথায় ছিল। আমি তো প্রেমও করি নাই আমার তো বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাই না। তাহলে এমন টা কেন করলো ওরা আমার সাথে। জানেন সবাই আমাকে কত কথা শুনিয়েছিল। প্রতিবেশীরা নিজের আত্নীয়রা সবাই, মনে কাটা গায়ে লবনের ছিটা মারতো।

এই সব বলে ঠুকরে ঠুকরে কাঁদতে থাকে মৌ। এক পর্যায়ে বর্ষণ কে জড়িয়ে ধরে আর চিৎকার করে কান্না করে উঠে মৌ। বর্ষণ কিছু ভেবে না পেয়ে মৌ কে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে রাখে। আর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর মনে মনে বলে এর শাস্তি তো সাব্বির কে আমি দিয়েই ছাড়ব। ও তোমাকে যেই কষ্ট দিয়েছে তার তিন গুন কষ্ট ওকে ফেরত দিবো আমি। এই বলে নিজের চোখের পানিও আটকে রাখতে পারে নি বর্ষণ

আমি চাই না ও আমার সামনে আসুক। ও আমার সামনে আসলেই আমার ওইদিন বিকেলের কথা মনে পরে যায়, সব কিছু আমার চোখের সামনে ভাসে। প্লিজ বর্ষণ ওকে যেন আর কখনো আমার সামনে না আসতে হয় প্লিজ।

ওকে আর আমি দেখতে চাই না প্লিজ। আর হ্যা প্লিজ আপনি আমায় ছেড়ে যাবেন না আমি আবারো ভালোবেসে ফেলেছি। আমি আর ঠকতে পারবো না বর্ষণ। এইবার মরেই যাবো। (মৌ)

কেঁদো না প্লিজ আর কেঁদো না। চুপ করো প্লিজ।
মৌ এই মৌ। কথা বলছো না যে, কি হলো মৌ। (বর্ষণ)

কথা বলবে কি করে সে, সে তো অজ্ঞান হয়ে গেছে। অতিরিক্ত কান্নাকাটি করায় শরীর দুর্বল হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে হয়তো।

বর্ষণ মৌ কে তারাতারি রুমে নিয়ে যায় তারপর doctor কে ফোন করে। অবশ্য doctor হচ্ছেন বর্ষণ এর বাবার ফ্রেন্ড, যখন তখন ফোন দিলেই উনি চলে আসে। তাই আজো এর বিকল্প হয় নি ফোন করার সাথে সাথে তিনি চলে এসেছেন

কেমন দেখলেন আংকেল
hospital এ নিয়ে যাবো কিনা। (বর্ষণ)

না না তেমন কিছুই হয় নি
প্রেশার লো হয়ে গেছে
শরীর অত্যন্ত দুর্বল তাই তাল সামলাতে পারে নি
জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
কয়েকদিন rest নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
আর কিছু medicine দিয়ে গেলাম এই গুলা নিয়ম করে খাওয়ালেই সুস্থ হয়ে যাবে কেমন। (doctor)

জ্বি আংকেল
আংকেল thank you। (বর্ষণ)

আরে ধুর
এই সব thanks লাগবে না।
ওর খেয়াল রেখো।
আসছি আজ। (doctor)

জ্বি
আসসালামুআলাইকুম। (বর্ষণ)

ওয়ালাইকুমআসসালাম। (doctor)

doctor চলে যাওয়ার পর বর্ষণ সারারাত মৌ এর পাশে বসা ছিল।

আর ভাবতে থাকে সাব্বির কে কিভাবে ধ্বংস করা যায় কিভাবে ওকে কষ্টে রাখা যায়।
এইসব ভাবতে ভাবতে বর্ষণ মৌ এর পাশে বসেই ঘুমিয়ে যায়।

পরদিন সকালবেলা,


পর্ব ২৭

পরদিন সকালবেলা,

কি ব্যাপার আপনি এইখানে এইভাবে বসে আছেন। (মৌ)

কাল রাতে আপনি খুব অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। তাই আপনাকে সেবা করতে হয়েছে আমার সারারাত জেগে জেগে [মুচকি হেসে ]। (বর্ষণ)

কিহ,আপনি সারারাত ঘুমান নি, (মৌ)

নাহ ম্যাডাম। (বর্ষণ)

sorry। (মৌ)

কেন কেন sorry কেন আবার। (বর্ষণ)

এই যে আমার জন্য আপনি এতো করলেন আর সারারাত জেগে কাটিয়েছেন, চোখ মুখের কি অবস্থা করেছেন দেখেছেন একবার। (মৌ)

ও কিছু না, আচ্ছা এখন উঠো, ময়না নিচে নাস্তা দিচ্ছে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমিও অফিসে যাবো। (বর্ষণ)

কই যাবেন। (মৌ)

অফিসে যাবো, আজকে যেতে হবে কাজ আছে। (বর্ষণ)

কোন কাজ করতে হবে না, এখন নাস্তা খাবেন তারপর এক টানা ঘুমাবেন। (মৌ)

আরে নাহ পাগল
আমাকে আজ অফিসে যেতে হবে। (বর্ষণ)

হে হে
ভুল বললেন
পাগল না পাগলি। (মৌ)

ওরে দুস্টু ফাইযলামি করো তুমি। (বর্ষণ)

আপনি বসেন আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর নাস্তা করবেন তারপর একটু ঘুমাবেন, কেমন। (মৌ)

যো হুকুম বেগম সাহেবা। (বর্ষণ)

উফফফফফফ ঢং করবেন না তো। (মৌ)

মৌ বাথরমে গেলে,

হ্যালো আরিফ একটা কথা ছিল। (বর্ষণ)

জি স্যার বলেন। (আরিফ)[অফিসের একজন employee]

———————————————

—————————————————(বর্ষণ)

জি স্যার ok আমি সব ব্যবস্থা করতেছি স্যার
আপনি একদম কিছু ভাববেন না আজকে দিনের মধ্যে হয়ে যাবে। (আরিফ)

ok
আর দেখো একদম ঠান্ডা মাথায় করবে কেউ যেন টের না পায়। । আর হ্যা আমার নাম টা যাতে ভুল করেও না আসে আরিফ। যত টাকা লাগে আমি দিবো ok। (বর্ষণ)

স্যার একদম নিশ্চিন্ত থাকুন। একদম ক্লিয়ার ভাবেই করবো। বিকেলের মধ্যে আপনাকে জানাচ্ছি আমি। (আরিফ)

ok। (বর্ষণ)

বর্ষণ, (মৌ)

চমকে গিয়ে,
কি ব্যাপার কখন বের হলে
আমি তো টেরই পাই নাই। (বর্ষণ)

কাকে কি বললেন যেন
কি হয়েছে, কে কি করবে ঠান্ডা মাথায়। (মৌ)

কই কিছু না তো
তুমি কি শুনতে কি শুনেছো। (বর্ষণ)

আচ্ছা আচ্ছা থাক এখন চলেন
এই বলে মৌ আয়নার সামনে নিজের চুল ঠিক করে

বর্ষণ পিছন থেকে মৌ কে জড়িয়ে ধরে

উফফফফ যা লাগছে না আমার বউ টাকে। (বর্ষণ)

তাই। (মৌ)

আচ্ছা মৌ একটা কথা বলো তো
সত্যি করে বলবা কিন্তু। (বর্ষণ)

বলেন, কি বলবেন। (মৌ)

মৌ এর মাজায় হাত রেখে

কোমর টা এতো চিকন কেন। (বর্ষণ)

কিহহহহহহহ,
ফাযিল ছেলে
দেখাচ্ছি মজা। (মৌ)

এই এই না না,
আচ্ছা আচ্ছা সরি
আর বলব না। (বর্ষণ)

এই দাঁড়ান বলছি
দাঁড়ান
দৌড়াচ্ছেন কেন, দাঁড়াইতে বলছি না। (মৌ)

সরি বলছি কিন্তু
এখন কিন্তু মারলে খবর আছে। (বর্ষণ)

মৌ হঠাৎ করেই শাড়ী পেঁচিয়ে পরে যেতে ধরে আর বর্ষণ ধরে ফেলে [ফিল্মি কাহিনী হে হে হে ]

আরে আরে আরে ধরেন ধরেন , ধুম,

ও মা গো মা
গেলাম গেলাম আমি গেলাম
আমার মাজা গেলো।
আল্লাহ গো শেষ আমি আল্লাহ। (মৌ)

ওই ওই চুপ
আমার কানের পোকা বের করে দিছে রে
এতো জোরে কেউ চিল্লায়
তুমি নিচে পরো নাই
খাটে পরছো
বুঝলা। (বর্ষণ)

ও তাই নাকি
যাক আল্লাহ্‌ বাচিয়েছে
এখন সরেন আমার উপর থেকে
কি আজব, এতো বড় শরীর টা একটা বাচ্চা মেয়ের উপরে পরে আছে মেয়ে টা মরে যাবে তো। (মৌ)

ইশশশ
বাচ্চা মেয়ে
তা কে বাচ্চা মেয়ে
তুমি নাকি। (বর্ষণ)

হুম আমি ছাড়া আর কে। (মৌ)

ওলে আমাল কতি খুকি লে
চাপাবাজি একদম করবা না আমার সাথে
যে কোন দিন বাচ্চার মা হবেন
তিনি নাকি বাচ্চা মেয়ে। (বর্ষণ)

হতে পারলাম আর কই [মুখ টা মলিন করে ]। (মৌ)

কেন হওয়া যাবে না বুঝি। (বর্ষণ)

জানি না
এখন সরেন আমি উঠি। (মৌ)

আর যদি না উঠি তখন কি করবা। (বর্ষণ)

কিছুই করবো না এইভাবেই থাকবো। (মৌ)

good
very good। (বর্ষণ)

আচ্ছা একটা কথা বলি [বর্ষণের গলা জড়িয়ে ধরে]। (মৌ)

বলো। (বর্ষণ)

সেইদিন রাতে এমন করলেন কেন
জানেন আমি কত কষ্ট পেয়েছিলাম সেইদিন
কি এমন চেয়েছিলাম যে দিতে পারেন নি। (মৌ)

[মৌ এর চুলে বিলি কেটে দিয়ে ]
চাও না কেন
এখন থেকে সব চাইবা
যখন যা লাগবে সব চাইবা
কথা দিলাম কোন চাওয়াই তোমার অপূৃর্ণ রাখবো না। (বর্ষণ)

আমার কিছু চাই না, (মৌ)

তাই কিছুই চাও না। (বর্ষণ)

না কিছুই চাই না। (মৌ)

তাই,
ছোট মৌ চাই না আমার বউটার। (বর্ষণ)

হা হয়ে
হ্যা কি বললেন
আবার বলবেন প্লিজ কি বললেন। (মৌ)

বললাম আমার বউটার ছোট মৌ চাই না। (বর্ষণ)

না চাই না
আমার ছোট একটা বর্ষণ চাই
যে কিনা তার বাবার মতন হ্যান্ডসাম হবে, যার কিনা বাবার মতন ডেসিং পারসোনালিটি থাকবে [লজ্জা পেয়ে ]। (মৌ)

ওরে বাবা আমি এতো হ্যান্ডসাম। (বর্ষণ)

হুম। (মৌ)

তাই নাকি। (বর্ষণ)

হুম আমার বর অনেক ভালো আর অনেক হ্যান্ডসাম। (মৌ)

তাই নাকি!
এতো দিন তো বলো নাই।
এখন বলতেছো
মতলব টা কি শুনি। (বর্ষণ)

মৌ এর চোখে পানি টলমল করছে।
আমাকে একটু ভালোবাসবেন প্লিজ।
আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
আমি মরে যাবো আপনাকে ছাড়া। (মৌ)

বর্ষণ মৌ কে তার সব টুকু শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে খবরদার আর কখনো এমন কথা বলবা না। আমি কোথাও যাবো না বুঝলা, না তোমাকে যেতে দিবো। (বর্ষণ)

এই বলে বর্ষণ মৌ এর ঠোটের মাঝে নিজের ঠোট জোড়া বসিয়ে দেয় আর মৌ ও বর্ষণ কে জড়িয়ে ধরে,

কয়েক মিনিট পর,
ও ভাই
ও ভাবি
কি অইছে আন্নে গো।
আইজ্জা কি নিচে নামতেন না।
নাস্তা দিয়া রাখছি তাগো কোন খবর নাই। (ময়না)

ময়নার ডাকে ছেদ পরে তাদের মধুর সময়ের মাঝে।

চলেন ময়না বেগম ডাকছে [হেসে]। (মৌ)

উফফফফ এই ময়নাকে কোন দিন জানি আমি আছাড় মারি। (বর্ষণ)

ওই ওর হাজবেন্ড আপনাকে আছড়াবে
চলেন তো। (মৌ)

চলো। (বর্ষণ)

নাস্তা করে মৌ রান্না ঘরে কাজ করে আর বর্ষণ রুমে গিয়ে ঘুম দেয়।

ফোনের শব্দে তার ঘুম ভাঙে

হ্যালো আরিফ বলো
কাজ হয়েছে। (বর্ষণ)

জি স্যার
একদম
just finish করে দিয়েছি। (আরিফ)

good
i hope কাল আমি অফিসে দেখতে পাবো। (বর্ষণ)

জি স্যার 100%। (আরিফ)

ok রাখো এখন
কাল কথা হবে
bye। (বর্ষণ)

bye স্যার। (আরিফ)


পর্ব ২৮

পরদিন সকালবেলা,

সোনা বউ ও সোনা বউ। (বর্ষণ)

মৌ নিশ্চুপ,

[একটা চিমটি দিয়ে] ওই পেত্নী ওই। (বর্ষণ)

কে রে, ও মা গো হাত টা জালিয়ে দিল উফফফফফফ কি হইছে টা কি বজ্জাত লোক একটা। (মৌ)

তোমাকে যে ডাকি তুমি শুনতে পাও না। (বর্ষণ)

কোথায় কখন আপনি আমাকে ডাকলেন। (মৌ)

এই যে কিছুক্ষন আগে ডাকলাম সোনা বউ বলে। (বর্ষণ)

ওহ আচ্ছা আপনি আমায় ডাকছিলেন
আমি ভাবলাম কাকে না জানি কি বলছেন
এহহহহহহহ,আদিক্ষেতা করার আর জায়গা পায় না এখন আসছে সোনা বউ সোনা বউ বলতে, ওমন সোনা বউ এর ক্ষেতায় আগুন। (মৌ)

আল্লাহ্‌ গো কত কথা বলে ,
আমি গেলাম গেলাম, (বর্ষণ)

হিহিহিহিহি,কই যাচ্ছেন না তো। (মৌ)

আচ্ছা শুনো আমি একটু অফিসে যাচ্ছি, (বর্ষণ)

ok যান
bye bye
আর আসার সময় আমার জন্য ফুচকা নিয়া আসবেন
আমার খেতে ইচ্ছা করছে অনেক। (মৌ)

ফুচকা
ওই টা আবার কি
খায় নাকি মাথায় দেয়
হ্যা, (বর্ষণ)

রাস্তার পাশে লোকেরা বিক্রি করে,
আমাদের অফিস টা আছে না তার নিচেই দেখবেন এক মামা বিক্রি করে
ওনার ফুচকা অনেক মজা হয় ওনার কাছ থেকে আনবেন। (মৌ)

ছিঃ,ছিঃ,
খাচ্ছর একটা
ওই গুলা কি কেউ নাকি পচা খাবার
ওই গুলা আমি বরং তোমার জন্য বার্গার পিজ্জা নিয়ে আসবো তাও আবার চীজ দিয়ে, ঠিক আছে। (বর্ষণ)

কিহহহহহহহ
ওই আমি কি ওই ফালতু খাবার খাবো নাকি
আমি যা বলছি তাই আনবেন
ঠিক আছে এর বাহিরে যদি কিছু আনেন তাহলে ওই গুলা আপনাকে গেলাবো আমি হ্যা
মনে যাতে থাকে খারাপ লোক একটা, (মৌ)

আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে আসবো
বাই, (বর্ষণ)

ভালোই চলছে বর্ষণ আর মৌ এর সংসার,
কিন্তু কোথাও একটা কমতি রয়েই যায় তাদের মাঝে,

অফিসে,

আরিফ আমার কেবিনে এসো। (বর্ষণ)

জি স্যার

স্যার আসবো। (আরিফ)

হুম আসো
আচ্ছা কাল সব ঠিক ঠাক ছিল তো, (বর্ষণ)

হুম স্যার
সব ঠিক ছিল। (আরিফ)

দুপুর বেলা,

হ্যালো স্যার, (আরিফ)

হুম বলো,
কি হয়েছে। (বর্ষণ)

স্যার
বান্দা তো হাজির। (আরিফ)

that’s nice
i like it
good, (বর্ষণ)

হুম স্যার
MD স্যার এর সাথে দেখা করতে চায়, (আরিফ)

দেরি কিসের পাঠিয়ে দেও। (বর্ষণ)

ok স্যার। (আরিফ)

৫ মিনিট পর,

may i come in sir,

yes come,

স্যার আপনাদের কোম্পানি তে লোক লাগবে শুনেছিলাম,স্যার আমার চাকরি টার খুব দরকার স্যার,চাকরি টা না হলে বউ বাচ্চা নিয়ে পথে নামতে হবে স্যার,স্যার প্লিজ,

কিন্তু আপনার কোয়ালিফিশেন তত টাও ভালো না
i am sorry আপনি অন্য জায়গা try করেন। (বর্ষণ)

স্যার,স্যার, প্লিজ স্যার
একটা সুযোগ দিয়ে দেখেন না,
প্লিজ স্যার প্লিজ

ok
i w’ll try
আপনি এখন আসুন। (বর্ষণ)

এই বলে বর্ষণ লোকটির সামনে ঘুরে বসে

লোকটি অবাক হয়ে যায়,

আপনি,

yes আমি
ওহ আচ্ছা আপনি
তা এই অফিসে। (বর্ষণ)

আপনি এই কোম্পানির MD

হুম কেন
তা আপনি না ভালো চাকরি করতেন
ওই খান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে কেন
নাকি ওইখানেও ২ নাম্বারি করেছিলেন। (বর্ষণ)

excuse me

o,o,o,
excuse me toooo,
this is my office
so stop,
ok। (বর্ষণ)

sorry স্যার,

bye the way Mr. Sabbir
welcome to our office, (বর্ষণ)

Thank you so much sir, thanks lot, (সাব্বির)

এখন thanks thanks যত পারো বলে নেও সাব্বির সাহেব
কাল থেকে তোমার কষ্টের দিন শুরু, (বর্ষণ)

রাতে,

ম্যাডাম কই আপনি, (বর্ষণ)

কি হলো টা কি। (মৌ)

এই নিন আপনার ফুচকা, (বর্ষণ)

thanks, i love u, i love u so much, উম্মাহহহহ,

বাহ উম্মাহহহহ টা কিন্তু অনেক মজার ছিল। (বর্ষণ)

যাহ ফাযিল, এখন আমাকে কোন disturb করবেন না, আমি এখন ফুচকা খাবো। (মৌ)

ok,
তোমার এই ছোট ছোট খুশি গুলা এখন থেকে আমি দেখবো, কথা দিলাম তোমাকে মনে মনে

ফুচকা খাওয়া শেষ করে মৌ বলে
thanks আমাকে ফুচকা খাওয়ানোর জন্য
আর সরি তখন আপনাকে ওইভাবে, মানে,

হে হে হে
কিন্তু আমার এখন একটা জিনিস চাইবো দিবা

কি জিনিস বলেন
দিবো, (মৌ)

তাই
এই বলে বর্ষণ মৌ এর দিকে আগায় আর তারপর মৌ কে কোলে তুলে নেয়, তারপর মৌ কে বিছানায় শুইয়ে দেয়, আর অতঃপর মৌ এর মাঝে ডুবে যেতে চায়,মৌ ও আর বাধা দেয় নাই সেও বর্ষণ এর মাঝে হারিয়ে যেতে শুরু করে আর তখই

ওই ভাই ওই ভাবি
আন্নে গো কি সারাদিন রুমের মধ্যে থাকতে মন চায়
রাইত হইতেছে সেই দিকে খবর আছে নি খাইবেন না নাকি। আমার আবার যাওন লাগবো। (ময়না)

উফফফফফফ আবার ময়না। (বর্ষণ)

হিহিহিহিহি। (মৌ)

তুমি হাসছো। (বর্ষণ)

আচ্ছা চলেন খেয়ে নেন। (মৌ)

ধুর ভাল্লাগেনা। (বর্ষণ)

কি আজব চলেন তো। (মৌ)

গভীর রাতে,

বর্ষণ এই বর্ষণ। (মৌ)

হুম বলো কি হইছে
ঘুমাইতে দাও না একটু। (বর্ষণ)

ধুর ঘুমান
খবিশ একটা। (মৌ)

ওই আমি খবিশ না
একটু ঘুমাই আর কি। (বর্ষণ)

অসময়ে ভালোবাসা জাগে
আর সময়ে ভালোবাসা পালায়
তখন শুধু ঘুমাইতে ইচ্ছা করে
যত্তসব, (মৌ)


পর্ব ২৯

পরদিন অফিসে,

ক্রিং ক্রিং,

হ্যালো। (মৌ)

হ্যালো জানু। (বর্ষণ)

থাপ্পড় দিয়া গালের সব গুলা দাত ফালাই দিবো,বিবাহিত মেয়েকে জানু ডাকস, কে রে তুই। (মৌ)

আস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ, ওই তুমি কাকে কি বলতেছো, আমার voice ও কি ভুলে গেছো নাকি সোনা বউ। (বর্ষণ)

বর্ষণ, আ,প, নি,
উফফফফফফফফসসসসস sorryyyyyy,
আমি বুঝতে পারি নাই ঠিক,আসলে কাজের মধ্যে বিজি ছিলাম তাই ধ্যান টা ওইখানেই ছিল, sorryyyyyyy। (মৌ)

আচ্ছা শুনো একটা কথা আছে। (বর্ষণ)

হুম বলেন। (মৌ)

হাতের কাজ শেষ করে ল্যাপটপ টা নিয়ে বসবা
কিছু ফাইল মেইল করে দিচ্ছি তোমাকে,
কাল কে S.S কোম্পানির সাথে মিটিং আছে
আর তার প্রজেক্ট টা তুমি করবা,ok madam। (বর্ষণ)

[বর্ষণ ইচ্ছে করেই মৌ কে প্রজেক্ট এর দায়িত্ব দেয় কারন বর্ষণ জানে মৌ বরাবরই ভালো প্রজেক্ট তৈরি করে, আর প্রেজেন্টেশন অনেক ভালো করে, মৌ এর হাত থেকে কখনো কোন ডিল ছুটে না ]

কিন্তু, এখন, কিভাবে,আমি। (মৌ)

মৌ প্লিজ প্রজেক্ট টা তুমি করবা, আর কিছুই শুনতে চাচ্ছি না,রাতে বাসায় এসে কথা বলবো, ok, (বর্ষণ)

ok done। (মৌ)

ok baby
bye। (বর্ষণ)

bye। (মৌ)

রাতে বাসায় এসে বর্ষণ এসে দেখে মৌ ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে,

কি ম্যাডাম,
কি করা হচ্ছে। (বর্ষণ)

বর্ষণ খুব প্রবলেম হচ্ছে, বুঝতেই পারছি না কিভাবে করলে বেটার হবে। (মৌ)

ঠান্ডা মাথায় ভাবো বের হয়ে যাবে। (বর্ষণ)

ব্রেইনে কিছুই আসছে না
আচ্ছা কাল কখন প্রেজেন্টেশন। (মৌ)

বিকাল ৪ টায়
তুমি সাড়ে ৩ টায় যাবে অফিসে
ঠিক আছে। (বর্ষণ)

হুম
কিছু খাবেন
কফি খাবেন এনে দেই। (মৌ)

না না
তুমি কাজ করো
আমি আজ কফি বানাবো
তুমি আর আমি এক সাথে খাবো
ok। (বর্ষণ)

তাই আপনি বানাবেন। (মৌ)

হুম
কেন বানাতে পারি না
আমি কিন্তু ভালো কফি বানাতে পারি
হে হে হে। (বর্ষণ)

তাই তাহলে আজ কে আপনার হাতের বানানো কফি খাবো। (মৌ)

ok
তুমি কাজ করো
আমি নিয়ে আসছি। (বর্ষণ)

১৫ মিনিট পর কফি হাতে,

এই যে ম্যাডাম নিন
আপনার কফি। (বর্ষণ)

thanks স্যার। (মৌ)

খুব কষ্ট দিচ্ছি তাই না তোমাকে। (বর্ষণ)

আরে না ধুর,কি যে বলেন না আপনি, কিসের কষ্ট। ডিল টা হলে আমাদেরই তো লাভ তাই না। (মৌ)

বর্ষণ দেখছে মৌ কাজ করছে আর ওর চুল গুলা উড়ছে মৌ কে খুব সুন্দর লাগছে। বর্ষণ কাছে বসে নিজের হাত দিয়ে মৌ এর চুল গুলা ঠিক করে দেয়,

কি হলো। (মৌ)

কিছু না
তুমি কাজ করো আর হ্যা কাল কিন্তু একদম ঘাবড়াবে না তুমি। (বর্ষণ)

ঘাবড়ানোর কি আছে,আমি তো আজকে নতুন প্রেজেন্টেশন করবো না তাই না, আমি বুঝতে পেরেছি হয়তো টেনশন টা আপনার আমাকে নিয়ে,আমি আপনাকে বলি আমায় নিয়ে আপনাকে টেনশন করতে হবে না, কাল ডিল টা আমিই নিবো, & i promise u that, (মৌ)

বর্ষণ হালকা হাসে আর কফিতে চুমুক দেয়,

রাত প্রায় ২ টায় সব কাজ শেষ করে মৌ ঘুমাতে যায় আর বর্ষণ তার আগেই ঘুমিয়ে পরে,

মৌ বর্ষণ এর কপালে চুমো দিয়ে বর্ষণ এর বুকের উপরে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পরে,

পরদিন বিকাল ৩ টায় অফিসে,

আরিফ সব ঠিক ঠাক আছে তো। (বর্ষণ)

জি স্যার সব কিছু পারফ্যাক্ট আছে এখন ওনারা আসলেই আপনি সব শুরু করতে পারবেন স্যার। (আরিফ)

নাহ,আজ মিটিং করবে তোমাদের ম্যাডাম। Mrs. M.D. of this company,আজকের প্রেজেন্টেশন উনি নিজেই করবেন। (বর্ষণ)

তাহলে ধরে নেন ডিল টা আমরাই পাচ্ছি স্যার যখন ম্যাডাম নিজেই আসছেন এইখানে। (আরিফ)

হুম
সাব্বির কে পাঠিয়ে দাও। (বর্ষণ)

জি স্যার। (আরিফ)

আসবো স্যার, (সাব্বির)

জি আসুন
বসুন। (বর্ষন)

জি স্যার। (সাব্বির)

আজকে Mrs.M.D. কোম্পানিতে আসবেন,ওনার সমস্ত দায় ভার আপনার, ম্যাডামের কি লাগবে না লাগবে সব আপনি দেখবেন।,understand Mr. sabbir। (বর্ষণ)

জি স্যার, (সাব্বির)

আপনি এখন আসতে পারেন। (বর্ষণ)

৩২০,

অফিসের সামনে গাড়ি এসে থামলো,

একজন employee বলে, এই ম্যাডাম চলে আসছে।

এই শুনে সব employees রা মৌ এর দিকে তাকায়,
মৌ কিছু টা অপ্রস্তুত হয়ে পরে,পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নেয়,

সবার সাথে হাটার উপরে কথা বলে সোজা বর্ষণ এর রুমে ঢুকে যায় মৌ।

এই সব দেখে সাব্বির তো পুরাই বেকুব হয়ে যায়,তার ১ বছর আগের কথা মনে পরে যায়,
যেই মৌ একদিন তার পা ধরে কান্না করেছে আর আজ সেই মৌ এই কোম্পানির Mrs.M.D . আর তার আন্ডারে কাজ করতে হচ্ছে তোমায়,

may i come mr. borshon। (মৌ)

yes my leady। (বর্ষণ)

what’s up। (মৌ)

good,
বসো
কোন প্রবলেম হয় নি তো। (বর্ষণ)

আরে না কি প্রবলেম হবে আমি ঠিক আছি। (মৌ)

এরই মাঝে সাব্বির এর আগমন, অনেক টাই বিচলিত করে মৌ সাব্বির কে দেখে,

ম্যাডাম কিছু লাগবে আপনার। (সাব্বির)

no
আপনি বরং এখন আসতে পারেন, (মৌ)

কি হয়েছে হুম, (বর্ষণ)

ও এই অফিসে কি করে। (মৌ)

কেন
কাজ করে
কি হয়েছে। (বর্ষণ)

ওর কাজের কি হইছে
আর আমাদের অফিসেই কেন বর্ষণ। (মৌ)

ইতোমধ্যেই আরিফ আসে আর জানায়
ক্লাইন্ট রা চলে আসছে,

আচ্ছা পরে কথা বলি এই নিয়ে
এখন চলো মিটিং রুমে যাই। (বর্ষণ)

হুম ok। (মৌ)

মিটিং রুমে অত্যন্ত সুন্দর করে মৌ প্রেজেন্টেশন সাবমিট করে

যার ফলে ডিল টা ওরা পেয়ে যায়

আর ওইদিকে সাব্বির তো মৌ কে যত দেখে ততই অবাক হচ্ছে

অনেক বড় ডিল হওয়াতে বর্ষণ আর মৌ খুব খুশি হয়

hello everyone, (বর্ষণ)

yes sir। (employees)

আমরা অনেক বড় কনট্রাক্ট সাইন করলাম এতে আমাদের কোম্পানি টপে উঠে যাবে। এই খুশিতে কাল সন্ধ্যায় একটা success party এর arrange করা হয়েছে। আপনারা সবাই সেখানে আমন্ত্রিত। (বর্ষণ)

সবাই এক সাথে হাত তালি দিয়ে উঠে

আর বর্ষণ ও মৌ সেইখান থেকে প্রস্থান করে,


পর্ব ৩০

বাসায় এসে,

এই মৌ একটু শুনবে প্লিজ। (বর্ষণ)

হুম বলেন। (মৌ)

উহু। (বর্ষণ)

কি উহু। (মৌ)

[কাছে গিয়ে] মৌ আমায় আপনি আজ্ঞে আর কত করবে বলো তো। (বর্ষণ)

তাহলে কি বলবো। (মৌ)

তুমি করে বলো
আজ থেকে তুমি আমায় তুমি করে বলবে
কেমন। (বর্ষণ)

দেখা যাক। (মৌ)

কি দেখা যাক
আরে কই যাও [হাত ধরে]। (বর্ষণ)

রান্না ঘরে, আজ কিন্তু ময়না নেই তাই আর ময়নার আশা করে লাভ নেই আমাকেই রান্না করতে হবে। (মৌ)

আচ্ছা শুনো [হাত ধরে]। (বর্ষণ)

হুম বলেন। (মৌ)

কাছে আসো। (বর্ষণ)

কি। (মৌ)

তারপর মৌ কে কাছে টেনে নেয় বর্ষণ। একদম কাছে, তারপর বর্ষণ মৌ এর দিকে এগুতে থাকে, মৌ ও যেন কোন শক্তির কাছে বাধা পরে যায়। তারপর ২ জনের ঠোট এক হয়ে যায়। আজ যেন সব বাধা পেরিয়ে গেছে ওদের মাঝে। কতক্ষন ওরা ওইভাবে ছিল কেউ জানে না। প্রায় অনেক্ষন পর বর্ষণ মৌ কে ছাড়ে, ২ জনেই হাপিয়ে গেছে, তারপর মৌ বর্ষণ কে ধাক্কা মেরে দৌড়ে পালায়।

বর্ষণ হেসে বাথরমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। আজ বর্ষণ অনেক খুশি কারন আজ সে মৌ এর জন্য অনেক বড় ডিল পেয়েছে আর সাথে সাব্বির কেও উচিত শিক্ষা দিতে পেরেছে। একদিন মৌ তার কাছে নত হয়েছিল আর আজ সে মৌ এর কাছে নত হয়েছে।
এইসব ভাবতে ভাবতে নিচে যায় বর্ষণ। দেখে মৌ রান্না ঘরে রান্না করছে। হঠাৎ বর্ষণ মৌ কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আর মৌ একটু কেঁপে উঠে।

আরে ভয় পাও কেন
আমি তো তাই না। (বর্ষণ)

সরি
বুঝতে পারি নি আমি। (মৌ)

আচ্ছা আমি কিছু খাবো। (বর্ষণ)

কি খাবেন বলেন
আমি দিচ্ছি। (মৌ)

তোমাকে। (বর্ষণ)

মামে কি। (মৌ)

মানে আর কি মানে,
মানে আমি একটু মিষ্টি খাবো। (বর্ষণ)

ওহ আচ্ছা, দাঁড়ান তাহলে আমি ফ্রিজ থেকে বের করে দিচ্ছি। (মৌ)

ধুর লাগবে না। (বর্ষণ)

কেন। (মৌ)

কাছেই টমেটো সস এর বোতল রাখা ছিল আর বর্ষণ ওইদিকে হাত দিয়ে বলে আমি ওই টা খাবো

তা নিন না একটু
কাছেই তো আছে
নিয়ে খেয়ে নিন। (মৌ)

Ok। (বর্ষণ)

তারপর বোতল টি থেকে সস নিয়ে ইচ্ছে করে মৌ এর মুখের কাছে নিয়ে এসে চাপ দেয় আর সস গিয়ে মৌ এর মুখে আর গলায় পরে

উফফফফফ
কি করলেন এইটা। (মৌ)

সরি সরি
আমি না বুঝতে পারি নাই। (বর্ষণ)

ধুর
সব সময় ফাইযলামি ভালো লাগে না। (মৌ)

আচ্ছা সরি বললাম তো
দাও মুছে দেই। (বর্ষণ)

হুম তারাতারি। (মৌ)

এই বলে বর্ষণ আবার মৌ এর কাছে চলে আসে। আর মৌ এর হার্টবিট বাড়তে থাকে। [হা হা হা ফিল্মে যা হয় আর কি]

বর্ষণ মৌ এর ঠোটের উপরে থাকা সস গুলা নিজের ঠোট দিয়ে চুষে নেয়, আর মৌ কোন এক অজানা শিহরনে আটকে যায়, নিজের অজান্তেই সে বর্ষণ কে জড়িয়ে ধরে [আচ্ছা রোমাঞ্চ করবি কর না তাই বলে রান্না ঘরে, আল্লাহ্‌ শুনায় কি, রুমের মধ্যে মনে হয় অবোরোধ চলতেছে ]

তারপর ঠোট ছেড়ে গলায় নেমে যায় বর্ষণ। । এইবার আর মৌ ঠিক থাকতে পারে নি সে আরো শক্ত করে বর্ষণ কে জড়িয়ে ধরে।

প্লিজ একটু ছাড়বেন। (মৌ)

উহু। (বর্ষণ)

কেন
না ছাড়লে রান্না টা করতে পারবো না
আর রান্না না করলে খাবেন কি বলেন তো রাত তো হচ্ছে তাই না। (মৌ)

ছাড়তে পারি এক শর্তে [মৌ এর চুলে মুখ গুজে]। (বর্ষণ)

বলুন কি শর্ত। (মৌ)

তুমি করে বলতে হবে। (বর্ষণ)

আচ্ছা ঠিক আছে। (মৌ)

কি ঠিক আছে। (বর্ষণ)

এই যে তুমি করে বলা টা
এখন ছাড়ো রান্না করে নেই প্লিজ। (মৌ)

ok
এই বলে বর্ষণ মৌ কে ছেড়ে দেয় আর রান্না ঘরে থেকে বেড়িয়ে যেতে পা বাড়ায়।

আর মৌ পেছন থেকে হঠাৎ করেই ডাক দেয়

বর্ষণ দাড়াও। (মৌ)

হুম বলো। (বর্ষণ)

তারপর কাছে এসে সেই সস বর্ষণ এর গালে ঠোটে আর গলায় লাগিয়ে দেয়

এই টা কি হলো। (বর্ষণ)

বর্ষণ এর মুখে হাত দিয়ে চুপ
আমার তো খাওয়া হয় নি। (মৌ)

এই বলে মৌ বর্ষণ কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আর এক এক করে বর্ষণ ওর গাল থেকে ঠোটে, ঠোট থেকে গলা থেকে সস গুলা চুষে নেয়

আর বর্ষণ মৌ এর কোমর টা জোরে চেপে ধরে,

you are so fast madam। (বর্ষণ)

i know
i know
i am so fast my hubby। (মৌ)

তা আরেকটু হয়ে যাক না। (বর্ষণ)

খবরদার না
আগে রান্না করতে দাও
তারপর খাবা
ok। (মৌ)

রান্না শেষে মৌ রুমে গিয়ে দেখে বর্ষণ ল্যাপটপে কাজ করে।

স্যার রান্না হয়ে গেছে। (মৌ)

তাহলে কাছে আসা যাক। (বর্ষণ)

যাহ ফাযিল
খবরদার আমার কাছে আসবা না একদম
আমার সারা শরীর এখন ঘামে ভরা
মসলার গন্ধে আমার নিজেরই বমি আসতেছে
আমি শাওয়ার নিতে যাচ্ছি
বসো
এসে এক সাথে খাবো। (মৌ)

Ok। (বর্ষণ)

good boy। (মৌ)

আমি always good boy। (বর্ষণ)

আধা ঘন্টা পর মৌ বের হয় শাওয়ার নিয়ে
নাইটি পরেছে আজকে সে
অনেক সুন্দর লাগছে মৌ কে
আয়নার কাছে এসে চুল মুছছে

আর বর্ষণ সে তো মনে হয় এই টার অপেক্ষা করছিলো এতক্ষন ধরে

মৌ কে জড়িয়ে ধরে পিছন থেকে বর্ষণ
মৌ এর ভেজা চুলের ঘ্রান নেয়

চুলে কি সেম্পু ইউজ করো তুমি। (বর্ষণ)

কেন। (মৌ)

ঘ্রান টা অনেক সুন্দর
আমি পাগল হয়ে যাব। (বর্ষণ)

আচ্ছা আচ্ছা থাক
আর পাগল হতে হবে না
চলো খেতে চলো। (মৌ)

উহুম তুমি রোমাঞ্চের ১৮ টা বানাও কেন?
ধুর তুমি একটা বুড়ি। (বর্ষণ)

আর তুমি বুইড়া
হি হি। (মৌ)

তারপর ২ জন মিলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমাতে যায়,

রাতে,

মৌ এই মৌ। (বর্ষণ)

হুম
শুনতেছি বলো। (মৌ)

কাল party তে কি পরবে। (বর্ষণ)

তুমি বলো কি পরবো। (মৌ)

আচ্ছা কাল বলবো
এখন একটু কাছে আসো। (বর্ষণ)

আর কত কাছে আসবো
এতো কাছে আছি তারপরও বলতেছো আরো কাছে আসো। (মৌ)

আরো কাছে আসো। (বর্ষণ)

আসছি নাও হইছে। (মৌ)

বর্ষণ মৌ এর পেটে হাত রাখে। তারপর বর্ষণ মৌ এর কপালে চুমো দেয়, মৌ ও কেঁপে উঠে। তারপর বর্ষণ মৌ এর ঠোট কে নিজের দখলে নিয়ে আসে, আর মৌ ও বর্ষণ কে খামচে ধরে।
ওরা ২ জনেই যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে, বর্ষণ মৌ এর গলায় নেমে আসে, গলা থেকে বুকে নেমে আসে।
এক পর্যায়ে বর্ষণ মুখ উঠিয়ে দেখে মৌ এর চোখের কোণা বেয়ে পানি বেয়ে পরে।
তখনই বর্ষণ মৌ কে ছেড়ে দেয়, আর বলে সরি, হয়তো ভুল হয়ে গেছে এই বলে মৌ এর উপর থেকে সরে যেতে চাইলে মৌ বর্ষণ এর হাত ধরে ফেলে,

প্লিজ আজ আর নয় বর্ষণ, আজ আর আমাকে দূরে ঠেলে দিও না প্লিজ। (মৌ)

কিন্তু মৌ
আমি জোর করে কিছুই আদায় করতে চাই না। (বর্ষণ)

কে বলেছে তুমি জোর করে আদায় করছো
যা হচ্ছে দুই জনের মতেই হচ্ছে
শুধু তুমি আমায় ভালোবাস প্লিজ। (মৌ)

তোমার চোখে পানি কেন মৌ। (বর্ষণ)

আরে বোকা পানি কি শুধু কষ্টে আসে
চোখে পানি সুখেও আসে
তুমি শুধু আজ আমায় উজার করে ভালোবাস প্লিজ
এই বলে মৌ নিজেই বর্ষণ এর ঠোট নিজের ঠোটের সাথে পিষে ধরে। বর্ষণ আর নিজেকে সামলাতে পারে নি তাই সেও ডুব দেয় মৌ এর ভালোবাসার মাঝে। আজকের রাত টা অন্যরকম একটা রাত। আজকের রাত শুধু ২ টি দেহের মিলনের রাত নয় আজকের রাত ২ জন ভালোবাসার মানুষ এর অনেক প্রতিক্ষার ফল। ২ টি আত্নার মিলনের রাত যার সাক্ষী ছিল আকাশের ওই চাঁদ আর তারা।

তারপর বাকিটা পাতিহাঁস, (আপনারা নিজ নিজ দায়িত্বে বুঝে নিন, আমি আর বলতে পারছি না, আমার লইজ্জা করে)

অতঃপর সকালবেলা,

মৌ নিজেকে বর্ষণ এর বুকে পায়, বর্ষণ ঘুমিয়ে আছে, ঘুমন্ত অবস্থায় বর্ষণ কে কত যে সুন্দর লাগছে। মৌ বর্ষণ এর কপালে আলতো করে একটা চুমো দিয়ে বিছানা থেকে নামতে যায় আর তখনই বর্ষণ মৌ কে ধরে ফেলে।

thanks জান। (বর্ষণ)

for waht। (মৌ)

এই যে একটা সুন্দর রাত উপহার দিয়েছো আর আমায় অনেক অনেক ভালোবেসেছো তার জন্য। (বর্ষণ)

তাই
তাহলে তো বলতে হয় আমি তোমার জন্য করি নি আমার জন্য করেছি, কারন আমি আর দূরে থাকতে পারছিলাম না তোমার থেকে, বুঝেছেন। (মৌ)

হুম বুঝলাম
এখন তাহলে একটু কাছে আসো
আরেকটু আদর করি। (বর্ষণ)

নাহ একদম নাহ
তুমি উঠে পরো
আর ফ্রেশ হয়ে নাও
তার আগে আমি শাওয়ার নিয়ে নেই
আজ তো আবার party রেখেছো,
অনেক কাজ বাকি আছে। (মৌ)

যো হুকুম বেগম সাহেবা। (বর্ষণ)

পর্ব ৩১

সকালবেলা,

ডাইনিং টেবিলে,

২ জনেই মুচকি মুচকি হাসছে,

তা ম্যাডাম আমি ছোট মৌ পাচ্ছি কবে। (বর্ষণ)

লজ্জা নাই তাই না
কি বলো এই গুলা। (মৌ)

কি বললাম
বেশি খারাপ কিছু কি বলে ফেলছি। (বর্ষণ)

নাহ আপনি বেশি খারাপ কিছু বলেন নি
একটু বেশিই খারাপ কিছু বলেছেন। (মৌ)

ওহ আচ্ছা। (বর্ষণ)

আচ্ছা তুমি কখন বের হচ্ছো
আর ওইদিক টা কে সামলাচ্ছে। (মৌ)

আরিফ সব টা দেখছে জান
তুমি টেনশন কইরো না। (বর্ষণ)

তারপরও সব টা আরিফ এর উপরে দিয়ে দিয়েছো
এই টা কি ঠিক হলো বলো
বেচারা কত টা দিক সামলাবে
তারাতারি যাও গিয়ে নিজে একটু দেখো। (মৌ)

আচ্ছা মহারানী। (বর্ষণ)

কত নামে যে তুমি ডাকো না বর্ষণ
শুনে বেশ মজা পাই। (মৌ)

আচ্ছা জান বললা না তো কি পরবা আজকে। (বর্ষণ)

তোমাকে তো বললাম
বলো কি পরে যাওয়া যায়
তুমি যা বলবে তাই পরবো। (মৌ)

আচ্ছা
ঠিক আছে
বাহিরে যাই বাসায় এসে বলবো
কেমন। (বর্ষণ)

ok। (মৌ)

হঠাৎ কলিংবেল এর আওয়াজ

এই সময় কে হতে পারে বলো তো
দারোয়ান ভাইয়াও অনেক কেয়ারলেস হয়ে গেছে বর্ষণ
আমার খুব চিন্তা লাগে শত্রুর তো অভাব নেই তোমার কে কখন ঢুকে পরবে। (মৌ)

আচ্ছা তুমি বসো
আমি দেখছি। (বর্ষণ)

হুম দেখো। (মৌ)

দরজা খুলে,

আরে আপনি
এইখানে হঠাৎ
আমার বাসার ঠিকানা পেলেন কোথায়। (বর্ষণ)

কে এসেছে বর্ষণ
কার সাথে কথা বলছো। (মৌ)

মৌ এসে দেখে অবাক হয়ে যায়,

এ এখানে কেন বর্ষণ
আমি উপরে যাচ্ছি। (মৌ)

কেমন আছো মৌ। (সাব্বির)

excuse me,
don’t called me mou
say madam
ok
i am your madam
so nxt time you called me madam
understand

& by the way i don’t know you ok
you are just a employee of our company
mind it
বর্ষণ আমি উপরে যাচ্ছি। (মৌ)

আরে উপরে কেন যাচ্ছো
ইনি এসেছেন নিশ্চয়ই কোন কাজ আছে
আসো দেখো কি বলতে এসেছে। (বর্ষণ)

যা দেখার
যা শুনার
আপনি দেখুন মিস্টার বর্ষণ
আমাকে এর মধ্যে জড়াবেন না। (মৌ)

হালকা হেসে
পাগলি রেগে গেছে
তা সাব্বির সাহেব আসুন
বসুন
কেন এসেছেন বলেন। (বর্ষণ)

স্যার এই ফাইল গুলা দেয়ার ছিল
মৌ,মা, নে, ম্­যাডামের ফাইল এই গুলা
আরিফ সাহেব পাঠালো আমাকে উনি ব্যস্ত আছে আজকের সন্ধ্যার পার্টির কাজে। (সাব্বির)

ok
রেখে যান
আমি আপনার ম্যাডাম কে বলবো দেখে দিতে। (বর্ষণ)

জি স্যার,
স্যার একটা কথা বলার ছিল। (সাব্বির)

জি বলুন। (বর্ষণ)

মৌ কে বলে দিয়েন
আমি আমার কৃতকর্মের জন্য সত্যি খুব লজ্জিত
সেইদিনের জন্য এখন আমার আফসোস হচ্ছে
সেইদিন যদি মা বাবার কথা টা না মানতাম তাহলে আজ হয়তো আমার পাশে মৌ থাকতো
সরি স্যার একটু বেশি বলে ফেললাম মাফ করবেন
ওকে বলবেন পারলে যাতে আমায় ক্ষমা করে। (সাব্বির)

সেইদিনের জন্য আজ আফসোস করে কি হবে
মনে রাখবেন সাব্বির সাহেব আপন মানুষ কে দূরে ঠেলে দিতে নেই, যখন সে সত্যি সত্যি দূরে চলে যায় তখন আফসোস করলেও তাকে ফেরত পাওয়া যায় না
ঠিক আছে আমি মৌ কে বলবো আপনার কথা গুলো। (বর্ষণ)

সাব্বির চলে যায়
বর্ষণ উপরে এসে দেখে মৌ শুয়ে আছে

কি হয়েছে গো। (বর্ষণ)

কিছু না তুমি যাও নি এখনো। (মৌ)

হুম এই তো বের হচ্ছি। (বর্ষণ)

যাও তারাতারি এসো। (মৌ)

মৌ একটা কথা বলবো। (বর্ষণ)

বলো না। (মৌ)

যা হয়েছে ভুলে যাও
তুমি move on করেছো আর সেও move on করেছে
তাই না, এখন আর এইসব ভেবে কি লাভ বলো
পারলে সব ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো। (বর্ষণ)

এই বলে বর্ষণ মৌ এর কপালে একটা চুমো দেয় আর বেরিয়ে যায়।

বর্ষণ সারাদিন বাসায় আসে নি,

বিকেলে বাসায় এসে দেখে মৌ বারান্দায় বসে আছে

তুমি কখন এসেছো। (মৌ)

এই তো কিছুক্ষন আগেই
কি করছো এইখানে বসে। (বর্ষণ)

আকাশ দেখছিলাম
দেখো কত শান্ত হয়ে রয়েছে। (মৌ)

ঠিক তোমার মতন। (বর্ষণ)

আচ্ছা খেয়েছো কিছু। (মৌ)

হুম
এখন উঠো
রেডি হও
৮ টা নাগাদ পার্টি শুরু হয়ে যাবে। (বর্ষণ)

হুম উঠছি। (মৌ)

মৌ রুমে এসে দেখে একটা প্যাকেট খাটে রাখা আছে

এই টা কি বর্ষণ। (মৌ)

তোমার জন্য
অনেক খুজে এনেছি
এই টাই পরবে আজকে
কেমন। (বর্ষণ)

মৌ খুলে দেখে প্যাকেটে কি আছে
প্যাকেট খুলে মৌ এর চোখ উপরে উঠে যায়

wow বর্ষণ, শাড়ী
অনেক সুন্দর হয়েছে
thnx thnx thnx উম্মাহহহহ উম্মাহহহহ। (মৌ)

বাহ বাহ এতো খুশি
তাহলে আমিও একটু দেই। (বর্ষণ)

কি। (মৌ)

উম্মাহহহহ। (বর্ষণ)

যাও ফাযিল
disturb করবা না
সাজতে দাও। (মৌ)

ok
সাজো
আটা, ময়দা, সুজি, সিমেন্ট যা যা আছে সব লাগাও তারপরও তারাতারি করো
গেস্ট রা চলে আসবে। (বর্ষণ)

কি বললা তুমি আমি এইসব লাগাই
দাড়াও তোমার হচ্ছে আজকে। (মৌ)

প্লিজ জান
সরি ভুল হয়ে গেছে
তারাতারি করো প্লিজ। (বর্ষণ)

ok। (মৌ)

party venu,

সবাই এসেছে
অনেক গেস্ট রাও চলে এসেছে।
সাব্বির ও এসেছে সাথে ওর বউ ও এসেছে।

বর্ষণ আর মৌ কিছুক্ষন পরেই এলো।

সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে, বর্ষণকে আজ অসাধারন লাগছে আর মৌ কে যত বলা যায় ততই কম হয়ে যাবে। ওদের ২ জনকে আজ যেন রাজযোটক লাগছে।

সাব্বির অবাক হয়ে মৌ এর দিকে তাকিয়ে আছে যা বর্ষণএর চোখ এড়ায় নি।

party শুরু হয়ে গেলো।
সবাই কথা বলছে।
কেউ ড্রিংক করছে।
কেউ বা ডান্স করছে।
কেউ বা গান গাইছে।

হঠাৎ করে বর্ষণ উধাও হয়ে গেলো। মৌ বর্ষণ কে খুজতে থাকে ঠিক তখনই কেউ যেন গিটার হাতে গান শুরু করল,

মৌ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আরে বর্ষণ।
বর্ষণ গান গাইবে।
গিটার বাজাবে ভাবতেই পারছে না মৌ।

তারপর বর্ষণ মাইক্রোফোন টা মুখের কাছে নিয়ে মৌ কে উদ্দেশ্য করে বলল,
This is for you my love,

তারপর গান গাওয়া শুরু করলো।

**তুমি যদি আমাকে কাছে এসে।
ভালবাসো

কি জানি হয় হৃদয়ে।
কি করে তোমায় বোঝাবো।
ভালো আর লাগেনা।
এত কেন মায়া?
যত কাছে আমি লাগে সুধু সান্তনা।
অবুঝ ভালবাসা।
জানি এ নয় খেলা।
তবু এই মনে হয় ছাড়া তোমায় বাচবনা।
তুমি যদি আমাকে কাছে এসে।
ভালবাসো।

না জানি কবে সে সময় আসবে।
আমাকে ধরে কাঁদবে।
ও — দুঃখের পেছনে যত সুখ আছে।
একদিন রঙ দেখাবে।
কত দিন আর এভাবে – বোঝাবো।
তোমাকে।
সহেনা এ বাধন দোটানা।
ভালো আর লাগেনা।
এত কেন মায়া?

যত কাছে আমি লাগে সুধু সান্তনা।
অবুঝ ভালবাসা।
জানি এ নয় খেলা।
তবু এই মনে হয় ছাড়া তোমায় বাচবনা।
তুমি যদি আমাকে কাছে এসে।
ভালবাসো।

when i come force to you and
love each
i dont know what happens to
my heart
i’ll explain you, just tell me
i love you

আজ আমি বলব যে তোমাকেই চাই
কখনো যদি না পাই
ও– শেষ হয়ে যাবে এ জীবনের সাধ
এ ভেবে লাগে সুধু ভয়
যতদিন এ প্রান আছে

আমি রব যে কাছে
তোমাকে কথা দিলাম
ভালো আর লাগেনা
এত কেন মায়া?

যত কাছে আমি লাগে সুধু সান্তনা
অবুঝ ভালবাসা
জানি এ নয় খেলা
তবু এই মনে হয় ছাড়া তোমায় বাচবনা
তুমি যদি আমাকে কাছে এসে
ভালবাসো
কি জানি হয় হৃদয়ে
কি করে তোমায় বোঝাবো
ভালো আর লাগেনা
এত কেন মায়া?

যত কাছে আমি লাগে সুধু সান্তনা
অবুঝ ভালবাসা
জানি এ নয় খেলা
তবু এই মনে হয় ছাড়া তোমায় বাচবনা
ভালো আর লাগেনা
এত কেন মায়া?

যত কাছে আমি লাগে সুধু সান্তনা
অবুঝ ভালবাসা
জানি এ নয় খেলা
তবু এই মনে হয় ছাড়া তোমায়
বাচবনা *
সবাই জোরে হাত তালি দিয়ে উঠে,

আর মৌ তো পুরাই হা হয়েছিল।

party শেষে সবাই চলে যায়
বর্ষণ আর মৌ ও বাসায় ফেরে

তুমি এতো সুন্দর গান গাও আগে তো বলো নি। (মৌ)

তুমিও তো আগে শুনতে চাও নি। (বর্ষণ)

বর্ষণ এর চোখে মুখে দুস্টামি খেলা করছে যা শুধু মৌ দেখতে পাচ্ছে

বর্ষণ কে পাত্তা না দিয়ে মৌ বাথরুমে যেতে চায় ওমনি বর্ষণ মৌ কে জড়িয়ে ধরে মৌ এর ঠোট জোড়া আবার নিজের দখলে নিয়ে যায়। মৌ আর বাধা দিতে পারে নি।

তারপর, তারপর আর কি যা হবার তাই হলো

৪ বছর পর,

বাবাই, ও বাবাই, বাবাই

কি হয়েছে আমার মামুনির
কে মেরেছে আমার মামুনি কে। (বর্ষণ)

মাম্মাম বলে খাবাল খাও খাবাল খাও
বাবাই আমি খাবাল খাবো না
তুমি মাম্মাম কে বলে তাও

বর্ষণ ছাড়ো ওকে
ও অনেক দুস্টু হয়ে গেছে
দেখো না ১ ঘন্টার উপরে হবে ভাত মেখে বসে আছি ম্যাডাম নাকি খাবে না। (মৌ)

আমি খাবাল খাবো না খাবো না খাবো না
[হা হা হা
কি ভাবছো আপুনিরা এই পিচ্চি রাজকুমারী কে
ইনি হচ্ছে “মৌবনী” বর্ষণ আর মৌ এর মেয়ে। তাদের রাজকুমারী, পুচকি কিন্তু ভিষন পাকনি ]

আচ্ছা থাক না ও যখন বলেছে খাবে না
দিও না
না হলে এখন কান্না করে দিবে তারপর তোমার নিজের কাছেই খারাপ লাগবে। (বর্ষণ)

তাই বলে ও খাবে না। (মৌ)

না আমি খাবো না, তুমি খাও মাম্মাম। (মৌবনী)

তোদের যা ইচ্ছা কর
জালিয়ে খায় বাপ মেয়ে আমাকে
আর থাকবো না তোদের সাথে
এইবার দেখবি একদিন ঠিক চলে যাবো। (মৌ)

এইরে মামুনি তোমার মাম্মাম তো রাগ করেছে তুমি বসো বাবাই মাম্মাম এর রাগ ভাঙিয়ে আসি। (বর্ষণ)

তারপর বর্ষণ রান্নাঘরে যায়
পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মৌ কে

কি হয়েছে তোমার, রাগ করছো কেন বাবু তো এখনো ছোট তাই না এইরকম বায়না তো করবেই। (বর্ষণ)

তাই বলে খাবে না
কি বলছো এই গুলা
দেখেছো শরীর টার কি করেছে
কিছুই তো খেতে চায় না সে। (মৌ)

আচ্ছা থাক
আস্তে আস্তে খাবে এখন এই দিকে ঘুরো
বাবুর মাকে একটু দেখি
একটু আদর করি
উম্মাহহহহ। (বর্ষণ)

এই যে আমি তিন্তু দেতে ফেলেতি
বাবাই মাম্মাম কে উম্মাহহহহ দিততো কেন
মাম্মাম আমাল আমি উম্মাহহহহ দিবো তুমি দিবা না। (মৌবনী)

ওরে আমার দুস্টের শিরোমণি লুকিয়ে লুকিয়ে বাবাই মাম্মাম এর প্রেম দেখা হচ্ছে
দাড়া আজ তোর হচ্ছে। ( বর্ষণ)

তরি বাবাই তরি আল হবে না বলেই গুটি গুটি পায়ে দৌড় দেয় মৌবনী। আর বর্ষণ মৌ ও সারা বাড়ি তার পিছনে দৌড়া-দৌড়ি করতে থাকে।

এইভাবেই ভালো থাকুক মৌ, বর্ষণ, আর তাদের রাজকুমারী মৌবনী। এভাবেই সুখ শান্তিতে ভরে থাকুক মৌ বর্ষণ এর সংসার।

লেখা – আফরোজা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “প্রতিশোধ অতঃপর ভালোবাসা” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – হে দুঃখি চোখ – না পাওয়ার কিছু কথা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *