দ্য ডেঞ্জারাস লাভার – বাংলা প্রেম কাহিনী: তোর সাথে আমার কোন জন্মের শত্রুতা রে? দেখিস তোর বউ জুটবে না। (কফি বানাতে বানাতে) কফি বানিয়ে নিয়ে সিম্মি আরাধ্যার কেবিনে যায়। আরাধ্যা ফোনে কথা বলছিলো। সিম্মিকে দেখে ফোন কোটে দেয়।
পর্ব ১
মা বাবার অতি আদরের সন্তান সিম্মি আর তিতলী। সিম্মি অত্যান্ত ঘুম পাগলি। প্রতিদিনের মতো আজও একই কান্ড। সিম্মির মা ডাকছে কিন্তু সিম্মি তো ওঠার নামই নিচ্ছে না।
~ এই সিম্মি ওঠ। আর কত ঘুমাবি? আজ তোর ইন্টারভিউ ভুলে গেলি নাকি।
~ মা আর পাঁচ মিনিট।
~ এক মিনিটও না। ওঠ বলছি।
~ কি চিল্লাপাল্লা শুরু করলে? যাও তো।
~ কিহ্ আমি চিল্লাই। তাহলে থাক। গেলাম আমি।
~ আচ্ছা।
~ উঠবি নাকি বেত আনবো।
~ না না উঠছি।
সকাল সকাল মায়ের ডাকাডাকি শুনে বিরক্ত হয়ে শেষমেশ উঠে পড়লো সিম্মি। উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে রোজকার মতো ডাইনিং টেবিলে চলে গেলো।
~ গুড মর্নিং বাবা
~ গুড মর্নিং। ঘুমকুমারীর ঘুম ভাঙলো তাহলে।
~ ঘুম আর হলো কই? সকাল হলেই চিল্লাচিল্লি শুরু।
~ কি বললি? (মা)
~ কই নাতো? কিছু না।
~ এই নে নাস্তা করে তাড়াতাড়ি বের হ।
~ আম্মু ধীরে ধীরে। জলদি করতে নেই।
~ কয়টা বাজে খেয়াল আছে।
~ বেশি না। (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)
~ এমা ৯:১৫ বাজে আমারতো ১০:০০ টায় ইন্টারভিউ। না না নাস্তা করার সময় নেই। আমি গেলাম।
~ দেখ তোমার মেয়ের কান্ড।
~ আরে মা, খেয়ে যা। (বাবা)
~ রাস্তায় যাওয়ার সময় কিছু খেয়ে নেবো। দাও বাবা দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে দাও। যাতে আমি ইন্টারভিউতে টিকতে পারি।
~ এই নে ফুঁ।
~ দাও মা। এবার তুমি দাও।
~ হ্যা মা। তোর লক্ষ্য পূরণ হোক।
~ আমার দোয়া না নিলে তোর চাকরি হবে না বুঝলি আপি। (তিতলি)
~ কি বললি রে শয়তান। তুই জানিস আমি কোন কোম্পানিতে যাচ্ছি, বাংলাদেশের টপ Mk Group of Industries .
~ তাতে আমার কি? যাই হোক তোকে ফ্রিতে দোয়া দিলাম। চাকরি হলে ঠিক ই ট্রিট নিবো।
~ হুম জানিতো। মা, বাবা আমি গেলাম। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
বিদায় জানিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সিম্মি। প্রায় ১৫ মিনিট পর রিক্সা আসে।
~ এই রে সেরেছে, প্রথম দিনই লেট এই জবটা মনে গেলো। ধুর আল্লাহ তুমি আামাকে এতো ঘুম দিলে কেন। এই মামা তাড়াতাড়ি চালান।
অফিসের সামনে পৌঁছাতেই রিক্সা থেকে নেমে টাকা দিয়ে, সিম্মি দিলো এক ভো দৌড়। বসের কেবিনের সামনে গিয়ে হাফ ছেড়ে বাচঁলো সিম্মি।
~ কি ব্যাপার? এতো ভিড়। নাহ্ ঐ স্টাফকে জিজ্ঞেস করে দেখি,
~ এই যে শুনুন,
~ জি বলুন,
~ কেবিনের সামনে এতো ভিড় কেনো?
~ সবাই ইন্টারভিউ দিতে এসেছে।
~ কিহ! এতো জন।
~ সব মিলিয়ে ১৬৭ জন।
~ এর মধ্যে কয় জনের চাকরি হবে?
~ একজনের।
~ কিহহহহহহহহহ। মাত্র
~ কারণ আরাধ্যার খানের পিএ হওয়া তো আর যে সপ কথা নয়। যে সব কটা স্টেপে পাস করবে কেবল তারই চাকরি হবে।
আর তখনি সিম্মির ডাক পরে যায়।
~ সিরিয়াল নং ১৩৮ ফারিয়া তাসনিম সিম্মি?
~ জি।
~ ভেতরে আসুন।
~ হে খোদা রক্ষা করো রক্ষা করো। আমার যেনো চাকরিটা হয়ে যায়। প্লিজ প্লিজ (বিড়বিড় করতে)
কেবিনের ভেতরে সিম্মির চোখ চড়কগাছ। আরাধ্যার ব্ল্যাক কোট, হোয়াইট শার্ট সাথে লাল টাই চুল স্পাইক করা দেখতে এক্কেবারে সিনেমার হিরো। আরাধ্যার মনোযোগ দিয়ে ফাইল চেক করছিলো সিম্মির ধ্যান ভেঙে জিজ্ঞেস করলো,
~ May i coming sir?
~ Yes, coming.
~ yeah Sir. (বিড়বিড় করতে করতে) হে আল্লাহ আমার চাকরিটা যেনো হয় একটু দেখো।
~ sit down. What is your name?
~ ফারিয়া তাসনিম সিম্মি
~ বাকি দুইজন কোথায়? (অন্যদিকে তাকিয়ে)
~ কারা স্যার?
~ ফারিয়া আর তাসনিম।
~ স্যার আমার একার নামই ফারিয়া তাসনিম সিম্মি।
~ What? এতো বড় নাম? আপনিতো তিনজনের নাম চুরি করেছেন?
~ আসলে…..
~ Anyway Give me your Cv and Certificates.
~ এইযে স্যার। (ভয়ে ভয়ে)
~ কি করলে কাজে সফলতা আসে?
~ স্যার ভালোবেসে যে কাজ করা হয় সেই কাজে সফলতা নিশ্চিত।
~ Punctual বলতে কি বুঝেন?
~ সব কাজ টাইম টু টাইম করাকে বলে। (হোসে হেসে)
~ আপনার কি মনে হয়, আপনি ১৬৭ জনের মধ্যে টিকবেন?
~ হ্যা।
~ Oh really. With explain.(বাঁকা হাসি দিয়ে)
~ এইরে মুখ ফসকে তো বেরিয়ে গেলো, এবার কি হবে (বিড়বিড় করে)
~ কি হলো বলুন,
~ আসলে আমি কনফিডেন্ট। আমার মন বলছে আমি পারবো। আমার মন যা বলে, তাই সত্যি হয়। আমার সাইড দিয়ে ৬০% চান্স আছে বাকি ৪০% আপনার ইচ্ছে।
~ ওকে যেতে পারেন। আগামীকাল দেখা যাবে, আপনার মনের কথা সত্য হয় কিনা। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ জি স্যার। আসি।
সিম্মি সামনে গিয়ে হঠাৎ কেন যেনো পিছে ঘুরে তাকালো, তখনও আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে। সিম্মি সৌজন্য হাসি দিয়ে বের হলো।
পর্ব ২
তার পর পরই আরাধ্যারের সবচেয়ে বিশ্বাসী লোক বন্ধুও বটে তার স্পেশাল পিএ রেহানকে কল দেয়,
~ হ্যালো,
~ জি বস,
~ কোথায় তুই?
~ বস আমি আপনার কেবিনের সামনের ওয়েটিং রুমে।
~ এই মাত্র আমার রুম থেকে একটি মেয়ে বেড় হয়ে গেছে রেড কালার লং থ্রিপিস পড়া, লম্বা চুল বেনি করা, হাতে ব্লু কালারের ফাইল। ওকে ফলো কর কুইকলি।
~ জি বস। এমন একটি মেয়ে আমার সামনে দিয়ে গেলো।
~ You bloody fool, follow her.
~ Yeah boss.
~ ওর ২৪ ঘন্টার আপডেট আমার চাই। কি করছে? কোথায় যাচ্ছে? কার কার সাথে দেখা করছে? A to Z কোনো রকম ভুল হলে….
~ বুঝছি বস। আমি দেখছি।
~ টুট টুট টুট
কি দিন এলোরে বাবা? এখন মেয়েদের পিছে ছুটতে হবে। আর তাদের খবরাখবর দিতে হবে। দেখি কি হয়। (রেহান)
অন্যদিকে আরাধ্যার ফোন কেটে, পাখি যখন খাচায় ঢুকেছে পিঞ্জিরা কি খোলা রাখা যায়। তোমাকে এখন আর ছাড়ছি না জান। অনেক অপেক্ষা করিয়েছো। এবার আমার পালা। (ডেভিল হাসি দিয়ে ) অপরদিকে সিম্মি বের হয়েই তার বেষ্টু মাইশাকে কল দেয়,
~ হ্যালো।
~ হুম বল কি খবর? ইন্টারভিউ কেমন দিলি?
~ হ্যারে চিপকু গাম, অনেক ভালো হয়েছে। তুই কি ফ্রি আছিস।
~ হুম। কেনো রে?
~ তাহলে কফিশপে চলে আয় তাড়াতাড়ি।
~ কফিশপে?
~ হুম কফিশপে। আমার তো আর এতো টাকা নেই যে তোকে হোটেল শেরাটনে নিয়ে যাবো?
~ হয়েছে। আমি আসছি।
~ হুম আয়।
~ আরেহ একটা রিক্সাও আসছে না।
কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ একটা রিক্সা আসলো। সিম্মি ঠিকানা বলার আগেই চালক বলে উঠলো, উঠুন। প্রায় ৪০ মিনিট পর ক্যাফের সামনে আসলো। রিক্সা থেকে নামার পরই টাকা দেওয়ার আগেই রিক্সাওয়ালা চলে গেলো। সিম্মির মনে খটকা লাগলেও পলকেই তা ভুলে যায়। মাইশা এসেই সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে।
~ কিরে চিপকু এতো দেরি করলি কেন?
~ জানিস তো রাস্তায় কতো জ্যাম। ভেতরে চল। (মুচকি হেসে)
~ তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে চল। চোখ বন্ধ কর আগে। (হাত বাড়িয়ে)
~ ওকে জানু। চল। (এক্সাইটেড হয়ে)
~ ট্যানট্যানা…….. (হাত সরিয়ে)
~ আরে সাহিল তুমি। (চোখ কুচকে)
~ কেমন লাগলো বল। (জড়িয়ে ধরে)
~ তোর বিএফ কে দেখে আমার কি? (অভিমান নিয়ে)
~ এজন্যই তো বলি প্রেম কর। প্রেম না করলে কিভাবে ফিলিংস বুঝবি। (চিমটি দিয়ে)
~ বাদ দে। তো কেমন আছো সাহিল। (সাহিলের দিকে তাকিয়ে)
~ তোমার চিপকু আর ভালো থাকতে দিলো কই। (অন্যদিকে ঘুরে)
~ কিহহহহহহ (রেগে গিয়ে)
~ আরে আমি বললাম ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? (হেসে হেসে)
~ ভালো ভালো। আরে এতো ঝগড়াঝাটি না করে তোমরা এবার বিয়ে করে নাও। আমিও একটা বিয়ে খেতে পারবো। (দুজনের কান্ড দেখে হেসে)
~ শোন শাঁকচুন্নি, আমার আগে তোর বিয়ে হবে মিলিয়ে নিস। তোর হাসবেন্ড অনেক ডেভিল হবে দেখে নিস। (ভেংচি মেরে)
~ ওকে ওকে। এবার কফি অর্ডার করি কেমন। এইযে ওয়েটার, এদিকে আসুন।
~ জি ম্যাম। কি কি দিবো আপনাদের?
~ আমাকে একটা হট কফি উইথ স্মাইল অর লাভ। তোমরা…..
~ আমাকে একটা কোল্ড কফি (মাইশা)
~ আমাকেও।
~ ওকে ম্যাম।
কিছুক্ষন পর, ওয়েটার কফি নিয়ে আসলো। এবং যার যার অর্ডার মতো তাকে তা দিয়ে দিলো।
~ আচ্ছা সিম্মি তুই সব সময় লাভ না হয় স্মাইল সেক এর কফি কেন খেতে চাস।
~ আরে আম্মু কল দিলো চুপ চুপ……. হ্যালো আম্মু বলো,
~ বাসায় আয়, কোথায় তুই?
~ এইতো মাইশার সাথে। আচ্ছা আসছি। টুট টুট। তোমরা থাকো আমি যাই।
~ না আমরাও যাই চলো। (সাহিল)
~ ওয়েট ওয়েট আজকের বিলটা আমি দিবো। (থেমে)
~ আরে…..
~ একদম চুপ। আমি দিবো তো দিবো। (কাউন্টারে দাড়িয়ে) কত টাকা বিল হলো?
~ আপনাদের বিল পে হয়ে গেছে।
~ কি? এটা কি করে সম্ভব? কে দিলো?
~ Your crazy lover.
~ What?
~ বিলের কাগজে এটাই লেখা ছিলো।
~ আজবতো
~ কিরে সিম্মি। তলে তলে এতো কিছু। (ধাক্কা দিয়ে)
~ বিশ্বাস কর আমি কিছু জানি না। (ভয়ে ভয়ে)
~ আরে মাইশা এত চাপ দিচ্ছো কেনো? হতে পারে কেউ আড়াল থেকে সিম্মিকে ভালোবাসে।
~ আমি কিছু জানি না। (অন্যমনস্ক হয়ে)
~ তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে সিম্মি। অান্টি বকবে তো।
~ হ্যা। আসলেই তো। আমি যাই। ভালো থাকো তোমরা।
~ সাবধানে যাস। বাই বাই।
ক্যাফের সামনে যেতেই সিম্মি দেখে একটি রিক্সা দাড়িয়ে আছে। সিম্মি কিছু না ভেবেই রিক্সায় উঠে পড়ে। সিম্মির দিকে দুটি নয় চারটে চোখ নজর রাখছে। আরাধ্যার সিম্মিকে দেখছে আর বলছে, তোমাকে বাগে পাই একবার তারপর দেখবো কিভাবে ছেলেদের সাথে কথা বলো। সিম্মি তুমি শুধু আমার আর কারও নও। তোমাকে আমার করে ছারবোই Because i’m your crazy lover. (ডেভিল হাসি হেসে)
পর্ব ৩
কিছুক্ষণ পর রিক্সা বাসার সামনে এসে থামলো। সিম্মি রিক্সা থেকে নেমে, ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে নিলো আর তখনি সেই আগের মতো রিক্সাওয়ালা তার রিক্সা নিয়ে চলে গেলো। সিম্মি অনেকবার ডাকলেও সে ফিরে তাকায়নি। সিম্মির মনে খটকা লাগে যে একবার এমন হয় কিন্তু বারবার কিভাবে? আনমনে ভাবতে ভাবতে সিম্মি বাসার সামনে এসে কলিং বেল বাজালো। ৩ বার বাজানোর পর তিতলি দরজা খুলে দিলো,
~ কিগো মহারানী? আসতে এতো দেরি হলো যে। (দুষ্টু হাসি দিয়ে)
~ সর ভেতরে যাবো! (বিরক্ত হয়ে)
~ আরে আরে এতো তাড়া কিসের? বর পক্ষ এখুনি এসে পড়বে তাদের সাথে ঢুকিস। (হেসে হেসে)
~ বরপক্ষ? মানে কি? (অবাক হয়ে)
~ মানে হলো, তোমাকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে একটু পরে। (মুচকি হেসে)
~ সর আমি ভেতরে যাবো। (ধাক্কা দিয়ে)
~ আপি এবার আর রক্ষা নেই। (কোমরে দুই হাত দিয়ে)
~ মা! মা! মা! কোথায় তুমি? (জোরে জোরে)
~ এইতো আমি। ষাড়ের মতো না চেচিয়ে বল কি হয়েছে।
~ কি শুনছি এসব? কারা আসবে বাসায়?
~ আরে তোর বাবার পুরনো বন্ধু। তারা চায় তোকে তাদের একমাত্র ছেলের বউ করতে। ছেলে অনেক শিক্ষিত। দেশের বাইরেও ব্যাবসা আছে। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি নম্র, ভদ্র। তুই খুব শান্তিতে থাকবিরে মা। (সিম্মির হাতে হাত রেখে)
~ কিন্তু আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না। (হাত সরিয়ে)
~ দেখ সিম্মি কোনো ঝামেলা করবি না। তারা একটু পরে চলে আসবে। (রেগে গিয়ে)
~ আসুক। আমি এখন চাকরি করবো, সেটেল্ড হবো তারপর বিয়ে। (মিনতির সুরে)
~ তোর রুমে আমি সব রেখে এসেছি। যা রেডি হয়ে নে। (সরিয়ে দিয়ে)
~ না। যাবো না। (অভিমান করে)
~ গেলি নাকি বেত আনবো। (ধমকের সুরে)
~ যাচ্ছি। (ভেংচি মেরে)
কিছুক্ষন পর ছেলে পক্ষ চলে আসলো। ছেলে, ছেলের বাবা আর মা এসেছে। তারা বসে অপেক্ষা করছে সিম্মির জন্য। এদিকে সিম্মিকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিচ্ছে পাশের বাসার মিলি। কালো শাড়ি গোল্ডন পাড়। চুলে হালকা বেনি, চোখে গাঢ় কাজল, ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক, কানে ঝুমকা, গলায় হার আর হাতে চুরি। সিম্মি এমনিতেই অনেক ফর্সা যাকে বলে দুধে আলতা গাঁয়ের রং। সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগছে সিম্মিকে। একদম পরীর মতো। তিতলি এসে দেখে সিম্মি মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
~ Hay main mar java. (ফিদা হয়ে)
~ গেলি এখান থেকে! (রেগে গিয়ে)
~ তোকে তো এক্কেবারে সেই লাগছে। এবার তোমার বিয়ে টা হয়েই যাবে আপি। আমিও একটা দুলাভাই পাবো। (সিম্মিকে রাগিয়ে)
সিম্মি কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার মা চলে আসে সিম্মিকে নিতে। সিম্মির মা তার হাতে জুস আর ফলের ট্রে দিতে নিলে সিম্মি না দেখার ভান করে সামনে চলে যায়। ড্রয়িং রুমের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে যায় তখন সিম্মির মা সিম্মিকে হাত ধরে নিয়ে।
~ সালাম দাও সবাইকে। (হালকা ধাক্কা দিয়ে)
~ আসসালামু আলাইকুম।
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম। (ছেলের বাবা আর মা)
সবাই সিম্মিকে এক নজরে দেখছে। অভির মা (পাত্রের নাম) বলে উঠলো,
~ মাশাআল্লাহ, মেয়ে তো নয় যেন অপ্সরী। মা কি নাম তোমার?
~ সিম্মি।
“সিম্মি নামটা শুনতেই অভি সিম্মির দিকে তাকায় এবং তার চোখ সিম্মিকো দেখে আটকো যায়।
~ কি ব্যাপার টাসকি খেয়ে গেলো নাকি। মনে হয়, জীবনে মেয়ে দেখেনি। (বিড়বিড় করতে করতে)
~ মামনি মেহমানদের হাতে জুসের গ্লাস গুলো দাও। (সিম্মির বাবা)
সিম্মিও বাধ্য মেয়ের মতো সবার হাতে গ্লাস এগিয়ে দিতে লাগলো। সবার শেষে অভিকে দিতে গেলো। অভিতো এক নজরে তাকিয়ে আছে সিম্মির দিকে। তখনই সিম্মি একটি ভেংচি মারলো। অভি অবাক হয়ে মুচকি হাসলো। এ পর্ব শেষ হলো, ছেলেপক্ষ সিম্মিকে অনেক পছন্দ করেছে। কথাবার্তা বলার পর তারা চলে গেলো। সিম্মিও হনহন করে রুমে গিয়ে রুম লক করে দিলো। সিম্মির এতটাই রাগ উঠলো যে, সব এলোমেলো করে ফেলে ঘুমিয়ে পড়লো। সিম্মির বাবা মা অনেক চেষ্টা করেও দরজা খোলাতে পারেনি। কারণ সিম্মির অভিমান বড্ড বেশি। অপরদিকে, আরাধ্যার সিম্মির কথা ভাবছে।
~ অপেক্ষা কাল সকালের। কাল থেকে তুমি আমার পাশে থাকবে জান। এ রাতটা এতো বড় কেনো আমার যে আর ভালো লাগছে না জান।
আরাধ্যার ফোন হাতে নিয়ে রেহানকে কল দেয়,
~ হ্যালো।
~ জি বস।
~ ওর অ্যাপোয়েনমেন্ট লেটার কাল সকাল ৮.০০ টার মধ্যে ওর বাসায় পাঠাবি আর কালই জয়েন করতে বলবি।
~ ওকে বস।
~ টুট টুট টুট
সকাল সকাল তিতলি দরজা ধাক্কাচ্ছে। সিম্মি না পেরে রেগেমেগে ছুটে গিয়ে দরজা খুলে আর সাথে সাথেই তিতলি সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে। সিম্মি বোকা বনে যায়।
~ আরে আরে ছাড়! কি হয়েছে কি? (ধাক্কা দিয়ে)
~ আপ্পি Good news! (আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
~ কি বলবি তো? (বিরক্ত হয়ে)
~ মা তোর চাকরি হয়ে গেছে। (সিম্মির বাবা)
~ কিহহহহহ। সত্যি বাবা! (আবেগাপ্লুত হয়ে)
~ হ্যা রে মা। একটু আগে একজন অ্যাপোয়েনমেন্ট লেটার দিয়ে গেলো। (হাসি দিয়ে)
~ কোথায় বাবা?
~ তিতলির কাছে।
~ এই নে আপি।
লেটার হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো সিম্মি আর হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠলো,
~ Omg আজ আমার জয়েন করতে হবে।
~ হুম আপি। আসার সময় আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসিও। (জড়িয়ে ধরে)
~ দেখো মেয়েদের পাগলামি। যা তৈরী হয়ে আয়। আমি নাস্তা দিচ্ছি। (সিম্মির মা)
~ ওকে মা। আমি পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি। (দৌড় দিয়ে)
~ পাগল মেয়ে একটা। (সিম্মির বাবা)
আজ অফিসে সিম্মির প্রথম দিন। সিম্মি নীল রঙের একটা টপস পড়েছে। ঠোটে হালকা লিপস্টিক সাথে মেচিং কানের দুল। হাতে ঘড়ি। চুল গুলো পান্ঞ্চ ক্লিপ দিয়ে বেঁধেছে। সিম্মি রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি টেবিলে যায়।
~ মা তাড়াতাড়ি দাও। (তারাহুরো করে)
~ এই নে।
~ মা আজ এতো খেতে পারবো না। (একটা ব্রেড হাতে নিয়ে)
~ আরে শোন তো।
~ বাবা, মা আমি গেলাম।
~ আরে কিছুই তো খেলি না।
~ এসে খাবো। গেলাম।
~ মেয়েটাও না।
সিম্মি বাসার নিচে দাড়ায় রিকশার জন্য। কিছু ক্ষন পর একটা রিকশা আসে। রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকায় সিম্মির পৌঁছাতে প্রায় ৪০ মিনিটের মতো লাগে। সিম্মির আগের কথা গুলো মনে পড়ে যায়। কাল কোনো রিকশায়ালা ওর থেকে ভাড়া নেয়নি। তাই তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে হাতে রাখে সিম্মি। অফিসের সামনে এসেই সিম্মি রিকশা থেকে না নেমে রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দেয় কিন্তু তা নিতে অস্বীকার করে।
~ আরে মামা এতো কষ্ট করে রিকশা চালান ভাড়া তো নিন।
~ আপনার থেকে ভাড়া নেওয়া নিষেধ।
~ আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আরে আরে। চলে গেলো।
সিম্মি অফিসের মধ্যে গিয়েতো থ হয়ে যায়। তখন সেদিনকার সেই স্টাফ আসে,
~ আরে আপনি? তাহলে আপনার চাকরি হয়েছে!
~ হ্যা।
~ দাড়িয়ে আছেন কেনো? কিছু খুজছেন?
~ আসলে স্যারের কেবিনটা কোথায় ভুলে গেছি। যদি একটু বলতেন।
~ স্যারের কেবিন ৫ তালায় গিয়ে ডান সাইডে গেলেই পাবেন।
~ ধন্যবাদ। আমি আসি।
সিম্মি দৌড়ে লিফটের দিকে গেলো। সিম্মি খেয়ালই করেনি যে লিফটে কেউ আছে। এতোটাই বেখেয়াল ছিলো যে লিফটের মধ্যে যেতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো। সিম্মি না দেখেই বলা শুরু করলো,
~ চোখ কি বাসায় রেখে এসেছেন। নাকি চোখের মাথা খেয়ে দাড়িয়ে আছেন? (রেগে গিয়ে)
~ What? (রেগে গিয়ে)
~ আরেহ্, স্যার আপনি? সরি সরি, স্যার আমি দেখিনি স্যার সরি।
~ Oh really. (রেগে লাল হয়ে)
এবার বুঝি আমার চাকরিটা গেলো। খোদা বাঁচাও। লিফট অন হলো। সিম্মি ভয়েও আরাধ্যারের দিকে তাকাচ্ছে না।
~ আগে কেবিনেতো যাই। তারপর তোমাকে দেখছি। (মনে মনে)
পর্ব ৪
লিফট এসে পাঁচ তালায় থামলো। লিফটের দরজা খুলে গেলো। সিম্মি তো ভয়ে নড়ছেই না। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে লিফট থেকে বের হলো। কিছুক্ষণ পর আরাধ্যার ঘুরে সিম্মির দিকে তাকিয়ে দেখে সিম্মি এখনো দাড়িয়ে আছে।
~ এখনো দাড়িয়ে আছেন কেনো? (রাগি লুকে)
~ কককই না নাতো। (তোতলিয়ে)
~ তাহলে বের হন।
~ জি স্যার।
~ Follow me. (ভাব নিয়ে)
~ Yeah sir. (মাথা নেড়ে)
হায়রে সিম্মি, এ তুই কি করলি? কি করলি? তোকে কতবার বললাম! কতবার বুঝালাম! যে না দেখে কথা বলবি না! কিন্তু তুই কথাই শুনিস না। গাধা একটা। এখন তোর কি হবে? হে আল্লাহ এবাবরের মতো বাচিয়ে দাও প্লিজ প্লিজ। (বিড়বিড় করতে করতে)
আরাধ্যার কেবিনের সামনে এসে ফিংগার প্রিন্ট স্ক্যানারে আঙুল রাখলো আর অটোমেটিক দরজা খুলে গেলো। আর সিম্মিও আরাধ্যারের সাথে ভিতরে গেলো। আরাধ্যার গিয়ে তার চেয়ারে বসলো। আর সিম্মি টেবিলের সামনে দাড়িয়ে আছে। আরাধ্যার সিম্মির দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
~ তো মিস. সিম্মি। (দাঁতে দাঁত চেপে)
~ জি স্যার। (শুকনো গলায়)
~ আমাকে যেনো কি বলছিলেন? এবার বলুন?
~ কই স্যার কিচ্ছু বলিনি! (ভয়ে ভয়ে)
~ আমি বাসায় চোখ রেখে এসেছি আর যেনো কি বলছিলেন? (কটমট করে)
~ না না স্যার। (হাত নেড়ে )
~ তাহলে কি বলছিলেন? (টেবিলের উপর হাত রেখে)
~ আসলে আসলে (মাথা চুলকাতে চুলকাতে)
~ আসলে কি?
~ আমি ভেবেছিলাম অন্য কেউ? (মুখ চেপে)
~ ওহ্। i see. সবার সাথে তাহলে,
~ নানা। (মাথা নেড়ে)
~ এর শাস্তি আপনার পাওনা। (ডেভিল হাসি দিয়ে)
আরাধ্যার ফোন বের করে একজনকে কল দিলো,
~ পেপার রেডি করে নিয়ে আসুন এখনই।
~ মিস. সিম্মি আপনাকে অভিনন্দন। আপনার আত্মবিশ্বাস জিতে গেলো। (তাচ্ছিল্যের সুরে)
~ ধন্যবাদ স্যার। (নিচের দিকে তাকিয়ে )
~ Sir, May i coming?
~ Yes coming.
~ স্যার এইযে আপনার পেপার। (টেবিলে রেখে)
~ আপনি এবার আসতে পারেন। (পেপার হাতে নিয়ে)
~ জি স্যার।
~ নিন মিস. সিম্মি পেপারে সাইন করুন। (সামনে রেখে)
~ How fool! This is a agreement. (ভ্রু কুচকে)
~ কিসের? (অবাক হয়ে)
~ এইযে আপনি আজ জয়েন করলেন সেটার প্রমান। (অন্যদিকে ঘুরে)
~ নিন স্যার হয়ে গেছে। (সাইন দিয়ে)
~ ধন্যবাদ। যান এবার আমার জন্য গ্রিন টি বানিয়ে নিয়ে আসুন। (পেপার চেক করতে করতে)
~ আমি। (অবাক হয়ে)
~ Of course. (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ কিন্তু……
~ আমার মুখের ওপর কথা বলার সাহস হয় কও করে (চেয়ার ছেড়ে)
~ না না, যাচ্ছি! যাচ্ছি। (দৌড়ে)
আরাধ্যার সিম্মির কান্ড দেখে হেসে ফেলে। আরাধ্যার পেপার হাতে নিয়ে সিম্মির করা সাইনের উপর কিস করে বলে,
~ Wah meri jaan! তুমি যত সুন্দর তেমনি তোমার হাতের লেখাও সুন্দর। কিন্তু তুমি যে বডড বোকা। (বাঁকা হাসি দিয়ে)
তারপর ফোন নিয়ে আতিককে কল করে বললো,
~ আমার পিএ কে কিচেনটা দেখিয়ে দিন। টুট টুট টুট।
~ আরে, আমাকে পেয়েছে টা কি? আমি সিম্মি! যে কিনা গরমের ভয়ে জীবনেও রান্না ঘরে যািনি, সেই আমি কিনা গ্রিনটি বানাবো। এটা কি ভাবা যায়! (রেগেমেগে)
~ Excuse me (আতিক)
~ জি।
~ কিছু খুজছেন।
~ আসলে আমি, স্যারের জন্য গ্রিনটি বানাতাম কিন্তু,
~ ওহ্। আসুন আমার সাথে।
~ চলুন।
কিছুক্ষন পর সিম্মি চা বানিয়ে নিয়ে আসে আরাধ্যারের কেবিনে,
~ sir, coming?
~ yes.
~ স্যার আপনার চা। (সামনে এগিয়ে দিয়ে)
~ হুম। (হাতে নিয়ে চুমুক দিয়ে)
~ What is this? (রেগেমেগে)
~ কি স্যার? (ভয়ে ভয়ে)
~ গ্রিন টি তো চিনি দেয়, Damned (জোরে কাপ রেখে)
~ এমা ভুলে চিনি দিয়ে দিলাম। (জিহ্বায় কামড় দিয়ে)
~ যান আবার বানিয়ে নিয়ে আসুন।
~ জি স্যার।
~ এতো গ্রিন টি খাওয়ার শখ। বাসা দিয়ে খেয়ে আসতে পারিস না। বদের হাড্ডি, বদমাইশ, হাতি একটা। (বিড়বিড় করতে করতে)
কিছুক্ষন পর সিম্মি আবারও চা বানিয়ে নিয়ে আসে,
~ স্যার এই নিন। (কাপ এগিয়ে দিয়ে)
~ ইচ্ছে নেই। (ল্যাপটপে কাজ করতে করতে )
~ মানে? (হালকা রেগে)
~ আমার এখন কফি খেতে ইচ্ছে করছে। বানিয়ে আনুন। (আড়চোখে তাকিয়ে)
~ তাহলে এটার কি হবে? (কাপ দেখিয়ে)
~ I don’t know? and go now, hurry up!
~ জি স্যার, যাচ্ছি।
~ তোর সাথে আমার কোন জন্মের শত্রুতা রে? দেখিস তোর বউ জুটবে না। (কফি বানাতে বানাতে)
কফি বানিয়ে নিয়ে সিম্মি আরাধ্যাররের কেবিনে যায়। আরাধ্যার ফোনে কথা বলছিলো। সিম্মিকে দেখে ফোন কোটে দেয়,
~ এতোক্ষণ লাগে কফি বানাতে? (রেগে)
~ Sorry, sir. (কফি মগ এগিয়ে দিয়ে)
~ আগে আপনি খান। (চেয়ারে হেলান দিয়ে)
~ জি স্যার (অবাক হয়ে)
~ বলা তো যায় না, কিছু মিশিয়ে এনেছেন কিনা?
সিম্মি রেগে গিয়ে কফি মগে চুমুক দিয়ে আরাধ্যারের সামনে দিয়ে দেয়।
~ এবার দেখলেন তো কিচ্ছু নেই।
~ আপনি ভাবলেন কি করে আপনার এঁটো আমি খাবো? (দাঁত কটমট করে)
~ আপনি না বললেন।
~ যান ব্লাক কফি নিয়ে আসুন।
সিম্মির রাগ এতোটা বেড়ে গেছে যে সিম্মির চোখ ছলছল করে পানিতে। সিম্মি কোনো কথা না বলে বেড়িয়ে যেতে নিলে আরাধ্যার ডাক দেয়,
~ মগটা নিয়ে যান।
~ জি।
সিম্মি চোখের পানি মুছতে মুছতে বের হয় কফি বানানোর জন্য অন্যদিকে আরাধ্যার হেসে হেসে বলে,
~ এতো অল্পতেই কষ্ট পেলে, সামনে তো আরও অনেক সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য জান।
সিম্মি কফি নিয়ে আসে। এনে আরাধ্যারের সামনে দেয়,
~ আসলে এখন আর ইচ্ছে নেই কফি খাওয়ার। তাও রেখে দিন। আর আপনি আপনার কেবিনে যান। আমার পাশের কেবিনটা আপনার।
~ জি স্যার।
সিম্মি বের হয়ে তার কেবিনে যায়। কেবিনে গিয়ে কান্না শুরু করে দেয়। কারন সিম্মির জেদ অনেক বেশি। আরাধ্যার সিসি ক্যামেরাতে সব দেখছে,
~ ২বছর আমি যে কষ্ট পেয়েছি সেটা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না জান। এই সামান্যতেই কাঁদছো। আমি তো প্রতিটা রাত কেঁদেছি তোমার জন্য। আমি যে তোমার সিম্মিয় পড়ে গেছি সিম্মি। তোমাকে আমার চাই, At any cost. (টেবিলের উপর হাত দিয়ে কিল দিয়ে)
পর্ব ৫
সিম্মি বসে বসে কাঁদছে। আর আনমনে বলছে,
~ দেখে নেবো, আমিও সিম্মি কাউকে ছেড়ে দেই না। দেখিস ডেভিলের হাড্ডি তোর কপালে বউ জুটবে না।
আরাধ্যার সিম্মির কান্ড দেখছে আর হাসছে। সিম্মির কল আসে, সিম্মি কল রিসিভ করে কথা বলে,
~ কেমন আছো? (সিম্মি)
~ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি? (সাহিল)
~ অনেক ভালো।
~ তোমার কন্ঠ এমন লাগছে কেনো?
~ আরে অনেক গরম তাই অনেক ক্লান্ত। এজনয় এমন লাগছে কন্ঠ।
~ আচ্ছা। তুমি কোথায় এখন?
~ তোমাদের তো বলাই হয়নি, আমার জব হয়ে গেছে। সেদিন যে ইন্টারভিউ দিলাম না সেখানে।
~ Congratulations. কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি জব হয়ে গেলো।
~ হুম।
~ আসলে সিম্মি, তোমাকে একটা কথা বলতাম?
~ আরে বলে ফেলো,
~ পরশু মাইশার জন্মদিন, মনে আছে তোমার?
~ আরে ওইদিন তো হারামিটার পয়দা দিবস। আমি কিভাবে ভুলবো? আলবাত মনে আছে আমার।
~ আমি চাই ওইদিন টা অনেক স্পেশাল হোক, এজন্য অনেক প্লানিং দরকার কিন্তু একা একা সম্ভব না। তাই আমি চাই, তুমি আমাকে এই ব্যাপারে সাহায্য করো? প্লিজ না করো না!
~ আরে না করবো কেন? আমি সবসময় তোমার পাশে আছি। কোথায় গিয়ে প্ল্যান করবে সেটা বলো।
~ রেস্টুরেন্টে।
~ ওকে। আমাদের অফিসের পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট আছে তুমি সেখানে চলে এসো কেমন। ঠিকানা ম্যাসেজ করে দিচ্ছি।
~ কখন আসবো?
~ আমাদের লান্ঞ্চ টাইম ২ঃ০০ টায় তখন এসো।
~ ওকে। আর সাবধান মাইশাকে কিচ্ছু বলবে না।
~ আচ্ছা।
~ আচ্ছা। রাখছি কেমন।
~ হুম। আল্লাহ হাফেজ। টুট টুট টুট
অন্যদিকে আরাধ্যারের চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। মাইশাকে ফোনে কথা বলতে দেখে তাও আবার হেসে হেসে, আরাধ্যার সিম্মিকে কল দিয়ে কেবিনে আসতে বলে,
~ Sir, Mai i coming?
~ yes.
~ জি স্যার।
~ আজকে দুপুরে একটা মিটিং আছে। এই ফাইলের পেপারগুলো এখনি রেডি করুন। (সিম্মির সামনে ফাইল ছুড়ে মেরে)
~ জি স্যার। (ফাইল নিয়ে যেতে নেয়)
~ কোথায় যাচ্ছেন? (ধমকের সুরে)
~ স্যার, আমার কেবিনে। (নিচের দিকে তাকিয়ে)
~ না, এখানে বসে কমপ্লিট করুন।
~ ওকে স্যার।
সিম্মি একবারও আরাধ্যারের দিকে তাকায়নি। কিন্তু আরাধ্যার সিম্মির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সিম্মি কয়েকবার আড়চোখে তাকায় আরাধ্যারের দিকে আর সেই কয়বার আরাধ্যারের সাথে চোখে পড়ে। সিম্মি ভয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। কিছুক্ষন পর আরাধ্যারের বাবা আফরান খান কল দিলো,
~ Hello Dad. How are you?
~ I’m well my son. and you?
~ I’m also fine.
~ বিজনেস কেমন চলছে?
~ অনেক ভালো। তোমার বিজনেস কেমন চলছে?
~ আমার আর তোমার বিজনেস কি আলাদা?
~ No, Dad
~ Anyway, সব ঠিকঠাক চলছে। আজকের ডিলটা আমাদের বিজনেস এর জন্য অনেক ইমপরটেন্ট, সেটা নিশ্চয়ই জানো।
~ Yeah, Of course. We take prepared for this dill and i’m damn sure আমরা ডিলটা পাবো।
~ আমি জানি এবং তোমার উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে তোমর উপর আরাধ্যার। কিন্তু ভালো করেই জানো আমাদের কোম্পানির প্রতিদ্বন্দী চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। এরা সব সময় আমাদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে ভুলে যেও না, ওরা এবারও চাইবে যাতে এই ডিলটা না পাই। So be carefull.
~ Don’t worry dad. আমি সব সামলে নেবো।
~ Ok my dear son. Bye.
~ Bye.
আরাধ্যার ফোন রেখে সামনের দিকে তাকায়। সাথে সাথে আরাধ্যারের চোখ কপালে উঠে যায়, কারণ সিম্মি ফাইল রেখে গেমস খেলছিলো। বেচারা এতোটা মনোযোগী ছিলো যে, আরাধ্যার ওর অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তা সে খেয়ালই করলো না। আরাধ্যার তো রেগেমেগে একাকার,
~ সিম্মি? (শান্ত গলায়)
~ ………………
~ সিম্মি? (হালকা জোরে)
~ …………….
~ সিম্মিয়ায়ায়ায়ায়ায়া (অনেক জোরে)
বেচারা হঠাৎ চিৎকার শুনে লাফ মেরে উঠে দাড়ালো আর হাতের ফোনটা পরে গেলো।
~ জি জি জি স্যার
~ What the hell are you?
~ Extremely sorry sir. আসলে ফাইলের কাজ শেষ। ভাবছিলাম কি করবো? তখন মাথায় এলো লুডুর কথা। তাই লুডু খেলছিলাম। (ছলছল চোখে)
~ What? Ludu?
~ আমার অনেক পছন্দ গেমটা। আপনি খেলবেন স্যার!
আরাধ্যার সিম্মির কথা শুনে হাসবে নাকি কাঁদবে তাই বুঝতে পারছে না।
~ Shut up. চলুন আমার সাথে?
~ কোথায় স্যার?
~ মিটিং রুমে।
~ জি স্যার চলুন।
~ মিটিং এর প্রেজেন্টেশন সম্পর্কে সব ডিটেইলস আপনাকে বলতে হবে?
~ কিন্তু স্যার……
~ কোনো কিন্তু নয়। চলুন।
সিম্মি আর কিছু বলতে পারলো না। আরাধ্যার উঠে গিয়ে কেবিন থেকে বের হলো সিম্মিও পিছনে হাটা শুরু করলো। লিফটের সামনে এসে সিম্মি থেমে যায়। আরাধ্যার দেখেও না দেখার ভান করে…
~ Meeting 12 floor a so come!
~ জি স্যার।
সিম্মিও উঠে পড়ে। লিফট চালু হলো। কিছুক্ষণ পর লিফট থেমে গেলো ৮ম ফ্লোরে এসে।
~ What the hell? লিফটের কি হলো আবার?
~ স্যার কাজ সেরেছে,
~ মানে?
~ স্যার ইলেকট্রিসীটি চলে গেছে। এখন কি হবে? হে খোদা লিফটের লাইট যেনো অফ না হয়! প্লিজ প্লিজ
~ Shut up. Uffffff, এতো গরম। আমার ফোনটাও কেবিনে রেখে এসেছি।
~ স্যার, আমার ফোন নিয়ে এসেছি।
~ তা এতোক্ষণ বললেন না কেনো?
~ আপনিতো জানতেই চাইলেন না?
~ ফোনটা দিন?
~ এইযে স্যার।
আরাধ্যার যেই ফোন হাতে নিলো আর অমনি কল আসলো মাইশার। সিম্মির মাইশার ফোন নাম্বার চিপকু গাম দিয়ে সেভ করে রেখেছে। আরাধ্যার তো অবাক।
~ এই চিপকু গাম টা আবার কে?
~ স্যার, হারামি
~ What?
~ না মানে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।
~ নিন কথা বলুন,
সিম্মি ফোন হাতে নিয়ে,
~ কিরে?
~ কই তুই?
~ অফিসে।
~ কার অফিসে?
~ আরে তোকে তো বলাই হলো না আমার জব হয়ে গেছে।
~ হায়রে পেত্নী, তা আমাকে বললি না কেন?
~ ভুলে গেছিলাম রে শাঁকচুন্নি।
আরাধ্যারের রাগ তো চরম পর্যায় সিম্মির কাহিনি দেখে। আরাধ্যার আর না পেরে ফোন ছো মেরে নিয়ে আসে সিম্মির কাছ থেকে। কিন্তু আরাধ্যার সিম্মির হাত জোর টান মারে সেই সাথে সিম্মিও আরাধ্যারের খুব কাছে চলে আসে। আরাধ্যার সিম্মির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে আর সিম্মিও হতভম্ব হয়ে আছে। হঠাৎ সিম্মির চোখ লিফটের বাটনের পাশে যায় আর অমনি সিম্মি জোরে চিৎকার দেয়। আরাধ্যার সিম্মিকে ছেড়ে দিয়ে কান চেপে ধরে দুই হাত দিয়ে।
~ আরে থামো বলছি এতো জোরে কেউ চিল্লায়?
~ স্যার টিকটিকি। আমার উপর পড়বে আমাকে বাচান (আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরে)
আরাধ্যার তো পুরাই অবাক সিম্মিকে দেখে। সিম্মি আরাধ্যারকে অনেক শক্ত করে জোরে জড়িয়ে ধরে। আরাধ্যার নিজেকে সামলে নিয়ে। আঙুল দিয়ে টোকা দিয়ে ফেলে দেয়।
~ এবার দেখুন, টিকটিকি নেই।
সিম্মি তাকিয়ে দেখে কোনো টিকটিকি নেই। আর তখনি আরাধ্যারকে ছেড়ে দেয়। আরাধ্যারও অন্যদিকে ঘুরে মুচকি হাসে। আরাধ্যারের হাতে সিম্মির ফোন নিয়ে গার্ডদের কল দেয়,
~ কোথায় আপনারা? লিফট বন্ধ হয়ে গেছে সেদিকে কি খেয়াল আছে? আধ ঘন্টা ধরে লিফটের মধ্যে আছি? এখুনি ঠিক করুন। নইলে কারো চাকরি থাকবে না, Mind it. টুট টুট টুট
~ নিন আপনার ফোন।
~ স্যার, আপনি মিথ্যা বললেন কেনো?
~ What?
~ লিফট বন্ধ হলো তা তো ১০ মিনিট ও হলো না আর আপনি বললেন আধ ঘন্টা। এটা কিন্তু না।
আরাধ্যার সিম্মির দিকে এগোতে এগোতে বলে,
~ কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক সেটা কি আপনার থেকে আমার শিখতে হবে?
সিম্মি পিছিয়ে যেতে থাকে আর তখনি লিফটের সাথে তার পিঠ আটকে যায়, সিম্মি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে,
~ না না স্যার।
~ তাহলে?
তখনই লিফট আবার স্টার্ট হয়। আরাধ্যার ঘুরে দাঁড়ায়। সিম্মি এক চোখ খুলে দেখে আরাধ্যার ঘড়িতে সময় দেখছে। সিম্মিও ঠিকঠাক হয়ে দাড়ায়। লিফট ১২তম ফ্লোরে থামলো। দরজা খুলে গেলো লিফটের আরাধ্যার বের হলো সিম্মি পিছনে বের হলে। মিটিং রুমে এ ঢুকে দেখে সবাই এসে গেছে। সবাই তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
~ Hello Everyone. Welcome to our Mk group of industries. This is my personal assistant, Miss Fariya Tasnim Maya.
~ Hi.
~ So Miss, Maya start now your presentation.
~ Yeah sir,
সিম্মির গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ভয়ে। আগে কখনো এতো মানুষের সামনে সে বক্তৃতা দেয়নি। আর এটা কোম্পানির সবচেয়ে মেইন ডিল। কোনো ভুল হলেতো সব শেষ। আরাধ্যার তো সিম্মির দফা রফা করে দেবে। আরাধ্যার সিম্মিকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সিম্মিকে বলে,
~ Any problem (কটমট করে)
~ No Sir
~ তাহলে শুরু করছেন না কেনো।
সবাই সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে। সিম্মি সব ভয়কে উপেক্ষা করে বক্তৃতা শুরু করে। সবাই সিম্মির উপস্থাপনা দেখছ আর মনোযোগ দিয়ে শুনছে। আরাধ্যার সিম্মির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আরাধ্যার বুঝতে পারনি সিম্মি এতোটা সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে। প্রায় ২ ঘন্টা পর মিটিং শেষ হলো। ডিলারসরা পুরোপুরি রাজি আরাধ্যারের কোম্পানির সাথে ডিল করতে। দুই কোম্পানি তাদের এগ্রিমেন্টে সাইন করে করমর্দন করলো। মিটিং শেষে সবাই বের হয়ে গেলো, সিম্মি বের হতে নিলে আরাধ্যার ডাক দেয়।
~ সিম্মি দাড়ান…………
পর্ব ৬
আরাধ্যার সিম্মিকে ডাক দেয়।
~ সিম্মি দাঁড়ান,
সিম্মি আরাধ্যারের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ বুঝতে পেরেছি স্যার। আপনি আমাকে ধন্যবাদ দিবেন তাই তো। (মুচকি হেসে)
~ আসলে, (পকেটে হাত রেখে)
~ স্যার আমাদের গ্রুপের জন্য এটা অনেক বড় সফলতা। এটাকে তো সেলিব্রেট করা দরকার। (ভাব নিয়ে)
~ You’re absolutely right. (হেসে)
~ স্যার, আমার একটা জরুরি কাজ আছে। এখন তো লাঞ্চ টাইম। আমি একটু পরেই চলে আসবো। (অনুরোধের সুরে)
~ Okay. (মুখ গোমড়া করে)
~ Bye, sir
সিম্মি অফিস থেকে বের হয়ে সাহিল কে কল দেয়।
কল দিয়ে রেস্টুরেন্টে আসতে। সিম্মিকে ফলো করে আরাধ্যারও বের হয়। সিম্মি রিকশায় উঠে আর আরাধ্যার গাড়িতে উঠে। আরাধ্যারের সাথে তার গার্ডরাও আসতে চাইলে আরাধ্যার মানা করে দেয়। সিম্মি রয়াল রেস্টুরেন্টের সামনে এসে নামে আর আরাধ্যার কিছু দূরে গাড়ি পার্ক করে যাতে সিম্মি বুঝতে না পারে। সিম্মি রেস্টুরেন্টের ২তালায় গিয়ে বসে একটু পর সাহিল ও চলে আসে। আরাধ্যার অনেকটা দূরে বসে।
~ কি ব্যাপার মিস, চিপকু। (মাথায় টোকা দিয়ে)
~ মোটেও না। তোমার বউ চিপকু। (ভেংচি মেরে)
দুজনেই হেসে ফেলে। কিন্তু আরাধ্যাররের তা মোটেই পছন্দ না।
~ আচ্ছা সিম্মি বলো কি কি করা যায়? (ভেবে ভেবে)
~ শোনো, আমাদের পছন্দের কফিশপে আমরা আয়োজন করবো। কেক এ তোমার আর মাইশার নাম লিখা থাকবে। আর তুমি ওকে প্রোপোজ করবে রিং পরিয়ে।
~ কিন্তু ওর আঙুলের মাপ?
~ আমার আর ওর আঙুল একই। আমার আঙুলের মাপ নিয়ে নাও।
~ হাতটা দাও।
সিম্মি হাত বাড়িয়ে দিলো আর সাহিল আঙুলের মাপ নিচ্ছে। এবার আরাধ্যারের মাথায় রক্ত উঠে গেলো। আরাধ্যার দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
~ অন্য পর পুরুষ তোমার হাত ধরলো আর তুমিও সায় দিচ্ছো। তোমাকে এর শাস্তি পেতেই হবে জান। Just wait and see
~ আচ্ছা সাহিল আমি এখন যাই। টাইম প্রায় শেষ।
~ কিছুই তো খেলে না?
~ আরে, পরে খেয়ে নেবো।
~ আচ্ছা বাই।
~ বাই।
সিম্মি সাহিলকে বিদায় জানিয়ে রিকশায় করে আবার অফিসে যায়। আরাধ্যার ও কিছুক্ষন পরে চলে আসে। আরাধ্যার সিম্মির সাথে তেমন কোনো কথা বলেনি। সন্ধায় অফিস ছুটি হয়ে যায়। আরাধ্যার সিম্মিকে ডাকলো,
~ জি স্যার, বলুন
~ আজকের ডিলটা ফাইনাল হওয়ার জন্য কালকে আমাদের অফিসে একটা পার্টির আয়োজন করা হবে। অফিসের সবাই থাকবে। (অন্যদিকে তাকিয়ে)
~ Wow. তাহলে তো ভালো। তা পার্টিটা কখন হবে? (উৎসাহ নিয়ে)
~ রাত ৯.০০ টায়।
~ স্যার এতো রাতে। (চিন্তা নিয়ে)
~ তাহলে কি ভোরে! (রেগে গিয়ে)
~ না। এমনি। (ভয় পেয়ে)
~ এবার আসুন।
~ জি স্যার।
আরাধ্যার বের হয়ে গেলো গাড়ি নিয়ে। সিম্মিও বের হয়ে গেলো। সিম্মি অফিসের একটু সামনে একটা ফুচকার দোকান দেখতে পেলো। ফুচকার দোকানে গিয়ে অর্ডার করলোসিম্মি খুশি মনে ফুচকা খাওয়া শুরু করলো। আরাধ্যার গাড়ির মধ্যে বসে সিম্মিকে দেখছিলো। একটু পর ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো, সিম্মি খাওয়া ছেড়ে বিল দিয়ে দিলো এক দৌড়। দৌড়ে একটা বাস স্টপেজের সামনে দাড়ালো। অনেক বৃষ্টি হচ্ছিল তাই সিম্মি পুরো কাক ভেজা। সিম্মি দারিয়ে কাঁপছিলো। রাস্তায় কোনো গাড়িও ছিলো না। হঠাৎ সিম্মির সামনে একটা ব্লাক কালার গাড়ি থামলো। সিম্মি তো অবাক। গাড়ির দরজা খুলে গেলো। সিম্মি হালকা ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করলে। দেখলো, ভেতরে আরাধ্যার বসে আছে। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ গাড়িতে উঠুন। (লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে)
~ না স্যার। আমি যেতে পারবো। (মাথা নেড়ে)
~ উঠতে বলছি উঠুন। (রেগে গিয়ে)
~ জি স্যার।
সিম্মি দৌড়ে গাড়িতে উঠে। আরাধ্যার নিজের কোট খুলে সিম্মির উপর দিলো। সিম্মি লজ্জায় শেষ। আরাধ্যার সিম্মিকে বললো,
~ সিট বেল্ট লাগিয়ে নিন।
সিম্মি সিট বেল্ট লাগানো তো ভালো টেনেও সামনে আনতে পারছিলো না। কিন্তু বৃথা চেষ্টা করেই যাচ্ছে। আরাধ্যার সিম্মির অবস্থা দেখে, সামনে এগিয়ে আসে, সিম্মি অনেক ভয় পেয়ে যায়। আরাধ্যার সিম্মির সিট বেল্ট লাগাচ্ছে আর সিম্মি অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে। আরাধ্যার গাড়ি স্টার্ট দেয়।
~ আপনার বাসা কোন দিকে?
~ ডান দিকের মোড় নিয়ে তারপর বাম দিকে তারপর একটা কলোনি পড়ে তার ডান সািডের বিল্ডিং টায় আমরা থাকি।
~ আমরা বলতে কে কে?
~ আমি, বাবা, মা আর ছোট বোন তিতলি।
~ আচ্ছা।
~ আপনার বাসায় কে কে আছে?
~ আমি একা।
~ একা! আপনার মা, বাবা?
~ বাবা আমেরিকাতে বিজনেস করে আর সেখানেই থাকে আর মা! আমার বয়স যখন ৪ বছর তখন ক্যান্সারে মারা যায়।
~ Sir, Extremely sorry, বুঝতে পারিনি
~ It’s ok. আপনার বাসা।
~ আচ্ছা স্যার, আসি তাহলে।
~ হুম।
আরাধ্যার কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। সিম্মি বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খেতে যায়,
~ প্রথম দিন কেমন কাটলে? (বাবা)
~ ভালো বাবা।
~ আপি তোর জন্য গুড নিউজ আছে। (হেসে হেসে)
~ কি? (অবাক হয়ে)
~ আর দুই মাস পরে তোর বিয়ে অভির সাথে। অভি ব্যাবসার কাজে বাহিরে যাবে কয়দিন পর। ফিরে আসলেই তোর সাথে ধুমধাম করে বিয়ে দেবো। (মা)
~ আমার খাওয়া শেষ। (মন খারাপ করে)
~ কিছুই তো নিলি না। (মা)
~ বললাম তো খাওয়া শেষ। (ধমক দিয়ে)
সিম্মি আর কিছু না বলে রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছু না খেয়েই বেরিয়ে পড়ে। সোজা অফিসে চলে যায়। গিয়ে কেবিনে বসে পড়ে। স্টাফ আসে তখন,
~ ম্যাডাম এতো তাড়াতাড়ি এলেন।
~ এমনি। (মাথায় হাত দিয়ে)
~ স্যার আসেনি এখনো। আপনাকে কিছু দিবো চা বা কফি।
~ না লাগবে না। (মন খারাপ করে)
তখনি সিম্মির ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে কল। সিম্মি ফোন রিসিভ করে,
~ হ্যালো কে?
~ I love You
পর্ব ৭
আরাধ্যার আর সিম্মি হোটেল এ প্রবেশ করলো। আরাধ্যার সিম্মিকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আরাধ্যার সিম্মিকে ছেড়ে দিয়ে বাকিদের সাথে কথা বলছে। সিম্মি তার অফিসের মেয়ে কলিগদের সাথে কথা বলছে। সিম্মির মনে হচ্ছিল কেউ তাকে ফলো করছে। সিম্মি তেমন পাত্তা না দিয়ে পার্টিতে মনোযোগ দিলো। আরাধ্যার একটু পর পর সিম্মির দিকে তাকাচ্ছে। কারণ সিম্মিকে অনেক বেশি সিম্মিবি লাগছে। ডিলার মি. আমান আরাধ্যারকে ডাক দেয়,
~ Hello Mr. Mahir
~ Hi Mr.Aman
~ You and your beautiful P.A looking so nice just look like a beautiful couple.
~ Thanks Mr.Aman
~ Your’re welcome. But i have request to you?
~ why not? Please say me..
~ Mr.Mahir you arrange a couple dance and you sing a song.
~ But….
~ please Mr. Mahir
~ Ok. I do
আরাধ্যার স্টেজে গিয়ে মাইক হাতে নিয়ে অ্যানাউন্স করলো,
~ Attention please. Ladies and Gentleman কিছুক্ষন পরেই কাপল ডেন্স শুরু হবে। So you can choose your dance partners.
সিম্মি দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছিলো। আরাধ্যার এসে সিম্মির হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিয়ে যায় স্টেজের সামন। আরাধ্যার সিম্মিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আরাধ্যার এক হাত সিম্মির হাতে রাখে অন্য হাত সিম্মির কোমরের উপর রাখে। ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটলো যে সিম্মি কিছু বুঝতেই পারছিলো না। সিম্মি আরাধ্যারের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ সব লাইট বন্ধ হয়ে গেলো। আর সাথে সাথে Circle light জ্বলে উঠলো কাপলদের উপর। তারপর আরাধ্যার গান গাওয়া শুরু করলো,
Mareez ~ e ~ ishq hoon main kar de dawaa
Mareez ~ e ~ ishq hoon main kar de dawaa
O o hoo
O o hoo
O o hoo
Talab hai tu, tu hai nasha.
Ghulam hai dil ye tera.
Khulke zara jee loon tujhe
Aaja meri saason mein aa
Talab hai tu, tu hai nasha.
Ghulam hai dil ye tera.
Khulke zara jee loon tujhe
Aaja meri saason mein aa
Mareez ~ e ~ ishq hoon main kar de dawaa
Haath rakh de tu dil pe zara
O o Haath rakh de tu dil pe zara
সিম্মি আরাধ্যারকে অবাক হয়ে দেখছে। কারণ আরাধ্যারের চোখ আজ অন্য কিছু বলছে। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকিয়ে গান গাইছে।
Tujhe mere rab ne milaya
Maine tujhe apna banaya
Ab na bichandna khudaya
Tujhe mere rab ne milaya
Maine tujhe apna banaya
Ab na bichandna khudaya
Mohabbat rooh ki hai laazim riza
Haath rakh de tu dil pe zara
O o Haath rakh de tu dil pe zara
O o hoo
Oo hoo
আরাধ্যার সিম্মিকে ঘুরিয়ে নেয়। সিম্মি হতভম্ব হয়ে যায়। আরাধ্যার সিম্মির পেটে হাত রেখে সিম্মির চুলে নাক ডুবিয়ে দেয়। সিম্মি চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়।
Chaha tujhe maine waafa se
Maanga tujhe maine duaa se
Paaya tujhe teri adaa se
Chaha tujhe maine waafa se
Maanga tujhe maine duaa se
Paaya tujhe teri adaa se
Karam hadh se hai zyaada mujh pe tera
O o Haath rakh de tu dil pe zara
O o Haath rakh de tu dil pe zara.
আরাধ্যার সিম্মির কাঁধে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে ছেড়ে দেয়। সবাই আরাধ্যারের সুরেলা কন্ঠের প্রশংসা করছে আর সিম্মি আর আরাধ্যারের নাচের প্রশংসা করছে। সিম্মি একটু আলাদা হয়ে অন্য পাশে যায়। সিম্মি ভাবছে, আরাধ্যার তাকে কি বুঝাতে চাচ্ছে। আর তখনি সিম্মিকে পেছন থেকে কেউ ডাকে,
~ Hi miss beautiful.
সিম্মি ঘুরে তাকায়, সিম্মি সৌজন্য ভাবে উত্তর দেয়,
~ Hi.
~ My name is Farhad. And you?
~ Maya.
~ Wow. Very nice name.
~ Thanks.
( সাদা গন্ডার কোথাকার মেয়ে দেখলেই গলে পড়তে হবে, যত্তসব) বিড়বিড় করে
~ You looking very gorgeous. And look like a fairy.
~ (বিরক্ত হয়ে হাসি দিয়ে)
~ But something missing.
~ কি সেটা? ( বিরক্ত হয়ে)
~ কালো মেঘের বুকে শুভ্র তারা ঝিকঝিক করছে তার পাশে যদি একটি রক্তিম গোলাপ থাকে তাহলে অসম্ভব সুন্দর লাগবে। (গোলাপ এগিয়ে দিয়ে)
~ No thanks.
~ আমি না আপনার খোঁপায় ফুল গুঁজে দিচ্ছি। (জোর করে)
~ আর না না লাগবে না।
~ আমি কোনো কথা শুনছি না।
~ প্লিজ।
~ No way.
~ আচ্ছা ফুলটা আমার হাতে দিন। আমি পড়ে নিবো।
~ No no.
~ আচ্ছা নাছোড়বান্দা তো। দাড়া দেখাচ্ছি মজা। (মনে মনে)
তখনই সিম্মির কল আসে, সিম্মি একটু পাশে যায় কথা বলার জন্য। তাও কথা শুনতে পাচ্ছিলো না তাই তাই করিডোরে যায় হঠাৎ পেছন থেকে সিম্মির মুখ চেপে ধরে কেউ। সিম্মি অনেক ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। সিম্মিকে টেনে নিয়ে যায় একটা হোটেল রুমে। রুমে ঢুকিয়ে সিম্মিকে খাটের উপর ছুড়ে মারে। সিম্মি খাটের উপর পড়ে যায়।
~ বলে না, পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে,
সিম্মি কথাটি শুনে পিছনে তাকিয়ে তো পুরাই অবাক। কারণ যে ওকে ধরে এনেেছে সে আর কেউ নয় আরাধ্যার। আরাধ্যার ধীরে ধীরে সিম্মির দিকে এগুচ্ছে। আরাধ্যার তার কোট খুলে ছুড়ে মারলো সোফার উপর। সিম্মি ভয়ে জমে গেছে।
~ স স্যার এসব কি?
~ কেন জানেমান। তোমার পছন্দ হয়নি। দেখো পুরো রুম হাজারও গোলাপ দিয়ে সাজানো।
~ স্যার আমি যাবো।
সিম্মি উঠতে নিলে আরাধ্যার আবার সিম্মিকে ধাক্কা দিয়ে খাটের ওপর ফেলে দেয়।
~ কেন? রাহুল যখন ফুল দিচ্ছিলো তখন তো খুব খুশি মনে নিচ্ছিলে এখন কি হলো?
~ স্যার বিশ্বাস করুন, ওনি জোর করছিলো আমার খোপায় গুঁজে দিতে চাচ্ছিলো তাই আমি হাতে নিয়েছি। (ছলছল চোখে)
~ What? ওর এতো সাহস!
আরাধ্যার রেগে যায়। আরাধ্যার রেহানকে কল দেয়,
~ রাহুলের অস্তিত্ব বিলীন করে দে। এখনি।
~ কিন্তু
~ কি বললি (রেগেমেগে)
~ জি বস।
সিম্মি ভয়ে চুপসে গেলো। আরাধ্যার সিম্মির কাধে হাত রাখে সিম্মি পিছিয়ে যেতে নিলে আরাধ্যার সিম্মিকে টান দিয়ে নিজের কাছে আনে,
~ ভুল তো তোমারও ছিলো। তুমি কেনো ফুলটা হাতে নিলে? (চিৎকার করে)
~ Sir i’m sorry
~ No, Never Mahir Khan কাউকে ক্ষমা করে না। এর শাস্তি তোমাকে পেতে হবে আর সেই ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি।
আরাধ্যার উঠে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে যায়। সেখানে একগুচ্ছ কাটাওয়াল গোলাপ রাখা ছিলো। আরাধ্যার সেটা হাতে নিয়ে ঘুরে সিম্মির দিকে তাকায়। সিম্মির চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকিয়ে ভিলেনের মতো হাসি দিয়ে সামনে এগুতে থাকে। সিম্মি কোন উপায় না পেয়ে দৌড়ে দরজার কাছে গেলো। আরাধ্যার দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে সিম্মিকে দেখছে,
~ হাজার চেষ্টা করলেও দরজা খুলবে না কারণ দরজা বাহির থেকে লক করা আর ১৬ জন গার্ড পাহারা দিচ্ছে। so, এনার্জি লস করে লাভ নেই। (বাঁকা হাসি দিয়ে)
~ কেনো এমন করছেন স্যার? প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
~ কারন আমি চাই না তোমাকে কেউ স্পর্শ করুক।
~ প্লিজ আমায় যেতে দিন। (বসে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে)
~ অবশ্যই যেতে দেবো।
আরাধ্যার সিম্মির কাছে গিয়ে সিম্মির দুহাত ধরে। হাতের মাঝখানে গোলাপের তোড়া রেখে জোরে হাত চেপে ধরে। সিম্মি জোরে চিৎকার দেয় আর তখনি আরাধ্যার সিম্মির মুখ চেপে ধরে।
~ কেমন লাগছে? আমারও এমনটাই লেগেছিল। যখন তুমি অন্যর হাত থেকে ফুল নিয়েছিলে।
~ উমমমমমমমমমমম।
~ খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না।
~ উমমমমমমমমম।
আরাধ্যার সিম্মির হাত ছেড়ে দেয়। সিম্মির হাত কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছে। সিম্মি হাতের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। আরাধ্যার ফুলের তোড়া ছুড়ে ফেলে দিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স আনে। সিম্মির হাত ধরে টান দিয়ে সামনে আনে সিম্মি ভয়ে কোনো কথা বলে না। আরাধ্যার স্যাভলনের বোতল খুলে সব স্যভলন হাতে ঢেলে দেয়। সিম্মি চিৎকার দিতে নিলে আরাধ্যার মুখ চেপে ধরে,
~ আমি তো চিৎকার করিনি তাহলে তুমি কেনো চিৎকার দিচ্ছো।
~ উমমমমমমম
~ আজকের কথা মাথায় রেখো নইলে পরবর্তীতে অবস্থা আরও ভয়ংকর হবে।
আরাধ্যার সিম্মির হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়ে আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। আরাধ্যার গাড়ি স্টার্ট দেয়। সিম্মি বসে বসে কাঁদছে।
~ কাল সকাল ৯ঃ৩০ টায় অফিসে উপস্থিত থাকবে।
~ সিম্মি মাথা নেড়ে হুম বলে।
কিছুক্ষন পর আরাধ্যার সিম্মির বাসার সামনে এসে গাড়ি থামায়। সিম্মি নেমে চলে যায়। আরাধ্যার ডাক দিয়ে বলে,
~ কথাটা মাথায় রেখো।
সিম্মি আরাধ্যারের দিকে একপলক তাকিয়ে চলে যায়। সিম্মি বাসার সামনে গিয়ে কলিং বেল বাজায়। তিতলি দরজা খুলে দিলে সিম্মি কোনো কথা না বলে রুমে চলে যায়।
পর্ব ৮
সিম্মিকে দেখে তিতলি অবাক হয়ে যায়। কারণ সিম্মি কখনো এভাবে হনহনিয়ে ঘরে ঢোকে না। সিম্মির পিছনে পিছনে তিতিলও যায়। সিম্মি রুমে গিয়ে দেখে রুম এলোমেলো,
~ কিরে তিতলি? রুম এলোমেলো হলো কি করে?
~ আরে ইলেকট্রিসিটির লোক এসেছিলো। কারণ কি যেনো প্রব্লেম হয়েছিলো।
~ কিন্তু, আমার রুমে কেনো?
~ তাতো জানিনা। এই আপি তোমার হাতে কি হয়েছে?
~ কিছু না। যাতো আমার ভালো লাগছে না।
~ কেনো ডিনার করবি না?
~ আমি খেয়ে এসেছি। মা, বাবা কোথায়?
~ বাবা খবর দেখছেন আর মা ঘুমিয়ে পড়েছে।
~ এবার তুই যা। আমি ঘুমাবো।
~ কিন্তু তোমার হাত
~ যাতো।
সিম্মি জোরপূর্বক তিতলি কে রুম থেকে বের করে দেয়। সিম্মি দরজা লাগিয়ে, দরজা ধরে বসে পরে। সিম্মি হাতের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে শুরু করে। আরাধ্যার এতো জোরে হাত চেপে ধরেছিলো যে তার স্পষ্ট দাগ পড়েছে। সিম্মি কেঁদে কেঁদে বলছে,
~ একটা ফুলই তো ছিলো! সেজন্য আমাকে এভাবে কষ্ট দিলেন। আপনার কি? আমার যার থেকে যা মন চাইবে আমি তাই নিবো। আপনি বাধা দেওয়ার কে? ডেভিল, খরুচ, বদের হাড্ডি একটা। করবো না তোর চাকরি।
আরাধ্যার সিম্মিকে দেখে হাসছে আর হাত মুঠো করে বলছে,
~ সিম্মি জান আমার, এই চাকরি যে তোমায় করতেই হবে। আমার কি? আমারই তো সব। তোমাকে যে স্পর্শ করবে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবো। তুমি বললে না, Who i’m? I’m your crazy lover. Mind it. Meri jaan. (বাঁকা হাসি হেসে)
সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে। আরাধ্যার সিম্মির ঘুমন্ত মুখ দেখে আরও ফিদা হয়ে যায়। এভাবে রাত কেটে যায়। সকাল সকাল সিম্মির ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে। সিম্মির মা দরজা ধাক্কাচ্ছে। সিম্মির চোখ মুখ ফুলে গেছে। হাতের ব্যাথাটাও হালকা কমেছে। সিম্মি তার মাকে যেতে বলে, উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
সিম্মি ফ্রেশ হয়ে আলমারি থেকে একটা কালো রংয়ের থ্রিপিছ নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো। কিছুক্ষন পর বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুলটা হালকা হেয়ার ব্রাশ দিয়ে সেট করে। তারপর চোখে হালকা কাজল দেয় তারপর হালকা লিপস্টিক দিয়ে চলে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়। সিম্মি ডাইনিং টেবিলে যায়,
~ Good Morning বাবা।
~ Good Morning আম্মু। কি খবর? একি তোমার হাতে কি হয়েছে? (হাতের দিকে তাকিয়ে)
~ ও কিছু না বাবা। আসলে পড়ে গিয়েছিলাম তাই হাত কেটে গেছে। (ভয় পেয়ে)
~ কি হয়েছে সিম্মি হাত দেখি। (সিম্মির মা)
~ কিচ্ছু হয়নি মা। শুধু শুধু ভাবছো। দাও নাস্তা দাও আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
~ তোর চোখ মুখ ফুলে গেছে কেনো?
~ কই?
~ আবার মিথ্যা বলছিস।
~ ধুর এতো কৈফিয়ত ভালো লাগে না। খাবো না কিছু। গেলাম আমি। (উঠে গিয়ে)
সিম্মি রাগ করে বাসার সামনে দাড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। একটি রেড কালার গাড়ি আসলো। একজন গার্ড এসে দরজা খুলে দিয়ে সিম্মিকে বসতে বলে, সিম্মি জিজ্ঞেস করলে জানতে পারে অফিস থেকে পাঠানো হয়েছে। কিছুক্ষন পরে সিম্মি অফিসে পৌঁছে যায়। সিম্মি বের হয়ে কেবিনে যায়। কেবিনে দাঁড়ানোর সাথে সাথে আরাধ্যার বেল বাজায়। সিম্মি একরাশ বিরক্তি নিয়ে আরাধ্যারের কেবিনে যায়। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে,
~ Good morning sir. (নিচের দিকে তাকিয়ে)
~ Good morning dear. How are you? (মুচকি হেসে)
~ আরে ভালো থাকতে দিলি কই বদের হাড্ডি, শকুন, খরুচ একটা (মনে মনে) ভালো আছি।
~ O hello miss…
~ Yes sir
~ ওখানে কিছু ফাইল আছে নিয়ে আসুন। (স্টোর রুমের দিকে আঙুল দেখিয়ে)
~ জি স্যার।
সিম্মি বের হয়ে স্টোর রুমের সামনে গেলো। আরাধ্যার হাসছে। সিম্মি দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে। ভেতরে অনেক অন্ধকার। আরাধ্যারের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসলো। আরাধ্যার আস্তে করে দরজা বন্ধ করে দেয়। এদিকে সিম্মির হাতে ব্যাথা দু’হাতে ব্যান্ডেজ করা। সব তাক গুলো অনেক উঁচু। সিম্মি জিজ্ঞেস করিনি কোন ফাইল আনতে হবে। সিম্মি রুমের দরজার সামনে গিয়ে দেখে দরজা বন্ধ। সিম্মি জোরে চিৎকার দেয়। আরাধ্যার দরজার সামনে দাড়িয়ে হাসছে। সিম্মি জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে।
~ কেউ আছে প্লিজ দরজা খুলুন? আমি অন্ধকার ভয় পাই। প্লিজ Help me, somebody help me please.
সিম্মির পাশেই একটা বড় সেলফ ছিলো। সেটায় ধাক্কা লেগে সব জিনিসপত্র পড়ে যায়। অনেক আগে থেকে পড়ে থাকায় সেগুলোতে অনেক ধুলো জমে ছিলো। সিম্মির এমনিতেই ডাষ্ট এলার্জি। সিম্মির কাশি শুরু হয়ে যায়। একটু পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আরাধ্যার কোনো শব্দ শুনতে না পেয়ে ঘাবড়ে যায়। আরাধ্যার তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেখে সিম্মি পড়ে আছে মেঝেতে। আরাধ্যার সিম্মিকে কোলে নিয়ে কেবিনে নিয়ে যায়। কেবিনের সোফায় শুইয়ে দেয়। তারপর পানির ঝাপটা দেয় সিম্মির মুখে। আরাধ্যার সিম্মির সামনে বসে আছে সিম্মি চোখ মিটমিট করে তাকায়,
~ এই মেয়ে এতো ভয় কেনো তোমার? সামান্য অন্ধকার ভয় পাও।
~ ……………………..
~ চোখ মুখের এ অবস্থা কেনো?
~ ……………………………
~ সারারাত কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভিজিয়েছো।
~ আপনি কি করে জানলেন? (অবাক হয়ে)
~ তোমার উপর একজোড়া চোখ সব সময় নজর রাখে।
~ মানে?
~ মাথামোটা। একটা কাজ ও ঠিক করে করতে পারো না। পারো শুধু হাউমাউ করে কাঁদতে?
~ দেখুন স্যার আমাকে একদম মাথামোটা বলবেন না। (অভিমানী সুরে)
~ তাহলে কি বলবো? (সিম্মির দিকে ঝুঁকে)
~ না না কিছু না। (চোখ বন্ধ করে)
আরাধ্যার সিম্মিকে দেখে অন্য এক ঘোরে চলে যাচ্ছে। আরাধ্যার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিম্মির দিকে। সিম্মি এক চোখ খুলে দেখে আরাধ্যার তাকিয়ে আছে। সেটা দেখে আরাধ্যার আবার চোখ বন্ধ করে নেয়। আরাধ্যার নিজেকে সামলে নিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে বলে ওঠে,
~ Good news আছে
~ কি স্যার (চোখ মেলে)
~ দেখো চিনতে পারো কিনা। (আরাধ্যারের ফোনে একটা ফটো বের করে দিয়ে)
ফোন হাতে নিয়ে সিম্মি ভয়ে চুপসে যায় কারণ ছবিটা আর কারও না রাহুলের। রাহুলের হাত কেটে ফেলা হয়েছে। আর খুব বাজে ভাবে মারা হয়েছে। আরাধ্যার সিম্মির ভয়ার্ত মুখ দেখে বলে,
~ তোমার দিকে যারা চোখ দিবে তাদের অবস্থা এইরকম হবে। (সিম্মির পাশে বসে)
~ আপনি কেনো তাকে খুন করলেন? (ভয়ে ভয়ে)
~ কেনো তোমার খারাপ লাগছে? (হাত চেপে ধরে)
~ স্যার লাগছে ছারুন প্লিজ। (আরাধ্যারের থেকক হাত টেনে)
~ তোমাকে কেউ স্পর্শ করলে বা তোমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে আমি তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলবো।
~ কেনো? আপনি আমার কে?
~ আমি তোমার…
~ থেমে গেলেন কেনো বলুন,
~ Get out . I say get out. (চিৎকার করে)
আরাধ্যার সিম্মির হাত অনেক জোরে চেপে ধরেছিলো যার জন্য আবারও ব্লিডিং শুরু হয়। সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। সিম্মির হাতের রক্ত ফ্লোরে পড়েছিলো। আরাধ্যার তা দেখে ভাবে, বেশি জোরে ধরা হয়ে গেছে। আরাধ্যারের অনেক কষ্ট হয়। সিম্মি তার কেবিনে গিয়ে কাঁদছে তখনি সাহিল কল দেয়। সিম্মি রিসিভ করে,
~ কেমন আছো সিম্মি?
~ ভালো তুমি। (চোখ মুছে)
~ ভালো। তুমি যা যা বলেছিলে সব সেইভাবে রেডি করেছি। সন্ধ্যায় তাড়াতাড়ি এসো কেমন।
~ অবশ্যই আসবো।
~ রাখছি তাহলে।
~ হুম। টুট টুট টুট টুট
~ সিম্মি টিস্যু দিয়ে রক্ত মুছতে নিবে তখনই আরাধ্যার ডাক দেয়। সিম্মি উঠে চলে যায় আরাধ্যারের কেবিনে। আরাধ্যার সিম্মিকে চেয়ারে বসতে বলে ইশারায়। সিম্মি বসে।
~ খুব লেগেছে তাই না।
~ …………………
~ বুঝতে পেরেছি। Wait…
আরাধ্যার টেবিলের উপর থাকা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে অনেক জোরে চাপ দেয় আর গ্লাস ভেঙে সব কাচ হাতে ঢুকে যায়। সিম্মি তাড়াতাড়ি উঠে আরাধ্যারের কাছে যায়। সিম্মি আরাধ্যারের হাত ধরে কান্না করে আর বলে,
~ আপনি কেনো এমন করছেন?
~ তুমি বোঝো না।
~ না বুঝি না। এসব পাগলামি বন্ধ করুন।
~ কি বললে,
আরাধ্যার সিম্মিকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। সিম্মি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে কিন্তু আরাধ্যারের শক্তির সাথে পেরে ওঠে না
~ ছাড়ুন
~ তুমি যখন বোঝো না তাহলে বুঝিয়ে দেই।
~ কি হচ্ছে এসব ছাড়ুন।
~ সেদিন তো ওই ছেলেটাকে খুশি মনে হাত ধরতে দিয়েছিলে আর আমি ধরলে তোমার খারাপ লাগে?
~ আপনি কার কথা বলছেন?
~ ওর অবস্থা রাহুলের থেকেও খারাপ হবে।
সিম্মির মনে পড়ে যায় সাহিলের কথা। সিম্মি তখন বলে
~ দেখুন ও আমার বেস্টুর বি এফ। ওকে ছেড়ে দিন।
~ বেস্টুর বি এফ তোমার হাত কেনো ধরবে?
~ আজ মাইশার জন্মদিন ওর জন্য আংটি কিনবে সাহিল। কিন্তু ওর আঙুলের মাপ ছিলো না তাই আমার আঙুলের মাপ নিয়েছে।
~ ওকে আমি দেখে নেবো।
সিম্মি জোরে আরাধ্যারকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আর বলে,
~ আপনাকে ভালো ভেবেছিলাম কিন্তু আপনি এতো নিচ তা আমার জানা ছিলো না।
~ এখনো কিছুই দেখোনি৷
~ দেখার বাকিও নেই। আমি এই চাকরি করবো না।
~ Oh really.
~ হ্যা।
~ নাও তাহলে পড়ে দেখো পেপারটা। (এগ্রিমেন্ট এগিয়ে দিয়ে)
সিম্মি পেপারটা হাতে নিয়ে পড়া শুরু করে। আর হঠাৎ করে বসে পড়ে,
~ এখানে স্পষ্ট বলা আছে, তুমি কোম্পানির কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকা নিয়েছো। আর যতোদিনে তা পরিশোধ করতে না পারবে ততদিন তোমাকে বাধ্যতামীলক এই চাকরি করতে হবে আর আমি যা বলবো তাই শুনতে হবে।
~ এতো বড় চিটিং করলেন আমার সাথে।
~ আমার মনো হয় না তোমার ঘর বাড়ি সব বিক্রি করে দিলেও এক কোটি টাকা হবে না।
সিম্মি আরাধ্যারের দিকে ঘৃণার চোখে তাকায়। আরাধ্যার সিম্মির সামনে যায় আর বলে,
~ আরাধ্যার খানের পৃথিবী থেকে বের হওয়া এতো সহজ নয় বুঝলে।
সিম্মির চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে।
পর্ব ৯
সিম্মির চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। সিম্মি করুন দৃষ্টিতে আরাধ্যারের দিকে তাকায়। কিন্তু পরক্ষণেই সিম্মি পেপারটি ছিড়ে কুটিকুটি করে ফেলে। টুকরোগুলো আরাধ্যারের মুখের দিকে ছুড়ে মেরে দাড়িয়ে যায়। আরাধ্যার মুচকি হেসে তার টেবিলের কাছে গিয়ে ২৫/৩০ সেট এগ্রিমেন্ট পেপার বের করে সিম্মির সামনে দাড়ায়, সিম্মি রাগি দৃষ্টিতে আরাধ্যারের দিকে তাকায়। আরাধ্যার সিম্মির হাতে পেপারগুলো ধরিয়ে দিয়ে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে,
~ নাও এবার শুরু করো। দেখি কতগুলো কাগজ ছিড়তে পারো।
সিম্মি তাকিয়ে দেখে সবগুলো সেই এগ্রিমেন্টের কপি। সিম্মি সবগুলো পেপার ফেলে দেয়। রাগের মাথায় আরাধ্যারকে বলা শুরু করে,
~ আপনি একটা ডেভিল। আপনি খুনি। আমাকেও আপনি ফাঁসিয়েছন। আমি আপনাকে দেখে নোবো।
সিম্মি এসব বলে দরজার সামনে যায়। দরজার লক খুলতে নেয় তা খুলছে না। সিম্মি অনেক জবরদস্তি করেও খুলতে পারছে না। আরাধ্যার রিল্যাক্সে বসে বসে সিম্মিকে দেখছে। সিম্মি বুঝতে পারেনি আরাধ্যারের কেবিনের দরজা অটোমেটিক লক করা যায়। সিম্মি বের হবে তার আগেই আরাধ্যার রিমোট দিয়ে লক করে দেয়। সিম্মি বৃথা চেষ্টা করেই যাচ্ছে। কিন্তু দরজা খোলার নামই নিচ্ছে না। সিম্মি রেগে গিয়ে দরজায় জোরে লাথি মারে। আর পায়ে ব্যাথা পেয়ে নাচতে থাকে,
~ ধুর হয়েছেটা কি দরজার। খোলার নামই নিচ্ছে না। (পা ধরে)
~ আমি যতক্ষনে না চাইবো ততক্ষনে খুলবে না। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ ওহ্ আচ্ছা। তাইলে এই কাজ আপনার। (কোমরে হাত রেখে)
~ Of course. Any doubt? (অন্যদিকে তাকিয়ে)
~ এসব আজাইরা কাজ আপনি ছাড়া আর কেউ করতে পারবেও না। (ভেংচি মেরে)
~ What? What do you say? (রেগেমেগে)
~ Nothing . (মুখ বাকিয়ে)
~ অনেক বেশি বেড়ে গেছো। (রাগি লুকে)
~ আমি না আপনি। (আস্তে করে)
~ What the hell…. আমার মুখের ওপর কথা বলার সাহস কি করে হয় তোমার?
আরাধ্যার উঠে গিয়ে সিম্মিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আরাধ্যার সিম্মির দুহাত এতো শক্ত করে চেপে ধরেছে যে সিম্মির হাত প্রায় অবশ হয়ে গেছে। সিম্মির চোখ ছলছল করে। আরাধ্যার ধীরে ধীরে সিম্মির কাছে আসে। সিম্মি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। আরাধ্যার সিম্মির এতটাই কাছে এসেছে যে সিম্মি আরাধ্যারের নিশ্বাস অনুভব করছে। আরাধ্যার সিম্মির কানের কাছে মুখ রেখে ফিসফিস করে বলে,
~ আমার মুখের ওপর কথা বলার পরিণাম ভালো হবে না জান। So be careful.
কথাটা বলেই আরাধ্যার সিম্মিকে ছেড়ে দেয়। সিম্মি বুঝতেই পারেনি আরাধ্যার সরে গেছে। সিম্মির নিজের জায়গায় দাড়িয়ে আছে। আরাধ্যার তার কম্পিউটার ওন করে কাজ করতে থাকে। সিম্মি মনে মনে ভাবতে থাকে,
~ কিরে ডেভিলটা কি সরে গেলো? ভয়ে তো চোখ ও মেলতে পারছি না! হে খোদা রক্ষা করো এই বদের হাড্ডিটার হাত থেকে।
~ O hello. Miss maya.
~ জি স্যার।
~ স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে না থেকে ফাইলগুলোর কাজ করুন নইলে আজ ছুটি পাবে না।
সিম্মিও বাধ্য মেয়ের মতো কাজ করতে থাকে। কাজ করতে করতে দুপুর থেকে বিকেল হয়ে যায় সবাই লাঞ্চ করতে গেলেও সিম্মি যায় না কারণ সন্ধ্যায় মাইশার জন্মদিনে তাকে থাকতে হবে। সে জন্য সিম্মি টাইম লস না করে ফাইলের কাজ করতে থাকে। সাথে কফি খেতে থাকে। সিম্মির জন্য আরাধ্যারও লাঞ্চ করে না। সিম্মি মা খেলে আরাধ্যারও খাবে না। সন্ধ্যার দিকে সব ফাইল রেডি করে আরাধ্যারকে দেয়।
~ That’s like a good girl. সব ফাইল খুব দক্ষতার সাথে রেডি করেছেন। Many many thanks.
~ Most welcome sir. স্যার একটা কথা ছিলো?
~ বলো,
~ স্যার আমার একটা আর্জেন্ট কাজ আছে। এখনি যেতে হবে। আমি যাই স্যার।
~ কি কাজ?
~ তোমাকে বললে আমাকে তো যেতে দেবে না। না না একদম বলা যাবে না। একটু আগে বলেছিলাম হয়তো শুনে না (বিড়বিড় করে)
~ কি বিড়বিড় করছো?
~ স্যার পার্সোনাল।
~ কি এমন কাজ? যেটা আমাকে বলা যাবে না?
~ কালকে বলবো স্যার প্লিজ এখন যাই। প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ
~ ওকে।
সিম্মি দরজার কাছে গিয়ে থেমে গেলো। সিম্মি আরাধ্যারের দিকে তাকানোর আগেই আরাধ্যার বলে ওঠে,
~ দরজা খোলা আছে।
~ ওকে স্যার।
কেমন মেয়ে একবার ধন্যবাদ ও দিলো না। কি এমন কাজ নাহ্ দেখতেই হয়। আরাধ্যারও সিম্মির পিছনে পিছনে যায়। সিম্মি রিকশায় উঠে ক্যাফের দিকে যায় আর আরাধ্যার গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে ফলো করতে বলে, কিছুক্ষন পর সিম্মি ক্যাফের সামনে থেমে ভেতরে যায়। আরাধ্যার ও গাড়ি থামিয়ে সিম্মির পিছু পিছু যায়।
সিম্মি গিয়ে দেখে সবাই উপস্থিত সাহিল আর মাইশা ছাড়া। সাহিল মাইশাকে রিসিভ করতে গেছে। কলেজের সব ফ্রেন্ডরা এসেছে। সিম্মি সব ডেকোরেশন চেক করে নিলো। সাহিল সিম্মিকে মেসেজ দিলো যে তারা আসছে। সিম্মি তাড়াতাড়ি সব লাইট বন্ধ করে দিলো। মাইশার চোখ বেধে সাহিল তাকে ভেতরে নিয়ে এলো। সাথে সাথে সব লাইট অন করে সবাই একসাথে বলে উঠলো,
Happy birthday to you Happy birthday dear chipku Happy birthday to you
সিম্মি মাইশাকে জড়িয়ে ধরে বলছে, Many many returns of the day. Meri chipku gum.
~ বুঝেছি শাঁকচুন্নি একটা বারও কল দিস নি।
~ ইচ্ছে করে দেইনি কারণ কল দিলেই তুই জিজ্ঞেস করতি।
~ তোমরা ঝগড়া না করে চলো কেক কাটবে।
~ হ্যা, চল চল।
মাইশাকে টেনে কেকের সামনে নিয়ে যায় সিম্মি। মাইশা কেক দেখে পুরাই অবাক কারণ কেকে সাহিল আর মাইশার নাম লেখা তার উপরে লাভ রাউন্ড দেয়া স্ট্রবেরী রেড ভেলভেট কেক। সাহিল স্নহাকে বলে,
~ এই সবকিছুর ক্রেডিট সিম্মির। সিম্মির আইডিয়াতে সব হয়েছে।
~ আমাকে তো কিছুই বললি না শাঁকচুন্নি।
~ বললে কি আর সারপ্রাইজ থাকতো। এবার কেক কাট।
মাইশা হাতের উপর সাহিল আর সিম্মি হাত রাখে, মাইশা কেক কাটে। কেকের পিস কেটে সিম্মির দিকে নিতেই সিম্মি হাত ঘুরিয়ে সাহিলের দিকে দেয়। সিম্মি মাইশাকে ইশারায় সাহিলকে খাইয়ে দিতে বলে। সাহিল না করলেও সিম্মির জেদের সামনে হার মানে। সাহিলকে খাইয়ে দেওয়ার পর যখন সিম্মির দিকে মাইশা ঘুরে, মাইশা গায়েব। মাইশা আর সাহিল এদিক ওদিকে তাকিয়েও দেখতে পাচ্ছে না। তখনই গান বেজে ওঠে, সবাই সামনে তাকায়,
Aasmaan mein jaise badal ho rahe hain
Hum dhire dhire dhire pagal ho rahe hain
Aasmaan mein jaise badal ho rahe hain
Hum dhire dhire dhire pagal ho rahe hain
Main to marjana hai woh na jo milney aaye
Main to marjana hai woh na jo milney aaye
Saasen mile hai ban ke haatho mein
Yaad piya ki, meri piya ki aane lagi hai bheegi bheegi raaton main
O yaad piya ki aane lagi hai bheegi bheegi raaton main
(মাইশা আর সাহিল সিম্মিকে অবাক হয়ে দেখছে। দূর থেকে একজন সিম্মির নাচ ভিডিও করছে। কারণ সিম্মি খুব সুন্দর নাচতে পারে। নাচের ছলে সিম্মি এসে মাইশাকে জড়িয়ে ধরে সাহিলকে ইশারা করে নাচে)
Tere bina kya haal hai apna kya tumko badlaye re churiya meri rooye meri chunri rookh e jaye re
Tere bina kya haal hai apna kya tumko badlaye re churiya meri rooye meri chunri rookh e jaye re
Bin tere sab saza hai bin tere kaha maza hai
Bin tere sab saza hai bin tere kaha maza hai
Bin tere kaha maza jhatoon mein
Yaad piya ki meri piya ki hai
Yaad Piya ki meri piya ki aane lagi hai bheegi bheegi raaton main
সিম্মি সাহিলের কানে কানে বলে দেয় মাইশাকে রিং পরিয়ে দিতে। সাহিল এক হাতে রিং বের করে মাইশার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে আর অন্য হাতে মাইশার হাত নিয়ে একটা কিস করে বলে,
~ will you marry me?
মাইশা মহাখুশি। সে মাথা নেড়ে হ্যা বলে। সাহিল রিং বের করে মাইশাকে পরিয়ে দেয়। সিম্মি মাইশার কাধে ধাক্কা দিয়ে আবারও গান গাওয়া শুরু করে,
Kab woh din aayega jab hum bhi mehendi lagwa yenge
Na jane iab aayenge or doli mein le jayenge
Kab woh din aayega jab hum bhi mehendi lagwa yenge
Na jane iab aayenge or doli mein le jayenge
Bari na aaye hamari baratein dekhi sari
Bari na aaye hamari baratein dekhi sari
Nache bum sab ki baaratoon mein
Yaad Piya ki meri piya ki aane lagi hai bheegi bheegi raaton main
O yaad piya ki aane lagi hai bheegi bheegi bheegi raatoon mein
মাইশা দৌড়ে এসে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে।
পর্ব ১০
মাইশা দৌড়ে এসে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে।
~ আরে কি করছিস? কাঁদছিস কেনো?
~ তুই সত্যি একটা শাঁকচুন্নি। (কেঁদে কেঁদে)
~ তাতো আমি জানি। (হেসে হেসে)
~ এই সব প্ল্যান তোর তাই না। কি ভাবিস আমি কিছু জানি না। (জড়িয়ে ধরে)
~ কচু জানিস তুই। এবার কিন্তু তোর বিয়ে কনফার্ম। কি বলো সাহিল?
~ অবশ্যই।
~ এই নে তোর গিফট। (একটা ফটো এ্যালবাম আর একটা চকলেট বক্স হাতে দিয়ে)
~ আরে এটা তো,
~ হুম এটায় আমাদের ছোটো বেলা থেকে এখন পর্যন্ত তোলা সব পিক আছে। আমি যখন থাকবো না তখন দেখে মনে করবি।
~ কোথায় যাবি তুই আমাকে ছেড়ে। (কেঁদে কেঁদে)
~ কেনো শশুর বাড়ি।
~ এটা আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান উপহার। (সিম্মির হাতে হাত রেখে)
সবাই অনেক আনন্দ করে পার্টিতে। পার্টি থেকে বের হতে হতে সিম্মির অনেক দেরি হয়ে যায়। সাহিল সিম্মিকে ড্রপ করতে চাইলেও সিম্মি মাইশা আর সাহিলকে জোর করে পাঠিয়ে দেয়। এদিকে সিম্মি কোনো রিকশা না পেয়ে হাটা শুরু করে দেয়। কিছু দূর যাওয়ার পর একদল বখাটে ছেলে সামনে পড়ে। সিম্মি শর্ট কাটে যাওয়ার জন্য ওই রাস্তায় ঢোকে। কিন্তু কে জানতো এখানে এই বখাটেরা থাকবে। সিম্মি তেমন পাত্তা না দিয়ে হাটা শুরু করে। তখন একজন সিম্মিকে টিজ করে বলে,
~ চুমকি চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে।
সিম্মি সামনে এসে বলে। সিম্মি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে। সিম্মির ওরনা ধরে টান দেয় সেই ছেলেটা সাথে আরো চারজন এসে সিম্মিকে ঘিরে ধরে। সিম্মি ছেলেটা জোরে ধাক্কা দিয়ে দৌড় দেয়। পিছনে ছেলেগুলো ও দৌড় দেয়
~ এই দাড়া বলছি,
~ মরে গেলেও না
~ দেখ তোর কি করি,
~ হে আল্লাহ বাঁচাও
সামনে যেতেই সিম্মি কাউকে না দেখে জড়িয়ে ধরে। লোকটি গাড়ির সামনে এসে পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়েছিলো। সিম্মি জড়িয়ে ধরতেই সেও সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে। সিম্মির সেদিকে খেয়াল নেই সে বলা শুরু করে,
~ আমাকে বাচান ওদের হাত থেকে। না হয় ওরা আমার সর্বনাশ করে ফেলবে।
~ আরে সেই সুযোগ পেলে তো।
ছেলেগুলো আরাধ্যারকে দেখে তেড়ে আসে। আরাধ্যার হাত দিয়ে ইশারা করে গার্ডদের,
~ Your fighting is start now. সব কয়টার হাড্ডি গুঁড়া গুঁড়া করে দেও।
সিম্মি কন্ঠ শুনে চিনে ফেলে লোকটি আর কেউ নয় আরাধ্যার। সিম্মি আরাধ্যারকে ছাড়তে চাইলেও আরাধ্যার ছাড়ছে না।
~ আরে এতো ছটফট করছো কেনো?
~ এসব আপনি করিয়েছেন তাই না। আমি আপনাকে ভালো করে চিনি। আপনি তাদের ভাড়া করেছেন যাতে আমার সামনে হিরো সাজতে পারেন।
~ যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর। তবে, তোমার হিরো তো আমিই। (ভাব নিয়ে)
~ বস কাজ হয়ে গেছে।
~ আচ্ছা সিম্মি দেখোতো, কে তোমার গায়ে হাত দিয়েছিলো?
সিম্মি হাতের ইশারায় দেখিয়ে দেয়। আরাধ্যার সাথে সাথে পিস্তল হাতে নিয়ে শুট করে। সিম্মি ভয়ে কান চেপে ধরে আরাধ্যার অন্য হাত দিয়ে সিম্মিকে কাছে টেনে নেয়।
~ বলেছিলাম না, তোমার গায়ে যে হাত দিবে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলবো। এই ওর ব্যবস্থা কর। (বাকা হাসি দিয়ে)
আরাধ্যার আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে সিম্মিকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে আসে। সিম্মি খুব ভয় পেয়ে যায়। তাই কোনো কথা বলে না। আরাধ্যারও কোনো কথা বলে না। আরাধ্যার সিম্মিকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। সিম্মি চুপচাপ বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজায়। সিম্মির মা এসে দরজা খুলে দিয়ে চলে যায়। সিম্মি বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে। সিম্মি ঘরে ঢুকে দেখে তার বাবা আর মা সোফায় বসে আছে। সিম্মি তাদের সামনে দিয়ে যেতে নিলে তার বাব বলে
~ সিম্মি রাত কয়টা বাজে এখন?
~ রাত ১১ঃ২০। (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)
~ এটা তোমার আসার সময় হলো?
~ আসলে বাবা?
~ তুই অভিকে ইগনোর করছিস কেনো? ওর ফোন ধরিস না কেনো? (সিম্মির মা)
~ মা আমি বিজি ছিলাম।
~ দরকার নেই তোর চাকরি করার। কাল চাকরি ছেড়ে দিবি এই বলে দিলাম।
সিম্মির মা রেগে হনহনিয়ে রুমে চলে যায়। সিম্মি মন খারাপ করে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কেদে কেদে বলে,
~ আমি চাইলেই চাকরিটা ছাড়তে পারবো না মা। আমাকে মাফ করে দাও।
কিছুক্ষন পর দরজায় টোকা দেয় কেউ। দরজা খুলে দেখে বাবা দাড়িয়ে আছে। হাতে খাবারের প্লেট।
~ বাবা আমার খিদে নেই? তুমি যাও
~ বললেই হলো, যাও ফ্রেশ হয়ে এসো তারপর একসাথে খাবো।
~ বাবা তুমি খাওনি?
~ তোকে ছেড়ে কিভাবে খাই বল।
~ আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
সিম্মি তাড়াতারি ফ্রেশ হয়ে আসে। সিম্মি এসে তার বাবার সামনে বসে। সিম্মির বাবা সিম্মিকে খাইয়ে দেয়। সিম্মি তার বাবাকে খাইয়ে দেয়। সিম্মির মা তাদের দেখে বলে,
~ বাবা মেয়ে মিলে ঠিকই পেট পূজা করছে। আমি যে না খেয়ে আছি সেদিকে কারও খেয়াল আছে।
~ মা তুমিও খাওনি।
সিম্মি তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
~ আমার মেয়েটা এখনো খায়নি।
তিতলি দরজার সামনে দাড়িয়ে বলে,
~ হায়রে তিতলি তোকে কেউ ভালোবাসে না। সবাই তোকে ভুলেই গেলো।
তিতলির কথা শুনে সবাই হাসে। তারপর সবাই মিলে একসাথে ডিনার করে। অন্যদিকে আরাধ্যারের চোখ ভিজে গেছে,
~ আমি কখনো এই আনন্দ পায়নি সিম্মি। তোমার মাঝে আমি সেই আনন্দ খুজে পাই।
সিম্মি ডিনার সেরে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল সকাল সিম্মির ফোনে একটা মেসেজ আসে। মেসেজ টোনে সিম্মির ঘুম ভেঙে যায়। সিম্মি ফোন হাতে নি মেসেজ পড়া শুরু করে। মেসেজ পড়ে সিম্মি হা হয়ে যায়।
পর্ব ১১
সিম্মি মেসেজ দেখে হুড়োহুড়ি কর উঠে বসে পড়ে আর চারদিকে তাকায়। কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। সিম্মি আবার মেসেজটি পড়ে,
~ এভাবে কেউ ঘুমায়? চাদর ঠিক নেই। পিলোর খোঁজ নেই? কোলবালিশ খাটের নিচে। কম্বলের পাত্তা নাই। রুম দেখপ মনে হয় পাগলের রুম।
~ নাহ্ নাম্বারটাও তো অচেনা। কে হতে পারে? (মাথায় হাত দিয়ে)
তখনি আবারও মেসেজ আসে সেই unknown number থেকে,
~ এতো ভেবে তোমার কাজ নেই। কয়টা বাজে খেয়াল আছে।
~ এমা তো দেখছি সব জানে কিন্তু কিভাবে? ওহ্ এটা নিশ্চয়ই,
সিম্মি তাড়াতাড়ি অভি কে কল দেয়। প্রথম রিং বাজতেই অভি কল রিসিভ করে আর সিম্মির বকবকানি শুরু হয়ে যায়,
~ O hello Mr. Abhi Chowdhury. How dare you? আপনি আমার উপর নজরদারি করেন। সাহস কি করে হয় আপনার? সবার সামনে ভালো সাজেন। আপনাকে খুব ভালো করে চেনা হয়ে গেছে। লুচু কোথাকার। আমাকে কল দিলে আপনার একদিন আর আমার যে কয়দিন। টুট টুট টুট
বেচারা অভি কিছু বলার সুযোগি পেলো না। তার আগেই সিম্মি ফোন কেটে দেয়। অভি সিম্মির কথা শুনে বেশ খেপে যায়। কারণ সিম্মি তার চরিত্র নিয়ে কথা বলেছে। কিন্তু সিম্মির সব কথা আরাধ্যার শুনে ফেলেছে। আরাধ্যার ভাবতে থাকে, সিম্মি কোন অভির কথা বলছে? আরাধ্যারের কোম্পানির সাথে যে অভির শত্রুতা সেই অভি নয়তো। আরাধ্যার বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। সিম্মি সব গুছিয়ে রেখে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়। তারপর সবার সাথে ব্রেকফাস্ট করতে টেবিলে আসে,
~ Good morning the everyone.
~ Good morning. (বাবা আর তিতলি)
~ সবাই কেমন?
~ তেলের বাটির মতো। (তিতলি)
~ ওহ্ তোমার তেল বেশি হয়ে গেছে তাই না। অনেকদিন মাইর পড়ে না তাই না। (সিম্মি)
~ কয়দিন আর মারবে? পরশু তো শশুর বাড়ি চলে যাবে।
~ পরশু মানে?
~ কিছু না।
~ সিম্মি, দুদিন পর অভি আমেরিকাতে যাবে। ওর সাথে একটু দেখা করিস সময় করে। (সিম্মির মা)
~ ওকে।
সিম্মি তার মাকে শান্ত করার জন্য ওকে বলে দেয়। কিন্তু মনে মনে তার অন্যকিছু। সিম্মি নাস্তা শেষ করে বের হয়। বাসার নিচে নামতেই দেখে কালকের গাড়ি দাড়িয়ে আছে। সিম্মি গাড়িতে উঠে অফিসে চলে আসে। সিম্মি আরাধ্যারের কেবিনের সামনে গিয়ে কেবিন খোলা। সিম্মি সন্দেহ করে ভেতরে যায়,
~ কি ব্যাপার ডেভিলটা এখনো আসেনি? যাক ভালো হয়েছে, আমি ততক্ষণে পেপার টা খুজতে থাকি।
আরাধ্যার দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে পকেটে এক হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে টাই ঘুরাচ্ছে আর সিম্মির কান্ড দেখছে। সিম্মি যেই না ড্রয়ারে হাত দিলো আর অমনি বাজার বেজে উঠলো। সিম্মি তাড়াতাড়ি দূরে সরে যায়। আরাধ্যার আর হাসি থামাতে পারলো না,
~ চোরদের এতো ভয় পেলে চলে। (হাসতে হাসতে)
সিম্মি পিচনে তাকিয়ে টাস্কি খেয়ে যায় আরাধ্যারের মন ভোলানো হাসি দেখে। আরাধ্যার সিম্মিকে দেখে একটু ভাব নিয়ে বলে,
~ আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডসাম। এভাবে তাকিয়ে থাকলে প্রেমে পড়ে যাবে।
~ হুম এক্কেবারে কাউয়া?
~ What do you mean?
~ নাহ্ স্যার কিচ্ছু না।
~ স্যার আজ একটা মিটিং আছে আমাদের কোম্পানির কিছু প্রোডাক্টের উপর। যেহেতু কিছু দিন পরে সব বড় বড় কোম্পানির সাথে আমাদের কোম্পানির প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী আমাদের বেস্ট প্রোডাক্ট চয়েজ করতে হবে।
~ এজন্য কি কি প্রিপারেশন নিয়েছেন?
~ স্যার আপনার অনুমতি ছাড়া কিছু করতে পারি?
~ তোমার যা ঠিক মনে হবে সেটাই করবে। আর প্রোডাক্ট প্রেজেন্ট করবে তুমি।
~ ওকে স্যার। স্যার এই ফাইলগুলোতে আপনার সাইন লাগবে।
~ ওকে। (আরাধ্যার সবগুলো পেপার পড়ে ডাইন করে দেয়)
সিম্মি আরাধ্যারের কেবিন থেকে বের হয়ে নিজের কেবিনে যায়। সিম্মি কেবিনে গিয়ে কাজ করতে থাকে। তখনি অভি কল দেয়। সিম্মি রিসিভ করে না। অভি আবারও কল দেয়, সিম্মি বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করে,
~ কি হয়েছে?
~ ফোন রিসিভ করছো না কোনো?
~ ইচ্ছে তাই।
~ সিম্মি এসব ভালো হচ্ছে না।
~ সব ভালো হচ্ছে। টুট টুট টুট
~ তোমার জেদ আমি ভেঙে ফেলবো। শুধু অপেক্ষা করো। (ফোন ফেলে দিয়ে)
সিম্মিকে আরাধ্যার তার কেবিনে ডাকে। সিম্মি কেবিনে ঢুকে শুনতে পায় আরাধ্যার গান গাইছে আর ফোনে কি যেনো দেখছে। সিম্মি একটু কান পেতে শোনার চেষ্টা করে শুনে,
~ Yaad piya ki aane lagi hai bheegi bheegi raatoon main
~ স্যার আমাকে ডেকেছেন?
~ হুম। যান আমার জন্য Green tee without suger বানিয়ে আনুন।
~ ওকে স্যার।
সিম্মি বের হয়ে মনে মনে বলে, আমাকে খাটানোর বুদ্ধি। আমিও কম না। সিম্মি কিছুক্ষণ পর আরাধ্যারের কেবিনে আসে একটা ট্রে নিয়ে। আরাধ্যার তখনও ফোন দেখছে।
~ নিন স্যার।
~ What a rubbish? এসব কি?
সিম্মি ট্রেতে দুই কাপ গ্রিন টি আর দুই কাপ কফি এনেছে। আরাধ্যার তো অবাক।
~ স্যার আগের বার আমাকে দিয়ে চারবার চা আর কফি বানিয়েছেন। তাই এবার এক বারে বানিয়ে এনেছি। ভালো করেছি না স্যার।
~ you fool. এবার এইসব তুমি খাবে।
~ কিইইইইই
~ হুম।
সিম্মি আরাধ্যারের কথা শুনে দিলো এক দৌড়। আরাধ্যার বারবার ডাকে তা না শুনেই দৌড়ে গেলো কেবিনে। এভাবে কেটে গেলো দুটি দিন। এই দুইদিন সিম্মি আরাধ্যারের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়নি। সিম্মি নেক্সট প্রেজেন্টেশন এর জন্য প্রস্তুতি নেয় কারন কোম্পানির পক্ষ থেকে তাকে প্রেজেন্ট করতে হবে। আরাধ্যারও সিম্মিকে অনেক সাহায্য করে। সিম্মি এই কয়দিনে আরাধ্যারের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। অবশেষে এলো সেই দিন।
পর্ব ১২
অবশেষে সেই দিন এলো। সিম্মি সকাল সকাল উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয়। সিম্মি অনেক এক্সািটেড। সিম্মি ব্ল্যাক কালার গাউন সাতে হোয়াইট কালার স্টোনের টপ এয়ার রিং হাতে মেচিং ঘড়ি। সাথে হালকা সাজ দিয়ে তাড়াতাড়ি বের হয়। বাসার নিচে গিয়ে দেখে আরাধ্যার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। একজন গার্ড এসে দরজা খুলে দেয়। সিম্মি গাড়িতে উঠে দেখে আরাধ্যার বসে আছে। সিম্মি আরাধ্যারকে দেখে ক্রাশ খেয়ে যায়। কারণ আরাধ্যারও ব্ল্যাক শার্ট + ব্ল্যাক কোট পড়া।
সিম্মি ভাবছে, আরাধ্যার কি করে জানলো যে সে সব ব্ল্যাক কালারের পড়েছে। আবার কাকতালীয় ব্যাপার হতে পারে। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। সিম্মিও হাসি দেয়। কিছুক্ষন পরে তারা পৌঁছে যায়। সিম্মি আর আরাধ্যার একসাথে বের হয়ে গেলো। সেখানে দেশের বড় বড় বিজনেস ম্যানরা ছিলো। আরাধ্যার আর সিম্মির নিজেদের সিটে গিয়ে বসলো। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকাচ্ছে আর সিম্মি আরাধ্যারের দিকে তাকাচ্ছে। প্রায় আধ ঘন্টা পর অনুষ্ঠান শুরু হলো।
~ Ladies and Gentleman attention please. প্রতিবারের মতো এবারও টপ বিজনেস ম্যানদের সেরা প্রোডাক্টের উপর ভিত্তি করে বিজয়ী Number one group of industries সুযোগ পাবে International business company এর সাথে ডিল করার সুযোগ। প্রতিবারের মতো এবারও সেই লিস্টে আছে,
- MK group of industries.
- Chowdhury group of industries.
- AR group of industries.
শুরুতেই প্রোডাক্ট প্রেজেন্ট করবেন, MK group of industries এর Owner Mr. Mahir khan এর Personal Assistant ফারিয়া তাসনিম সিম্মি।
~ All the best maya. (আরাধ্যার)
~ Yes sir, i’ill try our best.
সিম্মি তার কোম্পানির হয়ে প্রোডাক্ট প্রেজেন্টের জন্য। তখনি অভি সিম্মিকে দেখে। অভি অবাক হয়ে যায়। সিম্মি তার শত্রুর কোম্পানিতে চাকরি করে তাও আবার তার দুশমনের পিএ। অভির চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করে। সিম্মি তার মতো করে সব প্রেজেন্ট করে। তারপর অভির সিরিয়াল আসে,
~ এখন আসবেন Chowdhury group of industries এর Owner Mr. Abhi Chowdhury.
অভির নাম শুনে সিম্মি চমকে যায়। সিম্মি ঘুরে তাকাতেই দেখে অভি। সিম্মি কিছুটা ভরকে যায়। কারন তাদের প্রতিদ্বন্ধী কোম্পানি অভির। অভি সিম্মির দিকে তাকায়। অভির রাগ চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অভি কোনোভাবে তার কোম্পানির প্রোডাক্টের প্রেজেন্ট করে। সবার শেষে ফলাফল চলে আসে,
~ আজকে তিনটি কোম্পানি খুব ভালো পারফর্ম করেছে কিন্তু তাদের মধ্যে সেরা হয়েছে MK group of industries. আপনাকে অভিন্দন।
আরাধ্যার জানতো তারাই জিতবে। সিম্মি ও অনেক খুশি। সিম্মি আর আরাধ্যার যায় তাদের এওয়ার্ড নিতে। সিম্মি অভির সামনে দিয়ে যায়। অভি সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে। আরাধ্যার আর সিম্মি একসাথে এওয়ার্ড নেয়। আরাধ্যার স্টেজ থেকে নামার সময় অভি কে বলে,
~ So sad, এবারও হেরে গেলে।
~ জয় একদিন আমার হবে। Mind it
~ আমি থাকতে কোনোদিনও না।
~ সেটা সময় হলে দেখা যাবে।
অভি সব কথা গুলো সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলছিলো। আরাধ্যারে সবার সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে সিম্মি সামনে যেতে নিলে ওয়েটারের সাথে ধাক্কা লাগে আর জুস পড়ে যায় সিম্মির গাউনে। সিম্মি সেটা পরিষ্কার করতে ওয়াশরুমে যায়। আর তখনি………..
পর্ব ১৩
সিম্মি ড্রেস পরিষ্কার করছিলো আর তখনি অভি এসে সিম্মিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। সিম্মির কাঁধের দু’পাশে অভি হাত দিয়ে রাখে যাতে সিম্মি যেতে না পারে। অভির চোখ দুটো আগুনের ফুলকির মতো লাল হয়ে গেছে। অভি দাঁতে দাঁত চেপে বলতে থাকে সিম্মিকে,
~ তুমি আরাধ্যারের পিএ?
~ তাতে আপনার কি? (রেগে গিয়ে)
~ সিম্মি সোজাসাপটা উত্তর দাও! নইলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। (সিম্মির হাত চেপে ধরে)
~ হ্যা আমি আরাধ্যার স্যারের পিএ। (ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে)
~ আমাকে আগে বলোনি কেনো? (রাগি লুকে)
~ আজব, তো আপনাকে কেন বলবো? (ভেংচি মেরে)
~ কারণ, আমি তোমার কী হই সেটা ভালো করেই জানো। (চোখ রাঙিয়ে)
~ তাতে কি আপনি আমার মাথা কিনে নিয়েছেন? (ভ্রু কুচকে)
~ আজ, এই মূহুর্তে তুমি এই জব ছেড়ে দেবে! আমার টাকার অভাব নেই। তুমি তোমার সারাজীবন সেই টাকা খরচ করলেও শেষ হবে না। (রাগি লুকে)
~ আপনার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই। (চোখে চোখ রেখে)
~ What nonsense? (চিৎকার করে)
~ Mind your language! আমি এই জব করলে আপনার সমস্যা কোথায়? (জোরে বলে ওঠে)
~ আরাধ্যার আমার শত্রু। আমার জানের দুশমন। আর তুমি, আমার লাইফ পার্টনার হয়ে ওর কোম্পানিতে জব করবে। That’s not possible. (রাগে কটমট করে)
~ আপনার আর স্যারের মধ্যে কি হয়েছে? তা আমি জানি না আর আমার জানার দরকার নেই। আপনার কথায় আমি এই জব নেই নি তাহলে আপনার কথায় কেনো রিজাইন দেবো? (মুখ ফিরিয়ে নিয়ে)
~ সিম্মি বেশি বারাবাড়ি করো না। ফল ভালো হবে না। (রেগেমেগে)
~ কি করবেন আপনি? (রেগে)
অভি সিম্মির দিকে এগুতে থাকলে তখনি আরাধ্যার এসে অভির শার্টের কলার ধরে একটা ঘুষি দেয়। অভি তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায়। অভির ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে। অভি অগ্নি দৃষ্টিতে আরাধ্যারের দিকে তাকায়। সিম্মি অভির কাছে যেতে নিলে। আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরে। আরাধ্যার অভিকে বলে,
~ তোর সাহস তো কম নয়। তুই আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস। দেখ এবার তোর কি করি।
অভি উঠতে যাবে তখনই আরাধ্যার অভির বুকে জোরে লাথি দেয়। অভি আবারও পড়ে যায়। আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় গ্যারেজ এর সামনে। আরাধ্যার সিম্মির হাত ছেড়ে রেহানকে কল দেয়।
~ এক মিনিটের মধ্যে সব গার্ডদের নিয়ে গ্যারেজে চলে আয়।
~ জি বস।
আরাধ্যার ফোন কেটে দিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে সিম্মি নেই। আরাধ্যার সিম্মির নাম ধরে জোরে জোরে ডাকে,
~ সিম্মিয়ায়ায়ায়া। কোথায় গেলে? (এদিকে সেদিকে তাকিয়ে)
আর তখনি হোয়াইট কালারের একটি গাড়ি আসে। আরাধ্যারের সামনে দিয়ে যায় গাড়িটা। গাড়ির মধ্যে অভি আর সিম্মির হাত, মুখ বাধা। ওই মূহুর্তে রেহান আর ৩৫ জন গার্ড চলে আসে। আরাধ্যার তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে পড়ে। আরাধ্যার অভির গাড়ি ফলো করছে। অভি গাড়ির গতি আরও বাড়িয়ে দেয়।
আরাধ্যার সুযোগ বুঝে অন্য সাইডে মোড় নেয়। অভি সেটা না বুঝেই সোজা গাড়ি চালাতে থাকে। অভি হাইওয়ে ছেড়ে ডাবল টার্ন রাস্তায় ঢোকে আর তখনি সামনে একটা গাড়ি চলে আসে। অভি অনেক জোরে ব্রেক করে। অভির গাড়ি একটা বড় গাছের সাথে ধাক্কা খায়। হঠাৎ ব্রেক করার কারণে গাড়ির স্টেয়ারিং এর সাথে অভির মাথায় আঘাত লাগে। অভির মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে।
সিম্মি সামনের দিকে ঝুঁকে যায় এজন্য সিম্মির কপালের এক কোণা কেটে যায়। গাড়ির অবস্থা বেগতিক দেখে অভি সিম্মিকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায় আর সাথে সাথে গাড়ি ব্লাস্ট হয়ে যায়। আগুনের ভাপ এসে অভির আর সিম্মির শরীরে লাগে। অভি পড়ে যায় সিম্মি পড়ে যেতে নিলে আরাধ্যার সিম্মিকে টেনে জড়িয়ে ধরে।
~ আরাধ্যার খান কি পারে সেটা তোর ধারণার বাইরে। সিম্মি শুধু আমার আর কারো না। (আরাধ্যার)
~ তোর সাথে এতোদিন বিজনেস এর শত্রুতা ছিলো তাই তোকে কিছু বলিনি কিন্তু তুই আমার সিম্মির দিকে চোখ দিয়েছিস, তোর চোখ আমি তুলে ফেলবো। (অভি)
~ সিম্মি শুধু আরাধ্যারের বুঝলি। (আরাধ্যার)
আরাধ্যার রিভলবার বের করে অভির দিকে ধরে। অভি কাউকে কিছু না আসায় কোনো গার্ড সাথে আসেনি। সিম্মি বহু কষ্টে হাত আর মুখের বাঁধন খুলে আরাধ্যারের সামনে দাঁড়ায়,
~ কি করছেন আপনি? আপনি অভির কোনো ক্ষতি করবেন কারণ ও আমার ফিয়োনসি।
~ কি বললি? (প্রচন্ড রেগে)
~ আপনি যা শুনেছেন সেটাই বলেছি। সামনের মাসে আমার আর অভির বিয়ে। (রিভলবার সরিয়ে দিয়ে)
~ ও বেঁচে থাকলে তো বিয়ে হবে। (সিম্মিকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে অভিকে গুলি করে)
~ না য়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া। ( দুহাত দিয়ে কান চেপে)
আরাধ্যার অভির বুকে করে। অভি সাথে সাথে সেন্সলেস হয়ে যায়। সিম্মি অভির দিকে তাকায় সেই সুযোগে আরাধ্যার রিভলবার দিয়ে সিম্মির মাথায় আঘাত করে। সিম্মি আরাধ্যারের দিকে এক পলক তাকিয়ে বেহুশ হয়ে আরাধ্যারের উপর ঢলে পড়ে। আরাধ্যার সিম্মিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে
~ জোর করে কিভাবে জিনিস আদায় করতে হয় তা আমার খুব ভালো করে জানা আছে। এবার পার্মানেন্টলি তোমাকে নিজের করে নেবো। পৃথিবীর কেউ আটকাতে পারবে না Because i’m your crazy lover. (বাঁকা হাসি দিয়ে)
আরাধ্যার সিম্মিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়। সাথে সাথে সব গার্ডরাও। আরাধ্যার গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যায়। সাথে সাথে অভির বাবা সেখানে আসেন। পার্টিতে যখন কোথাও অভিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না তখন অভির বাবা অভির গাড়ির জিপিএস ট্রেস করে লোকেশন ট্র্যাকিং করে অভির অবস্থান জেনে নিয়েছিলো।
অভির বাবা গাড়ি থেকে নেমে দেখে রাস্তার একপাশে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে আর অন্য পাশে অভি পরে আছে। সেখানে তখনই এ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়। অভিকে হসপিটালে নিয়ে গিয় Emergency Operation theatre এ এডমিট করানো হয়। অন্যদিকে আরাধ্যার শহরের থেকে অনেক দূরে একটি নির্জন বাংলোতে সিম্মিকে নিয়ে যায়। সিম্মি তখনও বেহুশ। গাড়ি এসে বাংলোর সামনে থামে। আরাধ্যার সিম্মিকে কোলে করে নিয়ে বাংলোর মধ্যে গিয়ে সোফার উপর শুইয়ে দেয়।
~ রেহান….
~ জি বস……..
~ বিয়ের ব্যাবস্থা কর। Quickly…
~ Yes boss………
আরাধ্যার সিম্মিকে কোলে করে নিয়ে যায় একটি রুমে। সিম্মিকে খাটে শুইয়ে দিয়ে আরাধ্যার ফার্স্ট এইড বক্স এনে তুলা আর সেভলন দিয়ে কপালের রক্ত মুছে দেয়। কপাল আর মাথায় হালকা করে মলম লাগিয়ে দিয়ে ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ করে দেয়। আরাধ্যার উঠতে যাবে তখন আবার সিম্মির কাছে বসে। সিম্মির মুখটা বড্ড সিম্মিবী লাগছে। আরাধ্যার সিম্মির কপালে ভালোবাসার পরশ একেঁ দেয়। আরাধ্যার রেহানকে কল দেয়,
~ শহরের বেস্ট পার্লার থেকে সেরা বিউটিশিয়ানদের নিয়ে আসবি আসার। আমার জানের সাজে যেনো কোনো কমতি না থাকে।
~ Of course boss. i’ll come back few times boss.
~ Ok done.
আরাধ্যার সিম্মির কপালে হাত রেখে বলে, আজ আমাদের বিয়ে। জানো এই দিনটার জন্য কতো অপেক্ষা করেছি। আজ তোমাকে আমার নিজের করে নেবো। (মুচকি হেসে)
পর্ব ১৪
কিছুক্ষণের মধ্যেই রেহান সব কিছু নিয়ে আসে। আরাধ্যার সিম্মির জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে কিন্তু লাভ হয় না। তখন আরাধ্যার বাথরুম থেকে এক বালতি পানি নিয়ে আসে। পানি এনে সিম্মির উপর ঢেলে দেয়। সিম্মি হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়ে আর এদিক সেদিক তাকাতে থাকে আর সামনে তাকাতেই দেখে আরাধ্যারকে। আরাধ্যারকে দেখে সিম্মি অনেক ভয় পেয়ে যায়।
~ আপনি? আমি কোথায়? (ভয়ে ভয়ে)
~ Welcome of my world. Meri jaan (সিম্মির সামনে বসে)
~ আমি বাসায় যাবো। (কাঁদো কাঁদো সুরে)
~ আজ থেকে এটাই তোমার বাসা। (সিম্মির গালে হাত রেখে)
~ কি বলছেন এসব? (হাত সরিয়ে দিয়ে)
~ কিছু সময় পরে আমাদের বিয়ে। তৈরী হয়ে নাও। (উঠে দাড়িয়ে)
~ মরে গেলেও আপনাকে বিয়ে করবো না। আপনি একটা খুনি। আমি আপনাকে বিয়ে করবো না তো না! (রেগেমেগে)
~ Oh really. How dare you? You rejected me?
~ Yeah.
~ সামনে তাকিয়ে দেখো। স্ক্রিনের মেয়েটা কে আর আর ওই যে ওই লোকটাকে চেনো কি না। (টিভির দিকে ইশারা করে)
সিম্মি টিভির দিকে তাকিয়ে দেখে তিতলি স্কুল থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছে আর অন্য ফুটেজে তার বাবা বাজার করে বাসায় ফিরছেন। সিম্মি ভয়ে ভয়ে আরাধ্যারের দিকে তাকায়।
~ তোমার একমাত্র বোন এখন রাস্তা পার করবে আর ওর পেছনে একটি ব্ল্যাক কালারের গাড়ি দেখতে পাচ্ছো। ওই গাড়িটা ওকে পিষে দিয়ে যাবে। আর তোমার বাবা যে সাইড দিয়ে যাচ্ছে সেখানে বিল্ডিংয়ে কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। সেই বিল্ডিং থেকে একটা বড়সড় পাথরের বস্তুা তোমার বাবার মাথায় পড়বে। আর বুঝতেই পারছো তাহলে কি হবে। সিম্মিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে)
~ আপনি এতো নিচ। (কাঁদতে কাঁদতে)
~ হুম জান। শুধু তোমার জন্য। তুমি যদি রাজি না হও তাহলে আমি বাধ্য।
~ না না আমি রাজি। কিন্তু প্লিজ তিতলির আর বাবার কিছু করবেন না। (হাত জোর করে)
~ That’s like a good girl. তো রেডি হয়ে নাও।
আরাধ্যার রুম থেকে বের হয়ে যায় আর কয়েকজন মেয়ে এসে সিম্মিকে সাজানো শুরু করলো। সিম্মির চোখের জল বাঁধ মানছে না। সিম্মি বাঁধা দিতে চাইলে আরাধ্যারের কথা মনে পড়ে যায়। সিম্মি চুপচাপ থাকে। সিম্মিকে ব্রাইট রেড এন্ড গোল্ডেন কালারের লেহেঙ্গা পড়ানো হয়। রেড কালার এর উপর সাদা ও গোল্ডেন স্টোন এর অসাধারণ কাজ করা। তার সাথে ব্যাকলেস ব্লাউজ রেড কালারের। এক সাইডে দোপাট্টা। সিম্মির চুল গুলো পাফ করে সুন্দর করে করে খোঁপা করে তার উপর সদ্য ফোটা গোলাপ গুজে দেওয়া।
গলায় স্বর্ণের ভারি হার, কানে বড় ঝুমকা, মাথায় টিকলি। দুহাত ভর্তি চুরি আর রাখি। হাতে মেহেদী। মুখে ব্রাইডাল সাজ। সবশেষে সিম্মির খোপার সাথে এডজাস্ট করে ওরনা পড়ানো হলো। সিম্মিকে অপরুপ সুন্দরী লাগছিল। আরাধ্যার মেচিং করে গোল্ডেন শেরওয়ানি পড়েছে। সাথে চুল স্পাইক করা হাতে ওয়াচ পায়ে নাগরা। সিম্মিকে সাজানো শেষ হওয়ার পরে বিউটিশিয়ানরা সিম্মিকে সাথে করে নিয়ে রুম থেকে বের হয়। সিম্মি সিড়ি দিয়ে নামছে। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকাতেই আরাধ্যারের চোখ আটকে যায়। পাশ থেকে রেহান বলে ওঠে,
~ বস ম্যাম তো পুরাই ক্রাশ। আপনার চয়েসের তারিফ না করে পারা যায় না।
~ নজর দিস না।
সিম্মিকে আরাধ্যারের পাশে বসানো হয়। পুরো বাড়িতে আরাধ্যার, রেহান, উকিল, কাজী, আরাধ্যারের কেয়ারটেকার আর গার্ডরা ছাড়া কেউ নেই। সিম্মি নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। আরাধ্যার উকিল আর কাজীকে বলেন,
~ উকিল সাহেব রেজিস্ট্রি করবেন আর কাজী সাহেব ইসলামি বিধানে বিয়ে পড়াবেন। শুরু করুন।
উকিল সাহেব তার সব পেপার রেডি করে আরাধ্যারের সামনে দেয় সাইন করার জন্য। আরাধ্যার সাইন দিলেও সিম্মি দিতে চায় না। তখন আরাধ্যার সিম্মির কানে কানে বলে,
~ জান, নিশ্চয়ই কথাগুলো ভুলে যাওনি। তাড়াতাড়ি সাইন করো নইলে,
সিম্মি এক নজর আরাধ্যারের দিকে তাকিয়ে পেপারে সাইন করে দেয়। কাজী সাহেব সব ঠিকঠাক করে সিম্মিকে কবুল বলতে বলে,
~ বলো মা কবুল
~ …, ……………..
~ কবুল বলো
~ ………………….
~ সিম্মি কবুল বলো নইলে, (আরাধ্যার)
~ কবুল (৩ বার)
~ আলহামদুলিল্লাহ। আজ থেকে আপনারা এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত যানি আপনারা একসাথে থাকতে পারেন সেই দোয়া রইলো। ( কাজী)
~ Congratulations Mr.Mahir. (উকিল)
~ Thank you so much. রেহান এদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দে,
~ সবাইকে বিদায় জানিয়ে আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরে একটি রুমে নিয়ে যায়। রুমটি খুব সুন্দর করে সাজানো। গোলাপ আরও নানান ফুল দিয়ে। মাঝখানে একটি গোল বেড। বেডের উপর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ আকাঁ আর তার মধ্যে সিম্মি আর আরাধ্যারের নাম লেখা। আরাধ্যার মায়কে নিয়ে বেডের উপর বসায় আর নিজে সিম্মির সামনে বসে। সিম্মির হাতে হাত রেখে বলে, তোমাকে দুই বছর আগে দেখেছিলাম বিজয়স্মরনীতে। তুমি রিকশায় বসে ছিলে তখন তোমার কাছে একটা বাচ্চা মেয়ে যায় কতগুলো গোলাপ ফুল নিয়ে।
তুমি তখন মিষ্টি হাসি দিয়ে ওর হাতে টাকা দিলে কিন্তু ফুল নিলে না। তোমার সেই মন ভোলানো হাসি দেখে আমি তোমার সিম্মিয় পড়ে যাই। যাকে বলে প্রথম দেখায় প্রেম।
তারপর তোমাকে অনেক খুজেছি কিন্তু পাইনি। প্রতি রাতে তোমার হাসিকে কল্পনায় দেখেছি। তোমার সেই হাসি মাখা মুখ সারাক্ষণ আমার চোখের সামনে ভাসতো। এভাবে দুই বছর কেটে যায়। তারপর, যেদিন তুমি ইন্টারভিউ দিতে এলে সেদিন ছিলো আমার জন্য সবচেয়ে বেষ্ট। ভেবে নিয়েছিলাম যে এবার আর তোমাকে হাতছাড়া করা যাবে না। আমার ভালোবাসার টান আর তোমার ভাগ্য আমাদের মিলিয়ে দিয়েছে।
সিম্মি অন্যদিকে তাকিয়ে কাঁদছে।
~ আমি চাইলেন আমার অধিকার আদায় করে নিতে পারি। তুমি হাজার চেষ্টা করলেও আটকাতে পারবে না। কিন্তু,
~ আপনার থেকে এর থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না।
~ তুমি যতোদিন না আমায় ভালোবাসবে আর যতদিনে অনুমতি না দিবে ততদিনে আমি তোমাকে স্পর্শ করবো না।
সিম্মি অঝোর ধারায় কাঁদছে। আরাধ্যার কথাগুলো বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু আজ আরাধ্যার কাঁদছে। কোনো এক অজানা কষ্টে। অন্যদিকে অভির Operation successful হয়েছে। ভাগ্যবশত গুলিটা ভেতরে ঢোকেনি। অভির বাবা বুঝতে পারে এই কাজ কার। আর শুরু হলো এক নতুন শত্রুতার।
পর্ব ১৫
আরাধ্যার গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো। সিম্মি রুমে বসে কাঁদছে। সিম্মি ভাবতেই পারেনি আরাধ্যার এমন করবে। অন্যদিকে সিম্মির বাবা মা সিম্মিকে বহুবার কল দিয়েও কোনো রেসপন্স পায়নি। তারা বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। অভির জ্ঞান ফেরেনি এখনো। আরাধ্যার ফুল স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে তা আরাধ্যারের অজানা।
~ তুমি কেনো বোঝো না, আমি তোমাকে ভালোবাসি। কেনো সিম্মি কেনো? তোমার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা নেই শুধু ঘৃণা দেখেছি আমার জন্য। But i promise jaan, তোমার ওই চোখে আমার জন্য ভালোবাসা থাকবে। সেই ব্যবস্থা আমি করবো। Because i’m your crazy lover (চোখের জল ফেলে)
~ আমি আপনাকে ভালোবাসি না আর কোনোদিন বাসবো ও না। শুধু ঘৃণা করি। I just hate you Mahir khan. Just hate you. (চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে)
আরাধ্যার এতোটাই অন্যমনষ্ক ছিলো যে সামনে ট্রাক আসছে সেটা সে খেয়াল করেনি। ট্রাক আসতেই আরাধ্যার হার্ড ব্রেক করে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয় বিধায় বেঁচে যায়। কিন্তু আরাধ্যারের কপাল কেটে যায় আর হাতে আঘাত লাগে। আরাধ্যার রেহানকে কল করে,
~ ব্লক ডি তে চলে আয় তাড়াতাড়ি।
~ জি বস। আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।
অভির জ্ঞান ফেরে। জ্ঞান ফেরার পর থেকে অভির মুখে একটাই নাম, সিম্মি। অভির বাবা খবর পেয়ে আইসিইউ তে আসেন,
~ কি হয়েছে বাবা তোর? তোর এ অবস্থা হলো কি করে? (অভির পাশে বসে)
~ আরাধ্যার খান। (রক্তচোখে)
~ What? ওর এতো সাহস?
~ বাবা, আমার সিম্মিকে চাই। At any cost.
~ আরে সিম্মির সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
অভি তার বাবাকে সব খুলে বলে।
~ How dare you? ওই মেয়ে আমাদের শত্রুর কোম্পানিতে জব করে?
~ ওর দোষ নেই বাবা। ও কিছু জানতো না। কিন্তু আরাধ্যার কোনো কিছু করার আগে আমি সিম্মিকে নিজের ঘরে তুলবো।
~ That’s final.
দিন শেষে রাত ঘনিয়ে আসে তবুও সিম্মি বাসায় ফিরছে না। সিম্মির বাবা মা অনেক চিন্তা করছেন। বারবার কল দিচ্ছেন তবুও ফোন সুইচড অফ।
~ আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো? (সিম্মির মা)
~ চিন্তা করো না ও ঠিক আছে। (সিম্মির বাবা)
~ আমার মন বলছে সিম্মি কোনো বিপদে পড়েছে। (কেঁদে কেঁদে)
~ আপুর কিছু হবে না মা। তুমি কান্না করো না প্লিজ।
তখনি দরজার কলিং বেল বেজে ওঠে। তিতলি দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে দেখে অভির বাবা দাড়িয়ে আছে। সে কিছু না বলেই ভেতরে চলে আসে। সিম্মির বাবা মা সোফায় বসে আছেন।
~ সিম্মি কোথায়? (অভির বাবা)
~ ওতো অফিসে। (অভির বাবা)
~ কল করুন সিম্মিকে, (ধমক দিয়ে)
~ আসলে, (ভয়ে ভয়ে)
~ কি? (রেগে)
~ না মানে, (সংকোচ নিয়ে)
~ কি মানে মানে করছেন? ক্লিয়ারলি বলুন, (ধমকের সুরে)
~ আসলে সিম্মির ফোন বন্ধ। (নিচের দিকে তাকিয়ে)
~ Whattttt?
~ জি, (মন খারাপ করে)
~ আপনারা বসে আছেন এখনো, আপনাদের মেয়েকে কিডন্যাপ করা হয়েছে! (সিম্মির বাবার সামনে এসে)
~ কিহহহহহ্ (সিম্মির মা)
~ হ্যা
~ কিন্তু কে? আর আপনি, (অবাক হয়ে)
~ আপনার মেয়ের বস আরাধ্যার খান ওকে কিডন্যাপ করেছে। (রেগেমেগে)
সিম্মির বাবা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সিম্মির মা অজ্ঞান হয়ে যায়। তিতলি আর সিম্মির বাবা তাকে ধরে রুমে নিয়ে যায়। অভির বাবা চিন্তায় পড়ে যায় কারণ অভি জানতে পারলে তুলকালাম কান্ড পাকিয়ে ফেলবে। আর অভির অবস্থা তেমন ভালো না। অভির বাবা তার সব গার্ডদেরকে কাজে লাগিয়ে দেয়।
যেকোনো ভাবে সিম্মিকে খুজে বের করতে হবে। রেহান আরাধ্যারকে ধরে নিয়ে আসে বাসায়। রেহান আরাধ্যারকে সোফায় বসায়। আরাধ্যার রেহানকে ধমক দিয়ে যেতে বলে। রেহানও বাধ্য ছেলের মতো চলে যায়। আরাধ্যার হুইস্কির বোতল এনে খেতে থাকে। তখন রেহান কল দেয়,
~ বস একটা খারাপ খবর আছে।
~ কি?
~ আতিক চৌধুরী চারদিকে লোক লাগিয়ে দিয়েছে সিম্মি ম্যামকে খোঁজার জন্য। যেকোনো মূল্যে তাদের সিম্মি ম্যামকে চাই।
~ হেহ্। এতো সোজা। সিম্মিকে ওরা কোথাও পাবে না। নিউজিল্যান্ডের টিকেট অ্যারেন্জ কর।
~ ওকে বস্।
~ টুট টুট টুট
আরাধ্যার টলতে টলতে সিম্মির কাছে যায়। সিম্মি ফ্লোরে বসে বিছানায় মুখ গুজে কাঁদছে। আরাধ্যার রুমে এসে সিম্মির মাথায় হাত রাখে। সিম্মি হাত সরিয়ে দেয়,
~ কি চাই আপনার। (আরাধ্যারের দিকে তাকিয়ে)
~ তোমাকে (সিম্মির হাত ধরে)
~ চলে যান এখান থেকে (মুখ ফিরিয়ে নিয়ে)
~ যাবো তবে একা নয় (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ যা খুশি করুন। (চোখের পানি মুছে)
~ চলো (সিম্মির হাত টেনে)
~ কোথায় (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
~ তোমার বাসায়
আরাধ্যার সিম্মির হাত টেনে নিয়ে যায়। আরাধ্যার সিম্মিকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। সিম্মির পড়নে বিয়ের সাজ আর আরাধ্যারের ও। সিম্মি ভাবছে কি করে মা বাবাকে মুখ দেখাবে। সিম্মি কাঁদছে। সেটা দেখে আরাধ্যার জোরে ধমক দেয়,
~ এই চুপ একদম কান্না করবে না। চোখ থেকে আর এক ফোঁটা পানি পড়লে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
~ কাঁদবো না তো কি হিহি করে হাসবো।
~ একদম চুপ। একটাও কথা বলবা না।
~ আপনার সাথে কথা বলতে আমার বয়েই গেছে।
~ তোমাকে তো আমি……
আরাধ্যার আর সিম্মি কেউ কারো সাথে কথা বলেনি। কিছুক্ষন পর আরাধ্যার গাড়ি থামায়। সিম্মি চুপ করে বসে আছে। আরাধ্যার গাড়ি থেকে নেমে যায় কিন্তু সিম্মি বের হয় না। আরাধ্যার গাড়ির ভেতর থেকে সিম্মিকে টেনে বের করে। আরাধ্যার বাসার সামনে এসে থেমে যায়। সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ বাসায় গিয়ে কোনো নেকামি করবে না আর যদি এমন কিছু করো তাহলে তোমার পরো পরিবার কে শেষ করবো তোমারই সামনে। Mind it….
~ ছিঃ আপনি এতো খারাপ।
~ খারাপের কিছু দেখোনি এখনো,
আরাধ্যার কলিং বেল বাজায়। সিম্মির বাবা এসে দরজা খুলে দেয়। সিম্মির বাবা সিম্মিকে দেখে পুরাই অবাক। সিম্মির বাবা ভেতরে চলে যায় কিছু না বলেই। সিম্মি গিয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে আর তখনি,
~ ঠাসসসসসসসস। আমার কাছে আসবি না। তুই আমার কেউ না। আমার সিম্মি মরে গেছে।
~ বাবা, বাবা এমন বলো না, প্লিজ আমার কথা শোনো,
~ তোর মা বাবা মরে গেছে। (সিম্মির মা)
~ মাগো আমার কথা শোনো,
সিম্মি তার মায়ের পা জড়িয়ে ধরতে নিলে সিম্মির মা তাকে চড় মারতে নিলে আরাধ্যার তার হাত ধরে,
~ শুনুন মা, সিম্মির কোনো দোষ নেই। দোষ আমার, মারতে হলে আমাকে মারুন,
~ তুমি তাহলে আরাধ্যার,
~ হুম
~ লজ্জা করে না তোমার আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করতে? আবার আমার সামনে দাড়িয়ে কথা বলছো,
~ আমি যতদূর জানি, মা খুব উদার মনের হয়, সন্তান হাজার ভুল করলেও মা ক্ষমা করে দেয়। আপনিও সিম্মিকে,
আরাধ্যার কিছু বলার আগেই সিম্মির মা আরাধ্যারকে চড় মারে। আরাধ্যারের রাগ উঠলেও থেমে যায়। সিম্মির বাবা সিম্মির হাত ধরে টেনে দরজার সামনে নিয়ে যায়,
~ কোনোদিন আর এই বাড়িতে আসবি না তোর জন্য এই বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ।
আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। সিম্মির পাথর হয়ে গেছে। সিম্মি চুপ হয়ে আছে। আরাধ্যার সিম্মিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়। এর মধ্যে অভি সিম্মির বাসায় চলে আসে। অভি গিয়ে দেখে সিম্মির মা কাঁদছে আর সিম্মির বাবা বসে আছে,
~ আঙ্কেল সিম্মি কোথায়?
~ চলে গেছে।
~ কোথায়?
~ ওর স্বামীর সাথে।
~ What?
~ এ হতে পারে না। সিম্মিকে না পেলে আমি কাউকে ছারবো না।
অভি তাড়াতাড়ি তার বাবাকে কল দেয়,
~ বাবা সিম্মির বাসার দুই পাশের সকল রুটের রাস্তা বন্ধ করে দাও। এখনি,
~ ওকে বাবা।
অভির বাবা সব গার্ডদের দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয় কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আরাধ্যার অনেক দূর চলে গেছে। সিম্মি যাতে কিছু না বুঝতে পারে এজন্য আরাধ্যার সিম্মির মুখে ক্লোরোফর্ম রুমালে মিশিয়ে চেপে ধরে। সিম্মি বেহুশ হয়ে যায়। আরাধ্যার গাড়ি নিয়ে এয়ারপোর্টে নিয়ে যায়। আরাধ্যার পার্সোনাল প্লেন রেন্ট করে। আরাধ্যার সিম্মিকে নিয়ে প্লেনে উঠে পড়ে। অন্যদিকে, অভি,
~ তোমাকে আমি ছাড়বো না সিম্মি। যে করেই হোক তোমাকে আমার চাই।
পর্ব ১৬
ফ্লাইট এসে নিউজিল্যান্ডের এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করে। আরাধ্যার সিম্মিকে কোলে করে নিয়ে প্লেন থেকে নেমে সোজা তার গাড়িতে উঠে আরাধ্যারের কেনা বাড়িতে যাওয়ার জন্য। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। গাড়িতে উঠার পর সিম্মির জ্ঞান ফেরে। সিম্মি টিপটিপ করে চোখ মেলে। চোখ খুলেই দেখে সিম্মি আরাধ্যারের কোলে। আরাধ্যার সিম্মির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর সিম্মির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সিম্মি উঠতে চাইলেও সিম্মিকে উঠতে দেয় না,
~ আরে আরে, কি করছো জান? (সিম্মির হাত ধরে)
~ ছাড়ুন আমাকে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? (রাগী দৃষ্টিতে আরাধ্যারের দিকে তাকিয়ে)
~ ছোট্ট একটা কুঁড়ে ঘরে, যেখানে আমাদের দুজনের সংসার হবে। (দুষ্ট হাসি হেসে)
~ আপনার মতো ডেভিলের সাথে আমি সংসার করতে পারবো না আর করবোও না। (ভেংচি মেরে)
~ তুমি বাধ্য জান। পাখি বেশি উড়তে শিখে গেলে তার ডানা কিভাবে কেটে দিতে হয় সেটা আরাধ্যার খুব ভালো করে জানে। (হালকা রাগী সুরে)
~ আপনি একটা চিটার। চিটিং করছেন আমার সাথে। (মুখ বাকিয়ে)
~ সব তোমার জন্য। শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য। (সিম্মির কপালে হাত রেখে)
সিম্মি গাড়ির গ্লাস দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখে, বাহিরে হালকা হালকা বরফ পড়ছে আর অনেক ঠান্ডা লাগছে। আরাধ্যার সিম্মিকে ছেড়ে দেয়। সিম্মি উঠে বসে পড়ে। সিম্মির কাছে সব অচেনা লাগছে। সিম্মি খানিকটা আতঙ্ক নিয়ে আরাধ্যারকে বলে,
~ আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? এটা তো বাংলাদেশ না।
~ You’re so brilliant baby. Obviously! This is not Bangladesh but i can’t you, what’s name of this country? (ভাব নিয়ে)
~ ডেভিল কোথাকার। (মনে মনে)
~ ডেভিল বলো আর যাই বলো, আমি তোমার হাসবেন্ড। শুধু হাসবেন্ড না ডেভিল হাসবেন্ড। (সিম্মির গালে হাত দিয়ে)
~ জীবনেও না। (ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে)
~ কি বললে জান (সিম্মির গাল চেপে ধরে)
~ আমার লাগছে, ছাড়ুন (হাত সরানোর চেষ্টা করে)
~ আমার থেকে পরিত্রান পাওয়া এতো সোজা নয়। তুমি আমার শুধু আমার। আমার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলে পরিনাম কতটা ভয়াবহ হবে সেটা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। (সিম্মির গাল আরও জোরে চোপে ধরে)
~ আ য়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া। (ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে)
আরাধ্যার সিম্মির গাল ছেড়ে দিয়ে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে। সিম্মি ব্যাথায় কাঁদছে। সিম্মি আরাধ্যারকে সরাতে চেয়েও পারলো না। কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়ি এসে বাড়ির সামনে থামলে। আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরে গাড়ি থেকে নামায়। সিম্মি বাড়ির সামনে এসে অবাক হয়ে যায়। বাড়িটি খুব সুন্দর করে সাজানো আর বেশ চমৎকার। সাদা রংয়ের বিশাল হাভেলি। বাড়িটা প্রায় থাই গ্লাস দিয়ে তৈরী। ভেতরে সব দামি শোপিছ বর আসবাব দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো। বাহিরে দাড়িয়ে সব দেখা যায়। বাড়িটি দোতলা।
তার একপাশে একটা বড় সুইমিংপুল তার বিপরীত পাশে সুন্দর ফুলের বাগান। নানা রকমের বিদেশি ফুল। বাগানের মাঝখানে একটি টি টেবিল আর ২ টা চেয়ার। বাগানের এক কোণে একটা দোলনা। পুরো বাড়ির চারপাশে বাউন্ডারি দেয়া। খুব উঁচু দেয়াল। কারও পক্ষে সম্ভব নয় যে দেয়াল ডিঙিয়ে বের হবে। আরাধ্যার সিম্মিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ রেখে বলে,
~ পছন্দ হয়েছে জান? প্রায় ৩৮ কোটি টাকা দিয়ে এই বাড়িটি কিনেছি শুধু তোমার জন্য। এখানে তুমি আর আমি থাকবো আর কেউ না।
~ যতসব পাগলামি। (ভেংচি মেরে)
~ শুধু তোমার জন্য। (সিম্মিকে ছেড়ে দিয়ে)
আরাধ্যার সিম্মিকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে যায়। সিম্মি অবাক হয়ে দেখছে বাড়িটি। আরাধ্যার সিম্মিকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে ওপরে গেলো। ওপরে ঠিক মাঝখানের রমটায় আরাধ্যার নিয়ে গেলো সিম্মিকে। রুমটা বেশ চমৎকার। রুমের আসবাব গুলো খুব পরিপাটি করে রাখা। আরাধ্যার সিম্মিকে বলে,
~ এই রুম টা তোমার আর আমার। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ আমি অন্য রুমে থাকবো। (মুখ ফিরিয়ে নিয়ে)
~ তুমি আমার কাছেই থাকবে। (সিম্মির কাছে গিয়ে)
~ আচ্ছা। (ভয়ে ভয়ে)
~ এই আলমারিতে শাড়ি, থ্রিপিছ, লেহেঙ্গা, টপস, স্কার্ট ~ টি শার্ট রাখা আছে। যেটা ভালো লাগে সেটা পরে নাও। আর ড্রেসিং টেবিলে ব্রান্ডেড কসমেটিকস আছে। আর নিচের ড্রয়ারে Gold and Diamonds ornaments আছে। তোমার যা যা দরকার সব রাখা আছে। আর যদি কিছু দরকার হয় আমাকে বলবে কেমন।
~ হুম। (ভয়ে ভয়ে)
~ তাহলে দাড়িয়ে আছো কেনো যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। (রেগে)
~ জি জি যাচ্ছি। (দৌড় দিয়ে)
আরাধ্যার রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে যায়। সিম্মি একটা নীল রংয়ের শাড়ি বের করে শাওয়ারে যায়। সিম্মি শাওয়ার অন করে কাঁদছে। সিম্মির অশ্রুজল পানির সাথে মিশে গেছে। সিম্মি মুখ চেপে কাঁদছে। সিম্মি খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে মৃত্যু ছাড়া মুক্তি পাবে না আরাধ্যারের থেকে। সিম্মি জানে না সিম্মি কোথায়? সিম্মি বলতে থাকে,
~ যে করেই হোক আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে। নাহলে ঐ ডেভিলটা আমাকে শেষ করে ফেলবে। কিন্তু আমি কোথায় তাই তো জানি না। একটা উপায় বের করতেই হবে। (কেঁদে কেঁদে)
~ সিম্মি এতো দেরি হচ্ছে কেনো? তুমি বের হবে নাকি আমি ভিতরে আসবো। (দরজায় ঘুষি মেরে)
~ নায়ায়ায়ায়ায়ায়া। বের হচ্ছি। (চিৎকার করে)
~ পাঁচ মিনিট সময়।
সিম্মি তাড়াতাড়ি বের হয় কোনোরকম শাড়ি পেচিয়ে। আরাধ্যার বেডে বসে বসে গেমস খেলছিলো। দরজা খোলার আওয়াজ শুনে আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকায় আর হাসা শুরু করে। সিম্মি বোকা বনে যায়।
~ এটা কি পড়েছ। (হাসতে হাসতে)
~ কেনো? শাড়ি!
~ এভাবে কেউ শাড়ি পড়ে? একে পড়া বলে না? পেচানো বলে। (হাসতে হাসতে)
~ আমি কখনো পড়িনি তাই পারি না পড়তে। আর আপনি নিজেই তো পাঁচ মিনিট সময় দিলেন। এতো তাড়াতাড়ি কি শাড়ি পড়া যায়? (ভেংচি মেরে)
~ দোষ যখন আমার। সংশোধন আমিই করবো। (সিম্মির দিকে আসতে আসতে)
~ এই আপনি কি করছেন? সামনে আসছেন কেনো? (পেছাতে পেছাতে)
~ শাড়ি পরাবো তাই। (মুচকি হেসে)
~ না না দরকার নেই। (পেছাতে পেছাতে)
~ দরকা আছে বলেই আসছি। বেশি ছটফট করো না। চুপ করে দাড়িয়ে থাকো। (সিম্মির মুখ চেপে ধরে )
সিম্মি ভয়ে চুপ হয়ে গেলো। আরাধ্যার পকেট থেকে রুমাল বের করে নিজের চোখ বেধে নিলো। সিম্মি তো অবাক আরাধ্যারের কান্ড দেখে। আরাধ্যার সিম্মিকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে। আরাধ্যারের প্রতিটি স্পর্শে সিম্মি কেঁপে উঠছে। আরাধ্যার সিম্মিকে শাড়ি পরিয়ে দিয়ে চোখের বাধন খুলে সিম্মির দিকে তাকালো,
~ Wah meri jaan. You looking so beautiful.
~ হুম হয়েছে। (ভেংচি মেরে)
~ চলো ডিনার করবো। আমি সব অর্ডার করে দিয়েছি। সার্ভেন্ট সব রেডি করে চলে গেছে।
~ আমার খিদে নেই।
~ এই শোনো আমি তেরিং বেরিং পছন্দ করি না। কথা এক বারের বেশি যানি বলতে না হয়। (সিম্মির মুখ চেপে ধরে)
আরাধ্যার কোনো কিছু বলার সুযোগ দিলো না সিম্মিকে। একটানে নিয়ে গেলো ডাইনিং টেবিলে। সিম্মিকে বসিয়ে দিয়ে আরাধ্যার একটি প্লেটে নিয়ে খাবার সার্ভ করে, সিম্মিকে খাইয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য হাত মুৃখের সামনে নিলো, সিম্মি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে,
~ আমি অনয় প্লেটে খাবো।
~ তুমি আর আমি এক প্লেটে খাবো। (লোকমা মুখের সামনে নিয়ে)
~ না। (ভেংচি মেরে )
~ কিহহহহহ (রেগেমেগে)
~ না না কিছু না। (ভয়ে ভয়ে )
~ নাও, (লোকমা মুখে দিয়ে)
সিম্মি ২/৩ লোকমা মুখে নিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আরাধ্যারও তেমন জোর করে না।
~ আমি আর খাবো না।
~ আচ্ছা। তাহলে রুমে যাও।
সিম্মি উঠে রুমে চলে গেলো। আরাধ্যার খেয়েদেয়ে রুমে চলে গেলো। সিম্মি বেলকনিতে দাড়িয়ে ছিলো। আরাধ্যার সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে। সিম্মি ছাড়াতে নেয়,
~ আরে এতো ছটফট করো কেন সবসময়। আমি ধরলে মনে হয় তুমি ইলেকট্রিক শক খেয়ছো।
~ আমি ঘুমাবো সরুন। (আরাধ্যারকে সরিয়ে দিয়ে)
~ ওকে চলো।
~ চলো মানে। আপনি সোফায় ঘুমাবেন না হয় খাটে। আপনি আমার সাথে ঘুমাতে পারবেন না।
~ No miss maya. আমি তোমার সাথেই ঘুমাবো। (সিম্মিকে কোলে নিয়ে)
আরাধ্যার সিম্মিকে কোলে করে বেডে নিয়ে শুইয়ে দেয়। আরাধ্যার সিম্মির হাত চেপে ধরায় সিম্মি উঠতে পারে না। খাটে বালিশ ছিলো একটা। সিম্মি আরও ক্ষেপে যায়,
~ এসব কি? (রেগেমেগে)
~ কি? (না দেখার ভান করে )
~ একটা বালিশ কেনো। আমি ঘুমাবো কিসে? (রাগি লুকে)
~ আমার বুকে, (ভাব নিয়ে )
~ No way (রেগে)
~ Okay that’s not my problem. Good night. (বালিশে শুয়ে)
~ Disgusting. (বালিশ ছাড়া শুয়ে)
আরাধ্যার সিম্মির কথা শুনে হাসছে। সিম্মি বকবক করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। অন্যদিকে, অভি একের পর এক বিয়ারের বোতল শেষ করে যাচ্ছে। কেউ তার রোষানলের কোপে পড়তে চায় না বিধায় ভয়ে তার কাছে যাচ্ছে না।
~ পৃথিবীর যেখানেই থাকো না কেনো? আমি তোমাকে খুঁজে বের করবো সিম্মি। আমার ভালোবাসা এতো সহজে হারতে পারে না। আরাধ্যার তোকে আমি ছাড়বো না। তোকে ধ্বংস করে তবে আমার শান্তি।
অভির লোক চারদিকে ছড়িয়ে পড়লেও কোনো লাভ হয়নি। কেউই কোনো সন্ধান পায়নি সিম্মির।
সকাল সকাল সিম্মির ঘুম ভেঙে যায়। সিম্মি চোখ মেলে তাকায়। সিম্মির চোখ চড়কগাছ। সিম্মি দেখে, আরাধ্যার সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। সিম্মি আরাধ্যারের বুকে। সিম্মি আরাধ্যারকে জোরে ধাক্কা দেয়। আরাধ্যার বেচারা অল্পের জন্য বেড থেকে পড়েনি।
~ হচ্ছে টা কি? আরেকটু হলেই তো পড়ে যেতাম।
~ আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন কেনো?
~ Chori upar se Sina jori.
~ কি?
~ তুমিই তো কাল রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরলে।
~ Impossible.
~ তোমার তো কোনো ঠিকানা নেই। বালিশ খাটের নিচে থাকে। চাদরের খবর নেই। কম্বল নিচে পড়ে থাকে।
~ stop stop! আপনি এতো কিছু জানলেন কিভাবে?
~ Live a dekhlm.
~ What?
~ হুম।
~ আপনি এমন কাজ করেছেন। আর আমি শুধু শুধু অভিকে দোষ দিলাম কত…….
সিম্মি কথা শেষ করার আগেই আরাধ্যার সিম্মির গলা চেপে ধরে,
~ এই মুখে আর কোনোদিন ও অভির নামও উচ্চারণ করবে না তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
আরাধ্যার এতো জোরে সিম্মির গলা চেপে ধরে যে সিম্মির শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো। আরাধ্যার কথাগুলো বলে সিম্মিকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। সিম্মি গলায় হাত দিয়ে কাঁদছে আর বলছে,
~ I hate you Mahir. I just hate you.
পর্ব ১৭
আরাধ্যার গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো। আরাধ্যার না চাইতেও সিম্মিকে কষ্ট দেয়। নিজের ইচ্ছেতে আরাধ্যার সিম্মিকে কষ্ট দিতে চায় না। কিন্তু রাগ যখন Out of control হয়ে যায় তখন রাগের বশে সিম্মিকে মেরে বসে।
~ কেনো বোঝো না আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি নিজে ইচ্ছে করে তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। তবুও আমার রাগ আমি নিজের আয়ত্তে আনতে পারি না। (গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুরিয়ে)
আরাধ্যার একটা বারে গেলো। আরাধ্যারের মাথা ঠিক নেই, বারে গিয়ে একের পর এক হুইস্কির বোতল শেষ করছে। সিম্মি ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছে। পুরো বাড়িতে সিম্মি একা। সিম্মি বাহিরে যায় পরখ করতে যে আরাধ্যার সব দরজা বন্ধ নাকি খোলা আছে। সিম্মি দরজা খুলে মেইনগেইটের সামনে যায়,
~ জানতাম! আমি ঠিক জানতাম! এই ডেভিলটা ভালো করে বুঝো গেছে, যে আমি সুযোগ পেলেই পালাবো! এজন্য দরজা বাহির থেকে তালা মেরে গেছে! (দরজার সামনে দাড়িয়ে কোমরে হাত রেখে বলছে)
সিম্মি বিরক্ত হয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে সোফায় বসে পড়ে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে তা নিজেই জানে না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। কিন্তু আরাধ্যারের আসার খবর নেই। সিম্মি ঘুম থেকে উঠে রান্না ঘরে যায়। সেখানে সব রাখা আছে। সিম্মি তাক থেকে চিকেন স্যুপ এর প্যাকেট বের করে স্যুপ বানিয়ে নেয়। রাত প্রায় ১২ঃ০০। আরাধ্যারের আসার নাম গন্ধ নেই। সিম্মি স্যুপ বানিয়ে খেয়ে আবারও শুয়ে পড়ে। তখনই জোরে দরজা খুলে যায় রেহান আরাধ্যারকে ধরে নিয়ে আসে। আরাধ্যারের হুশ নেই হাত থেকে টপটপ করে তাজা রক্ত পড়ছে। সিম্মি হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে। রেহান সিম্মিকে দেখে বলে,
~ ম্যাম একটু হেল্প করুন।
~ জি ভাইয়া।
সিম্মি আর রেহান আরাধ্যারকে ধরে নিয়ে গিয়ে বেডে শুইয়ে দেয়। সিম্মি কৌতূহলবশত আরাধ্যারের হাত ধরে দেখার জন্য যে, হাতে এমন কি হলো যে এতো রক্ত। সিম্মি আরাধ্যারের হাত দেখে পুরাই থ হয়ে গেছে কারণ আরাধ্যার হাত কেটে সিম্মির নাম লিখেছে আর ক্ষত টা খুব গভীর। সিম্মির অজান্তেই চোখ ছলছল করে ওঠে। রেহান সিম্মিকে বলে,
~ ম্যাম একটা কথা বলি?
~ জি ভাইয়া বলুন,
~ বস আজ সারাদিন কোথায় ছিলো? সেটা জানেন?
~ না তো!
~ বস আজ সারাদিন বারে ছিলো আর সকাল থেকে একটু আগ পর্যন্ত শুধু বিয়ার খেয়েছেন। বস চায় না আপনাকে কষ্ট দিতে। তার রাগ অনেক বেশি। রাগের বশে সে উল্টা পাল্টা কাজ করে বসে। কিন্তু ম্যাম, বস আপনাকে অনেক ভালোবাসে। যে হাত দিয়ে আপনাকে মেরেছেন সেই হাত কেটে আপনার নাম লিখেছেন।
~ ………………..
~ হতে পারে আমি বসের কেনা গোলাম কিন্তু দীর্ঘ বছর ধরে স্যারের সাথে আছি। তাকে আমার থেকে ভালো কেউ চেনে না এমন কি তার বাবাও না। বসের পেছনে অনেক কোটিপতির মেয়েরা ঘুরেছে কিন্তু বস পাত্তা দেয়নি। কিন্তু দুই বছর আগে আপনাকে দেখে বস পাগল হয়ে যায়। আপনাকে বহু বার খুঁজেও পাননি। কিন্তু বসের ভালোবাসার টানে আপনি তার কাছে এসেছেন।
~ ……………………..
~ আপনাকে হারাতে চাননি বলে, বস আপনাকে ব্ল্যাক মেইল করে বিয়ে করেছেন। শুধু আপনাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য। বসের মা মার যাওয়ার পর তার বাবা তাকে কেয়ারটেকার সাহেবের হাতে তুলে দিয়ে আমেরিকায় চলে যান। কখনও বসকে সময় দেননি। একাকীত্ব, নিসঙ্গতার জন্য তার এ অবস্থা। আপনি পারেন তাকে ভালোবেসে অন্যরকম আরাধ্যারে পরিণত করতে।
~ ……………………..
~ বিয়ে তো মানুষের একবারই হয়। আপনি কি পারেন না সব ভুলে গিয়ে বসকে আপন করতে?
~ ……………………..
~ ভুল হলে মাফ করে দেবেন। হয়তো অনেক বেশি বলে ফেলেছি। আসছি ম্যাম।
রেহান চোখের পানি মুছে চলে গেলো। সিম্মি নিস্তব্ধ হয়ে শুনছিলো কথাগুলো। ক
সিম্মির চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। সিম্মি বুঝতে পারছে না কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক। সিম্মি দোটানায় পড়ে যায়। সিম্মি সব ঘোর কাটিয়ে আরাধ্যারের হাত ধরে। তারপর উঠে গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স খুজে বের করে। আরাধ্যারের হাতের রক্ত পরিষ্কার করে মেডিসিন লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। সিম্মি আরাধ্যারের শার্ট খুলে দেয়। টাওয়েল ভিজিয়ে শরীর মুছে দেয়। পায়ের জুতো খুলে দেয়। আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরে বলে,
~ সিম্মি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।
~ ঘুমিয়ে পড়ুন।
আরাধ্যার এতোটা ড্রিংক করেছে যে আরাধ্যারের শরীর থেকে ড্রিংক এর গন্ধ আসছে। সিম্মি পারফিউম স্প্রে করে দেয়। সিম্মি আরাধ্যারের পাশে শুয়ে পড়ে। আরাধ্যার সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে।
সিম্মি কোনো বাধা দেয়নি। খুব সকালে আরাধ্যারের ঘুম ভাঙলো। আরাধ্যার ঘুম থেকে উঠে দেখে, আরাধ্যার সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে আছে আর সিম্মিও। আরাধ্যার কিছুটা অবাক হয়। আরাধ্যার উঠে শাওয়ারে চলে যায়। সিম্মি চোখ খুলে দেখে আরাধ্যার পাশে নেই। সিম্মি তাড়াতাড়ি উঠে পুরো বাড়ি খুজে কিন্তু কোথাও না পেয়ে রুমে আসে মন খারাপ করে, এসে বেডে বসে পড়ে।
তখনি আরাধ্যার বাথরুমের দরজা খুলে বের হয়। আরাধ্যার একটা সাদা টাওয়েল পেচিয়ে বের হয়েছে। শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। সিম্মি আরাধ্যারকে দেখে টাস্কি খেয়ে গেলো। আরাধ্যারকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। সিম্মি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরাধ্যারের দিকে। আরাধ্যার সিম্মিকে দেখে বললো,
~ এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকলে, মুখে মশা যাবে। (হেসে হেসে)
~ কেক কে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে? (তোতলাতে তোতলাতে)
~ মিস, ফারিয়া তাসনিম সিম্মি। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ আমার বয়েই গেছে আপনার দিকে তাকাতে, (ভেংচি মেরে)
~ আমার হাতে এতো ভাললবাসা দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলে তাহলে তাকাতে দোষ? (ভাব নিয়ে)
~ আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই। সরুন আমি ফ্রেশ হবো। (ধাক্কা দিয়ে)
আরাধ্যারকে সরিয়ে দিয়ে সিম্মি ফ্রেশ হতে গেলো। কিছুক্ষন পরে বের হলো। আরাধ্যার কম্পিউটারে কাজ করছে বসে বসে। আরাধ্যার সিম্মিকে দেখে বললো,
~ যাও আমার জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসো। (না তাকিয়ে)
~ আমি? (অবাক হয়ে)
~ হুম তুমি। এখানে তুমি আর আমি ছাড়া অন্য কেউ তো নেই। (এদিক ওদিক তাকিয়ে)
~ কিন্তু আমি! (হাত নেড়ে)
~ গ্রিন টি, বাটার টোস্ট, পাস্তা, স্যুপ, স্যান্ডউইচ, গ্রিন আপেল জুস বানিয়ে নিয়ে আসো। (না তাকিয়ে)
~ রাক্ষস ও এর থেকে কম খায়। (বিড়বিড় করতে করতে)
~ কিছু বললে, (রেগে)
~ কই নাতো, (ঢোক গিলে)
~ তাহলে যাও তাড়াতাড়ি নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসো। (রেগেমেগে)
~ যাচ্ছি। (ভেংচি মেরে)
সিম্মি বকবক করতে করতে রান্না ঘরে যায়। প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেছে। সিম্মি আসছে না। আরাধ্যার বিরক্ত হয়ে নিচে যায়। গিয়ে দেখে সিম্মি টেবিলে খাবার সার্ভ করেনি। আরাধ্যার রেগে যায়। যেই না আরাধ্যার রান্না ঘরে যাবে তার আগেই সিম্মি রান্না ঘর থেকে বের হয়, সিম্মি আরাধ্যারের সামনে একটা কাপ নুডুলস্ ধরে। আরাধ্যার রেগেমেগে বলে,
~ এসব কি?
~ এমা, আপনি এটাই চেনেন না? এটাতো কাপ নুডুলস।
~ তোমাকে কি বানাতে বলেছিলাম?
~ আমি অনেক ভেবে দেখলাম! আমাকে দিয়ে রান্না অসম্ভব। আমি রান্না করতে পারি না।
~ তাহলে কি খেতে পারো!
~ হুম অনেক।
~ Oh really! Okay fine.
আরাধ্যার সিম্মিকে ধরতে নিলে সিম্মি দেয় এক ভো দৌড়। আরাধ্যার সিম্মিকে ধরার জন্য ছুটছে। সিম্মি দৌড়াচ্ছে।
~ সিম্মি দাড়াও বলছি,
~ পারলে ধরুন,
~ ভালো হচ্ছে না,
~ হাঁপিয়ে গেলেন,
~ তবে রে,
সিম্মি দৌড়াতে দৌড়াতে সুইমিংপুলের কাছে যায়। সিম্মি না দেখেই দৌড়ায়। সিম্মি সুইমিংপুলের মধ্যে পড়তে নিলে আরাধ্যার সিম্মিকে ধরতে নেয়। সিম্মি সুযোগ বুঝে সরে যায় আর আরাধ্যার পুলের মধ্য পড়ে যায়। সিম্মি দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছে আরাধ্যারকে দেখে। আরাধ্যার সিম্মিকে হাসতে দেখে অভিনয় শুরু করে সাঁতার না জানার।
~ জান আমি সাতার জানি না। আমাকে বাঁচাও
~ মিথ্যা কথা,
~ সত্যি বলছি জান,
~ সত্যি তো,
~ হুম জান,
~ নিন আমার হাত ধরুন,
সিম্মি হাত বাড়িয়ে দেয় আর আরাধ্যার হাত ধরে টান দেয়। আর তো সিম্মি পড়ে যায়। আরাধ্যার সিম্মির কোমরে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে,
~ মিথ্যাবাদী,
~ খুব হাসছিলে না, এবার কেমন হলো।
সিম্মি আর আরাধ্যার দুজনেই হেসে ওঠে। ভালোবাসার সুন্দর মূহুর্ত ক্ষনস্থায়ী কিন্তু ভালোবাসার ঝর শুরু হলে তা দীর্ঘস্থায়ী কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিত হয় ভালোবাসার।
পর্ব ১৮
সিম্মি আরাধ্যারকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। আরাধ্যার সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে। সিম্মির মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসে,
~ আল্লাহ রেহান ভাই আপনি কখন আসলেন। (আরাধ্যারের সামনের দিকে তাকিয়ে)
~ আরে তুই এখানে? (আরাধ্যার থতমত খেয়ে)
সিম্মি সাতার কেটে অন্য পাশে চলে যায়। আরাধ্যার ও সাতার কেটে সিম্মির কাছে যায়। কিন্তু তার আগেই সিম্মি সিড়ি দিয়ে উঠে দৌড়ে রুমে এসে বাথরুমে যায়। আরাধ্যার মাথায় হাত দিয়ে বলে,
~ কি রোমান্টিক মুড ছিলো! পুরোটাই বিগড়ে দিলে। সিম্মি তাড়াতাড়ি বের হও আমার ঠান্ডা লাগছে।
~ এক ঘন্টা। (কেয়ার না দিয়ে)
~ What a, (রেগেমেগে)
~ কাজ হবে না, অপেক্ষা করুন। (হেসে হেসে)
~ সিম্মি ভালো হচ্ছে না! (রেগে)
~ No. Never. (ভেংচি মেরে)
~ Are you sure? (বাঁকা হাসি দিয়ে)
~ obviously. (উৎফুল্ল হয়ে)
~ আচ্ছা পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করো দরজা ভাংছি। (দরজায় ঘুষি মেরে)
~ এই না না। (ভয় পেয়ে)
~ তাহলে বের হও। (রেগে)
~ আমার শাওয়ার শেষ হয়নি। (রাগ করে)
~ সিম্মিয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া (ধমক দিয়ে)
~ আচ্ছা দশ মিনিট। প্লিজ (মিনতির সুরে)
~ এর এক সেকেন্ড ও দেরি হলে খবর আছে তোমার। (ধমক দিয়ে)
~ ওকে। (ভেংচি মেরে)
কিছুক্ষণ পরে সিম্মি বের হয়। সিম্মি হালকা গোলাপি রঙের আর গোল্ডেন পাড়ের শাড়ি পড়েছে। আরাধ্যার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিম্মির দিকে। সিম্মিকে অপরুপ সুন্দরী লাগছে। সিম্মি ভেজা চুল মুছতে মুছতে বের হয়। সিম্মির চুল বেশ লম্বা আর ঘন কালো। আরাধ্যার সিম্মিকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। সিম্মি মনে মনে বলে,
~ ডেভিলটার মনে আবার কোন বুদ্ধি আঁটছে। না না আবহাওয়া তো মোটেই সুবিধার না। সিম্মি সাবধান! একদম সুযোগ দিবি না। (মনে মনে)
~ মনে মনে কি বলছো জান? (মুচকি হেসে)
~ আপনি আমাকে দেখে হাসছেন কেনো? (শাড়ি ঠিকঠাক করে)
~ সেটা এখনো বুঝতে পারোনি? (হাসতে হাসতে)
~ না আসলে, (তোতলাতে তোতলাতে)
~ আসলে তোমার শাড়িতে তেলাপোকা। (জোরে হেসে)
~ আম্মু্ওওওওওওওওওওওওওওও বাঁচাও। (জোরে চিৎকার দিয়ে)
সিম্মি দৌড়ে সিড়িতে চলে যায় আর না দেখেই পা ফেলে সিড়ি তারপর যা হবার তাই হলো, সিম্মি সিড়ি দিয়ে পড়ে গেলো। আরাধ্যার সিম্মির চিৎকার শুনে ছুটে আসে। এসে দেখে সিম্মি সিড়ির নিচে পড়ে আছে সেন্সলেস হয়ে। আরাধ্যার তাড়াতাড়ি সিম্মিকে তুলে নিয়ে রুমে যায়। সিম্মির কপাল, হাত ও পায়ের গোড়ালি কেটে গেছে। আরাধ্যার রেহানকে কল দেয়,
~ তাড়াতাড়ি ডাক্তার নিয়ে বাসায় চলে আয়। (তাড়াহুড়ো করে)
~ কিন্তু বস, কার কি হয়েছে? (অবাক হয়ে)
~ সিম্মি পড়ে গেছে সিড়ি দিয়ে। (কান্নার সুরে)
~ বস আমি এখনই আসছি।
~ সিম্মি প্লিজ চোখ খোলো। আমি তো দুষ্টুমি করেছিলাম। তুমি এভাবে দৌড়ে যাবে আমি বুঝতে পারিনি। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরবে। সিম্মি প্লিজ জান, চোখ খোলো। প্লিজ, (কাঁদতে কাঁদতে)
সিম্মি চোখ খুলছে একটু একটু করে কিন্তু আরাধ্যারের অবস্থা দেখে আবারও চোখ বন্ধ করে নেয়। আরাধ্যার বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। সিম্মি অনেক ব্যাথা পাওয়া সত্বেও আরাধ্যারকে দেখে অবাক হচ্ছে। কিছুক্ষনের মধ্যে রেহান ডাক্তারকে নিয়ে আসে। সিম্মি তখনও চোখ বন্ধ করে আছে। আরাধ্যার সিম্মিকে ধরে কাদছে। ডাক্তার এসে সিম্মির সামনে বসে,
~ Hello Mr. Mahir. (ডাক্তার)
~ ডাক্তার, তাওহিদ সিম্মি সিড়ি দিয়ে পড়ে সেন্সলেস হয়ে গেছে এখনো চোখ খুলছে না। (ব্যাকুল হয়ে)
~ ওহ্ ওকে, আমি ইনজেকশন পুস করে দিচ্ছি। কিছুক্ষনের মধ্যে জ্ঞান ফিরবে, (ইনজেকশন হাতে নিয়ে)
সিম্মি ডাক্তারের কথা শুনে ভয়ে ঢোক গিললো। কারণ সিম্মি ইনজেকশনকে খুব ভয় পায়। সিম্মি তরিঘরি করে উঠে পড়ে। ডাক্তার আর আরাধ্যার অবাক হয়ে যায়। সিম্মি ঢং শুরু করে দেয় যাতে কেউ বুঝতে না পারে,
~ আমি কোথায়? আমার নাম কি? আপনি কে? (মাথায় হাত দিয়ে)
~ জান আমি আরাধ্যার, তোমার ভাই। চিনতে পারছো না আমাকে? (সিম্মির হাত ধরে)
~ আপনি আমার ভাই হতে যাবেন কেনো? আমার কোনো ভাই নাই। (মুখ ঘুরিয়ে)
~ তাহলে আমি তোমার কে? (সন্দেহজনক সুরে)
~ আপনি তো আমার হাসবেন্ড। (মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়)
সবাই সিম্মির কথা শুনে হাসে। সিম্মি লজ্জায় শেষ। সিম্মি নিজের মুখ চেপে ধরে নিজেকে নিজে বলে,
~ ধুর, তুই একটা কাজও ভালো করে পারিস না। গেলি তো ধরা পড়ে। (মুখ চেপে ধরে)
~ ডাক্তার মনে হচ্ছে ইনজেকশন ছাড়া কাজ হবে না। আমার জান নাকি সব ভুলে গেছে? (আড়চোখে তাকিয়ে)
~ নায়ায়ায়ায়ায়য়ায়ায়া। আমার সব মনে পড়ে গেছে। (চিৎকার দিয়ে)
সিম্মির কান্ড দেখে সবাই হাসছে। ডাক্তার সিম্মির কপাল, হাত আর পায়ের গোড়ালি ড্রেসিং করে দেয়। ডাক্তার আরাধ্যারের দিকে তাকাতেই দেখে আরাধ্যারের হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে।
~ আরে আরাধ্যার আপনার হাত থেকে রক্ত পড়ছে। দেখি, (আরাধ্যারের হাত ধরে)
~ আরে ও কিছু না। (হাত সরিয়ে নিয়ে)
~ কিছু না বললেই হলো, ডাক্তার সাহেবকে দেখতে দিন। (সিম্মি জোদ করে বলে)
~ ওকে জান। নিন ডাক্তার দেখুন। (মাথা নেড়ে)
ডাক্তার আরাধ্যারের হাতের পুরনো ব্যান্ডেজ খুলে হাত দেখে পুরাই অবাক কারন আরাধ্যারের হাতে সিম্মির নাম লেখা। ডাক্তার আরাধ্যারেকে জিজ্ঞেস করে,
~ আরাধ্যার আপনার হাত, (অবাক হয়ে)
~ আমার জানের নাম লেখা, তাড়াতাড়ি ড্রেসিং করুন! (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ ওকে।
ডাক্তার আরাধ্যারের হাত ড্রেসিং করে দেয় আর প্রয়োজনীয় মেডিসিন দিয়ে চলে যায়। রেহান ডাক্তারকে পৌঁছে দিতে চলে যায়। আরাধ্যার সিম্মিকে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরে,
~ What’s your problem damned? (জড়িয়ে ধরে)
~ কই নাতো। আমার কোনো সমস্যা নেই। (খামখেয়ালি সুরে)
~ তাহলে অভিনয় করছিলে কেনো? (শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
~ আপনাকে দেখতে ভালোই লাগছিলো বাচ্চাদের মতো কাঁদছিলেন। (হাসতে হাসতে)
~ একদম চুপ। এরকম আর কখনো করবে না। (সিম্মির ঠোঁটে আঙুল চেপে)
~ আরে আপনি এখানো চেন্জ করেননি। আপনার ঠান্ডা লেগে যাবে তো। তাড়াতাড়ি যান চেন্জ করে আসুন। (সরিয়ে দিয়ে)
~ ওকে ওকে যাচ্ছি। (সিম্মিকে ছেড়ে)
আরাধ্যার টাওয়েল নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। সিম্মি বিছানায় বসে আছে। সিম্মির কাছে সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে। সিম্মি জানে না এই সুখময় মূহুর্ত কতক্ষণ থাকবে। আরাধ্যার ফ্রেশ হয়ে বের হয় তখনই রেহান দরজায় টোকা দেয়,
~ কে?
~ বস আমি।
~ ভেতরে আয়,
~ বস কিছু কথা ছিলো?
~ হুম নিচে চল।
আরাধ্যার রেহানের সাথে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসে।
~ বস মি. লাহেরী আমাদের কোম্পানির সাথে পার্টনারশিপ করার জন্য অনেক উৎসুক। তার কোম্পানির রেটিং মোটামুটি ভালো। এদের সাথে ডিল করলে লস হবার ভয় নেই বললেই চলে। (আরাধ্যারের দিকে তাকিয়ে)
~ হুম বুঝতে পেরেছি। তাহলে লাহেরীকে আসতে বল। (অন্যদিকে তাকিয়ে)
~ বস সে আজই আসতে চায়।
~ ওকে বিকেলে আসতে বল। আর Chowdhury group of industries এর কি খবর? (ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে)
~ বস ওরা পাগলের মতো সব জায়গা খুজছে। কিন্তু কোথাও আপনাদের অস্তিত্ব পাচ্ছে না। তবুও হাল ছেড়ে দেয়নি। (হাসি দিয়ে)
~ খুজতে থাকুক। দেখি কতো খুঁজতে পারে। (বাঁকা হাসি দিয়ে)
~ বস তাহলে এবার আসি। বিকেলে আবার আসবো।
~ হুম।
রেহান চলে যায়। আরাধ্যার রুমে গিয়ে দেখে সিম্মি ঘুমাচ্ছে। আরাধ্যার সিম্মির কপালে হাত বুলিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ শুরু করে দেয়। দুপুরে আরাধ্যার নিজেই লান্ঞ্চ বানিয়ে নেয়। তারপর সিম্মিকে ডাক দেয়।
~ ওঠো জান। (সিম্মির কপালে হাত বুলিয়ে)
~ হুমমমমম। (হাই তুলে)
~ চলো লান্ঞ্চ করবে। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ বানাতে হবে না? (ঘুমের ঘোরে)
~ আমি বানিয়েছি চলো এবার। (মুচকি হেসে)
~ আপনি আর লান্ঞ্চ। (ধড়মড় করে উঠে)
~ Oh hello, excuse miss, আমি আপনার মতো অকর্মার ঢেকি নই। (ভাব নিয়ে)
~ কি বললেন, (রেগেমেগে)
~ কই না তো (অন্যদিকে তাকিয়ে)
~ খাবো না যান। (রেগে)
~ যাবে নাকি, (ধমক দিয়ে)
~ নানা আসছি। (ভয়ে ভয়ে)
~ ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো। (গালে হাত রেখে)
~ ওকে।
সিম্মি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে যায়। টেবিলে গিয়ে সিম্মির চোখ চড়কগাছ। কারণ আরাধ্যার অনেক আইটেম বানিয়েছে। যেমন, ফিস কাটলেট, চিকেন মাটান, চিকেন ফ্রাই, ডিমের কোরমা, বিফ কাবাব, চিকেন গ্রিল, স্যালাড, ফ্রাইড রাইস, নরমাল রাইস। সিম্মি অবাক,
~ এগুলো আপনি বানিয়েছেন। (গালে আঙুল দিয়ে)
~ Of course. Any doubt.
~ yeah sure,
~ What?
~ I don’t believe you cook this foods.
~ নিজে যেমন অকর্মার ঢেকি সবাইকে তেমন ভেবো না।
~ কি বললেন?
~ বসো তো। এতো বকবক করো না।
আরাধ্যার একে একে খাবার একটা প্লেটে নিয়ে সিম্মিকে খাইয়ে দিচ্ছে। সিম্মিও খুব তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে। সেদিন সিম্মি অনিচ্ছায় খেয়েছে আরাধ্যারের হাতে কিন্তু আজ তার বিপরীত। হঠাৎ সিম্মি এক লোকমা তুলে আরাধ্যারের মুখে পুরে দিলো। আরাধ্যার কিছুটা অবাক হয়। সিম্মি আর আরাধ্যার খাওয়া দাওয়া শেষ করে। আরাধ্যার সিম্মিকে বলে,
~ শোনো জান, এখন উপরে যাও সন্ধ্যার আগে নিচে আসবে না।
~ আচ্ছা।
সিম্মি উপরে চলে যায়। কিছুক্ষনের মধ্যে লাহেরী চলে আসে। লাহেরী স্বভাবে একটু চন্ঞ্চল আর চারিত্রিক দিক থেকে একটু দোষ আছে। আরাধ্যার সব কিছুই জানতো তাই সিম্মিকে নিচে আসতে নিষেধ করে।
~ Hello Mr. Lahiri. How are you?
~ Very fine Mr. Mahir. How do you do?
~ Waiting for you.
~ Oh my goodness.
~ please sit down.
~ Thanks.
~ let’s start our meeting
~ Sure.
আরাধ্যার আর লাহেরী তাদের প্রজেক্ট এর কাজ দেখছে। অন্যদিকে সিম্মি রুমে বসে আছে। একা একা খুব বোরিং ফিল করছে। তাই সিম্মি মনে মনে ভাবে,
~ এখন এক কাপ ক্রিমি কফি হলে মন্দ হয় না। যাই বানিয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু ডেভিলটা যে বললো নিচে না যেতে। হয়তো তার কাজে ডিস্টার্ব হবে তাই মানা করেছে। এক কাজ করি চুপিচুপি গিয়ে বানিয়ে নিয়ে আসি।
যেই ভাবনা সেই কাজ। সিম্মি রুম থেকে বেরিয়ে সিড়ির কাছে যায়। সিম্মি আড়াল থেকে দেখে আরাধ্যার ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে, কিন্তু সিম্মি লাহেরী কে দেখেনি। সিম্মি ভাবে হয়তো, আরাধ্যার কারো সাথে কথা বলছে। সিম্মি আনমনে নিচে নেমে যায়। সিম্মি সিড়ি দিয়ে নামছে আর লাহেরী তখন তাকায়। লাহেরীর চোখ আটকে যায় সিম্মিকে দেখে। সিম্মি নিজের মতো নামছে। সিম্মি লাস্ট স্টেপে পা রাখবে তখনই লাহেরী বলে ওঠে,
~ Wow. Mind blowing, Expensive.
( আরাধ্যার থমকে যায় সাথে সিম্মিও)
~ আরে আরাধ্যার এতো সুন্দর বেবি ডলকে বাসায় রেখে কি করে ঠিক থাকো।
( আরাধ্যারের চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। সিম্মি চুপ হয়ে গেছে)
~ আরে একা একা ইনজয় করবে কেনো। কখনো আমাদেরও শেয়ারে দাও।
(আরাধ্যারের ধৈর্যের সীমা শেষ। আরাধ্যার উঠে গিয়ে লাহেরীকে এলোপাথাড়ি চড় আর ঘুষি মারা শুরু করে)
~ কি বললি তুই? তোর এতো বর সাহস। তুই কাকে বেবি ডল বললি? জানিস ও আমার কি হয়?
~ আরাধ্যার ভালো হচ্ছে না। ছাড়ুন বলছি।
~ ও আমার জান, আমার সহধর্মিণী।
~ আ আ আমি জানতাম না। জানলে ব ব বলতাম না।
~ মেয়েদের সম্মান করতে শেখ.. You bastard.
আরাধ্যার লাহেরীর গলা চেপে ধরে। লাহেরী শ্বাস করতে পারছিলো না। সিম্মি দৌড়ে গিয়ে আরাধ্যার কে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু না পেরে তখন সিম্মি বলে,
~ আমার কসম আরাধ্যার, আপনি যদি ওনাকে না ছাড়েন তবে,
আরাধ্যার সিম্মির কথা শুনে লাহেরী কে ছেড়ে দেয়। আরাধ্যার লাহেরীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আরাধ্যারের রাগ আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। লাহেরী উঠে দাড়িয়ে আরাধ্যারকে বলে,
~ দেখে নেবো।
লাহেরী চলে যায়। আরাধ্যার সিম্মির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। সিম্মি ভয়ে এক কদম পিছিয়ে যায়। আরাধ্যার সিম্মির দিকে এগোয় আর সিম্মি পিছিয়ে যায়, আর তখনি,
পর্ব ১৯
তখনি আরাধ্যার সিম্মির হাত চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আরাধ্যারের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। সিম্মি ভয়ে চুপসে গেছে। আরাধ্যার দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
~ মানা করেছিলাম না নিচে আসতে!
~ আ আ আমি বু বুঝতে পারিনি।
~ নিচে এসেছিলে কেনো?
~ ক কফি বানাতে।
~ আমার কথা না শোনার ফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেইটা আজ বুঝাবো তোমাকে।
~ আরাধ্যার প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি বুঝতে পারিনি।
আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায় আর সিম্মিকে জোরে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। সিম্মির ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে। আর অন্যদিকে লাহেরী বের হয়ে গাড়িতে উঠে। লাহেরী খুব বাজে প্রকৃতির লোক। সে ভেবে নেয় যে করে হোক আরাধ্যারকে পরাস্ত করতে হবে। আর তার একমাত্র উপায় হলো Chowdhury group of industries এর সাথে হাত মেলানো। আরাধ্যার রেহানকে কল দেয়,
~ লাহেরীর অস্তিত্ব খালাস করে দে। টুট টুট টুট
~ ব ব বস। দিলো ফোনটা কেটে। ধুর,
আরাধ্যার সিম্মির কাছে গিয়ে সিম্মির চুলের মুঠি ধরে, সিম্মি ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে,
~ খুব শখ তোমার পরপুরুষ এর সামনে যাওয়ার?
~ আরাধ্যার লাগছে ছাড়ুন,
~ কি জানি বললো ওই Bastard? ও হ্যা, Baby doll!
~ ছেড়ে দিন প্লিজ,
~ তোমাকে এখন পর্যন্ত স্পর্শ করিনি কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। স্বামীর অধিকার থেকে বন্ঞ্চিত হয়েছি তবুও তোমাকে জোর করিনি। তুমি আমাকে বোঝোনি। Why maya why?
~ ক্ষমা করে দিন আর হবে না।
~ আরাধ্যার খান কখনো ক্ষমা করে না কাউকে এর শাস্তি তুমি পাবে।
আরাধ্যার প্যান্টের বেল্ট খুলে সিম্মি মারতে শুরু করে। সিম্মির চিৎকার করে। আরাধ্যার একটা রুমাল আর দড়ি দিয়ে সিম্মির হাত পা আর মুখ বাঁধে তারপর উরা ধুরা মারতে থাকে। সিম্মির ফর্সা চামড়া ফেটে রক্ত পড়ছে। সিম্মির দম বন্ধ হয়ে আসছে। আরাধ্যার মারা থামিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয় একটু পরে একটা হকি স্টিক নিয়ে আসে। সিম্মি ভয়ে মাথা নাড়তে থাকে। আরাধ্যারের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে। আরাধ্যার সিম্মির কাছে এসে বলে,
~ আমাকে কসম দাও তাই না। যাতে ওই স্টুপিডকে ছেড়ে দেই। ওকে তো তুমি বাচিয়ে দিয়েছো এবার তোমাকে কে বাঁচাবে?
আরাধ্যার হকি স্টিক দিয়ে সিম্মির পায়ে মারতে থাকে সিম্মি মুখ থেকে কোনো কথা বলতে পারছে না শুধু উমমমমমমমমমম শব্দ করছে। সিম্মির পায়ের নিচ কালো হয়ে গেছে। পায়ের নিচে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। প্রায় আধ ঘন্টা পর সিম্মিকে ছেড়ে দেয়। সিম্মির হুশ নেই বললেই চলে। সিম্মি ফ্লোরে পড়ে আছে হাত পা বাধা অবস্থায়। আরাধ্যার বাকেটে পানি এনে সিম্মির মুখে ছুরে মারে। সিম্মি চোখ মেলে করুন দৃষ্টিতে আরাধ্যারের দিকে তাকায়, আরাধ্যার নিচে গিয়ে লবণ, মরিচ আর মাস্টার্ড ওয়েলের পেষ্ট বানিয়ে আনে।
সিম্মি ভয়ে ভয়ে আরাধ্যারের দিকে তাকায় আরাধ্যার তোয়াক্কা না করে সিম্মির কাছে যায়। সিম্মি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরাধ্যার সিম্মির পিঠে, হাতে পেষ্ট লাগিয়ে দেয়। সিম্মি জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু আরাধ্যারের সেদিকে খেয়াল নেই। আরাধ্যার বাটি ছুড়ে ফেলে দেয়। সিম্মি বেহুশ হয়ে যায়। আরাধ্যার রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
অন্যদিকে, অভি তার গন্তব্য পেয়ে গেছে। কারণ লাহেরী মৃত্যুর আগে অভিকে ফোন করে সব বলে। তারপরই একটা লড়ি এসে লাহেরীর গাড়ি ধাক্কা দেয়। আর গাড়িটি খাদে পড়ে ব্লাষ্ট হয়ে যায়। অভি তার গার্ডদের বলে,
~ নিউজিল্যান্ড যাওয়ার ব্যাবস্থা কর।
~ ওকে স্যার।
~ আমি আসছি সিম্মি। এবার তোমাকে নিজের করে নেবো, At any cost, you are my life and my future life partner.
রাত থেকে সকাল হয়ে গেছে। সিম্মির মুখের ওপর সূর্যের আলো পড়ছে। সিম্মি অল্প অল্প করে তাকাচ্ছে। সিম্মি চোখ খুলে দেখে সে বেডে শুয়ে আছে। হাত পায়ের বাধন খোলা। আর সব ক্ষত স্থানে মলম লাগানো। কিন্তু ব্যাথাটা অনেক হালকা আগের থেকে। সিম্মি অনেক কষ্টে উঠে বসে। আর পাশে তাকিয়ে দেখে আরাধ্যার তার দিকে তাকিয়ে আছে। সিম্মি ভয়ে দূরে সরে যায়। আরাধ্যার অভিমানী হাসি দিয়ে বলে,
~ অনেক কষ্ট হয়েছে জান, তাই না। (কাঁদো কাঁদো সুরে)
~ ……………..
আরাধ্যার বিছানা থেকে উঠে টেবিলের ওপরে রাখা বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে দেয়ালের সাথে জোরে বারি দেয়। আর বোতলটা প্রায় অর্ধেক ভেঙে যায়। সিম্মি ভেবেছে আরাধ্যার কাচ ভাঙা দিয়ে সিম্মিকে আঘাত করবে তাই সিম্মি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। আর আরাধ্যার চোখ বন্ধ করে একের পর এক পোঁচ দিচ্ছে শরীরে, হাতে, বুকে। সিম্মি কিছুক্ষন চুপ থেকে চোখ খুলে চিৎকার দেয় আরাধ্যারকে দেখে। আরাধ্যারের সাদা শার্ট টকটকে লাল হয়ে গেছে রক্তে। সিম্মি দৌড়ে আরাধ্যার কাছে যায়,
~ এই কি করছেন আপনি? পাগলে হয়ে গেছেন? (আরাধ্যারের হাত ধরে)
~ আমি পাগল শুধু তোমার জন্য। (নিভু নিভু চোখে)
~ কাচটা ফেলে দিন প্লিজ। (কাঁদতে কাঁদতে)
~ আগে বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো? (সিম্মির হাত সরিয়ে দিয়ে)
~ পাগলামি বন্ধ করুন? (কাঁদতে কাঁদতে)
~ বলবে নাকি, (কাচ বুকের সাথে চেপে ধরে)
~ আমি ভালোবাসি আপনাকে। I love you mahir. I still love you. (কাঁদতে কাঁদতে )
আরাধ্যার সিম্মির উপর ঢলে পড়ে। সারারাত ড্রিংকস করার ফলে আরাধ্যার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সিম্মি প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। সিম্মি অনেক চেষ্টা করেও আরাধ্যারের জ্ঞান আনতে পারে না। সিম্মি আরাধ্যারের ফোন খুজে কল লিস্ট খুজে রেহানকে কল দেয়,
~ Hlw boss, কাল লাহেরীকে ওপরে পাঠিয়ে দিয়েছি। আপনাকে কল দিয়েছিলাম কিন্তু রিসিভ করেননি।
~ ভাইয়া আমি সিম্মি। প্লিজ তাড়াতাড়ি বাসায় আসুন। আরাধ্যার সেন্সলেস হয়ে গেছে কিন্তু জ্ঞান ফিরছেন। আপনি জলদি ডাক্তার নিয়ে আসুন।
~ ম্যাম আমি এখুনি আসছি।
সিম্মি আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরে কাদছে। সিম্মির কান্নায় চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। কিছুক্ষন পরে রেহান আসে ডাক্তার নিয়ে। ডাক্তার এসে আরাধ্যারের ক্ষত ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দেয়। সিম্মির যেন কেনো খুব কষ্ট হচ্ছে আরাধ্যারের জন্য। এক অজানা কষ্ট সিম্মিকে গ্রাস করছে, ডাক্তার আরাধ্যারকে কিছু মেডিসিন দেয়। রেহান সেগুলো আনতে যায়। সিম্মি আরাধ্যারের পাশে বসে আছে আর কাঁদছে। সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে আরাধ্যারের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়। আরাধ্যার তখনি সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে,
~ যাচ্ছো কেনো থাকো।
~ তার মানে আপনি,
~ তুমিও তো চোখ বন্ধ করে বেহুশ হওয়ার অভিনয় করেছিলে,
~ আপনিও না।
সিম্মি নিজেও জানে না সে কখন আরাধ্যারকে ভালোবেসে ফেলেছে। অন্যদিকে কোনো এক ঝড় আসতে চলেছে। সিম্মি আর আরাধ্যার কি পারবে তাদের ভালোবাসা দিয়ে সেই ঝড়কে আটকাতে? নাকি সেই ঝড়ে তারা মিলিয়ে যাবে?
পর্ব ২০
অভি অলরেডি নিউজিল্যান্ডে পৌঁছে গেছে। আরাধ্যার রেস্ট নিচ্ছে। সিম্মি বসে আছে বেডে। সিম্মির মন ভালো নেই কোনো এক অজানা বিপদের সংকেত মনের মধ্যে নাড়া দিচ্ছে। সিম্মির বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে, মনে পড়ছে দুষ্ট তিতলি টার কথা। কিছু দিন আগেও তো জীবনটা এমন ছিলো না। তাহলে নিয়তি নিশ্চয়ই এমনটাই চায়। আরাধ্যার পারতো ভালোবাসা দিয়ে সব জয় করতে কিন্তু কেনো এমন করছে আরাধ্যার? আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকিয়ে দেখছে, সিম্মি অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে। আরাধ্যারের মধ্যে এক সংকোচ কাজ করছে যে জন্য আরাধ্যার বার বার কথা বলতে চেয়েও পারছে। পুরো ঘর নিস্তব্ধ। কারো মুখে কোনো কথা নেই। তখনই রেহান কল দেয়,
~ হুম বল,
~ বস, আমাদের কোম্পানির প্রায় ১২০ কোটি টাকার প্রোডাক্ট লস হয়েছে।
~ What?
~ বস, এখনি আপনাকে ব্রান্ঞ্চে যেতে হবে।
~ আমি আসছি।
আরাধ্যার কিছু না বলেই বের হয়ে গেলো। সিম্মি জিজ্ঞেস করলেও কোনো কথা বলে না। সিম্মি বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। আরাধ্যারের বাসার সামনে প্রায় ৪৬ জন গার্ড পাহারা দিচ্ছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই বাহির বহু পায়ের পদশব্দ শোনা গেলো। সিম্মি ভাবে, হয়ত গার্ডরা হাটছে। বাড়ির সদর দরজা বাহির থেকে লক করা। সিম্মি শুনতে পেলো কেউ খুব জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে। মনে হলো যে দরজা ভেঙেই ফেলবে। সিম্মি তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়,
~ কে? (আতঙ্ক মিশ্রিত সুরে)
দরজার লক ভেঙে যায়। কয়েকজন লোক প্রবেশ করে কালো কোট প্যান্ট পড়া তাদের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে একজন অতি পরিচিত একজন মুখ। সে আর কেউ নয় অভি। সিম্মি আতকে ওঠে।
~ Maya baby, How are you?
~ আ আ আপনি বে বেঁচে আছেন?
~ Of course baby. Only for you.
~ এখানে কেনো এসেছেন?
অভি সিম্মির কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ওঠে। সিম্মি বুঝতে পারছে না অভি কি চায়? সিম্মি সিড়ি দিয়ে নেমে অভির সামনে যায়।
~ কি চান আপনি?
~ তোমাকে চাই।
~ Just shut up. আমাকে চাইলেই পাবেন না। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি এখন অন্য কারো স্ত্রী।
~ সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমি শুধু তোমাকে চাই। আর আরাধ্যার তো তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছে তোমার সম্মতি ছাড়া।
~ সে যাই হোক না কেনো। ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।
~ বিয়ে হয়েছে তো ডিভোর্স দিবে তারপর আমাকে বিয়ে করবে।
~ কখনও না শুনলেন,
~ আমার তোমাকে চাই। যেভাবে হোক,
অভি সিম্মিকে ধরতে নিলে, সিম্মি অভিকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে অন্য রুমে যেতে নেয় তার আগেই অভি সিম্মিকে ধরে ফেলে। সিম্মি জোরে জোরে চিৎকার করে,
~ চিৎকার করে লাভ নেই বেবি কারণ সব গার্ডদের শেষ করে দিয়েছি৷
~ ছাড়ুন বলছি।
~ ছাড়ার জন্য তো ধরিনি বেবি।
অভি সিম্মির মুখে ক্লোরোফর্ম যুক্ত রুমাল চেপে ধরে। সিম্মি সেন্সলেস হয়ে যায়। অভি সিম্মিকে কোলে করে নিয়ে যায়। অভি সিম্মিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়। অভির গাড়ি স্ট্রিট দিয়ে বের হয় আরাধ্যারের গাড়ি ঢোকে। আরাধ্যার গেইটের সামনে এসে থমকে যায় কারণ গেইট খোলা আর গার্ডরাও সব পড়ে আছে। আরাধ্যারের সাথে রেহান ও ছিলো। আরাধ্যার সিম্মি বলে জোরে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে ভেতরে যায়। এক দৌড়ে সব ঘুরে আসে তবুও সিম্মিকে পায় না।
~ সিম্মিয়ায়ায়ায়ায়ায়া।
তখনই রেহান আসে ল্যাপটপ নিয়ে আরাধ্যারের কাছে। সেখানে সিসিটিভি ফুটেজ রেকর্ড দেখায় আরাধ্যারকে,
~ বস ম্যামকে কিডন্যাপ করা হয়েছে।
আরাধ্যার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হুংকার দিয়ে বলে,
~ এবার তোকে কেটে কেটে টুকরো করবো অভি। রেহান গাড়ি বের কর,
~ জি বস,
~ সব জায়গায় লোক খবর দে।
~ ওকে বস,
অভি সিম্মিকে নিয়ে ডিরেক্ট এয়ারপোর্টে যায়। সিম্মির জ্ঞান ফিরে। সিম্মি জোরে জোরে চিৎকার করে,
~ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?
~ তোমার শশুর বাড়ি। যেখানে আমাদের দুজনের বিয়ে হবে তারপর বাসর,
কথাটা বলার সাথে সাথে সিম্মি কষে চড় মারে অভির গালে। অভির রাগ আরো বেড়ে গেলো,
~ তোমাকে কিছু বলি না এজন্য ভেবো না আমি কিছু বলতে জানি না।
সিম্মি অভিকে ধাক্কা দিয়ে দৌড় দেয় আর তখনি সিম্মির সামনে এসে গার্ডরা হাজির। সিম্মি অসহায় দৃষ্টিতে অভির দিকে তাকায়,
~ আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ,
~ বেশি ছটফট করো না বেবি।
অভি সিম্মির মুখ চেপে ধরে প্লেনে উঠায়। অপরদিকে আরাধ্যারের লোক খবর দেয় অভি এয়ারপোর্টে। আরাধ্যার তৎক্ষনাৎ রওনা দিয়ে এয়ারপোর্টে যায়। ততক্ষণে অভির প্লেন চলে গেছে। এয়ারপোর্টে কোনো প্লেন নেই। আরাধ্যার রেগেমেগে একাকার।
~ এখনই হেলিকপ্টার খবর দে। ১০ মিনিটের মধ্যে এখানে আসা চাই।
~ কিন্তু বস এতো তাড়াতাড়ি?
~ কি বললি,
~ Nothing boss,
~ Get los from here.
~ অভি অভি তোকে যে এবার কি করবো। তুই আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস তোর হাত আমি কেটে ফেলবো। You are my life jaan. I love you a lot.
অভি সিম্মিকে সিটের সাথে বেধে রাখে। সিম্মি নড়াচড়া করতে পারছে না। অভি সিম্মির পাশে বসে। সিম্মি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অভি সিম্মিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গালে হাত রেখে বলে,
~ সিম্মি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
~ আমি বাসি না।
~ সিম্মি যা হয়েছে ভুলে যাও। আমরা আবার নতুন করে সব শুরু করবো।
~ মরে গেলেও না।
~ সিম্মি জেদ করো না। সব মেনে নাও।
~ আমি কখনো আপনাকে মেনে নেবো না।
~ তাহলে কি ওই আরাধ্যারকে মেনে নেবে?
~ হ্যা হ্যা। আমি আরাধ্যারের স্ত্রী আর ওকেই আমি ভালোবাসি।
অভির চোখ যায় সিম্মির হাতে, কাধে। মারের সেই কালো দাগ এখনো যায়নি। অভি সিম্মির হাতে হাত রেখে বলে,
~ এগুলো কিসের দাগ?
~ আপনাকে কেন বলবো?
~ নিশ্চয়ই ওই জানোয়ার তোমাকে মেরেছে!
~ Mind your language. You bloody fool.
সিম্মি শরীরের সব শক্তি দিয়ে অভির পায়ে লাথি দেয়। অভি ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে। অভি সিম্মির গালে কষে থাপ্পড় দেয়। থাপ্পড়টা এতোটাই জোরে দিয়েছে যে সিম্মি বেহুশ হয়ে যায়। সিম্মির নাক ফেটে রক্ত পড়ছে। অভি সিম্মিকে ছেড়ে অন্যপাশে যায়। আরাধ্যার হেলিকপ্টারে ওঠে।
~ তোর ধ্বংস তুই নিজে ডেকে এনেছিস অভি। তোকে আমি ছাড়বো না।
কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্লেন এসে বাংলাদেশ বিমান বন্দরে থামে। অভি সিম্মিকে টেনে নামায় প্লেন থেকে। সিম্মি পরিবেশ দেখে বুঝতে পারে এটা বাংলাদেশ। অভি খুব শক্ত করে সিম্মির হাত মুখ বেধে রেখেছে। সিম্মি অনেক চেষ্টা করে হাতের বাঁধন খোলার। অভির গাড়ি স্টার্ট দেয় ড্রাইভার। কোনো এক অজানা গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে অভি সিম্মিকে।
আরাধ্যার তার সিকিউরিটিদের কল করে বলে,
~ অভির পরিবারকে তুলে নিয়ে আয়।
~ জি বস।
~ তোকে সহ তোর পুরো পডিবারকে শেষ করে দেবো।
আরাধ্যার কি পারবে অভির কাছ থেকে সিম্মি ফিরিয়ে আনতে? নাকি হেরে যাবে আরাধ্যারের ভালোবাসা? নাকি অভি আরাধ্যার দু’জনই হারিয়ে ফেলবে সিম্মিকে? নাকি শুরু হবে এক নতুন পর্বের?
পর্ব ২১
কিছুক্ষনের মধ্যে আরাধ্যারের হেলিকাপ্টার ল্যান্ড করে। আরাধ্যারের গার্ডরা অভির গাড়ির লোকেশন ট্রেস করে নিয়েছে আর অন্যরা অভির বাবাকে কিডন্যাপ করেছে এবং অভির মাকে তুলে নিয়ে এসেছে। আরাধ্যার এক ধাপ আগানো অভির থেকে। অভি আরাধ্যারকে কল করে,
~ কি খবর আরাধ্যার খান? (বাঁকা হাসি হেসে)
~ কি ভাবিস তুই? আরাধ্যার খুব ভালো করে জানে দাবার গুটি কীভাবে ঘুরিয়ে দিতে হয়। (হেসে)
~ ওহ তাই। দেখা যাক কে জিতবে আর কে হারবে? (রেগে)
তখনই সিম্মি চিৎকার করে বলে,
~ আরাধ্যার আমাকে বাঁচান। (জোরে জোরে)
কথাটা বলার সাথে সাথে অভি সিম্মির মুখ চেপে ধরে। অভি কল কেটে দেয়। আরাধ্যার বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে। আরাধ্যার যে সিম্মিকে খুব ভালোবাসে। আরাধ্যারের চোখ থেকে দুফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো।
~ হ্যা জান, আমি তোমাকে বাঁচাবো। একটু অপেক্ষা করো। (চোখের পানি মুছে)
অভি সিম্মিকে নিয়ে গেলো তাদের গোপন ডেরায়। অভি ভেবেছে আরাধ্যার এখানে পৌঁছাতে পারবে না। সিম্মি অনেক চেষ্টা করেও হাত পায়ের বাঁধন খুলতে পারেনি। সিম্মির হাত অনেকখানি কেটে গেছে। কাটা জায়গা থেকে টুপটুপ করে রক্ত ঝড়ছে। অভি সিম্মিকে টেনে নিয়ে যায় বাড়ির মধ্যে। তারপর একটা চেয়ারে সিম্মিকে বসিয়ে হাত দুই হাতলের সাথে বেধে ফেলে। অভি সিম্মির সামনে বসে,
~ আপনি মোটেও ভালো করছেন না। এর ফল আপনি পাবেন। (ক্ষেপে গিয়ে)
~ তোমাকে পেলেই আমার চলবে। (হেসে হেসে)
~ কখনো না। (রেগেমেগে)
~ একটু অপেক্ষা করো, আমাদের বিয়ে হলে তোমার সব রাগ অভিমান ভেঙে নিজের করে নেবো। (সিম্মির গাল চেপে ধরে)
~ অন্যের বউকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন লজ্জা করে না। (কাঁদো কাঁদো সুরে)
~ তুমি শুধু আমার। মাথায় ঢুকিয়ে নাও। (গাল ছেড়ে দিয়ে)
অভির একজন গার্ড এসে বলে,
~ স্যার আরাধ্যার খানের লোকেরা চলে এসেছে। কিভাবে লোকেশন ট্র্যাকিং করলো বুঝতে পারছি না।
~ Oh shit. বাকিদের আসতে বলো।
~ ওকে বস।
ততক্ষনে আরাধ্যারের লোকেরা পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। অভির গার্ডরা বাধ্য হয়ে দমে যায়। কিন্তু অভি দমে যাবার লোক নয়। অভি সিম্মির হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে সিম্মির হাত চেপে ধরে। আরাধ্যার দরজা ভেঙে ভিতরে আসে। অভির লোকেরা সবাই রিভলবার হাতে নিলে আরাধ্যারের সব লোকেরা পিছন থেকে তাদের এ্যাটাক করে।
আরাধ্যার বুঝতে পারেনি আরাধ্যার এখানে আসতে পারবে এতোটা প্রস্তুতি নিয়ে। আরাধ্যার অভির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ ভয় পেয়ে গেলি নাকি। কি ভাই এতো কাঁচা খেলোয়াড় হলে চলে নাকি। খেলাই জমলো না।
অভি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আরাধ্যার বলে,
~ সিম্মিকে ছেড়ে দে নইলে, তোর মা বাবা শেষ।
~ কি বললি,
~ বয়েস্ নিয়ে আসো তো ওই দুইজনকে।
গার্ডরা অভির মা বাবাকে নিয়ে আসে।
~ এবার বল, তোর সামনে তোর বাবা মা কে শেষ করবো?
অভি পুরোপুরি ভাবে পরাস্ত হয়ে গেছে আরাধ্যারের কাছে। অভির প্ল্যানিংয়ে অনেকটা ঘাটতি থাকায় আরাধ্যারের কাছে অভি পরাস্ত। অভি কিছুক্ষন ভেবে, সিম্মির হাত ছেড়ে দেয়। সিম্মি এক মূহুর্ত না দাড়িয়ে আরাধ্যারের কাছে দৌড়ে যায়। অভি নিরুপায় এর মতো সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে। আরাধ্যার সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে। সিম্মি শক্ত করে আরাধ্যারের শার্ট খামচে ধরে। আরাধ্যার অভির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ নে তোর বাবা মাকে নিয়ে বাড়িতে যা। নেক্সট টাইম খেলা শুরু করলে ভালো করে প্লানিং করে নিস।
আরাধ্যার কথা বলেই সিম্মিকে কোলে করে নিয়ে গাড়ির দিকে যায়। অভি আরাধ্যারের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ তোকে একেবারে নয় তিলে তিলে শেষ করবো আরাধ্যার। This is my challenge.
আরাধ্যার গাড়ি স্টার্ট দেয়। সিম্মি বাহিরের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে আর চোখের জল মুছে। আরাধ্যার হাত ধরে সিম্মির। সিম্মি কিছুটা চমকে উঠে আরাধ্যারের দিকে তাকায়।
~ আমাকে খুব ভালোবাসো তাই না। (গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে)
~ কে ভালোবাসে আপনাকে? (চোখের পানি মুছতে মুছতে)
~ আমার জান। (মুচকি হেসে)
~ কে আপনার জান? (রেগে)
~ মিস. ফারিয়া তাসনিম সিম্মি। (ভাব নিয়ে)
~ আমি আপনাকে ভালোবাসি না। (উল্টো ভাব নিয়ে)
~ আমাকে স্পর্শ করে বলো, (হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
~ আমার বয়েই গেছে। ( ভেংচি মেরে)
আরাধ্যার সিম্মির কথা শুনে হাসতে থাকে। সিম্মি অবাক হয়ে আরাধ্যারের হাসি দেখছে। আরাধ্যার হালকা কাশি দিয়ে সিম্মির ঘোর কাটায়,
~ I know that, i’m very handsome boy. (চুলে হাত দিয়ে)
~ কাউয়া বয়। (ভেংচি মেরে)
~ কি কি কি? (নাক কুচকে)
~ Nothing. (চোখ ঘুরিয়ে)
~ তুমি জানো, কত মেয়ে আমার পিছনে লাইন মারে? (ভাব নিয়ে)
~ না আমার জানার দরকার নেই। তাদের বিয়ে করলেই পারতেন, আমাকে কেন বিয়ে করলেন? (ভ্রু কুচকে)
~ কারণ তোমার মাঝে আমি নিজেকে তোমার মাঝে দেখতে পেয়েছি। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ ঢংং। (ভেংচি মেরে)
~ তাই নাকি তুমি ঢং করতে জানো? (হেসে হেসে)
~ দেখুন একদম ভালো হচ্ছে না। (রেগেমেগে)
~ I love you jaan. (ইমোশনালি)
~ হুমমমম (ভেংচি মেরে)
আরাধ্যার সিম্মিকে তার বাসায় নিয়ে আসে। বাসাটি অসম্ভব সুন্দর। সিম্মি কোনোদিকে না তাকিয়ে মন খারাপ করে আছে। আরাধ্যার সিম্মিকে নিয়ে সোফায় বসায়। আরাধ্যার সিম্মির সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে, তারপর সিম্মির কোলে মাথা রেখে বলে,
~ I’m sorry jaan. I can’t do this. Please believe me, (সিম্মির কোলে মুখ গুঁজে)
~ ………………………….
~ ও তোমাকে কিডন্যাপ করবে? সেটা জানলে (সিম্মির হাত ধরে)
~ ………………………….
~ তোমাকে এবার High security তে রাখার ব্যাবস্থা করবো। ও কিভাবে জানলো যে আমরা নিউজিল্যান্ডে আছি? (রেগেমেগে)
~ মানে? আপনি আমাকে নিউজিল্যান্ডে নিয়ে গিয়েছিলেন? (অবাক হয়ে)
~ এমন ভাব করছো যে, মনে হয় তুমি কিচ্ছু জানো না। (রাগি লুকে)
~ আজব তো! আমি কি করে জানবো? জানার সুযোগ দিলে তো জানবো? (থতমত খেয়ে)
আরাধ্যার সিম্মির হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে, সিম্মির হাত কেটে রক্ত জমাট বেঁধে আছে, আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরে কাঁদতে শুরু করে, সিম্মি অবাক হয়ে যায় আরাধ্যারকে দেখে,
~ তোমার হাত কাটলো কি করে? ওহ বুঝতে পেরেছি। I’ll come back few miniuits, (দৌড়ে)
আরাধ্যার তাড়াতাড়ি করে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আসে সিম্মির কাছে। আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরতে নিলে, সিম্মি হাত সরিয়ে নেয়। আরাধ্যার করুন দৃষ্টিতে তাকায় সিম্মির দিকে,
~ এই ব্যাথা দেখে আপনার সহ্য হয় না। তাহলে সেদিন পাষাণের মত কিভাবে মেরেছিলেন? তখন কষ্ট হয়নি? আমার আর্তনাদ শুনে আপনার মনে কষ্ট হয়নি? যখন আমার কাটা জায়গায় মরিচ লাগিয়েছিলেন তখন কষ্ট হয়নি? (আরাধ্যারের সামনে দাড়িয়ে)
~ সিম্মি আমার কথা……..
~ আপনি তো ভয় পেয়েছিলেন, যে অভি যাতে আমার কাছে না আসতে পারে এজন্য আমাকে না জানিয়ে নিউজিল্যান্ডে নিয়ে গেছেন। কারন, আপনার মনে ভয় ছিলো যে, আমি যদি পালিয়ে যাই। আরাধ্যার এটাকে ভালোবাসা বলে না। হতে পারে আপনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন কিন্তু বিয়েটা হয়েছে ধর্মমতে। তাই আপনার সব অত্যাচার ভুলে গিয়ে আপনাকে স্বামী হিসেবে গ্রহন করেছি। (আঙুল উঠিয়ে)
~ জান শো……….
~ আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু যখনি আপনাকে অন্যরকম দৃষ্টিতে দেখা শুরু করি তখনি আপনি আমার সব ধারনা বদলে দেন। কেন আরাধ্যার কেনো? আমার বাবা, মাকে ছাড়া কখনো থাকি নি সেই আমি সব ভুলে আপনাকে আকড়ে বাঁচতে চেয়েছি। এটাই কি আমার ভুল? (আরাধ্যারের থেকে দূরে গিয়ে)
~ আমি এমনটা করতে চাইনি। আমি চাই না আমি ছাড়া তোমাকে কেউ দেখুক। লাহেরীর কথা শুনে আমার মাথা ঠিক ছিলো না………
~ আপনি যতদিনে আমার মতো না হবেন ততদিনে আমি আপনার সাথে কথা বলবো না তো না।
~ জান প্লিজ এমন টা বলো না, আমি তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবো না,
~ প্লিজ জান,
সিম্মি দৌড়ে উপরে গিয়ে একটা রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে থাকে। সিম্মির বলা কথা গুলো আরাধ্যারের মনে দাগ কাটে। আরাধ্যার কি পারবে সিম্মির কথা রাখতে? সিম্মি কি আরাধ্যারকে ভালোবেসে আপন করে নিতে পারবে?
পর্ব ২২
আরাধ্যার নিচে বসে আছে সিম্মি অন্য রুমে। একটু পর আরাধ্যার উঠে সিম্মির রুমের সামনে যায়। অনেক ভেবে আরাধ্যার দরজায় টোকা দেয় আর সাথে সাথে দরজা খুলে যায়। আরাধ্যার আস্তে আস্তে রুমে ঢোকে, তখনি সিম্মি সামনে আসে আরাধ্যার ভয় পেয়ে যায়,
~ কি গো মশাই, এখানে কি চাই? (কোমরে হাত রেখে)
~ তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। যাই হোক আসো একসাথে খাবার খাবো!
~ No thanks. আমার খাবার আমি বানিয়ে খেতে পারবো। (ভেংচি মেরে)
~ ভাভাগো ভাভা তুমি রান্না শিখলে কবে? (অবাক হয়ে)
~ সেটা আপনাকে কেন বলবো? (মুখ ফিরিয়ে)
~ Beacause, i’m your handsome husband., ( ভাব নিয়ে)
~ কাউয়া হাসবেন্ড। রান্না ঘর কোথায়? (ভেংচি মেরে)
~ নিচে নেমে সোজা হাতের ডান দিকে যাবে তাহলেই পেয়ে যাবে। (ইশারায়)
সিম্মি আরাধ্যারকে ধাক্কা দিয়ে নিচে চলে গেলো। আরাধ্যারের রাগ উঠলেও নিজেকে কন্ট্রোল করে নেয়,
~ কি মেয়েরে বাবা! একটা Thanks দিলো না। (হালকা রেগে)
সিম্মি কিচেনে যায়। গিয়ে দেখে খুব সুন্দর করে রান্না ঘর সাজানো। এক কথায়, ছোটো খাটো বা মিনি শপ বলা যায়। এতো কিছু থাকার পরও দুঃখের বিষয় সিম্মি রান্না জানে না। সিম্মি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ব্রেড আর জ্যাম হাতে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে আসে কিন্তু সিম্মি যা দেখে,
তা দেখে সিম্মি হা হয়ে গেলো, একজন শেফ আর কয়েকজন সার্ভেন্ট আরাধ্যারকে খাবার সার্ভ করছে। খাবারের মেন্যুটা বেশ লম্বা, গ্রিল চিকেন, চিকেন ফ্রাই, কোরমা, ফিস কাটলেট, ডিমের কোফতা, মালাই চিংড়ি, বিফ কাবাব, শিক কাবাব, ফ্রাইড রাইস, ভেজিটেবল রাইস ডেজার্টে রয়েছে, চকলেট আইসক্রিম, কাস্টার্ড আর ফালুদা।
আরাধ্যার সিম্মিকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে, সিম্মি ভেংচি মেরে সোফায় বসে ব্রেডে জ্যাম মিক্স করে খাচ্ছে আর আরাধ্যারকে উদ্ধার করছে,
~ আস্ত একটা রাক্ষস, আমাকে রেখে খাচ্ছে, খাও খাও ভালো করে খাও খেয়ে খেয়ে হাতি হও। বান্দর একটা এখন নিশ্চয়ই মালাই চিংড়িটা খাবে, এরে সিম্মি কি হবে তোর? এই রুটি আর জ্যাম খেয়ে কতক্ষণ থাকবি? (মনে মনে)
আরাধ্যার সিম্মিকে দেখে হাসছে আর বলছে,
~ কেউ যদি চায়, তাহলে আমি শেয়ার করতে রাজি আছি ( মুচকি হেসে)
~ কেউ চায় না ওরকম খোক্কশের সাথে শেয়ার করতে। আমি এতো খাই খাই পাবলিক না। (ভেংচি মেরে)
~ আমি তো নাম উল্লেখ করে বলিনি। এখানে আমার পাশে কত লোক আছে! (হেসে হেসে)
~ আমিও নাম উল্লেখ করিনি (ভেংচি মেরে)
আরাধ্যার খাওয়া শেষ করে উঠে যায়। সিম্মি অনেক কষ্টে ২ পিস ব্রেড খেয়ে বসে আছে। আরাধ্যার রেডি হয়ে অফিসে চলে যায়। সিম্মি সোফায় বসে বসে বকবক করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ৯ টায় সিম্মির ঘুম ভাঙলো। চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে দাঁড়ালো। টেবিলের দিকে তাকাতেই সিম্মির খুদা আরও বেড়ে গেলো, কারণ টেবিলে সব খাবার সুন্দর করে পরিবেশন করা, ফ্রাইড রাইস, সরষে ইলিশ, গরুর ঝাল মাংস, চিকেন নাগেট আর ডেজার্টে পুডিং আর দই।
একটু পর আরাধ্যার আসে অফিস থেকে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসে, আর সিম্মি কিচেনে গিয়ে একটা কাপ নুডলস বানিয়ে আনে। সিম্মি সোজা সোফায় বসে পড়ে। আরাধ্যার সিম্মির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে আর খাচ্ছে,
~ Wow সরষে ইলিশ টা অনেক দারুণ হয়েছে। ঝাল মাংসের তো তুলনাই হয় না। (সিম্মিকে শুনিয়ে শুনিয়ে)
~ দেখো খোদা কি রকম শোঅফ করে? (কাঁদো কাঁদো সুরে)
~ সব খাবারের স্বাদ অসাধারন হয়েছে কারন শহরে নাম্বার ওয়ান শেফ রান্না করেছে। (ভাব নিয়ে)
আরাধ্যার তেমন কিছু খেলো না। খাবার শেষ করে কলা খেতে শুরু করলো আর কফি আনার জন্য অর্ডার করলো, সিম্মি তাকিয়ে তাকিয়ে বলছে,
~ রাক্ষসের মত খেয়ে এখন বান্দেরর মতো কলা খাচ্ছে। এরপর খাবে কফি! খালি খাই খাই।
আর আমি কিনা শুধু নুডলস? ধ্যাৎ, (কাপ রেখে দিয়ে)
আরাধ্যার সিম্মিকে দেখে হাসছে। আরাধ্যার কফি শেষ করে রুমে চলে গেলো। সিম্মি তখনও সোফায় বসে আছে। সিম্মির রাগে ফুঁসছে আরাধ্যারের কান্ড দেখে,
~ নিশ্চয়ই এখন সাহেব নরম বিছানায় আরাম করে ঘুমাবে। আর আমি বসে বসে মাশার কামড় খাবো এত্ত বড় বড় ছাড়পোকা যদি বিছানায় ছেড়ে দিয়ে আসতে পারতাম। বললাম ঠিক হয়ে যেতে তার নাম নেই খালি খাই খাই (অভিনয় করে)
সিম্মি সোফায় বসে আছে আর আরাধ্যার রুমে বসে সিম্মির জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু সিম্মির আসার নাম গন্ধ নেই। সিম্মি এখনো বসে আছে সোফায় আর ভাবছে,
~ না বাবা এখানে ঘুমানো যাবে না রাতে যদি তেলাপোকা এসে পড়ে তখন আমার কি হব্বে (মনে মনে)
সিম্মি ভয়ে দৌড়ে রুমে গেলো। আরাধ্যার বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আরাধ্যার সিম্মিকে দেখে বলে,
~ ম্যারাথন রেস্ করছো নাকি? (না তাকিয়ে)
~ আপনার দরকার (ভেংচি মেরে)
~ একটু দরকার আছে কারন আমার বাসায় তেলাপোকা একটু বেশি। কেউ দেখলে আবার দৌড় দেয় কিনা (মুচকি হেসে)
~ বাবাগো বাচাওওওওওওওওওওওও (দৌড়ে)
সিম্মি দৌড়ে খাটের উপর উঠে পড়ে। আরাধ্যার হাসতে হাসতে শেষ সিম্মির কান্ড দেখে। সিম্মি হাঁপাচ্ছে ভয়ে। আরাধ্যারকে দেখে সিম্মির ভয় আরও বেড়ে গেলো,
~ মানুষকে ভয় দেখিয়ে কি শান্তি পান বুঝি না। (হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে )
~ দুইবার তোমাকে ভয় দেখালাম, ভাবলাম ভয় পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরবে? (হেসে)
~ শখ কতো? লুচু কোথাকার (রেগেমেগে)
~ বউয়ের সাথে লুচুমি করলে কিছু হয় না। (চোখ টিপ দিয়ে)
~ শয়তানের হাড্ডি, সরুন আমি ঘুমাবো (রেগে)
~ ওকে আসো বুকে আসো (হেসে)
~ আপনি সোফায় ঘুমাবেন (মুখ ফিরিয়ে)
~ আমার বাসায় এসে আমাকে হুকুম দাও (ধমক দিয়ে)
~ এখন এটা আমারও বাসা বুঝলেন। (ভয়ে ভয়ে)
সিম্মি পাশ কাটিয়ে শুয়ে পড়লো। আরাধ্যার কাজ শেষ করে সিম্মির পাশেই শুয়ে পড়লো। খুব সকাল সকাল আরাধ্যার ঘুম থেকে উঠে জগিং করতে গেলো। সিম্মি তখনও ঘুমাচ্ছে। আরাধ্যার এসে দেখে সিম্মি ঘুমাচ্ছে। আরাধ্যার ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সিম্মি ঘুমাচ্ছে। আরাধ্যারের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো, আরাধ্যার সিম্মিকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে যায় আর অমনি সিম্মিকে ছেড়ে দেয়। সিম্মি ধাম করে পড়ে যায় ফ্লোরে,
~ ওমাগোওওওওওওওও, কোমর টা ভেঙে গেলো (কোমরে হাত দিয়ে)
~ Oh my god তোমার গুম ভেঙে গেলো আমি তো ভাবলাম
~ আপনি আপনি একটা (রেগে)
~ হাত দাও (হাত বাড়িয়ে)
~ দিতাম না (ভেংচি মেরে)
~ তাহলে কোমরে হাত দিয়ে বসে থাকো! আমি গেলাম (মুখ ফিরিয়ে)
~ হাত ধরুন (হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়, সিম্মি জোরাজোরি করলেও আরাধ্যার ছাড়ে না, আরাধ্যার সিম্মির কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো আঙুল দিয়ে সরিয়ে ভালোবাসার পরশ একে দেয়,
~ প্লিজ মাফ করে দাও জান,
~ তোমার সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারবো না, Please jaan forgive me,
~ কথা দিন আর কখনো এমন করবেন না।
~ Promise.
~ পাক্কা,
~ হুম পাক্কা।
~ তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে!
~ কি সেটা?
~ শুনবে,
~ বলুন না,
~ Ready… Steady….. And……
তেলাপোকা,
সিম্মি জোরে চিৎকার দিয়ে আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরে,
~ Finally i’m successful
~ বদের হাড্ডি
সিম্মি আর আরাধ্যার দুজনেই হেসে ওঠে। সিম্মি আরাধ্যারের নাক টেনে দেয়, আরাধ্যার সিম্মির নাকের সাথে নাক ঘষে দেয়। সিম্মি ফ্রেশ হতে চলে যায়, ফ্রেশ হয়ে আরাধ্যারের সাথে নিচে যায় আজকে দুজনে একসাথে নাস্তা করে। নাস্তা শেষ করে, আরাধ্যার সোফায় বসে সিম্মিকে বলে,
~ আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসো।
~ আমাকে একটু শান্তিতে বসতেও দিবে না
~ ব্লাক কফি উইথআউট সুগার।
সিম্মি আরাধ্যারের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসে। আরাধ্যার কফির মগ হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকে দেখছে,
~ বাহ্ (মগের দিকে তাকিয়ে)
~ কি? (সংকোচ নিয়ে)
~ আজকাল কফি মগ ও লিপস্টিক দেয়। (ভ্রু কুচকে)
~ এরে বুঝে গেলো (ঢোক গিলে)
~ বলো বলো,
~ আসলে, আমি চেক করেছিলাম সব ঠিকঠাক কি না। (ভয়ে ভয়ে)
আরাধ্যার হঠাৎ করে সিম্মির গালে কিস করে। সিম্মি হতভম্ব হয়ে গালে হাত দিয়ে আরাধ্যারের দিকে তাকায়। আরাধ্যার মুচকি হেসে কফিতে চুমুক দেয়।
~ এটা কি হলো? (গালে হাত রেখে)
~ কই (না জানার ভান করে)
~ লুচু কোথাকার। (ভেংচি মেরে)
~ তোমার সাথে করলে সমস্যা নেই। (হেসে হেসে)
সিম্মি দৌড়ে ছাদে যায়। আরাধ্যারও পেছনে পেছনে যায়। শুরু হলো দুষ্ট মিষ্টি ভালোবাসা।
পর্ব ২৩
সিম্মি ছাদে গিয়ে দাড়িয়ে যায়, কারণ ছাদে অনেক দেশি বিদেশি সুন্দর সুন্দর ফুল গাছ লাগানো টবে সাথে ক্যাকটাস গাছ, মানি প্লান্ট এর সরু লতাগুলো ছাদের রেলিঙ জুড়ে আকড়ে আছে। ছাদের মেঝেতে হালকা ঘাসের বিচরণ তার উপরে চোখ জুড়ানো সিল্কের সাদা পায়রাগুলো খেলছে। ছাদের ঠিক মাঝখানে সাদা রংয়ের গোল টেবিল আর দুটো চেয়ার। আকাশে গুড়গুড় মেঘ ডাকছে, আকাশের বুক জুড়ে ঘন কালো মেঘের ঘনঘটা। এই বৃষ্টি নামলো বলে। সব মিলিয়ে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সিম্মির চোখের সামনে।
সিম্মি চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। যেনো পরিবেশ তার আপন শক্তিতে মেতে উঠেছে বৃষ্টির ছন্দের তালে। মেঘের সাথে দু এক ফোঁটা মুক্তোর দানার মত বিন্দু গড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর বুকে। সিম্মি চোখ বন্ধ করে উপরে তাকিয়ে আছে আর দু’হাত মেলে বৃষ্টির ফোটা স্পর্শ করছে। তখনই আরাধ্যার হাজির হয় কাঁধে গিটার নিয়ে। সিম্মিকে যেনো অনেক সুন্দর লাগছে এই পরিবেশে। আরাধ্যার কাঁধ থেকে গিটার নামিয়ে সিম্মির দিকে তাকিয়ে বললো,
~ বৃষ্টি পছন্দ করো? (মুখের কোণে অস্ফুট হাসির ছলে)
~ হুম অনেক। কেনো আপনি পছন্দ করেন না? (ঘুরে আরাধ্যারের দিকে তাকিয়ে)
~ আমার জান যখন পছন্দ করে, তখন আমিও পছন্দ করি। (মুচকি হেসে)
~ আপনার হাতে গিটার? আপনি গিটার বাজাতে পারেন? (অবাক হয়ে)
~ Oh hello, i’m champion of rock and roles songs. (ভাব নিয়ে)
~ তাহলে এখন আপনি আমাকে একটা গান শুনাবেন। এই পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে। (হেসে)
~ Of course, Why not jaan?
সিম্মির হাত ধরে আরাধ্যার টেবিলের সামনে নিয়ে যায় আর চেয়ারে বসিয়ে দেয়। তারপর আরাধ্যার নিজে বসে পায়ের উপর গিটার রেখে গিটারের তারে সুর তোলে আর গান তোলে, সিম্মি গালে হাত দিয়ে আরাধ্যারের দিকে তাকিয়ে আছে,
ঝুম তেরে রা রি রে রে, ঝুম তেরে রা রি রে রে, ঝুম তেরে রা রি রে রে, ঝুম তেরে রা রি রে রে,
তুমি আমায় ডেকেছিলে এক মেঘে ঢাকা দিনে,
কেনো আমি দেইনি সাড়া?
আমার চোখে আকাশ দেখে, তুমি বলেছিলে কিছু! বুঝিনি কেনো সেই ইশারা?
এখন আমি অন্য আমি হয়ে ছুটে চলি তোমারই শহরে, হারিয়ে চোখের যত ঘুমমমমমম,
ঝুমমমমম উড়ে উড়ে দূরে দূরে ঝুমমমম মেঘে মেঘে ডানা মেলে ঝুমমম ঘুরে ঘুরে তারে ডাকি
ঝুমমমমম উড়ে উড়ে দূরে দূরে ঝুমমমম মেঘে মেঘে ডানা মেলে ঝুমমম ঘুরে ঘুরে তারে খুঁজি
আলো আঁধারের এই সিম্মিয় এই অবেলায় মন যে হারায়,
চেনা অচেনা কত পথ হঠাৎ যেনো থমকে দাড়ায়,
ঝুমমমমম উড়ে উড়ে দূরে দূরে ঝুমমমম মেঘে মেঘে ডানা মেলে ঝুমমম ঘুরে ঘুরে তারে ডাকি
,
ঝুমমমমম উড়ে উড়ে দূরে দূরে ঝুমমমম মেঘে মেঘে ডানা মেলে ঝুমমম ঘুরে ঘুরে তারে ডাকি
ঝুমমমমম উড়ে উড়ে দূরে দূরে ঝুমমমম মেঘে মেঘে ডানা মেলে ঝুমমম ঘুরে ঘুরে তারে খুঁজি
তোমার আমার ফেলে আসা যত রঙিন মলিন স্মৃতি, লুকিয়ে অবুঝ ঠিকানায়,
অচিন মোনে অচিন কোনো কোণে বন্দী আজও আমি, ভুল সে পথের সীমানায়,
এখন আমি অন্য আমি হয়ে ছুটে চলি তোমারই শহরে, হারিয়ে চোখের যত ঘুমমমমমম,
ঝুমমমমম উড়ে উড়ে দূরে দূরে ঝুমমমম মেঘে মেঘে ডানা মেলে ঝুমমম ঘুরে ঘুরে তারে ডাকি
ঝুমমমমম উড়ে উড়ে দূরে দূরে ঝুমমমম মেঘে মেঘে ডানা মেলে ঝুমমম ঘুরে ঘুরে তারে খুঁজি
সিম্মি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরাধ্যারের দিকে। আরাধ্যারের কন্ঠ অসম্ভব সুন্দর। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকিয়ে একের পর এক গানের লাইন গেয়ে যাচ্ছে। আরাধ্যারের কন্ঠে গানটি আরও অনেক সুন্দর লাগছে। আরাধ্যার গিটার পাশে রেখে সিম্মির ভঙ্গিতে বসে সিম্মিকে বলে,
~ গান শুনে আমার প্রেমে পড়ে গেলে নাকি? (ভ্র নাচিয়ে)
~ মোটেও না। (ভেংচি মেরে)
~ আমি জানি আমি খুব সুন্দর গান গাই। যেটা শুনে যে কেউ ফিদা হয়ে যাবে। (ভাব নিয়ে)
~ ঢং দেখে আর বাঁচি না। (ভেংচি মেরে)
আরাধ্যার উঠে সিম্মির হাত ধরে টান দিয়ে উঠিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। সিম্মি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরাধ্যার সিম্মির ঠোঁটে আঙুল রেখে বলে,
~ হুঁশশশশ। আজকের বিকেলটা শুধু তোমার আর আমার, কোনো কথা নয়, একদম চুপ।
আর তখনই বৃষ্টি খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হয়। আরাধ্যার সিম্মিকে ঘুরিয়ে নেয় তারপর সিম্মির খোপার চুল খুলে দেয়। সিম্মি প্রতিটি স্পর্শ অনুভব করছে আরাধ্যারের। আরাধ্যার সিম্মির কাঁধে মাথা রেখে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে,
~ কি নেশা আছে তোমার মাঝে? তোমাকে দেখলে হারিয়ে যাই অন্য এক ভুবনে, তোমার ওই দীর্ঘ ঘন কালো চুলের ঘ্রানে মাতাল হয়ে যাই আমি, মনের কোণের সুপ্ত বাসনা জাগে তোমাকে কাছে পাবার। ইচ্ছে করে তোমাকে নিয়ে ডুব দেই প্রশান্তির সাগরে। বৃষ্টি প্রতিটি ফোঁটা যখন তোমার গোলাপি ঠোঁটে পড়ে হারিয়ে যাই অন্য এক ঘোরে। দেবে কি আমায় সেই সুযোগ?
~ আ আ আপনি কি বলছেন?
~ কম্পিত সুরে যখন লজ্জাবতী, লাজুক সুরে অস্ফুট কন্ঠে কথা বলে তখন কি হয় জানো,
~ না না না না,
~ তখন যা প্রকাশ পায় সেটা না হয় ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে দেই,
আরাধ্যার সিম্মিকে কোলে করে নিয়ে ছাদ থেকে নেমে আসে। সিম্মি লজ্জায় আরাধ্যারের বুকে মুখ লুকায়। আরাধ্যারের চুল থেকে শিশির বিন্দুর মত ফোঁটা ফোঁটা পানি সিম্মির গালে পড়ছে। দু’জন বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে গেছে। সিম্মি ঠান্ডায় কাঁপছে। আরাধ্যার সিম্মিকে নিয়ে রুমে আসে। সিম্মিকে বেডে বসিয়ে আরাধ্যার দরজা বন্ধ করে দেয়।
সিম্মিতো ভয়ে শেষ, আরাধ্যার ধীরে ধীরে সিম্মির দিকে এগুচ্ছে সিম্মি পিছিয়ে যেতে যেতে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেসে যায়, সিম্মি ভয়ে ঢোক গিলে ফেলে। আরাধ্যার সিম্মির খুব কাছে চলে আসে। দুজন দুজনের নিশ্বাস অনুভব করছে। সিম্মির হার্ট বিট ফুল স্পীডে চলছে। আরাধ্যার সিম্মির কানের কাছে এসে বলে,
~ আজকে আর কোথাও যেতে দিচ্ছি না,
সিম্মি চোখ বন্ধ করে নেয়। আরাধ্যার সিম্মির কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়। সিম্মি কেঁপে ওঠে। ডুব দিলো তারা ভালোবাসার সাগরে। তারপর,
( সেটা আরাধ্যার আর সিম্মি জানে আমি জানি না) বাকিটা ইতিহাস
আজ যেনো প্রকৃতি খুশি তাদের মিলনে। তাদের ভালোবাসার মিলের জন্যই যেনো প্রকৃতির এই কারসাজি। পূর্ণতা পেলো আরাধ্যার আর সিম্মির পবিত্র সম্পর্ক ও ভালোবাসার। শুরু হলো এক নতুন অধ্যায় কিন্তু সুখময় মূহুর্তের পরই বিষাদময় মূহুর্তের শুরু।
পর্ব ২৪
সিম্মি সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে যায়। সিম্মি দীর্ঘ শাওয়ার নেয়। আজকে হালকা আকাশী রংয়ের শাড়ি ও গোল্ডেন পাড়ের শাড়ি পড়েছে সিম্মি। সাথে সিলভার কালার ঝুমকা। সিম্মি তার লম্বা চুল গুলো মেলে পানি মুছতে থাকে তখনই আরাধ্যারের ঘুম ভেঙে যায়, আরাধ্যার অবাক হয়ে সিম্মিকে দেখতে থাকে, সিম্মি সেটা খেয়ালই করেনি। আরাধ্যার ধীরে ধীরে সিম্মির কাছে গিয়ে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে, সিম্মি হকচকিয়ে যায়,
~ বাহ্ জান, তোমাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে। (সিম্মির কাঁধে মুখ রেখে)
~ আগে বুঝি খারাপ দেখাতো! (অভিমান করে)
~ একদমই না, তোমার দীর্ঘ ঘন কালো চুলের মাঝে নিজেকে ফেলি হারিয়ে। মন চায় তোমার চুলে নাক ডুবিয়ে মাতাল করা ঘ্রান নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দেই। (ছন্দের তালে)
~ ঢং যতো, যান ফ্রেশ হয়ে নিন আমি নাস্তা রেডি করি, (রাগী সুরে)
~ হুমম কাপ নুডলস না হয় জেলি, ব্রেড, (হতাশা ভাব নিয়ে)
~ যা বানাবো সেটাই খেতে হবে নইলে না খেয়ে থাকতে হবে আপনাকে, (রাগী লুকে)
~ জান তুমি ভুলে গেছো, যে আমাদের বাসায় শেফ আছে। সে সব আইটেম রান্না করেন। তোমার কষ্ট করার কোনো দরকার নেই। (সিম্মির কাঁধে কিস করে)
~ একটা কথা বলি? (হাসি দিয়ে)
~ একটা নয় একা হাজার টা কথা বলো? (মুচকি হেসে )
~ আমি শেফের পাশে দাড়িয়ে রান্না শিখতে চাই! (হেসে)
তখনই আরাধ্যারের মাথায় রাগ উঠে যায়। আরাধ্যারের চোখ লাল আভা ধারণ করে। আরাধ্যারের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। আরাধ্যার কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে চোখ বন্ধ করে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। সিম্মি অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো বিধায় সিম্মি আরাধ্যারের ভয়ংকর রুপ দেখতে পায়নি। আরাধ্যার চুপ করে আছে দেখে সিম্মি বলে,
~ কি হলো চুপ করে আছেন কেনো? (হালকা খোঁচা দিয়ে)
আরাধ্যার সিম্মিকে ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সিম্মি হতভম্ব হয়ে যায়। কিন্তু তেমন পাত্তা না দিয়ে নিচে যায়। দশ জন সার্ভেন্ট পুরো ঘর ঝাড়ু দিয়ে, মুছে সব পরিপাটি করছে। কিন্তু কেউ মনের ভুলেও সিম্মির দিকে তাকাচ্ছে না। সিম্মি কিছুটা ভড়কে যায়।
সিম্মি দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাদের কাজ দেখছে। তখনই আরাধ্যার এসে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দেয়। সিম্মি নড়াচড়া করার চেষ্টা করেও বিন্দু মাত্র নড়তে পারছিলো না। কিছুক্ষন পরে আরাধ্যার সিম্মিকে ছেড়ে দেয়। সিম্মি আরাধ্যারের হাত ধরে বলে,
~ হচ্ছে টা কি? লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছেন নাকি? (রেগেমেগে)
~ কেনো? (না জানার ভান করে)
~ কেনো মানে? দেখতে পাচ্ছেন না, চারদিকে কতজন সার্ভেন্ট? (রেগে লাল হয়ে)
~ এখানে ভূমিকম্প হলেও কেউ ফিরে তাকাবে না। আর যদি তাকায় ও তাহলে ডিরেক্ট ফায়ার। (পকেটে হাত রেখে বাঁকা হাসি দিয়ে)
~ কিহহহ (ভয় পেয়ে)
~ হুম জান, তোমার দিকে কেউ তাকাবে না। কারো সাহস নেই। (সিম্মির কাঁধে হাত রেখে )
~ আপনি,
~ চলো ব্রেকফাস্ট করবো। (হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে)
আরাধ্যার সিম্মির হাত টেনে নিয়ে যায় টেবিলের সামনে। সিম্মিকে বসিয়ে দিয়ে ডিমের অমলেট নিয়ে পিছ করে সিম্মির মুখে তুলে দেয়। সিম্মিও আরাধ্যারকে খাইয়ে দেয়। আরাধ্যার নাস্তা শেষ করে সিম্মির হাত ধরে দরজার সামনে যায় তারপর সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
~ Miss you Jaan….,
~ U too….
আরাধ্যার সিম্মির কপালের চুল সরিয়ে দিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়। তারপর সিম্মিকে বিদায় জানিয়ে অফিসে যায়। আরাধ্যারের সাথে রেহান আছে,
~ বস, নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দিয়েছি। অলরেডি ৫ জন নির্বাচিত হয়েছে।
~ তাদের মধ্যে কার কোয়ালিফিকেশন বেশি ভালো?
~ সাবিহা তানজিমের।
~ ওর ইন্টারভিউর রেজাল্ট কেমন?
~ বস ১০০% এর মধ্যে ৯৮%।
~ Best rate.
~ Yeah boss.
~ ওকে নিয়োগ দাও।
~ ওকে বস। ওনাকে আসতে বলেছি আজকে।
~ Very good.
গাড়ি এসে অফিসের সামনে এসে থামে। আরাধ্যার গাড়ি থেকে নেমে ডিরেক্ট কেবিনে যায়। গিয়েই কম্পিউটার অন করে। কম্পিউটারের পর্দায় ভেসে ওঠে আরাধ্যারের বাসার ৬ টি ফুটেজ। হল রুম, ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম, বেড রুম, লাইব্রেরি, আর কিচেন। আরাধ্যার সিম্মির উপর সার্বক্ষনিক নজর রাখার জন্য এই ব্যবস্থা করে। আরাধ্যার দেখছে সিম্মি হল রুমে বসে টিভি দেখছে। একটু পরই রেহান আসে,
~ বস সাবিহা তানজিম এসেছে।
~ আসতে বল,
রেহান বের হয়ে সাবিহাকে ভেতরে যেতে বলে, সাবিহা উঠে গিয়ে আরাধ্যারের কেবিনের সামনে গিয়ে দরজায় নক করে,
~ May i coming sir?
~ Yes coming,
সাবিহা আরাধ্যারের সামনে এসে দাড়ায়, আরাধ্যার সাবিহার দিকে না তাকিয়ে বলে,
~ Please Sit down?
~ Thank you sir.,
~ What is your name?
~ Sabiha Tanjim.
~ You know that, your job is done?
~ Yes sir,
~ তো রেহান আপনাকে সব কাজ বুঝিয়ে দেবে। আর শুনুন কাজে কোনো রকম গাফিলতি হলে আপনাকে শাস্তি পেতে হবে।
~ I know that..
~ এবার আসুন।
~ ওকে স্যার।
~ রেহান সাবিহা কে সব বুঝিয়ে দে।
~ ওকে বস।
আরাধ্যার তার কাজে মনোযোগ দেয়। অন্যদিকে সিম্মি বসে বসে বোর হচ্ছে। টিভি দেখতেও ভালো লাগছে না। তাই সিম্মি ভাবে কিচেনে গিয়ে টুকিটাকি কাজ করলেও মন্দ হয় না। এই সুযোগে রান্নাও শিখে ফেলতে পারবে। যেই ভাবা সেই কাজ, সিম্মি রান্না ঘরে গিয়ে দেখে শেফ রান্না করেছে পাশে একজন সার্ভেন্ট দাড়িয়ে তাকে সাহায্য করছে। সিম্মি রান্না ঘরে গেছে ঠিকই কিন্তু ঘুনাক্ষরেও কেউ তাকায়নি। সিম্মি নিজ থেকে কথা বলা শুরু করে,
~ কি রান্না করছেন? (আগ্রহ নিয়ে)
~ আজ্ঞে ম্যাম, পোটলের দোলমা আর কড়াইশুঁটি বাকি আইটেম শেষ। (নিচের দিকে তাকিয়ে)
~ ওহ আচ্ছা।
~ জি,
~ আমি রান্না পারি না, আমাকে শিখিয়ে দেবেন? (আগ্রহ নিয়ে)
~ Extremely sorry mam.. স্যারের পারমিশন ছাড়া সম্ভব না। (ভয় পেয়ে)
~ ঠিক আছে। আচ্ছা আপনি যেদিন প্রথম রান্না করেছিলেন তখন কি ডিস টা পারফেক্ট হয়েছিলো? (সিম্পলি ভাবে)
~ আমার প্রথম ডিস ছিলো Chicken tandoori.. But, (মুখ চুপসে)
~ কিন্তু কি? (আগ্রহ নিয়ে)
~ সে ডিসটা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিলো। (হালকা হেসে )
~ আপনার ডিস তো ছাই হয়েছিলো আর আমি ডিম ভাজতে গিয়ে কড়াই টাই পুড়িয়ে ফেলেছিলাম। (হাসতে হাসতে)
সিম্মির সাথে শেফ ও হেসে ওঠে। কিন্তু এই দৃশ্য আরাধ্যারের চোখে রক্তাভাব এনে দিয়েছে। আরাধ্যারের রাগ চরম মাত্রায় পৌছে গেছে। আরাধ্যার হাত মুঠো করে টেবিলে জোরে বারি দেয়। আর বলে,
~ তোমার এই কাজ তোমার জীবনের কাল হয়ে দাড়াবে সিম্মি।
সাবিহা ফাইল নিয়ে কেবিনের মধ্যে আসে, আরাধ্যার সাবিহাকে দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে,
~ Get lost from here. Out
~ Yes sir.
আরাধ্যার বাজার প্রেস করে আর সাথে সাথে রেহান হাজির,
~ গাড়ি বের কর,
~ ও ওকে বস।
আরাধ্যার কেবিন লক করে বের হয়। আর তৎক্ষনাৎ গাড়িতে উঠে বাসায় আসে। এসে দেখে সিম্মি সোফায় বসে বসে গাইছে। সিম্মি অসময়ে আরাধ্যারকে আসতে দেখে অবাক হয়ে যায়,
~ আরে আপনি?
~ আমার যখন খুশি তখন আসবো তোমার সমস্যা?
~ না সমস্যা নেই,
~ সব সার্ভেন্টরা হল রুমে আসো কুইকলি,
আরাধ্যারের ভয়ার্ত কন্ঠের চিৎকার শুনে সবাই তাড়াতাড়ি আরাধ্যারের সামনে আসে। সিম্মি হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে,
~ শেফ কোথায়?
~ জি জি স্যার, আমি এখানে,
~ আমি কি অর্ডার দিয়েছিলাম? আর আপনি কি তা পালন করেছেন?
~ স স সরি স্যার,
আরাধ্যার দ্রুত গতিতে তার রুমে গিয়ে রিভলবার নিয়ে আসে। কোনো কথা না বলে, রিভলবার কপালের সাথে ঘষতে ঘষতে শেফের দিকে এগোতে থাকে, আর শেফের সামনে গিয়ে রিভলবার টা শেফের কপালে চেপে ধরে, সিম্মি তাড়াতাড়ি এসে আরাধ্যারকে সরিয়ে দেয়,
~ কি দোষ ওনার? কেনো মারতে চাইছেন তাকে?
~ আগের বারের কথা ভুলে গেছো?
~ ওনার কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার, আমি নিজেই কথা বলেছি উনি বলতে চায় নি, প্লিজ আরাধ্যার আপনার কাছে হাত জোর করে বলছি,
~ আমার সামনে থেকে সরে যা আর কোনো সার্ভেন্ট কাল থেকে আসবে না, Get lost. (চিৎকার দিয়ে)
সবাই তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে যায়। সিম্মি ভয়ে চুপ করে আছে। আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আজ তোমার এক দিন কি আমার একদিন,
সিম্মি বুঝতে পারছে আজ তার রক্ষা নেই। আরাধ্যার সিম্মির দিকে এগুচ্ছে আর সিম্মি পেছাতে থাকে আরাধ্যার সিম্মির খুব কাছে চলে আসে, তখনই সিম্মি,
পর্ব ২৫
সিম্মি এতোটাই ভয় পেয়েছে যে সিম্মি ভয়ে জমে গেছে। আরাধ্যার সিম্মির কাছে গিয়ে সিম্মির হাত চেপে ধরে, সিম্মি ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে,
~ কি নিয়ে হাসাহাসি করছিলে জান? (সিম্মির হাত চেপে ধরে)
~ বিশ্বাস করুন তেমন কিছু না! (হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে)
~ তোমাকে বারণ করা সত্বেও তুমি বার বার সেই একই ভুল করো! (হাত মুচড়ে দিয়ে)
~ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন, (কাঁদতে কাঁদতে)
~ পর পুরুষদের সাথে কথা বলার খুব শখ তোমার তাই না? (সিম্মির গাল চেপে ধরে)
~ ছিঃ আরাধ্যার, এসব কি বলছেন, (আরাধ্যারের হাত ধরে)
~ আজ তোমার এমন অবস্থা করবো আর জীবনেও কারো সামনে যেতে পারবে না। (চুলের মুঠি ধরে)
~ আরাধ্যার ক্ষমা করে দিন, প্লিজ (মাথার চুলে হাত দিয়ে)
~ আরাধ্যার খান ক্ষমা করতে জানে না, (সিম্মির হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়)
আরাধ্যার সিম্মিকে টেনে হিঁচড়ে রুমে নিয়ে যায়। সিম্মি জানে আজ কেউ তাকে বাঁচাতে পারবে না। সিম্মির চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। আরাধ্যারের সেদিকে খেয়াল নেই। আরাধ্যার সিম্মিকে ধাক্কা দিয়ে বেডের উপর ফেলে দেয়।
~ তোমার শখ এক্কেবারে মিটিয়ে দেবো আজকে, (শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে)
~ প্লিজ আরাধ্যার, (হাত জোর করে)
আরাধ্যার শার্ট খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারে। সিম্মি পিছিয়ে যায়। আরাধ্যার সিম্মিকে ধরতে যাবে তার আগেই সিম্মি উঠে দৌড় দেয় কিন্তু দুর্ভাগ্য দরজা বন্ধ ছিলো। সিম্মি দরজা খুলতে যাবে তার আগেই আরাধ্যার এসে সিম্মির হাত ধরে সামনে ঘুরিয়ে কষে থাপ্পড় দেয়, সিম্মি ঘুরে পড়ে যায় বেডের উপর, সিম্মি গালে হাত দিয়ে আরাধ্যারের দিকে তাকায়,
~ পাখির পাখা গজালে কিভাবে কেটে ফেলতে হয় তা আমি খুব ভালো করে জানি, (সিম্মিকে বালিশের সাথে চেপে ধরে)
আরাধ্যার সিম্মির উপর ঝাপিয়ে পড়ে। সিম্মি অনেক চেষ্টা করেও আরাধ্যারকে সড়াতে পারে না। এক পর্যায়ে সিম্মি ক্লান্ত হয়ে আরাধ্যারের কাছে হেরে যায়। যাকে এক কথায় বৈধ ধর্ষণ বলে। সিম্মির করুন আর্তনাদ আরাধ্যারের মন এতটুকু গলাতে পারেনি। কিছু সময় পরে আরাধ্যার সিম্মিকে ছেড়ে দেয়, আরাধ্যার উঠে দাড়িয়ে আবার সিম্মির কাছে এসে সিম্মির গাল চেপে ধরে বলে,
~ আজকের কথা মাথায় রেখো!
আরাধ্যার ফ্রেশ হতে চলে যায়। সিম্মি বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ চেপে কাঁদছে। সিম্মির চাপা গোঙানির শব্দ চারদেয়াল ভেদ করে বাহিরে পৌঁছাতে পারেনি। সিম্মির মনে এক পাহার সমান কষ্ট জমে আছে। সিম্মি বলতে থাকে,
~ থাকবো না আর আপনার সাথে, চলে যাবো অনেক দূরে। যেখানে কোনদিন ও আপনি পৌঁছাতে পারবেন না।
আরাধ্যার ফ্রেশ হয়ে বের হয়, সিম্মির দিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়ার ড্র এর কাছে গিয়ে একটা ব্ল্যাক টি শার্ট আর ব্লাক জিন্স পড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সিম্মি অনেক কষ্টে বিছানা থেকে উঠে পুরো শরীর অসার হয়ে গেছে। সিম্মি কোনোমতে ওয়াশরুমে যায়, সিম্মি লুকিং গ্লাসের সামনে দাড়িয়ে নিজের অজান্তে কেঁদে ওঠে, সিম্মির ঠোঁট কেটে গেছে, ঘাড়ে, গলায় কামড়ের দাগ গুলো কালো হয়ে বসে গেছে।
সিম্মি ঝর্ণা ছেড়ে কাঁদতে থাকে। মনের ব্যাথা গুলো অশ্রু হয়ে দুচোখ থেকে ঝরছে। প্রায় দেড় ঘন্টা পর সিম্মি বের হয় ওয়াশরুম থেকে। বের হয়ে, আরাধ্যারকে দেখতে পায় না কোথাও, সিম্মি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বেলকনিতে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে আকাশের দিকে তাকিয়ে,
~ আমার সাথে কেনো এমন হয়? আপনি কি কোনোদিনও আমাকে বুঝবেন না? হ্যাঁ, আপনি আমাকে যেমন ভালোবাসেন আমিও আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু এই অত্যাচারকে ভালোবাসা বলে না আরাধ্যার। সব আপনজনদের ছেড়ে আপনার কাছে পড়ে আছি শুধু আপনাকে আকঁড়ে ধরে বাঁচার জন্য। আপনি কি সেটা বুঝেন না? একদিন বুঝবেন যেদিন আমি থাকবো না, (চোখের পানি মুছতে মুছতে)
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। সিম্মি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। আরাধ্যারের কোনো খবর নেই। সিম্মি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ দেখলো আরাধ্যারের গাড়ি ঢুকলো গেইটের মধ্যে, সিম্মি সেখানেই নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে, সিম্মি শুনতে পেলো ভাংচুরের শব্দ। সিম্মি ছুটে নিচে যায়, সিম্মি দেখে আরাধ্যার হকিস্টিক দিয়ে সব কিছু ভাংছে, সিম্মি
তাড়াতাড়ি আরাধ্যারের কাছে দৌড়ে এসে আরাধ্যারের হাত ধরে,
~ কি করছেন কি? (আরাধ্যারের হাত ধরে)
~ তার কৈফিয়ত তোমাকে দিতে হবে? (মাতাল হয়ে)
~ ছিঃ আপনি মদ খেয়ে এসেছেন? লজ্জা করে না আপনার, মদ খেয়ে মাতলামো করতে? (আরাধ্যারের থেকে দূরে গিয়ে)
~ হুশশশ, একদম কথা বলবে না? মদ খেয়েছি আমার টাকায় তাতে কার বাপের কি? (টলতে টলতে)
~ আরাধ্যার মুখ সামলে কথা বলুন? (আঙুল উঠিয়ে)
~ কেনো কি করবে? বলবো ১০০% বার বলবো! (সিম্মির কাছে এসে)
~ Just shut up…. (আরাধ্যারকে ধাক্কা দিয়ে)
~ এই তোর সাহস তো কম নয়, আমাকে ধমক দিস, নিজেকে কি ভাবিস? তোকে ভালোবাসি বলে বার বার আমার বুকে আঘাত দিবি? তোর মতো ১০০ মেয়ে কেনার ক্ষমতা আছে আরাধ্যার খানের, (সিম্মির গাল চেপে ধরে)
~ আপনি আমাকে বাহিরের মেয়েদের সাথে তুলনা করলেন? (আরাধ্যারের হাত সরিয়ে দিয়ে )
~ হ্যাঁ করলাম, সরে যা আমার সামনে থেকে, (সিম্মিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে)
আরাধ্যার সিম্মিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে রুমে চলে যায়। সিম্মি কাদঁছে, আরাধ্যারের প্রতিটি কথা সিম্মির মনে চরম ভাবে আঘাত করেছে। সিম্মি বলতে থাকে,
~ থাকবো না আপনার সাথে, থাকবো না। (কাঁদতে কাঁদতে)
সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। বাসার সামনে গার্ড না থাকায় সিম্মি সরাসরি রোডে বের হয়ে যায়। রাস্তায় তেমন একটা মানুষ নেই বললেই চলে, সিম্মি চোখের পানি মুছতে মুছতে হাঁটতে থাকে,
~ আর কখনো যাবো না আপনার কাছে। কোনোদিন ও না। (অভিমানী সুরে)
সিম্মি বড় অভিমানী। সিম্মি কোথায় যাবে তার গন্তব্য ঠিক নেই। সিম্মি স্ট্রেইটলি হাঁটতে থাকে। চারপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার। রোড লাইট গুলো জ্বলছে। মাঝে মধ্যে দুই একটা গাড়ি চলছে। আকাশে গুড়গুড় মেঘ ডাকছে। মনে হয়, একটু পড়েই বৃষ্টি নামবে, সিম্মি হাঁটতে হাঁটতে বহু দূরে চলে এসেছে। কিছুক্ষন পরেই একটা বাইক এসে সিম্মির সামনে ব্রেক করে থেমে যায়। সিম্মি ভয় পেয়ে যায়। বাইকের দিকে তাকিয়ে দেখে একজন বিরক্তিকর ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে, সে আর কেউ নয় সাহিল, সাহিল খেয়াল করেনি সিম্মিকে, সিম্মিকে না দেখেই সাহিল বলতে থাকে,
~ এতই মরে যাওয়ার ইচ্ছে যে রাস্তার মাঝখানে হাটছেন, আরে, (না দেখে)
~ সাহিল তুমি? (অবাক হয়ে)
~ সিম্মি, তুমি এখানে কি করছো? তুমি নাকি বিয়ে করেছো আঙ্কেল আন্টিকে না জানিয়ে? তারা নাকি মেনে নেয়নি? তুমি নাকি রাগ করে চলে গেছো? কি চিপকু গাম আমাদের ও তো জানাতে পারতে? (এক শ্বাসে)
~ কোনটার উত্তর দেবো? (অস্ফুট স্বরে)
~ আগে বলো, এখানে কি করছো একা একা আর কোথায় যাচ্ছো? (সিম্মির সামনে দাড়িয়ে)
~ জানি না, (অন্যদিকে তাকিয়ে)
~ জানি না মানে, মাথা ঠিক আছে তোমার এতো রাতে এই নির্জন রাস্তায় একা একা হাটছো, যেকোনো সময় বিপদ হতে পারে। বাইকে ওঠো? (বাইকে চড়ে)
~ কোথায় যাবো? (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
~ মাইশার বাসায় যাবে। চলো, (ইশারায়)
সিম্মি কথা না বাড়িয়ে বাইকে ওঠে। সাহিল বাইক স্টার্ট দেয়। সাহিল বাইক চালাতে চালাতে বলে,
~ আমি আর মাইশা তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম বিয়ের কার্ড নিয়ে কিন্তু যাওয়ার পর তিতলির কাছ থেকে সব শুনি। আঙ্কেল অনেক অসুস্থ ছিলেন,
~ কি হয়েছে বাবার? (কাঁপা কাঁপা সুরে)
~ এমন ঘটনা ঘটলে কে সুস্থ থাকতে পারে বলো? (শ্বাস নিয়ে)
~ তোমাকে খোঁজার অনেক চেষ্টা করেও পায়নি, কিন্তু আজকে হঠাৎ করে পেয়ে গেলাম। আচ্ছা ভাইয়া I mean, দুলাভাইয়ের সাথে ঝগড়া করছো নাকি? (হালকা হেসে)
~, (নিশ্চুপ )
~ বুঝতে পেরেছি, ব্যাপার না ওমন হয় বিয়ে হলে, (হেসে)
~ মাইশা আর তুমি বিয়ে করেছো? (চোখ মুছে)
~ তোমার জন্য করতে পারিনি, (হালকা রেগে)
~ আমার জন্য? (অবাক হয়ে)
~ হুম তোমার জন্য, মাইশা জেদ ধরেছে যতদিন তোমাকে খুঁজে না পাবে ততদিনে আমাদের বিয়ে হবে না। (মুচকি হেসে)
~ ও আসলেই একটা পাগল, (হেসে)
~ এইযে এসে পড়েছি। (বাইক থামিয়ে )
সিম্মি বাইক থেকে নামে। সাহিল বাইক সাইডে রেখে সিম্মিকে নিয়ে ভেতরে যায়। সাহিল মাইশার দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিং বেল বাজায়। মাইশা এসে দরজা খুলে দেয়, সাহিল বলে,
~ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ নিয়ে এসেছি?
~ আরে তুমি এখন? কি সারপ্রাইজ?
সাহিল সরে যায় আর পিছনে সিম্মি দাঁড়িয়ে ছিলো। মাইশা পুরাই শকড হয়ে যায় সিম্মিকে দেখে। মাইশার চোখ ভিজে ওঠে আনন্দ অশ্রুতে, সিম্মিরও। মাইশা কোনো কিছু না বলেই সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে, সিম্মিও মাইশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,
অন্যদিকে আরাধ্যারের জ্ঞান ফেরে। আরাধ্যার ধীরে ধীরে উঠে। চারদিকে তাকিয়ে দেখে সিম্মি নেই। আরাধ্যার জোরে জোরে চিৎকার করে সিম্মিকে ডাকে। কিন্তু কোথাও সিম্মিকে দেখতে না পেয়ে পুরো বাড়ি খোঁজ করে কিন্তু কোথাও সিম্মির হদিস না পেয়ে রেহানকে কল দেয়,
~ চারদিকে লোক লাগিয়ে দে? ২৪ ঘন্টার মধ্যে সিম্মিকে আমার সামনে নিয়ে আসবি। (চিৎকার করে)
~ বস, ম্যাম কি? ( কৌতূহল নিয়ে)
~ যা বলেছি তাই কর, (রেগেমেগে)
~ জি বস। (ভয় পেয়ে)
~ কেনো সিম্মি কেনো? আমাকে ছেড়ে চলে গেলে? আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না সিম্মি। Please Come back.. Please… (দেয়ালের সাথে হাতে বারি দিয়ে)
পর্ব ২৬
সিম্মিকে মাইশা জড়িয়ে ধরে কান্না করে। সিম্মি মাইশাকে ছাড়িয়ে গালে হাত রেখে বলে,
~ কাঁদছিস কেনো?
~ কোথায় ছিলি তুই? আমাকে না বলে বিয়ে করে নিলি? (কাঁদতে কাঁদতে)
~ সব বলবো তোকে, আগে ভেতরে যাই, (হেসে)
~ হুম চল, (হাত টেনে)
সিম্মিকে নিয়ে মাইশা আর সাজিদ ভেতরে নিয়ে যায়। মাইশা সিম্মির কাছে বসে, সিম্মির হাতে হাত রেখে বলে,
~ প্লিজ সব খুলে বল,
সিম্মি সেই প্রথম থেকে সব বলতে শুরু করে, সাজিদ আর মাইশা সিম্মির কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে। অন্যদিকে আরাধ্যার, পুরো ঘর তছনছ করা শুরু করে দেয়, রেহান এসে আরাধ্যারকে থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু আরাধ্যার শান্ত হয় না,
~ সিম্মি তুমি কোথায়? আমার ভুল হয়ে গেছে? Please maya come back.. (রাগী সুরে)
~ Boss, relax, (আরাধ্যারের কাছে গিয়ে)
~ সিম্মিকে যে করে হোক খুজে বের কর, নাহয় আমি শেষ করে ফেলবো সব, (জিনিসপত্র ভেঙে)
~ বস, ম্যাম তার বাসায়ও যায়নি, আমি সেখানে আগে খোঁজ লাগিয়েছিলাম, (ভয়ে ভয়ে)
~ যা হুইস্কির বোতল নিয়ে আয়, (রেহানের দিকে তাকিয়ে)
আরাধ্যার নেশা করা শুরু করে দেয়। সিম্মি সব কথা খুলে বলে, সাজিদ আর মাইশা হতভম্ব হয়ে যায়। সিম্মি আরাধ্যারের কথা বলতে গিয়ে থেমে যায়, মাইশা বলে,
~ আরাধ্যার তোকে অনেক বেশি ভালোবাসে। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ কিন্তু এভাবে, (সাজিদ ~ অবাক হয়ে)
~ জানি না কিচ্ছু জানি না, (সিম্মি ~ কেঁদে কেঁদে)
~ আচ্ছা বাদ দে, আয় ফ্রেশ হবি, (সিম্মির কাঁধে হাত রেখে)
~ সাহিল তুমি ডিনার করে যাবে কেমন, (মুচকি হেসে)
সিম্মিকে নিয়ে মাইশা রুমে যায়। সিম্মিকে খাটে বসিয়ে আলমারি থেকে তার থ্রিপিছ বের করে দেয় সিম্মিকে, সিম্মি ফ্রেশ হতে চলে যায়। মাইশা রাতের ডিনার রেডি করতে করতে সাজিদের সাথে কথা বলে,
~ সিম্মি অনেক বদলে গেছে এই কয় দিনে। (হতাশার সুরে)
~ এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে বুঝল? (মাইশার দিকে তাকিয়ে)
~ পরিবর্তন বুঝতে সময় লাগে না। ওকে আমি সেই ছোটো বেলা থেকে চিনি, ( দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)
~ কি কি পরিবর্তন দেখলে? (জিজ্ঞাসু সুরে)
~ কথা বলে না আগের মতো, মুখ একদম শুকিয়ে গেছে, ওর মনে অনেক কষ্ট জমে আছে আর সেটার কারণ আরাধ্যার, (রাগী সুরে)
~ আরাধ্যার যা করেছে তা ঠিক করেনি, (তাল মিলিয়ে)
~ তবে সিম্মির চোখে আমি দেখতে পেয়েছি, (হালকা বাঁকা হাসি দিয়ে)
~ কি দেখতে পেয়েছো? (অবাক হয়ে)
~ আরাধ্যারের জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা, (হেসে)
~ ঠিক বলেছো, ওদের মধ্যের এই অভিমান ভাঙতে হবে। সিম্মি তোমার কাছে থাকুক কয়দিন, (শান্তনা দিয়ে)
~ হ্যাঁ, (মাথা নেড়ে)
~ সিম্মিকে হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করো, কাজে বিজি রাখো যাতে ও মন খারাপ করে না থাকতে পারে, (মাইশার হাতে হাত রেখে)
~ হ্যাঁ, তাই করবো, দেখে আসি সিম্মি বের হয়েছে কিনা? (চেয়ার ছেড়ে উঠে)
সিম্মি ফ্রেশ হয়ে বসে আছে। মাইশা এসে সিম্মিকে জোর করে খেতে নিয়ে যায়। দুই~ এক লোকমা মুখে নিয়ে টেবিল থেকে উঠে যায়। মাইশা সিম্মিকে বাঁধা দিতে নিলে সাহিল নিষেধ করে। সিম্মি মাইশার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। সিম্মির চোখ থেকে দুফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ে। সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি সিম্মি। ফজরের নামাজ পড়ে একটু ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল সকাল অতিপরিচিত কন্ঠের ডাকে সিম্মির ঘুম ভেঙে যায়, সিম্মি চোখ মেলে টিপটিপ করে সামনে তাকিয়ে দেখে, তিতলি বসে আছে। সিম্মি ধরফর করে উঠে
বসে। তিতলি সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে,
~ আপি, কেমন আছো? (কেঁদে কেঁদে)
~ ভালো, তুই কেমন আছিস? মা, বাবা কেমন আছে? (তিতলিকে জড়িয়ে ধরে)
~ ভালো না আপি, বাবা, মা আগের থেকে চুপচাপ হয়ে গেছে। আগের মতো হাসে না কথা বলে না। আপি তুমি এতো শুকিয়ে গেছো কেনো? দুলাভাই কোথায়? (চোখে পানি মুছতে মুছতে)
~ সে একটু বিজি তাই আসতে পারেনি। বাবা, মা কি আমাকে ভুলে গেছে? (কাঁদতে কাঁদতে)
~ না গো আপি, বাবা তোমার রুম তালা দিয়ে রেখেছে। কাউকে যেতে দেয় না কিন্তু মাঝরাতে তোমার রুমে গিয়ে কাঁদে। (সিম্মির হাতে হাত রেখে)
~ আর মা, (করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
~ মা সে খুব চুপচাপ হয়ে গেছে। কথা বলে না প্রয়োজন ছাড়া। (কেঁদে কেঁদে)
~ তুই কি করে জানলি আমি এখানে? (অবাক হয়ে)
~ মাইশা আপু রাতে কল দিয়ে আমাকে বলেছে, তাই আমি স্কুলে না গিয়ে আপুর বাসায় এসেছি তোমাকে দেখতে। (মাইশার দিকে তাকিয়ে)
~ আগের মতো দুষ্টুমি করিস? লেখাপড়া ঠিক মতো করো নাকি এখনো ফাঁকিবাজি করো? (কান টেনে)
~ আপি তোমাকো ছাড়া কিচ্ছু ভালো লাগে না। (মন খারাপ করে)
~ উহু উহু, দুই বোন তো কান্নার প্রতিযোগীতা শুরু করে দিলে নাকি? উঠো বলছি, আসো নাস্তা করবে, তাড়াতাড়ি এসো। (হালকা কাশি দিয়ে)
সিম্মি ফ্রেশ হয়ে তিতলিকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে যায়। সিম্মি তিতলিকে নিজের পাশে বসিয়ে খাইয়ে দেয় নিজ হাতে, তিতলির চোখের কোণে কানি জমে যায়।
~ কিরে কাদছিস কেনো? (তিতলির গালে হাত রেখে)
~ আপু অনেকদিন হয় তোমার হাতে খাই না। (কেঁদে কেঁদে)
~ অনেক মিস করি সবাইকে। (চোখের পানি মুছে)
~ আপু সময় নেই একটু পরেই স্কুল ছুটি হবে। (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)
তিতলি তাড়াতাড়ি খেয়ে সিম্মিকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। সিম্মির মন কিছুক্ষণের জন্য ভালো হয়েছিল কিন্তু তিতলি যাওয়ার পর সিম্মি আবারও মনমরা হয়ে যায়। মাইশা সিম্মির পাশে বসে,
~ তিতলিকে কখন কল দিলি? (মাইশার দিকে তাকিয়ে)
~ রাতেই কল দিলাম, কিন্তু বলিনি তুই আরাধ্যারের সাথে রাগ করে এসেছিস। বলেছি, আমার বাসায় বেড়াতে এসেছিস। (হালকা হেসে)
সিম্মি সারাদিন বারান্দায় বসে থাকে। কারও সাথে কথা বলে না। কোনো খাওয়া দাওয়া করতে চায় না। মাইশা জোর করে সিম্মিকে খাওয়ায়। এভাবে কেটে যায় ৫ টি দিন। এর মধ্যে সিম্মি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। মাইশা এসে সিম্মিকে বলে,
~ সিম্মি, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে?
~ কিন্তু কেনো?
~ আমার আর সাহিলের সাথে শপিংয়ে যাবি।
~ আমি,
~ কোনোকিছু শুনতে চাই না, তাড়াতাড়ি রেডি হ,
মাইশা সিম্মিকে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়। সিম্মি কালো রংয়ের একটি থ্রিছ পড়ে। সিম্মি মাইশা আর সাহিলের সাথে বের হয়। তারা কিছুক্ষণের মধ্যে মার্কেটে চলে আসে। সিম্মি গাড়ি থেকে নেমে যায় সাথে মাইশাও নামে। শপিংমলের সামনে জ্যাম ছিলো, সেই জ্যামে রেহান ছিলো গাড়ি নিয়ে। রেহান বাহিরে তাকায় আর তখনই সিম্মিকে দেখতে পায়। রেহান সাত পাঁচ না ভেবে গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি নামে। এক দৌড়ে সিম্মির সামনে দাড়িয়ে যায় আর হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
~ ম্যাম আপনি এখানে, আমি আপনাকে কোথায় না খুঁজেছি?
~ আরে রেহান ভাইয়া, (অবাক হয়ে)
~ ম্যাম প্লিজ আমার সাথে চলুন, (অনুরোধ করে)
~ কোথায়? (রেগে)
~ বসের কাছে,
~ আমি আর কোনোদিনও যাবো না তার কাছে! (রেগেমেগে)
~ ম্যাম বসের অবস্থা খুব খারাপ, প্লিজ চলুন। (অনুরোধ করে)
~ বললাম তো আমি যাবো না। (চিৎকার করে)
~ ম্যাম বস হাসপাতালে। (কাঁদো কাঁদো সুরে)
হাসপাতালের কথা শুনে সিম্মির মনে অজানা ভয় নাড়া দিয়ে ওঠে। সিম্মি খানিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। সিম্মির স্তব্ধতা কাটিয়ে মাইশা রেহানকে জিজ্ঞেস করে,
~ কি হয়েছে তার? (অবাক হয়ে)
~ বস তিনদিন আগে গাড়ি এক্সিডেন্ট করেন, তার অবস্থা খুব খারাপ। বসের জ্ঞান ফেরেনি এখনো, তাকে আইসিইউ তে রাখা হয়েছে। (চোখ মুছে)
সিম্মি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। সিম্মি আরাধ্যারের নাম ধরে চিৎকার করে ওঠে। রেহান সিম্মিকে গাড়ির সামনে নিয়ে যায়, সাথে সাহিল আর মাইশাও ওঠে। সিম্মি কাঁদছে। রেহান তখন বলে,
~ আপনি বাড়ি থেকে যাওয়ার পর থেকে বস পাগলের মতো হয়ে গেছে। দানা পানি মনের ভুলেও স্পর্শ করেনি। দিনরাত শুধু মদ খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছে। আর মুখে শুধু একটাই কথা বলেছে, Maya please come back..
সিম্মি কথাগুলো শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না। কিছুক্ষনের মধ্যে গাড়ি এসে হাসপাতালের সামনে এসে থামে। সিম্মি গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে রিসিপশনের সামনে গিয়ে রিসেপশনিস্টের কাছে আরাধ্যারের নাম বলে, সে আরাধ্যারের সিট নং বলে দেয়, সিম্মি দৌড়ে আইসিইউর সামনে এসে দরজা খুলে ভেতরে যায়।
আরাধ্যার সিটে শুয়ে আছে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক, কপালে, দুই হাতে, গলায়, পায়ে ব্যান্ডেজ করা। বুকে অনেকগুলো ইসিজির গোল তার লাগানে। আরাধ্যার খুব ধীরে ধীরে শ্বাস নিচ্ছে। সিম্মি চুপ করে তাকিয়ে আছে আরাধ্যারের দিকে। সিম্মি দৌড়ে গিয়ে আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে,
~ কি করেছেন এসব? নিজের কি অবস্থা করে রেখেছেন? আরাধ্যার কথা বলুন প্লিজ, I promise.. আর কখনো এমন করবো না তাও একটু তাকান,
আরাধ্যারের কোনো রেসপন্স নেই। হার্ট বিট খুব স্লো। সিম্মি আরাধ্যারের গালে, কপালে কিস করে বলে,
~ I still love you mahir, I love you so much, I love you forever and ever and ever…
মাইশা, সাহিল আর রেহান কাঁদছে সিম্মিকে দেখে। একজন ডাক্তার এসে রেহানকে বলে,
~ আরে আইসিইউতে এতো হট্টগোল কেনো। এতে রোগীর কন্ডিশন আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে।
~ কিচ্ছু হবে না বসের,
~ আরে বললেই হলো, (রেগেমেগে)
~ আপনি যান এখান থেকে, (জোরে ধমক দিয়ে)
সিম্মি আরাধ্যারকে ধরে কাঁদছে। তখনই আরাধ্যারের শ্বাস বেড়ে যায়। আরাধ্যার অনেক জোরে জোরে শ্বাস করতে থাকে। রেহান ডাক্তারকে ডাকে। ডাক্তার আর নার্সরা আসে সিম্মি বের হতে চায় না তবুও সিম্মিকে জোর করে নিয়ে আসে মাইশা। অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় আরাধ্যারকে। সিম্মি ফ্লোরে বসে পড়ে, মাইশা সিম্মিকে ধরে,
~ আমার আরাধ্যারের কিচ্ছু হবে না। (কাঁদতে কাঁদতে)
~ একদম না, তুই বিশ্বাস রাখ আল্লাহর ওপর। (সিম্মির কাঁধে হাত রেখে)
~ আমি আরাধ্যারকে অনেক ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। (মাইশাকে জড়িয়ে ধরে)
অপারেশন থিয়েটারের রেড লাইট অন হয়। সিম্মি বসে বসে কাদছে আর এক মনে আল্লাহকে ডাকছে।
আরাধ্যার কি ফিরে আসবে সিম্মির কাছে নাকি হেরে যাবে সিম্মির ভালোবাসা?
পর্ব ২৭
টানা ১৭ ঘন্টা অপারেশন করার পর ডাক্তার বের হয় থিয়েটার থেকে। ডাক্তারের মুখে বিষন্নতার ছাপ। সিম্মি দৌড়ে ডাক্তারের কাছে যায়,
~ ডাক্তার আরাধ্যারের কি অবস্থা? (কাঁদতে কাঁদতে)
~ এখনও কিছু বলতে পারছি না। (নিচের দিকে তাকিয়ে)
সিম্মি চেয়ারে বসে মুখ চেপে কাঁদতে থাকে। তখনই আরো দুইজন ডাক্তার সিম্মির সামনে দিয়ে কথা বলতে বলতে থিয়েটারের মধ্যে যায়,
~ মনে হয়, বাঁচানো সম্ভব হবে না।
কথাটা শুনে সিম্মির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সিম্মি দৌড়ে থিয়েটারের সামনে যায় নার্স সিম্মিকে বাঁধা দেয়,
~ আরে আরে কোথায় যাচ্ছেন? (সিম্মিকে বাঁধা দিয়ে)
~ আমি আরাধ্যারের কাছে যাবো। প্লিজ আমাকে যেতে দিন, (অনুরোধ করে)
~ দেখুন অপারেশন চলছে আপনি এখন ভেতরে যেতে পারবেন না। প্লিজ আমাদের কাজ করতে দিন নাহয় রোগীর অবস্থা আরো ক্রিটিক্যাল হয়ে যাবে। (বিরক্ত হয়ে)
মাইশা এসে সিম্মিকে নিয়ে ওয়েটিং রুমে নিয়ে যায়। সিম্মি বসে বসে কাঁদছে। তখনই রেহান এসে আরাধ্যারের ফোন, মানিব্যাগ, ঘড়ি সিম্মির হাতে দেয়। সিম্মি কাঁপা কাঁপা হাতে সেগুলো নেয়। তখনই ফলনটা অন হয় সিম্মি দেখে ফোনের ওয়ালপেপারে সিম্মির ছবি। ফোনের পাসওয়ার্ড ও সিম্মির নামে দেওয়া। সিম্মি অনেক নামে চেষ্টা করে খোলার কিন্তু শেষে যখন নিজের নাম বসায় তখন লক খুলে গেলো। সিম্মি আরাধ্যারের ফোনের গেলারিতে যায়।
সেখানে সব সিম্মির ছবি। সিম্মি যখন কাজ করছিলো তখন আরও অনেক এংগেলে সিম্মির ছবি তোলা। মাইশার বার্থডে পার্টিতে যখন সিম্মি নেচেছিলো সেই নাচের ভিডিও আরাধ্যার কপি করে ৬ টা ফাইলে রেখে দিয়েছে। সিম্মির চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝড়ছে। শেষে একটি ছবি দেখে সিম্মি থেমে যায় ছবিটি সিম্মির আর আরাধ্যারের বিয়ের সময় তোলা, সিম্মি অস্ফুট স্বরে একটি গান গায়,
কথার পরেও কিছু কথা থাকে যা বুঝতে হলে মনে প্রেম থাকা লাগে,
পারতে যদিই ছুঁতে এ মন বুঝতে আমার কষ্ট কেমন,
যেতে তোমাকে করছি যে বারণ,
পড়ে দেখো না ভালো করে এ মন,
যেতে তোমাকে করছি যে বারণ,
এতো সহজে যে কি যায় ছিড়ে বাঁধন,
অভিমানে ব্যবধান বাড়বে স্বাভাবিক তাই বলে কি দুজন যাবে দু’দিক?
এতোই কি ঠুনকো এই সম্পর্ক চলো না হই এক পথের পথিক,
যেতে তোমাকে করছি যে বারণ,
পড়ে দেখো না ভালো করে এ মন,
যেতে তোমাকে করছি যে বারণ,
এতো সহজে যে কি যায় ছিড়ে বাঁধন,
সিম্মি চোখের পানি মুছে তখনি রেহান আসে সিম্মির কাছে,
~ ম্যাম, বসের বাবা এসেছেন। আপনি চলুন,
~ জি ভাইয়া চলুন।
সিম্মি রেহানের সাথে অপারেশন থিয়েটারের সামনে যায়। সেখানে গিয়ে একজন লোককে দেখতে পায় ধূসর রঙের শার্ট প্যান্ট পড়া সাথে সাদা শার্ট, মাথায় কাঁচাপাকা চুল, মুখে হালকা দাড়ি। রেহান তাকে ডাক দেয়,
~ স্যার, এইযে সিম্মি ম্যাম, (সিম্মিকে দেখিয়ে দিয়ে)
সিম্মি বুঝতে পারে এই হলো আরাধ্যারের বাবা। সিম্মি মাথার ওড়না দিয়ে তাকাই সালাম করতে নিলে, আরাধ্যারের বাবা বাঁধা দিয়ে সিম্মির মাথায় হাত বুলিয়ে বুকে টেনে নেয় আর সিম্মি জোরে কান্না করে ওঠে,
~ বাবা, এ কি হলো? (কাঁদতে কাঁদতে)
~ মা ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে। আল্লাহ কে ডাকো। (চোখের পানি মুছে)
~ সব আমার দোষ, আমার জন্য এমন হয়েছে! (রাগ করে)
~ না মা, তোমার জন্য হয়নি। শুধু শুধু নিজের দোষ দিও না। (শান্তনা দিয়ে)
ডাক্তার বের হয় অপারেশন থিয়েটার থেকে। ডাক্তারের মুখ হতাশায় পরিপূর্ণ। আরাধ্যারের বাবা আর সিম্মি তার সামনে যায়। সিম্মি ডাক্তারের দিকে তাকতেই ডাক্তার চোখ নামিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,
~ আরাধ্যারের কন্ডিশন খুব খারাপ। কখন কি হয় বলা যায় না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি কিন্তু সফল হতে পারিনি। একটানা এলকোহল সেবনের কারণে স্টমাক ইনফেকশন হয়েছে আরাধ্যারের। এ্যাক্সিডেন্টে আরাধ্যার মাথায় অনেক বেশি আঘাত পায় আর শরীরে খুব গুরুতর আঘাত পেয়েছে। অত্যান্ত দঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, ১০০% এ আরাধ্যারের বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ২০%। এমন রোগীদের বাঁচার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। তবুও আমরা আরাধ্যারকে লাইফ সাপোর্টে রেখেছি। আগামী ২৪ ঘন্টা সময়। এর মধ্যে যা কিছু হয়ে যেতে পারে। I’m sorry..( মন খারাপ করে)
সিম্মি বসে পড়ে ডাক্তারের কথা শুনে। সিম্মি স্তব্ধ হয়ে গেছে। কথায় আছে না, অল্প শোকে কাতর অতি শোকে পাথর। হ্যাঁ, সিম্মি পাথর হয়ে গেছে, বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। শুধু চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। সিম্মির মনে পড়ে যায়, সেই প্রথম থেকে আরাধ্যারের সাথে কাটানো দিনগুলো। চোখের সামনে ভেসে ওঠে আরাধ্যারের মুখ। সিম্মির বাবা, মা হাসপাতালে এসেছে। মাইশা তাদের ফোন করে সব বলে। সিম্মি নিশ্চুপ হয়ে গেছে। আরাধ্যারের বাবা কাঁদছে, রেহানও। সিম্মির মা এসে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে। সিম্মির কোনো সাড়া নেই। সিম্মি আনমনে বলতে থাকে,
~ না এ হতে পারে না আরাধ্যার আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না, এমন তো কথা ছিলো না, এতো অভিমান আমার উপর?
তখনই একজন নার্স দৌড়ে বের হয় থিয়েটার থেকে, তার মুখ খুবই আতঙ্কগস্থ, বোঝা যায় ভেতরে কিছু একটা হয়েছে। দুইজন ডাক্তার দৌড়ে ভেতরে যায়। আরাধ্যারের বাবা একজন ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, তখন সে বলে,
~ রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। পালসরেট একদম কমে গেছে। শ্বাস নিচ্ছে খুব আস্তে, মনে হয় ইলেকট্রিক শক লাগবে। বলা যাচ্ছে না কিছু, এই মূহুর্তে কিছু হয়ে যেতে পারে।
কথাগুলো বলে ডাক্তার চলে যায়। সিম্মির কানে কথাগুলো বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছিলো। আরাধ্যারের বাবা চোখের পানি মুছে বলে,
~ ছেলে আমার বড় অভিমানী। ছোটো বেলায় ওর মা মারা যাওয়ার পর ওকে কেয়ারটেকারের হাতে তুলে দেই। আমি সারাদিন টাকার পেছনে ছুটছি কখনো আমার ছেলেটাকে সময় দিতে পারেনি। আমাকে নিয়ে ওর মনে অনেক অভিযোগ। আমি একজন ব্যার্থ বাবা, যে কিনা সন্তানের মূমুর্ষ অবস্থায় তার পাশে থাকতে পারিনি।
সিম্মির বাবা তাকে শান্তনা দিচ্ছে। সিম্মির পাশে মাইশা, সাহিল আর সিম্মির মা বসে আছে। কিছু সময় পড়েই, ডাক্তার বের হয় থিয়েটার থেকে সে আরাধ্যারের বাবার কাছে গিয়ে বলে,
~ Sorry, situation out of control. আরাধ্যারের মাস্ক খুলে ফেলা হয়েছে। He is dead…..
আরাধ্যারের বাবা কথাটা শোনার সাথে সাথে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দেন। সিম্মি কথাটা শুনে তার চেতনে ফিরে আসে, সিম্মি মাইশাকে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে আরাধ্যারের কাছে যায়। বেডে পড়ে আছে আরাধ্যারের নিথর দেহ। সিম্মি দৌড়ে গিয়ে আরাধ্যারের জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে,
~ আপনি এতো খারাপ আগে বুঝতে পারিনি। আমার ওপর এতো অভিমান আপনার, যে আমাকে ফেলে চলে যেতে চাইছেন। সারাদিন জান, জান করে অতিষ্ঠ করে ফেলতেন আমাকে, খুব বিরক্ত লাগতো আমার। আজ সেই আমি আপনার মুখ থেকে জান শব্দটা শোনার জন্য পাগল হয়ে গেছি। বলেছিলেন না, সিম্মি আমি তোমার সিম্মিয় পড়ে গেছি।
তাহলে আমার সিম্মি কাটিয়ে আপনি আমাকে ছেড়ে যেতে পারবেন না। আপনাকে ছাড়া এক এক একটা মূহুর্ত এক যুগের সমান মনে হয়। আরাধ্যার আমাকে ক্ষমা করে দিন ওয়াদা করছি, আর কখনো আপনাকে ছেড়ে যাবো না। আপনি যদি আমাকে মেরেও ফেলেন তাও আপনার হাতে হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করবো। পারবো না আপনাকে ছাড়া বাঁচতে। (কাঁদতে কাঁদতে)
সবাই কাঁদছে সিম্মির কান্না দেখে। সিম্মির মা, বাবা, মাইশা, সাহিল, আরাধ্যারের বাবা ডাক্তার, নার্সরা। সিম্মি বলতে থাকে,
~ ভুল তো মানুষই করে। খুন করেও মানুষ ক্ষমা পায় আর আপনি আমাকে ক্ষমা করতে পারলেন না। প্লিজ আরাধ্যার আমাকে ক্ষমা করে দিন। আর অভিমান করে থাকবেন না প্লিজ। (কাঁদতে কাঁদতে)
সিম্মির মা বলে, হে খোদা তুমি আমার মেয়েটাকে বিধবা করো না। আরাধ্যারকে ফিরিয়ে দাও।
আরাধ্যারের পাশে একজন নার্স দাঁড়িয়ে ছিলো। তার চোখ যায় আরাধ্যারের পায়ের আঙুলের দিকে। আরাধ্যারের আঙুলগুলো রেসপন্স করছে ধীরে ধীরে। সিম্মি শুনতে পায় আরাধ্যারের বুকের হার্ট বিট আস্তে আস্তে চলছে। নার্স এসে আরাধ্যারের পালস চেক করে তাড়াতাড়ি অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দেয়। ডক্টর এসে ইনজেকশন পুশ করে। আরাধ্যারের হাতে ক্যানোলা লাগিয়ে স্যালাইন লাগানো হয়। ডাক্তার সিম্মিকে বলে,
~ মেডিকেল সাইন্সে এর ব্যাখ্যা নেই। তবে ভালোবাসার টানে, রক্তের টানে এভাবে খুব সংখ্যক মানুষ ফিরে আসতে পারে। আরাধ্যারের ইচ্ছাশক্তির জোড়ে সে ফিরে এসেছে। Congratulations.
আরাধ্যারের কানের কাছে গিয়ে সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
~ জানি আপনি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন, Mahir love you I still love you I love you so much I love you forever and ever and ever and ever.
আরাধ্যার কি পারবে আবার আগের মতো ফিরে আসতে সিম্মির কাছে?
লেখা – রাফিয়া অরিন
চলবে
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “দ্য ডেঞ্জারাস লাভার – বাংলা প্রেম কাহিনী”গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ুন – দ্য ডেঞ্জারাস লাভার – বাংলা প্রেমের কাহিনী – সিজন ১ (২য় খণ্ড)