কথার প্যাচওয়ালী – প্রেমের ছোট গল্প

কথার প্যাচওয়ালী – প্রেমের ছোট গল্প: আজকাল মেয়ে পটানোর জন্য স্মার্ট ভিখারি সাজতে হয়। অপূর্ব ছেলেটির ফ্রেন্ডের সংখ্যা বেশি থাকায় সাথে সাথে লাইক, রিয়েকশন, কমেন্টে ভড়ে গেছে।

মূলগল্প


নাফিসাঃ ভার্সিটিতে ক্লাস করছি। গত ২সপ্তাহ ধরে ক্লাস চললেও আমার আজ ২য় দিন। এখন হিসাববিজ্ঞান ক্লাস। স্যার একে একে সবাইকে কোনো না কোনো প্রশ্ন করছে। হয়তো এগুলো সব আগে পড়ানো হয়েছে। অবশেষে আমাকে দাড় করালেন।
স্যারঃ তোমার নাম কি?

নাফিসাঃ নুর নাফিসা।
স্যারঃ আচ্ছা, বলোতো এখন কি ক্লাস?
নাফিসাঃ হিসাববিজ্ঞান ক্লাস।

স্যারঃ হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে?
নাফিসাঃ জানিনা।
স্যারঃ ছি! অনার্সে পড়ো এখনো জানোনা হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে! এটা তো ক্লাস 9 থেকে জানার কথা।

নাফিসাঃ স্যার, আপনি অনুমতি দিলে ১টা প্রশ্ন করি?
স্যারঃ ওকে, করো।
নাফিসাঃ বলেন তো স্যার, আলোতে কি দেখা যায় না?
স্যারঃ আলোতে তো সবই দেখা যায়!

নাফিসাঃ আলোতে কি অন্ধকার দেখা যায়?
ছি! শিক্ষক হয়েছেন এখনো এটা জানেন না! এটা তো ছাত্রজীবন থেকেই জানার কথা
সবাইঃ হাহাহা…
স্যারঃ …

নাফিসাঃ ক্লাস শেষে ভার্সিটির ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে দিনার সাথে কথা বলছিলাম। হঠাৎ এক ছেলে এসে সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়লো, আর গোলাপ এগিয়ে দিলো !

ছেলেঃ নাফিসা, I love you.
নাফিসা/ দিনাঃ ….
ছেলেঃ নাফিসা, নবীন বরন প্রোগ্রামে প্রথম তোমাকে দেখেই আমি ফিদা হয়ে গেছি। I really love you.

নাফিসাঃ What’s mean by love?
ছেলেঃ love means ভালোবাসা।
নাফিসাঃ ভালোবাসা কাকে বলে?

ছেলেঃ এতোসব আমি বুঝি না। আমি এটা জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
নাফিসাঃ গাধা কোথাকার! ভালোবাসা কাকে বলে সেটা জানেনা, আসছে ভালোবাসতে। যা ভাগ এখান থেকে
দিনাঃ হাহাহা।
ছেলেঃ …..

নাফিসাঃ ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরছিলাম। রাস্তায় এক ভিখারিকে দেখলাম বলছে,
ভিখারিঃ আমার আল্লাহ নবীজীর নামে, একটা ভিক্ষা দিয়া যান।
নাফিসাঃ চাচা, আপনার আল্লাহ নবীজী কি বলেছে ভিক্ষা করে খেতে!
ভিখারিঃ তাইলে কেমনে খামু?

নাফিসাঃ আল্লাহ, নবীজী বলেছে কাজ করে খেতে। ভিক্ষা ছেড়ে কাজে লেগে যান। আল্লাহ আপনাকে যথেষ্ট সুস্থ রাখছে।
ভিখারিঃ

নাফিসাঃ বাসায় ফিরে এলাম। আপু বললো,
আপুঃ নাফিসা, বিকেলে মার্কেটে যাবো। রেডি থাকিস।
নাফিসাঃ মার্কেটে কেনো যাবে?

আপুঃ মার্কেটে আবার কেনো যায়! মার্কেট করতে যাবো।
নাফিসাঃ কেন? সকালে বাবা মার্কেট করে আনেনি!
আপুঃ বাবা কিসের মার্কেট করেছে?

নাফিসাঃ কেন! সবজি, মাছ এগুলো এনেছে তো।
আপুঃ আমি জামাকাপড় কিনতে যাবো।
নাফিসাঃ মার্কেটের বাংলা শব্দ কি?
আপুঃ বাজার।

নাফিসাঃ বাজারে কাপড় পাবে কোথায়!
আপুঃ কথা এতো প্যাচাস কেন! শপিং মলে যাবো শপিং করতে। হয়েছে এবার!
নাফিসাঃ …

নাফিসাঃ বিকেলে শপিং মল এ গেলাম। একটা দোকানে ঢুকে দেখলাম, সেখানে লিখা আছে ” এখানে সকল পণ্য খুচরা ও পাইকারি মুল্যে বিক্রয় করা হয়।” আমি দোকানে ঢুকেই বললাম এখানে কি খুচরা মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হয়?
দোকানদারঃ হ্যাঁ। আসুন…

নাফিসাঃ আপু ২টা জামা পছন্দ করে দাম করছে। শেষ পর্যন্ত দাম এসে ঠেকলো ২৪০০টাকা। আপু টাকা দিতে যাবে তার হাত থেকে টাকা নিয়ে আমি বললাম,

আপনার দোকানে তো লিখা আছে পাইকারি মুল্যে বিক্রয় করা হয়, এখানে কি সত্যিই পাইকারি মুল্যে বিক্রয় করা হয়?
দোকানদারঃ হ্যাঁ।
নাফিসাঃ আমি এই ২টা জামা, খুচরা মূল্যে নিব না। পাইকারি মুল্যে নিবো। খুচরা মূল্য ২৪০০ হলে পাইকারি মুল্য কতো?

দোকানদারঃ এর কম তো হবে না। এটাই পাইকারি মুল্য!
নাফিসাঃ দর করার আগেতো বলে নিয়েছি খুচরা মূল্য। এখন এটার পাইকারি মূল্য বলুন। না হলে নিবো না। প্যাকেট রেখে চলে আসছিলাম, বিক্রেতা ডাকলেন, এবার ২১০০টাকা তে জামা নিয়ে এলাম
বাইরে এসে,

আপুঃ বাহ! ভালোই তো। ৩০০টাকা বাচিয়ে দিলি। দে টাকা দে।
নাফিসাঃ কিসের টাকা!
আপুঃ কেন! এই টাকা আমি দিয়েছি না!
নাফিসাঃ হুহ! কম দামে কিনে দিয়েছি, এটাই তো বেশি! আবার কিসের টাকা চাও, ভাগো

আপুঃ ঘুষখোর কোথাকার।
নাফিসাঃ অই, জামা কেনার আগে কি আমি তোমার কাছে বকশিস নিয়েছি! ঘুষ হলো কিভাবে!,
আপুঃ ….

নাফিসাঃ আমি আর আপু রিক্সায় করে বাসায় ফিরছিলাম, এমনিতেই রমজান মাস। তার উপর রিক্সা ওয়ালা গান ধরেছে…..
বন্ধু যখন বউ লইয়া, আমার বাড়ির সামনে দিয়া,
রঙগ কইরা হাইট্টা যায়,
ফাইট্টা যায়, বুকটা ফাইট্টা যায়!

নাফিসাঃ মামা আপনি তো দেখছি লুইচ্চা! বন্ধুর বউয়ের দিকে নজর দেন। ছি! আর বুক ফাটলে দোকান থেকে সুপার গ্লোব কিনে লাগিয়ে নিন। আজীবন লেগে থাকবে। দাম মাত্র ২০টাকা।
আপুঃ ….
রিক্সা ওয়ালাঃ ….

২দিন পর ছোট কাকার বড় মেয়ে শিফা ও ছোট মেয়ে রিফা এসে ডেকে নিয়ে গেলো তাদের বাসায়।

  • কিরে এভাবে আনলি কেন?
    শিফাঃ ঈদের কেনাকাটা করেছি দেখার জন্য।
    নাফিসাঃ তাই নাকি। কই দেখি!

তারপর একে একে সবার জামাকাপড় দেখালো।
নাফিসাঃ এগুলো কিনেছিস?
শিফাঃ হুম।
নাফিসাঃ রিফা, কাচিটা নিয়ে আয় তো।
শিফাঃ কাচি দিয়ে কি করবা!

নাফিসাঃ তুই তো বললি কেনাকাটা করেছিস। কিনেছিস ঠিক আছে, কিন্তু কোনো জামা ই তো কাটা না। দে আমি সব গুলো কেটে দেই। তাহলে কেনা + কাটা = কেনাকাটা হয়ে যাবে।
শিফাঃ নায়ায়ায়ায়ায়া!
নাফিসাঃ

পরের দিন ভার্সিটি যাচ্ছি,
এক লোক রিকশা নিয়ে মাইকিং করছে,
সম্মানিত রোজাদারগন, আপনাদের জন্য আজ সন্ধ্যায় বিশাল ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

নাফিসাঃ আমি রিকশা থামিয়ে বললাম,
ভাইয়া ইফতারে কি কি খাওয়াবে?
লোকটিঃ কেন, ইফতারে আমরা সাধারণত যা খাই, মুড়ি, পিয়াজু, বেগুনি…..
নাফিসাঃ এগুলোর কোনোটির আয়তন/পরিসর তো বিশাল না। আপনি বিশাল বললেন কেন?

লোকটিঃ অনেক লোকের আয়োজন করা হয়েছে তাই।
নাফিসাঃ তাহলে বলুন, ইফতারের বিশাল মাহফিল।
লোকটিঃ …..

নাফিসাঃ ক্লাস শেষে বাসায় ফিরছিলাম। পাশেই একটা মেয়েদের উচ্চ বিদ্যালয় আছে। বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ছুটি হয়েছে। দেখলাম গেইটের বিপরীতে ১টা ছেলে দাড়িয়ে আছে। পড়নে টিশার্ট, কাটাছেঁড়া প্যান্ট (বর্তমানে ফ্যাশন যেটাকে বলে), চোখে কালো চশমা (সানগ্লাস)। প্রায়ই দেখি এখানে দাড়িয়ে থাকে। বুঝতে বাকি নেই মেয়ে পটানোর ধান্দা,

পাশে ছিলো চটপটির দোকান। আমি সেখানে গেলাম,

  • মামা, ২মিনিটের জন্য আপনার ১টা প্লেট দেয়া যাবে?
    মামাও দিয়ে দিলো। কারণ আমি সবসময় এই দোকান থেকে চটপটি কিনি।
    আমি প্লেট টা নিয়ে ছেলেটার কাছে গেলাম।
  • ভাইয়া, এতা একটু ধরেন তো। আমি ১টা সেল্ফি তুলবো। এটার জন্য পারছি না।
    ছেলেটিঃ আচ্ছা ।
    নাফিসাঃ প্রথমে আমি একা একটা সেল্ফি তুললাম। তারপর,
  • ভাইয়া আপনার একটা ছবি তুলি?

ছেলেটি একটু নেড়েচেড়ে বললো,

  • আচ্ছা তুলুন
    নাফিসাঃ আমি ছবি তুলে নিলাম। আশেপাশের ছাত্রীরা দেখে অনেকে হাসছে।
  • আপনার ফেসবুক আইডির নাম কি?

ছেলেটিঃ
নাফিসাঃ আচ্ছা, ধন্যবাদ। আমারটা Nur Nafisa. রিকুয়েষ্ট দিবো। এক্সেপ্ট করবেন।
ছেলেটিঃ ওকে ।

নাফিসাঃ প্লেট নিয়ে আমি আবার দোকানে দিয়ে বাসায় চলে এলাম।
বিকেলে ফেসবুকে লগ ইন করেই দেখি ওই ছেলে রিকুয়েষ্ট দিয়েছে! আমিও এক্সেপ্ট করে ফেললাম। ১৪ মিনিট আগে এক্টিভ ছিলো। তারপর তাকে ট্যাগ করে তার ছবিটি আপলোড করলাম।

ক্যাপশনে,
*আজকাল মেয়ে পটানোর জন্য স্মার্ট ভিখারি সাজতে হয়। অপূর্ব ছেলেটির ফ্রেন্ডের সংখ্যা বেশি থাকায় সাথে সাথে লাইক, রিয়েকশন, কমেন্টে ভড়ে গেছে।

কিছুক্ষণ পর ছেলেটি মেসেজ করলো,

  • এটা আপনি কি করেছেন!
    নাফিসাঃ আপনি এটার উপযোগী ছিলেন।
  • প্লিজ ডিলিট করুন।
    নাফিসাঃ কেন? ভালোই তো লাগছে আপনাকে কাটাছেঁড়া প্যান্টে। সাথে সুন্দর সুন্দর কমেন্ট। মেয়েরা দেখলেই ফিদা হয়ে যাবে
  • বোন মাফ করেন। দয়া করে ডিলিট করুন।
    নাফিসাঃ শর্ত আছে।
  • কি?
    নাফিসাঃ কাটাছেঁড়া স্টাইল বাদ দিন।
  • আজকের পর থেকে আর কখনো দেখবেন না। প্লিজ ডিলিট করুন।
    নাফিসাঃ ওকে।
    তারপর ডিলিট করে দিলাম। সাথে আইডিটা কে ও ব্লক করলাম।

এবং ক্ষুদে গল্পটা ও সমাপ্ত করলাম। হিহিহি!

লেখা – নুর নাফিসা

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “প্রেমের ছোট গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – এ কেমন ভালবাসা (সিজন ২) – Bangla love story facebook

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *