Anuptaphobia

একাকীত্বের ভয় – একা থাকার মানসিক সমস্যা | Anuptaphobia

একাকীত্বের ভয় – একা থাকার মানসিক সমস্যা: চঞ্চল শব্দটা শুনলেই ছেলেদের কথাই আগে আসে কারণ ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় কম লজ্জা পায় আর কোন কিছু সহজে করতে পারে। এতে আমরা ধরেই নিয়েছি যে ছেলেরা চঞ্চল, কিন্তু আসলে কি তাই? না তা নয়, মনের জগতে মেয়েরা সবচেয়ে বেশি চঞ্চল, অনেক বেশি চিন্তিত, অনেক বেশি ভাবুক আর অস্থির। যেহেতু ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ ভালো বুঝে তাই তারা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে নিজেকে।

ক্লাসে ২৫ জন ছেলে আর ২৫ জন্য মেয়ে থাকলে একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন যে, মেয়েরা পড়ালেখায় ছেলেদের চেয়ে মনযোগী বেশি। ক্লাসে, বাইরে, বাড়িতে সব জায়গায় এরা বেশ শান্ত ও মনযোগী। একজন ছেলে দিনে যতবার নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে তার চেয়ে বেশ কয়েকগুণ ভাবে মেয়েরা। একটা বিষয় ১০ জন ছেলে যতটা সহজে মেনে নেয় ১০ জন মেয়ে কিন্তু তা পারে না। যতটা সহজে একটা ছেলে নিজের জীবনকে দেখে একটা মেয়ে ততটা সহজে দেখে না। অনেক বাধা, ভয়, চিন্তা নিয়ে তারা বসবাস করে, আর মাসের একটা পিরিয়ড সাইকেলে মুড সুইং তো লেগেই থাকে। সুতরাং ছেলেদের চাইতে তাদের ব্রেন চঞ্চল, চিন্তিত ও অস্থির থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

এমনি চঞ্চলতা আর অস্থিরতার একটা মানসিক রূপ হলো- Anuptaphobia, যারা মনে করে যে, সে মনে হয় সিঙ্গেল থাকবে সারাজীবন, তার মনে হয় বিয়ে হবে না, বিয়ে হলেও সঠিক মানুষটির সাথে বিয়ে হবে না। প্রতি ৫ জনের মধ্যে ২ জন মেয়ের এই আনুপ্টোফোবিয়া রোগটি আছে। অর্থাৎ ৪০% মেয়ে এই অজানা সমস্যায় ভোগে!

বিষয়টা শুনতে স্বাভাবিক মনে হলেও এর খারাপ প্রভাব অনেক যা শুধুমাত্র একটি মেয়ে উপলদ্ধি করতে পারে। সে একটি ছেলেকে অনেক ভালোবাসে, ছেলেটিকে সে বলেছেও যে তাকেই বিয়ে করবে, সত্যি ঐ মেয়েটি তাকেই চায়। কিন্তু মন দিবে ভিন্ন সিগন্যাল, করে তুলবে অস্থির, কারণ সে তো আনুপ্টা, তার তো বিয়ে হবে না, বিয়ে হলেও এই ছেলেটি সঠিক নয় তার জন্য। রিলেশনে থাকার সময় বা বিয়ের পরে সে তার জীবন নিয়ে সুখী আছে এরকমটা অভিনয় করবে,যেখানে প্রতিনিয়ত তাকে মনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। এক অস্থির মানসিক চাপে থাকবে, মনে হবে এক শরীরে দুই মানুষের বাস, এক জন বলছে আমার বিয়ে হবে তোমার সাথেই হবে কিন্তু অপরজন বলছে না আমি সারা জীবন এইভাবে একা থেকেই বৃদ্ধা হব, একাই মরব। একটু ভাবুন তো কেমন লাগবে যদি আপনার এরকম হয়? চরম হতাশা, বিচ্ছিন্নতা, একাকীত্ব আপনাকে ঘিরে বসেছে! আপনি আর নিতে পারছেন না।

এই রোগটি হওয়ার পিছনে জেনেটিক ডিসওর্ডার দায়ী থাকলেও বেশিরভাগ মেয়েদের এটা হয় ছোটবেলায় বাবা-মায়ের কলহ, টিনেজ বয়সে বান্ধবী বা আপন জনের সম্পর্কে ঝগড়া ও ছেড়ে যাওয়ার কোন তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকার কারণে। আর এই তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলোকে সে নিজের সাথে যুক্ত করে ফেলে, তাই ধিরে ধিরে তার মনের মাঝে ভয়, সংশয় আর দুশ্চিন্তার জন্ম নিয়েছে। বলা হয়, নারী মন সবচেয়ে ভীতু, কোমল, একটুতেই কেঁদে দেয়। এটা প্রতিটি নারীর একটি দূর্বল পয়েন্ট, যেখানে বার বার আঘাত পেয়েছে ছোট বেলা থেকে।

আমি যখন এই Anuptaphobia নিয়ে নেটে ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম তখন একটি প্রশ্ন আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল – কিভাবে এত হতাশা, শারীরিক সমস্যা নিয়ে একটি মেয়ে দিব্যি হেসে কথা বলে, ভালো থাকার অভিনয় করে! ৪০ শতাংশ নারী এই সমস্যায় থেকেও এতদিনে মনে হয়নি যে তারা একটি শক্ত ও কষ্টের মনের জগতে বাস করছে। আসলেই মেয়েরা খুব ভালো অভিনয় করতে পারে, খুব বেশি কষ্ট সহ্য করতে পারে। এই ৫ জনে ২ জন আনুপ্টা মেয়ের যদি মুড সুইং, অবসেসিভ ডিসঅর্ডারের মত কমন সমস্যা থাকে আর পিরিয়ডের মত একটা নির্দিষ্ট যন্ত্রণা থাকে তাহলে তার পক্ষে ব্রেনের নিয়ন্ত্রণ কতটুকু থাকে? তার পাগলামি, অবুঝতা শিশুর পর্যায়ে যাওয়া একদম স্বাভাবিক। সাধে কি আর বাবু/বেবি ডাকে, সাধে কি আর জেদ, অভিমান করে? সাধে কি আর শিশুর মত ন্যাকামি আর একটুতেই ভ্যা কান্না করে।

আমি বন্ধুদের সামনে প্রায় বলি, একটি গার্লফ্রেন্ড/বউ পোষা মানে একটা অবুঝ শিশুকে বা বিড়াল ছানাকে পোষা। যে শিশু তোর চেয়ে ভালো বুঝবে, সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, তোকে মানুষ করতে পারবে কিন্তু তার নিজের আচরণ শিশুর মতই থাকবে। মনে হবে ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না কিন্তু ঐ মাছ তোকে ভেজে কাঁটা বেছে খাওয়াবে।

এক অদ্ভুত পাগলামি, ন্যাকামি, জেদ, রাগ করে মজা পায় মেয়েরা। সে চায় তার প্রিয় মানুষটা তার এই গুলো পূরণ করুক, তাকে বুঝুক, তার অভিমান ভাঙ্গাক, তাকে মাথায় করে পুরো পৃথিবী ঘুরুক, যে পৃথিবীতে সে ছাড়া কোন মেয়ে থাকবে না। পুরুষ ভাইদের তো আগেই বলেছি, আপনার পৃথিবীতে ১০০টা মেয়ে থাকলেও, তার সামনে কেবল সে। সে আপনার লাইলী, জুলিয়েট, শিরি থেকে শুরু করে সব কিছু। জীবনে তাকে ছাড়া কোন মেয়ে দেখেন নি, এমনটা আপনি নিজেও ফিল করবেন, আর তাকেও ফিল করাবেন।
এতকিছু বললাম কারণ আনুপ্টা ভোগা মেয়েটা যেন আপনাকে পেয়ে, আপনার আচরণে একদম স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায়।

তেমন কোন চিকিৎসা নেই এই মানসিক সমস্যার তবে সাইকোলজির টার্মে একটা কথা আছে – ভালোবাসার মানুষ সব মানসিক সমস্যার প্রধান ওষুধ।।

লেখা- Nerjhor

আরও পড়ুন- ভালোবাসার মানসিক রোগ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *