বাসর রাত – Wedding Night Hot Story Bangla: বিয়ের প্রথম রাতেই বউয়ের আদেশ অবজ্ঞা করলাম। গর্বে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আসলে যদি বাইরের জগৎ জানতে পারতো তাহলে এতক্ষণে আমাকে নিয়ে ইতিহাস লিখা শুরু করতো।
পর্ব ১
একটু শাড়ির কুচিগুলো ধরে দিবেন, প্লিজ? আসলে এত বেশি ঝামেলা গেলো যে শাড়িটা অনেক কষ্টে সামলে বসেছিলাম। কুচিগুলো খুব কষ্টে এতক্ষণ পর্যন্ত ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু আপনাকে রুমে ঢুকতে দেখে আচমকা কুচিগুলো ছেড়ে দিলাম। এখন কিছুতেই ধরতে পারছিনা। দেখুন না প্লিজ!
সদ্য বিয়ে করা বউ অনুরোধ করলো আমায়। আমি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বৌ কে বললাম,
- ঐ রাখেন তো মিঞা আপনার শাড়ি। শাড়ি নিয়া কি যুদ্ধ করছিলেন যে কুচি খুলে গেলো!
- না, না । যুদ্ধ কেন করবো? শাড়ি পরে কাবাডি খেলছিলাম, তাই খুলে গেছে। সামান্য একটা শাড়ি ধরতে বলছি তাতেই হাইপ্রেশার উঠে গেলো না জানি আমারে ধরতে বললে কি করতো?
- ভূতে পাইছে আমারে? আমি মাইয়া মাইনষের গায়ে হাত দেই না।
- এহ্ রে আইছে! আপনি কি মাইয়া মাইনষের গায়ে হাত দিবেন, হাত দেওয়ার সুযোগ খুঁজলেই বটি দিয়া হাত কাইট্টা ঐ কাটা হাতটা দিয়া লুডুর গুটি বানাইয়া লুডু খেলুম।
- ঐ মাইয়া সম্মান দিয়া কথা কও। আমি তোমার স্বামী।
- এমন স্বামীরে ঠ্যাঙ্গাইয়া লুলা বানাইয়া দেওয়ার দরকার। যে বউয়ের শাড়িটা ঠিক করে দিতে পারেনা ঐটা কিয়ের স্বামী?
- হায় আল্লাহ্! স্বামী না হইলে আমি তোমার কে?
- কে আবার? লাগে তো পাশের বাড়ির আবুল জেঠার পোলা কুদ্দুইচ্ছার লাহান।
- সেটা আবার কে?
- সে আমার প্রাক্তন প্রেমিক। ঐ হারামীরে কত্তবার যে কইছিলাম, আমারে রাইখ্যা যাবি তো যা, কিন্তু তোরে আমি অভিশাপ দিতাছি, তোর বিয়া জীবনেও হবেনা।
- আপনার প্রাক্তন আপনারে অভিশাপ দেয় নাই?
- কি কয়? দিবেনা আবার? দিয়েছে তো।
- কি অভিশাপ দিয়েছে? নিশ্চয় আপনার ডজন ডজন পোলাপাইন হওয়ার অভিশাপ দিয়েছে, তাইনা?
- জ্বী না। আমার প্রাক্তন আমারে যে অভিশাপ দিয়েছে তা শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।
- অভিশাপ শুনে মানুষ আবার মুগ্ধ হয় নাকি? আজিব! আপনার মাথার তার ছিঁড়ে গেছে নাকি?
- আব্বে হালা কস কি? আমার মাথার তার ছিঁড়বে কেন? মাথার তার তো একটু পর আপনারটা ছিঁড়ুম।
- ঐ! একদম হুমকি দিবানা। কি ভাবছো, এসব বললে আমি ভয় পাবো?
- চলেন তাহলে পরীক্ষা হয়ে যাক?
- মানে?
- মানে আবার কি? রেসলিং হবে।
- ঐ তোমার লজ্জা করেনা? মেয়ে হয়ে একটা ছেলের সাথে মারপিট করার কথা বলছো!
- কি কয়? লজ্জা করবো কেন? সেদিন কুদ্দুইচ্ছারেও তো সেই লেভেলের তিনটা থাপ্পড় দিয়েছিলাম। তারপর থেকে পোলাটা আর আমার সামনে আসে নাই।
- কি? এত্ত সাহস দেয় কে?
- কেন? পাশের বাড়ির বল্টু।
- বল্টু? সেটা আবার কে? আর তোমার কি হয়?
- বল্টু হলো আমার ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ডের ভাইয়ের বৌয়ের বোনের তিন নম্বর মেয়ের বয়ফ্রেন্ড। সেই খাতিরে আমারে অনেক হেল্প করে।
- বাপরে বাপ! এ কেমন সাহসিক মানুষ! একবার দেখতে হয় বটে।
- বহুত প্যাঁচাল পাড়তেছেন। শাড়ির কুচিগুলো যেহেতু ধরবেন না সেহেতু আমি শাড়ি খুইল্যা কইলাম আপনার প্যান্ট পরুম।
- তোমার তো দেখতেছি হেব্বি সাহস? আমার প্যান্ট খবরদার টাচ্ করবানা, বলে দিলাম।
- বেশি করলে এবার শার্টও পরুম। দেখি কি করতে পারেন?
- ঐ একদম চ্যালেঞ্জ করবানা। খুব বেশি ভালো হবেনা বলে দিলাম।
- তাহলে শাড়ির কুচিগুলো ধরুন।
- ধরবোনা।
- ধরবেন না তো?
- না ধরবোনা।
- ঠিক আছে। ওয়েট…
পর্ব ২
-ঠিক আছে। ওয়েট…
- ঐ ঐ আলমারি খুলছেন কেন?
- দরকার আছে।
- দরকার আছে মানে? কি দরকার?
- আলমারির সাথে আজ ফুলশয্যা করবো তো, তাই আলমারি খুলছি।
- ছিঃ ছিঃ নাউযুবিল্লাহ্। কেমন মেয়ে মানুষ আপনি?
- কেন রে? আমি অর্জিনাল মেয়ে মানুষ। বুঝলা চান্দু? শুধু দেখো চান্দু, আমি কি করি?
- আল্লাহ্ রে! আপনি আমার সব শার্ট প্যান্ট কেন বাহির করছেন?
- “বরফ পানি” নামে একটা খেলা আছে। ঐটা খেলেছেন ছোটোবেলায়?
- হ্যাঁ খেলেছি। কিন্তু খেলার সাথে আমার শার্ট প্যান্টের সম্পর্ক কি?
- আছে আছে। সম্পর্ক তো অবশ্যই আছে। আপনার শার্ট প্যান্ট নিয়ে এখন আমি খেলবো।
- হোয়াট?
- হোয়াট কেন হবে? বরফ পানি খেলবো।
- এতো রাতে বরফ পানি? তাও আবার শার্ট নিয়ে? বলি মাথার তারটা পুরা ছিঁড়ে গেছে নাকি?
- না, না। এখনও ঝুলে আছে। ছিঁড়লেতো এতক্ষণে আপনাকে নিয়ে আমার গুণে গুণে ছত্রিশ বার ব্যাট বল খেলা হতো। ব্যাট হতো আমার পা আর বল হতেন আপনি। শালা আস্ত একটা কুম্ভকর্ণ। কেমন মানুষ আপনি বলেন তো? মানুষের কোনো কাজেই আসেন না।
- প্লিজ, এবার থামো। অনেক রাত হয়েছে একটু ঘুমাতে দাও। আমার জীবনে এমন ফুলশয্যা দেখি নাই বললেই চলে।
- এ্যাঁ! কয়টা ফুলশয্যা করছেন জীবনে? আপনি তো দেখছি কুদ্দুইচ্ছারেও ফেইল করবেন! এত্ত ফার্স্ট! ও মোর খোদা!
- এই মেয়ে, মুখ সামলিয়ে কথা বলবে। কয়টা ফুলশয্যা করছি মানে?
- একদম ধমক দিবেন না, বলে দিলাম। রুম থেকে বের হয়ে যান।
- এত্ত বড় সাহস! আমি আমার রুম থেকে বের হবো? পাইছোটা কি তুমি, হুহ?
- আরে, আমি চেঞ্জ করবো। যান বাহির হন।
- এর জন্য, এর জন্যই আমি বিয়া করতে চাইনি। কিন্তু মা বাপ নামে আজরাইলদের কে বোঝাবে? নাহ্ ঘাড় ধরে বিয়েটা করিয়ে ছাড়লো। কে জানতো কপালে এমন একটা তারছেঁড়া মেয়ে ঝুটবে?
- ঐ মিঞা কি কইলেন? আমি তারছেঁড়া? আপনি তারছেঁড়া। কি ভাবছেন? আমারে সহজ সরল পেয়ে যা খুশি তাই বলে দিবেন?
- কে সহজ সরল? আপনি? আপনাকে সহজ সরল কে বলেগো জনাবা? আপনি পুরোনো শুকনা মরিচের মতো। যার হাওয়া কোনো মানুষের নাকে লাগলে অটোমেটিক কাশি আসতে থাকে।
- আর আপনি কি, হুহ? আপনি তো হলেন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা। হুদাই লাফাইতে থাকেন।
- কি? আমার বাবা মা ছাগল? আমি যদি ছাগলের বাচ্চা হই, তাহলে তুমি কি, হুহ?
- আমি তামু। (তামান্না)
- এহ্ তামু! তুমি তো হইলা ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার বউ। যেও শুধু শুধু লাফায়।
- দেখুন একদম রাগ উঠাবেন না।
- এতক্ষণ না রেগে ঘর মাথায় তুলেছো? ওরে আল্লাহ্ রে! এর উপরে আরও রাগ আছে? আপনি কি মানুষ? নাকি রাগের মেশিন?
- এর জন্যই তো বলি, আপনার বাপের মাথার চুল সব কই গেছে? আবুল হায়াতের মতো টাক মাথা কেমনে হইছে?
আসলে উনি তো আপনার বকবক শুনতে শুনতে মাথার চুল সব উঠে গেছে। হায়রে বেচারা শ্বশুর মশাইয়ের জন্য বড্ড খারাপ লাগছে।
কেমনে তিনি এমন ছেলেরে এতোদিন ধরে সহ্য করে আসছেন? এখনতো আমার চিন্তা হচ্ছে। শ্বশুর মশাই পুরুষ মানুষ। তাই তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি। কিন্তু আমার যদি সব চুল এরকম উঠে যায় তাহলে কি হবে? ভাবা যায়!
- কিচ্ছু কমুনা। তোমার যা খুশি বলো। আমি তো আর তোমার মতো বাচাল নয়। তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নাও। আমি রুমের বাহিরে যাচ্ছি।
- আলহামদুলিল্লাহ্। সুবুদ্ধির উদয় হয়েছে তাহলে।
অতঃপর রুমের বাহিরে চলে এলাম। আসলে নিজের সুনাম নিজে আর কি করুম? আপনারাই তাহলে বলবেন নিজের ঢোল নিজে পেটাচ্ছি। আমার মত স্বামি পাওয়া যে কোনো মাইয়া মানুষের ভাগ্যের ব্যাপার। কয়জনেই বা আমার স্ত্রীর মতো ভাগ্যবান মহিলা বলেন? তাই বড়মুখ করে বলছিলাম আমার স্ত্রী হলেন ভাগ্যবান নারি।
ঘর থেকে বের হওয়ার পর, যথারীতি উনার একটা শার্ট আর প্যান্ট পরে নিলাম। গায়ে প্রচুর ঢিলা হয়। ঢিলা হবেনা বলুন, দেখতে তো হাতির মতো লাগে লোকটাকে। সুতরাং শার্ট প্যান্ট তো হাতির মতোই হবে।
যেহেতু শাড়ি পরার অভ্যাস নেই বা পরতে পারিনা তাই বুদ্ধি করে রেজা এর শার্ট প্যান্ট পরে নিলাম।
তারপর খাটে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য হলো একটা বিন্দাস ঘুমের। অনেকক্ষণ যাবৎ রেজার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। অনেকে আবার এই আলোচনার আপডেট ভার্সন ঝগড়া নামে চালিয়ে দেয়। কিন্তু আমি তো ওল্ড পার্সন তাই পুরোনো কথা আলোচনা নাম দিয়ে চালিয়ে দিলাম।
এনার্জির অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন একটা মারাত্মক ঘুমের দরকার।
চোখটা বন্ধ করতেই কত্ত রং বেরঙের কথা মনে পড়তে লাগলো। আবুল জেঠার ছেলে যারে কুদ্দুইচ্ছা কইছিলাম তার ভালো নাম ছিলো তন্ময়।
কিন্তু দেখতে বাঁশের মতো চিকন ছিলো তাই কুদ্দুছ বলেই ডাকতাম। ওর সাথে আমার দীর্ঘদিনের প্রেম ছিলো। আমার জীবনে এতো দিন কোনো থার্ড পার্সন লোক তাও আবার কুদ্দুইচ্ছার মত লোকের সাথে রিলেশন ছিলো! ভাবলেই নিজের জন্য নিজের খুব দুঃখ হয়।
কত কষ্ট করে সাড়ে তিন সপ্তাহ ঐ হারামীটার সাথে সম্পর্ক রাখছিলাম। ঐ হারামীটার কপাল ভালো, তাইতো আমার মতো হীরা ওর কপালে দীর্ঘ সাড়ে তিন সপ্তাহ ছিলো। সেদিন ওরে আমি কি এমন খারাপ কইছি বলেন তো? শুধু কইছিলাম, জানো কুদ্দুছ, তোমারে দেখতে পুরা শেফালিদের টয়লেটের পাশের যে বাঁশঝাড় আছে সেই বাঁশঝাড়ের দক্ষিনে হালকা মরে যাওয়া বাঁশটার মতো লাগে। এই কথা বলাতেই কুদ্দুইচ্ছা আমার সাথে ঝগড়া শুরু করছিলো।
আবার আমাকে ঝগড়াইট্টা মাইয়া কইছিলো। তাইতো হারামীটারে গুণে গুণে সাড়ে তিনটা থাপ্পড় দিয়েছিলাম।
হঠাৎ রুমের দরজায় কে যেন ধাক্কা দিতে লাগলো।
পর্ব ৩
হঠাৎ রুমের দরজায় কে যেন ধাক্কা দিতে লাগলো..
কাঁচা স্বপ্নটা আর পাকনা হলোনা।
- আরে মাত্র ঘুমের ঘরে যাচ্ছিলাম এই সময়ে দরজাটা কে ধাক্কাচ্ছে? (ধমকের স্বরে বললাম)
- আমি । তোমার চেঞ্জ করা হয় নি?
- উফ্ আবার সেই কুম্ভকর্ণ টা। বলি শান্তিতে একটু ঘুমাতে দিবেন না নাকি?
- অদ্ভুত! আমি বাইরে দাঁড়িয়ে মারপিট করতে করতে অস্থির হয়ে পড়ছি, আর তুমি ভিতরে শান্তিতে ঘুমাচ্ছো?
- এত্ত গুন্ডা কেন আপনি? কার সাথে মারপিট করেন?
- কার সাথে আবার, মশার সাথে।
- শালা আস্ত একটা অষ্টরম্ভা। মশার সাথেই মারপিট করবা তুমি। দেখছো মশাও তোমারে দেখতে পারেনা। আর আমি মানুষ হয়ে কিভাবে সহ্য করবো, বলোতো?
- দরজাটা খুলবা নাকি, সেটা বলো?
- ঠিক আছে, খুলে দিচ্ছি। আমি অত নিষ্ঠুর নয়। আমার একটা নরম মন আছে। আমাকে এই কথাটা প্রায় উত্তর বাড়ির কামাল জেঠার মেয়ে সেজোটা বলতো। মেয়েটা যে সঠিক বলেছে সেটা এখন আবার প্রমাণিত হলো, বুঝলেন? (দরজাটা খুলে দিলাম। )
- তোমার নরম মন? কথাটা কখন বলেছে মেয়েটা?
- যেদিন মেয়েটার বর আমাকে চোখ মেরেছিলো, সেদিন।
- কি?
- আরে হ্যাঁ। মেয়েটার বর আমাকে চোখ মেরেছে, আমি কি হেরে যাওয়ার পাত্রী নাকি? আমিও দু’বার চোখ মেরেছিলাম। আর সেটা দেখে মেয়েটা আমাকে প্রশ্ন করেছিলো আমি ওর বরকে কেন চোখ মেরেছি?
তখন আমি ওকে বলেছি যে, তোমার বর আগে আমাকে চোখ মেরেছে, তাই আমিও মেরেছি। তারপর মেয়েটা বলেছে, আমার নাকি মন খুব নরম! - আল্লাহ্ গো! আর কি কি শোনার বাকি রইছে? এক মিনিট, এতক্ষণ তো খেয়াল করিনি। তুমি আমার শার্ট প্যান্ট কেন পরেছো?
- শাড়ি পরতে পারিনা, তাই।
- কি? এত্তবড় মেয়ে হয়েছো। আর শাড়ি পরতে পারোনা?
- আপনি চোখে কাজল লাগাতে পারেন?
- না, আমার চোখ জ্বালা করে।
- এত্তবড় ছেলে হয়েছেন, আর কাজল পরতে পারেন না?
- বড্ড বিরক্তিকর একটা মেয়ে তুমি। সেটা তুমি জানো?
- জানিতো(হাসিমুখে)
- ছিঃ, আবার দাঁত বের করে হাসছে। আরে ভেজাইল্লা পাবলিক, তোমার প্রশংসা তো করিনি। এত হাসছো কেন?
- আমার দাঁত আর মুখ দিয়া আমি হাসছি। আপনার সমস্যা কি?
- আছে তো। আমার সমস্যা আছে। মেয়েদের এভাবে হাসতে নেই।
- কেন?
- এভাবে হাসলে ছেলেদের বুকে লাগে, বুঝছো? আর শুনো, যাও একটা শাড়ি বের করে নিয়ে আসো।
- আপনি শাড়ি পরবেন নাকি? হাহাহা। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শাড়ি! অপশন টা কিন্তু হেব্বি জোশ। এক কাজ করেন, আজ থেকে আমি আপনার সব শার্ট প্যান্ট পরবো, আর আপনি আমার সবগুলো শাড়ি পরবেন। ওকে?
- বড্ড বেশি কথা বলো তুমি। যাও শাড়িটা নিয়ে আসো।
- এই যে নিন, শাড়ি।
- দেখি, আমার সামনে একদম কাছে এসে দাঁড়াও।
- মানে? আমি আপনার সামনে কেন যাবো? আগেই বলেছি, আমি শাড়ি পরতে পারিনি। তাহলে আপনাকে আমি কি করে শাড়ি পরিয়ে দিবো?
- তোমাকে একবারও বলেছি, যে আমাকে শাড়ি পরিয়ে দাও? এত্ত কথা কেমনে বলো তুমি?
(ওর হাতটা ধরে এক টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসলাম। ওর নিঃশ্বাস আমি খুব কাছ থেকেই অনুভব করতে পারছি। আলতো করে বেঁধে রাখা চুলগুলো খুলে দিলাম। ) - কি করছেন? ছাড়ুন। চুল খুললেন কেন?
- না খারাপ লাগছেনা। চুল সবসময় খোলা রেখো। চুল বাঁধলে তোমায় দেখতে পেত্নীর মতো লাগে।
- ভূতের বউ তো পেত্নী হবে। এ আর নতুন কি?
- আচ্ছা শুনো পেত্নী, তোমার এই ভূত বর টা কিন্তু শাড়ি পরাতে পারে। সুতরাং কিছুক্ষণ মুখে তালা মেরে সামনে এসে সোজা হয়ে দাঁড়াও।
- কি? আমি আপনার হাতে শাড়ি পরবো? পাগল হয়ে গেছি নাকি আমি? প্রয়োজন নেই। আমি শার্ট প্যান্ট পরে অনেক ভালো ভাবে আছি।
- তোমার ভালোর জন্যই বলছি। এখন শার্ট প্যান্ট পরে আছো, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু সকাল হতেই সবাই নতুন বউকে দেখতে আসবে। তখন কি আর শার্ট প্যান্ট পরে থাকতে পারবে?
- (আসলেই তো। তখন তো শাড়ি পরতেই হবে। কিন্তু একজন অপরিচিত মানুষ তাও আবার পুরুষ। কেমনে কি করুম? আল্লাহ্)
- কি ভাবছো? এত সংকোচ কেন? নিজের বরের হাতে শাড়ি পরবে। এটা নিয়ে এত বিব্রত?
- শাড়ি পরবো ঠিক আছে। তবে আমার একটা শর্ত আছে।
- আবার শর্ত? তোমরা মেয়েরা পারো বটে। বলো কি শর্ত?
- আপনাকে চোখ বেঁধে নিতে হবে। যদি চোখ বেঁধে নিন, তবে আমি শাড়ি পরবো। নতুবা যেমন আছি তেমনটাই থাকবো।
- তুমি আসলে একটা পেত্নী। ঠিক আছে চোখটা তাহলে বেঁধে দাও।
- ওকে, দাঁড়ান। আপনার এখানে কোনো ওড়না বা তোয়ালে নেই?
- ওড়না কোথায় পাবো? আমার ঘরে কি আগে কোনো মেয়ে ছিলো, যে ওড়না থাকবে? তবে তোয়ালে আছে। খুঁজে দেখো।
- আচ্ছা।
- তামান্না চোখ বাঁধার জন্য তোয়ালে খুঁজতে লাগলো।
- আর আমি সেই সুযোগে তোয়ালেটা লুকিয়ে ফেললাম।
মিসেস রেজা, এবার খুঁজো তোয়ালে! - কই কোথাও পাচ্ছি নাতো। আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? দেখতে পাচ্ছেন, আপনার বউ কত্ত কষ্ট করে তোয়ালে খুঁজছে, আপনি একটু খুঁজুন ।
- কেন আমি খুঁজবো? প্রবলেমটা আমার না। সুতরাং আমি খুঁজতে পারবোনা। স্যরি।
- তাহলে এবার কি হবে?
- চিন্তার কি আছে বলো? আমি তো অন্য কেউ না। তোমার স্বামী। আর তাতেও যদি সমস্যা হয় তাহলে ঠিক আছে আমি চোখ বন্ধ করে থাকবো। তাহলে হবে তো?
- (কি আর করার? কথায় আছে, যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত হয়)
ঠিক আছে। তবে খবরদার এই তামুর সাথে কোনোরকম চালাকি করার চেষ্টা করবেন না।
শেষ পর্ব
তবে খবরদার এই তামুর সাথে কোনোরকম চালাকি করার চেষ্টা করবেন না।
- ওকে।
- রেজা আমায় শাড়িটা পরানো শুরু করলো। কিন্তু আমার ভীষণ বিব্রতকর অবস্থা হচ্ছিলো। বারবার ওর হাতটা চেপে ধরতেছি। অবশেষে অনেক কষ্টে শাড়িটা পরানো শেষ হলো।
ধন্যবাদ। - দাঁড়াও তো সোজা হয়ে। এই তোমার হাতে চুড়ি কই? চুড়ি পরোনি?
- আসলে খুব অসহ্য লাগছিলো। তাই খুলে ফেলেছি।
- যেই তারছেঁড়া মাইয়া, ধৈর্য্য বিন্দুমাত্রও নেই! এমন মেয়ে কেন আমার কপালে জুটিয়ে দিলা আল্লাহ্?
- ন্যাকামো হচ্ছে? ন্যাকামো বন্ধ করে যান ড্রেসিংটেবিলের সামনে থেকে…
- কিহ্? আমাকে হুকুম করছো? আমি পারবো না। তোমার কাজ তুমি নিজে গিয়ে করো।
- কি কইলা? পারবানা? পাইছোটা কি তুমি? ঘরের মধ্যে আমি যা বলবো তাই শুনতে হবে। যাও যা বলতেছি তাই শুনো।
- অসম্ভব! আমি যাবোনা ড্রেসিংটেবিলের সামনে।
- আরে ঐ মিঞা তোমারে আমি হাত পা তুলে নাচতে বলছি? নাকি ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে গলায় দড়ি দিতে বলতেছি? সামান্য ড্রেসিংটেবিলটার সামনে যাইতে বলতেছি।
- কিন্তু কেন যাবো আমি?
- কেন যাবা? তোমারে আমি একটু আদর করমু তো তাই।
- ছিঃ, ছিঃ। আদর করতে ড্রেসিংটেবিলের সামনে যেতে হবে? হায়রে ডিজিটাল জমানা! দিনে দিনে আরও কত কি যে আপডেট হবে?
- বলি তোমার মুখটা ব্যথা হয়ে যায় না?
- কেন? আমি কি মুখ দিয়া মারপিট করি নাকি? মুখ কেন ব্যথা হবে? আজাইরা কথা বলো।
- চুপচাপ ড্রেসিংটেবিলের সামনে যাও। আর একটা কথাও তোমার মুখে শুনতে চাই না।
- ওমা মুখ দিয়ে কথা না বললে কি দিয়ে বলবো?
- ঐ হারামী। যাইবা নাকি সেটা বলো?
- না, যামুনা।
- ঠিক আছে। তাহলে দাঁড়াও এখানে।
- আহা! বিয়ের প্রথম রাতেই বউয়ের আদেশ অবজ্ঞা করলাম। গর্বে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আসলে যদি বাইরের জগৎ জানতে পারতো তাহলে এতক্ষণে আমাকে নিয়ে ইতিহাস লিখা শুরু করতো।
ভাবতেই কলিজার পশম দুই ইঞ্চি পরিমাণ খাড়া হইয়া গেছে।
চোখ বন্ধ করে নিজেই নিজের সাহসিকতার সেলিব্রেট করছি।
হঠাৎ কেউ একজন মাথার চুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে ধরলো। আমার মাথার চুলগুলো আবার একটু ডিজাইন করা ছিলো। আজকালকের দিনে যা হয় আর কি।
চোখ খুলতেই দেখি, মাশাআল্লাহ্! বউয়ের হাতে একটা কেচি। ভাইরে কি কমু? কলিজার খাড়া পশমগুলা হঠাৎ চিপসে গেলো। ভয়ে বউয়ের চোখের দিকে তাকালাম,
- না কাজল পরোনি। কাজল পরোনি কেন?
- কেনরে? কাজল পরে তোমায় জবাই করলে কষ্ট পাবা না নাকি?
- আসলে কাজল পরলে তোমার চোখগুলা হয়তো একটু সুন্দর লাগতো। এখন তো পুরা বটগাছের পেত্নীর মতো লাগে। কিন্তু কেচিটা হাতে নিলা কেন?
- চুল কাটুম তাই।
- ওহ্, চুল কাটবা? আগে কইবানা? তোমার চুলগুলা কিন্তু অনেক সুন্দর। না কাটলেই পারো।
- কেনরে? প্রত্যেকটা কথায় ক্যান দুলাইন বেশি বুঝতে হবে? বলতে পারো? আমি তোমাকে কখন বললাম, যে আমার চুল কাটবো?
- তাহলে কার চুল কাটবা?
- কেন? আমার হাতের মধ্যে যার চুল।
- তুমি কি সেলুনে আগে কাজ টাজ করতা নাকি?
- চুল কাটতে সেলুনে কাজ করতে হবে কেন?
- না, মানে। তুমি যদি সেলুনে কাজ করো বা সেলুনের কাজে অভিজ্ঞতা আছে তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই। তুমি আমার চুলটা এই স্টাইল থেকে অন্য স্টাইলও করে দিতে পারো। কিন্তু সেলুনের কাজ না জানা থাকলে ভাইরে আমার চুলটারে আল্লাহর দোহাই দিয়া কইতাছি ছাইড়া দাও।
- না, আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই বা আমি আগে কারও চুল কাটেনি। তোমারে দিয়াই ফার্স্ট।
- প্লিজ, প্লিজ। আমার এই সর্বনাশ তুমি করোনা। তাহলে সকালে কারও সামনে আমি মুখ দেখাতে পারবোনা। চোখ তুলে তাকাতেও পারবোনা।
প্লিজ বউ, ছেড়ে দাও। - ভয় পাচ্ছো কেন? আমার উপর বিশ্বাস রাখো। তোমার এত লজ্জা পেতে হবেনা। তোমার চুলটা কেটে আমি ফুটবল মাঠ বানিয়ে দিবো। সিওর।
- ওরে আল্লাহ্ রে! এমন দজ্জাল মাইয়ারে আর কারও ঘরে বউ কইরা পাঠাইওনা। আজ আমি অতি ভদ্র মানুষ বলে আমার এই হাল করতাছো তুমি। আমার গায়ে সইতেছে, কিন্তু আল্লাহর গায়ে সইবোনা। তোমারে আমি অভিশাপ দিয়া দিতাছি কইলাম।
- অভিশাপ কেন? অভিশাপের বাপ মা জেঠা জেঠি চৌদ্দগুষ্টিরে দাও। মাগার আজ তোমার চুল আমি কেটেই ছাড়বো।
- ক্যান এমন করতাছো? তোমারে শাড়ি পরিয়ে দিয়ে কত্তবড় উপকার করলাম! তার প্রতিদান এভাবে দিবা?
- জ্বী, এভাবেই দিবো।
- আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়বোনা বলে দিলাম।
- ছাড়ার কথা কইলে চোখ তুইল্যা হাতে ধরাই দিমু। খবরদার ছাড়ার কথা কইবানা।
- অবশেষে আমার মাথার চুলগুলো নাগিন ড্যান্স দিতে দিতে স্বর্গে চলে গেলো। আর আমি পৃথিবী নামক নরকে।
- মাথা নিচু কইরা বইসা আছি শ্বশুর বাড়িতে।
- কি দুলাভাই? লজ্জা পাচ্ছেন? বাপরে! আল্লাহ্ আপনি পুরুষ মানুষ হয়ে এত্ত লজ্জা পাচ্ছেন?
- শ্যালিকার কথা শুনে জাস্ট গা জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছে করতাছে বউয়ের চৌদ্দগুষ্টিরে নাগিন ড্যান্স দেখাইয়া চইল্যা যাইতে। কিন্তু এখন বেশি ভাব দেখাইলে সবাই আমারে নিয়ে হাসবে। কারণ বাড়িভর্তি শ্যালিকা। যদি কেউ ভুল করেও মাথার টুপিটা নিয়ে যায়, তাহলে আমার ইজ্জতের বারোটা বেজে যাবে।
মুখের কথা মুখেই রইলো, হঠাৎ বউয়ের ছোটো বোনটা দৌড়ে এসে মাথার ক্যাপটা খুলে ওর হাতে নিয়ে নিলো। আর রুমভর্তি সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো।
ওদেরকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে খুব বলতে ইচ্ছে করছিলো সেফুদার মতো, কি? হিংসে হয়? আমার মতো হতে চান?
লেখা – রাজন
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “বাসর রাত – Wedding Night Hot Story Bangla” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – পাপ্পি চাপছে – গার্লফ্রেণ্ডকে চুমু খাওয়ার গল্প